আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা মারইয়ামের বাংলা অনুবাদ | সূরা মারইয়াম | Surah Maryam | سورة مريم
সূরা মারইয়ামের বাংলা অনুবাদ
সূরা মারইয়াম, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৯৮, রুকু ৬
সূরা মারইয়াম
রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে
১. কাফ-হা-ইয়া-আঈন-ছোয়াদ |
২. (হে নবী, এ হচ্ছে) তোমার মালিকের অনুগ্রহের (কথাগুলো) স্মরণ (করা), যা তিনি তাঁর এক অনুগত বান্দা যাকারিয়ার ওপর (প্রেরণ) করেছিলেন,
৩. যখন সে একান্ত নীরবে তার মালিককে ডাকছিলো ।
৪. সে বলেছিলো, হে আমার মালিক, আমার (শরীরের) হাড় দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং (আমার) মাথা শুভ্রোজ্জ্বল হয়ে গেছে (তুমি আমার দোয়া কবুল করো), হে আমার মালিক, আমি তো কখনো তোমাকে ডেকে ব্যর্থ হইনি!
৫. আমার (মৃত্যুর পর) আমি আমার পেছনে পড়ে থাকা আমার ভাই বন্ধুদের (দ্বীনের ব্যাপারে) আশংকা করছি, (অপরদিকে) আমার স্ত্রীও হচ্ছে বন্ধ্যা, (সন্তান ধারণে সে সক্ষম নয়, তাই) তুমি একান্ত তোমার কাছ থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করো,
৬. যে আমার উত্তরাধিকারিত্ব করবে উত্তরাধিকত্ব করবে ইয়াকুবের বংশের, হে (আমার) মালিক, তুমি তাকে একজন সন্তুষভাজন ব্যক্তি বানাও |
৭. (আল্লাহ তায়ালা বললেন) হে যাকারিয়া, আমি তোমাকে একটি ছেলে (হওয়া)-র সুখবর দিচ্ছি, তার নাম (হবে) ইয়াহইয়া, এর আগে এ নামে আমি কোনো মানুষের নামকরণ করিনি |
৮. সে বললো, হে আমার মালিক, আমার ছেলে হবে কিভাবে, আমার স্ত্রী তো বন্ধ্যা এবং আমি নিজেও (এখন) বার্ধক্যের শেষ সীমানায় এসে উপনীত হয়েছি ।
৯. আল্লাহ তায়ালা বললেন (হাঁ), এটা এভাবেই (হবে), তোমার মালিক বলছেন, এটা আমার জন্যে নিতান্ত সহজ কাজ, আমি তো এর আগে তোমাকেও সৃষ্টি করেছিলাম (তখন) তুমিও তো কিছু ছিলে না!
১০. সে বললো, হে আমার মালিক, আমাকে (এ জন্যে কিছু) একটা নিদর্শন (বলে) দাও; তিনি বললেন (হাঁ), তোমার নিদর্শন হচ্ছে, (সুস্থ থেকেও) তুমি (ক্রমাগত) তিন রাত মানুষদের সাথে কোনোরকম কথাবার্তা বলবে না |
১১. অতপর সে কামরা থেকে বেরিয়ে তার জাতির লোকদের কাছে এলো এবং ইশারা ইংগিতে তাদের বুঝিয়ে দিলো, তারা যেন সকাল সন্ধ্যা আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে।
১২. (এরপর এক সময় ইয়াহইয়ার জন্ম হলো, সে যখন বড়ো হলো, তখন আমি তাকে বললাম, হে ইয়াহইয়া, (আমার) কেতাবকে তুমি শক্ত করে ধারণ করো; (আসলে) আমি তাকে ছেলে বেলায়ই বিচার বুদ্ধি দান করেছিলাম,
১৩. সে আমার একান্ত কাছ থেকেই হৃদয়ের কোমলতা ও পবিত্রতা লাভ করলো; সে ছিলো (আসলেই) একজন পরহেযগার ব্যক্তি,
১৪. (তদুপরি) সে ছিলো পিতা মাতার একান্ত অনুগত কখনো সে অবাধ্য ও নাফরমান ছিলো না |
