আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আদ দোখান’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আদ দোখান | Surah Ad Dukhan | الدخان


সূরা আদ দোখান’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আদ দোখান, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৫৯, রুকু ৩

সূরা আদ দোখান



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হা-মীম,

২. সুস্পষ্ট কিতাবের শপথ,

৩. আমি একে একটি মর্যাদাপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি, অবশ্যই আমি হচ্ছি (জাহান্নাম থেকে) সতর্ককারী!

৪. তার মধ্যে প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের ফয়সালা (স্থিরীকৃত) হয়,

৫. (তা স্থিরীকৃত হয়) আমারই আদেশক্রমে, (কাজ সম্পাদনের জন্যে) আমি নিসন্দেহে (আমার) দূত পাঠিয়ে থাকি,

৬. (এটা সম্পন্ন হয়) তোমার মালিকের একান্ত অনুগ্রহে; অবশ্যই তিনি (সবকিছু) শোনেন, (সবকিছু) জানেন। 

৭. তিনি আসমানসমুহ, যমীন এবং এদের উভয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে তার সব কিছুর মালিক। যদি তোমরা ঈমানদার হও (তাহলে তোমরা অযথা বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না)

৮. তিনি ছাড়া আর কোনোই মাবুদ নেই, তিনি জীবন দান করেন, তিনিই মৃত্যু ঘটান; তিনি তোমাদের মালিক এবং তোমাদের পূর্ববর্তী বাপ দাদাদেরও মালিক।

৯. (এ সত্ত্বেও) তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে (এর সাথে) খেল তামাশা করে চলেছে ।

১০. অতএব (হে নবী), তুমি সেদিনের অপেক্ষা করো যেদিন আকাশ (তার) স্পষ্ট ধোঁয়া (নীচের দিকে) ছেড়ে দেবে,

১১. তা (অল্প সময়ের মধ্যে গোটা) মানুষদের গ্রাস করে ফেলবে; এটা হবে এক কঠিন শাস্তি।

১২. (তখন তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের কাছ থেকে এ আযাব সরিয়ে নাও, আমরা (এক্ষুণি) ঈমান আনছি।

১৩. (কিন্তু এখন) আর তাদের উপদেশ গ্রহণ করার সুযোগ কোথায়, তাদের কাছে সুস্পষ্ট (মর্যাদাবান) রসুল তো এসেই গেছে,

১৪. (তা সত্ত্বেও) তারা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা বলেছে, (এগুলো হচ্ছে) পাগল ব্যক্তির শেখানো কতিপয় বুলি মাত্র!

১৫. আমি (যদি) কিছু সময়ের জন্যে আযাব সরিয়েও দেই (তাতে কি লাভ?) তোমরা তো নিসন্দেহে আবার তাই করবে।

১৬. একদিন আমি কঠোরভাবে এদের পাকড়াও করবো (এবং এদের কাছ থেকে) আমি (পুরোপুরি) প্রতিশোধ নেবো।

১৭. এদের আগে আমি ফেরাউনের জাতির (লোকদেরও) পরীক্ষা করেছি, তাদের কাছেও আমার একজন সম্মানিত রসুল (মুসা) এসেছিলো,

১৮. (মুসা ফেরাউনকে বললো,) আল্লাহ তায়ালার এই বান্দাদের তোমরা আমার কাছে দিয়ে দাও; (কেননা) আমি তোমাদের কাছে একজন বিশ্বস্ত নবী (হয়ে এসেছি),

১৯. (সে বললো,) তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে বিদ্রোহ করো না, আমি তো (নবুওতের) এক সুস্পষ্ট প্রমাণ তোমাদের কাছে এসেছি; 

২০. তোমরা যাতে আমাকে পাথর মেরে হত্যা করতে না পারো, সে জন্যে আমি আমার মালিক ও তোমাদের মালিকের কাছে (আগেই) পানাহ চেয়ে নিয়েছি,

২১. যদি তোমরা আমার ওপর ঈমান না আনো তাহলে তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে থাকো ।

২২. অতপর সে (এদের নাফরমানী দেখে) তার মালিকের কাছে দোয়া করলো (হে আমার মালিক), এরা হচ্ছে একটি না-ফরমান জাতি (তুমি আমাকে এদের কাছ থেকে মুক্তি দাও) ।

২৩. (আমি বললাম,) তুমি আমার বান্দাদের সাথে করে রাতে রাতেই (এ জনপদ থেকে) বেরিয়ে পড়ো, (সাবধান থেকো, ফেরাউনের পক্ষ থেকে কিন্তু) তোমাদের পশ্চাদ্ধাবন করা হবে,

২৪. সমুদ্রকে শান্ত রেখে তুমি (পার হয়ে) যেও; নিসন্দেহে তারা (সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে ।

২৫. (যাবার সময়) ওরা নিজেদের পেছনে কতো উদ্যান, কতো ঝর্ণা ফেলে গেছে,

২৬. (ফেলে গেছে) কতো ক্ষেতের ফসল, কতো সুরম্য প্রাসাদ,

২৭. কতো (বিলাস) সামগ্রী, যাতে ওরা নিমগ্ন থাকতো,

২৮. এভাবেই আমি আরেক জাতিকে এসব কিছুর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিলাম।

২৯. (এ ঘটনার ফলে) ওদের ওপর না আসমান কোনো রকম অশ্রুপাত করলো না যমীন (ওদের এ পরিণামে একটু) কাঁদলো, (আযাব আসার পর) তাদের আর কোনো অবকাশই দেয়া হলো না।

