আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মু'মিন’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মু'মিন | Surah Mumin | سورة غافر


সূরা আল মু'মিন’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আল মু'মিন, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৮৫, রুকু ৯

সূরা আল মু'মিন


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হা-মীম,

২. এ গ্রন্থ আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকেই নাযিল হয়েছে, (তিনি) পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ,

৩. (তিনি মানুষের) গুনাহ মাফ করেন, তাওবা কবুল করেন, (তিনি) শাস্তি দানে কঠোর, (তিনি) বিপুল প্রভাব- প্রতিপত্তির মালিক; তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, (একদিন) তাঁর দিকেই (সবাইকে) ফিরে যেতে হবে।

৪. (হে নবী,) আল্লাহ তায়ালার (নাযিল করা এ) আয়াতসমুহ নিয়ে শুধু তারাই বিতর্কে লিপ্ত হয় যারা কুফরী করে, অতপর শহরে (বন্দরে) তাদের বিচরণ যেন (কোনোদিনই) তোমাকে প্রতারিত করতে না পারে।

৫. তাদের আগে নুহের জাতি (সে যমানার নবীদের) মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিলো, আবার তাদের পর অন্যান্য দলও (নবীদের অস্বীকার করেছে), প্রত্যেক জাতিই তাদের নবীদের পাকড়াও করার জন্যে তাদের বিরুদ্ধে অভিসন্ধি এটেছিলো এবং সত্যকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্যে তারা অন্যাভাবে যুক্তি তর্কে লিপ্ত হয়েছিলো, (পরিণামে) আমিও তাদের পাকড়াও করেছি। (চেয়ে দেখো), কেমন (ভীতিকর) ছিলো আমার আযাব !

৬. এভাবে কাফেরদের ওপর তোমার মালিকের বাণীই সত্য প্রমাণিত হলো যে, এরা সত্যি সত্যিই জাহান্নামী।

৭. যেসব (ফেরেশতা আল্লাহ তায়ালার) আরশ বহন করে চলেছে, যারা এর চারদিকে (কর্তব্যরত) রয়েছে, তারা নিজেদের মালিকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে চলেছে, তারা তাঁর ওপর ঈমান রাখে, তারা ঈমানদারদের মাগফেরাতের জন্যে দোয়া করে (তারা বলে), হে আমাদের মালিক, তুমি তোমার অনুগ্রহ ও জ্ঞানসহ সবকিছুর ওপর ছেয়ে আছো, সুতরাং সেসব লোককে তুমি ক্ষমা করে দাও যারা তাওবা করে এবং যারা তোমার (দ্বীনের) পথ অনুসরণ করে, তুমি তাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও!

৮. হে আমাদের মালিক, তুমি তাদের সেই স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাও যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাদের দিয়েছো, তাদের পিতামাতা, তাদের স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা নেক কাজ করেছে (তাদেরও জান্নাতে প্রবেশ করাও), নিশ্চয়ই তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়,
৯. তুমি (কেয়ামতের দিন) তাদের দুঃখ-কষ্ট থেকে রক্ষা করো, (মুলত) সেদিন তুমি যাকেই দুঃখ কষ্ট থেকে বাঁচিয়ে দেবে, তাকে তুমি (বড়ো বেশী) দয়া করবে, আর এটাই হচ্ছে (সেদিনের) সবচাইতে বড়ো সাফল্য।

১০. নিসন্দেহে যারা কুফরী করেছে, (তাদের উদ্দেশ্যে) ঘোষণা দিয়ে বলা হবে, (আজ) তোমাদের নিজেদের প্রতি তোমাদের যে রোষ তার চাইতে আল্লাহ তায়ালার রোষ আরো বেশী (বিশেষ করে), যখন তোমাদের ঈমানের দিকে ডাকা হচ্ছিলো আর তোমরা তা অস্বীকার করছিলে ।


১১. তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, তুমি তো দু'বার আমাদের মৃত্যু দিলে, আবার দু'বার জীবনও দিলে, আমরা আমাদের অপরাধ স্বীকারও করেছি, অতএব (এখন আমাদের এখান থেকে) বেরিয়ে যাওয়ার কোনো রাস্তা আছে কি ?

