আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা ত্বাহা’র বাংলা অনুবাদ | সূরা ত্বাহা | Surah Ta-ha | سورة طه‎‎



সূরা ত্বাহা’র বাংলা অনুবাদ


সূরা ত্বাহা, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১৩৫, রুকু ৮

সূরা ত্বাহা



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. ত্বা-হা,

২. (হে নবী,) আমি (এ) কোরআন এ জন্যে নাযিল করিনি যে, তুমি (এর দ্বারা) কষ্ট পাবে,

৩. এ (কোরআন) তো হচ্ছে বরং (কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার) একটি (উপায় ও) নসীহত মাত্র সে ব্যক্তির জন্যে, যে (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে,

৪. (এ কেতাব) তাঁর কাছ থেকে অবতীর্ণ, যিনি যমীন ও সমুচ্চ আকাশসমূহ সৃষ্টি করেছেন;

৫. দয়াময় আল্লাহ তায়ালা মহান আরশে সমাসীন হলেন |

৬. আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে, যা কিছু আছে এ দুয়ের মাঝখানে এবং যমীনের অনন্ত গভীরে, তা (সবই) তাঁর জন্যে |

৭. (হে মানুষ,) তুমি যদি জোরে কথা বলো তা (যেমন) তিনি শুনতে পান, (তেমনি) গোপন কথা (বরং তার চাইতেও গোপন যা) তাও তিনি জানেন ।

৮. আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, যাবতীয় উত্তম নাম তাঁর জন্যেই (নিবেদিত ) |

৯. (হে নবী,) তোমার কাছে কি মুসার কাহিনী পৌঁছেছে?

১০. (বিশেষ করে সে ঘটনাটি) যখন সে (দুরে) আগুন দেখলো এবং তার পরিবারের লোকজনদের বললো, তোমরা (এখানে অপেক্ষায় থাকো, আমি সত্যিই কিছু আগুন দেখতে পেয়েছি, সম্ভবত তা থেকে কিছু আগুনের টুকরো আমি তোমাদের কাছে নিয়ে আসতে পারবো, কিংবা তা দ্বারা আমি (পথঘাট সংক্রান্ত) কোনো নির্দেশ পেয়ে যাবো!

১১. অতপর সে যখন সে স্থানে পৌঁছুলো তখন তাকে আহ্বান করে বলা হলো, হে মুসা;

১২. নিশ্চয়ই আমি, আমিই হচ্ছি তোমার মালিক, তুমি তোমার জুতো দুটো খুলো ফেলো, কেননা তুমি এখন পৰিত্ৰ তুয়া' উপত্যকায় (দাঁড়িয়ে) আছো;

১৩. আমি তোমাকে (নবুওতের জন্যে) বাছাই করেছি, অতএব যা কিছু তোমাকে এখন ওহীর মাধ্যমে বলা হচ্ছে তা মনোযোগের সাথে শোনো ।

১৪. আমিই হচ্ছি আল্লাহ তায়ালা, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই, অতএব তুমি শুধু আমারই এবাদাত করো এবং আমার স্মরণের জন্যে নামায প্রতিষ্ঠা করো।

১৫. কেয়ামত অবশ্যই আসবে, আমি (এক সুনির্দষ্টি সময় পর্যন্ত) তা গোপন করে রাখতে চাই, যাতে করে প্রতিটি ব্যক্তিকে কেয়ামতের দিন নিজ নিজ কর্ম অনুযায়ী প্রতিদান দেয়া যায় |

১৬. যে ব্যক্তি কেয়ামত দিবসের ওপর বিশ্বাস করে না এবং যে নিজ প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, সে যেন তোমাকে ওতে বিশ্বাস স্থাপন থেকে কখনো বাধা দিতে না পারে, (এমনটি করলে) অতপর তুমি নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবে,

১৭. হে মুসা (বলো তো), তোমার ডান হাতে ওটা কি?

১৮. সে বললো, এটি হচ্ছে আমার (হাতের) লাঠি, আমি (কখনো কখনো) এর ওপর ভর দিই, আবার কখনো তা দিয়ে আমি আমার মেষের জন্যে (গাছের) পাতা পাড়ি, তা ছাড়াও এর মধ্যে আমার জন্যে আরো অনেক কাজ আছে ।

১৯. আল্লাহ তায়ালা বললেন, হে মুসা, তুমি তা (মাটিতে) নিক্ষেপ করো |

২০. অতপর সে তা (মাটিতে) নিক্ষেপ করলো, সাথে সাথেই তা সাপ হয়ে (এদিক ওদিক) ছুটাছুটি করতে লাগলো ।

২১. আল্লাহ তায়ালা বললেন (হে মুসা), তুমি একে ধরো, ভয় পেয়ো না | (দেখবে) আমি এখনই তাকে তার আগের আকৃতিতে ফিরিয়ে আনছি।

২২. (হে মুসা, এবার) তুমি তোমার হাত তোমার বগলে রাখো, অতপর (দেখবে) কোনো রকম (অসুখজনিত) দোষত্রটি ছাড়াই তা নির্মল উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসবে, এ হচ্ছে (আমার) পরবর্তী নিদর্শন |

