আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আয যোখরুফ’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আয যোখরুফ | Surah Az Zukhruf | الزّخرف


সূরা আয যোখরুফ’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আয যোখরুফ, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৮৯, রুকু ৭

সূরা আয যোখরুফ



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হা-মীম,

২. সুস্পষ্ট কেতাবের শপথ,

৩. আমি একে আরবী (ভাষার) কোরআন বানিয়েছি, যাতে করে তোমরা (এটা) অনুধাবন করতে পারো,

৪. এ (মহা) গ্রন্থ (কোরআন) আমার কাছে সমুন্নত ও আসল অবস্থায় মজুদ রয়েছে;

৫. (হে নবী তুমি বলো,) আমি কি (সংশোধনের কর্মসুচী থেকে) সম্পর্কহীন হয়ে তোমাদের উপদেশ দেয়ার কাজ (শুধু এ কারণেই) ছেড়ে দেবো যে, তোমরা একটি সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়!

৬. আগের লোকদের মাঝে আমি কতো নবীই না পাঠিয়েছি!

৭. (তাদের অবস্থা ছিলো,) যে নবীই তাদের কাছে আসতো ওরা তার সাথেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।

৮. তাদের মধ্যে যারা শক্তি সামর্থে প্রবল ছিলো আমি তাদের সবাইকে ধ্বংস করে দিয়েছি, এ ধরনের অনেক উদাহরণ আগে তো অতিবাহিত হয়ে গেছে ।

৯. তুমি যদি ওদের জিজ্ঞেস করো, আসমানসমুহ ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন, তবে তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো তো সবই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালাই পয়দা করেছেন ।

১০. যিনি তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে বিছানা (সদৃশ) করেছেন, তাতে পথঘাট বানিয়েছেন যাতে করে তোমরা (গন্তব্যস্থলে) পৌঁছুতে পারো,

১১. তিনি আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করেছেন এবং (তা দিয়ে) মৃত ভূখণ্ডকে জীবন দান করেছেন, (একইভাবে) তোমরাও (একদিন) পুনরুত্থিত হবে,

১২. তিনি সব কিছুই জোড়ায় জোড়ায় পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের জন্যে নৌকা ও চতুষ্পদ জন্তু বানিয়েছেন, যেন তোমরা তার ওপর আরোহণ করো,

১৩. যাতে করে তোমরা তাদের পিঠে স্থির হয়ে বসতে পারো, সেগুলোর ওপর সুস্থির হয়ে বসার পর তোমরা তোমাদের মালিকের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করো এবং বলো, পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি আমাদের জন্যে একে বশীভূত করে দিয়েছেন, অন্যথায় আমরা তো তা বশীভূত করার কাজে সামর্থবান ছিলাম না,

১৪. আর নিসন্দেহে আমরা আমাদের মালিকের দিকেই ফিরে যাবো ।

১৫. (এ সত্ত্বেও) এরা আল্লাহ তায়ালার বান্দাদের মধ্য থেকে কার জন্যে (নাকি) তার (সার্বভৌমত্বের) কিছু অংশ দান করে, মানুষ স্পষ্টতই বড়ো অকৃতজ্ঞ;

১৬. আল্লাহ তায়ালা কি তাঁর নিজস্ব সৃষ্টি থেকে কন্যা সন্তানই বাছাই করেছেন, আর তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন পুত্র সন্তান!

১৭. (অথচ) যখন এদের কাউকে সে (কন্যা সন্তানের) সুসংবাদ দেয়া হয়, যার বর্ণনা ওরা দয়াময় আল্লাহ তায়ালার জন্যে দিয়ে রেখেছে তখন তার (নিজের) চেহারাই কালো হয়ে যায় এবং সে মনস্তাপক্লিষ্ট হয় পড়ে।

১৮. একি (আশ্চর্য, কন্যা সন্তান)! যারা (সাজ) অলংকারে লালিত পালিত হয়, যারা (নিজেদের সমর্থনে) যুক্তি তর্কের বেলায়ও অগ্রণী হতে পারে না (তাদেরই তারা আল্লাহ তায়ালার জন্যে রাখলো?)