১২. (তাদের বলা হবে,) তোমাদের (এ শাস্তি) তো এ জন্যে, যখন তোমাদের এক আল্লাহর দিকে ডাকা হতো তখন তোমরা তা অস্বীকার করতে, যখন তাঁর সাথে শরীক করা হতো তখন তোমরা তা মেনে নিতে; (আজ) সর্বময় সিদ্ধান্তের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা তিনি সর্বোচ্চ, তিনি মহান।

১৩. (হে মানুষ,) তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমুহ দেখান এবং আসমান থেকে তোমাদের জন্যে রেযেক পাঠান, (আসলে এ থেকে) তারাই শিক্ষা গ্রহণ করে যারা (একান্তভাবে) আল্লাহ তায়ালার দিকে নিবষ্টি হয় ।

১৪. অতএব (হে মুসলমানরা), তোমরা (তোমাদের) জীবন বিধানকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তায়ালার জন্যেই নিবেদিত করো, একমাত্র তাঁকেই ডাকো, যদিও কাফেররা (এটা) পছন্দ করে না ।

১৫. তিনি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী, আরশের মহান অধিপতি, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যার ওপর ইচ্ছা তাঁর আদেশসহ তার ওপর ওহী পাঠান, যাতে করে সে (ওহীপ্রাপ্ত রসূল আল্লাহর সাথে) সাক্ষাত লাভের (এ) দিনটির ব্যাপারে (বান্দাদের) সাবধান করে দিতে পারে,

১৬. সেদিন (যখন) মানুষ (হাশরের ময়দানে) বেরিয়ে পড়বে, (তখন) তাদের কোনো কিছুই আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে গোপন থাকবে না; (বলা হবে) আজ সর্বময় রাজত্ব ও কর্তৃত্ব কার জন্যে? (জবাব আসবে,) প্রবল পরাক্রমশালী এক আল্লাহ তায়ালার জন্যে ।

১৭. আজ প্রত্যেক মানুষকে সে পরিমাণ প্রতিফলই দেয়া হবে যে পরিমাণ সে (দুনিয়ায়) অর্জন করে এসেছে; আজ কারও প্রতি কোনোরকম অবিচার হবে না, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা হিসাব গ্রহণে তৎপর।

১৮. (হে নবী,) তুমি তাদের আসন্ন (কেয়ামতের) দিন সম্পর্কে সতর্ক করে দাও, যখন কষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে, (চারদিক থেকে) দম বন্ধ হবার উপক্রম হবে; সেদিন যালেমদের (আসলেই) কোনো বন্ধু থাকবে না, থাকবে না এমন কোনো সুপারিশকারী, যা (তখন) গ্রাহ্য করা হবে;

১৯. তিনি চোখের খেয়ানত সম্পর্কে (যেমন) জানেন, (তেমনি জানেন) যা কিছু (মানুষের) মন গোপন করে রাখে (সে সব কিছুও)।

২০. আল্লাহ তায়ালা (তাঁর বান্দাদের মাঝে) ন্যায়বিচার করেন; (কিন্তু) ওরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে যাদের ডাকে তারা (অন্যের ন্যায়বিচার তো দুরের কথা, নিজেদের) কোনো বিচার ফয়সালাও করতে সক্ষম নয়; (মুলত) আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টাঅ


২১. এ লোকগুলো কি (আমার) যমীনে ঘোরাফেরা করে না? (ঘুরলে) অতপর তারা দেখতে পেতো এদের আগের লোকগুলোর কি পরিণাম হয়েছিলো; অথচ শক্তিমত্তার দিক থেকে (হোক) এবং যেসব কীর্তি তারা (এ) দুনিয়ায় রেখে গেছে (সে দৃষ্টিতে হোক), যমীনে তারা ছিলো (এদের চাইতে) অনেক বেশী প্রবল, (কিন্তু) আল্লাহ তায়ালা তাদের অপরাধের জন্যে তাদের পাকড়াও করলেন; আল্লাহ তায়ালার গযব থেকে তাদের রক্ষা করার মতো কেউই ছিলো না।

