আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আস ছাফ্ফাত’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আস ছাফ্ফাত | Surah As Saffat | الصافات



সূরা আস ছাফ্ফাত’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আস ছাফ্ফাত, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ১৮২, রুকু ৫

সূরা আস ছাফ্ফাত



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. শপথ (সে ফেরেশতাদের) যারা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ।

২. শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা সজোরে ধমক দেয়,

৩. শপথ (সেসব ফেরেশতার) যারা (সদা আল্লাহর) যেকের তেলাওয়াত করে,

৪. অবশ্যই তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন;

৫. তিনি আসমান যমীন ও এ দু'য়ের মাঝখানে অবস্থিত সবকিছুরও মালিক, (তিনি আরো) মালিক (সুর্যোদয়ের স্থান) পুর্বাচলের;

৬. আমি (তোমাদের) নিকটবর্তী আসমানকে (নয়নাভিরাম) নক্ষত্ররাজি দ্বারা সুসজ্জিত করে রেখেছি;

৭. (তাকে) আমি হেফাযত করেছি প্রত্যেক না- ফরমান শয়তান থেকে,

৮. ফলে তারা ঊর্ধ্বজগতের (কথাবার্তার) কিছুই শুনতে পায় না, (কিছু শুনতে চাইলেই) প্রত্যেক দিক থেকে তাদের ওপর উল্কা নিক্ষিপ্ত হয়,

৯. এই তাড়িয়ে দেয়াই (শেষ) নয়, তাদের জন্যে অবিরাম শাস্তিও রয়েছে,

১০. (তা সত্ত্বেও) যদি কোনো (শয়তান) গোপনে হঠাৎ করে কিছু শুনে ফেলতে চায়, তখন জ্বলন্ত উল্কাপিন্ড সাথে সাথেই তার পশ্চাদ্ধাবন করে ।

১১. (হে নবী,) তুমি এদের কাছে জিজ্ঞেস করো, তাদের সৃষ্টি করা বেশী কঠিন, না (আসমান যমীনসহ) অন্য সব কিছু, যা আমি পয়দা করেছি (তার সৃষ্টি বেশী কঠিন); এ (মানুষ)-দের তো আমি (সামান্য কতোটুকু) আঠাল মাটি দিয়ে পয়দা করেছি।

১২. (হে নবী,) তুমি (এদের কথায়) বিস্ময়বোধ করছো, অথচ (তোমার কথা নিয়েই) ওরা ঠাট্টা বিদ্রূপ করছে,

১৩. এদের যখন উপদেশ দেয়া হয়, তখন তারা (তা) স্মরণ করে না,

১৪. (আবার) কোনো নিদর্শন দেখলে (তা নিয়ে) উপহাস করে,

১৫. তারা বলে, এটা তো সুস্পষ্ট যাদু ছাড়া আর কিছুই নয়,

১৬. (তারা প্রশ্ন তোলে, এ আবার কেমন কথা,) আমরা মরে গিয়ে হাড় ও মাটিতে পরিণত হয়ে যাবো, তখনও কি আমাদের (পুনরায়) জীবিত করা হবে?

১৭. আমাদের পিতৃপুরুষদেরও (এভাবে ওঠানো হবে ?

১৮. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, হ্যাঁ (অবশ্যই, সেদিন) তোমরা লাঞ্ছিত হবে,

১৯. যখন (কেয়ামত) হবে, (তখন) একটি মাত্র প্রচন্ড গর্জন হবে, সাথে সাথেই এরা (সবকিছু) দেখতে পাবে।

২০. (যারা অস্বীকার করেছিলো) তারা (সেদিন এটা দেখে) বলবে, পোড়া কপাল আমাদের, এটাই তো হচ্ছে (সেই) প্রতিদান পাওয়ার দিন!

২১. (তাদের বলা হবে) হ্যাঁ, এটাই হচ্ছে চূড়ান্ত ফয়সালার দিন, যাকে তোমরা (নিরন্তর) মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে ।

২২. (ফেরেশতাদের আদেশ দেয়া হবে যাও,) তোমরা যালেমদের এবং তাদের সংগী-সংগিনীদের (ধরে ধরে) জমা করো, তাদের (দোসরদের)-ও, যারা তাদের গোলামী করতো (এদের সবাইকে এক জায়গায় একত্র করো),

২৩. আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে (যাদের এরা মাবুদ বানাতো) তাদেরও (এক সাথে) জাহান্নামের রাস্তা দেখিয়ে দাও।

২৪. হ্যাঁ, (সেখানে পাঠাবার আগে) তাদের (এখানে) একটুখানি দাঁড় করাও, তারা অবশ্যই (আজ) জিজ্ঞাসিত হবে, 

২৫. তোমাদের এ কী হলো, (জবাব দেয়ার সময়) তোমরা আজ একে অপরকে সাহায্য করছো না যে!