১৯. (শুধু তাই নয়,) এরা (আল্লাহ তায়ালার) ফেরেশতাদেরও যারা দয়াময় আল্লাহ তায়ালার বান্দা মাত্র, নারী (বলে) স্থির করে নিলো; ফেরেশতাদের সৃষ্টির সময় এরা কি সেখানে মজুদ ছিলো (যে, তারা জানে এরা নর না নারী), তাদের এ দাবীগুলো (ভালো করে) লিখে রাখা হবে এবং (কেয়ামতের দিন) তাদের (এ ব্যাপারে) জিজ্ঞেস করা হবে।

২০. এরা (আরো) বলে, দয়াময় আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা না করলে আমরা কখনো এ (ফেরেশতা)-দের এবাদাত করতাম না; এদের কাছে (আসলে) এ ব্যাপারে কোনো জ্ঞানই নেই, এরা শুধু অনুমানের ওপরই (ভর করে) চলে;

২১. আমি কি এর আগে তাদের ( অন্য) কোনো কিতাব দিয়েছিলাম যা ওরা (আজ) আঁকড়ে ধরে আছে!

২২. (কোনো কেতাবের বদলে) তারা বরং বলে, আমরা আমাদের বাপ দাদাদের এ মতাদর্শের অনুসারী (হিসেবে) পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসারী মাত্র ।

২৩. (হে নবী,) আমি তোমার আগে যখনি কোনো জনপদে এভাবে সতর্ককারী (নবী) পাঠিয়েছি, তখনি তাদের বিত্তশালীরা বলেছে, আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের এ মতাদর্শের অনুসারী (হিসেবে) পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসারী ।

২৪. (হে নবী,) তুমি বলো, যদি আমি তার চাইতে উৎকৃষ্ট পথনির্দেশ তোমাদের কাছে নিয়ে আসি, যার ওপর তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের পেয়েছো (তারপরও তোমরা তাদের অনুসরণ করবে?) তারা বললো, যে (দ্বীন) দিয়ে তোমাকে পাঠানো হয়েছে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি ।

২৫. অতএব আমি তাদের কাছ থেকে (বিদ্রোহের) প্রতিশোধ নিয়েছি, তুমি দেখে নাও মিথ্যাবাদীদের কি (বীভৎস ) পরিণাম হয়েছিলো!

২৬. যখন ইবরাহীম তার পিতা ও তার জাতিকে বললো, আমি অবশ্যই তাদের থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত যাদের তোমরা পূজা করো,

২৭. (হ্যাঁ, আমি এবাদাত শুধু তাঁরই করি) যিনি আমাকে পয়দা করেছেন, নিসন্দেহে তিনি আমাকে সৎপথে পরিচালিত করবেন।

২৮. সে এ কথা তার পরবর্তী বংশধরদের কাছে (তাওহীদের) একটি স্থায়ী ঘোষণা (হিসেবে) রেখে গেলো, যাতে করে তারা (তার বংশের লোকেরা এদিকে) প্রত্যাবর্তন করতে পারে।

২৯. (এ সত্ত্বেও আমি তাদের ধ্বংস করিনি,) বরং আমি তাদের ও তাদের বাপ-দাদাদের (পার্থিব) সম্পদ দান (করা) অব্যাহত রেখেছি, যতোক্ষণ না তাদের কাছে সত্য (দ্বীন) ও পরিষ্কার ঘোষণা নিয়ে (আরেকজন) নবী এসে হাযির হয়েছে।

৩০. কিন্তু যখন তাদের কাছে সত্য (দ্বীন) এসে গেলো তখন তারা বলতে লাগলো, এ তো হচ্ছে যাদু, আমরা তো (কিছুতেই) তা মেনে নিতে পারি না ।

৩১. তারা (এও) বললো, এ কোরআন কেন দুটো জনপদের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির ওপর নাযিল হলো না?

