আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল জাছিয়া’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল জাছিয়া | Surah Al Jathiyah | الجاثية


সূরা আল জাছিয়া’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আল জাছিয়া, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৩৭, রুকু ৪

সূরা আল জাছিয়া


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. হা-মীম,

২. পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকেই (এ) কিতাবের অবতরণ।

৩. নিসন্দেহে আকাশমালা ও যমীনে ঈমানদারদের জন্যে (আল্লাহ তায়ালাকে জানার অগণিত) নিদর্শন রয়েছে;

৪. (নিদর্শন রয়েছে স্বয়ং) তোমাদের সৃষ্টির মাঝে এবং জীবজন্তুর (বংশ বিস্তারের) মাঝেও, যাদের তিনি যমীনের সর্বত্র ছড়িয়ে রেখেছেন, এর সর্বত্রই (তাঁর কুদরতের অসংখ্য) নিদর্শন (মজুদ) রয়েছে তাদের জন্যে, যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) বিশ্বাস করে।

৫. (একইভাবে নিদর্শন রয়েছে) রাত দিনের পরিবর্তনের মাঝে, যে রেযেক ( বিভিন্নভাবে) আল্লাহ তায়ালা আসমান থেকে পাঠান, যা দিয়ে তিনি যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করে তোলেন (তার মাঝেও! এ) বায়ুর পরিবর্তনেও (তাঁর কুদরতের বহু) নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে তাদের জন্যে, যারা চিন্তা (গবেষণা) করে ।

৬. এ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমুহ, যা আমি যথাযথভাবে তোমার কাছে পড়ে শোনাচ্ছি, অতপর (তুমি কি বলতে পারো) আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর এ নিদর্শনের পর আর কিসের ওপর তারা ঈমান আনবে?

৭. দুর্ভোগ প্রতিটি মিথ্যাবাদী পাপাচারীর জন্যে,

৮. আল্লাহ তায়ালার আয়াত যখন তার ওপর তেলাওয়াত করা হয় তখন সে (তা) শোনে, (কিন্তু) একটু পরেই সে অহংকারী হয়ে এমনভাবে জেদ ধরে যেন সে তা শুনতেই পায়নি, সুতরাং (যে এমন ধরণের আচরণ করে) তুমি তাকে এক কঠিন আযাবের সুসংবাদ দাও!

৯. যখন সে আমার আয়াতসমুহের কোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে, তখন সে একে পরিহাসের বিষয় হিসেবে গ্রহণ করে; এমন ধরনের লোকদের জন্যে অপমানজনক আযাব রয়েছে;

১০. তাদের সামনে রয়েছে জাহান্নাম এবং সেসব জিনিস যা তারা (দুনিয়া থেকে) কামাই করে এনেছে (আজ তা ) তাদের কোনো কাজেই এলো না, না সেসব (মাবুদ তাদের কোনো কাজে এলো) যাদের তারা আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে (নিজেদের) অভিভাবক বানিয়ে রেখেছিলো, তাদের সবার জন্যে রয়েছে (জাহান্নামের) কঠোর শাস্তি;

১১. এ (কোরআন) হচ্ছে (সম্পূর্ণ) হেদায়াত, (তা সত্ত্বেও) যারা তাদের মালিকের আয়াতসমুহকে অস্বীকার করে তাদের জন্যে অতিশয় নিকৃষ্ট ও কঠোরতর আযাব রয়েছে ।

১২. আল্লাহ তায়ালাই সেই মহান সত্তা, যিনি সমুদ্রকে তোমাদের অধীন করে রেখেছেন, যাতে করে তোমরা তাঁরই আদেশক্রমে নৌযানসমুহে তাতে চলতে পারো, এর দ্বারা তোমরা তাঁর অনুগ্রহ (রেযেক) সন্ধান করতে পারো এবং শোকর আদায় করতে পারো,

১৩. (একইভাবে) তাঁর ( অনুগ্রহ) থেকে তিনি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, অবশ্যই এর মধ্যে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে (অনেক) নিদর্শন রয়েছে।

১৪. (হে নবী,) ঈমানদারদের তুমি বলো, যারা আল্লাহ তায়ালার (অমোঘ বিচারের) দিনগুলো থেকে কিছু আশা করে না, তারা যেন তাদের ক্ষমা করে দেয়, যাতে করে আল্লাহ তায়ালা এ (বিশেষ) দলকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে (পরকালে) পুরোপুরি বিনিময় দিতে পারেন ।