১৫. তার ওপর শাস্তি (বর্ষিত হয়েছিলো), যেদিন তাকে জন্ম দেয়া হয়েছে, (শাস্তি বর্ষিত হবে সেদিন) যেদিন সে মৃত্যু বরণ করবে এবং যেদিন পুনরায় সে জীবিত হয়ে পুনরুত্থিত হবে ।
১৬. (হে নবী,) এ কেতাবে মারইয়ামের কথা তুমি স্মরণ করো। (বিশেষ করে সে সময়ের কথা) যখন সে তার পরিবারের লোকজনদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব দিকের একটি ঘরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলো ।
১৭. অতপর লোকদের কাছ থেকে (নিজেকে আড়াল করার জন্যে) সে পর্দা করলো | আমি তার কাছে আমার রূহ (জিবরাঈল)-কে পাঠালাম, সে পূর্ণ মানুষের আকৃতিতে তার সামনে আত্মপ্রকাশ করলো ।
১৮. সে বললো (হে আগত ব্যক্তি), তুমি যদি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, তাহলে আমি তোমার (অনষ্টি) থেকে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাই |
১৯. সে বললো, আমি তোমার মালিকের পাঠানো দুত, (আমি তো এজন্যে এসেছি) যেন তোমাকে একটি পবিত্র সন্তান দিয়ে যেতে পারি |
২০. সে বললো (এ কি বলছো তুমি)! আমার ছেলে হবে কিভাবে, আমাকে (তো আজ পর্যন্ত) কোনো পুরুষ স্পর্শও করেনি, আর না আমি কখনো অসতী ছিলাম!
২১. সে বললো (হাঁ), এভাবেই (হবে), তোমার মালিক বলছেন, তা আমার জন্যে খুবই সহজ কাজ এবং আমি তাকে মানুষদের জন্যে (কুদরতের) একটি নিদর্শন ও আমার কাছ থেকে অনুগ্রহ (-সাদৃশ্য একটি মানুষ) বানাতে চাই, (মূলত) এটা ছিলো (আমার পক্ষ থেকে) এক স্থিরীকৃত ব্যাপার
২২. অতপর সে তাকে (গর্ভে) ধারণ করলো এবং তাকে সহ দুরে (কোনো) এক জায়গায় চলে গেলো |
২৩. তারপর তার প্রসব বেদনা তাকে এক খেজুর গাছের নীচে নিয়ে এলো, সে বললো, হায়! এর আগেই যদি আমি মরে যেতাম এবং আমি যদি (মানুষদের স্মৃতি থেকে) সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে যেতাম!
২৪. তখন একজন (ফেরেশতা) তাকে তার নিচের দিক থেকে আহ্বান করে বললো (হে মারইয়াম), তুমি কোনো রকম দুঃখ করো না, তোমার মালিক (তোমার পিপাসা নিবারণের জন্যে) তোমার (পায়ের) নীচে একটি (পানির) ঝর্ণা বানিয়ে দিয়েছেন,
২৫. তুমি এ খেজুর গাছের কান্ড তোমার দিকে নাড়া দাও, (দেখবে) তা তোমার ওপর পাকা ও তাজা খেজুর ফেলছে,
২৬. অতপর (এ গাছের) খেজুর তুমি খাও এবং (এ ঝর্ণার) পানীয় পান করো এবং (সন্তানের দিকে তাকিয়ে তোমার) চোখ জ্বড়াও, (ইতিমধ্যে) যখনি তুমি মানুষদের কাউকে দেখো তাহলে বলবে, আমি আল্লাহ তায়ালার নামে রোযার মান্নত করেছি, (এ কারণে) আমি আজ কোনো মানুষের সাথে কথা বলবো না |
২৭. অতপর সে তাকে নিজের কোলে বহন করে নিজের জাতির কাছে (ফিরে) এলো; লোকেরা (তার কোলে সন্তান দেখে) বললো, হে মারইয়াম, তুমি তো সত্যিই এক অদ্ভুত কান্ড করে বসেছো ।
২৮. হে হারূনের বোন (একি করলে তুমি)? তোমার পিতা তো কোনো অসত্ ব্যক্তি ছিলো না, তোমার মাতাও তো (চারিত্রিক দিক থেকে) কোনো খারাপ (মহিলা) ছিলো না!
