আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল আনকাবুত’র বাংলা অনুবাদ | সূরা আল আনকাবুত | Surah Al-Ankabut | العنكبوت


সূরা আল আনকাবুত’র বাংলা অনুবাদ


সূরা আল আনকাবুত, মক্কায় অবতীর্ণ- আয়াত ৬৯, রুকু ৭

সূরা আল আনকাবুত



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. আলিফ-লা-ম-মীম,

২. মানুষরা কি (এটা) মনে করে নিয়েছে, তাদের (শুধু) এটুকু বলার কারণেই ছেড়ে দেয়া হবে যে, আমরা ঈমান এনেছি এবং তাদের (কোনো রকম) পরীক্ষা করা হবে না ।

৩. আমি তো সেসব লোকদেরও পরীক্ষা করেছি যারা এদের আগে (এভাবেই ঈমানের দাবী করে) ছিলো, অতপর আল্লাহ তায়ালা নিশ্চয়ই তাদের ভালো করে জেনে নেবেন যারা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী, (আবার ঈমানের) মিথ্যা দাবীদারদেরও তিনি অবশ্যই জেনে নেবেন।

৪. যারা সব সময় গুনাহের কাজ করে বেড়ায় তারা এটা ধরে নিয়েছে, তারা (বৈষয়িক প্রতিযোগিতায়) আমার থেকে আগে চলে যাবে, (এটা তাদের) একটা মন্দ সদ্ধিান্ত, যা (আমার সম্পর্কে) তারা করতে পারলো।

৫. তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ আশা করে, সে আল্লাহ তায়ালার সামনাসামনি হবে (তবে সে যেন জেনে রাখে), আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত (এ) সময়টা অবশ্যই আসবে; আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শোনেন, সব কিছু জানেন।

৬. যে ব্যক্তি (আল্লাহ তায়ালার পথে) সংগ্রাম সাধনা করে, সে তো (আসলে) তা করে তার নিজের (কল্যাণের) জন্যেই, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টিকূল থেকে প্রয়োজনমুক্ত।

৭. যারা ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, আমি নিশ্চয়ই তাদের সেসব দোষত্রুটিগুলো দুর করে দেবো এবং তারা যেসব নেক আমল করে আমি তাদের সেসব কর্মের উত্তম ফল দেবো।

৮. আমি মানুষকে তাদের পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছি; (কিন্তু) যদি কখনো তারা তোমাকে আমার সাথে কাউকে শরীক করার জন্যে জবরদস্তি করে, (যেহেতু এ) ব্যাপারে তোমার কাছে (কোনো রকম দলীল প্রমাণ নেই, তাই তুমি তাদের কোনো আনুগত্য করো না; কেননা তোমাদের তো ফিরে যাবার জায়গা আমার কাছেই, আর তখন আমি অবশ্যই তোমাদের সবকিছু বলে দেবো, তোমরা (দুনিয়ার জীবনে কে কোথায়) কি করতে!

৯. যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, আমি অবশ্যই তাদের নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেবো।

১০. মানুষদের মাঝে কিছু এমনও আছে যারা (মুখে) বলে, আমরা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছি, কিন্তু যখন তাদের আল্লাহর পথে (চলার জন্যে) কষ্ট দেয়া হয় তখন তারা মানুষের এ পীড়নকে আল্লাহ তায়ালার আযাবের মতোই মনে করে; আবার যখন তোমার মালিকের কোনো সাহায্য আসে তখন তারা (মুসলমানদের) বলতে থাকে, অবশ্যই আমরা তোমাদের সাথে ছিলাম; (এরা মনে করে,) আল্লাহ তায়ালা কি সৃষ্টিকূলের (মানুষদের) অন্তরের গোপন বিষয় সম্পর্কে মোটেই অবগত নন?