২২. এটা এ কারণে, তাদের কাছে (সুস্পষ্ট) নিদর্শনসহ আল্লাহ তায়ালার রসূলদের আগমন সত্ত্বেও ওরা তাদের অস্বীকার করেছিলো, অতপর আল্লাহ তায়ালা তাদের পাকড়াও করলেন, তিনি খুব শক্তিশালী, শাস্তিদানেও তিনি কঠোর।

২৩. আমি আমার আয়াত ও সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণসহ মুসাকে পাঠিয়েছিলাম,

২৪. (তাকে পাঠিয়েছিলাম) ফেরাউন, হামান ও কারূনের কাছে, অতপর ওরা বললো, এ তো হচ্ছে এক চরম মিথ্যাবাদী যাদুকর।

২৫. অতপর যখন সে আমার কাছ থেকে সত্য (দ্বীন) নিয়ে তাদের কাছে এলো, তখন তারা বললো, যারা তার সাথে (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান এনেছে তাদের পুত্র সন্তানদের তোমরা হত্যা করো এবং (শুধু) তাদের কন্যাদেরই জীবিত রাখো; (কিন্তু) কাফেরদের ষড়যন্ত্র (তো) ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয় ।

২৬. (এক পর্যায়ে) ফেরাউন (তার পারিষদদের) বললো, তোমরা আমাকে ছেড়ে দাও আমি মুসাকে হত্যা করে ফেলি, ডাকুক সে তার রবকে, আমি আশংকা করছি সে তোমাদের গোটা জীবন ব্যবস্থাই পাল্টে দেবে এবং (এ) যমীনেও সে (নানারকমের) বিপর্যয় ঘটাবে।

২৭. মুসা বললো, প্রতিটি উদ্ধত ব্যক্তি, যে হিসাব নিকাশের দিনকে বিশ্বাস করে না, আমি তার (অনিষ্ট) থেকে আমার মালিক ও তোমাদের মালিকের কাছে (আগেই) পানাহ চেয়ে নিয়েছি।

২৮. একজন মোমেন ব্যক্তি যে ছিলো (স্বয়ং) ফেরাউনের গোত্রেরই লোক (এবং) যে ব্যক্তি নিজের ঈমান (এতদিন পর্যন্ত) গোপন করে আসছিলো, (সব শুনে) বললো (আচ্ছা), তোমরা কি একজন লোককে (শুধু এ জন্যেই) হত্যা করতে চাও, যে ব্যক্তি বলে আমার মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, (অথচ) সে তোমাদের মালিকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণসহই তোমাদের কাছে এসেছে; যদি সে মিথ্যাবাদী হয় তাহলে তার (এ) মিথ্যা তো তার ওপরই (বর্তাবে), আর যদি সে সত্যবাদী হয় তাহলে যে (আযাবের) ব্যাপারে সে তোমাদের কাছে ওয়াদা করছে তার কিছু না কিছু তো এসে তোমাদের পাকড়াও করবে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন লোককে সঠিক পথ দেখান না যে সীমালংঘনকারী, মিথ্যাবাদী।

২৯. (সে বললো,) হে আমার জাতির লোকেরা, এ যমীনে আজ তোমরা হচ্ছো ক্ষমতাবান, কিন্তু (আগামীকাল ) আমাদের ওপর (আযাব) এসে গেলে কে আমাদের আল্লাহর (পাঠানো) দুর্যোগ থেকে সাহায্য করবে; ফেরাউন বললো, আমি তো (এ ব্যাপারে) তোমাদের সে রায়ই দেবো, যেটা আমি (ঠিক হিসেবে) দেখবো, আমি তো তোমাদের সত্য পথ ছাড়া অন্য কিছুই দেখাবো না।