৩২. (হে নবী,) তারা কি তোমার মালিকের রহমত বণ্টন করছে, (অথচ) আমিই তাদের দুনিয়ার জীবনে তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বন্টন করেছি, আমি তাদের একজনের ওপর আরেকজনের (বৈষয়িক) মর্যাদা সমুন্নত করেছি, যাতে করে তারা একজন অপরজনকে সেবক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে; কিন্তু তোমার মালিকের রহমত অনেক উৎকৃষ্ট (তারা যেসব সম্পদ জমা করে তার চেয়ে বড়ো)।

৩৩. যদি (এ কথার) আশংকা না থাকতো যে, (দুনিয়ার) সব কয়টি মানুষ একই পথের অনুসারী হয়ে যাবে, তাহলে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার অস্বীকারকারী কাফেরদের ঘরের জন্যে আমি রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি বানিয়ে দিতাম, যার ওপর দিয়ে তারা উঠতো (নামতো),

৩৪. তাদের ঘরের জন্যে (সাজিয়ে দিতাম) রৌপ্য নির্মিত দরজা ও পালংক, যার ওপর তারা হেলান দিয়ে বসতো,

৩৫. (প্রয়োজনে তা) স্বর্ণ নির্মিতও (করে দিতে পারতাম, আসলে), এর সব কয়টি জিনিসই তো হচ্ছে পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ; আর (হে নবী,) আখেরাত (ও তার সম্পদ) তোমার মালিকের কাছে (একান্তভাবে, তাদের জন্যে) যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) ভয় করে।

৩৬. যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিয়োজিত করে দেই, অতপর সে-ই (সর্বক্ষণ) তার সাথী হয়ে থাকে।

৩৭. তারাই অতপর তাদের (আল্লাহ তায়ালার) পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে, অথচ তারা নিজেরা মনে করে তারা বুঝি সঠিক পথের ওপরই রয়েছে ।

৩৮. (এ) ব্যক্তি যখন (কেয়ামতের দিন) আমার সামনে হাযির হবে, তখন (তার শয়তান সাথীকে দেখে) সে বলবে, হায় (কতো ভালো হতো) যদি (আজ) আমার ও তোমার মাঝে দুই উদয়াচলের ব্যবধান থাকতো, (তুমি) কতো নিকৃষ্ট সাথী (ছিলে আমার)!

৩৯. (বলা হবে,) যখন তোমরা (শয়তানকে সাথীরূপে গ্রহণ করে নিজেদের ওপর) যুলুম করেছিলে, তখন (আজও) তোমরা (এই) আযাবে একজন আরেকজনের অংশীদার হয়ে থাকো | (হে নবী), তুমি বলো, আজ এগুলো তোমাদের কোনো রকম উপকারই দেবে না।

৪০. (হে নবী), তুমি কি বধিরকে (কিছু) শোনাতে পারবে, অথবা পারবে কি পথ দেখাতে সে অন্ধকে যে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত?

৪১. অতপর আমি তোমাকে (দুনিয়া থেকে) উঠিয়ে নিয়ে গেলেও আমি এদের কাছ থেকে অবশ্যই (বিদ্রোহের) প্রতিশোধ নেবো,

৪২. অথবা তোমার (জীবদ্দশায়) তোমাকে সে (শাস্তির বিষয় দেখিয়ে দেই যার ওয়াদা আমি তাদের দিয়েছি (তাতেও এই প্রতিশোধ কেউ ঠেকাতে পারবে না), আমি অবশ্যই তাদের ওপর প্রবল ক্ষমতায় ক্ষমতাবান।

৪৩. অতএব এ গ্রন্থ, যা তোমার ওপর ওহী করে পাঠানো হয়েছে তা শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো, তুমি অবশ্যই সঠিক পথের ওপর রয়েছো।

৪৪. নিসন্দেহে এ (কোরআন)-টা তোমার ও তোমার জাতির জন্যে উপদেশ, অচিরেই তোমাদের (এ উপদেশ সম্পর্কে) জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ।

৪৫. (হে নবী,) তোমার আগে আমি যেসব রসুল পাঠিয়েছিলাম, তুমি তাদের জিজ্ঞেস করে দেখো, আমি কি (কখনো তাদের জন্যে) দয়াময় আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ ঠিক করে দিয়েছিলাম যার (আসলেই) কোনো এবাদাত করা যেতো!

