আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা হা-মীম আস সাজদা’র বাংলা অনুবাদ | সূরা হা-মীম আস সাজদা | Ha-Mim-As-Sajdah | سورة فصلت‎‎


সূরা হা-মীম আস সাজদা’র বাংলা অনুবাদ


সূরা হা-মীম আস সাজদা মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৫৪, রুকু ৬

সূরা হা-মীম আস সাজদা



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হা-মীম,

২. (এ কিতাব) রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে নাযিল করা হয়েছে ।

৩. (এ কোরআন এমন এক) কিতাব, যার আয়াতসমুহ খুলে খুলে বর্ণনা করা হয়েছে, (তদুপরি এ) কোরআন আরবী ভাষায় এমন একটি সম্প্রদায়ের জন্যে (নাযিল হয়েছে) যারা এটা জানে,

৪. (এ কিতাব হচ্ছে জান্নাতের) সুসংবাদদাতা আর (জাহান্নামের) ভীতি প্রদর্শনকারী, তারপরও (মানুষদের) অধিকাংশ (এ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং তারা (এ কিতাবের কথা) শোনে না ।

৫. তারা বলে, যে বিষয়ের দিকে তুমি আমাদের ডাকছো তার জন্যে আমাদের অন্তরসমুহ আবরণে আচ্ছাদিত হয়ে আছে, আমাদের কানেও রয়েছে বধিরতা, আমাদের ও তোমার মধ্যে একটি দেয়াল (দাঁড়িয়ে) আছে, সুতরাং তুমি তোমার কাজ করো আর আমরা আমাদের কাজ করি।

৬. (হে নবী) তুমি বলো, আমি তো তোমাদেরই মতো একজন মানুষ, কিন্তু আমার ওপর (এ মর্মে) ওহী নাযিল হয় যে, তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন, অতএব (হে মানুষ), তোমরা তাঁর এবাদাতের দিকেই সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যাও এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আর দুর্ভোগতো মোশরেকদের জন্যে নির্ধারিত হয়েই আছে,

৭. যারা যাকাত দেয় না এবং তারা পরকালের ওপরও ঈমান আনে না ।

৮. যারা (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, তাদের জন্যে (আখেরাতের জীবনে) নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে ।

৯. (হে নবী) তুমি বলো, তোমরা কি তাঁকে অস্বীকার করতে চাও যিনি দুদিনে পৃথিবীকে পয়দা করেছেন এবং তোমরা (অন্য কাউকে) কি তাঁরই সমকক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চাও? (অথচ) এই হচ্ছেন সৃষ্টিকুলের মালিক,

১০. তিনিই এ (যমীনের) মাঝে এর ওপর থেকে পাহাড়সমুহ গেড়ে দিয়েছেন ও তাতে বহুমুখী কল্যাণ রেখে দিয়েছেন এবং তাতে (সবার) আহারের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, (এসব তিনি সম্পন্ন করেছেন) চার দিন সময়ের ভেতর; অনুসন্ধানীদের জন্যে সেখানে (সব কিছু) সমান সমান (মজুদ রয়েছে)।

১১. অতপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করলেন, যা (তখন) ছিলো ধুম্রকুঞ্জ বিশেষ, এরপর তিনি তাকে ও যমীনকে আদেশ করলেন, তোমরা উভয়েই এগিয়ে এসো ইচ্ছায় হোক কিংবা অনিচ্ছায়; তারা উভয়েই বললো, আমরা অনুগত হয়েই এসেছি।

১২. (এই) একই সময়ে তিনি দুদিনের ভেতর এ (ধুম্রকুঞ্জ)-কে সাত আসমানে পরিণত করলেন এবং প্রতিটি আকাশে তার (উপযোগী) আদেশনামা পাঠালেন; পরিশেষে আমি নিকটবর্তী আসমানকে তারকারাজি দ্বারা সাজিয়ে দিলাম এবং (তাকে শয়তান থেকে) সংরক্ষিত করে দিলাম, এসব (পরিকল্পনা) অবশ্যই পরাক্রমশালী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক (আগে থেকেই) সুবিন্যস্ত করে রাখা হয়েছিলো।

১৩. (এর পরও) যদি এরা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তুমি বলো, আমি তো তোমাদের এক ভয়াবহ আযাব থেকে সতর্ক করলাম মাত্র, ঠিক যেরূপ ভয়াবহ আযাব এসেছিলো আদ ও সামুদের ওপর!

