আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ক্বালাম’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ক্বালাম | Surah Al Qalam | القلم


সূরা আল ক্বালাম’এর বাংলা অনুবাদ

সূরা আল ক্বালাম, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৫২, রুকু ২

সূরা আল ক্বালাম



রহমান রহীম আল্লাহ তা'আলার নামে

১. নূ-ন-, শপথ (লেখার মাধ্যম) কলমের, (আরো শপথ এ কলম দিয়ে) তারা যা লিখে রাখছে তার,

২. তোমার মালিকের (অসীম) দয়ায় তুমি পাগল নও,

৩. তোমার জন্যে অবশ্যই এমন এক পুরস্কার রয়েছে যা কোনোদিনই নিশেষ হবে না,

৪. নিঃসন্দেহে তুমি মহান চরিত্রের ওপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছো ।

৫. সেদিন খুব দূরে নয় যখন) তুমি ও (তোমাকে যারা পাগল বলে) তারা সবাই দেখতে পাবে যে,

৬. তোমাদের মধ্যে (আসলে) কে বিকারগ্রস্ত (পাগল) ছিলো!

৭. তোমার মালিক ভালো করেই জানেন (তোমাদের মধ্যে) কোন ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে, (আবার) যারা সঠিক পথের ওপর রয়েছে আল্লাহ তা'আলা তাদের সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকেফহাল রয়েছেন।

৮. অতএব তুমি এ মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের অনুসরণ করো না।

৯. তারা (তো তোমার এ নমনীয়তাটুকুই) চায় যে, তুমি (তাদের কিছু গ্রহণ করো! অতঃপর তারাও (তোমার কিছু) গ্রহণ করবে।

১০. যারা বেশী বেশী কসম করে (পদে পদে) লাঞ্ছিত হয়, এমন লোকদের তুমি কখনো অনুসরণ করো না,

১১. যে (বেহুদা) গালমন্দ করে, (খামাখা মানুষদের) অভিশাপ দেয় এবং চোগলখোরী করে বেড়ায়,

১২. যে ভালো কাজে বাধা সৃষ্টি করে, (অন্যায়ভাবে) সীমালংঘন করে, (সর্বোপরি) যে পাপিষ্ঠ,

১৩. যে কঠোর স্বভাবের অধিকারী, এরপর যে (জন্ম পরিচয়ের দিক থেকেও) জারজ,

১৪. যেহেতু সে (বিপুল) ধনরাশি ও (অনেকগুলো) সন্তান সন্ততির অধিকারী;

১৫. এ লোককে যখন আমার আয়াতসমূহ পড়ে শোনানো হয় তখন সে বলে, এগুলো তো হচ্ছে আগের দিনের গল্প কাহিনী মাত্র!

১৬.(এ অহংকারী ব্যক্তিটিকে তুমি জানিয়ে রাখো,) অচিরেই আমি তার শুড়ে দাগ দিয়ে (তাকে চিহ্নিত করে) দেবো।

১৭. অবশ্যই আমি এ (জনপদের) মানুষদের পরীক্ষা করেছি, যেমনি (অতীতে) আমি একটি ফলের বাগানের কতিপয় মালিককে পরীক্ষা করেছিলাম, (সে পরীক্ষাটা ছিলো, এমন যে, একদিন) তারা সবাই (একযোগে) শপথ করে বলেছিলো, অবশ্যই তারা সকাল বেলায় গিয়ে (বাগানের) ফল পাড়বে,

১৮. (এ সময়) তারা (আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছা ও অভিপ্রায় সম্বলিত) কিছুই (এর সাথে) যোগ করেনি।

১৯. তখন (ভোর হতে না হতেই) তোমার মালিকের পক্ষ থেকে তার ওপর এক বিপর্যয় এসে পড়লো, (তখনো) তারা ছিলো গভীর ঘুমে (বিভোর)।

২০. অতঃপর সকাল বেলায় তা মধ্যরাতের কৃষ্ণ বর্ণের মতো কালো হয়ে গেলো।

২১. (এদিকে) সকাল হতেই তারা (এই বলে) একে অপরকে ডাকাডাকি করতে লাগলো,

২২. তোমরা যদি (সত্যিই) ফল আহরণ করতে চাও তাহলে সকাল সকাল নিজেদের বাগানের দিকে চলো।

২৩. (অতঃপর) তারা সেদিকে রওনা দিলো, (পথের মধ্যে) ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগলো,

২৪. কোনো অবস্থায়ই যেন আজ কোনো (দুস্থ ও) মেসকীন ব্যক্তি তোমাদের ওপর ( টেক্কা) দিয়ে বাগানে এসে প্রবেশ করতে না পারে,

২৫. তারা সকাল বেলায় সংকল্পবদ্ধ হয়ে এসে হাযির হলো, (যেন) তারা নিজেরাই (আজ সব ফসল তুলতে) সক্ষম হয়।

২৬. অতঃপর যখন তারা সে (বাগানের) দিকে তাকিয়ে দেখলো, তখন (হতভম্ব হয়ে) বলতে লাগলো (একি! এটা তো আমাদের বাগান নয়), আমরা নিশ্চয়ই পথভ্রষ্ট (হয়ে পড়েছি),

২৭. (না, আসলেই) আমরা (আজ) মাহরূম হয়ে গেছি!

২৮. (এ মুহূর্তে) তাদের মধ্যকার একজন ভালো মানুষ (তাদের) বললো, আমি কি তোমাদের বলিনি (সব কাজের ব্যাপারে আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে), কতো ভালো হতো যদি তোমরা (আগেই আল্লাহ তা'আলার মহান নামের) তাসবীহ পড়ে নিতে!

