আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা বনী ইসরাঈলের বাংলা অনুবাদ | সূরা বনী ইসরাঈল | Surah Bani Israel | سورة الإسراء



সূরা বনী ইসরাঈলের বাংলা অনুবাদ


সূরা বনী ইসরাঈল, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১১১, রুকু ১২

সূরা বনী ইসরাঈল



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. পবিত্র ও মহিমান্বিত (সেই আল্লাহ তায়ালা), যিনি তাঁর (এক) বান্দাকে রাতের বেলায় মাসজিদে হারাম থেকে মাসজিদে আকসায় নিয়ে গেলেন, যার পারিপার্শ্বিতাকে আমি (আগেই) বরকতপূর্ণ করে রেখেছিলাম, যেন আমি তাকে আমার (দৃশ্য অদৃশ্য) কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি; (মূলত) সর্বশ্রোতা ও সর্বস্রষ্টা তো স্বয়ং তিনিই।

২. আমি মুসাকে (-ও) কেতাব দিয়েছি, আমি এ (কেতাব)-কে বনী ইসরাঈলের হেদায়াতের উপকরণ বানিয়েছিলাম (আমি আদেশ দিয়েছিলাম), আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে তোমরা (নিজেদের) কর্মবিধায়করূপে গ্রহণ করো না।

৩. (তোমরা হচ্ছো সেসব লোকের বংশধর), যাদের আমি নুহের সাথে (নৌকায়) আরোহণ করিয়েছিলাম, অবশ্যই সে ছিলো (আমার) এক কৃতজ্ঞ বান্দা ।

৪. আমি বনী ইসরাঈলদের প্রতি (তাদের) কেতাবের মধ্যে (এ কথার) ঘোষণা দিয়েছিলাম, অবশ্যই তোমরা দু'বার (আমার) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং (মানুষের ওপর তখন) বড়ো বেশী বাড়াবাড়ি করবে |

৫. অতপর এ দু'য়ের প্রথমটির নির্ধারিত সময় যখন এসে হাযির হলো, তখন (তোমাদের বিপর্যয় বন্ধ করার জন্যে) আমি তোমাদের ওপর আমার এমন কিছু বান্দাকে পাঠিয়েছিলাম, যারা ছিলো বীরত্বের অধিকারী, অতপর তারা (তোমাদের) ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সব কিছুই তছনছ করে দিয়ে গেলো; আর (এভাবেই) আমার (শাস্তির) প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়ে থাকে।

৬. অতপর আমি তাদের ওপর (বিজয় দিয়ে) দ্বিতীয় বার তোমাদের (সুদিন ফিরিয়ে দিলাম এবং) ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্তনি দিয়ে তোমাদের আমি সাহায্য করলাম, (সর্বোপরি এ জনপদে) আমি তোমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ করলাম ।

৭. যদি তোমরা কোনো ভালো কাজ করে থাকো তা করেছো (একান্তভাবে) তোমাদের নিজেদের জন্যে | (অপরদিকে) তোমাদের কেউ যদি কোনো মন্দ কাজ করে থাকো, তার দায়িত্বও একান্তভাবে তার নিজের ওপর; অতপর যখন আমার দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতির সময় হাযির হলো, (তখন আমি আরেক দলকে তোমাদের মোকাবেলার জন্যে পাঠিয়েছিলাম) যেন তারা তোমাদের মুখমন্ডল কালিমাচ্ছন্ন করে দিতে পারে, যেমন করে প্রথমবার এ ব্যক্তিরা মাসজিদে (আকসায়) প্রবেশ করেছে (এবং এর প্রচুর ক্ষতি সাধন করেছে, আবারও) যেন তারা মাসজিদে প্রবেশ করতে পারে এবং যে যে জিনিসের ওপর তারা অধিকার জমাতে পারে তা যেন তারা ধ্বংস করে দিতে পারে ।

৮. সম্ভবত এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ওপর অনুগ্রহ করবেন, আর তোমরা যদি (আবার বিদ্রোহের দিকে) ফিরে যাও তাহলে আমিও (আমার শাস্তির) পুনরাবৃত্তি করবো, আর আমি তো কাফেরদের জন্যে জাহান্নামকে তাদের (চির) কারাগারে পরিণত করে রেখেছি ।

৯. অবশ্যই এ কোরআন এমন এক পথের দিকে নির্দেশনা দেয় যা অতি (সরল ও) মযবুত এবং যেসব ঈমানদার মানুষ নেক আমল করে, এ (কেতাব) তাদের (এ) সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্যে (আল্লাহর কাছে) এক মহাপুরস্কার রয়েছে ।

১০. (অপরদিকে) যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, আমি তাদের জন্যে (এক) কঠিন আযাব প্রস্তুত করে রেখেছি ।

১১. আর মানুষ (যেভাবে নিজের জন্যে না বুঝে) অকল্যাণ কামনা করে, (তেমনি সে) তার (নিজের) জন্যে (বুঝে সুঝে) কিছু কল্যাণও (কামনা করে আসলে) মানুষ (কাংখিত বস্তুর জন্যে এমনিই) তাড়াহুড়ো করে |