২৯. সে (সবাইকে) তার (কোলের শিশুটির) দিকে ইশারা করলো (এবং বললো তোমাদের যদি কিছু জিজ্ঞেস করার থাকে তাহলে একেই জিজ্ঞেস করো); তারা বললো, আমরা তার সাথে কিভাবে কথা বলবো, যে (এখনো) দোলনার শিশু!
৩০. (এ কথা শুনেই) সে (শিশু) বলে ওঠলো (হাঁ), আমি হচ্ছি আল্লাহ তায়ালার বান্দা | তিনি আমাকে কেতাব দিয়েছেন এবং আমাকে তিনি নবী বানিয়েছেন,
৩১. যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে (তাঁর) অনুগ্রহভাজন করবেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যতোদিন আমি বেঁচে থাকি ততোদিন যেন আমি নামায প্রতিষ্ঠা করি এবং যাকাত প্রদান করি |
৩২. আমি যেন মায়ের প্রতি অনুগত থাকি, (আল্লাহর শোকর,) তিনি আমাকে না-ফরমান বানাননি |
৩৩. আমার ওপর (আল্লাহ তায়ালার বিশেষ) প্রশাস্তি যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, প্রশাস্তি (থাকবে) সেদিন, যেদিন আমি (আবার) মৃত্যুবরণ করবো এবং (মৃত্যুর পরে) যেদিন জীবিত অবস্থায় পুনরুত্থিত হবো |
৩৪. এ হচ্ছে মারইয়াম পুত্র ঈসা এবং (এ হচ্ছে তার) আসল ঘটনা, যা নিয়ে তারা অযথাই সন্দেহ করে |
৩৫. (তারা বলে, সে আল্লাহ তায়ালার সন্তান, কিন্তু) সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহ তায়ালার কাজ নয়, তিনি (এ থেকে) অনেক পবিত্র; তিনি যখন কোনো কিছু করতে চান তখন শুধু বলেন হও' এবং সাথে সাথেই তা হয়ে যায়'।
৩৬. অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা আমার মালিক এবং তোমাদেরও মালিক, অতএব তোমরা সবাই তাঁরই গোলামী করো; আর এটাই হচ্ছে (সহজ ও ) সরল পথ।
৩৭. এরপর (তাদের) দলগুলো নিজেদের মাঝে (মারইয়াম পুত্রকে নিয়ে) নানা মতানৈক্য সৃষ্টি করলো, অতপর (যারা আল্লাহ তায়ালার ঘোষণা) অস্বীকার করলো তাদের জন্যে রয়েছে (কেয়ামতের) কঠিন দিনের দুর্ভোগ |
৩৮. যেদিন এরা আমার সামনে এসে হাযির হবে, সেদিন তারা ভালো করেই শুনবে এবং ভালো করেই দেখতে পাবে, কিন্তু আজ এ যালেমরা (না শোনা ও না দেখার ভান করে) সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত হয়ে আছে।
৩৯. (হে নবী,) সেই আক্ষেপের দিনটি সম্পর্কে তুমি এদের সাবধান করে দাও, যেদিন (জান্নাত জাহান্নামের ব্যাপারে চূড়ান্ত) সন্ধিান্ত হয়ে যাবে | (এখন তো) এরা এ ব্যাপারে গাফলতে (ডুবে রয়েছে, ওরা (আল্লাহর ওপরও) ঈমান আনছে না |
৪০. নিন্দেহে (এ) পৃথিবীর মালিক আমি এবং তার ওপর যা কিছু রয়েছে সেসবেরও, আর তাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে |
৪১. (হে নবী, এই) কেতাবে তুমি ইবরাহীম (-এর ঘটনা)-কে স্মরণ করো, অবশ্যই সে ছিলো এক সত্যবাদী নবী | ৪২. (বিশেষ করে সে সময়ের কথা) যখন সে তার পিতাকে বললো, হে আমার পিতা, তুমি কেন এমন একটা জিনিসের পূজা করো, যা দেখতে পায় না, শুনতে পায় না, যা তোমার কোনো কাজেও আসে না |
