আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আশ শুরা’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আশ শুরা | Surah Ash Shura | سورة الشورى‎‎


সূরা আশ শুরা’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আশ শুরা, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৫৩, রুকু ৫

সূরা আশ শুরা



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হা-মীম,

২. আঈন সী-ন-কা-ফা।

৩. (হে নবী,) এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তোমার ওপর (এ সুরাগুলো) নাযিল করছেন, তোমার পুর্ববর্তী (নবী)-দের কাছেও (তিনি তা এভাবে নাযিল করেছেন), আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

৪. আসমানসমুহে যা কিছু আছে যা কিছু আছে যমীনে, সবকিছুই তাঁর; তিনি সমুন্নত, (তিনি) মহান।

৫. (আল্লাহ তায়ালার ভয়ে) আসমানসমুহ তাদের উপরিভাগ থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয়েছিলো, (এ সময়) ফেরেশতারা তাদের মহান মালিকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকে, তারা দুনিয়াবাসীদের জন্যেও (তখন) আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে শুরু করে; তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

৬. (হে নবী,) যারা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্যদের অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর নযর রাখছেন, তুমি (তো) এদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নও।

৭. এভাবেই (হে নবী, এ) আরবী কোরআন আমি তোমার ওপর নাযিল করেছি, যাতে করে তুমি (এর দ্বারা) মক্কাবাসীদের ও তার আশেপাশে যারা বসবাস করে তাদের (জাহান্নামের আযাব সম্পর্কে) সতর্ক করে দিতে পারো, (বিশেষ করে) তাদের তুমি (কেয়ামতের) মহাসমাবেশের দিন সম্পর্কেও হুশিয়ার করতে পারো; যে দিনের (ব্যাপারে) কোনো রকম সন্দেহ নেই, আর (আল্লাহ তায়ালার বিচারে সেদিন) একদল লোক জান্নাতে আরেক দল লোক জাহান্নামে (প্রবেশ করবে)।

৮. আল্লাহ তায়ালা চাইলে সমগ্র মানব সন্তানকে একটি (অখন্ড) জাতিতে পরিণত করতে পারতেন, (কিন্তু) তিনি যাকে ইচ্ছা করেন তাকে নিজ অনুগ্রহে প্রবেশ করান; আর যারা যালেম তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত হচ্ছে), তাদের কোথাও কোনো অভিভাবক থাকবে না, থাকবে না কোনো সাহায্যকারীও।

৯. এরা কি আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে (অন্যদের) অভিভাবক বানিয়ে নিয়েছে, (অথচ) অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ তায়ালাই, তিনি মৃতকে জীবিত করেন, তিনি সর্ববিষয়ের ওপর প্রবল শক্তিমান।


১০. (হে মানুষ,) তোমরা যে বিষয়ে মতবিরোধ করো, তার ফয়সালা তো আল্লাহ তায়ালারই হাতে; (বলো হে নবী,) এ হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, তিনিই আমার মালিক, আমি তাঁর ওপরই নির্ভর করি এবং আমি তাঁর দিকেই রুজু করি।

১১. তিনি আসমানসমুহ ও যমীনের সৃষ্টিকর্তা; তিনি তোমাদের নিজেদের মধ্য থেকে তোমাদের জন্যে যুগল সৃষ্টি করেছেন, (তিনি) পশুদের মাঝেও (তাদের) জোড়া সৃষ্টি করেছেন, (এভাবেই) তিনি সেখানে তোমাদের বংশ বিস্তার করেন; (সৃষ্টিলোকে) কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, (তিনি) সর্বদ্রষ্টা।

১২. আসমানসমুহ ও যমীনের সমস্ত চাবি (-কাঠি) তাঁরই হাতে, তিনি যার জন্যে ইচ্ছা করেন রেযেক বাড়িয়ে দেন, আবার (যার জন্যে চান) সংকুচিত করেন; নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক বিষয় সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন।