৩০. (যে ব্যক্তি গোপনে) ঈমান এনেছিলো সে বললো, হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্যে পুর্ববর্তী সমপ্রদায় সমুহের মতোই (আযাবের) দিনের আশংকা করছি,

৩১. (তোমাদের অবস্থা এমন যেন না হয়) যেমনটি (হয়েছিলো) নুহের জাতি, আদ, সামুদ ও তাদের পরে যারা এসেছিলো (তাদের সবার); আল্লাহ তায়ালা কখনো তাঁর বান্দাদের ওপর যুলুম করতে চান না।

৩২. হে আমার জাতি, আমি তোমাদের জন্যে প্রচন্ড হাঁক ডাকের (কেয়ামত) দিবসের (আযাবের) আশংকা করি,

৩৩. সেদিন তোমরা পেছন ফিরে পালাবে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার (পাকড়াও) থেকে তোমাদের রক্ষা করার কেউই থাকবে না, (আসলে) আল্লাহ তায়ালা যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্যে কোনো পথ প্রদর্শনকারীই থাকে না ।

৩৪. এর আগে তোমাদের কাছে (নবী) ইউসুফ সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছিলো, কিন্তু সে যা কিছু বিধান নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে তোমরা তাতে (শুধু) সন্দেহই পোষণ করেছো; এমনকি যখন সে মরে গেলো তখন তোমরা বলতে শুরু করলে, আল্লাহ তায়ালা কখনো আর কোনো রসুল পাঠাবেন না; (মুলত) আল্লাহ তায়ালা এভাবেই (নানা বিভ্রান্তিতে ফেলে) সীমালংঘনকারী ও সংশয়বাদীদের গোমরাহ করে থাকেন,

৩৫. যারা তাদের নিজেদের কাছে আসা দলীল প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমুহ নিয়ে বিতন্ডায় লিপ্ত হয়; তারা আল্লাহ তায়ালা ও ঈমানদারদের কাছে খুবই অসন্তোষের কারণ বলে বিবেচিত; আল্লাহ তায়ালা এভাবেই প্রতিটি অহংকারী ও স্বৈরাচারী ব্যক্তির হৃদয়ের ওপর মোহর মেরে দেন ।

৩৬. ফেরাউন (একদিন উযীর হামানকে) বললো, হে হামান, আমার জন্যে তুমি একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করো, যাতে করে আমি (আকাশে চড়ার) কিছু একটা অবলম্বন পেতে পারি,

৩৭. (আকাশে চড়ার অবলম্বন এমন হবে) যেন আমি মুসার মাবুদকে (তা দিয়ে উঁকি মেরে) দেখে আসতে পারি, অবশ্য আমি তো তাকে মিথ্যাবাদীই মনে করি; এভাবেই ফেরাউনের কাছে তার এ নিকৃষ্ট কাজটি শোভনীয় (প্রতীয়মান) করা হলো এবং তাকে (সত্য পথ থেকে) নিবৃত্ত করা হলো; (মুলত) ফেরাউনের ষড়যন্ত্র (তার নিজের) ধ্বংস ছাড়া আর কিছু নয়অ

৩৮. যে ব্যক্তিটি ঈমান এনেছিলো সে বললো, হে আমার জাতি, তোমরা আমার কথা শোনো, আমি তোমাদের (একটা) সঠিক পথের সন্ধান দিচ্ছি,

৩৯. হে আমার সম্প্রদায়, (তোমাদের) এ দুনিয়ার জীবন (কয়েকটি দিনের) উপভোগের বস্তু মাত্র, স্থায়ী নিবাস তো হচ্ছে আখেরাত!