১১. আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তাদের ভালো করে জেনে নেবেন যারা ঈমান এনেছে, আবার তিনি মোনাফেকদেরও ভালো করে জেনে নেবেন।

১২. কাফেররা ঈমানদারদের বলে, তোমরা আমাদের পথের অনুসরণ করো, আমরা (কেয়ামতের দিন) তোমাদের গুনাহসমূহের বোঝা তুলে নেবো; (অথচ) তারা (সেদিন) তাদের নিজেদের গুনাহসমূহের সামান্য পরিমাণ বোঝাও উঠাতে পারবে না; এরা (আসলেই) হচ্ছে মিথ্যাবাদী।

১৩. (কেয়ামতের দিন) এরা অবশ্যই তাদের নিজেদের গুনাহের বোঝা উঠাবে, (তারপর) তাদের এ বোঝার সাথে (থাকবে তোমাদের) বোঝাও, (দুনিয়ার জীবনে) যতো মিথ্যা কথা তারা উদ্ভাবন করেছে, তাদের অবশ্যই সে ব্যাপারে সেদিন প্রশ্ন করা হবে ।

১৪. আমি নূহকে অবশ্যই তার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম, সে ওদের মাঝে অবস্থান করলো পঞ্চাশ কম এক হাজার বছর; (তারা তার কথা শুনলো না) অতপর মহাপ্লাবন এসে তাদের পাকড়াও করলো, (মূলত) তারা ছিলো (বড়োই) যালেম।

১৫. (এ মহাপ্লাবন থেকে) আমি তাকে এবং তার সাথে েেনৗকার আরোহীদের রক্ষা করেছি, আর আমি এ (ঘটনা)- কে সৃষ্টিকূলের (মানুষদের) জন্যে একটি নিদর্শন বানিয়ে রেখেছি।

১৬. আর যখন ইবরাহীম তার জাতিকে বললো, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো এ বং তাঁকেই ভয় করো; এটাই তোমাদের জন্যে ভালো যদি তোমরা বুঝতে পারো।

১৭. তোমরা তো আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে কেবল মূর্তিসমূহের পুজা করো এবং (স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) মিথ্যা কথা উদ্ভাবন করো; আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে যেসব মূর্তির তোমরা পূজা করো, তারা তোমাদের কোনোরকম রেযেকের মালিক নয়, অতএব তোমরা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই রেযেক চাও, শুধু তাঁরই এবাদাত করো এবং তাঁর (নেয়ামতের) শোকর আদায় করো; (কেননা) তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরিয়ে নেয়া হবে।

১৮. আর যদি তোমরা (আমার নবীকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করো (তাহলে জেনে রেখো), তোমাদের আগের জাতির লোকেরাও (তাদের যমানার নবীদের) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে; (মূলত) সুস্পষ্টরূপে (মানুষদের কাছে আল্লাহর কথা) পৌঁছে দেয়াই হচ্ছে রসুলের কাজ।

১৯. এ লোকেরা কি লক্ষ্য করে না, কিভাবে আল্লাহ তায়ালা প্রথমবার তাঁর সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করলেন, কিভাবে তাকে আবার (তার আগের অবস্থায়) ফিরিয়ে আনবেন; এ কাজটা আল্লাহ তায়ালার কাছে নিতান্ত সহজ।

২০. (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা আল্লাহর যমীনে পরিভ্রমণ করো এবং (এর সর্বত্র) দেখো, কিভাবে আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৃষ্টিকে প্রথম বার অস্তিত্বে আনেন এবং (একবার ধ্বংস হয়ে গেলে) কিভাবে আবার তিনি তা পুনর্বার পয়দা করেন; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ওপর প্রবল ক্ষমতাবান।

২১. তিনি যাকে চান তাকে শাস্তি দেন আবার যাকে চান তাকে (ক্ষমা করে তার ওপর) অনুগ্রহ করেন; (সর্বাবস্থায়) তোমাদের তাঁর দিকেই ফিরে যেতে হবে।

২২. তোমরা যমীনে (যেমন) আল্লাহ তায়ালাকে (তাঁর পরিকল্পনায়) অক্ষম করে দিতে পারবে না, (তেমনি পারবে না) আসমানে (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক নেই, নেই কোনো সাহায্যকারীও!