১২. আমি রাত ও দিনকে (আমার কুদরতের) দুটো নিদর্শন বানিয়ে রেখেছি, অতপর রাতের নিদর্শন আমি বিলীন করে দিয়েছি এবং দিনের নিদর্শনকে আমি করেছি আলোকময়, যাতে করে (এর আলোতে) তোমরা তোমাদের মালিকের রেযেক সংগ্রহ করতে পারো, (সর্বোপরি) তোমরা (এর মাধ্যমে) বছরের গণনা ও (এর) হিসাবও জানতে পারো; আর (এর) সব কয়টি বিষয়ই আমি খুলে খুলে বর্ণনা করেছি ।

১৩. প্রত্যেক মানুষের ভাগ্যলিপি আমি তার গলায় (হারের মতো করে) ঝুলিয়ে রেখেছি; কেয়ামতের দিন তার জন্যে (আমলনামার) একটি গ্রন্থ আমি (তার সামনে) বের করে দেবো, সে তা (তার সামনে) খোলা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখবে |

১৪. (আমি তাকে বলবো) পড়ো, (এ হচ্ছে) তোমার আমলনামা; আজ নিজের হিসাবের জন্যে তুমি নিজেই যথষ্টে;

১৫. যে ব্যক্তি হেদায়াতের পথে চলবে, সে তো চলবে একান্ত ভাবে নিজের (ভালোর) জন্যে, যে ব্যক্তি গোমরাহ হবে তার গোমরাহীর দায়িত্ব অবশ্যই তার ওপর; (আসল কথা হচ্ছে, সেদিন) কেউই অন্য কারো (গুনাহের) ভার বইবে না; আর আমি কখনোই (কোনো জাতিকে) আযাব দেই না, যতোক্ষণ না আমি (সেখানে আযাব থেকে সতর্ককারী) কোনো রসুল না পাঠাই।

১৬. আমি যখন কোনো জনপদকে ধ্বংস করতে চাই তখন তার বিত্তশালী লোকদের (ভালো কাজের) আদেশ করি, কিন্তু তা না করে) সেখানে তারা গুনাহের কাজ করতে শুরু করে, অতপর (এ জন্যে) সেখানে আমার আযাবের ফয়সালা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, পরিশেষে আমি তা সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে দেই |

১৭. নুহের পর আমি (এই একই কারণে) কতো মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি; (হে নবী,) তোমার মালিক তাঁর বান্দাদের গুনাহের খবর রাখা ও তা পর্যবেক্ষণ করার জন্যে ( একাই) যথষ্টে |

১৮. কোনো ব্যক্তি দ্রুত (দুনিয়ার সুখ সম্ভোগ) পেতে চাইলে আমি তাকে এখানে তার জন্যে যতোটুক দিতে চাই তা সত্বর দিয়ে দেই, (কিন্তু) পরিশেষে তার জন্যে জাহান্নামই নির্ধারণ করে রাখি, যেখানে সে প্রবেশ করবে একান্ত নিন্দিত, অপমানিত ও বিতাড়িত অবস্থায়।

১৯. (অপরদিকে) যারা আখেরাত (ও তার সাফল্য) কামনা করে এবং তা পাওয়ার জন্যে যে পরিমাণ চষ্টো করা উচিত তেমনভাবেই চষ্টো করে, (সর্বোপরি) যারা হয় (সত্যিকার) মোমেন, (মূলত) তারাই হচ্ছে এমন লোক যাদের চেষ্টা সাধনা (আল্লাহর দরবারে) স্বীকৃত হয়।

২০. (হে নবী,) আমি এদের (যারা দুনিয়া চায়) এবং ওদের (যারা আখেরাত চায়), সবাইকেই তোমার মালিকের দান থেকে সাহায্য করে যাচ্ছি এবং তোমার মালিকের দান কারো জন্যেই বন্ধ নয় ।

২১. (হে নবী,) তুমি দেখো, কিভাবে আমি (পার্থিব সম্পদের বেলায়) তাদের একজনকে আরেকজনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করলাম; অবশ্য মর্যাদার দিক থেকে আখেরাত অনেক বড়ো, তার ফযীলতও বহুলাংশে বেশী।

২২. (হে মানুষ,) আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাউকে মাবুদ বানিয়ো না, নতুবা (পরকালে) তোমরা নিন্দিত অপমানিত ও নিসহায় হয়ে পড়বে।

২৩. তোমার মালিক আদেশ করছেন, তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কারো এবাদাত করো না এবং তোমরা (তোমাদের) পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো; তাদের একজন কিংবা উভয়ই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তাহলে তাদের সাথে) বিরক্তি সুচক কিছু বলো না এবং কখনো তাদের ধমক দিয়ো না, তাদের সাথে সম্মানজনক ভদ্রজনোচিত কথা বলো।

২৪. অনুকম্পায় তুমি ওদের প্রতি বিনয়াবনত থেকো এবং বলো, হে (আমার) মালিক, ওদের প্রতি (ঠিক সেভাবেই) তুমি দয়া করো, যেমনি করে শৈশবে ওরা আমাকে লালন পালন করেছিলো ।

২৫. (আসলে) তোমাদের মালিক তোমাদের অন্তরসমূহের ভেতরে যা আছে তা ভালো করেই জানেন; তোমরা (সত্যিই) যদি ভালো মানুষ হয়ে যাও তাহলে (আল্লাহ তায়ালা তা মাফ করে দেবেন, কেননা), যারা তাওবা করে তিনি তাদের (গুনাহ মাফ করে দেন।

২৬. আত্মীয় স্বজনকে তাদের (যথার্থ) পাওনা আদায় করে দেবে, অভাবগ্রস্ত এবং মোসাফেরদেরও (তাদের হক আদায় করে দেবে), কখনো অপব্যয় করো না । 

২৭. অবশ্যই অপব্যয়কারীরা হচ্ছে শয়তানের ভাই; আর শয়তান হচ্ছে তার মালিকের বড়োই অকৃতজ্ঞ!

