আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মুলক’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মুলক | Surah Al Mulk | سورة الملك


সূরা আল মুলক’এর বাংলা অনুবাদ

সূরা আল মুলক, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৩০, রুকু ২

সূরা আল মুলক



রহমান রহীম আল্লাহ তা'আলার নামে

১. (কতো) মহান সেই পুণ্যময় সত্তা, যাঁর হাতে (রয়েছে আসমান যমীনের যাবতীয়) সার্বভৌমত্ব, (এ সৃষ্টি জগতের) সব কিছুর ওপর তিনি একক ক্ষমতাবান,

২. যিনি জন্ম ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন, যাতে করে এর দ্বারা তিনি তোমাদের যাচাই করে নিতে পারেন, কর্মক্ষেত্রে কে (এখানে) তোমাদের মধ্যে বেশী ভালো | তিনি সর্বশক্তিমান, তিনি অসীম ক্ষমাশীল,

৩. তিনিই সাত (মযবুত) আসমান বানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে একটার ওপর আরেকটা (স্থাপন করেছেন); অসীম দয়ালু আল্লাহ তা'আলার এ (নিপুণ) সৃষ্টির কোথাও কোনো খুঁত তুমি দেখতে পাবে না; আবার (তাকিয়ে) দেখো তো, কোথাও কি তুমি কোনো রকম ফাটল দেখতে পাও ?

৪. অতঃপর (তোমার) দৃষ্টি ফেরাও (নভোমন্ডলের প্রতি), দেখো, আরেকবারও তোমার দৃষ্টি ফেরাও (দেখবে, তোমার) দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকেই ফিরে আসবে ।

৫. নিকটবর্তী আকাশটিকে (তুমি দেখো, তাকে কিভাবে) প্রদীপমালা দিয়ে আমি সাজিয়ে রেখেছি, (ঊর্ধ্বলোকের দিকে গমনকারী) শয়তানদের তাড়িয়ে বেড়ানোর জন্যে এ (প্রদীপগুলো)-কে আমি (ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে) সংস্থাপন করে রেখেছি, (চূড়ান্ত বিচারের দিন) এদের জন্যে জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডলীর ভয়াবহ শাস্তির ব্যবস্থাও আমি (যথাযথভাবে) প্রস্তুত করে রেখেছি ।

৬. (এতো সব নিদর্শন সত্ত্বেও) যারা তাদের স্রষ্টাকে অস্বীকার করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের (কঠোরতম শাস্তি, জাহান্নাম কতোই না নিকৃষ্টতম স্থান!

৭. এর মধ্যে যখন তাদের ছুঁড়ে ফেলা হবে তখন (নিক্ষিপ্ত হবার আগেই) তারা শুনতে পাবে, তা ক্ষিপ্ত হয়ে বিকট গর্জন করছে,

৮. (মনে হবে) তা যেন প্রচন্ড ক্রোধের কারণে ফেটে দীর্ণ বিদীর্ণ হয়ে যাচ্ছে; যখনই একদল (নতুন পাপী)-কে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে তখনই তার প্রহরীরা তাদের জিজ্ঞেস করবে, (এ জায়গার কথা বলার জন্যে) তোমাদের কাছে কোনো সাবধানকারী কি আসেনি?

৯. তারা বলবে, হ্যাঁ, আমাদের কাছে (আল্লাহর) সাবধানকারী (নবী রসূল) এসেছিলো, কিন্তু আমরা তাদের অস্বীকারই করেছি, আমরা তাদের বলেছি, (এ দিন সংক্রান্ত) কোনো কিছুই আল্লাহ তা'আলা নাযিল করেননি; বরং তোমরা নিজেরাই চরম বিভ্রান্তিতে ডুবে আছো।

১০. তারা বলবে, কতো ভালো হতো (যদি সেদিন) আমরা (নবী রসূলদের কথা) শুনতাম এবং (তা) অনুধাবন করতাম, (তাহলে আজ) আমরা জ্বলন্ত আগুনের বাসিন্দাদের মধ্যে গণ্য হতাম না।

১১. অতঃপর তারা নিজেরাই নিজেদের (যাবতীয়) অপরাধ স্বীকার করে নেবে, ধিক্কার জাহান্নামের অধিবাসীদের ওপর!

১২. (অপর দিকে) সেসব (সৌভাগ্যবান) মানুষ, যারা নিজেরা( চোখে) না দেখেও তাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভয় করেছে, নিঃসন্দেহে তাদের জন্যে রয়েছে (আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে) ক্ষমা ও মহাপুরস্কার।

১৩. তোমরা তোমাদের কথাবার্তাগুলো লুকিয়ে রাখো কিংবা (তা) প্রকাশ করো (আল্লাহর কাছে এর উভয়টাই সমান); কারণ তিনি মনের ভেতর লুকিয়ে রাখা বিষয় সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকেফহাল।

১৪. তিনি কী (সৃষ্টি সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে) জানবেন না, যিনি ( এর সবকিছু) বানিয়েছেন, (বস্তুত) আল্লাহ তা'আলা অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী এবং সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত ।

১৫. তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি ভূমিকে তোমাদের অধীন করে বানিয়েছেন, তোমরা (যখন যেভাবে চাও) এর অলিগলির মধ্য দিয়ে চলাচল করো এবং এর থেকে (উৎগত) রেযেক তোমরা উপভোগ করো; (মনে রেখো,) একদিন (তোমাদের সবাইকে) তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে ।

১৬. তোমরা কি নিজেদের নিরাপদ ভাবছো (মহাশক্তিধর) আকাশের মালিক আল্লাহ তা'আলা কি তোমাদের সহ ভূমন্ডলকে গেড়ে দেবেন না? (এমনি অবস্থা যখন দেখা দেবে) তখন তা (ভীষণভাবে) কম্পমান হবে,

১৭. অথবা তোমরা কি নিশ্চিত, আকাশের (অধিপতি) আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপর (প্রস্তর নিক্ষেপকারী) এক প্রচন্ড বায়ু প্রবাহিত করবেন না? (এমন দিন আসবে এবং) তোমরা সেদিন অবশ্যই জানতে পারবে, কেমন (ভয়াবহ হতে পারে) আমার সাবধানবাণী (উপেক্ষা করা)!