২৩. (এগুলো এ জন্যে দেয়া হলো যেন) আমি তোমাকে আমার (কুদরতের আরো) বড়ো বড়ো নিদর্শন দেখাতে পারি ।

২৪. (হাঁ, এবার এগুলো নিয়ে) তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, কেননা সে (নিজেকে মাবুদ দাবী করে মারাত্মক ) সীমালংঘন করে ফেলেছে ।

২৫. সে বললো, হে আমার মালিক, তুমি আমার জন্যে আমার বক্ষকে প্রশস্ত করে দাও,

২৬. আমার কাজ আমার জন্যে সহজ করে দাও,

২৭. আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দুর করে দাও,

২৮. যাতে করে ওরা আমার কথা (ভালো করে) বুঝতে পারে,

২৯. আমার আপনজনদের মধ্য থেকে (একজনকে) আমার সাহায্যকারী বানাও,

৩০. হারূন হচ্ছে আমার ভাই (তাকেই বরং তুমি আমার সহযোগী বানিয়ে দাও),

৩১. তার দ্বারা তুমি আমার শক্তি বৃদ্ধি করো,

৩২. তাকে আমার কাজের অংশীদার বানিয়ে দাও,

৩৩. যাতে করে আমরা (উভয়ে মিলে) তোমার অনেক পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি,

৩৪. তোমাকে বেশী বেশী স্মরণ করতে পারি;

৩৫. নিশ্চয়ই তুমি আমাদের (কার্যক্রমের) সম্যক দ্রষ্টা |

৩৬. তিনি বললেন, হে মুসা, তুমি যা কিছু চেয়েছো তা (সবই) তোমাকে দেয়া হলো ।

৩৭. আমি তো এর আগেও (অলৌকিকভাবে তোমার প্রতিপালনের ব্যবস্থা করে) তোমার ওপর আরেকবার অনুগ্রহ করেছিলাম,

৩৮. যখন আমি তোমার মায়ের কাছে একটি ইংগিত পাঠিয়েছিলাম, (আসলে) সে (বিষয়টি) ইংগিত করে বলে দেয়ার মতো (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ই ছিলো,

৩৯. (সে ইংগিত ছিলো,) তুমি তাকে (ফেরাউনের লোকদের কাছ থেকে বাঁচানোর জন্যে জন্মের পর একটি) সিন্দুকের ভেতরে রেখে দাও, অতপর তাকে (সিন্দুকসহ) নদীতে ভাসিয়ে দাও, যেন নদী তাকে (ভাসাতে ভাসাতে) তীরে ঠেলে দেয়, (আমি জানি,) একটু পরই তাকে উঠিয়ে নেবে (এমন এক ব্যক্তি, যে) আমার দুশমন এবং তারও দুশমন; (হে মুসা,) আমি আমার কাছ থেকে (ফেরাউন ও অন্য মানুষদের মনে) তোমার জন্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছিলাম, যেন তুমি আমার চোখের সামনেই বড়ো হতে পারো |

৪০. যখন তোমার বোন চলতে থাকলো এবং (এখানে এসে ফেরাউনের লোকজনদের) বললো, আমি কি তোমাদের একথা বলে দেবো যে, কে এর লালন পালনের ভার নিতে পারবে (তারা রাযী হয়ে গেলো) | এভাবেই আমি তোমাকে পুনরায় তোমার মায়ের কাছে (তার কোলেই) ফিরিয়ে আনলাম, যাতে করে তার চোখ জুড়িয়ে যায় এবং (তোমাকে হারিয়ে) সে যেন চিন্তাক্লষ্টি না হয়; স্মরণ করো, যখন তুমি একজন মানুষকে হত্যা করলে, তখন আমি (হত্যাজনিত সেই) মানসিক যন্ত্রণা থেকে তোমাকে মুক্তি দিলাম, (এ ছাড়াও) তোমাকে আমি আরো বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেছি| অতপর তুমি বেশ কয়েকটি বছর মাদইয়ানবাসীদের মাঝে কাটিয়ে এলে! এরপর হে মুসা, একটা নির্ধারিত সময় পরেই তুমি (আজ) এখানে এসে উপস্থিত হলে |

৪১. আমি (এই দীর্ঘ পরীক্ষা দ্বারা) তোমাকে আমার নিজের (কাজের) জন্য প্রস্তুত করে নিয়েছি ।

৪২. আমার নিদর্শনসমূহ নিয়ে তুমি ও তোমার ভাই (এবার ফেরাউনের কাছে) যাও, (তবে) কখনো আমার যেকেরের মাঝে শৈথিল্য প্রদর্শন করো না,

৪৩. তোমরা দু'জনে (অবিলম্বে) ফেরাউনের কাছে চলে যাও, কেননা সে মারাত্মকভাবে সীমালংঘন করেছে,

৪৪. (হেদায়াত পেশ করার সময়) তোমরা তার সাথে নম্র কথা বলবে, হতে পারে সে তোমাদের উপদেশ কবুল করবে অথবা সে (আমায়) ভয় করবে।

৪৫. তারা বললো, হে আমাদের মালিক, আমরা ভয় করছি সে আমাদের সাথে বাড়াবাড়ি করবে, কিংবা সে (আরো বেশী) সীমালংঘন করে বসবে |