২৮. যদি তোমাকে কখনো (এ) হকদারদের বিমুখ করতেই হয় (এ কারণে যে), তাকে দেয়ার মতো সম্পদ তোমার কাছে নেই এবং তুমি তোমার মালিকের কাছ থেকে অনুগ্রহ কামনা করছো, যা পাওয়ার তুমি আশাও রাখো তাহলে একান্ত নম্রভাবে তাদের সাথে কথা বলো।

২৯. কখনো নিজের (ব্যয়ের) হাত নিজের গর্দানের সাথে বেঁধে রেখো না (যাতে কার্পণ্য প্রকাশ পায়), আবার তা সমপুর্ণ খুলেও রেখো না, অন্যথায় (বেশী খরচ করার কারণে) তুমি নিন্দিত নিস্ব হয়ে যাবে ।

৩০. তোমার মালিক যাকে চান তার রেযেক বাড়িয়ে দেন, আবার যাকে চান তাকে কম করে দেন, অবশ্যই তিনি তাঁর বান্দাদের (প্রয়োজন সম্পর্কে) ভালোভাবেই জানেন এবং (তাদের অবস্থাও) তিনি দেখেন ।

৩১. তোমরা তোমাদের সন্তানদের কখনো দারিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না; আমি (যেমন) তাদের রেযেক দান করি (তেমনি) তোমাদেরও কেবল আমিই রেযেক দান করি; (রেযেকের ভয়ে) তাদের হত্যা করা (হবে) অবশ্যই একটি মহাপাপ।

৩২. তোমরা ব্যভিচারের ধারে কাছেও যেয়ো না, নিসন্দেহে এ হচ্ছে একটি অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট পথ।

৩৩. কোনো জীবনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করো না, যা আল্লাহ তায়ালা হারাম করেছেন; যে ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয় আমি তার উত্তরাধিকারীকে (এ) অধিকার দিয়েছি (সে চাইলে রক্তের বিনিময় দাবী করতে পারে), তবে সে যেন হত্যার (প্রতিশোধ নেয়ার) ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করে; কেননা (হত্যার মামলায় যে ব্যক্তি মযলুম) তাকেই সাহায্য করা হবে।

৩৪. এতীমদের মাল সম্পদের কাছেও যেয়ো না, তবে এমন কোনো পন্থায় যা (এতীমের জন্যে) উত্তম (বলে প্রমাণিত) হয় তা বাদে যতোক্ষণ পর্যন্ত সে (এতীম) তার বয়োপ্রাপ্তির পর্যায়ে উপনীত হয় এবং তোমরা (এদের দেয়া যাবতীয়) প্রতিশ্রুতি মেনে চলো, কেননা (কেয়ামতের দিন এ) প্রতিশ্রুতির ব্যাপারে (তোমাদের) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ।

৩৫. কোনো কিছু পরিমাপ করার সময় মাপ কিন্তু পুরোপুরিই করবে, আর (ওযন করার জিনিস হলে) দাঁড়িপাল্লা সোজা করে ধরবে; (লেনদেনের ব্যাপারে) এই হচ্ছে উত্তম পন্থা এবং পরিণামে (-র দিক থেকে) এটাই হচ্ছে উৎকৃষ্ট ।

৩৬. যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, (অযথা) তার পেছনে পড়ো না; কেননা (কেয়ামতের দিন) কান, চোখ ও অন্তর, এ সব কয়টির (ব্যবহার) সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে।

৩৭. আল্লাহর যমীনে (কখনোই) দম্ভভরে চলো না, কেননা (যতোই অহংকার করো না কেন), তুমি কখনো এ যমীন বিদীর্ণ করতে পারবে না, আর উচ্চতায়ও তুমি কখনো পর্বত সমান হতে পারবে না।

৩৮. (হে নবী,) এগুলো সবই (খারাপ কাজ,) এর মন্দ দিকগুলো তোমার মালিকের কাছেও একান্ত ঘৃণিত।

৩৯. তোমার মালিক ওহীর মাধ্যমে যে প্রজ্ঞা দান করেছেন এ (সব) হচ্ছে তার অন্তরভুক্ত, যা তোমার মালিক ওহীর মাধ্যমে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন; তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে মাবুদ বানাবে না, অন্যথায় তুমি নিন্দিত, অপমানিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষপ্তি হবে।

৪০. এটা কেমন কথা, তোমাদের মালিক তোমাদের জন্যে নির্ধারিত করেছেন পুত্র সন্তান, আর নিজে ফেরেশতাদের কন্যা হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন; তোমরা সত্যিই (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) একটা জঘন্য কথা বলে বেড়াচ্ছো।

৪১. আমি এই কোরআনে (এ কথাগুলো) সবিস্তারে বর্ণনা করেছি, যাতে করে তারা এর থেকে কিছু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে; কিন্তু এ (বিষয়)-টি তাদের (ঈমানের প্রতি) বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই বাড়ালো না।