৪৬. আমি মুসাকেও আমার নিদর্শনসমুহ দিয়ে ফেরাউন ও তার পারিষদদের কাছে পাঠিয়েছিলাম, অতপর সে (তাদের কাছে গিয়ে) বললো, আমি হচ্ছি সৃষ্টিকুলের মালিকের রসুল।

৪৭. যখন সে (সত্যি সত্যিই) আমার নিদর্শনসমুহ নিয়ে তাদের কাছে এলো, তখন সাথে সাথে তারা তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতে লাগলো।

৪৮. আমি তাদের যে নিদর্শনই দেখাতাম তা হতো আগেরটার চাইতে বড়ো, (সবই যখন ব্যর্থ হলো তখন) আমি তাদের আযাব দিয়ে পাকড়াও করলাম, যাতে করে তারা (আমার দিকে) ফিরে আসে ।

৪৯. (আযাব দেখলেই তারা মুসাকে বলতো,) হে যাদুকর, তোমার মালিক তোমার সাথে যে ওয়াদা করেছেন তার ভিত্তিতে তার কাছে আমাদের জন্যে দোয়া করো, (নিষ্কৃতি পেলে) আমরা সঠিক পথে চলবো।

৫০. অতপর আমি যখন তাদের ওপর থেকে আযাব সরিয়ে নিলাম, তখনই তারা (মুসাকে দেয়া) অংগীকার ভঙ্গ করে বসলো।

৫১. (একদিন) ফেরাউন তার জাতিকে ডাকলো এবং বললো, হে আমার জাতি (তোমরা কি বলো), মিসরের রাজত্ব কি আমার জন্যে নয়? এ নদীগুলো কি আমার (প্রাসাদের) নীচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে না? তোমরা কি (কিছুই) দেখতে পাচ্ছো না?

৫২. আমি কি সে ব্যক্তি থেকে শ্রেষ্ঠ নই যে (খুব) নীচু (জাতের লোক) এবং সে তো (নিজের) কথাগুলো পর্যন্ত স্পষ্ট করে বলতে পারে না ।

৫৩. (তাছাড়া নবী হলে) তাকে সোনার কংকণ পরানো হলো না কেন, কিংবা তার সাথে দল বেঁধে (আসমানের) ফেরেশতারাই বা কেন এলো না?

৫৪. (এসব বলে) সে তার জাতিকে বেকুব বানিয়ে দিলো, (এক পর্যায়ে) তারা তার কথা মেনেও নিলো; নিসন্দেহে ওরা ছিলো এক নাফরমান সম্প্রদায়ের লোক!

৫৫. যখন তারা আমাকে দারুণভাবে ক্রোধান্বিত করলো তখন আমিও তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদের সবাইকে (পানিতে) ডুবিয়ে দিলাম।

৫৬. আমি পরবর্তী বংশধরদের জন্যে তাদের ইতিহাসের (উল্লেখযোগ্য) ঘটনা ও (শিক্ষণীয়) দৃষ্টান্ত করে রাখলাম।

৫৭. (হে নবী, তাদের কাছে) যখনই মারইয়াম পুত্রের উদাহরণ পেশ করা হয়, তখন সাথে সাথে তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা সে কারণে (খুশীতে) চীৎকার জুড়ে দেয়।

৫৮. তারা বলতে থাকে, আমাদের মাবুদরা ভালো না সে (মারইয়াম পুত্র ঈসা ভালো, আসলে); এরা কেবল বিতর্কের উদ্দেশেই এসব কথা উপস্থাপন করে; বরং এরা তো কলহপরায়ণ জাতিই বটে।

৫৯. (মুলত) সে ছিলো আমারই একজন বান্দা, যার ওপর আমি অনুগ্রহ করেছিলাম, তাকে বনী ইসরাঈলদের জন্যে আমি (আমার কুদরতের) একটা অনুকরণীয় আদর্শ বানিয়েছিলাম;

৬০. আমি চাইলে তোমাদের বদলে আমি ফেরেশতাদের পাঠাতাম, (সে অবস্থায়) তারাই (দুনিয়ায় আমার) প্রতিনিধিত্ব করতো!