১৪. যখন তাদের কাছে ও তাদের আগের লোকদের কাছে আমার রসুলরা এসে বলেছিলো, তোমরা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো এবাদাত করো না; (জবাবে) তারা বলেছিলো, আমাদের মালিক যদি চাইতেন তাহলে তিনি ফেরেশতাদেরই ( নবী করে) পাঠাতেন, তোমাদের যা কিছু দিয়েই পাঠানো হোক না কেন, আমরা তাই প্রত্যাখ্যান করলাম।

১৫. আ'দ (জাতির ঘটনা ছিলো), তারা (আল্লাহ তায়ালার) যমীনে অন্যায়ভাবে দম্ভভরে ঘুরে বেড়াতো এবং বলতো, আমাদের চাইতে শক্তিশালী আর কে আছে? অথচ ওরা কি চিন্তা করে দেখেনি, যে আল্লাহ তায়ালা তাদের সৃষ্টি করেছেন তিনি শক্তির দিক থেকে তাদের চাইতে অনেক বেশী প্রবল; (আসলে) ওরা আমার আয়াতসমুহকেই অস্বীকার করতো ।

১৬. অতপর আমি কতিপয় অশুভ দিনে তাদের ওপর এক প্রচন্ড তুফান প্রেরণ করলাম, যেন আমি তাদের দুনিয়ার জীবনেই লাঞ্ছনাদায়ক একটি শাস্তির স্বাদ উপভোগ করিয়ে দিতে পারি, আর আখেরাতের আযাব তো আরো বেশী অপমানকর; (সেদিন) তাদের কোনো রকম সাহায্য করা হবে না ।

১৭. আর সামুদ (জাতির অবস্থা ছিলো), আমি তাদেরও সরল পথ দেখিয়ে দিয়েছিলাম, কিন্তু তারা হেদায়াতের ওপর অন্ধত্বকেই বেশী পছন্দ করলো, অতপর তাদের (অন্যায়) কাজকর্মের জন্যে আমি তাদের ওপর অপমানজনক শাস্তির কষাঘাত হানলাম,

১৮. এবং (এ প্রলয়ংকরী) শাস্তির (কষাঘাত) থেকে আমি তাদেরই শুধু উদ্ধার করলাম, যারা ঈমান এনেছে এবং (অপরাধ থেকে) বেঁচে থেকেছে ।

১৯. (সে দিনটির কথা স্মরণ করো,) যে দিন আল্লাহ তায়ালার দুশমনদের জাহান্নামের দিকে (নিয়ে যাওয়ার জন্যে) জড়ো করা হবে, (সেদিন) তারা বিভিন্ন দলে (উপদলে) বিন্যস্ত হবে।

২০. যেতে যেতে তারা যখন তার (বিচারের পাল্লার) কাছে পৌঁছুবে, তখন তাদের কান, চোখ ও চামড়া তাদের (যাবতীয় কাজের ওপর সাক্ষ্য দেবে।

২১. (তখন) তারা তাদের চামড়াগুলোকে বলবে, তোমরা (আজ) আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে কেন? (উত্তরে) তারা বলবে, আল্লাহ তায়ালা যিনি সব কিছুকে কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, তিনি (আজ) আমাদেরও কথা বলার শক্তি দিয়েছেন, তিনিই (যেহেতু) তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলেন, তাই তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।

২২. (আল্লাহ তায়ালা বলবেন,) তোমরা (দুনিয়াতে) কোনো কিছুই (তো এদের কাছ থেকে) গোপন (করার চেষ্টা) করতে না, (এটা ভাবতেও পারোনি) তোমাদের কান, তোমাদের চোখ ও তোমাদের চামড়া (কখনো) তোমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে, বরং তোমরা তো মনে করতে, তোমরা যা কিছু করছিলে তার অনেক কিছু (স্বয়ং) আল্লাহ তায়ালাও (বুঝি) জানেন না।

২৩. তোমাদের ধারণা যা তোমরা তোমাদের মালিক সম্পর্কে পোষণ করতে, (মুলত) তাই তোমাদের (এ) ভরাডুবি ঘটিয়েছে, ফলে তোমরা (মারাত্মক) ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছো।

২৪. (আজ) যদি ওরা ধৈর্য ধারণ করে তাতেও (তাদের কোনো উপকার হবে না), জাহান্নামই হবে তাদের ঠিকানা, আল্লাহ তায়ালার কাছে অনুগ্রহ চাইলেও (কোনো লাভ হবে না, কেননা আজ) তারা কোনো অবস্থায়ই অনুগ্রহ প্রাপ্ত হবে না।