৪২. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, যদি আল্লাহর সাথে আরো মাবুদ থাকতো যেমন করে এ (মোশরেক) লোকেরা বলে, তাহলে অবশ্যই তারা (এতোদিনে) আরশের মালিকের কাছে পৌঁছার একটা পথ বের করে নিতো।

৪৩. (মূলত) এরা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে যা কিছু (অবান্তর কথাবার্তা) বলে, তিনি তার চাইতে অনেক পৰিত্ৰ, অনেক মহিমান্বিত।

৪৪. সাত আসমান, যমীন এবং এ (দুয়ের) মাঝখানে যা কিছু (মজুদ) আছে তা সবই আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছে; (সৃষ্টিলোকে) কোনো একটি জিনিসই এমন নেই যা তাঁর প্রংশসা, পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের এ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পারো না; অবশ্যই তিনি একান্ত সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ ।

৪৫. (হে নবী,) যখন তুমি কোরআন পাঠ করো তখন তোমার ও যারা পরকালের ওপর বিশ্বাস করে না। তাদের মাঝে আমি একটি প্রচ্ছন্ন পর্দা এঁটে দেই ।

৪৬. আমি তাদের অন্তরের ওপর (এক ধরনের) আবরণ রেখে দেই, ওদের কানে (এনে) দেই বধিরতা, যাতে করে ওরা তা উপলব্ধি করতে না পারে, (তাই তুমি দেখবে); যখন তুমি কোরআনে তোমার মালিককে স্মরণ করতে থাকো, তখন তারা ঘৃণাভরে (তোমার কাছ থেকে) সরে পড়ে।

৪৭. আমি ভালো করেই জানি যখন ওরা কান পেতে তোমার কথা শোনে, তখন ওরা কান পেতে (কি কথা) শোনে (আমি এও জানি), যখন এই যালেমরা নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে বলে, তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত লোকেরই অনুসরণ করে চলেছো।

৪৮. হে নবী, দেখো, এরা তোমার ব্যাপারে কি ধরনের উপমা তৈরী করেছে, (মূলত এসব কারণেই) অতপর এরা গোমরাহ হয়ে গেছে, অতএব এরা সঠিক পথের সন্ধান পাবে না ।

৪৯. এ (মূর্খ) লোকেরা বলে, আমরা (মৃত্যুর পর) হাড্ডিতে পরিণত হয়ে পচে গেলেও কি নতুন সৃষ্টিরূপে পুনরায় উত্থিত হবো?

৫০. তুমি (তাদের) বলো, (মৃত্যুর পর) তোমরা পাথর হয়ে যাও কিংবা লোহায় (পরিণত) হও (সর্বাবস্থায়ই তোমরা পুণরুত্থিত হবে),

৫১. কিংবা এমন কিছু সৃষ্টি, তোমাদের ধারণায় যার (বাস্তবায়ন) হওয়া খুবই কঠিন, অচিরেই তারা বলবে, (অবস্থা এমন হলে) কে আমাদের পুনরায় জীবিত করবে; তুমি বলো (হাঁ), তিনিই করবেন যিনি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন, অতপর (তুমি দেখবে ) তারা তোমার সামনে মাথা নাড়াবে এবং বলবে, (তাহলে) কবে হবে (এ সব কিছু ); তুমি বলো, সম্ভবত সেদিন খুব শীঘ্রই (সংঘটিত) হবে।

৫২. যেদিন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের ডাক দেবেন এবং তোমরা সবাই তাঁর প্রশংসা করতে করতে তাঁর ডাকে সাড়া দেবে, (আর) তোমরা ভাববে, সামান্য কিছু সময়ই তোমরা (কবরে) কাটিয়ে এসেছো!

৫৩. (হে নবী,) আমার বান্দাদের বলে দাও, তারা যেন (কথা বলার সময়) এমন সব কথা বলে যা উত্তম; (কেননা) শয়তান (খারাপ কথা দ্বারা) তাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির উস্কানি দেয়; আর শয়তান তো হচ্ছে মানুষের প্রকাশ্য দুশমন ।

৫৪. (হে মানুষ,) তোমাদের মালিক তোমাদের সম্পর্কে ভালো করেই জানেন; তিনি চাইলে তোমাদের ওপর দয়া করবেন, কিংবা তিনি চাইলে তোমাদের শাস্তি দেবেন (হে নবী); আমি তো তোমাকে তাদের ওপর কোনো অভিভাবক করে পাঠাইনি।

৫৫. তোমার মালিক (তাদের) ভালো করেই জানেন যা আসমানসমূহ ও যমীনের মাঝে (মজুদ) রয়েছে; আমি একেকজন নবীকে একেকজনের ওপর (স্বতন্ত্র কিছু) মর্যাদা দান করেছি, (এমনিভাবেই আমি) দাউদকে যাবুর কেতাব দান (করে মর্যাদাবান) করেছি ।

৫৬. (হে নবী, এদের) বলো, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের (মারুদ) মনে করে ডাকো, তাদের ডেকে দেখো, (দেখবে,) তারা তোমাদের কাছ থেকে কষ্ট দুর করার কোনো ক্ষমতাই রাখেনা না ক্ষমতা রাখে (তাকে) বদলে দেয়ার।

