আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আঝ ঝুমার’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আঝ ঝুমার | Surah Az Zumar | سورة الزمر
সূরা আঝ ঝুমার’এর বাংলা অনুবাদ
সূরা আঝ ঝুমার, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৭৫, রুকু ৮
সূরা আঝ ঝুমার
রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে
১. এ (মহা-) গ্রন্থ (আল কোরআন) পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকেই (এর) অবতরণ।
২. আমি এ (কেতাব) তোমার কাছে যথার্থভাবেই নাযিল করেছি, অতএব নিষ্ঠাবান হয়ে তুমি আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো;
৩. জেনে রেখো, একনিষ্ঠ এবাদাত আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (নিবেদিত হওয়া উচিত); যারা আল্লাহ তায়ালার বদলে অন্যদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, আমরা তো এদের এবাদাত এ ছাড়া অন্য কোনো কারণে করি না যে, এরা আমাদের আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী করে দেয়; কিন্তু তারা যে (সব) বিষয় নিয়ে মতভেদ করছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা (কেয়ামতের দিন) সে বিষয়ের ফয়সালা করে দেবেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা এমন লোককে হেদায়াত করেন না যে মিথ্যাবাদী ও অকৃতজ্ঞ।
৪. আল্লাহ তায়ালা যদি সন্তান গ্রহণ করতেই চাইতেন, তাহলে তিনি তাঁর সৃষ্টির মাঝ থেকে যাকে ইচ্ছা তাকেই বাছাই করতে পারতেন, তাঁর সত্তা অনেক পবিত্র; তিনিই আল্লাহ তায়ালা, তিনি একক ও মহা পরাক্রমশালী।
৫. তিনি আসমান ও যমীন সুপরিকল্পিতভাবেই সৃষ্টি করেছেন, তিনিই রাতকে দিনের ওপর লেপ্টে দেন আবার দিনকে রাতের ওপর লেপ্টে দেন, তিনিই সুর্য ও চন্দ্রকে (একটি নিয়মের) অধীন করে রেখেছেন; এগুলো সবই একটি সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করতে থাকবে; জেনে রেখো, তিনি পরাক্রমশালী ও পরম ক্ষমাশীল।
৬. তিনি তোমাদের সবাইকে (আদমের) একই সত্তা থেকে পয়দা করেছেন, অতঃপর তিনি সেই (সত্তা) থেকে তার যুগল বানিয়েছেন এবং তিনি তোমাদের জন্যে আট প্রকার পশু (-এর বিধান) অবতীর্ণ করেছেন; তিনিই তোমাদেরকে তোমাদের মায়েদের পেটে পর্যায়ক্রমে পয়দা করেছেন; তিনটি অন্ধকারে একের পর এক (অবয়ব দিয়ে গেছেন); এ হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা, তিনিই তোমাদের মালিক, তাঁর জন্যেই সার্বভৌমত্ব, তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তারপরও (মুল বিষয়) থেকে তোমাদের কোথায় কোথায় ঠোকর খাওয়ানো হচ্ছে?