১৩. (হে মানুষ,) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্যে সে 'দ্বীনই' নির্ধারিত করেছেন, যার আদেশ তিনি দিয়েছিলেন নুহকে এবং যা আমি তোমার কাছে ওহী করে পাঠিয়েছি, (উপরন্তু) যার আদেশ আমি ইবরাহীম, মুসা ও ঈসাকে দিয়েছিলাম, (এদের সবাইকে আমি বলেছিলাম), তোমরা এ জীবন বিধান (সমাজে) প্রতিষ্ঠিত করো এবং (কখনো) এতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না; (অবশ্য) তুমি যে (দ্বীনের) দিকে আহ্বান করছো, এটা মোশরেকদের কাছে একান্ত দুর্বিষহ মনে হয়; (মুলত) আল্লাহ তায়ালা যাকেই চান তাকে বাছাই করে নিজের দিকে নিয়ে আসেন এবং যে ব্যক্তি তাঁর অভিমুখী হয় তিনি তাকে (দ্বীনের পথে) পরিচালিত করেন ।

১৪. (হে নবী, ওদের কাছে সঠিক) জ্ঞান আসার পরও ওরা কেবলমাত্র নিজেদের পারস্পরিক বিদ্বেষের কারণেই নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ ঘটায়; যদি এদের একটি সুনির্দষ্টি কাল পর্যন্ত ( অব্যাহতি দিয়ে রাখার) তোমার মালিকের ঘোষণা না থাকতো, তাহলে কবেই (আযাবের মাধ্যমে) ওদের মধ্যে একটা ফয়সালা হয়ে যেতো; (আসলে) যাদের আগের লোকদের পরে কিতাবের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে, তারা (কোরআনের ব্যাপারে) এক বিভ্রান্তিকর সন্দেহে নিমজ্জিত হয়ে আছে ।

১৫. অতএব (হে নবী), তুমি (মানুষদের) এ (দ্বীনের) দিকে ডাকতে থাকো, তোমাকে যেভাবে আদেশ দেয়া হয়েছে সেভাবেই তুমি (এর উপর) দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থেকো, ওদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করো না, তুমি বলে দাও, আল্লাহ তায়ালা কিতাবের যা কিছুই অবতীর্ণ করেন না কেন, আমি তার ওপরই ঈমান আনি, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করি; আল্লাহ তায়ালা আমাদের মালিক এবং তোমাদেরও মালিক; আমাদের কাজ আমাদের জন্যে এবং তোমাদের কাজ তোমাদের জন্যে; আমাদের ও তোমাদের মাঝে কোনো ঝগড়াঝাটি নেই; আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে (এক জায়গায় জড়ো করবেন, আর (সবাইকে) তার দিকেই ফিরে যেতে হবে;

১৬. যারা আল্লাহ তায়ালার (দ্বীন) সম্পর্কে বিতর্ক করে, (বিশেষত আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক) তা (দ্বীন) গৃহীত হওয়ার পর এদের বিতর্ক তাদের মালিকের কাছে সম্পূর্ণ অসার, তাদের ওপর (তাঁর) গযব, তাদের জন্যে রয়েছে (তাঁর) কঠিন শাস্তি ।

১৭. তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি সত্য (দ্বীন)-সহ এ কিতাব ও (ইনসাফের) মানদন্ড নাযিল করেছেন; (হে নবী,) তুমি কি জানো, সম্ভবত কেয়ামত একান্ত কাছে (এসে গেছে)!

১৮. যারা সে (কেয়ামতের) বিষয়ে বিশ্বাস করে না, তারা কামনা করে তা ত্বরান্বিত হোক, (অপরদিকে) যারা তা বিশ্বাস করে তারা তার থেকে ভয় করে, (কেননা) তারা জানে সে (দিন) -টি একান্ত সত্য; জেনে রেখো, যারাই কেয়ামত সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে তারা মারাত্মক গোমরাহীতে রয়েছে ।

১৯. আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের সুক্ষ্মাতিসুক্ষ বিষয় সম্পর্কেও অবহিত আছেন, তিনি যাকে রেযেক দিতে চান দেন, তিনি প্রবল পরাক্রমশালী ।

২০. যে ব্যক্তি পরকালের (কল্যাণের) ফসল কামনা করে আমি তার জন্যে তা বাড়িয়ে দেই, আর যে ব্যক্তি (শুধু) দুনিয়ার জীবনের ফসল কামনা করে আমি তাকে (অবশ্য দুনিয়ায়) তার কিছু অংশ দান করি, কিন্তু পরকালে তার জন্যে (সে ফসলের) কোনো অংশই বাকী থাকে না।