৪৩. হে আমার পিতা, আমার কাছে (আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে) যে জ্ঞান এসেছে তা তোমার কাছে আসেনি, অতএব তুমি আমার কথা শোনো, আমি তোমাকে সোজা পথ দেখাবো |
৪৪. হে আমার পিতা (সে জ্ঞানের মৌলিক কথা হচ্ছে), তুমি শয়তানের গোলামী করো না; কেননা শয়তান হচ্ছে পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার না-ফরমান |
৪৫. হে আমার পিতা, আমার ভয় হচ্ছে, (না-ফরমান শয়তানের গোলামী করলে) পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালার কোনো আযাব এসে তোমাকে স্পর্শ করবে, আর (এর ফলে জাহান্নামে) তুমি শয়তানেরই সাথী হয়ে যাবে।
৪৬. সে বললো, হে ইবরাহীম, তুমি কি (আসলেই) আমার দেব দেবীগুলো থেকে বিমুখ হয়ে যাচ্ছো, (তবে শোনো, এখনো) যদি তুমি এসব কিছু থেকে ফিরে না আসো তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে পাথর মেরে হত্যা করবো, (আর যদি বেঁচে থাকতে চাও তাহলে) তুমি চিরতরে আমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাও |
৪৭. সে বললো (আচ্ছা), তোমার প্রতি আমার সালাম, (আমি তোমার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি; কিন্তু এ সত্ত্বেও) আমি আমার মালিকের কাছে তোমার জন্যে মাগফেরাত কামনা করতে থাকবো; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা আমার প্রতি অতিশয় মেহেরবান।
৪৮. আমি তোমাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছি এবং আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ডাকো তাদের সবার কাছ থেকেও (আলাদা হয়ে যাচ্ছি), আমি তো আমার মালিককেই ডাকতে থাকবো, আশা করি) আমার মালিককে ডেকে আমি কখনো ব্যর্থকাম হবো না |
৪৯. অতপর যখন সে সত্যিই তাদের কাছ থেকে পৃথক হয়ে গেলো এবং (পৃথক হয়ে গেলো তাদের থেকেও) যাদের ওরা আল্লাহ তায়ালার বদলে ডাকতো, তখন আমি তাকে ইসহাক ও (ইসহাক পুত্র) ইয়াকুব দান করলাম; এদের সবাইকেই আমি নবী বানিয়েছি |
৫০. আমি তাদের ওপর আমার (আরও বহু) অনুগ্রহ দান করেছি এবং তাদের আমি সুউচ্চ নাম যশ দান করেছি |
৫১. (হে নবী,) তুমি (এ) কেতাবে মুসার (ঘটনা) স্মরণ করো, অবশ্যই সে ছিলো একনিষ্ঠ (বান্দা), সে ছিলো রসুল-নবী |
৫২. (আমার কথা শোনার জন্যে) আমি তাকে ত্বর' (পাহাড়ের) ডান দিক থেকে ডাক দিলাম এবং তাকে আমি গোপন তথ্য (-সমৃদ্ধ কথা বলার জন্যে আমার নিকটবর্তী করলাম |
৫৩. আমি আমার নিজ অনুগ্রহে তার ভাই হারুনকে নবী বানিয়ে তাকে (তার সাহায্যকারী হিসেবে) দান করলাম |
৫৪. (হে নবী,) এ কেতাবে তুমি ইসমাঈলের (কথাও স্মরণ করো, নিশ্চয়ই সে ছিলো যথার্থ প্রতিশ্রুতি পালনকারী, আর সে ছিলো রসুল (ও) নবী,