৪৬. আল্লাহ তায়ালা বললেন, তোমরা (কোনোরকম) ভয় করো না, আমি তো তোমাদের সংগেই আছি, আমি (সব কিছু) শুনি, (সব কিছু দেখি |

৪৭. সুতরাং তোমরা উভয়ই তার কাছে যাও এবং বলো, আমরা তোমার মালিকের পাঠানো দুজন রসুল, অতএব (এ নিপীড়িত) বনী ইসরাঈলের লোকদের তুমি আমাদের সাথে যাবার (অনুমতি) দাও, তুমি তাদের (আর) কষ্ট দিয়ো না; আমরা তোমার কাছে তোমার মালিকের কাছ থেকে (নরওতের) নিদর্শন নিয়ে এসেছি; এবং যারা এই হেদায়াতের অনুসরণ করবে তাদের জন্যে (রয়েছে অনাবিল) শাস্তি |

৪৮. আমাদের ওপর (এ মর্মে) ওহী নাযিল করা হয়েছে, যে ব্যক্তি (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করবে এবং যে ব্যক্তি (তার আদেশ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার ওপর আল্লাহর আযাব (পড়বে) |

৪৯. (এসব শোনার পর) ফেরাউন বললো, হে মুসা (বলো), কে (আবার) তোমাদের দু'জনের মালিক?

৫০. সে বললো, আমাদের মালিক তিনি, যিনি প্রতিটি জিনিসকে তার (যথাযোগ্য) আকৃতি দান করেছেন, অতপর (সবাইকে তাদের চলার পথ) বাতলে দিয়েছেন,

৫১. সে বললো, তাহলে আগের লোকদের অবস্থা কি হবে?

৫২. সে বললো, সে বিষয়ের জ্ঞান আমার মালিকের কাছে (সংরক্ষিত বিশেষ) গ্রন্থে মজুদ আছে, আমার মালিক কখনো ভুল পথে যান না তিনি (কারো) কোনো কথা ভুলেও যান না ।

৫৩. তিনি এমন (এক সত্তা), যিনি তোমাদের জন্যে যমীনকে বিছানা বানিয়ে দিয়েছেন, ওতে তোমাদের (চলার) জন্যে বহু ধরনের পথঘাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, তিনিই আকাশ থেকে বৃষ্টির পানি প্রেরণ করেন; অতপর তা দিয়ে আমি (যমীন থেকে) বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ বের করে আনি |

৫৪. তোমরা (তা) নিজেরা খাও এবং (তাতে) তোমাদের পশুদেরও চরাও; অবশ্যই এর (মাঝে) বিবেকসম্পন্ন মানুষদের জন্যে (শিক্ষার) অনেক নিদর্শন রয়েছে।

৫৫. (এই যে যমীন) তা থেকেই আমি তোমাদের পয়দা করেছি, তাতেই আমি তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবো এবং পরিশেষে তা থেকেই আমি তোমাদের দ্বিতীয় বার বের করে আনবো ।

৫৬. (ফেরাউনের অবস্থা ছিলো,) আমি তাকে আমার যাবতীয় নিদর্শন দেখিয়েছি, কিন্তু (এ সত্ত্বেও) সে (একে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং অবিশ্বাস করেছে ।

৫৭. (এক পর্যায়ে ফেরাউন বললো,) হে মুসা, (তুমি কি নবুওতের দাবী নিয়ে) এ জন্যে আমাদের কাছে এসেছো যে, তুমি তোমার যাদু (ও তেলেসমাতি) দিয়ে আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দেবে।

৫৮. (হাঁ,) আমরাও তোমার সামনে অতপর অনুরূপ যাদু এনে হাযির করবো, অতএব এসো তোমার এবং আমাদের মাঝে একটি (মোকাবেলার) ওয়াদা ঠিক করে নিই, যার আমরাও খেলাপ করবো না, তুমিও করবে না, (এটা হবে) খোলা ময়দানে (যেন সবাই তা দেখতে পায়) |

৫৯. সে বললো, হাঁ তোমাদের সাথে (প্রতিযোগিতার) ওয়াদা হবে (তোমাদের) মেলা বসার দিন, সেদিন মধ্য দিনেই যেন লোকজন এসে জমা হয়ে যায় |

৬০. (অতপর) ফেরাউন উঠলো এবং (কথানুযায়ী) যাদুর (সামানপত্র) জমা করলো, তারপর (মোকাবেলা দেখার জন্যে) সে (ময়দানে) এসে হাযির হলো |

৬১. মুসা তাদের (লক্ষ্য করে) বললো, দুর্ভোগ হোক তোমাদের, তোমরা কখনো আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা অভিযোগ আরোপ করো না, তাহলে তিনি তোমাদের আযাব দিয়ে সমূলে ধ্বংস করে দেবেন, (আর) যে ব্যক্তি মিথ্যা বানায় সে ব্যর্থ হয়ে যায় ।

৬২. (মুসার কথা শুনে) তারা নিজেদের পরিকল্পনার ব্যাপারে একে অন্যের সাথে মতবিরোধ করলো, কিন্তু তারা গোঁপন সলাপরামর্শ গোপনই রাখলো |