৬১. সে (মারইয়াম পুত্র ঈসা) হবে (মুলত) কেয়ামতের একটি নিদর্শন (হে নবী, তুমি বলো), তোমরা সে (কেয়ামতের) ব্যাপারে কখনো সন্দেহ পোষণ করো না, তোমরা আমার আনুগত্য করো; (কেননা) এটাই (তোমাদের জন্যে) সহজ সরল পথ ।

৬২. শয়তান যেন কোনো অবস্থায়ই (এ পথ থেকে) তোমাদের বিচ্যুত করতে না পারে (সেদিকে খেয়াল রেখো), নিসন্দেহে সে হচ্ছে তোমাদের প্রকাশ্য দুশমন!

৬৩. ঈসা যখন স্পষ্ট দলীল প্রমাণ নিয়ে এলো তখন সে (তার লোকদের) বললো, আমি তোমাদের কাছে প্রজ্ঞা নিয়ে এসেছি এবং তোমরা (যে আমার অবস্থান সম্পর্কে) নানা মতবিরোধ করছো তা আমি তোমাদের স্পষ্ট করে বলে দেবো, অতএব তোমরা (আল্লাহ তায়ালার আযাবকে) ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।

৬৪. অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন আমার মালিক, তোমাদেরও মালিক, অতএব তোমরা তাঁরই এবাদাত করো; এটাই হচ্ছে সরল পথ ।

৬৫. (এ সত্ত্বেও) তাদের বিভিন্ন দল (তাকে নিয়ে) নিজেদের মধ্যে (নানা) মতানৈক্য সৃষ্টি করলো, অতপর দুর্ভোগ ও কঠিন দিনের আযাব তাদের জন্যেই যারা (অযথা) বাড়াবাড়ি করলো ।

৬৬. তারা কি (এ ফয়সালার জন্যে) কেয়ামত (-এর ক্ষণটি) আসার অপেক্ষা করছে, তা (কিন্তু একদিন) আকস্মিকভাবেই তাদের ওপর এসে পড়বে এবং তারা টেরও পাবে না।

৬৭. সেদিন (দুনিয়ার) বন্ধুরা সবাই একে অপরের দুশমন হয়ে যাবে, অবশ্য যারা আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করেছে তাদের কথা আলাদা।

৬৮. (সেদিন আমি পরহেযগার বান্দাদের বলবো,) হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোনো ডর ভয় নেই, না তোমরা আজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে,

৬৯. এরা হচ্ছে সেসব লোক, যারা (দুনিয়াতে) আমার আয়াতসমুহের ওপর ঈমান এনেছে, (মুলত) তারা ছিলো (আমার) অনুগত বান্দা।

৭০. (আমি আরো বলবো,) তোমরা এবং তোমাদের সংগী সংগিনীরা জান্নাতে প্রবেশ করো, সেখানে তোমাদের (সম্মানজনক) মেহমানদারী করা হবে!

৭১. সেখানে তাদের ওপর সোনার থালা ও পানপাত্রের প্রচুর আনাগোনা চলবে, যা কিছুই (তাদের) মন চাইবে এবং যা কিছুই তাদের (দৃষ্টিতে) ভালো লাগবে তা সবই (সেখানে মজুদ) থাকবে (উপরন্তু তাদের বলা হবে), তোমরা এখানে চিরদিন থাকবে,

৭২. আর এটা হচ্ছে সেই (চিরস্থায়ী ) জান্নাত, যার (আজ) তোমরা উত্তরাধিকারী হলে, এটা হচ্ছে তোমাদের সে (নেক) আমলের বিনিময় যা তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) করে এসেছো।

৭৩. (এখানে) তোমাদের জন্যে প্রচুর পরিমাণ ফল-পাকড়া (মজুদ) থাকবে, যা থেকে তোমরা (প্রাণভরে) খেতে পারবে,

৭৪. (অপর দিকে) অপরাধীরা থাকবে নিশ্চিত জাহান্নামে, সেখানে তারা থাকবে চিরদিন,

৭৫. (মুহূর্তের জন্যেও শাস্তি) তাদের থেকে লঘু করা হবে না এবং (একান্ত) হতাশ হয়েই তারা সেখানে পড়ে থাকবে,

৭৬. (এ আযাব দিয়ে কিন্তু) আমি তাদের ওপর মোটেই যুলুম করিনি, বরং তারা (বিদ্রোহ করে) নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে।