২৩. যারা আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ ও তাঁর সামনাসামনি হওয়াকে অস্বীকার করে, (মূলত) সেসব লোক আমার অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ে গেছে, আর এরাই হচ্ছে সে সব মানুষ, যাদের জন্যে রয়েছে মর্মনত্মদ শাস্তি।

২৪. অতপর তাদের (ইবরাহীমের জাতির) কাছে এ ছাড়া (আর কোনো) জবাব থাকলো না যে, তারা বলতে লাগলো, একে মেরেই ফেলো কিংবা তাকে আগুনে পুড়িয়ে দাও, অতপর (তারা যখন তাকে আগুনে নিক্ষেপ করলো তখন) আল্লাহ তায়ালা তাকে (জ্বলন্ত) আগুন থেকে উদ্ধার করলেন; অবশ্যই মোমেনদের জন্যে এ (ঘটনা)- র মাঝে (আল্লাহ তায়ালার কুদরতের) অনেক নিদর্শন মজুদ রয়েছে।

২৫. (ইবরাহীম) বললো, হে আমার জাতির লোকেরা, তোমরা তোমাদের পার্থিব জীবনে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা (বৃদ্ধি)-র খাতিরে আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে নিজেদের হাতে গড়া মূর্তিগুলোকে (নিজেদের মাবুদ) ধরে নিয়েছো, অথচ কেয়ামতের দিন তোমাদের (এ ভালোবাসার) একজন ব্যক্তি আরেকজনকে (চিনতেও ) অস্বীকার করবে, তারা তখন একজন আরেকজনকে অভিশাপ দিতে থাকবে, ( পরিশেষে) তোমাদের সবার (চূড়ান্ত) ঠিকানা হবে জাহান্নাম, আর সেদিন কেউই তোমাদের জন্যে কোনো সাহায্যকারী থাকবে না।

২৬. অতপর লুত তার ওপর ঈমান আনলো | (ইবরাহীম) বললো, আমি (এবার) আমার মালিকের (বলে দেয়া স্থানের) দিকে হিজরত করছি; অবশ্যই তিনি মহাপরাক্রমশালী ও বিজ্ঞ কৃশলী।

২৭. অতপর আমি তাকে (ছেলে হিসেবে) ইসহাক ও (নাতি হিসেবে) ইয়াকুব দান করলাম, তার বংশধারায় আমি নবুওত ও কেতাব (নাযিলের ধারা অব্যাহত) রাখলাম, (নবুওত দ্বারা) আমি দুনিয়াতেও তাকে পুরস্কৃত করলাম, আর আখেরাতে সে অবশ্যই আমার নেক বান্দাদের দলে শামিল হবে ।

২৮. আর (আমি) লুতকে (তার লোকদের কাছে) পাঠিয়েছিলাম, যখন সে তার জাতিকে বললো, তোমরা এমন এক অশ্লীল কাজ নিয়ে এসেছো, যা ইতিপূর্বে সৃষ্টিকূলের কোনো মানুষই করেনি।

২৯. (তোমাদের এ কি হলো!) তোমরা কি (তোমাদের কামনা-বাসনার জন্যে মহিলাদের বাদ দিয়ে) পুরুষদের কাছে হাযির হচ্ছো এবং (এ উদ্দেশে আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত) পথকে তোমরা (প্রকারান্তরে) কেটে দিচ্ছো এবং তোমরা তোমাদের ভরা মজলিসে এ অশ্লীল কাজে লপ্তি হচ্ছো; তাদের (লুতের জাতির মানুষের) কাছেও এ ছাড়া আর কোনো জবাব ছিলো না যে, তারা বলল (হ্যাঁ, যাও), নিয়ে এসো আমাদের ওপর আল্লাহর আযাব, যদি তুমি (তোমার আযাবের ওয়াদায়) সত্যবাদী হও।

৩০. (এ কথা শুনে) সে (আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে) বললো, হে আমার মালিক, (এই) ফাসাদী জাতির মোকাবেলায় তুমি আমায় সাহায্য করো।

৩১. অতপর যখন আমার পাঠানো ফেরেশতারা একটা সুখবর নিয়ে ইবরাহীমের কাছে এলো, তখন তারা বললো, আমরা (লুতের) এ জনপদের অধিবাসীদের ধ্বংস করবো, কেননা তার অধিবাসীরা বড়ো যালেম |