৬৩. (ফেরাউনের) লোকজন বললো, অবশ্যই এ দুজন মানুষ হচ্ছে যাদুকর, তারা যাদুর (খেলা) দিয়ে তোমাদের দেশ থেকে তোমাদের বের করে দিতে এবং তোমাদের এ উৎকৃষ্ট জীবন ব্যবস্থার অস্তিত্ব খতম করে দিতে চায় |

৬৪. অতএব (হে যাদুকররা), তোমরা তোমাদের সব যাদু একত্রিত করো, তারপর সারিবদ্ধ হয়ে (যাদু দেখানোর জন্যে) উপস্থিত হয়ে যাও, আজ যে (এ মোকাবেলায়) জয়ী হবে সে-ই হবে সফলকাম |

৬৫. তারা বললো, হে মুসা (বলো, আগে) তুমি (তোমার লাঠি) নিক্ষেপ করবে না আমরা নিক্ষেপ করবো?

৬৬. সে বললো, তোমরাই বরং (আগে) নিক্ষেপ করো, যাদুর প্রভাবে তার কাছে মনে হলো তাদের (যাদুর) রশি ও লাঠিগুলো বুঝি এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছে,

৬৭. (এতে) মুসা তার অন্তরে কিছুটা ভয় (ও শংকা) অনুভব করলো |

৬৮. আমি বললাম (হে মুসা), তুমি ভয় পেয়ো না, (শেষতক) অবশ্যই তুমি বিজয়ী হবে ।

৬৯. (হে মুসা,) তোমার ডান হাতে যে (লাঠি) আছে তা (ময়দানে) নিক্ষেপ করো, (দেখবে এ যাবত) যা খেলা ওরা বানিয়েছে এটা সেগুলোকে গ্রাস করে ফেলবে, (মূলত) ওরা যা কিছুই করেছে তা তো (ছিলো) নেহায়াত যাদুকরের েেকৗশল; আর যাদুকর কখনো কামিয়াব হয় না যে রাসত্মা দিয়েই সে আসুক না কেন!

৭০. (মুসার লাঠি বিশাল অজগর হয়ে যাদুকরদের সাপগুলোকে গিলে ফেললো, এটা দেখে) অতপর যাদুকররা সবাই সাজদাবনত হয়ে গেলো এবং তারা বললো, আমরা হারুন ও মুসার মালিকের ওপর ঈমান আনলাম |

৭১. সে (ফেরাউন) বললো, আমি তোমাদের (এ ধরনের) কোনো অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার ওপর ঈমান আনলে! (আমি দেখতে পাচ্ছি) সে-ই হচ্ছে (আসলে) তোমাদের (প্রধান) গুরু, যে তোমাদের যাদু শিক্ষা দিয়েছে (দেখো এবার আমি কি করি), আমি তোমাদের হাত পা উল্টো দিক থেকে কেটে ফেলবো, তদুপরি আমি তোমাদের খেজুর গাছের কান্ডে শূলবদ্ধি করবো, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে আমাদের (উভয়ের) মধ্যে কার শাস্তি কঠোরতর ও অধিক স্থায়ী |

৭২. তারা বললো, আমাদের কাছে যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে এবং যিনি আমাদের (এ দুনিয়ায়) পয়দা করেছেন, তাঁর ওপর আমরা কখনোই তোমাকে প্রাধান্য দেবো না, সুতরাং তুমি যা করতে চাও তাই করো; তুমি (বড়ো জোর) এ পার্থিব জীবন সম্পর্কেই কোনো সদ্ধিান্ত গ্রহণ করতে পারবে;

৭৩. আমরা তো আমাদের মালিকের ওপর ঈমান এনেছি, যাতে করে তিনি আমাদের গুনাহসমূহ(বিশেষ করে) তুমি যে আমাদের যাদু করতে বাধ্য করেছো তা যেন মাফ করে দেন; (আমরা বুঝতে পেরেছি,) আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ, তিনিই হচ্ছেন অধিকতরো স্থায়ী |

৭৪. যে ব্যক্তি কোনো অপরাধে অপরাধী হয়ে তার মালিকের দরবারে হাযির হবে, তার জন্যে থাকবে জাহান্নাম (আর জাহান্নাম এমন এক জায়গা); যেখানে (মানুষ মরতে চাইলেও) মরবে না, (আবার বাঁচার মতো করে) বাঁচবেও না!

৭৫. অপর দিকে যে ব্যক্তিই তার কাছে মোমেন হয়ে কোনো নেক কাজ নিয়ে হাযির হবে তারাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের জন্যে রয়েছে সমুচ্চ মর্যাদা,

৭৬. এমন এক স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হবে, সেখানে তারা থাকবে চিরকাল; এ হচ্ছে সে ব্যক্তির পুরস্কার যে (স্বীয় জীবনকে) পবিত্র রেখেছে ।

৭৭. আমি মুসার কাছে এ মর্মে ওহী পাঠিয়েছি, তুমি আমার বান্দাদের নিয়ে রাতের বেলায়ই এ দেশ ছেড়ে চলে যাও এবং (আমার আদেশে) তুমি ওদের জন্যে সমুদ্রের মধ্যে একটি শুষ্ক সড়ক বানিয়ে নাও, পেছন থেকে কেউ তোমাকে ধাওয়া করবে এ আশংকা তুমি কখনোই করো না |

