আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সুরা আত তাহরীম’এর বাংলা অনুবাদ | সুরা আত তাহরীম | Surah At Tahrim | التّحريم
সুরা আত তাহরীম’এর বাংলা অনুবাদ
সুরা আত তাহরীম, মদীনায় অবতীর্ণ আয়াত ১২, রুকু ২
সুরা আত তাহরীম
রহমান রহীম আল্লাহ তা'আলা র নামে
১. হে নবী, আল্লাহ তা'আলা তোমার জন্যে যা হালাল করেছেন তা তুমি (কসম করে) নিজের ওপর কেন হারাম করছো, তুমি কি (এর মাধ্যমে) তোমার স্ত্রীদের খুশী কামনা করতে চাও? (তেমন কিছু হলে আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো, কারণ) আল্লাহ তা'আলা ক্ষমার আধার ও পরম দয়ালু।
২. আল্লাহ তা'আলা তো তোমাদের শপথ থেকে রেহাই পাবার জন্যে (কাফফারার) একটা পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন, (মূলত) আল্লাহ তা'আলা ই হচ্ছেন তোমাদের একমাত্র সহায়, তিনিই সর্বজ্ঞ, তিনিই প্রজ্ঞাময়।
৩. যখন (আল্লাহর) নবী তার স্ত্রীদের একজনকে (একান্ত) চুপিসারে কিছু একটা কথা বললো এবং সে (তা অন্যদের কাছে) প্রকাশ করে দিলো, আল্লাহ তা'আলা তার এ বিষয়টা নবীকে (ওহীর মাধ্যমে) জানিয়ে দিলেন, (তখন) রসূল কিছু কথা (গোপনীয়তা প্রকাশকারী স্ত্রীকে) জানিয়ে দিলো, (আবার) কিছু কথা এড়িয়েও গেলো | অতঃপর নবী যখন তার সে স্ত্রীর কাছ থেকে (সমগ্র বিষয়টা জানতে চাইলো, তখন সে বললো, আপনাকে এ খবরটা কে জানালো; নবী বললো, আমাকে জানিয়েছেন (সেই মহান আল্লাহ তা'আলা ), যিনি সর্বজ্ঞ ও সম্যক
জ্ঞাত।
৪. (যে দুজন স্ত্রী এর সাথে জড়িত, নবী তাদের উভয়কে ডেকে বললো,) তোমরা দুজন যদি আল্লাহর কাছে তাওবা করে নাও কেননা তোমাদের উভয়ের মন অন্যায় ও বাঁকা পথের দিকে (কিছুটা) ঝুঁকে পড়েছিলো (তাহলে অবশ্যই আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন), আর যদি তোমরা উভয়ে তার বিরুদ্ধে একে অপরের পৃষ্ঠপোষকতা করো (তাহলে জেনে রাখো), আল্লাহ তা'আলা ই তাঁর (নবীর) সহায়, তাছাড়াও তাঁর সাথে রয়েছে জিবরাঈল (ফেরেশতা) ও নেককার মুসলমানের দল, এরপরও আল্লাহর সমগ্র ফেরেশতাকুল তার সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে।
৫. (আজ) নবী যদি তোমাদের তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তার মালিক তোমাদের বদলে এমন সব স্ত্রী তাকে দিতে পারেন, যারা তোমাদের চাইতে হবে উত্তম, যারা হবে আত্মসমর্পণকারী, বিশ্বস্ত, বিনয়াবনতা, অনুশোচনাকারী, অনুগত, রোযাদার, (হতে পারে তারা) কুমারী, (হতে পারে) অকুমারী।
৬. হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবার পরিজনদের (জাহান্নামের সেই কঠিন) আগুন থেকে বাঁচাও, তার জ্বালানি হবে মানুষ আর পাথর, (সে) জাহান্নামের (প্রহরা যাদের) ওপর (অর্পিত), সেসব ফেরেশতা সবাই হচ্ছে নির্মম ও কঠোর, তারা (দন্ডাদেশ জারি করার ব্যাপারে) আল্লাহর কোনো আদেশই অমান্য করবে না, তারা তাই করবে যা তাদের করার জন্যে আদেশ করা হবে ।