২৬. (না,) আজ তো (দেখছি) এরা সবাই সত্যি সত্যিই আত্মসমর্পণকারী (বনে গেছে)!

২৭. (এ সময়) তারা একে অপরের দিকে মুখ করে পরস্পরকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকবে |

২৮. (দুর্বল দলটি শক্তিশালী দলকে) বলবে, তোমরাই তো তোমাদের ক্ষমতা নিয়ে আমাদের কাছে আসতে,

২৯. তারা বলবে (আমাদের দোষারোপ করছো কেন), তোমরা তো আদৌ (আল্লাহতে) বিশ্বাসীই ছিলে না,

৩০. তোমাদের ওপর আমাদের কোনো (জবরদস্তিমূলক) কর্তিত্বও তো ছিলো না, বরং তোমরা নিজেরাই ছিলে মারাত্মক সীমালংঘনকারী।

৩১. (এ সময় তাদের উভয়ের পক্ষ থেকে ঘোষণা হবে) আজ আমাদের (উভয়ের) ওপর আমাদের মালিকের ঘোষণাই সত্য হয়েছে, (আজ) আমরা (উভয়েই জাহান্নামের) শাস্তি আস্বাদনকারী ।

৩২. আমরা (আসলেই) তোমাদের বিভ্রান্ত করেছিলাম, আমরা নিজেরাও ছিলাম বিভ্রান্ত!

৩৩. সেদিন তারা (সবাই) এই আযাবে সমভাগী হবে।

৩৪. আমি না-ফরমান লোকদের সাথে এ ধরনের আচরণই করে থাকি।

৩৫. এরা এমন (বিদ্রোহী) ছিলো, যখন এদের বলা হতো, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই, তখন তারা অহংকারে ফেটে পড়তো,

৩৬. এরা বলতো, আমরা কি একজন পাগল কবিয়ালের কথায় আমাদের মাবুদদের (আনুগত্য ) ছেড়ে দেবো?

৩৭. (অথচ আমার নবী কোনো কাব্য নিয়ে আসেনি, বরং সে এসেছে সত্য (দ্বীন) নিয়ে এবং সে (আগের) নবীদের সত্যতাও স্বীকার করছে।

৩৮. (হে অপরাধীরা,) তোমাদের (আজ) অবশ্যই (জাহান্নামের) ভয়াবহ আযাব ভোগ করতে হবে,

৩৯. তোমরা যা কিছু (দুনিয়ায়) করতে (আজ) তোমাদের কেবল তারই প্রতিফল দান করা হবে,

৪০. তবে আল্লাহ তায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দাদের কথা আলাদা,

৪১. তাদের জন্যে (আল্লাহ তায়ালার) সুনির্দিষ্ট (উত্তম) রেযেকের ব্যবস্থা থাকবে,

৪২. থাকবে রকমারি ফলমুল, (তদুপরি) তারা হবে মহাসম্মানে সম্মানিত,

৪৩. নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতে (তারা অবস্থান করবে),

৪৪. তারা পরস্পর মুখোমুখি হয়ে (মর্যাদার) আসনে সমাসীন থাকবে ।

৪৫. ঘুরে ঘুরে বিশুদ্ধ সুরা তাদের পরিবেশন করা হবে,

৪৬. শুভ্র ও সমুজ্জ্বল, যা (হবে) পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু,

৪৭. তাতে কোনো রকম মাথা ঘুরানির মতো ক্ষতিকর কিছু থাকবে না এবং তার কারণে তারা মাতালও হবে না ।

৪৮. তাদের সাথে (আরো) থাকবে সলজ্জ, নম্র ও আয়তলোচনা তরুণীরা,

৪৯. তারা যেন (সযত্নে লুকিয়ে রাখা ডিমের মতো উজ্জ্বল গৌর বর্ণ (সুন্দরী)।

৫০. অতঃপর এর (জান্নাতের) অধিবাসীরা একজন আরেক জনের দিকে ফিরে (নিজেদের হাল অবস্থা) জিজ্ঞেস করবে।

৫১. (এ সময়) তাদের মাঝ থেকে একজন বলে ওঠবে, (হ্যাঁ, দুনিয়ার জীবনে) আমার একজন সাথী ছিলো,

৫২. যে (আশ্চর্য হয়েই আমাকে) বলতো, তুমিও কি (কেয়ামত) বিশ্বাসীদের একজন?