৪০. যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করবে তাকে সে পরিমাণের চাইতে বেশী প্রতিফল দেয়া হবে না, পুরুষ হোক কিংবা নারী, যে কেউই নেক কাজ করবে সে-ই মোমেন (হিসেবে গণ্য হবে হাঁ,), এমন ধরনের লোকেরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেখানে তাদের অপরিমিত রেযেক দেয়া হবে।

৪১. হে আমার জাতি, এ কি আশ্চর্য, আমি তোমাদের (জাহান্নাম থেকে) মুক্তির দিকে ডাকছি, আর তোমরা আমাকে ডাকছো জাহান্নামের দিকে!

৪২. তোমরা আমাকে একথার দিকে দাওয়াত দিচ্ছো যেন আমি আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করি এবং তাঁর (সাথে) অন্য কাউকে শরীক করি, যার সমর্থনে আমার কাছে কোনো জ্ঞান নেই, (পক্ষান্তরে) আমি তোমাদের আহ্বান করছি সেই আল্লাহ তায়ালার দিকে, যিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল |

৪৩. যে বিষয়টির প্রতি তোমরা আমাকে ডাকছো, দুনিয়াতে তার দিকে ডাকা ( কোনো মানুষের জন্যেই) শোভনীয় নয়, (তেমনি) পরকালে তো (মোটেই) নয়, কেননা আমাদের সবাইকে তো আল্লাহ তায়ালার দিকেই ফিরে যেতে হবে, (সত্যি কথা হচ্ছে), যারা সীমালংঘন করে তারা অবশ্যই জাহান্নামের অধিবাসী।

৪৪. (আজ) আমি তোমাদের যা কিছু বলছি, অচিরেই তোমরা তা স্মরণ করবে, আর আমি তো আমার কাজকর্ম (বিষয় আসয়) আল্লাহ তায়ালার কাছেই সোপর্দ করছি, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি সবিশেষ নযর রাখেন।

৪৫. অতপর আল্লাহ তায়ালা তাকে ওদের যাবতীয় ষড়যন্ত্রের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করলেন (অপর দিকে একটা) কঠিন শাস্তি (এসে) ফেরাউন সম্প্রদায়কে গ্রাস করে নিলো,

৪৬. (জাহান্নামের) আগুন, যার সামনে তাদের সকাল সন্ধ্যায় হাযির করা হবে, আর যেদিন কেয়ামত ঘটবে (সেদিন ফেরেশতাদের বলা হবে), ফেরাউনের দলবলকে কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করো।

৪৭. যখন এ লোকেরা জাহান্নামে বসে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হবে, অতপর (যারা) দুর্বল (ছিলো) তারা এমন সব লোকদের বলবে, যারা ছিলো অহংকারী আমরা তো (দুনিয়ায়) তোমাদের অনুসারী ছিলাম, (এখন জাহান্নামের) আগুনের কিছু অংশ কি তোমরা আমাদের কাছ থেকে নিবারণ করতে পারবে?

৪৮. অহংকারীরা (এর জবাবে) বলবে (কিভাবে তা সম্ভব), আমরা সবাই তো তার ভেতরেই পড়ে আছি, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মাঝে (চূড়ান্ত) ফয়সালা করে দিয়েছেন।

৪৯. (তারপর) যারা জাহান্নামে পড়ে থাকবে তারা (এখানকার) প্রহরীদের (উদ্দেশ করে) বলবে, তোমরা (অন্তত আমাদের জন্যে) তোমাদের মালিকের কাছে দোয়া করো, তিনি যেন (কোনো না কোনো একটি দিন আমাদের ওপর থেকে আযাব কম করে দেন ।

৫০. তারা বলবে, এমনকি হয়নি যে, তোমাদের কাছে তোমাদের নবীরা সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে এসেছে, তারা বলবে হ্যাঁ, (এসেছিলো, কিন্তু আমরা তাদের কথা শুনিনি, জাহান্নামের যারা প্রহরী) তারা বলবে, (তাহলে তোমাদের) দোয়া তোমরা নিজেরাই করো, (আর সত্য কথা হচ্ছে), কাফেরদের দোয়া ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়!