৫৭. ওরা যাদের ডাকে তারা (স্বয়ং) নিজেরাই তো তাদের মালিকের কাছে (পৌঁছার) উসিলা তালাশ করতে থাকে, (তারা দেখতে চায়) তাদের মধ্যে কে (আল্লাহ তায়ালার) নিকটতর হতে পারে এবং তারা তাঁরই দয়া প্রত্যাশা করে, তাঁর আযাবকে ভয় করে; (মূলত) তোমার মালিকের আযাব এমনই একটি বিষয় যা একান্ত ভীতিপ্রদ।

৫৮. এমন কোনো একটি জনপদ নেই যা আমি কেয়ামতের দিন আসার আগেই ধ্বংস করে দেবো না! কিংবা তাদের আমি কঠোর আযাব দেবো না! এসব কথা তো (আমার পাঠানো) কেতাবেই লিপিবদ্ধ আছে।

৫৯. আমাকে (আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠানো থেকে এ ছাড়া অন্য কোনো কিছুই নিবৃত্ত করতে পারেনি। যে, তাদের আগের লোকেরা তা অস্বীকার করেছে; আমি সামুদ জাতিকে দৃশ্যমান নিদর্শন (হিসেবে) একটি উষ্ট্রী পাঠিয়েছিলাম, অতপর তারা (আমার) সে (নিদর্শন)টির সাথে যুলুম করেছে; (আসলে) আমি ভয় দেখানোর জন্যেই (তাদের কাছে আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই।

৬০. (হে নবী,) যখন আমি তোমাকে বলেছিলাম, তোমার মালিক (তার অপরিমিত জ্ঞানের পরিধি দিয়ে) সব মানুষদের পরিবষ্টেন করে আছেন; যে স্বপ্ন আমি তোমাকে দেখিয়েছিলাম তাকে আমি (আসলে) মানুষদের জন্যে পরীক্ষার (বিষয়) বানিয়ে দিয়েছিলাম এবং কোরআনের (বর্ণিত) অভিশপ্ত গাছটিকেও (পরীক্ষার কারণ বানিয়েছি), (এভাবেই) আমি তাদের ভয় দেখাই, (মূলত) আমার ভয় দেখানো তাদের গোমরাহীই কেবল বাড়িয়ে দিয়েছে!

৬১. (স্মরণ করো,) যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, তোমরা আদমকে সাজদা করো, তখন তারা সবাই (আমার আদেশে) সাজদা করলো, ইবলীস ছাড়া; সে বললো, আমি কি তাকে সাজদা করবো যাকে তুমি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো ।

৬২. সে বললো, তুমি কি সে ব্যক্তিকে দেখেছো যাকে তুমি আমার ওপর মর্যাদা দান করলে! যদি তুমি আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দাও, তাহলে আমি অবশ্যই তার (গোটা) বংশধরদের নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসবো, তবে একটি ক্ষুদ্র দল ছাড়া (যারা বেঁচে থাকতে পারবে) ।

৬৩. আল্লাহ তায়ালা বললেন, যাও, (দুর হয়ে যাও এখান থেকে, তাদের মধ্যে) যারা তোমার আনুগত্য করবে, তোমাদের সবার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, আর (জাহান্নামের) শাস্তিও পুরোপুরি (দেয়া হবে)।

৬৪. এদের মধ্যে যাকেই পারো তুমি তোমার আওয়ায দিয়ে গোমরাহ করে দাও, তোমার যাবতীয় অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে তাদের ওপর গিয়ে চড়াও হও, ধনসম্পদ ও সন্তান সন্তনিতে তুমি তাদের সাথী হয়ে যাও এবং (যতো পারো) তাদের (মিথ্যা) প্রতিশ্রুতি দিতে থাকো; আর শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

৬৫. নিসন্দেহে যারা আমার (খাস) বান্দা তাদের ওপর তোমার কোনো ক্ষমতা চলবে না; (হে নবী,) তোমার মালিক (অবশ্যই তাদের) কর্মবিধায়ক হিসেবে যথষ্টে।

৬৬. (হে মানুষ,) তোমাদের মালিক তো হচ্ছেন তিনি, যিনি তোমাদের জন্যে সমুদ্রে জলযান পরিচালনা করেন, যাতে করে তোমরা (জলে স্থলে তাঁর প্রদত্ত) রেযেক তালাশ করতে পারো; নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের ওপর পরম দয়ালু।

৬৭. আর (উত্তাল) সমুদ্রের মধ্যে যখন তোমাদের ওপর কোনো বিপদ মসিবত আপতিত হয় তখন আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে (ইতিপূর্বে) তোমরা যাদের ডাকতে তারা সবাই (তোমাদের মন থেকে) হারিয়ে যায় এবং (ডাকার জন্যে) এক আল্লাহই (সেখানে বাকী) থেকে যান; অতপর তিনি যখন তোমাদের স্থলে (এনে বিপদ থেকে) উদ্ধার করেন, তখনই তোমরা তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও; (আসলে) মানুষ হচ্ছে (নেহায়াত) অকৃতজ্ঞ।

৬৮. তোমরা কি করে নিশ্চিত হয়ে গেছো, তিনি তোমাদের স্থলে এনে (এর কোথাও) তোমাদের গেড়ে দেবেন না, অথবা তোমাদের ওপর (মরণমুখী) কোনো ধূলিঝড় নাযিল করবেন না, (এমন অবস্থা যখন আসবে) তখন তোমরা কোনো অভিভাবকও পাবে না,