৭৮. (মুসা তার জাতিকে নিয়ে সাগর পানে বেরিয়ে গেলো,) অতপর ফেরাউন তার সৈন্য সামন্তসহ তাদের পশ্চাদ্ধাবন করলো, তারপর সাগরের (অথৈ) পানি তাদের ডুবিয়ে দিলো, ঠিক যেমনটি তাদের ডুবিয়ে দেয়া উচিত ছিলো;

৭৯. (মুলত) ফেরাউন তার জাতিকে গোমরাহ করে দিয়েছে, সে কখনোই তাদের সঠিক পথ দেখায়নি |

৮০. হে বনী ইসরাঈল (চেয়ে দেখো), আমি (কিভাবে) তোমাদের (প্রধান) শত্রু (ফেরাউন) থেকে তোমাদের মুক্তি দিয়েছি এবং আমি তোমাদের (নবীর) কাছে তূর (পাহাড়ের) ডান দিকের যে (স্থানে তাওরাত গ্রন্থ দানের) ওয়াদা করেছিলাম (তাও পুরণ করেছি,) তোমাদের জন্যে আমি (আরো) নাযিল করেছি মান' এবং সালওয়া (নামের কিছু পবিত্র খাবার)।

৮১. তোমাদের আমি যা পবিত্র খাবার দান করেছি তা খাও এবং তাতে বাড়াবাড়ি করো না, বাড়াবাড়ি করলে তোমাদের ওপর আমার গযব অবধারিত হয়ে যাবে, আর যার ওপর আমার গযব অবধারিত হবে সে তো ধ্বংসই হয়ে যাবে!

৮২. আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল যে ব্যক্তি তাওবা করলো, ঈমান আনলো, নেক কাজ করলো, অতপর হেদায়াতের পথে থাকলো |

৮৩. (মুসা এখানে আসার পর আমি তাকে বললাম, হে মুসা, কোন জিনিস তোমার জাতির লোকদের কাছ থেকে (এখানে আসার জন্যে) তোমাকে তাড়াতাড়ি করালো!

৮৪. (সে বললো, না) তারা তো আমার পেছনেই রয়েছে, আমি তোমার কাছে আসতে তাড়াতাড়ি করলাম যাতে করে হে মালিক, তুমি আমার ওপর সন্তুষ্ট হও,

৮৫. তিনি বললেন, তোমার (চলে আসার) পর আমি তোমার জাতিকে (আরেক) পরীক্ষায় ফেলেছি, সামেরী' (নামের এক ব্যক্তি) তাদের গোমরাহ করে দিয়েছিলো |

৮৬. অতপর মুসা অত্যন্ত ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ হয়ে তার জাতির কাছে ফিরে এলো, (এসে তাদের) সে বললো, হে আমার জাতি (এ তোমরা কি করলে), তোমাদের মালিক কি তোমাদের একটি উত্তম প্রতিশ্রুতি দেননি (যে, তোমাদের তিনি এ যমীনের কর্তৃত্ব সমর্পণ করবেন), তবে কি আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি (র সময়)টি তোমাদের কাছে খুব দীর্ঘ মনে হয়েছিলো (তোমরা আর অপেক্ষা করতে পারলে না), কিংবা তোমরা এটাই চেয়েছো, তোমাদের ওপর তোমাদের মালিকের গযব অবধারিত হয়ে পড়ক, অতপর তোমরা আমার ওয়াদা ভংগ করে ফেললে!

৮৭. তারা বললো (হে মুসা), আমরা তোমার প্রতিশ্রুতি নিজেদের ইচ্ছায় ভংগ করিনি (আসলে যা ঘটেছে তা ছিলো), জাতির (মানুষদের) অলংকারপত্রের বোঝা আমাদের ওপর চাপানো হয়েছিলো, আমরা তা (বইতে না পেরে আগুনে) নিক্ষেপ করে দেই (এ ছিলো আমাদের অপরাধ), এভাবেই সামেরী (আমাদের প্রতারণার জালে) নিক্ষেপ করলো;

৮৮. তারপর সে (অলংকার দিয়ে) তাদের জন্যে একটি বাছুর বের করে আনলো, (মূলত) তার (ছিলো) একটি (নিষপ্রাণ) অবয়ব, তাতে গরুর (মতো) শব্দ ছিলো (মাত্র), তারা (এটুকু দেখেই) বলতে লাগলো, এ হচ্ছে তোমাদের মাবুদ, (এটি) মুসারও মাবুদ, কিন্তু মুসা (এর কথা) ভুলে (আরেক মানুদের সন্ধানে তুর' পাহাড়ে চলে) গেছে।

৮৯. (ধিক তাদের বুদ্ধির ওপর,) তারা কি দেখেনা, ওটা তাদের কথার কোনো উত্তর দেয় না, না ওটা তাদের কোনো রকম ক্ষতি কিংবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে!