৭৭. ওরা (জাহান্নামের প্রহরীকে) ডেকে বলবে, ওহে প্রহরী, (আজ) তোমার প্রতিপালক (যদি মৃত্যুর মাধ্যমে) আমাদের ব্যাপারটা শেষ করে দিতেন (তাহলেই ভালো হতো); সে (প্রহরী) বলবে, (না, তা কিছুতেই হবার নয়, এভাবেই) তোমাদের (এখানে) চিরকাল পড়ে থাকতে হবে।

৭৮. (নবী বলবে,) আমি অবশ্যই তোমাদের কাছে সত্য (দ্বীন) নিয়ে এসেছিলাম, কিন্তু তোমাদের অধিকাংশ লোকই (এ থেকে) অনীহা প্রকাশ করেছিলো।

৭৯. তারা কি (নবীকে কষ্ট দেয়ার) পরিকল্পনা গ্রহণ করেই ফেলেছে (তাহলে তারা শুনুক), আমিও (তাকে কষ্ট থেকে বাঁচানোর) আমার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে রেখেছি,

৮০. তারা কি ধরে নিয়েছে, আমি তাদের গোপন কথা ও সলাপরামর্শসমুহ শুনতে পাই না; অবশ্যই (আমি তা শুনতে পাই), তাছাড়া আমার পাঠানো (ফেরেশতা) যারা তাদের (ঘাড়ের) পাশে (বসে) আছে, তারাও (তো) সব লিখে রাখছে।

৮১. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, যদি দয়াময় আল্লাহ তায়ালার কোনো সন্তান থাকতো, তাহলে আমিই তার প্রথম এবাদাতগোযারদের মধ্যে অগ্রণী হতাম!

৮২. আল্লাহ তায়ালা অনেক পবিত্র, তিনি আসমানসমূহ ও যমীনের মালিক, মহান আরশের তিনি অধিপতি, এরা যা কিছু তাঁর সম্পর্কে বলে তিনি তা থেকে পবিত্র।

৮৩. অতএব (হে নবী), তুমি এদের (সেদিন পর্যন্ত) অর্থহীন কথাবার্তা ও খেলাধুলায় (মত্ত) থাকতে দাও, যখন তারা সে (কঠিন) দিনটির সম্মুখীন হবে, যার ওয়াদা (বার বার) তাদের কাছে করা হয়েছে।

৮৪. তিনি হচ্ছেন আসমানে মাবুদ, যমীনেও মাবুদ; তিনি বিজ্ঞ, কুশলী, সর্বজ্ঞ।

৮৫. (প্রভূত) বরকতময় তিনি, আসমানসমুহ, যমীন ও এ উভয়ের মধ্যবর্তী স্থানে (যেখানে) যা কিছু আছে, (এ সব কিছুর একক) সার্বভৌমত্ব তাঁর জন্যেই, কেয়ামতের সঠিক খবর তাঁর কাছেই রয়েছে, পরিশেষে তোমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।

৮৬. তাঁকে বাদ দিয়ে এরা অন্য যেসব ( মাবুদ)-কে ডাকে, তারা তো (আল্লাহ তায়ালার কাছে) সুপারিশের (কোনো) ক্ষমতাই রাখে না, তবে যারা সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে এবং (সত্যকে জানবে (তাদের কথা আলাদা)।

৮৭. (হে নবী, তুমি) যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, কে তাদের পয়দা করেছেন, তারা বলবে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা, (তাহলে বলো) তোমরা (তাঁকে বাদ দিয়ে) কোথায় কোথায় ঠোকর খাচ্ছো?

৮৮. (আল্লাহ তায়ালা) তাঁর (রসুলের) এ বক্তব্য (সম্পর্কেও জানেন), হে আমার মালিক, এরা হচ্ছে এমন লোক যারা কখনোই ঈমান আনবে না ।

৮৯. (হে রসুল,) অতপর তুমি এদের থেকে বিমুখ থাকো, (এদের ব্যাপার) ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো এবং (তাদের উদ্দেশে) বলো সালাম; (কেননা) অচিরেই ওরা সত্য মিথ্যা জানতে পারবে।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url