৬৯. অথবা তোমরা এ ব্যাপারেও কি নিশ্চিত হয়ে গেছো যে, তিনি পুনরায় তোমাদের সেখানে নিয়ে যাবেন না এবং (স্থলে এসে যে আচরণ তোমরা তাঁর সাথে করছো,) তোমাদের (সেই) অকৃতজ্ঞতার শাস্তিস্বরূপ তিনি অতপর তোমাদের ওপর প্রচন্ড ঝড় পাঠাবেন না এবং তোমাদের (উত্তাল) সমুদ্রে ডুবিয়ে দেবেন না! (আর এমন অবস্থা দেখা দিলে) তোমাদের জন্যে (সেদিন) আমার মোকাবেলায় কোনো সাহায্যকারী পাবে না।

৭০. আমি অবশ্যই আদম সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে আমি ওদের চলাচলের বাহন দিয়েছি এবং তাদের পবিত্র (জিনিসসমূহ দিয়ে) আমি রেযেক দান করেছি, অতপর আমি অন্য যতো কিছু সৃষ্টি করেছি তার অধিকাংশের ওপরই আমি তাদের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।

৭১. যেদিন আমি প্রত্যেক জাতিকে তাদের নেতাদের সাথে ডাকবো, সেদিন যাদের আমলনামা তাদের ডান হাতে দেয়া হবে, তারা (খুশী হয়ে তা) পড়তে শুরু করবে, তাদের ওপর সেদিন বিন্দুমাত্রও যুলুম করা হবে না।

৭২. যে ব্যক্তি (জেনে বুঝে) এখানে (সত্য থেকে) অন্ধ হয়ে থেকেছে, পরকালেও সে (আল্লাহর নেয়ামত থেকে) অন্ধ থেকে যাবে এবং (হেদায়াত থেকেও) সে হবে পথহারা!

৭৩. (হে নবী,) আমি তোমার প্রতি যে ওহী পাঠিয়েছি, তার (প্রচার ও প্রতিষ্ঠা) থেকে তোমার পদস্খলন ঘটাবার ব্যাপারে এরা কোনো প্রকার চষ্টো থেকেই বিরত থাকেনি, যাতে করে তুমি (ওহীর বদলে) আমার সম্পর্কে কিছু মিথ্যা কথা বানাতে শুরু করো, (যদি তেমন কিছু করতে) তাহলে এরা তোমাকে (তাদের ঘনিষ্ঠ) বন্ধু বানিয়ে নিতো।

৭৪. যদি আমি তোমাকে অবিচল না রাখতাম তাহলে তুমি অবশ্যই তাদের দিকে সামান্য কিছুটা হলেও) ঝুঁকে পড়তে।

৭৫. (আর এমনটি যদি হতো) তাহলে (এ) জীবনে ও মৃত্যু পরবর্তীকালে আমি তোমাকে দ্বিগুণ (শাস্তি) আস্বাদন করাতাম, অতপর তুমি আমার বিরুদ্ধে তখন কোনোই সাহায্যকারী পেতে না ।

৭৬. (হে নবী,) এরা এ ব্যাপারেও কোনো চেষ্টার ত্রুটি করেনি যে, তোমাকে এ ভূখন্ড থেকে উৎখাত করে (এর বাইরে কোথাও ফেলে) দেবে, যদি তেমনটি হতো তাহলে তোমার পরে তারা নিজেরাও (সেখানে) সামান্য কিছুক্ষণই মাত্র টিকে থাকতে পারতো!

৭৭. তোমার আগে আমি যতো নবী রসুল পাঠিয়েছিলাম তাদের ব্যাপারে এই ছিলো আমার নিয়ম, আর তুমি আমার সে নিয়মের কখনো রদবদল (দেখতে) পাবে না।

৭৮. (হে নবী,) সূর্য ঢলে যাওয়ার পর থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত (সময়ের ভেতর) নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং ফজরের সময় কোরআন তেলাওয়াত (জারি রাখবে); অবশ্য ফজরের কোরআন তেলাওয়াত (সহজেই) পরিলক্ষিত হয়।

৭৯. রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ (নামায) প্রতিষ্ঠা করো, এটা তোমার জন্যে (ফরয নামাযের) অতিরিক্ত (একটা নামায), আশা করা যায় তোমার মালিক এর (বরকত) দ্বারা তোমাকে প্রশংসিত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবেন।

৮০. তুমি বলো, হে আমার মালিক (যেখানেই আমাকে নিয়ে যাও না কেন), তুমি আমাকে সত্যের সাথে নিয়ে যেও এবং (যেখান থেকেই আমাকে বের করো না কেন) সত্যের সাথেই বের করো এবং তোমার কাছ থেকে আমার জন্যে একটি সাহায্যকারী (রাষ্ট্র) শক্তি প্রদান করো ।

৮১. তুমি বলো সত্য এসে গেছে এবং মিথ্যা (চিরতরে) বিলুপ্ত হয়ে গেছে; অবশ্যই মিথ্যাকে বিলুপ্ত হতে হবে।

৮২. আমি কোরআনে যা কিছু নাযিল করি তা হচ্ছে ঈমানদারদের জন্যে (তাদের রোগের) উপশমকারী ও রহমত, কিন্তু এ সত্ত্বেও তা যালেমদের জন্যে ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না ।

৮৩. যখন আমি মানুষদের ওপর কোনোরকম অনুগ্রহ করি তখন (তারা কৃতজ্ঞতার বদলে আমার দিক থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং (নিজেকে) দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়, আবার যখন (কোনোরকম) কষ্ট মসিবত তাকে স্পর্শ করে তখন সে (একেবারে) নিরাশ হয়ে পড়ে।