৩২. (একথা শুনে) সে বললো, (তা কি করে সম্ভব?) সেখানে তো (নবী) লুতও রয়েছে; তারা বললো, আমরা (ভালো করেই) জানি সেখানে কে (কে) আছে। আমরা লুত এবং তার পরিবারের লোকজনদের অবশ্যই রক্ষা করবো, তবে তার স্ত্রীকে নয়, সে আযাবে পড়ে থাকা লোকদের দলে শামিল হবে ।

৩৩. তারপর যখন (সত্যই) আমার পাঠানো ফেরেশতারা লুতের কাছে এলো, তখন (তাদের আগমন) লুতের কাছে খারাপ লাগলো, এদের (সম্মান রক্ষা করতে পারবে না) কারণে তার মন ভেংগে গেলো, ওরা (এটা দেখে) বললো (হে লুত), তুমি ভয় পেয়ো না, (তুমি) দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হয়ো না। আমরা তুমি এবং তোমার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করবো, তবে তোমার স্ত্রীকে নয়, সে তো আযাবে পড়ে থাকা ব্যক্তিদেরই একজন।

৩৪. আমরা (অচিরে) এ জনপদের (বাকী) অধিবাসীদের ওপর আসমান থেকে এক (ভীতিকর) আযাব নাযিল করবো, কেননা এরা ছিলো (ভীষণ) গুনাহগার জাতি।

৩৫. (একদিন সত্যি সত্যিই আমি এ জনপদকে উল্টে দিয়েছি এবং) তখন থেকে আমি তার জ্ঞানবান সম্প্রদায়ের জন্যে একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন করে রেখে দিয়েছি।

৩৬. আমি মাদইয়ান (বাসী)-এর কাছে তাদের ভাই শোয়ায়বকে পাঠিয়েছি, তখন সে (তাদের) বললো, হে আমার জাতি, তোমরা এক আল্লাহ তায়ালার এবাদাত করো এবং পরকাল দিবসের (পুরস্কারের) আশা করো, (আল্লাহর) যমীনে তোমরা বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।

৩৭. কিন্তু তারা তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলো, অতপর প্রচন্ড ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করলো, ফলে তারা নিজ নিজ ঘরেই উপুড় হয়ে পড়ে থাকলো ।

৩৮. আ'দ এবং সামুদকেও (আমি ধ্বংস করে দিয়েছি), তাদের (ধ্বংসপ্রাপ্ত) বসতি থেকেই তো তোমাদের কাছে (আযাবের সত্যতা) প্রমাণিত হয়ে গেছে। শয়তান তাদের কাজ তাদের সামনে শোভন করে রেখেছিলো এবং (এ কৌশলে) সে তাদের (সঠিক) রাস্তার থেকে ফিরিয়ে রেখেছিলো, অথচ তারা (তাদের অন্য সব ব্যাপারে) ছিলো দারুণ বিচক্ষণ!

৩৯. কারূন, ফেরাউন এবং হামানকেও (আমি ধ্বংস করেছি)। মুসা তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াত নিয়ে এসেছিলো, কিন্তু তারা (তাকে মানার বদলে) যমীনে বড়ো বেশী অহংকার করেছিলো এবং তারা কোনো অবস্থায় (আমার আযাব থেকে) পালিয়ে আগে চলে যেতে পারতো না।

৪০. অতপর এদের সবাইকেই আমি (তাদের) নিজ নিজ গুনাহের কারণে পাকড়াও করেছি, এদের কারো ওপর প্রচন্ড ঝড় পাঠিয়েছি, কাউকে মহাগর্জন এসে আঘাত হেনেছে, কাউকে আমি যমীনের নীচে গেড়ে দিয়েছি, আবার কাউকে আমি (পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি, (মূলত) আল্লাহ তায়ালা এমন ছিলেন না যে, তিনি এদের ওপর কোনো যুলুম করেছেন, যুলুম তো বরং তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর করেছে।