৭. (সেদিন অস্বীকারকারীদের তারা বলবে, হে কাফেররা, আজ তোমরা (দোষ ছাড়ানোর জন্যে) কোনো রকম অজুহাত তালাশ করো না; (আজ) তোমাদের সে বিনিময়ই দেয়া হবে যা তোমরা দুনিয়ায় করে এসেছো।
৮. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা (নিজেদের গুনাহ খাতার জন্যে) আল্লাহর দরবারে তাওবা করো একান্ত খাঁটি তাওবা; আশা করা যায় (এর ফলে) তোমাদের মালিক (আল্লাহ তা'আলা ) তোমাদের গুনাহসমুহ ক্ষমা করে দেবেন এবং এর বিনিময়ে (পরকালে) তিনি তোমাদের প্রবেশ করাবেন এমন (সুরমা) জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হবে (সুপেয়) ঝর্ণাধারা, সেদিন আল্লাহ তা'আলা (তাঁর) নবী এবং তার সাথী ঈমানদারদের অপমানিত করবেন না, (সেদিন) তাদের (ঈমানের) জ্যোতি তাদের সামনে ও তাদের ডান পাশ দিয়ে (বিচ্ছুরিত হয়ে এমনভাবে) ধাবমান হবে (যে, সর্বদিক থেকেই তাদের এ আলো পর্যবেক্ষণ করা যাবে), তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের জন্যে আমাদের (ঈমানের) জ্যোতিকে (জান্নাতের জ্যোতি দিয়ে আজ তুমি) পূর্ণ করে দাও, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও, অবশ্যই তুমি সব কিছুর ওপর একক ক্ষমতাবান।
৯. হে নবী, তুমি কাফের ও মোনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদ করো এবং তাদের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করো; (কেননা) তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম; আর তা (হচ্ছে) এক নিকৃষ্ট ঠিকানা।
১০. আল্লাহ তা'আলা কাফেরদের জন্যে নুহ ও লুতের স্ত্রীদের উদাহরণ পেশ করছেন; তারা দুজনই ছিলো আমার দুজন নেক বান্দার স্ত্রী, কিন্তু তারা উভয়েই সে দু'জন বান্দার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, অতএব আল্লাহর (আযাব) থেকে তারা কোনোক্রমেই এদের বাঁচাতে পারলো না, বরং (তাদের ব্যাপারে আল্লাহর) হুকুম (ঘোষিত) হলো, তোমরা (আজ) প্রবেশ করো জাহান্নামের আগুনে, যারা এখানে প্রবেশ করেছে তাদের সবার সাথে ।
১১. (একইভাবে) আল্লাহ তা'আলা মোমেনদের জন্যে ফেরাউনের স্ত্রীকে (অনুকরণযোগ্য) এক উদাহরণ হিসেবে পেশ করেন, (সে প্রার্থনা করেছিলো) হে মালিক, জান্নাতে তোমার পাশে তুমি আমার জন্যে একখানা ঘর বানিয়ে দিয়ো, আর (দুনিয়ার এ ঘরেও) তুমি আমাকে ফেরাউন ও তার (যাবতীয় কর্মকান্ড থেকে বাঁচিয়ে রেখো, তুমি আমাকে উদ্ধার করো এ যালেম সম্প্রদায় (-এর যাবতীয় অনাচার) থেকে।
১২. (আল্লাহ তা'আলা মোমেনদের জন্যে আরো দৃষ্টান্ত পেশ করছেন) এমরানের মেয়ে মারইয়ামের, যে (আজীবন) তার সতীত্ব রক্ষা করেছে, অতঃপর (একদিন) আমি আমার (সৃষ্ট) রূহগুলো থেকে একটি (রূহ) তার মধ্যে ফুঁকে দিলাম, সে তার মালিকের কথা ও তাঁর (প্রেরিত) কেতাবসমুহের ওপর পুরোপুরিই বিশ্বাস স্থাপন করেছে; (সত্যিই) সে ছিলো আমার একান্ত অনুগত বান্দাদেরই একজন!
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url