৩০. আমি অবশ্যই বনী ইসরাঈলদের অপমানজনক শাস্তি থেকে উদ্ধার করেছি

৩১. ফেরাউন (ও তার গোলামীর শৃংখল) থেকে (তাদের আমি নাজাত দিয়েছি), অবশ্যই সে ছিলো সীমালংঘনকারী (না-ফরমান)-দের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি।

৩২. আমি তাদের (জাতি বনী ইসরাঈলদের) দুনিয়ার ওপর জ্ঞানে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি,

৩৩. আমি তাদের (এমন কতিপয়) নিদর্শন দিয়েছি, যাতে (তাদের জন্যে) সুস্পষ্ট পরীক্ষা (নিহিত) ছিলো ।

৩৪. এ (মুর্খ) লোকেরা (মুসলমানদের) বলতো,

৩৫. এটা হচ্ছে আমাদের প্রথম মৃত্যু, আমরা (আর) কখনো পুনরুত্থিত হবো না।

৩৬. তোমরা যদি (কেয়ামত ও পুনরুত্থান সম্পর্কে) সত্যবাদী হও তাহলে আমাদের বাপ-দাদাদের (কবর থেকে) নিয়ে এসো!

৩৭. (শক্তি সামর্থের দিক থেকে) কি তারা বড়ো, না 'তুব্বা' জাতি ও তাদের আগে যারা ছিলো তারা (বড়ো); আমি তাদের (মতো শক্তিশালীদেরও) ধ্বংস করে দিয়েছি, অবশ্যই তারা ছিলো (জঘন্য) না- ফরমান জাতি।

৩৮. আমি আসমানসমুহ, যমীন এবং এদের উভয়ের মাঝখানে যা কিছু আছে তার কোনোটাই খেল তামাশার ছলে পয়দা করিনি ।

৩৯. এগুলো আমি যথাযথ উদ্দেশ্য ছাড়াও সৃষ্টি করিনি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ (সৃষ্টির এ উদ্দেশ্য সম্পর্কে) কিছুই জানে না ।

৪০. অতপর এদের (সবার জন্যেই পুনরুত্থান ও) বিচার ফয়সালার দিনক্ষণ নির্ধারিত রয়েছে।

৪১. সেদিন এক বন্ধু আরেক বন্ধুর কোনোই কাজে আসবে না, না তাদের (সেদিন কোনো রকম) সাহায্য করা হবে!

৪২. অবশ্য যার ওপর আল্লাহ তায়ালা দয়া করবেন (তার কথা স্বতন্ত্র); নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা মহাপরাক্রমশালী ও দয়ালু।

৪৩. অবশ্যই (জাহান্নামে যাক্কুম (নামের একটি) গাছ থাকবে,

৪৪. (তা হবে) গুনাহগারদের জন্যে সেখানকার) খাদ্য,

৪৫. গলিত তামার মতো তা পেটের ভেতর ফুটতে থাকবে,

৪৬. ফুটন্ত গরম পানির মতো!

৪৭. (ফেরেশতাদের প্রতি আদেশ হবে,) ধরো একে অতপর হেঁচড়ে জাহান্নামের মধ্যস্থলের দিকে নিয়ে যাও, 

৪৮. তারপর তার মাথার ওপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও;

৪৯. (তাকে বলা হবে, আযাবের) স্বাদ আস্বাদন করো, তুমি (না ছিলে দুনিয়ার বুকে) একজন শক্তিশালী ও অভিজাত মানুষ!

৫০. (আর) এ শাস্তি সম্পর্কে তোমরা (অভিজাত লোকগুলোই) ছিলে (বেশী) সন্দিহান!

৫১. (অপরদিকে) পরহেযগার লোকেরা নিরাপদ (ও অনাবিল শান্তির জায়গায় থাকবে,

৫২. (মনোরম) উদ্যানে ও (অমিয়) ঝর্ণাধারায়,

৫৩. মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র পরিধান করে এরা (একে অপরের) সামনাসামনি হয়ে বসবে,

৫৪. এমনই হবে (তাদের পুরস্কার, উপরন্তু) তাদের আমি দেবো আয়তলোচনা (পরমা সুন্দরী) হুর;

৫৫. তারা সেখানে প্রশান্ত মনে সব ধরনের ফল ফলাদির অর্ডার দিতে থাকবে,

৫৬. প্রথম মৃত্যু ছাড়া (যা দুনিয়াতেই এসে গেছে), সেখানে (তাদের আর) মৃত্যুর স্বাদ ভোগ করতে হবে না, (তাদের মালিক) তাদের জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচিয়ে দেবেন,

৫৭. (হে নবী, এ হচ্ছে মোমেনদের প্রতি) তোমার মালিকের পক্ষ থেকে দয়া ও অনুগ্রহ : (সত্যিকার অর্থে) এটাই হচ্ছে (সেদিনের) মহাসাফল্য।

৫৮. অতএব (হে নবী), আমি এ (কোরআন)-কে তোমারই (মাতৃ)-ভাষায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে করে তারা (এর থেকে) উপদেশ গ্রহণ করতে পারে।

৫৯. সুতরাং তুমি (এদের পরিণাম দেখার জন্যে) অপেক্ষা করতে থাকো, আর ওরা তো প্রতীক্ষা করেই যাচ্ছে!


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url