৭. (হে মানুষ,) তোমরা যদি আল্লাহ তায়ালার কুফরী করো তাহলে (জেনে রেখো), আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কারোই মুখাপেক্ষী নন | আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের বান্দার এ না-শোকরী (আচরণ) কখনো পছন্দ করেন না, তোমরা যদি তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করো তাহলে তিনি তোমাদের ওপর সন্তুষ্ট হবেন; (কেয়ামতে) কেউই কারো (গুনাহের) ভার ওঠাবে না; অতঃপর তোমাদের তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে এবং সেদিন তিনি তোমাদের (বিস্তারিত) বলে দেবেন তোমরা কি করতে; তিনি নিশ্চয়ই জানেন যা কিছু অন্তরের ভেতরে লুকিয়ে থাকে ।
৮. (নিয়ম হচ্ছে) মানুষকে যখন কোনো দুঃখ কষ্ট স্পর্শ করে তখন সে একনিষ্ঠভাবে তার মালিকের দিকে ধাবিত হয়, পরে যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর কাছ থেকে নেয়ামত দিয়ে তার ওপর অনুগ্রহ করেন, তখন সে যে জন্যে আগে আল্লাহ তায়ালাকে ডেকেছিলো তা ভুলে যায়, সে আল্লাহ তায়ালার সমকক্ষ বানায়, যাতে করে সে (অন্যদের) আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দিতে পারে; (হে নবী,) তুমি এমন লোকদের বলে দাও, নিজের কুফরীর আরাম আয়েশ (হাতেগোনা) কয়টি দিনের জন্যে ভোগ করে নাও, (পরিণামে তুমি অবশ্যই জাহান্নামী (হবে)।
৯. যে ব্যক্তি রাতের বেলায় বিনয়ের সাথে সাজদাবনত হয় কিংবা দাঁড়িয়ে আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করে এবং পরকালের (আযাবের) ভয় করে, (সর্বাবস্থায়) তার মালিকের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে; (হে নবী, এদের) বলো, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) জানে আর যারা (তাঁকে) জানে না, তারা কি এক সমান? (আসলে একমাত্র) জ্ঞানবান ব্যক্তিরাই ( এসব তারতম্য থেকে) উপদেশ গ্রহণ করতে পারে ।
১০. (হে নবী, এদের) বলে দাও, হে আমার বান্দারা, যারা ঈমান এনেছো, তোমরা তোমাদের মালিককে ভয় করো, যারা এ দুনিয়ায় কোনো কল্যাণকর কাজ করবে তাদের জন্যে (পরকালেও) মহাকল্যাণ (থাকবে), আল্লাহ তায়ালার যমীন অনেক প্রশস্ত; (উপরন্তু) ধৈর্যশীলদের পরকালে অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে ।
১১. (হে নবী) তুমি বলো, আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে একান্ত নিষ্ঠার সাথে আমি যেন আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করি,
১২. এবং আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে, আমি যেন আল্লাহ তায়ালার সামনে আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে অগ্রণী হই।
১৩. তুমি বলো, আমি যদি আমার মালিকের নাফরমানী করি তাহলে আমি আমার ওপর একটি মহা দিনের শাস্তির ভয় করি।
১৪. তুমি বলো, আমি একান্ত নিষ্ঠাবান হয়েই আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করি,
১৫. তোমরা তাকে বাদ দিয়ে যারই চাও গোলামী করো; (হে নবী) তুমি বলো, ভারী ক্ষতিগ্রস্ত হবে তারা, যারা (অন্যের গোলামী করার কারণে) কেয়ামতের দিন নিজেদের এবং নিজেদের পরিবার পরিজনদের ভীষণ ক্ষতি করবে; তোমরা জেনে রেখো, এ (আখেরাতের) ক্ষতিই হচ্ছে সুস্পষ্ট ক্ষতি।
১৬. তাদের জন্যে তাদের ওপর থেকে (ছায়াদানকারী) আগুনের মেঘমালা থাকবে, তাদের নীচের দিক থেকেও থাকবে আগুনেরই বিছানা; এ হচ্ছে সে (বিভৎস ) আযাব, যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের ভয় দেখাচ্ছেন; (অতএব) হে আমার বান্দারা, তোমরা আমাকে ভয় করো ।
১৭. যারা শয়তানী শক্তির গোলামী করা থেকে বেঁচে থেকেছে এবং (একনিষ্ঠভাবে) আল্লাহ তায়ালার দিকেই ফিরে এসেছে, তাদের জন্যে রয়েছে মহাসুসংবাদ, অতএব (হে নবী), তুমি আমার (এমন সব বান্দাদের সুসংবাদ দাও,
১৮. যারা মনোযোগ সহকারে (আমার) কথা শোনে এবং ভালো কথাসমুহের অনুসরণ করে; এরাই হচ্ছে সেসব (সৌভাগ্যবান) লোক যাদের আল্লাহ তায়ালা সৎপথে পরিচালিত করেন, আর (সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে বোধশক্তি সম্পন্ন মানুষ ।
১৯. (হে নবী,) যে ব্যক্তির ওপর (আল্লাহ তায়ালার) আযাবের হুকুম অবধারিত হয়ে গেছে (তাকে কে বাঁচাবে); তুমি কি (তাকে) বাঁচাতে পারবে যে জাহান্নামে চলে গেছে),