৫৩. (তুমিও কি বিশ্বাস করো,) আমরা যখন মরে যাবো এবং যখন হাড্ডি ও মাটিতে পরিণত হয়ে যাবো, তখন (আমরা পুনরুত্থিত হবো এবং) আমাদের সবাইকে (আমাদের কাজকর্মের) প্রতিফল দেয়া হবে?

৫৪. (এ সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে ডাক আসবে, আচ্ছা) তোমরা কি একটু উঁকি দিয়ে (তোমাদের সে সাথীকে এক নযর) দেখতে চাও?

৫৫. অতঃপর সে (একটু ঝুঁকে) তাকে দেখতে পাবে, (সে রয়েছে) জাহান্নামের (ঠিক মাঝখানে,

৫৬. (তাকে আযাবে জ্বলতে দেখে) সে বলবে, আল্লাহ তায়ালার কসম, (দুনিয়াতে) তুমি তো আমাকে প্রায় ধ্বংসই করে ফেলেছিলে,

৫৭. (আমার ওপর) আমার মালিকের অনুগ্রহ না থাকলে আমিও আজ (তোমার মতো আযাবে) গ্রেফতার করা এ (লোকদের) দলে শামিল থাকতাম।

৫৮. (হ্যাঁ, এখন তো) আমাদের আর মৃত্যু হবে না!

৫৯. অবশ্য আমাদের প্রথম মৃত্যুর কথা আলাদা, (এখন তো) আমাদের (আর কোনো রকম) আযাবও দেয়া হবে না।

৬০. (সমস্বরে তারা সবাই বলবে,) অবশ্যই এটা হচ্ছে এক বড়ো ধরনের সাফল্য।

৬১. এ ধরনের (মহা সাফল্যের) জন্যে কর্ম সম্পাদনকারীদের অবশ্যই কাজ করে যাওয়া উচিত ।

৬২. (বলো তো! আল্লাহর বান্দাদের জন্যে) এ মেহমানদারী ভালো না (আযাবের) যাক্কুমম বৃক্ষ (ভালো)?

৬৩. যালেমদের জন্যে আমি তা বিপদস্বরূপ বানিয়ে রেখেছি ।

৬৪. (মুলত) তা হচ্ছে এমন একটি গাছ, যা জাহান্নামের তলদেশ থেকে উদগত হয়,

৬৫. তার ফলগুলো এমন (বিশ্রী), মনে হবে তা বুঝি (একেকটা) শয়তানের মাথা ;

৬৬. (যারা জাহান্নামের অধিবাসী) তারা এ থেকেই ভক্ষণ করবে এবং এ দিয়েই তাদের পেট ভর্তি করবে;

৬৭. অতঃপর তার ওপর ফুটন্ত পানি (ও পুঁজ) মিলিয়ে তাদের (পান করার জন্যে) দেয়া হবে,

৬৮. তারপর নিঃসন্দেহে তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল হবে (অতলান্ত) জাহান্নামের দিকে ।

৬৯. নিঃসন্দেহে তারা তাদের মাতাপিতাকে গোমরাহ হিসেবে পেয়েছে,

৭০. তারপরেও (নির্বিচারে) তারা তাদের (গোমরাহ পিতা মাতাদের) পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলেছে।

৭১. তাদের আগে (তাদের) পুর্ববর্তীদের অধিকাংশ লোকও (এভাবে) গোমরাহ হয়ে গিয়েছিলো,

৭২. তাদের মধ্যেও আমি সতর্ককারী (নবী) পাঠিয়েছিলাম।

৭৩. অতএব (হে নবী,) তুমি একবার (চেয়ে) দেখো, যাদের (এভাবে) সতর্ক করা হয়েছিলো তাদের কী (ভয়াবহ ) পরিণাম হয়েছে,

৭৪. অবশ্য আল্লাহ তায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দাদের কথা আলাদা (তারা আযাব থেকে একান্ত নিরাপদ)।