২৫. আমি (দুনিয়ার জীবনে) তাদের ওপর এমন কিছু সংগী (সাথী) বসিয়ে দিয়েছিলাম, যারা তাদের সামনের ও পেছনের কাজগুলো (তাদের সামনে) শোভনীয় (এবং লোভনীয়) করে রেখেছিলো, পরিশেষে জ্বিন ও মানুষদের সে দলের সাথে তাদের ব্যাপারেও আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত সত্যে পরিণত হলো, যারা তাদের আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, অবশ্য এরা সবাই ছিলো নিদারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

২৬. যারা কুফরী (পন্থা) অবলম্বন করেছে তারা (একজন আরেকজনকে বলে, তোমরা কখনো এ কোরআন শোনবে না, (তেলাওয়াতের সময়) তার মাঝে শোরগোল করো, হয়তো (এ কৌশল দ্বারা) তোমরা জয়ী হতে পারবে।

২৭. আমি অবশ্যই কাফেরদের কঠিন আযাবের স্বাদ আস্বাদন করাবো এবং নিশ্চয়ই আমি তাদের সে কাজের প্রতিফল দেবো, যে আচরণ তারা (আমার কেতাবের সাথে) করে এসেছে।

২৮. এ (জাহান্নাম)-ই হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার শত্রুদের (যথার্থ) পাওনা, সেখানে তাদের জন্যে চিরস্থায়ী (আযাবের) ঘর থাকবে; তারা যে আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করতো, এটা হচ্ছে তারই প্রতিফল।

২৯. কাফেররা (সেদিন) বলবে, হে আমাদের মালিক, যেসব জ্বিন ও মানুষ (দুনিয়ায়) আমাদের গোমরাহ করেছিলো, আজ তুমি তাদের (এক নযর) আমাদের দেখিয়ে দাও, আমরা তাদের (উভয়কে) আমাদের পায়ের নীচে রাখবো, যাতে করে তারা (আরো বেশী) লাঞ্ছিত হয়।

৩০. (অপরদিকে) যারা বলে, আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন আমাদের মালিক, অতপর (এ ঈমানের ওপর) তারা অবিচল থাকে, (মৃত্যুর সময় যখন) তাদের কাছে ফেরেশতা নাযিল হবে এবং তাদের বলবে (হে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় বান্দারা), তোমরা ভয় পেয়ো না, চিন্তিত হয়ো না; (উপরন্তু) তোমাদের কাছে যে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছিলো, (আজ) তোমরা তারই সুসংবাদ গ্রহণ করো (এবং আনন্দিত হও)।

৩১. আমরা (ফেরেশতারা) দুনিয়ার জীবনেও তোমাদের বন্ধু (ছিলাম), আর আখেরাতেও (আমরা তোমাদের বন্ধুই থাকবো), সেখানে তোমাদের মন যা কিছুই চাইবে তাই তোমাদের জন্যে মজুদ থাকবে এবং যা কিছুই তোমরা সেখানে তলব করবে তা তোমাদের সামনে (হাযির) থাকবে;

৩২. পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে (এ হচ্ছে তোমাদের সেদিনের) মেহমানদারী!

৩৩. তার চেয়ে উত্তম কথা আর কোন ব্যক্তির হতে পারে যে মানুষদের আল্লাহ তায়ালার দিকে ডাকে এবং সে (নিজেও) নেক কাজ করে এবং বলে, আমি তো মুসলমানদেরই একজন,

৩৪. (হে নবী,) ভালো আর মন্দ কখনোই সমান হতে পারে না; তুমি ভালো (কাজ) দ্বারা মন্দ (কাজ) প্রতিহত করো, তাহলেই (তুমি দেখতে পাবে) তোমার এবং যার সাথে তোমার শত্রুতা ছিলো, তার মাঝে এমন (অবস্থা সৃষ্টি) হয়ে যাবে, যেন সে (তোমার) অন্তরংগ বন্ধু,

৩৫. আর এ (বিষয়)-টি শুধু তাদের (ভাগ্যেই লেখা) থাকে যারা ধৈর্য ধারণ করে এবং এ (সকল) লোক শুধু তারাই হয় যারা সৌভাগ্যের অধিকারী।

৩৬. যদি কখনো শয়তানের কুমন্ত্রণা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে তুমি আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাও; অবশ্যই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