৫১. নিশ্চয়ই আমি আমার নবীদের ও (তাদের ওপর) যারা ঈমান এনেছে তাদের এ বৈষয়িক দুনিয়ায় (যেমন ) সাহায্য করি, (তেমনি সেদিনও সাহায্য করবো) যেদিন (তাদের পক্ষে কথা বলার জন্যে) সাক্ষীরা দাঁড়িয়ে যাবে,

৫২. সেদিন যালেমদের ওযর আপত্তি কোনোই উপকারে আসবে না, তাদের জন্যে (শুধু থাকবে) অভিশাপ, তাদের জন্যে আরো থাকবে নিকৃষ্টতম আবাস।

৫৩. আমি মুসাকে অবশ্যই পথনির্দেশিকা দান করেছিলাম এবং বনী ইসরাঈলদেরও (আমার) কেতাবের উত্তরাধিকারী বানিয়েছিলাম,

৫৪. (তা ছিলো) জ্ঞানবান মানুষদের জন্যে হেদায়াত ও (সুস্পষ্ট) উপদেশ

৫৫. অতপর তুমি ধৈর্য ধারণ করো, আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি অবশ্যই সত্য, তুমি (বরং) তোমার গুনাহখাতার জন্যে আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সকাল সন্ধ্যায় তোমার মালিকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো।

৫৬. নিজেদের কাছে কোনো দলীল প্রমাণ না আসা সত্ত্বেও যারা আল্লাহ তায়ালার নাযিল করা আয়াতসমুহ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তাদের অন্তরে কেবল অহংকারই (ছেয়ে) থাকে, তারা কখনো সে (সাফল্যের) জায়গায় পৌঁছুবার (যোগ্য) নয়, অতএব (হে নবী), তুমি (এদের অনিষ্ট থেকে) আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চাও; অবশ্যই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।

৫৭. নিসন্দেহে আসমান ও যমীন সৃষ্টি করা মানুষকে (দ্বিতীয় বার) সৃষ্টি করা অপেক্ষা বেশী কঠিন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই জানে না।

৫৮. অন্ধ ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তি (কখনো) সমান হয় না, (ঠিক তেমনি) যারা ঈমান আনে ও নেক আমল করে, তারা এবং দুষ্কৃতিপরায়ণ ব্যক্তি (কখনো) সমান নয়; (আসলে) তোমাদের কমসংখ্যক লোকই (আমার হেদায়াত থেকে) উপদেশ গ্রহণ করে ।

৫৯. কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এতে বিন্দুমাত্রও সন্দেহ নেই, কিন্তু অধিকাংশ লোকই তা বিশ্বাস করে না ।

৬০. তোমাদের মালিক বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো; যারা অহংকারের কারণে আমার এবাদাত থেকে না-ফরমানী করে, অচিরেই তারা অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

৬১. আল্লাহ তায়ালা যিনি তোমাদের জন্যে রাত বানিয়েছেন যেন তোমরা তাতে বিশ্রাম নিতে পারো এবং দিনকে পর্যবেক্ষণকারী আলোকোজ্জ্বল করেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রতি সবিশেষ অনুগ্রহশীল, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই কৃতজ্ঞতা আদায় করে না।

৬২. এ হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, তিনি তোমাদের মালিক, প্রত্যেকটি জিনিসের একক স্রষ্টা। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেই (বলো), তোমরা (কোথায়) কোথায় ঠোকর খাবে!

৬৩. যারা আল্লাহ তায়ালার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তাদেরও এভাবে (দ্বারে দ্বারে) ঠোকর খাওয়ানো হয়েছিলো!

৬৪. আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের জন্যে ভূমিকে বাসোপযোগী (স্থান) বানিয়ে দিয়েছেন, আসমানকে বানিয়েছেন ছাদ, তিনি তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন, সুতরাং যে আকৃতি তিনি গঠন করেছেন তা কতো সুন্দর এবং ভালো ভালো জিনিস থেকে তোমাদের রেযেক দান করেছেন; সে আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন তোমাদের মালিক, কতো মহান বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালা !

৬৫. তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, অতএব একান্ত নিষ্ঠাবান হয়ে তোমরা তাঁর এবাদাত করো; সমস্ত তারীফ সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্যে!

৬৬. (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, আমাকে নিষেধ করা হয়েছে যেন আমি তাদের এবাদাত না করি, যাদের তোমরা আল্লাহ তায়ালার বদলে ডাকো, (তা ছাড়া) যখন আমার কাছে আমার মালিকের কাছ থেকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসমুহ এসে গেছে, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি আল্লাহ তায়ালার অনুগত বান্দা হয়ে যাই ।

৬৭. তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের মাটি থেকে পয়দা করেছেন, অতপর শুক্রবিন্দু থেকে তারপর জমাট রক্ত থেকে (বানিয়ে) তোমাদের শিশু হিসেবে বের করে আনেন, তারপর তোমরা েেযৗবনপ্রাপ্ত হও, (এক সময় আবার) উপনীত হও বার্ধক্যে, তোমাদের কাউকে আগেই মৃত্যু দেয়া হবে, (এসব প্রক্রিয়া এ জন্যেই রাখা হয়েছে) যেন তোমরা (সবাই) নির্দষ্টি সময়ে পৌঁছুতে পারো এবং আশা করা যায়, (এর ফলে) তোমরা (সঠিক ঘটনা) বুঝতে পারবে।

৬৮. তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের জীবন দান করেন, তিনি তোমাদের মৃত্যুও ঘটান, তিনি যখন কোনো কিছু করা সিদ্ধান্ত করেন তখন শুধু এটুকুই বলেন 'হও', অতপর ‘তা হয়ে যায়'।

৬৯. (হে নবী,) তুমি কি ওদের (অবস্থার) দিকে তাকিয়ে দেখোনি, যারা আল্লাহ তায়ালার (নাযিল করা) আয়াত সম্পর্কে নানা বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছে; (তুমি কি বলতে পারো আসলে) ওরা (সত্যকে ফেলে) কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে?

৭০. (ওরা) সেসব লোক যারা (এ) কেতাব অস্বীকার করে, (অস্বীকার করে) সেসব কেতাবও, যা আমি (ইতিপুর্বে) নবীদের কাছে পাঠিয়েছিলাম। অতএব অতিশীঘ্রই তারা (নিজেদের পরিণাম) জানতে পারবে;

৭১. যেদিন ওদের গলদেশে (আযাবের) বেড়ি ও শেকল (পরিবেষ্টিত) থাকবে, (সেদিন) তাদের টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে,

৭২. ফুটন্ত পানিতে, অতপর তাদের আগুনেও দগ্ধীভূত করা হবে,

৭৩. তাদের বলা হবে, কোথায় (আজ) তারা যাদের তোমরা (আল্লাহ তায়ালার সাথে) শরীক করতে?

৭৪. আল্লাহ তায়ালার বদলে, (যাদের তোমরা ডাকতে তারাই বা আজ কোথায়?) তারা বলবে, তারা তো (আজ সবাই) আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে, (আসলে) আমরা তো আগে (কখনো) এমন কিছুকে ডাকিনি; আল্লাহ তায়ালা এভাবেই কাফেরদের বিভ্রান্ত করেন।

৭৫. (আজ) এ কারণেই তোমাদের (এ পরিণাম) হয়েছে যে, তোমরা দুনিয়াতে অন্যায়ভাবে আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকতে এবং তোমরা (ক্ষমাহীন) অহংকার করতে,

৭৬. সুতরাং (এখন) তোমরা জাহান্নামের দরজাসমুহে (ভেতরে) প্রবেশ করো, সেখানে তোমরা চিরকাল থাকবে, কতো নিকৃষ্ট অহংকারীদের এ আবাসস্থল!