৭৫. (এক সময়) নুহও (সাহায্য চেয়ে) আমাকে ডেকেছিলো, (তার জন্যে) কতো উত্তম সাড়াদানকারী ( ছিলাম) আমি,

৭৬. তাকে এবং তার পরিবার পরিজনদের আমি এক মহাসংকট থেকে উদ্ধার করেছি,

৭৭. তারই বংশধরদের আমি (দুনিয়ার বুকে) অবশিষ্ট রেখে দিয়েছি,

৭৮. অনাগত মানুষদের মাঝে আমি তার (উত্তম) স্মরণ অব্যাহত রেখেছি,

৭৯. সৃষ্টিকুলের মাঝে নুহের ওপর সালাম বর্ষিত হোক।

৮০. অবশ্যই আমি এভাবে সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করি ।

৮১. নিঃসন্দেহে সে ছিলো আমার মোমেন বান্দাদের অন্যতম।

৮২. অতঃপর (তার জাতির) অবশিষ্ট (কাফের) সকলকে আমি (বন্যার পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি।

৮৩. নুহের (পথ অনুসারী) দলের মাঝে ইবরাহীমও ছিলো একজন।

৮৪. যখন সে বিশুদ্ধ মনে তার মালিকের কাছে হাযির হয়েছিলো।

৮৫. যখন সে তার পিতা ও তার জাতিকে জিজ্ঞেস করেছিলো (হায়)! তোমরা (সবাই এসব) কিসের পূজা করছো?

৮৬. তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে মনগড়া মাবুদদেরই (পেতে) চাও?

৮৭. (বলো) এ সৃষ্টিকুলের মালিক সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী?

৮৮. অতঃপর সে একবার (সত্যের সন্ধানে) তারকারাজির দিকে তাকালো

৮৯. অতঃপর বললো, সত্যিই আমি অসুস্থ।

৯০. (অতঃপর) লোকেরা (তার থেকে নিরাশ হয়ে) সবাই চলে গেলো ।

৯১. পরে সে (চুপি চুপি) তাদের দেবতাদের (মন্দিরের) কাছে গেলো এবং (দেবতাদের প্রতি তামাশাচ্ছলে ) বললো, কি ব্যাপার (এতো প্রসাদ এখানে পড়ে আছে), তোমরা খাচ্ছো না যে!

৯২. এ কি হলো তোমাদের, তোমরা কি কথাও বলো না?

৯৩. অতঃপর সে ওদের ওপর সবলে আঘাত হানলো।

৯৪. (লোকেরা যখন এটা শুনলো) তখন তারা দৌড়াতে দৌড়াতে তার দিকে ছুটে এলো ।

৯৫. (তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে) সে বললো, তোমরা কি এমন কিছুর পূজা করো, যাদের তোমরা নিজেরাই (পাথর) খোদাই করে নির্মাণ করো,

৯৬. অথচ আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং (সৃষ্টি করেছেন) তোমরা যা কিছু (মাবুদ) বানাও তাদেরও।

৯৭. (এ কথা শুনে) তারা (একজন আরেকজনকে) বললো, তার জন্যে একটি অগ্নিকুন্ড প্রস্তুত করো (এবং তাতে আগুন জ্বালাও), অতঃপর (সে) জ্বলন্ত আগুনে তাকে নিক্ষেপ করো।

৯৮. তারা (এর মাধ্যমে আসলে) তার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র আঁটতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি তাদের (চক্রান্ত ব্যর্থ ও) হীন করে দিলাম।

৯৯. এবার সে বললো, আমি এবার আমার মালিকের (রাস্তার) দিকে বেরিয়ে পড়লাম, (আমি বিশ্বাস করি ) অবশ্যই তিনি আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করবেন ।

১০০. (অতঃপর সে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করলো,) হে আমার মালিক, আমাকে তুমি একজন নেক সন্তান দান করো।

১০১. এরপর আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম ।

১০২. সে যখন তার (পিতার) সাথে দৌড়াদৌড়ি করার মতো (বয়সের) অবস্থায় উপনীত হলো, তখন সে (ছেলেকে) বললো, হে বৎস, আমি স্বপ্নে দেখি, আমি (যেন) তোমাকে যবাই করছি, (বলো এ ব্যাপারে) তোমার অভিমত কি? (স্বপ্নের কথা শুনে) সে বললো, হে আমার (স্নেহপরায়ণ) আব্বাজান, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি (অবিলম্বে) তা পালন করুন, ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে (এ সময়েও) ধৈর্যশীলদের মাঝে পাবেন।