৮৪. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ প্রকৃতির ওপর কাজ করে যাচ্ছে; অতপর তোমাদের মালিক ভালো করেই জানেন কে সঠিক পথের ওপর রয়েছে।

৮৫. (হে নবী,) এরা তোমার কাছে জানতে চায় রূহ কি (জিনিস), তুমি (এদের) বলো, রূহ হচ্ছে আমার মালিকের আদেশ সম্পর্কিত একটি বিষয়, (আসলে সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে) তোমাদের যা কিছু জ্ঞান দেয়া হয়েছে তা নিতান্ত কম।

৮৬. (তারপরও) আমি তোমার প্রতি যে (কতোটুক) ওহী পাঠিয়েছি, যদি আমি চাইতাম তা অবশ্যই তোমার ওপর থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারতাম, আর (তেমন কিছু হলে) তুমি আমার মোকাবেলায় কোনোই সাহায্যকারী পেতে না,

৮৭. কিন্তু (এটা হচ্ছে) তোমার মালিকের একান্ত দয়া; এতে কোনোই সন্দেহ নেই, তোমার ওপর তার অনুগ্রহ অনেক বড়ো।

৮৮. তুমি (তাদের এও) বলো, যদি সব মানুষ ও জ্বিন (এ কাজের জন্যে) একত্রিত হয় যে, তারা এ কোরআনের অনুরূপ (কোনো কিছু) বানিয়ে আনবে, তাতেও তারা এর মতো কিছু (তৈরী করে) আনতে পারবে না, যদিও এ ব্যাপারে তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয় (তবুও নয়)।

৮৯. আমি এ কোরআনের মধ্যে মানুষদের (বুঝানোর) জন্যে সব ধরণের উপমা দ্বারা (হেদায়াতের বাণী) বিশদভাবে বর্ণনা করেছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা অমান্য না করে ক্ষান্ত হলো না।

৯০. এরা বলে, কখনোই আমরা তোমার ওপর ঈমান আনবো না, যতোক্ষণ না তুমি আমাদের জন্যে এ যমীন থেকে এক প্রস্রবণ (ধারা) প্রবাহিত না করবে,

৯১. কিংবা তোমার জন্যে খেজুরের অথবা আংগুরের একটি বাগান (তৈরী) হবে এবং তাতে তুমি অসংখ্য নদীনালা বইয়ে দেবে,

৯২. অথবা যেমন করে তুমি (কেয়ামত সম্পর্কে) মনে করো সে অনুযায়ী আসমানকে টুকরো টুকরো করে আমাদের ওপর ফেলে দেবে অথবা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা ও (তাঁর) ফেরেশতাকে আমাদের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেবে,

৯৩. কিংবা থাকবে তোমার কোনো স্বর্ণ নির্মিত ঘর অথবা তুমি আরোহণ করবে আসমানে; কিন্তু আমরা তোমার (আকাশে) চড়ার ঘটনাও বিশ্বাস করবো না, যতোক্ষণ না তুমি (সেখান থেকে) আমাদের জন্যে একটি কিতাব নিয়ে আসবে যা আমরা পড়তে পারবো; (হে নবী,) তুমি (এদের শুধু এটুকু) বলো, মহান পবিত্র (আমার) আল্লাহ তায়ালা, আমি তো কেবল (তাঁর পক্ষ থেকে) একজন মানুষ, (একজন) রসুল বৈ কিছুই নই।

৯৪. যখনই মানুষদের কাছে (আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে) হেদায়াত এসেছে তখন তাদের ঈমান আনা থেকে এ ছাড়া অন্য কোনো জিনিসই বিরত রাখেনি যে, তারা বলতো, আল্লাহ তায়ালা (আমাদের মতো) একজন মানুষকেই কি নবী করে পাঠালেন!

৯৫. (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, (যদি এ) যমীনে ফেরেশতারাই (বসবাস করতো এবং তারা এখানে) নিশ্চিন্তভাবে ঘুরে বেড়াতো, তাহলে অবশ্যই আমি তাদের জন্যে আসমান থেকে কোনো ফেরেশতাকেই নবী করে পাঠাতাম।

৯৬. তুমি বলো, আমার এবং তোমাদের মাঝে আল্লাহ তায়ালাই (আমি মনে করি) সাক্ষী হিসেবে যথষ্টে, অবশ্যই তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে জানেন, তিনি (তাদের সব আচরণও) দেখেন।

৯৭. যাকে আল্লাহ তায়ালা হেদায়াত দান করেন সে-ই (মূলত) হেদায়াতপ্রাপ্ত হয়, আর যাকে তিনি গোমরাহ করেন তাদের (হেদায়াতদানের) জন্যে (হে নবী,) তুমি আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর অন্য কাউকেই সাহায্যকারী পাবে না; এমন সব গোমরাহ লোকদের আমি কেয়ামতের দিন মুখের ওপর ভর দিয়ে চলা অবস্থায় একত্রিত করবো, এরা তখন হবে অন্ধ, বোবা ও বধির; এদের সবার ঠিকানা হবে জাহান্নাম; যতোবার তা স্তিমিত হয়ে আসবে ততোবার আমি তাকে তাদের জন্যে ( প্রজ্বলিত করে) আরো বাড়িয়ে দেবো।

৯৮. এ হচ্ছে তাদের (যথার্থ) শাস্তি, কেননা তারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করতো, তারা আরো বলতো, (মৃত্যুর পর) যখন আমরা অস্থিতে পরিণত হয়ে যাবো ও চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবো, তখনও কি আমরা নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হবো?