২১. এদের কি এমন কোনো শরীক আছে, যারা এদের জন্যে এমন কোনো জীবন বিধান প্রণয়ন করে নিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ তায়ালা দান করেননি; যদি (আযাবের মাধ্যমে) সিদ্ধান্ত নেয়া হতো তাহলে কবেই তাদের মধ্যে একটা ফয়সালা হয়ে যেতো; অবশ্যই যালেমদের জন্যে কঠিন শাস্তি রয়েছে।

২২. (হে নবী, সেদিন) তুমি (এ) যালেমদের দেখতে পাবে তারা নিজেদের কর্মকান্ড (-এর শাস্তি) থেকে ভীত সন্ত্রস্ত, কেননা তা তাদের ওপর পতিত হবেই; (কিন্তু) যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, (তারা) জান্নাতের মনোরম উদ্যানে (অবস্থান করবে), তারা (সেদিন) যা কিছু চাইবে তাদের মালিকের কাছ থেকে তাদের জন্যে তাই (সেখানে মজুদ) থাকবে; এটা হচ্ছে (আল্লাহ তায়ালার) মহা অনুগ্রহ।

২৩. আর সেটা হচ্ছে তাই (নেয়ামত) আল্লাহ তায়ালা তার সেসব বান্দাদের যার সুসংবাদ দান করেন, যারা (এর ওপর) ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে; (হে নবী) তুমি বলো, আমি তোমাদের কাছ থেকে এ (দ্বীন প্রচারের) ওপর কোনো পারিশ্রমিক চাই না, তবে (তোমাদের সাথে আমার) আত্মীয়তা (সুত্রে) যে সৌহার্দ (আমার পাওনা) রয়েছে সেটা আলাদা; যে ব্যক্তিই কোনো নেক কাজ করে তার জন্যে আমি তার (সে নেক) কাজে অতিরিক্ত কিছু সৌন্দর্য যোগ করে দেই; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও গুণগ্রাহী।

২৪. (হে নবী,) তারা কি বলে এ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করছে, (অথচ) আল্লাহ তায়ালা চাইলে তোমার দিলের ওপর মোহর মেরে দিতে পারতেন; আল্লাহ তায়ালা বাতিলকে (এমনিই) মিটিয়ে দেন এবং সত্যকে তাঁর বাণী দ্বারা সত্য প্রমাণ করে দেখিয়ে দেন; অবশ্যই (মানুষের) অন্তরে যা কিছু আছে সে সম্পর্কে তিনি সবিশেষ অবহিত রয়েছেন ।

২৫. তিনিই হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা যিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন এবং তাদের গুনাহ খাতাও তিনি ক্ষমা করে দেন, তোমরা যা কিছু করো সে সম্পর্কেও তিনি জানেন,

২৬. তিনি তাদের ডাকে সাড়া দেন যারা (তাঁর ওপর) ঈমান আনে এবং নেক আমল করে, তিনি তাদের নিজ অনুগ্রহে তাদের (পাওনার চাইতে বেশী (সওয়াব দান করেন; (হ্যাঁ,) যারা (তাঁকে) অস্বীকার করে তাদের জন্যে কঠোর শাস্তি রয়েছে ।

২৭. যদি আল্লাহ তায়ালা তাঁর (সব) বান্দাদের রেযেকে প্রাচুর্য দিতেন তাহলে তারা নিসন্দেহে যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতো, (তাই) তিনি পরিমাণমতো যাকে (যতোটুকু) চান তার জন্যে (ততোটুকু রেযেকই) নাযিল করেন; অবশ্য তিনি নিজের বান্দাদের (প্রয়োজন) সম্পর্কে পূর্ণাংগ ওয়াকেফহাল রয়েছেন, তিনি (তাদের প্রয়োজনের দিকেও) নযর রাখেন।

২৮. তিনিই (আল্লাহ তায়ালা) তারা যখন (বৃষ্টির ব্যাপারে) নিরাশ হয়ে পড়ে তখন তিনি বৃষ্টি প্রেরণ করেন এবং (এভাবেই) যমীনে তিনি তাঁর রহমত ছড়িয়ে দেন; (মুলত) তিনিই অভিভাবক, (তিনিই) প্রশংসিত ।

২৯. তাঁর (কুদরতের অন্যতম) নিদর্শন হচ্ছে স্বয়ং আসমানসমুহ ও যমীনের সৃষ্টি, এ দুয়ের মাঝখানে যতো প্রাণী আছে তা তিনিই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন; তিনি যখন চাইবেন তখন এদের সবাইকে (আবার) জমা করতেও সক্ষম হবেন।