১০৩. অতঃপর যখন তারা (পিতাপুত্র) দুজনই (আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার সামনে) আত্মসমর্পণ করলো এবং সে তাকে (যবাই করার উদ্দেশ্যে) কাত করে শুইয়ে দিলো,

১০৪. তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহীম,

১০৫. তুমি (আমার দেখানো) স্বপ্ন সত্য প্রমাণ করেছো, (আমি তোমাদের উভয়কেই মর্যাদাবান করবো, মুলত ) আমি এভাবেই সৎকর্মশীল মানুষদের পুরস্কার দিয়ে থাকি !

১০৬. এটা ছিলো (তাদের উভয়ের জন্যে) একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা মাত্র!

১০৭. (এ কারণেই) আমি তার (ছেলের) পরিবর্তে (আমার নিজের পক্ষ থেকে) একটা বড়ো কোরবানী (-র জন্তু সেখানে) দান করলাম।

১০৮. (অনাগত মানুষদের জন্যে এ বিধান চালু রেখে) তার স্মরণ আমি অব্যাহত রেখে দিলাম।

১০৯. শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীমের ওপর।

১১০. এভাবেই আমি (আমার) নেক বান্দাদের পুরস্কার দিয়ে থাকি!

১১১. অবশ্যই সে ছিলো আমার মোমেন বান্দাদের একজন ।

১১২. (কিছুদিন পর) আমি তাকে (এ মর্মে) ইসহাকের (জন্মের) সুসংবাদ দান করলাম যে, সে (হবে) নবী ও আমার নেক বান্দাদের একজন ।

১১৩. আমি তার ওপর (ও তার সন্তান) ইসহাকের ওপর আমার (অগণিত) বরকত নাযিল করেছি; তাদের উভয়ের বংশধরদের মাঝে কিছু সৎকর্মশীল মানুষ (যেমন) আছে, (তেমনি) আছে কিছু না ফরমান, যারা নিজেদের ওপর নিজেরা যুলুম করে স্পষ্ট অত্যাচারী (হয়ে বসে আছে)!

১১৪. আমি মুসা ও হারূনের ওপর (অনেক) অনুগ্রহ করেছি,

১১৫. আমি তাদের দুজনকে ও তাদের জাতিকে বড়ো (রকমের এক) সংকট থেকে উদ্ধার করেছি,

১১৬. আমি (ফেরাউনের মোকাবেলায়) তাদের (প্রভূত) সাহায্য করেছি, ফলে (এক পর্যায়ে) তারা বিজয়ীও হয়েছে,

১১৭. আমি তাদের উভয়কে বিশদ গ্রন্থ (তাওরাত) দান করেছি,

১১৮. (এর মাধ্যমে) তাদের উভয়কে আমি (দ্বীনের) সহজ পথ বাতলে দিয়েছি,

১১৯. আমি অনাগত মানুষদের মাঝে তাদের উত্তম স্মরণ অব্যাহত রেখেছি,

১২০. সালাম বর্ষিত হোক মুসা ও হারূনের ওপর।

১২১. অবশ্যই আমি নেককার লোকদের এভাবে পুরস্কার দিয়ে থাকি!

১২২. (মুলত) এরা দুজনই ছিলো আমার মোমেন বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।

১২৩. (আমার বান্দা) ইলিয়াসও ছিলো রসুলদের একজন;

১২৪. যখন সে তার জাতিকে (ডেকে) বলেছিলো, তোমরা কি আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করবে না?

১২৫. তোমরা কি 'বাল' দেবতাকেই ডাকতে থাকবে, (আল্লাহ তায়ালা) যিনি শ্রেষ্ঠ স্রষ্টা, তাঁকে (এভাবেই পরিত্যাগ করবে?

১২৬. আল্লাহ তায়ালা যিনি তোমাদের মালিক, মালিক তোমাদের পূর্ববর্তী বাপ দাদাদেরও।

১২৭. কিন্তু তারা তাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করলো, কাজেই অতঃপর তাদের অবশ্যই (দন্ড ভোগ করার জন্যে) হাযির করা হবে,

১২৮. তবে আল্লাহ তায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দাদের কথা আলাদা।

১২৯. আমি অনাগত মানুষদের মধ্যে তার উত্তম স্মরণ বাকী রেখে দিয়েছি,

১৩০. সালাম বর্ষিত হোক ইলিয়াস (-পন্থী নেক বান্দা)-দেরও।

১৩১. (তাদের স্মরণ অব্যাহত রেখে) আমি এভাবেই সৎকর্মপরায়ণ মানুষদের পুরস্কার দিয়ে থাকি !