৩৭. (হে মানুষ,) আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনসমুহের মধ্যে রাত দিন, সুর্য ও চন্দ্র (হচ্ছে কয়েকটি নিদর্শন মাত্র); অতএব তোমরা সুর্যকে সাজদা করো না চাঁদকেও নয়, বরং তোমরা সাজদা করো (সেই) আল্লাহ তায়ালাকে, যিনি এর সব কয়টিকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা একান্তভাবে তাঁরই এবাদাত করতে চাও (তাহলে এটাই হবে একমাত্র করণীয়)।

৩৮. অতপর (হে নবী), এরা যদি অহংকার করে (তাহলে তুমি ভেবো না), যারা তোমার মালিকের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তো রাত দিন তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে যাচ্ছে, তারা (বিন্দুমাত্রও এতে) ক্লান্ত হয় না।

৩৯. তাঁর (কুদরতের) আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে, তুমি যমীনকে দেখতে পাচ্ছো শুষ্ক (ও অনুর্বর হয়ে পড়ে আছে, ) অতপর তার ওপর আমি যখন পানি বর্ষণ করি তখন সহসাই তা শস্য শ্যামল হয়ে স্ফীত হয়ে ওঠে, অবশ্যই যে (আল্লাহ তায়ালা) এ (মৃত যমীন)-কে জীবন দান করেন তিনি মৃত (মানুষ)-কেও জীবিত করবেন; নিসন্দেহে তিনি সর্ববিষয়ের ওপর একক শক্তিমান ।

৪০. যারা আমার আয়াতসমুহ বিকৃত করে তারা কিন্তু কেউই আমার (দৃষ্টির) অগোচরে নয়; তুমিই বলো, যে ব্যক্তি জাহান্নামে নিক্ষপ্তি হবে সে ভালো না যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে (আমার সামনে) হাযির হবে সে ভালো? (এরপরও চৈতন্যোদয় না হলে তোমরা যা ইচ্ছা তাই করো, তবে মনে রেখো), তোমরা যাই করো আল্লাহ তায়ালা তা অবলোকন করছেন ।

৪১. যারা (কোরআনের মতো একটি) স্মরণিকা (গ্রন্থ) তাদের কাছে আসার পর তাকে অস্বীকার করে (তারা অচিরেই তাদের পরিণাম টের পাবে), মুলত সেটি হচ্ছে এক সম্মানিত গ্রন্থ,

৪২. এতে বাতিল কিছু (অনুপ্রবেশের আশংকা) নেই তার সামনের দিক থেকেও নয়, তার পেছনের দিক থেকেও নয়; (কেননা) এটা বিজ্ঞ, কুশলী, প্রশংসিত সত্তার কাছ থেকে নাযিল করা হয়েছে।

৪৩. (হে নবী,) তোমার সম্পর্কে (আজ) সেসব কিছুই বলা হচ্ছে যা তোমার আগে (অন্যান্য) নবীদের ব্যাপারেও বলা হয়েছিলো; নিসন্দেহে তোমার মালিক (যেমনি) পরম ক্ষমাশীল, (তেমনি) তিনি কঠোর শাস্তিদাতা (-ও বটে)।

৪৪. আমি যদি এ কোরআন (আরবী ভাষার বদলে) আজমী (অনারব ভাষায়) বানাতাম, তাহলে এরা বলতো, কেন এর আয়াতগুলো (আমাদের ভাষায়) পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হলো না (তারা বলতো, এ কি আজব ব্যাপার); এটা (নাযিল করা হয়েছে) আজমী (ভাষায়), অথচ এর বাহক হচ্ছে আরবী; (হে রসুল,) তুমি বলো, তা (গোটা কোরআন) হচ্ছে (মুলত) ঈমানদারদের জন্যে হেদায়াত (গ্রন্থ) ও (মানুষের যাবতীয় রোগ ব্যাধির) নিরাময়; কিন্তু যারা (এর ওপর) ঈমান আনে না তাদের কানে ( বধিরতার ) ছিপি আঁটা আছে, (তাই) কোরআন তাদের ওপর (যেন) একটি অন্ধকার (পর্দা, এ কারণেই সত্য কথা শোনা সত্ত্বেও তারা এর সাথে এমন আচরণ করে); যেন তাদের অনেক দুর থেকে ডাকা হচ্ছে (তাই কিছুই বুঝতে পাচ্ছে না)।