১৫. (তোমাদের মাঝে) যদি কেউ কোনো নেক কাজ করে, তা (কিন্তু) সে তার নিজের ভালোর জন্যেই (করে, আবার) যে কেউই কোনো মন্দ কাজ করে, (তার প্রতিফল) (কিন্তু) অতপর তার ওপরই (পড়বে, পরিশেষে ) তোমাদের সবাইকে স্বীয় মালিকের কাছেই ফিরে যেতে হবে।

১৬. আমি বনী ইসরাঈলদের কিতাব, রাষ্ট্র ক্ষমতা ও নবুওত দান করেছিলাম, আমি তাদের উৎকৃষ্ট রেযেক দিয়েছিলাম, (উপরন্তু) আমি (এসব কিছুর মাধ্যমে) তাদের সৃষ্টিকুলের ওপর শ্রেষ্ঠত্বও দান করেছিলাম,

১৭. দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়গুলো আমি তাদের কাছে বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, অতপর যে মতবিরোধ তারা নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে তা (কিন্তু তাদের অজ্ঞতার কারণে নয়; বরং তা) ছিলো তাদের পারস্পরিক জেদের কারণে; (হে নবী,) কেয়ামতের দিন তোমার মালিক তাদের মধ্যে সে সমস্ত ( বিষয়ের) ফয়সালা করে দেবেন যে ব্যাপারে তারা (দুনিয়ায়) মতবিরোধ করেছে।

১৮. অতপর (হে নবী) আমি তোমাকে দ্বীনের এক (বিশেষ) পদ্ধতির ওপর এনে স্থাপন করেছি, অতএব তুমি শুধু তারই অনুসরণ করো, (শরীয়তের ব্যাপারে) সেসব লোকদের ইচ্ছা আকাংখার অনুসরণ করো না যারা (আখেরাত সম্পর্কে) কিছুই জানে না।

১৯. আল্লাহ তায়ালার মোকাবেলায় এরা তোমার কোনোই কাজে আসবে না; যালেমরা অবশ্যই একজন আরেকজনের বন্ধু, আর পরহেযগার লোকদের (আসল) বন্ধু হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা (স্বয়ং)।

২০. এ (কোরআন) হচ্ছে মানুষের জন্যে সুস্পষ্ট দলীল, (সর্বোপরি ) বিশ্বাসীদের জন্যে তা হচ্ছে জ্ঞানের কথা, পথনির্দেশ ও অনুগ্রহ।

২১. যারা অপকর্ম করে তারা কি মনে করে নিয়েছে, আমি তাদের সে লোকদের মতো করে দেবো যারা ঈমান এনেছে এবং (সে অনুযায়ী) নেক আমল করেছে, তাদের জীবন ও তাদের মরণ কি (ঈমান গ্রহণকারীদের মতো) একই ধরনের হবে? কতো নম্নিমানের ধারণা পোষণ করছে এরা (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে)!

২২. আল্লাহ তায়ালা আসমানসমুহ ও যমীনকে যথাযথভাবেই সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে (এ দু'য়ের মাঝে বসবাসরত) প্রতিটি বাসিন্দাদের তার কর্মের ঠিক ঠিক বিনিময় দেয়া যেতে পারে, (কেয়ামতের দিন) তাদের কারো প্রতি বিন্দুমাত্র যুলুম করা হবে না ।

২৩. (হে নবী,) তুমি কি সে ব্যক্তিটির প্রতি লক্ষ্য করেছো যে ব্যক্তি নিজের খেয়াল খুশীকে নিজের মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে এবং (পর্যাপ্ত পরিমাণ) জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা তাকে গোমরাহ করে দিয়েছেন, তার কান ও তার অন্তরে তিনি মোহর মেরে দিয়েছেন, তার চোখে তিনি পর্দা এঁটে দিয়েছেন; এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালার পর কে পথনির্দেশ দেবে? তারপরও কি তোমরা কোনো উপদেশ গ্রহণ করবে না?