১৩২. অবশ্যই সে ছিলো আমার নেক বান্দাদের মধ্যে একজন ।

১৩৩. নিঃসন্দেহে লূতও ছিলো রসুলদের একজন;

১৩৪. যখন আমি তাকে এবং তার সকল পরিবার পরিজনকে (একটি পাপী সম্প্রদায়ের ওপর আগত আযাব থেকে) উদ্ধার করেছি,

১৩৫. একজন বৃদ্ধা মহিলা বাদে, (কেননা) সে ছিলো পেছনে পড়ে থাকা ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদেরই অন্তর্ভুক্ত।

১৩৬. অতঃপর অবশিষ্ট সবাইকে আমি বিনাশ করে দিয়েছি।

১৩৭. তোমরা তো (ভ্রমণের সময়) তাদের সে (ধ্বংসাবশেষ) গুলোর ওপর দিয়েই ভোর বেলায় (পথ) অতিক্রম করে থাকো,

১৩৮. (অতিক্রম করো) প্রতি (সন্ধ্যা ও রাতের বেলায়; তবুও কি তোমরা (এ ঘটনা থেকে) কিছু শিক্ষা গ্রহণ করবে না?

১৩৯. ইউনুসও ছিলো রসুলদের একজন;

১৪০. (এটা সে সময়ের কথা) যখন সে পালিয়ে গিয়ে একটি (মাল) ভর্তি নৌযানে পৌঁছুলো,

১৪১. (নৌকাটি অচল হয়ে যাওয়ায়) আরোহীদের মাঝে এ অলক্ষুণে ব্যক্তি কে, (অতঃপর) লটারির মাধ্যমে তা পরীক্ষা করা হলো এবং (ফলাফল অনুযায়ী) সে (ইউনুসই অলক্ষুণে) অপরাধী সাব্যস্ত হলো,

১৪২. অতঃপর একটি (বড়ো আকারের) মাছ এসে তাকে গিলে ফেললো, এ অবস্থায় সে (মাছের পেটে বসে) নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলো ।

১৪৩. যদি সে (তখন) আল্লাহ তায়ালার পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা না করতো,

১৪৪. তাহলে তাকে তার পেটে কেয়ামত পর্যন্ত কাটাতে হতো!

১৪৫. অতঃপর আমি তাকে (মাছের পেট থেকে বের করে) একটি গাছপালাহীন প্রান্তরে নিক্ষেপ করলাম, ( এ সময়) সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো,

১৪৬. (সেখানে) তার ওপর (ছায়া দান করার জন্যে) আমি একটি (লতাবিশিষ্ট) লাউ গাছ উদগত করলাম,

১৪৭. অতঃপর তাকে আমি এক লক্ষ লোকের (জনবসতির) কাছে (নবী বানিয়ে) পাঠালাম; বরং এ সংখ্যা (অন্য হিসেবে ছিলো) আরো বেশী,

১৪৮. এরপর তারা (তার ওপর) ঈমান আনলো, ফলে আমিও তাদের একটি (সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জীবনোপভোগ করতে দিলাম;

১৪৯. (হে নবী,) এদের তুমি জিজ্ঞেস করো, তারা কি মনে করে, তোমাদের মালিকের জন্যে রয়েছে কন্যা সন্তান আর তাদের জন্য রয়েছে (সব) পুত্র সন্তান?

১৫০. আমি কি ফেরেশতাদের মহিলা করেই বানিয়েছিলাম এবং (বানাবার সময়) তারা কি সেখানে উপস্থিত ছিলো?

১৫১. সাবধান, তারা কিন্তু এসব কথা নিজেরা নিজেদের মন থেকেই বানিয়ে বলে,

১৫২. আল্লাহ তায়ালা সন্তান জন্ম দিয়েছেন, (আসলে) ওরা হচ্ছে (সুস্পষ্ট) মিথ্যাবাদী ।

১৫৩. আল্লাহ তায়ালা কি (ছেলেদের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে নিজের জন্যে) কন্যা সন্তানদের পছন্দ করেছেন?

১৫৪. এ কি হলো) তোমাদের? কেমন (অর্থহীন) সিদ্ধান্ত করছো তোমরা?