৯০. (মুসা তার জাতির কাছে ফিরে আসার আগেই হারূন তাদের বলেছিলো, হে আমার জাতি, এ (গো-বাছুর) দ্বারা তোমাদের (ঈমানেরই) পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে, তোমাদের মালিক তো হচ্ছেন দয়াময় আল্লাহ তায়ালা, তোমরা আমার অনুসরণ করো এবং আমার আদেশ মেনে চলো |

৯১. ওরা বললো, যতোক্ষণ পর্যন্ত মুসা আমাদের কাছে ফিরে না আসবে আমরা এর (পূজা) থেকে বিরত হবো না | 

৯২. (মুসা এসে এসব না- ফরমানী কাজ দেখলো,) সে বললো, হে হারূন, তুমি যখন দেখলে ওরা গোমরাহ হয়ে গেছে, তখন তোমাকে কোন জিনিস বিরত রেখেছিলো

৯৩. যে, তুমি আমার কথার অনুসরণ করলে না! তুমি কি আমার আদেশ (তাহলে) অমান্যই করলে?

৯৪. সে বললো, হে আমার মায়ের ছেলে, তুমি আমার দাড়ি ও মাথার (চুল) ধরো না, আমি (এমনি একটি) আশংকা করেছিলাম, তুমি (ফিরে এসে হয়তো) বলবে, তুমি বনী ইসরাঈলদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করেছো এবং তুমি আমার কথা পালনে যত্ন নাওনি।'

৯৫. সে বললো হে সামেরী (বলো) তোমার ব্যাপারটা কি হয়েছিলো ? )

৯৬. সে বললো, আসলে আমি যা দেখেছিলাম তা ওরা দেখেনি (ঘটনাটা ছিলো), আমি আল্লাহর বাণীবাহকের পদচিহ্ন থেকে এক মুঠো (মাটি) নিয়ে নিলাম, অতপর তা ওতে নিক্ষেপ করলাম, আমার মন (কেন জানি ) এভাবেই আমাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিয়েছিলো |

৯৭. সে বললো, চলে যাও (আমার সম্মুখ থেকে), তোমার জীবদ্দশায় তোমার জন্যে এ (শাস্তিই নির্ধারিত) হলো, তুমি বলতে থাকবে- আমাকে কেউ স্পর্শ করো না', এ ছাড়া তোমার জন্যে আরো আছে (পরকালের আযাবের) ওয়াদা, যা কখনো তোমার কাছ থেকে সরে যাবে না, তাকিয়ে দেখো তোমার বানানো মাবুদের প্রতি, যার পুজায় তুমি (এতোদিন) রত ছিলে; আমি ওকে অবশ্যই জ্বালিয়ে দেবো, অতপর তার ছাই বিক্ষিপ্ত করে (সমুদ্রে) নিক্ষেপ করবো |

৯৮. (হে মানুষ,) তোমাদের মাবুদ তো কেবল আল্লাহ তায়ালাই, যিনি ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নেই; তিনি তাঁর জ্ঞান দিয়ে সব কিছু পরিবষ্টেন করে আছেন ।

৯৯. (হে নবী, মুসার) যেসব ঘটনা তোমার আগে ঘটেছে তার সংবাদ আমি এভাবেই তোমাকে শুনিয়ে যাবো, (তা ছাড়া) আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে একটি স্মরণিকাও দান করেছি।

১০০. যে কেউই এ (স্মরণিকা) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, সে কেয়ামতের দিন (নিজ কাঁধে) গুনাহের এক ভারী বোঝা বইবে,

১০১. তারা চিরদিন সেখানে থাকবে; কেয়ামতের (কঠিন) দিনে তাদের জন্যে এ বোঝা কতো মন্দ (প্রমাণিত) হবে!

১০২. যেদিন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে সেদিন আমি অপরাধীদের এমন অবস্থায় জমা করবো, (ভয়ে) তাদের চোখ নীল (ও দৃষ্টিহীন) থাকবে,

১০৩. তারা নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে থাকবে, তোমরা (দুনিয়ায় বড়ো জোর) দশ দিন অবস্থান করে এসেছো

১০৪. (আসলে) আমি জানি (সে অবস্থানের সঠিক পরিমাণ নিয়ে) যা কিছু বলছিলো, বিশেষ করে) যখন তাদের মধ্যকার সবচাইতে বিবেকবান ব্যক্তি (যে সৎপথে ছিলো) বলবে, তোমরা তো (দুনিয়ায়) মাত্র একদিন অবস্থান করে এসেছো!

১০৫. (হে নবী,) তারা তোমার কাছে (কেয়ামতের সময়) পাহাড়গুলোর অবস্থা (কি হবে) জানতে চাইবে, তুমি তাদের বলো, (সে সময়) আমার মালিক এগুলোকে (টুকরো টুকরো করে) উড়িয়ে দেবেন,

১০৬. অতপর তাকে তিনি মসৃণ ও সমতল ভূমিতে পরিণত করে ছাড়বেন,

১০৭. তুমি এতে কোনো রকম অসমতল ও উঁচু নীচু দেখবে না;

১০৮. সেদিন সব মানুষ একজন আহ্বানকারীর পেছনে চলতে থাকবে, তার জন্যে কোনো বাঁকা পথ থাকবে না (সে চাইলেও অন্য দিকে যেতে পারবে না), সেদিন দয়াময় আল্লাহ তায়ালার (প্রচন্ড ক্ষমতার) সামনে অন্য সব শব্দই ক্ষীণ হয়ে যাবে, (এ ভয়ংকর পরিস্থিতিতে ভীতবিহ্বল মানুষের পায়ে চলার) মৃদু আওয়ায ছাড়া আর কিছুই তুমি শুনতে পাবে না |