৫৫. সে তার পরিবার পরিজনদের নামায (প্রতিষ্ঠা করা) ও যাকাত আদায় করার আদেশ দিতো, (উপরন্তু) সে ছিলো তার মালিকের একান্ত পছন্দনীয় ব্যক্তি |
৫৬. (হে নবী,) তুমি এ কেতাবে ইদরীসের (কথাও স্মরণ করো, সেও ছিলো একজন সত্যবাদী নবী ।
৫৭. আমি তাকে উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করেছিলাম ।
৫৮. এরা হচ্ছে সে সব (নবী), যাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করেছেন, (এরা সবাই ছিলো) আদমের বংশোদ্ভূত, যাদের তিনি (মহাপ্লাবনের সময়) নুহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছেন এরা তাদেরই বংশের লোক, (এদের কিছু লোক) ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত, (উপরন্তু) যাদের তিনি হেদায়াতের আলো দান করেছিলেন এবং যাদের তিনি মনোনীত করেছিলেন (এরা হচ্ছে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত); (এদের অবস্থা ছিলো এই,) যখনি এদের সামনে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করা হতো তখন এরা আল্লাহ তায়ালাকে সাজদা করার জন্যে ক্রন্দনরত অবস্থায় যমীনে লুটিয়ে পড়তো ।
৫৯. তাদের পর (তাদের অপদার্থ) বংশধররা এলো, তারা নামায বরবাদ করে দিলো এবং (নানা) পাশবিক লালসার অনুসরণ করলো, অতএব অচিরেই তারা (তাদের এ) গোমরাহীর (পরিণাম ফলের) সাক্ষাত পাবে,
৬০. কিন্তু যারা তাওবা করেছে, ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে (তাদের কথা আলাদা), তারা তো জান্নাতে প্রবেশ করবে, (সেদিন) তাদের ওপর কোনোরকম যুলুম করা হবে না |
৬১. স্থায়ী জান্নাত এমন এক বস্তু যার ওয়াদা দয়াময় আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের কাছে অদৃশ্য করে রেখে দিয়েছেন; অবশ্যই তাঁর ওয়াদা পূরণ হয়েই থাকবে |
৬২. সেখানে তারা কোনো অর্থহীন কথা শুনতে পাবে না, (চারদিকে থাকবে) শুধু শাস্তি (আর শাস্তি); সেখানে সকাল সন্ধ্যা তাদের জন্যে (নিত্য নতুন) রেযেকের ব্যবস্থা থাকবে |
৬৩. এ হচ্ছে জান্নাত, আমার বান্দাদের মাঝে যারা পরহেযগার আমি শুধু তাদেরই এর অধিকারী বানাবো|
৬৪. (ফেরেশতারা বললো, হে নবী,) আমরা কখনো তোমার মালিকের আদেশ ছাড়া (যমীনে) অবতরণ করি না, আমাদের সামনে পেছনে যা কিছু আছে, যা কিছু আছে এর মধ্যবর্তী স্থানে, তা সবই তো তাঁর জন্যে, (মূলত) তোমার মালিক (কখনো কাউকে) ভুলে থাকেন না,
৬৫. তিনিই আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক এবং (তিনি মালিক) এদের উভয়ের মাঝে যা কিছু আছে (তারও), অতএব তোমরা একমাত্র তাঁরই গোলামী করো, তাঁর গোলামীর ওপরই কায়েম থাকো, তুমি তাঁর সম (-গুণসম্পন্ন এমন) কোনো নাম কি জানো (যে, তুমি তার গোলামী করবে!)
৬৬. (কিছু সংখ্যক মূর্খ) মানুষ বলে, (একবার) আমার মৃত্যু হলে আমি কি জীবিত অবস্থায় (মাটির ভেতরে থেকে) পুনরুত্থিত হবো?