১৮. তাদের আগেও যারা (আমার সাবধানবাণী) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দেখো, কেমন (ছিলো তাদের প্রতি) আমার আচরণ!

১৯. এ সব লোকেরা কি তাদের মাথার ওপর (দিয়ে উড়ে যাওয়া) পাখীগুলোকে দেখে না? (কিভাবে এরা) নিজেদের পাখা মেলে রাখে, (আবার) এক সময় (তা) গুটিয়েও নেয়। (তখন) পরম দয়ালু আল্লাহ তা'আলা ই এদের (মহাশূন্যে) স্থির করে রাখেন (হ্যাঁ একমাত্র আল্লাহ তা'আলা ই); তিনি (তাঁর সৃষ্টির ছোটো বড়ো) সব কিছুই দেখেন।

২০. বলো তো, তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যার কাছে (এমন) একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী আছে, (যা দিয়ে) তারা অসীম দয়ালু আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমাদের সাহায্য করবে? (আসলে) এ অস্বীকারকারী ব্যক্তিরা (হামেশাই)বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত থাকে,

২১. যদি তিনি তোমাদের জীবিকা (-র উপকরণ সরবরাহ বন্ধ করে দেন, তাহলে (এখানে) এমন (দ্বিতীয়) আর কে আছে যে তোমাদের (পুনরায়) রেযেক সরবরাহ করতে পারবে? এরা তো বরং (মনে হয় আল্লাহ তা'আলা র) বিদ্রোহ এবং গোঁড়ামিতেই (অবিচল হয়ে) রয়েছে।

২২. যে ব্যক্তি যমীনের (ওপর দিয়ে) উপুড় হয়ে মুখে ভর দিয়ে চলে সে ব্যক্তি অধিক পরিমাণে হেদায়াতপ্রাপ্ত, না যে (ব্যক্তি যমীনে স্বাভাবিকভাবে) সঠিক পথ ধরে চলে সে (বেশী হেদায়াতপ্রাপ্ত)?

২৩. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলে দাও (হ্যাঁ), তিনিই তোমাদের পয়দা করেছেন, তিনি তোমাদের (শোনার ও দেখার জন্যে) কান এবং চোখ দিয়েছেন, আরো দিয়েছেন (চিন্তা করার মতো) একটি অন্তর; কিন্তু তোমরা খুব কমই (এসব দানের) কৃতজ্ঞতা আদায় করো।

২৪. (এদের আরো) বলো, তিনিই এ ভূখণ্ডে তোমাদের (সর্বত্র) ছড়িয়ে রেখেছেন, আবার (একদিন চারদিক থেকে) তাঁর ই সম্মুখে তোমাদের সবাইকে জড়ো করা হবে ।

২৫. তারা বলে, তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে (বলো) কবে এটা (সংঘটিত) হবে?
২৬. তুমি এদের বলো, (এ) তথ্য তো একমাত্র আল্লাহ তা'আলার কাছেই রয়েছে, আমি তো একজন সুস্পষ্ট সাবধানকারী মাত্র!

২৭. যখন (সত্যি সত্যিই) এ (প্রতিশ্রুতি)-টি তারা (সংঘটিত হতে) দেখবে, যারা (দুনিয়ার জীবনে) অস্বীকার করেছিলো, তখন তাদের সবার মুখমণ্ডল বিকৃত হয়ে যাবে এবং (তাদের তখন) বলা হবে, এ হচ্ছে সেই (মহাধ্বংস), যাকে তোমরা চ্যালেঞ্জ করতে !

২৮. তুমি বলো, তোমরা কি এ কথা ভেবে দেখেছো, আল্লাহ তা'আলা যদি আমাকে এবং আমার সংগী সাথীদের ধ্বংস করে দেন, কিংবা (ধ্বংস না করে) তিনি যদি আমাদের ওপর দয়া প্রদর্শন করেন (সবই হবে তাঁর ইচ্ছাধীন), কিন্তু (আল্লাহ তা'আলা কে) যারা অস্বীকার করেছে তাদের (কেয়ামতের দিন) এ ভয়াবহ আযাব থেকে কে বাঁচাবে?

২৯. তুমি এদের বলো (হ্যাঁ, সেদিন বাঁচাতে পারেন একমাত্র) দয়াময় আল্লাহ তা'আলাই, তাঁর ওপর আমরা ঈমান এনেছি এবং আমরা তাঁর ওপরই নির্ভর করেছি (হ্যাঁ), অচিরেই তোমরা জানতে পারবে (আমাদের মধ্যে) কে সুস্পষ্ট গোমরাহীর মাঝে নিমজ্জিত ছিলো?

৩০. (হে নবী,) তুমি (এদের) জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি ভেবে দেখেছো, তোমাদের ( যমীনের বুকে অবস্থিত) পানি যদি কখনো উধাও হয়ে যায়, তাহলে কে তোমাদের জন্যে এ (পানির) প্রবাহধারা পুনরায় বের করে আনবে?


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url