১০৯. সেদিন পরাক্রমশালী আল্লাহ তায়ালার সামনে কারো কোনো রকম সুপারিশই কাজে আসবে না, অবশ্য যাকে করুণাময় আল্লাহ তায়ালা অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় তিনি সন্তুষ্ট হবেন, তার কথা আলাদা |

১১০. তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি সম্যক অবগত আছেন, তারা তা দিয়ে তাঁর বিশাল জ্ঞানকে কোনো দিনই পরিবষ্টেন করতে পারে না |

১১১. (সেদিন) মানুষের চেহারাগুলো (সেই) চিরঞ্জীব ও অনাদি সত্তার সামনে অবনত হয়ে যাবে, ব্যর্থ হবে সে ব্যক্তি, যে সেদিন শুধু যুলুমের ভারই বহন করবে ।

১১২. (অপরদিকে) যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে (দুনিয়ায়) নেক কাজ করেছে, (সেদিন) সে কোনো যুলুমের ভয় করবে না এবং কোনো ক্ষতির ভয়ও না |

১১৩. এভাবেই আমি কোরআনকে (পরিষ্কার) আরবী (ভাষায়) নযিল করেছি এবং তাতে (মানুষদের পরিণাম সম্পর্কে) সাবধানতা সংক্রান্ত কথাগুলো সবিসত্মার বর্ণনা করেছি, যেন তারা (গোমরাহী থেকে) বেঁচে থাকতে পারে, কিংবা (তাদের মনে) তা তাদের জন্যে কোনো চিন্তা ভাবনার সৃষ্টি করতে পারে ।

১১৪. আল্লাহ তায়ালা অতি মহান, তিনিই (সৃষ্টিকুলের) প্রকৃত বাদশাহ (তিনিই কোরআন নাযিল করেছেন, হে নবী), তোমার কাছে তার ওহী নাযিল পূর্ণ হওয়ার আগে কোরআনের ব্যাপারে কখনো তাড়াহুড়ো করো না, (তবে জ্ঞান বাড়াতে চাইলে) বলো, হে আমার মালিক, আমার জ্ঞান (-ভান্ডার) তুমি বৃদ্ধি করে দাও |

১১৫. আমি এর আগে আদম ( সন্তানের) প্রতি নির্দেশ দান করেছিলাম, কিন্তু সে (এসব কথা) ভুলে গেছে, (আসলে) আমি (কখনো) সে ব্যাপারে তাকে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ পাইনি |

১১৬. আমি ফেরেশতাদের (যখন) বলেছিলাম, তোমরা আদমকে সাজদা করো, তখন তারা (সাথে সাথেই) সাজদা করলো, কিন্তু ইবলীস, (সে) অস্বীকার করলো |

১১৭. আমি আদমকে বললাম, এ (শয়তান) হচ্ছে তোমার ও তোমার (জীবন) সাথীর দুশমন; সুতরাং (দেখো) এমন যেন না হয় যে, সে তোমাদের উভয়কেই জান্নাত থেকে বের করে দেবে এবং (এর ফলে) তুমি দারুণ দুঃখ কষ্টে পড়ে যাবে,

১১৮. (অথচ) এখানে তুমি কখনো ক্ষুধার্ত হও না, কখনো পোশাকবিহীনও হও না!

১১৯. তুমি (কখনো) এখানে পিপাসার্ত হও না, কখনো রোদেও কষ্ট পাও না!

১২০. (কিন্তু এতো সাবধান করা সত্ত্বেও) অতপর শয়তান তাকে কুমন্ত্রণা দিলো; সে (তাকে) বললো, হে আদম, আমি কি তোমাকে অনন্ত জীবনদায়িনী একটি গাছের কথা বলবো (যার ফল খেলে তুমি এখানে চিরজীবন থাকতে পারবে) এবং বলবো এমন রাজত্বের কথা, যার কখনো পতন হবে না!

১২১. অতপর তারা উভয়ে ওই (নিষদ্ধি গাছের ফল খেলো, সাথে সাথেই তাদের শরীরের লজ্জাস্থানসমূহ তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং তারা (লজ্জায় তাড়াতাড়ি করে) জান্নাতের (বিভিন্ন গাছের) পাতা দ্বারা নিজেদের লজ্জাস্থান ঢাকতে শুরু করলো, এভাবেই আদম তার মালিকের নাফরমানী করলো এবং (এ কারণে) সে (সাময়িকভাবে) পথভ্রষ্ট হয়ে গেলো ।

১২২. কিন্তু (তার ক্ষমা প্রার্থনার পর) তার মালিক তাকে (তার বংশধরদের পথ প্রদর্শনের জন্যে) বাছাই করে নিলেন, তার ওপর ক্ষমাপরবশ হলেন এবং তাকে সঠিক পথনির্দেশ দিলেন ।