৬৭. (এ নির্বোধ) মানুষটি কি (একবারও) চিন্তা করে না, এর আগে তো আমিই তাকে সৃষ্টি করেছি; অথচ সে তখন কিছুই ছিলো না |
৬৮. অতএব তোমার মালিকের শপথ, আমি অবশ্যই এদের একত্রিত করবো, (একত্রিত করবো) শয়তানদেরও, অতপর এদের (সবাইকে) হাঁটু গাড়া অবস্থায় জাহান্নামের চারপাশে এনে জড়ো করাবো ।
৬৯. তারপর আমি অবশ্যই এদের প্রত্যেক দলের মধ্য থেকে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার প্রতি যারা সবচাইতে বেশী বিদ্রোহী ( ছিলো), তাদের (খুঁজে খুঁজে বার করে আনবো |
৭০. ওদের মধ্যে যারা (জাহান্নামে) নিক্ষপ্তি হবার অধিকতর যোগ্য, আমি তাদের সবার চাইতে বেশী জানি ।
৭১. (জাহান্নামে তোমাদের মধ্যে) এমন একজন ব্যক্তিও হবে না, যাকে এর ওপর দিয়ে পার হতে হবে না, এটা হচ্ছে তোমার মালিকের অমোঘ সিদ্ধান্ত |
৭২. (এ পার হওয়ার সময়) আমি শুধু ওসব মানুষদেরই পার করিয়ে নেবো যারা দুনিয়ার জীবনে (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করেছে, (অবশষ্টি) যালেমদের আমি নতজানু অবস্থায় সেখানে রেখে দেবো |
৭৩. তাদের সামনে যখন আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয়েছে, তখন যারা (ঈমানের বদলে ) কুফরী করেছে তারা ঈমানদারদের লক্ষ্য করে বলে (বলো তো), আমাদের উভয় দলের মাঝে কোন দলটি মর্যাদায় শ্রেষ্ঠতর ও কোন দলের মাহফিল বেশী শানদার !
৭৪. অথচ ওদের পূর্বে কতো (শানদার মাহফিলের অধিকারী) মানবগোষ্ঠীকে আমি নিমরল করে দিয়েছি, যারা (আজকের) এ (কাফেরদের) চাইতে সহায় সম্পদ ও প্রাচুর্যের বাহাদুরীতে ছিলো অনেক শ্রেষ্ঠ!
৭৫. (হে নবী, এদের) বলো, যে ব্যক্তি গোমরাহীতে (নিমজ্জিত) থাকে, তাকে দয়াময় আল্লাহ তায়ালা অনেক ঢিল দিতে থাকেন যতোক্ষণ না তারা সে (বিষয়)-টি (স্বচক্ষে) প্রত্যক্ষ করবে, যে বিষয়ে তাদের সতর্ক করা হচ্ছে হয় তা (হবে) আল্লাহ তায়ালার শাস্তি, নতুবা হবে কেয়ামত, (তেমন সময় উপস্থিত হলে) তারা অচিরেই একথা জানতে পারবে, কোন ব্যক্তিটি মর্যাদায় নিকৃষ্ট ছিলো এবং কার জনশক্তি ছিলো দুর্বল!
৭৬. (এর বিপরীত) যারা হেদায়াতের পথে চলে, আল্লাহ তায়ালা তাদের হেদায়াতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেন; (হে নবী,) তোমার মালিকের কাছে তো স্থায়ী জিনিস হিসেবে (মানুষের) নেক আমলই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট পুরস্কার পাবার দিক থেকে যেমন (তা ভালো), প্রতিদান হিসেবেও (তা তেমনি উত্তম) |
৭৭. তুমি সে ব্যক্তির অবস্থা লক্ষ্য করেছো কি যে আমার আয়াতসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে এবং (ঔদ্ধত্যের সাথে ) বলে বেড়ায়, (কেয়ামতের হলে সেদিন) আমাকে অবশ্যই (আমার) মাল ও সন্তান দিয়ে দেয়া হবে ।
৭৮. সে কি গায়বের) কোনো খবর পেয়েছে? না দয়াময় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে (এ ব্যাপারে) সে কোনো প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছে!