৩০. (হে মানুষ,) যে বিপদ আপদই তোমাদের ওপর আসুক না কেন, তা হচ্ছে তোমাদের নিজেদের হাতের কামাই, (তা সত্ত্বেও) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অনেক (অপরাধ এমনিই) ক্ষমা করে দেন ।

৩১. তোমরা যমীনে আল্লাহকে ব্যর্থ করে দিতে পারবে না, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই, নেই কোনো সাহায্যকারীও ।

৩২. আল্লাহ তায়ালার (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের মধ্যে সমুদ্রে বাতাসের বেগে বয়ে চলা পাহাড়সম জাহাজগুলো অন্যতম;

৩৩. তিনি ইচ্ছা করলে বাতাস স্তব্ধ করে দিতে পারেন, ফলে এসব ( নৌযান) সমুদ্রের বুকে নিশ্চল হয়ে পড়ে থাকবে; নিশ্চয়ই এ (প্রক্রিয়ার) মাঝে ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞদের জন্যে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে,

৩৪. অথবা তিনি চাইলে (বাতাস তীব্র করে সেগুলো) তাদের কৃতকর্মের কারণে ধ্বংসও করে দিতে পারেন, অনেক কিছু থেকে তিনি তো (আবার) ক্ষমাও করে দেন,

৩৫. যারা আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের ব্যাপারে (খামাখা) বিতর্ক করে তারা যেন জেনে রাখে যে, তাদের কিন্তু পালানোর কোনো জায়গা নেই।

৩৬. তোমাদের যা কিছুই দেয়া হয়েছে তা দুনিয়ার কতিপয় (অস্থায়ী) ভোগের সামগ্রী মাত্র, কিন্তু (পুরস্কার হিসেবে) যা আল্লাহ তায়ালার কাছে আছে তা উত্তম ও স্থায়ী, আর তা হচ্ছে সেসব লোকের জন্যে যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে এবং সর্বাবস্থায়ই তারা তাদের মালিকের ওপর নির্ভর করে,

৩৭. যারা বড়ো বড়ো গুনাহ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকে, (বিশেষ করে) যখন রাগান্বিত হয় তখন তারা (অন্যদের ভুল) ক্ষমা করে দেয়,

৩৮. যারা তাদের মালিকের ডাকে সাড়া দেয়, নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাদের কাজকর্মগুলো (সম্পাদনের সময়) পারস্পরিক পরামর্শই হয় তাদের (কর্ম) পন্থা, আমি তাদের যে রেযেক দান করেছি তা থেকে তারা (আমারই পথে) খরচ করে,

৩৯. যারা (এমনি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন,) যখন তাদের ওপর বাড়াবাড়ি করা হয় তখন তারা প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

৪০. মন্দের প্রতিফল অনুরূপ মন্দই (হবে), কিন্তু যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস করে, আল্লাহ তায়ালার কাছে অবশ্যই তার (জন্যে) যথাযথ পুরস্কার রয়েছে; আল্লাহ তায়ালা কখনও যালেমদের পছন্দ করেন না ।

৪১. কোনো ব্যক্তি যদি তার সাথে যুলুম (সংঘটিত) হওয়ার পর (সমপরিমাণ) প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাতে তাদের ওপর কোনো অভিযোগ নেই:

৪২. অভিযোগ তো হচ্ছে তাদের ওপর, যারা মানুষদের ওপর অত্যাচার করে এবং পৃথিবীর বুকে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহের আচরণ করে বেড়ায়; এমন (ধরনের যালেম) লোকদের জন্যেই রয়েছে কঠোর আযাব।

৪৩. যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে এবং (মানুষদের) ক্ষমা করে দেয় (সে যেন জেনে রাখে), অবশ্যই এটা হচ্ছে সাহসিকতার কাজসমুহের মধ্যে অন্যতম।

৪৪. (হে নবী,) যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা গোমরাহ করে দেন, তার জন্যে তিনি ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় অভিভাবক থাকে না; তুমি যালেমদের দেখবে, যখন তারা (আল্লাহ তায়ালার) আযাব পর্যবেক্ষণ করবে তখন বলবে, (আজ এখান থেকে) ফিরে যাওয়ার কোনো পথ আছে কি?