২৪. এ (মুর্খ) লোকেরা এও বলে, আমাদের এ পার্থিব দুনিয়া ছাড়া আর কোনো জীবনই নেই, আমরা (এখানেই) মরি বাঁচি, কালের আবর্তন ছাড়া অন্য কিছু আমাদের ধ্বংশও করেনা । (মুলত) এদের এ ব্যাপারে কোনোই জ্ঞান নেই, এরা শুধু আন্দায অনুমানের ভিত্তিতেই কথা বলে।

২৫. যখন এদের কাছে আমার (কিতাবের) সুস্পষ্ট আয়াতগুলো পড়া হয় তখন এদের কাছে এ ছাড়া আর কোনো যুক্তিই থাকে না যে, তারা বলে, তোমরা যদি (কেয়ামতের দাবীতে) সত্যবাদী হও তাহলে আমাদের বাপ-দাদাদের (কবর থেকে) নিয়ে এসো।

২৬. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের জীবন দান করেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু দেন, তিনিই (আবার) কেয়ামতের দিন তোমাদের পুনরায় একত্রিত করবেন, এটা (সংঘটিত) হবার ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ নেই, কিন্তু (তারপরও) অধিকাংশ মানুষ (এ সম্পর্কে কিছুই জানে না ।

২৭. আকাশমন্ডলী ও যমীনের যাবতীয় সার্বভৌমত্ব আল্লাহ তায়ালার জন্যেই, যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন এই বাতিলপন্থীরা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।

২৮. (হে নবী, সেদিন) তুমি প্রত্যেক সম্প্রদায়কে দেখবে (মহাবিচারকের সামনে) ভয়ে আতংকে নতজানু হয়ে পড়ে থাকবে | প্রত্যেক জাতিকেই তাদের আমলনামার দিকে ডাক দেয়া হবে; (তাদের বলা হবে, দুনিয়ায়) তোমরা যা কিছু করতে আজ তোমাদের তার (যথাযথ) প্রতিফল দেয়া হবে।

২৯. এ হচ্ছে আমার (সংরক্ষিত) নথিপত্র, যা তোমাদের (কর্মকান্ডের) ওপর ঠিক ঠিক বর্ণনাই পেশ করবে; তোমরা যখন যা করতে আমি তা (এখানে সেভাবেই) লিখে রেখেছি ।

৩০. যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, (আজ) তাদের মালিক তাদের তাঁর অনুগ্রহে (জান্নাতে) দাখিল করাবেন; আর এটাই হবে সুস্পষ্ট সাফল্য।

৩১. অপরদিকে যারা কুফরী অবলম্বন করেছে (আমি তাদের বলবো), তোমাদের সামনে কি আমার আয়াতসমুহ (বার বার) পড়ে শোনানো হতো না? অতপর (এ সত্বেও) তোমরা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছিলে, (মুলত) তোমরা ছিলে নাফরমান জাতি!

৩২. যখন (তোমাদের) বলা হতো, আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামত (সংঘটিত) হওয়ার মধ্যে কোনো রকম সন্দেহ নেই, তখন তোমরা (অহংকার করে) বলতে, আমরা জানি না কেয়ামত (আবার) কি, আমরা (এ ব্যাপারে সামান্য) কিছু ধারণাই করতে পারি মাত্র, কিন্তু আমরা তো তাতে বিশ্বাসীও নই!

৩৩. (সেদিন) তাদের মন্দ কাজগুলো তাদের কাছে স্পষ্ট প্রকাশ হয়ে পড়বে এবং সে বিষয়টিই তাদের পরিবষ্টেন করে নেবে যে ব্যাপারে তারা হাসি ঠাট্টা করে বেড়াতো।

৩৪. (ওদের তখন) বলা হবে, আজ আমি তোমাদের (জেনে শুনেই) ভুলে যাবো, ঠিক যেভাবে তোমরা (দুনিয়ায় থাকতে) এ দিনের সাক্ষাতকে ভুলে গিয়েছিলে, (আজ) তোমাদের ঠিকানা হবে (জাহান্নামের) আগুন, (সে আগুন থেকে বাঁচার জন্যে এখানে) তোমরা কোনোই সাহায্যকারী পাবে না।

৩৫. এটা এ কারণে যে, তোমরা আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমুহ নিয়ে হাসি তামাশা করতে এবং (তোমাদের) পার্থিব জীবন দারুণভাবে তোমাদের প্রতারিত করে রেখেছিলো, (সুতরাং) আজ তাদের সেখান থেকে বের করা হবে না না (আল্লাহ তায়ালার দরবারে) তাদের কোনো রকম অজুহাত পেশ করার সুযোগ দেয়া হবে ।

৩৬. অতএব, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আসমানসমুহের মালিক, তিনি যমীনের মালিক, তিনি মালিক গোটা সৃষ্টিকুলের!

৩৭. আকাশমন্ডলী এবং যমীনের সমস্ত গৌরব ও মাহাত্ম্য তাঁর জন্যেই (নিবেদিত), তিনি মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url