৪৫. (হে নবী, তোমার আগে) আমি মুসাকেও একটি কেতাব দান করেছিলাম, তাতে (বহু) মতবিরোধ ঘটানো হয়েছিলো; অতপর তোমার মালিকের পক্ষ থেকে (কেয়ামত সংক্রান্ত) ঘোষণা যদি না থাকতো, তাহলে কবেই (আযাব এসে) এদের মাঝে (চুড়ান্ত একটা) ফয়সালা হয়ে যেতো, এরা (আসলে) এ (কোরআন) সম্পর্কে এক বিভ্রান্তিকর সন্দেহে (নিমজ্জিত) আছে।

৪৬. যে কোনো ব্যক্তিই নেক কাজ করবে (মুলত) সে (তা) করবে (একান্ত) তার নিজের (কল্যাণের) জন্যে, আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করবে (তার অশুভ ফল একান্ত) তার ওপরই গিয়ে পড়বে; তোমার মালিক তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে কখনো যালেম নন।

৪৭. কেয়ামত (সংক্রান্ত) জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দিকেই ধাবিত হয়, কোনো একটি ফলও নিজের খোসা ছেড়ে বাইরে বেরোয় না, কোনো একটি নারীও নিজের গর্ভে সন্তান ধারণ করে না না সে সন্তান প্রসব করে, যার পূর্ণ জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার কাছে (মজুদ) থাকে না; যেদিন আল্লাহ তায়ালা ওদের ডেকে বলবেন, কোথায় (আজ) আমার অংশীদাররা, তারা বলবে (হে মালিক), আমরা তোমার কাছে এ নিবেদন করছি, (আজ) আমাদের মাঝে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে কেউই মজুদ নেই,

৪৮. এরা আগে যাদের ডাকতো তারা (আজ) হারিয়ে যাবে, এরা বুঝতে পারবে, তাদের জন্যে আর উদ্ধারের কোনো জায়গাই অবশষ্টি নেই।

৪৯. মানুষ কখনো (বৈষয়িক) কল্যাণ লাভের জন্যে দোয়া (করা) থেকে ক্লান্তি বোধ করে না, অবশ্য যখন কোনো দুঃখ দৈন্য তাকে স্পর্শ করে তখন সে সম্পূর্ণরূপে নিরাশ হয়ে পড়ে ।

৫০. যদি দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করার পর আমি তাকে অনুগ্রহের (স্বাদ) আস্বাদন করাই, তখন আবার সে বলে, এ তো আমার (প্রাপ্য) ছিলো, আমি এটাও মনে করি না, (সত্যি সত্যিই) কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, (তাছাড়া) যদি আমাকে (একদিন) মালিকের কাছে ফেরত পাঠানোই হয়, তাহলে আমার জন্যে তাঁর কাছে শুধু কল্যাণই থাকবে, আমি (সেদিন) কাফেরদের অবশ্যই বলে দেবো, (দুনিয়ার জীবনে) তারা কি কি করতো, অতপর (সে অনুযায়ী) আমি তাদের কঠোর আযাব আস্বাদন করাবো।

৫১. আমি যখন মানুষের ওপর কোনো অনুগ্রহ করি তখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং উল্টো দিকে ফিরে যায়, আবার যখন তাকে কোনো অনিষ্ট এসে স্পর্শ করে তখন সে দীর্ঘ দোয়া নিয়ে ( আমার সামনে) হাযির হয়।

৫২. (হে নবী, মানুষদের) বলো, তোমরা কখনো (একথা) ভেবে দেখেছো কি, যদি এ কোরআন (সত্যিই) আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে এসে থাকে (এবং এ সত্ত্বেও) তোমরা একে প্রত্যাখ্যান করো, তাহলে তার চাইতে বেশী গোমরাহ আর কে হবে যে ব্যক্তি (এর) মারাত্মক বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত আছে ।

৫৩. অচিরেই আমি আমার (কুদরতের) নিদর্শনসমুহ দিগন্ত বলয়ে প্রদর্শন করবো এবং তাদের নিজেদের মধ্যেও (তা আমি দেখিয়ে দেবো), যতোক্ষণ পর্যন্ত তাদের ওপর এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এ (কোরআনই মুলত) সত্য; (হে নবী, তোমার জন্যে) একথা কি যথষ্টে নয়, তোমার মালিক (তোমার) সবকিছু সম্পর্কে অবহিত।

৫৪. জেনে রেখো, এরা কিন্তু এদের মালিকের সাথে সাকারক্ষারের ব্যাপারেই সন্দিহান; আরো জেনে রেখো, (এদের) সবকিছুই আল্লাহ তায়ালা পরিবষ্টেন করে আছেন ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url