৯৯. এ (মূর্খ) লোকেরা কি ভেবে দেখেনি, আল্লাহ তায়ালা যিনি আসমানসমূহ ও যমীন পয়দা করেছেন, তিনি এ বিষয়ের ওপরও ক্ষমতা রাখেন যে, তাদের মতো মানুষদের তিনি সৃষ্টি করতে পারেন, (দ্বিতীয় বার) তাদের পয়দা করার জন্যে একটি ক্ষণ তিনি নির্ধারণ করে রেখেছেন যাতে কোন রকম সন্দেহের অবকাশ নেই; তথাপি এ যালেম লোকেরা (সেদিনকে) অস্বীকার করেই যাচ্ছে।

১০০. (হে নবী,) বলো, আমার মালিকের দয়ার ভান্ডার যদি তোমাদের করায়ত্তে থাকতো, তবে তা ব্যয় হয়ে যাবে এ ভয়ে তোমরা তা আকঁড়ে রাখতে চাইতে, (আসলে) মানুষ (স্বভাবগতভাবেই) অতিশয় কৃপণ,

১০১. আমি মুসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম, অতএব (হে নবী), তুমি স্বয়ং বনী ইসরাঈলদের কাছেই (কথাটা) জিজ্ঞেস করো, যখন সে তাদের কাছে (নবী হয়ে) এসেছিলো, তখন ফেরাউন তাকে বলেছিলো, হে মুসা, আমি মনে করি তুমি একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তি ।

১০২. (এর জবাবে) সে (মুসা) বলেছিলো, তুমি একথা ভালো করেই জানো, (নরওতের প্রমাণ সম্বলিত এসব) অন্তদৃষ্টিসম্পন্ন জ্ঞান আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক ছাড়া আর কেউই নাযিল করেননি, হে ফেরাউন, আমি তো মনে করি তুমি সত্যিই একজন ধ্বংসপ্রাপ্ত মানুষ।

১০৩. অতপর সে (ফেরাউন) তাদের (এ) যমীন থেকে উৎখাত করে দিতে চাইলো, কিন্তু আমি তাকে এবং যারা তার সংগী-সাথী ছিলো তাদের সবাইকে (এ না-ফরমানীর জন্যে) সমুদ্রে ডুবিয়ে দিয়েছি ।

১০৪. অতপর আমি বনী ইসরাঈলদের বললাম, (এবার) তোমরা এ যমীনে (নির্বিবাদে) বসবাস করো, এরপর যখন আখেরাতের প্রতিশ্রুতি (-র সময়) আসবে তখন আমি তোমাদের সবাইকে সংকুচিত করে (আমার সামনে) নিয়ে আসবো।

১০৫. এ (কোরআন)-কে আমি সত্য (বাণী) সহকারে নাযিল করেছি, তাই তা সত্য নিয়েই নাযিল হয়েছে; আমি তো তোমাকে কেবল (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নামের) সতর্ককারীরূপেই প্রেরণ করেছি ।

১০৬. আমি কোরআনকে (ভাগে ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে করে তুমিও ক্রমে ক্রমে তা মানুষদের সামনে পড়তে পারো, আর (এ কারণেই) আমি তা পর পর নাযিল করেছি ।

১০৭. (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা এ (কোরআন)-কে মানো কিংবা না মানো (তাতে এর মর্যাদা মোটেই ক্ষুণ্ন হবে না), যাদের এর আগে (আসমানী কেতাবের) জ্ঞান দেয়া হয়েছে (তাদের অবস্থা হচ্ছে), যখনি তাদের সামনে এটি পড়া হয় তারা নিজেদের মুখের ওপর সাজদায় লুটিয়ে পড়ে।

১০৮. তখন তারা বলে, আমাদের মালিক পবিত্র, অবশ্যই আমাদের মালিকের ওয়াদা পরিপূর্ণ হবে ।

১০৯. আর তারা কাঁদতে কাঁদতে মুখের ওপর ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে, (মূলত) এ (কোরআন) তাদের বিনয়ই বৃদ্ধি করে ।

১১০. তুমি (আরো) বলো, তোমরা (আল্লাহ তায়ালাকে) আল্লাহ (বলে) ডাকো কিংবা রহমান; তোমরা যে নামেই তাঁকে ডাকো, তাঁর সবকটি নামই উত্তম, (হে নবী), চীৎকার করে নামায পড়ো না, আবার তা অতিশয় ক্ষীণভাবেও নয়, বরং (নামায পড়ার সময়) এ দু'য়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করো।

১১১. তুমি আরো বলো, সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি কখনো কোনো সন্তান গ্রহণ করেননি, তাঁর সার্বভৌমত্বে কখনোই কারো কোনো অংশীদারিত্ব ছিলো না, না তিনি কখনো দুর্দশাগ্রস্ত হন। যে, তাঁর কোনো অভিভাবকের প্রয়োজন হয় (তিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে), তুমি (শুধু) তাঁরই মাহাত্ম্য ঘোষণা করো পরমতম মাহাত্ম্য।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url