১২৩. তিনি বললেন, (শয়তান ও তোমরা এখন) উভয় দলই এখান থেকে নেমে পড়ো, (মনে রাখবে) তোমরা কিন্তু একজন আরেক জনের (জঘন্য) দুশমন, অতপর (তোমাদের জীবন পরিচালনার জন্যে) আমার কাছ থেকে হেদায়াত (পথনির্দেশ) আসবে, অতপর যে আমার হেদায়াত অনুসরণ করবে সে না কখনো (দুনিয়ায়) বিপথগামী হবে, না (আখেরাতে সে) কোনো কষ্ট পাবে ।

১২৪. (হাঁ,) যে ব্যক্তি আমার স্মরণ থেকে বিমুখ হবে তার জন্যে (জীবনে) বাঁচার সামগ্রী সংকুচিত হয়ে যাবে, (সর্বোপরি) তাকে আমি কেয়ামতের দিন অন্ধ বানিয়ে হাযির করবো |

১২৫. সে (নিজেকে এভাবে দেখার পর) বলবে, হে আমার মালিক, তুমি আমাকে কেন (আজ) অন্ধ বানিয়ে উঠালে? (দুনিয়াতে তো) আমি চক্ষুষ্মান ব্যক্তিই ছিলাম!

১২৬. তিনি বলবেন, (আসলে দুনিয়াতেও) তুমি এমনিই (অন্ধ) ছিলে! আমার আয়াতসমূহ তোমার কাছে এসেছিলো, কিন্তু তুমি তা ভুলে ছিলে, এভাবে আজ তোমাকেও ভুলে যাওয়া হবে |

১২৭. (মূলত) আমি এভাবেই তাদের প্রতিফল দেই, যারা (আমার আয়াত নিয়ে) বাড়াবাড়ি করে, সে তার মালিকের আয়াতের ওপর কখনো ঈমান আনে না; (সত্যিকার অর্থে) পরকালের আযাবই হচ্ছে বেশী কঠিন এবং অধিক স্থায়ী |

১২৮. এদের আগে আমি কতো কতো জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি, আর এ (ধ্বংসপ্রাপ্ত) জনপদসমূহের ওপর দিয়ে এরা তো (হামেশাই) চলাফেরা করে; অবশ্যই এতে বিবেকবান মানুষদের জন্যে নিদর্শন রয়েছে।

১২৯. যদি তোমার মালিকের পক্ষ থেকে (এদের অবকাশ দেয়ার এ) ঘোষণা না থাকতো এবং এদের ওপর আযাব আসার সুনির্দষ্টি কালক্ষণ আগেই ঠিক করা না থাকতো, তাহলে এদের ওপর (কবেই আযাব) অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়তো;

১৩০. অতএব (হে নবী), এরা যা কিছুই বলে তুমি তার ওপর ধৈর্য ধারণ করো, তুমি (বরং) তোমার মালিকের প্রশংসা, পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো সুর্যোদয়ের আগে ও তা অস্ত যাওয়ার আগে, রাতের বেলায় এবং দিনের দুই প্রান্তেও তুমি আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করো, সম্ভবত (কেয়ামতের দিন) তুমি সন্তুষ্ট হতে পারবে |

১৩১. (হে নবী,) পার্থিব জীবনের সৌন্দর্যস্বরূপ ভোগ বিলাসের সেসব উপকরণ আমি তাদের অনেককেই দিয়ে রেখেছি, তার দিকে তুমি কখনো তোমার দুচোখ তুলে তাকাবে না, (আসলে আমি এসব কিছু এ কারণেই দিয়েছি) যেন আমি তাদের পরীক্ষা করতে পারি, (মূলত) তোমার মালিকের রেকেই হচ্ছে উৎকৃষ্ট ও অধিক স্থায়ী |

১৩২. (হে নবী,) তোমার পরিবার পরিজনকে নামাযের আদেশ দাও এবং তুমি (নিজেও) তার ওপর অবিচল থেকো, আমি তো তোমার কাছে কোনোরকম রেযেক (জীবনোপকরণ) চাই না, রেযেক তো তোমাকে আমিই দান করি; আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করার জন্যেই রয়েছে উত্তম পরিণাম |

১৩৩. (এরপরও মূর্খ) লোকেরা বলে, এ ব্যক্তি তার মালিকের কাছ থেকে আমাদের কাছে কোনো নিদর্শন নিয়ে আসে না কেন; (তুমি কি মনে করো,) তাদের কাছে সেসব দলীল প্রমাণ নেই যা আগের কেতাবসমুহে মজুদ রয়েছে।

১৩৪. আমি যদি এর আগেই তাদের কোনো আযাব দিয়ে ধ্বংস করে দিতাম তাহলে অবশ্যই এরা বলতো, হে আমাদের মালিক, তুমি (আযাব পাঠাবার আগে) আমাদের কাছে একজন রসুল পাঠালে না কেন? (রসুল) পাঠালে আমরা এভাবে লাঞ্ছিত ও অপমানিত হওয়ার আগেই তোমার আয়াতসমূহ মেনে চলতাম |

১৩৫. (হে নবী, এদের) বলো (হাঁ), প্রত্যেক ব্যক্তিই (তার কাজের প্রতিফল পাবার) অপেক্ষা করছে, অতএব তোমরাও অপেক্ষা করো, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে সঠিক পথের অনুসারী কারা, আর কারাই বা সোজা সঠিক পথ পেয়েছে|


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url