২০. তবে যারা তাদের মালিককে ভয় করে তাদের জন্যে (বেহেশতে) প্রাসাদের ওপর প্রাসাদ বানানো থাকবে, যার পাদদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত থাকবে; (এটা হচ্ছে) আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা; আর আল্লাহ তায়ালা কখনো তাঁর ওয়াদা বরখেলাপ করেন না।
২১. (হে মানুষ,) তুমি কি কখনো এটা পর্যবেক্ষণ করোনি যে, আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তিনিই তা যমীনের প্রস্রবণগুলোতে প্রবেশ করান, পরে তিনিই (আবার) তা দিয়ে ( যমীন থেকে) রং বেরংয়ের ফসল বের করে আনেন, (কিছুদিন) পরে তা (আবার) শুকিয়েও যায়, ফলে তোমরা তাকে পীতবর্ণের (ফসল হিসেবে) দেখতে পাও, অতঃপর তিনিই তাকে আবার খড় কুটায় পরিণত করেন; অবশ্যই এতে (এ নিয়মের মধ্যে) জ্ঞানবানদের জন্যে (বড়ো রকমের) উপদেশ রয়েছে।
২২. অতঃপর (তুমি বলো, হে নবী,) যার অন্তরকে আল্লাহ তায়ালা ইসলামের জন্যে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, সে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে (পাওয়া) একটি (হেদায়াতের) নুরের ওপর রয়েছে; দুর্ভোগ হচ্ছে সেসব লোকের জন্যে যাদের অন্তর আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে কঠোর হয়ে গেছে; (মুলত) এরাই সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে।
২৩. আল্লাহ তায়ালা সর্বোৎকৃষ্ট বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন (উৎকৃষ্ট) কেতাব যার প্রতিটি বাণী পরস্পরের সাথে সামঞ্জস্যশীল, অভিন্ন (যেখানে আল্লাহর ওয়াদাগুলো বার বার পেশ করা হয়েছে), যারা তাদের মালিককে ভয় করে, এ (কেতাব শোনার) ফলে তাদের চামড়া (ও শরীর) কেঁপে ওঠে, অতঃপর তাদের দেহ ও মন বিগলিত হয়ে আল্লাহ তায়ালার স্মরণে ঝুঁকে পড়ে; এ (কেতাব) হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার হেদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে চান তাকে সঠিক পথ দেখান; আল্লাহ তায়ালা যাকে গোমরাহ করেন তার আসলেই কোনো পথপ্রদর্শক নেই।
২৪. যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন তার মুখের দ্বারা কঠিন শাস্তি ঠেকাতে চাইবে, (সে কি তার মতো হবে যাকে সে শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখা হয়েছে, সেদিন) যালেমদের বলা হবে, তোমরা (দুনিয়ায়) যা কামাই করেছিলে আজ তারই মজা ভোগ করো!
২৫. তাদের আগের লোকেরাও (নবীদের ওপর) মিথ্যা আরোপ করেছে, আর এমন দিক থেকে (আল্লাহ তায়ালার) আযাব তাদের ওপর এসে তাদের গ্রাস করলো যে, তারা টেরই পায়নি।
২৬. অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদের দুনিয়ার জীবনে অপমানিত করলেন, (তাদের জন্যে) আখেরাতের আযাব হবে (আরো) গুরুতর | (কতো ভালো হতো) যদি তারা (কথাটা) জানতো!
২৭. আমি এ কোরআনে মানুষদের (বোঝানোর জন্যে (ছোটো বড়ো) সব ধরনের উদাহরণই পেশ করেছি, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে,
২৮. এ কোরআন (আমি বিশুদ্ধ) আরবী ভাষায় (নাযিল করেছি), এতে কোনো জটিলতা নেই, (এর উদ্দেশ্য) যেন তারা (আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী থেকে) বাঁচতে পারে।
২৯. আল্লাহ তায়ালা (তোমাদের বোঝার জন্যে) একটি উদাহরণ উপস্থাপন করেছেন, (উদাহরণটি হচ্ছে দুজন মানুষের, এদের) একজন মানুষ ( হচ্ছে গোলাম), যার বেশ ক'জন মালিক রয়েছে, যারা (আবার) পরস্পর বিরোধী (প্রত্যেকেই গোলামটিকে নিজের দিকে টানতে চাচ্ছে), আরেক ব্যক্তি, যে কেবল একজনেরই (গোলাম); তুমিই বলো (হে নবী), এ দুজন গোলাম কি এক সমান হবে? (না, কখনো নয়,) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না।
৩০. অবশ্যই (একদিন) তুমি মারা যাবে, তারাও নিঃসন্দেহে একদিন মৃত্যুমুখে পতিত হবে,
৩১. অতঃপর (নিজেদের কাজের জন্যে একে অপরকে দায়ী করে) তোমরা কেয়ামতের দিন তোমাদের মালিকের সামনে বাকবিতন্ডা করতে থাকবে।
৩২. সে ব্যক্তির চাইতে বড়ো যালেম আর কে হতে পারে যে আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে এবং একবার তার কাছে সত্য (দ্বীন) এসে যাওয়ার পরও যে ব্যক্তি তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; এমন সব কাফেরদের ঠিকানা কি জাহান্নামে (হওয়া উচিত) নয়?