৭৯. না (এর কোনোটাই নয়), যা কিছু সে বলে আমি তার (প্রতিটি কথাই) লিখে রাখবো এবং সে হিসেবেই (কেয়ামতের দিন) আমি তার শাস্তি বাড়াতে থাকবো,
৮০. সে (তার শক্তি সমর্থ সম্পর্কে আজ) যা কিছু বলছে আমিই হবো তার অধিকারী, আর সে একান্ত একাকী (অবস্থায়ই) আমার কাছে (ফিরে) আসবে |
৮১. এরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্যদের মাবুদ বানায়, যেন এরা তাদের জন্যে সাহায্যকারী হতে পারে,
৮২. কিন্তু না; (কেয়ামতের দিন বরং) এরা তাদের এবাদাতের কথা (সম্পূর্ণত) অস্বীকার করবে, এরা (তখন) তাদের বিপক্ষ হয়ে যাবে ।
৮৩. (হে নবী,) তুমি কি (এ বিষয়টির প্রতি) লক্ষ্য করোনি, আমি (কিভাবে) কাফেরদের ওপর শয়তানদের ছেড়ে দিয়ে রেখেছি, তারা (আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে) তাদের ক্রমাগত উৎসাহ দান করছে,
৮৪. অতএব, তুমি এদের (আযাবের) ব্যাপারে কোনো রকম তাড়াহুড়ো করো না; আমি তো এদের (চূড়ান্ত ধ্বংসের) দিনটিই গণনা করে যাচ্ছি,
৮৫. সেদিন আমি পরহেযগার বান্দাদের সন্তানিত মেহমান হিসেবে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার কাছে একত্রিত করবো,
৮৬. আর না-ফরমানদের জাহান্নামের দিকে তৃষ্ণার্ত (উটের ন্যায়) তাড়িয়ে নিয়ে যাবো,
৮৭. (সেদিন) কোনো মানুষই আল্লাহ তায়ালার দরবারে সুপারিশ পেশ করার ক্ষমতা রাখবে না, হাঁ, যদি কেউ আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে (তেমন কোনো) প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করে থাকে (তবে তা ভিন্ন কথা) |
৮৮. (এ মুর্খ) লোকেরা বলে, করুণাময় আল্লাহ তায়ালা সন্তান গ্রহণ করেছেন;
৮৯. (তুমি এদের বলো,) এটি অত্যন্ত কঠিন একটি কথা, তোমরা যা (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) নিয়ে এসেছো,
৯০. (এটা এতো কঠিন কথা) যার কারণে হয়তো আসমান ফেটে পড়ার উপক্রম হবে, যমীন বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পাহাড়সমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যাবে,
৯১. (এর কারণ,) এরা দয়াময় আল্লাহ তায়ালার জন্যে সন্তান হওয়ার কথা বলেছে,
৯২. (অথচ) সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহ তায়ালার জন্যে কোনো অবস্থায়ই শোভনীয় নয় |
৯৩. (কেননা) আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, তাদের মাঝে কিছুই এমন নেই যা (কেয়ামতের দিন) দয়াময় আল্লাহ তায়ালার সম্মুখে তার অনুগত (বান্দা) হিসেবে উপস্থিত হবে না;
৯৪. তিনি (তাঁর সৃষ্টির) সব কিছুকেই (কড়ায় গন্ডায়) শুনে তার পূর্ণাংগ হিসাব রেখে দিয়েছেন;
৯৫. কেয়ামতের দিন এদের সবাই নিসংগ অবস্থায় তাঁর সামনে আসবে |
৯৬. যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তাদের জন্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন |
৯৭. আমি তো এ কোরআনকে তোমার ভাষায় সহজ (করে নাযিল করেছি, যাতে করে তুমি এর দ্বারা যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে তাদের (জান্নাতের) সুসংবাদ দিতে পারো এবং (দ্বীনের ব্যাপারে) যে জাতি (খামাখা) ঝগড়া করে, তুমি তাদেরও (এ দিয়ে) সাবধান করে দিতে পারো |
৯৮. তাদের আগেও আমি বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি, এদের কোনোরকম অস্তিত্ব কি তুমি এখন অনুভব করো, না শুনাতে পাও এদের কোনো ক্ষীণতম শব্দও?
💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url