২৯. (এবার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে) তারা বললো, (সত্যিই) আমাদের মালিক আল্লাহ তা'আলা অনেক মহান, অনেক পবিত্র, (তাঁর নাম না নিয়ে) আমরা (আসলেই) যালেম হয়ে পড়েছিলাম।

৩০. (এভাবে) তারা পরস্পর পরস্পরকে তিরস্কার করে একে অপরের ওপর দোষারোপ করতে লাগলো ।

৩১. তারা (আরো) বললো, দুর্ভাগ্য আমাদের, (মূলত) আমরা তো সীমালংঘনকারী (হয়ে পড়েছি)।

৩২. আশা করা যায় আমাদের মালিক (পার্থিব জিনিসের) বদলে (আখেরাতে) এর চাইতে উৎকৃষ্ট (কিছু আমাদের) দান করবেন, আমরা আমাদের মালিকের দিকেই ফিরে যাচ্ছি।

৩৩. আযাব এভাবেই (নাযিল হয়, আর পরকালের আযাব, তা তো অনেক গুরুতর। কতো ভালো হতো যদি তারা তা জানতে পেতো!

৩৪. (অপরদিকে) যারা আল্লাহ তা'আলা কে ভয় করে চলে তাদের জন্যে অবশ্যই তাদের মালিকের কাছে (অফুরন্ত) নেয়ামতে ভরপুর জান্নাত রয়েছে ।

৩৫. যারা আমার আনুগত্য করে তাদের সাথে আমি কি অপরাধীদের মতো (একই ধরনের) আচরণ করবো?

৩৬. এ কি হলো তোমাদের । (আমার ইনসাফ সম্পর্কে) এ কি সিদ্ধান্ত তোমরা করছো?

৩৭. তোমাদের কাছে কি এমন কোনো আসমানী কেতাব আছে যাতে তোমরা (এ কথাটা) পড়েছো যে,

৩৮. সেখানে তোমাদের জন্যে সে ধরনের সব কিছুই সরবরাহ করা হবে, যা তোমরা তোমাদের জন্যে পছন্দ করবে,

৩৯. না আমি তোমাদের সাথে কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছি এমন চুক্তি, যা কেয়ামত পর্যন্ত মানা বাধ্যতামূলক হবে, এর মাধ্যমে তোমরা যা কিছু দাবী করো তাই তোমরা পাবে,

৪০. তুমি এদের জিজ্ঞেস করো, তোমাদের মধ্যে কে এ দায়িত্ব নিতে পারে,

৪১. (নিজেরা না পারলে) তাদের কি (অন্য কোনো) অংশীদার আছে? যদি তারা সত্যবাদী হয় তাহলে তারা তাদের অংশীদারদের সবাইকে নিয়ে আসুক!

৪২. (স্মরণ করো,) যেদিন (যাবতীয়) রহস্য উদ্ঘাটিত হয়ে পড়বে, তখন তাদের সাজদাবনত হওয়ার আহ্বান জানানো হবে, এসব (হতভাগ্য) ব্যক্তি (কিন্তু সেদিন সাজদা করতে) সক্ষম হবে না,

৪৩. দৃষ্টি তাদের নিম্নগামী হবে, অপমান তাদের ভারাক্রান্ত করে রাখবে; (দুনিয়ায় এমনি করে) যখন তাদের আল্লাহর সম্মুখে সাজদা করতে ডাকা হয়েছিলো, (তখন) তারা সুস্থ ( ও সক্ষম) ছিলো।

৪৪. (হে নবী,) অতঃপর তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, যে আমার এ কেতাব অস্বীকার করে (তার থেকে আমি প্রতিশোধ নেবো), আমি ধীরে ধীরে এদের (এমন ধ্বংসের) দিকে ঠেলে নিয়ে যাবো যে, এরা তার কিছুই টের পাবে না,

৪৫. আমি এদের অবকাশ দিয়ে রাখি, (অপরাধীদের ধরার) আমার এ কৌশল অত্যন্ত কার্যকর।

৪৬. তুমি কি এদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক দাবী করছো যে, এরা তার দন্ডভারে একেবারে অচল হয়ে পড়েছে?

৪৭. না তাদের কাছে অজানা জগতের কোনো খবর রয়েছে যা তারা লিখে রাখে!

৪৮. (হে নবী,) তুমি (বরং) তোমার মালিকের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত আসার জন্যে ধৈর্য ধারণ করো এবং (এ ব্যাপারে) মাছের ঘটনার সাথী (নবী ইউনুস)-এর মতো হয়ো না। যখন সে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে আল্লাহ তা'আলাকে ডেকেছিলো;

৪৯. তখন যদি তার মালিকের অনুগ্রহ তার ওপর না থাকতো, তাহলে সে উন্মুক্ত সাগরের তীরে পড়ে থাকতো এবং (এজন্যে) সে নিজেই দায়ী হতো।

৫০. অতঃপর তার মালিক তাকে বাছাই করলেন এবং তিনি তাকে (তাঁর ) নেক বান্দাদের (কাতারে) শামিল করে নিলেন।

৫১. কাফেররা যখন আল্লাহর কেতাব শোনে তখন এমনভাবে তাকায় যে, এক্ষুণি বুঝি এরা নিজেদের দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে আছড়ে ঘায়েল করে দেবে, তারা একথাও বলে, সে (কেতাবের বাহক) একজন পাগল।

৫২. অথচ (এরা জানে না,) এ কেতাব তো মানবমন্ডলীর জন্যে একটি উপদেশ বৈ কিছুই নয়!


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url