৩৩. (অপরদিকে) যে ব্যক্তি স্বয়ং এ সত্য (দ্বীন) নিয়ে এসেছে এবং যে ব্যক্তি এ সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, ওদের (আযাব থেকে) বাঁচিয়ে দেয়া হবে।
৩৪. তাদের জন্যে তাদের মালিকের কাছে সেসব কিছুই থাকবে যা তারা (পেতে) চাইবে; (মুলত) এটা হচ্ছে সৎকর্মশীল লোকদের পুরস্কার,
৩৫. কেননা, এরা যা কিছু মন্দ কাজ করেছে আল্লাহ তায়ালা তা মিটিয়ে দেবেন এবং তাদের ভালো কাজসমুহের জন্যে তিনি তাদের উত্তম পুরস্কার দেবেন।
৩৬. আল্লাহ তায়ালা কি তাঁর বান্দা (মোহাম্মদের হেফাযত)-এর জন্যে যথষ্টে নন? (হে নবী,) এরা তোমাকে আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে (অন্যদের) ভয় দেখায়; আল্লাহ তায়ালা যাকে বিভ্রান্ত করেন তার (আসলে) কোনোই পথপ্রদর্শক নেই,
৩৭. আবার যাকে আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউই পথভ্রষ্ট করতে পারে না, আল্লাহ তায়ালা কি পরাক্রমশালী ও কঠোর প্রতিশোধ গ্রহণকারী (সত্তা) নন?
৩৮. (হে নবী,) যদি তুমি এদের কাছে জিজ্ঞেস করো, আকাশমালা ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে, সাথে সাথেই ওরা বলবে, আল্লাহ তায়ালাই (এসব সৃষ্টি করেছেন); এবার তাদের তুমি বলো, তোমরা কখনো ভেবে দেখেছো কি, যদি আল্লাহ তায়ালা আমাকে কোনো কষ্ট পৌঁছাতে চান তাহলে তিনি ছাড়া যাদের তোমরা ডাকো তারা কি সে কষ্ট দুর করতে পারবে? কিংবা তিনি যদি আমার ওপর (তাঁর) অনুগ্রহ করতে চান, (তাহলে) এরা তাঁর সে অনুগ্রহ কি রোধ করতে পারবে? (হে নবী) তুমি বলো, আমার জন্যে আল্লাহ তায়ালাই যথষ্টে; যারা নির্ভর করতে চায় তাদের তো তাঁর ওপরই নির্ভর করা উচিত ।
৩৯. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, হে আমার জাতি, তোমরা তোমাদের জায়গায় কাজ করে যাও, আমিও (আমার জায়গায়) কাজ করে যাচ্ছি, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে,
৪০. কার ওপর (দুনিয়ায়) অপমানকর আযাব আসবে এবং (আখেরাতেই বা) কার ওপর স্থায়ী আযাব নাযিল হবে!
৪১. (হে নবী,) আমি মানুষের জন্যে তোমার ওপর সত্য (দ্বীন)-সহ এ কেতাব নাযিল করেছি, অতপর যে কেউ হেদায়াত পেতে চাইবে সে তা করবে একান্ত তার নিজের জন্যেই, আর যে ব্যক্তি গোমরাহ হয়ে যায়, তার এ গোমরাহীর ফল তার নিজের ওপরই বর্তাবে, আর তুমি তো তাদের ওপর কোনো তত্ত্বাবধায়ক নও!