৭৭. (হে নবী,) তুমি ধৈর্য ধারণ করো, তোমার মালিকের ওয়াদা অবশ্যই সত্য, আমি ওদের কাছে যে (শাস্তির) ওয়াদা করেছি (তার) কিছু অংশ যদি তোমাকে দেখিয়ে দেই অথবা (তার আগেই) যদি আমি তোমাকে মৃত্যু দেই, (তাতে দুশ্চিন্তার কারণ নেই,) তাদের তো অতপর আমার কাছে ফিরে আসতেই হবে।

৭৮. (হে মোহাম্মদ,) আমি তোমার আগে (অনেক) নবী প্রেরণ করেছি, তাদের কারো কারো ঘটনা আমি তোমাকে শুনিয়েছি, (আবার এমনও আছে) তাদের কথা তোমার কাছে আমি আদৌ বর্ণনাই করিনি; (আসলে) আল্লাহ তায়ালার অনুমতি ছাড়া কোনো নিদর্শন উপস্থিত করা কোনো রসুলের কাজ নয়, আর যখন আল্লাহ তায়ালার ফয়সালা এসে যাবে তখন তো সব কিছুর যথাযথ মীমাংসা হয়েই যাবে, আর (সে ফয়সালায় ) ক্ষতিগ্রস্ত হবে একমাত্র মিথ্যাশ্রয়ীরাই।

৭৯. আল্লাহ তায়ালাই সেই (মহান) সত্তা যিনি তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু পয়দা করেছেন, যেন তোমরা তার (কতেক প্রকারের) ওপর আরোহণ করতে পারো, আর তার (মধ্যে কতেক প্রকারের) তোমরা গোশত খেতে পারো,

৮০. তোমাদের জন্যে তাতে আরো বহুবিধ কল্যাণ রয়েছে, তোমরা তার ওপর আরোহণ করো, তোমাদের নিজেদের মনের (ইচ্ছা) ও প্রয়োজনের স্থানে (তাদের নিয়ে) উপনীত হতে পারো, (তোমরা) তার ওপর (যেমনি আরোহন করো তেমনি) নৌকার ওপরও তোমরা আরোহণ করো;

৮১. আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (কুদরতের আরো) নিদর্শন দেখাচ্ছেন, তুমি আল্লাহ তায়ালার কোন কোন নিদর্শন অস্বীকার করবে (বলো)!

৮২. এরা কি যমীনে চলাফেরা করেনি, (করলে) তারা অতপর দেখতে পেতো তাদের পুর্ববর্তী লোকদের পরিণাম কি হয়েছিলো; তারা সংখ্যায় এদের চাইতে ছিলো অনেক বেশী, শক্তি ক্ষমতা এবং যমীনে রেখে যাওয়া কীর্তিতেও তারা (ছিলো) অনেক প্রবল, কিন্তু তারা যা কিছু কাজকর্ম করেছে তা তাদের কোনোই কাজে আসেনি।

৮৩. যখন তাদের নবীরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণপত্র নিয়ে হাযির হলো, তখন তাদের কাছে জ্ঞানের যা কিছু ছিলো তা নিয়ে তারা গর্ব করলো এবং (দেখতে দেখতে) সে আযাব তাদের এসে ঘিরে ফেললো, যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতো।

৮৪. অতপর তারা যখন (সত্যি সত্যিই) আমার আযাব আসতে দেখলো তখন বলে উঠলো, হাঁ, আমরা এক আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনলাম, যাদের আমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে শরীক করতাম তাদের আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।

৮৫, কিন্তু তারা যখন আমার আযাব দেখলো, তখন তাদের ঈমান তাদের কোনো উপকারেই এলো না; আল্লাহ তায়ালার এ নীতি (হামেশাই) তাঁর বান্দাদের মাঝে (কার্যকর) হয়ে আসছে, আর এখানে কাফেররা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url