৪৫. তুমি তাদের দেখতে পাবে (যখন) তাদের জাহান্নামের কাছে এনে হাযির করা হবে, তখন তারা অপমানে অবনত (হয়ে যাবে), ভয়ে তারা অর্ধ নির্মীলিত চোখে তাকিয়ে থাকবে; (এ অবস্থা দেখে) যারা ঈমান এনেছিলো তারা বলবে, সত্যিকার ক্ষতিগ্রস্ত লোক তো তারা যারা (আজ) কেয়ামতের দিন নিজেদের ও নিজেদের পরিবার পরিজনদের (এভাবে) ক্ষতি সাধন করেছে; (হে নবী) জেনে রেখো, নিসন্দেহে যালেমরা (সেদিন) স্থায়ী আযাবে থাকবে।

৪৬. (আর সে আযাব এসে গেলে) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তাদের এমন কোনো অভিভাবক থাকবে না, যারা (তখন) তাদের কোনো রকম সাহায্য করতে পারবে; (সত্যি কথা হচ্ছে,) আল্লাহ তায়ালা যাকে গোমরাহ করেন তার জন্যে (বাঁচার) কোনোই উপায় নেই;

৪৭. (হে মানুষ,) সে দিনটি আসার আগেই তোমরা তোমাদের মালিকের ডাকে সাড়া দাও, আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে যে দিনটির প্রতিরোধকারী কেউই থাকবে না; সেদিন তোমাদের জন্যে কোনো আশ্রয়স্থলও থাকবে না, আর না তোমাদের পক্ষে সেদিন (অপরাধ) অস্বীকার করা সম্ভব হবে!

৪৮. অতপর যদি এরা (হেদায়াত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে (তুমি জেনে রেখো), আমি তোমাকে তাদের ওপর দারোগা করে পাঠাইনি; তোমার দায়িত্ব তো হচ্ছে শুধু (আল্লাহ তায়ালার বাণী) পৌঁছে দেয়া; যখন আমি মানুষদের আমার রহমত (-এর স্বাদ) আস্বাদন করাই তখন সে সে জন্যে (ভীষণ) উল্লসিত হয়, আবার যদি তাদেরই (কোনো) কর্মকান্ডের কারণে তাদের ওপর কোনো দুঃখ কষ্ট আসে, তখন (সে) মানুষ অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।

৪৯. আকাশমন্ডলী ও যমীনের (সমুদয়) সার্বভৌমত্ব (একমাত্র) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন; যাকে চান তাকে কন্যা সন্তান দান করেন, আবার যাকে চান তাকে পুত্র সন্তান দান করেন,

৫০. যাকে চান তাকে পুত্র কন্যা (উভয়টাই) দান করেন, (আবার) যাকে চান তাকে তিনি বন্ধ্যা করে দেন; নিসন্দেহে তিনি বেশী জানেন, ক্ষমতাও তিনি বেশী রাখেন ।

৫১. (আসলে) কোনো মানুষের জন্যেই এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তায়ালা (সরাসরি) তার সাথে কথা বলবেন, অবশ্য ওহী (দ্বারা) অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে কিংবা ওহী নিয়ে তিনি কোনো দূত (তার কাছে) পাঠাবেন এবং সে (দূত) তাঁরই অনুমতিক্রমে তিনি (যখন) যেভাবে চাইবেন (বান্দার কাছে) ওহী পৌঁছে দেবে; নিশ্চয়ই তিনি উচ্চ মর্যাদাশীল, প্রজ্ঞাময় কুশলী।

৫২. এমনিভাবেই (হে নবী) আমি আমার আদেশে (দ্বীনের এ) 'রূহ' তোমার কাছে ওহী করে পাঠিয়েছি; (নতুবা) তুমি তো (আদৌ) জানতেই না (আল্লাহ তায়ালার) কিতাব কি, না (তুমি জানতে) ঈমান কি কিন্তু আমি এ (রূহ)-কে একটি ‘নূরে' পরিণত করে দিয়েছি, যার দ্বারা আমি আমার বান্দাদের যাকে চাই তাকে (দ্বীনের) পথ দেখাই (এবং আমার আদেশক্রমে) তুমিও (মানুষদের) সঠিক পথ দেখিয়ে যাচ্ছো,

৫৩. (সে পথ) আল্লাহ তায়ালারই পথ, আসমানসমুহে ও যমীনে যা কিছু আছে সব কিছু আল্লাহ তায়ালার জন্যে; শুনে রেখো, ( পরিশেষে) সব কিছু আল্লাহ তায়ালার দিকেই ধাবিত হয় ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url