৪২. আল্লাহ তায়ালা (মানুষদের) মৃত্যুর সময় তার প্রাণবায়ু বের করে নেন, আর যারা ঘুমের সময় মরেনি তিনি (তখন) তাদেরও (রূহ) বের করেন, অতপর যার ওপর তিনি মৃত্যু অবধারিত করেন তার প্রাণ তিনি (ছেড়ে না দিয়ে) রেখে দেন এবং বাকী (রূহ)-দের একটি সুনির্দষ্টি সময়ের জন্যে ছেড়ে দেন; এর (গোটা ব্যবস্থাপনার মধ্যে এমন সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন রয়েছে যারা (বিষয়টি নিয়ে) চিন্তা ভাবনা করে ।
৪৩. তবে কি এরা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে (অন্যদের) সুপারিশকারী (হিসেবে) গ্রহণ করেছে? (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, যদিও তোমাদের এসব সুপারিশকারী কোনো কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না, না তাদের কোনো জ্ঞান বুদ্ধি আছে।
৪৪. বলো (হে নবী), যাবতীয় সুপারিশ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যেই, আসমানসমুহ এবং পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব (একমাত্র) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; অতপর তোমরা সবাই তাঁর দিকেই ফিরে যাবে।
৪৫. যখন তাদের কাছে এক অদ্বিতীয় আল্লাহ তায়ালার কথা বলা হয়, তখন যারা আখেরাতের ওপর ঈমান আনে না, তাদের অন্তর নিতান্ত সংকুচিত হয়ে পড়ে, অপরদিকে যখন আল্লাহ তায়ালার বদলে অন্য (দেবতা)-গুলোর আলোচনা করা হয় তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয় ।
৪৬. (হে নবী,) তুমি বলো, হে আল্লাহ, (হে) আসমান যমীনের স্রষ্টা, (হে) দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সব কিছুর পরিজ্ঞাতা, তুমি তোমার বান্দাদের মাঝে সেসব বিষয়ের ফয়সালা করে দাও, যে ব্যাপারে তারা মতবিরোধ করছে।
৪৭. যদি এ যালেমদের কাছে সেসব (সম্পদ) মজুদ থাকে, যা এ পৃথিবীর মাঝে (ছড়িয়ে) আছে, তার সাথে সমপরিমাণ (সম্পদ) আরো যদি তার কাছে থাকে, কেয়ামতের দিন আযাবের অনিষ্ট থেকে মুক্তি পেতে তারা সবকিছু (বিনা দ্বিধায়) দিয়ে দিতে চাইবে; সে সময় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে সে (আযাব) এসে উপস্থিত হবে, যার কল্পনাও তারা করতে পারেনি।
৪৮. এরা (যেভাবে) আমল করতে থাকবে, আসেত্ম আসেত্ম (সেভাবে) তার মন্দ ফলও প্রকাশ পেতে থাকবে, যে (আযাবের প্রতি) এরা হাসি বিদ্রূপ করতো তা তাদের (আমলের মতোই) তাদের পরিবষ্টেন করে ফেলবে ।
৪৯. মানুষদের (অবস্থা হচ্ছে,) যখন কোনো দুঃখ কষ্ট তাদের স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকে, অতপর আমি যখন তাকে আমার কাছ থেকে কোনো রকম নেয়ামত দান করি তখন সে বলে, এটা তো আমার জ্ঞানের (যোগ্যতার) ওপরই দেয়া হয়েছে, না (আসলে তা নয়); বরং এটা হচ্ছে পরীক্ষা, কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই জানে না ।
৫০. এদের আগের লোকেরাও অবশ্য এ ধরনের (কথাবার্তা) বলতো, কিন্তু তারা যা কিছু অর্জন করেছে তা তাদের কোনোই কাজে আসেনি।
৫১. যা কিছু তারা কামাই করেছে তার মন্দ পরিণাম তাদের সামনে আসবেই; এদের মধ্যে যারা যুলুম করে তারাও (একদিন) তাদের কর্মের মন্দ ফল ভোগ করবে, এরা কখনো (আমাকে) অক্ষম করে দিতে পারবে না ।