১৫৫. তোমরা কি (কখনোই কোনো) সদুপদেশ গ্রহণ করবে না?

১৫৬. অথবা আছে কি (এর পক্ষে) তোমাদের কাছে কোনো সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ?

১৫৭. (থাকলে) তোমরা তোমাদের (সে) কেতাব নিয়ে এসো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও!

১৫৮. এ লোকেরা আল্লাহ তায়ালা ও জ্বিন জাতির মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থির করে রেখেছে; অথচ জ্বিনেরা জানে, অন্য বান্দাদের মতোই তারা আল্লাহ তায়ালার আদেশের অধীন এবং তাদের মধ্যে যারা বদকার তাদের অবশ্যই (শাস্তির জন্যে) একদিন উপস্থিত করা হবে।

১৫৯. এরা (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) যেসব (বেহুদা) কথাবার্তা বলে, আল্লাহ তায়ালা তা থেকে পবিত্র ও মহান, 

১৬০. তবে (হ্যাঁ), যারা আল্লাহ তায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দা তারা আলাদা ।

১৬১. অতএব (হে কাফেররা), তোমরা এবং তোমরা যাদের গোলামী করো,

১৬২. (সবাই মিলেও) তাদের (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) বিভ্রান্ত করতে পারবে না,

১৬৩. তোমরা কেবল তাদেরই গোমরাহ করতে পারবে, যারা জাহান্নামের অধিবাসী ।

১৬৪. (ফেরেশতাদের কথা স্বতন্ত্র, কেননা তারা বলেছিলো,) আমাদের মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্যে একটি নির্ধারিত (পবিত্র) স্থান রয়েছে,

১৬৫. আমরা তো (আল্লাহ তায়ালার সামনে) সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান থাকি,

১৬৬. এবং (সদা সর্বদা) আমরা তাঁর পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করি ।

১৬৭. এসব লোকেরাই (কোরআন নাযিলের আগে) বলতো,

১৬৮. পুর্ববর্তী লোকদের কেতাবের মতো যদি আমাদের (কাছেও কোনো) উপদেশ ( গ্রন্থ) থাকতো,

১৬৯. তাহলে (তার বদৌলতে) আমরাও আল্লাহ তায়ালার নিষ্ঠাবান বান্দা হয়ে যেতাম।

১৭০. অতঃপর (যখন তাদের কাছে আল্লাহর কেতাব এলো), তখন তারা তা অস্বীকার করলো, অচিরেই তারা (এ আচরণের পরিণাম) জানতে পারবে ।

১৭১. আমার (খাস) বান্দা রসুলদের ব্যাপারে আমার এ কথা সত্য হয়েছে,

১৭২. তারা অবশ্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে,

১৭৩. এবং আমার বাহিনীই (সর্বশেষে) বিজয়ী হবে।

১৭৪. অতএব (হে নবী), কিছু কালের জন্যে তুমি এদের উপেক্ষা করো,

১৭৫. তুমি তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে থাকো, অচিরেই তারা (বিদ্রোহের পরিণাম) দেখতে পাবে

১৭৬. এরা কি (তাহলে) সত্যিই আমার আযাব ত্বরান্বিত করতে চায়?

১৭৭. (এর আগে) যাদের (এভাবে) সতর্ক করা হয়েছিলো তাদের আঙ্গিনায় যখন শাস্তি নেমে এলো, তখন (গযব নাযিলের সে) সকালটা তাদের জন্যে কতো মন্দ ছিলো!

১৭৮. অতএব (হে নবী), কিছুকালের জন্যে তুমি এদের উপেক্ষা করো,

১৭৯. তুমি (শুধু) ওদের পর্যবেক্ষণই করে যাও, শীঘ্রই ওরা (সত্য প্রত্যাখ্যানের) পরিণাম (নিজেরাই ) প্রত্যক্ষ করবে ।

১৮০. পবিত্র তোমার মালিকের মহান সত্তা, তারা (তাঁর সম্পর্কে) যা কিছু (অর্থহীন) কথাবার্তা বলে, তিনি তা থেকে পবিত্র (অনেক বড়ো, সকল ক্ষমতার একক অধিকারী),

১৮১. (অনাবিল) শান্তি বর্ষিত হোক রসুলদের ওপর,

১৮২. সমস্ত প্রশংসা (নিবেদিত) সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্যে ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url