৫২. এরা কি জানে না, আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তার রেযেক বাড়িয়ে দেন এবং (যার জন্যে চান তার জন্যে তা) সংকুচিত করে দেন; অবশ্যই এর মাঝে ঈমানদার লোকদের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে।
৫৩. (হে নবী,) তুমি (তাদের) বলো, হে আমার বান্দারা, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছো, তারা আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে (কখনো) নিরাশ হয়ো না; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (মানুষের) সমুদয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন, তিনি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৫৪. অতএব, তোমরা তোমাদের মালিকের দিকে ফিরে এসো এবং তাঁর কাছেই (পূর্ণ) আত্মসমর্পণ করো তোমাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার আযাব আসার আগেই, (কেননা একবার আযাব এসে গেলে) অতপর তোমাদের আর কোনো রকম সাহায্য করা হবে না।
৫৫. তোমাদের অজান্তে তোমাদের ওপর অতর্কিতভাবে কোনো রকম আযাব নাযিল হবার আগেই তোমাদের কাছে তোমাদের মালিক যে উৎকৃষ্ট (গ্রন্থ) নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো,
৫৬. (অতপর এমন যেন না হয়,) কেউ (একদিন) বলবে, হায় আফসোস! আল্লাহ তায়ালার প্রতি আমার কর্তব্য পালনে আমি দারুণ শৈথিল্য প্রদর্শন করেছি, আমি তো (মুলত) ছিলাম ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদেরই একজন!
৫৭. কিংবা একথা (কেউ) যেন না বলে, যদি আল্লাহ তায়ালা আমাকে হেদায়াত দান করতেন তাহলে আমি অবশ্যই পরহেযগারদের দলে শামিল হয়ে যেতাম,
৫৮. অথবা আযাব সামনে দেখে কেউ বলবে, আহা, যদি আমার (আবার) দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া (নসীবে ) থাকতো, তাহলে আমি নেক বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যেতাম!
৫৯. (আল্লাহ তায়ালা বলবেন,) হ্যাঁ, আমার আয়াতসমুহ অবশ্যই তোমার কাছে এসে পৌঁছেছিলো, কিন্তু তুমি সেগুলোকে মিথ্যা বলেছিলে, তুমি অহংকার করেছিলে, তুমি ছিলে অস্বীকারকারীদেরই একজন।
৬০. কেয়ামতের দিন তুমি দেখবে, যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা আরোপ করে তাদের মুখগুলো সব কদাকার (বিশ্রী হয়ে গেছে), তুমি কি মনে করো জাহান্নাম (এ রকম) ঔদ্ধত্য পোষণকারীদের ঠিকানা (হওয়া উচিত) নয়?
৬১. (এর বিপরীত) যারা পরহেযগারী করেছে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সাফল্যের সাথে (জাহান্নাম থেকে) উদ্ধার করবেন, অকল্যাণ কখনো তাদের স্পর্শ করবে না, না তারা কখনো কোনো ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হবে!
৬২. আল্লাহ তায়ালাই হচ্ছেন সব কিছুর (একক) স্রষ্টা, তিনিই হচ্ছেন সব কিছুর ওপর নেগাহবান!
৬৩. আসমানসমূহ ও যমীনের মুল চাবি (-কাঠি) তো তাঁরই কাছে; যারা (এখন) আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমুহ অস্বীকার করে চলেছে, ( পরিশেষে) তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত ।
৬৪. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, হে মুর্খ ব্যক্তিরা, তোমরা কি (এরপরও) আমাকে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কারো গোলামী বরণ করে নিতে বলছো?
৬৫. অথচ (হে নবী,) তোমার কাছে এবং সেসব (নবীদের) কাছেও যারা তোমার আগে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এ (মর্মে) ওহী পাঠানো হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহ তায়ালার সাথে (অন্যদের) শরীক করো তাহলে অবশ্যই তোমার (সব) আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্তদের দলে শামিল হবে ।
৬৬. অতএব, তুমি একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালারই এবাদাত করো এবং শোকরগোযার বান্দাদের মধ্যে শামিল হয়ে যাও।
৬৭. (আসলে) এ (মু খর) লোকগুলো আল্লাহ তায়ালার সেভাবে মুল্যায়নই করেনি যেভাবে তাঁর মুল্যায়ন করা উচিত ছিলো, কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর হাতের মুঠোয় এবং আসমানগুলো (একে একে) ভাঁজজ করা অবস্থায় তাঁর ডান হাতে থাকবে; পবিত্র ও মহান তিনি, ওরা (তাঁর সাথে) যা কিছু শেরেক করে তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।
৬৮. (যখন প্রথমবার) শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন আসমানসমূহ ও যমীনে যা আছে তার (সব কিছুই) বেহুশ হয়ে যাবে, অবশ্য আল্লাহ তায়ালা যা চান (তার কথা আলাদা); অতপর আবার শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, তখন তারা সবাই দন্ডায়মান হয়ে (সে বীভৎস দৃশ্য) দেখতে থাকবে ।
৬৯. (এ সময়) যমীন তার মালিকের নুরের ঝলকে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠবে, মানুষের (কর্মফলের) নথিপত্র (সামনে) রাখা হবে, নবীদের ও অন্যান্য সাক্ষীদের এনে হাযির করা হবে, তাদের সবার সাথে ন্যায়বিচার করা হবে, তাদের কারো ওপর বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না।
৭০. প্রত্যেক মানুষকে সে পরিমাণ প্রতিফলই দেয়া হবে যে পরিমাণ কাজ সে করে এসেছে, (কারণ) আল্লাহ তায়ালা সে বিষয়ে সম্যক অবগত আছেন যা কিছু তারা প্রতিনিয়ত করে বেড়াতো ।
৭১. যেসব লোক কুফরী করেছে তাদের দলে দলে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নেয়া হবে; এমনি (তাড়া খেয়ে) যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছুবে তখন (সাথে সাথেই) তার (সদর) দরজা খুলে দেয়া হবে এবং তার রক্ষী (ফেরেশতা)-রা ওদের বলবে, তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে কোনো রসুল আসেনি, যারা তোমাদের কাছে তোমাদের মালিকের (কেতাবের) আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করতো এবং তোমাদের এমনি একটি দিনের সাক্ষাত্ সম্বন্ধে সতর্ক করে দিতো; ওরা বলবে (হ্যাঁ), অবশ্যই এসেছিলো, কিন্তু কাফেরদের ব্যাপারে (আল্লাহ তায়ালার সে) আযাব (সম্পর্কিত) ওয়াদাই আজ বাস্তবায়িত হয়ে গেলো।
৭২. ওদের (তখন) বলা হবে, যাও, প্রবেশ করো জাহান্নামের দরজা দিয়ে, (তোমরা) সেখানেই চিরদিন থাকবে, ঔদ্ধত্য প্রকাশকারীদের জন্যে কতো নিকৃষ্ট হবে এ ঠিকানা!
৭৩. (অপরদিকে) যারা তাদের মালিককে ভয় করেছে তাদের সবাইকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে; এমনি করে যখন সেখানে তারা (জান্নাতের দোরগোড়ায়) এসে হাযির হবে (তখন তারা দেখতে পাবে) তার দরজাসমুহ তাদের অভিবাদনের জন্যে খুলে রাখা হয়েছে, (উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে) তার রক্ষী (ফেরেশতা)-রা তাদের বলবে, তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাকো, চিরন্তন জীবন কাটানোর জন্যে এখানে দাখিল হয়ে যাও!
৭৪. তারা (সেখানে প্রবেশ করে কৃতজ্ঞ চিত্তে) বলবে, সমস্ত তারীফ আল্লাহ তায়ালার, যিনি আমাদের দেয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি পুরণ করেছেন এবং আমাদের এ ভূমির অধিকারী বানিয়ে দিয়েছেন, এখন আমরা (এ) জান্নাতের যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বসবাস করবো, (স) কর্ম সম্পাদনকারীদের (এ) পুরস্কার কতোই না উত্তম!
৭৫. (হে নবী, সেদিন) তুমি ফেরেশতাদের দেখতে পাবে, ওরা আরশের চারদিকে ঘিরে তাদের মালিকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে চলেছে, (সেদিন) ইনসাফের সাথে সবার বিচার (কার্য যখন) সম্পন্ন হবে, (চারদিক থেকে) একই ঘোষণা ধ্বনিত হবে সবটুকু প্রশংসাই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্যে ।
💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url