৪১. যেসব লোক আল্লাহ তায়ালার বদলে অন্যকে (নিজেদের) অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে, তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে মাকড়সার মতো, তারা (নিজেরাও এক ধরনের) ঘর বানায়; আর (দুনিয়ার) দুর্বলতম ঘর হচ্ছে (এ) মাকড়সার ঘর | কতো ভালো হতো যদি তারা (এ সত্যটুকু) বুঝতে পারতো ।

৪২. এরা আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে যেসব কিছুকে ডাকে, আল্লাহ তায়ালা তাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন; তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রবল প্রজ্ঞাময়।

৪৩. এ হচ্ছে (সেই) উদাহরণ, যা আমি মানুষদের জন্যেই পেশ করি, কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই তা বুঝতে পারে।

৪৪. আল্লাহ তায়ালা আসমানসমূহ ও যমীন যথাযথভাবেই সৃষ্টি করেছেন; (বস্তুত) এতে ঈমানদারদের জন্যে (আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বের পক্ষে বড়ো) প্রমাণ রয়েছে ।

৪৫. (হে নবী,) যে কেতাব তোমার ওপর নাযিল করা হয়েছে, তুমি তা তেলাওয়াত করো এবং নামায প্রতিষ্ঠা করো; নিঃসন্দেহে নামায (মানুষকে) অশ্লীলতা ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে; পরন্তু আল্লাহ তায়ালাকে (হামেশা) স্মরণ করাও একটি মহান কাজ; তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা তা সম্যক অবগত আছেন।

৪৬. (হে মুসলমানরা,) তোমরা কেতাবধারীদের সাথে উত্তম পন্থা ছাড়া কোনোরকম তর্ক-বিতর্ক করো না, আবার তাদের মধ্যে যারা যুলুম করে তাদের কথা আলাদা, আর (তোমরা) বলো, আমরা ঈমান এনেছি (কেতাবের) যা কিছু আমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (তার ওপর), আরো ঈমান এনেছি যা কিছু তোমাদের ওপর নাযিল করা হয়েছে (তার ওপরও, আসলে) আমাদের মাবুদ ও তোমাদের মাবুদ হচ্ছেন একজন এবং আমরা সবাই তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণ করি।

৪৭. এভাবে আমি তোমার ওপর (এ) কেতাব নাযিল করেছি, আমি (আগে) যাদের কেতাব দান করেছিলাম (যারা সত্যানুসন্ধিৎসু ছিলো) তারা এর ওপর ঈমান এনেছে, (পরবর্তী) লোকদের মাঝেও (কিছু ভালো মানুষ আছে) যারা এর ওপর ঈমান এনেছে; (আসলে) অস্বীকারকারীরা ছাড়া কেউই আমার আয়াতের প্রতি বিদ্রোহ করে না ।

৪৮. (হে নবী,) তুমি তো (এ কোরআন নাযিল হওয়ার আগে) কোনো বই পুস্তক পাঠ করোনি, না তুমি তোমার ডান হাত দিয়ে কোনো কিছু লিখে রেখেছো যে, (তা দেখে) অসত্যের পুজারীরা (আজ) সন্দেহে লিপ্ত হয়ে পড়ছে!

৪৯. বরং এগুলো হচ্ছে যাদের আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে; তাদের অন্তরে সুস্পষ্ট কিছু নিদর্শন, কতিপয় যালেম ব্যক্তি ছাড়া আমার (এ সুস্পষ্ট) আয়াতের সাথে কেউই গোঁড়ামি করতে পারে না ।

৫০. তারা (তোমার সম্পর্কে) বলে, এ ব্যক্তির কাছে তার মালিকের পক্ষ থেকে (নবুওতের) কোনো প্রমাণ নাযিল হয় না কেন? (হে নবী,) তুমি বলো, যাবতীয় নিদর্শন তো আল্লাহ তায়ালার হাতেই রয়েছে; আমি তো হচ্ছি (আযাবের) একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র!

৫১. (হে নবী,) এদের জন্যে এটাই কি যথেষ্ট নয় যে, স্বয়ং আমিই তোমার ওপর কেতাব নাযিল করেছি, যা তাদের কাছে তেলাওয়াত করা হচ্ছে; অবশ্যই ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে এতে (আল্লাহ তায়ালার) অনুগ্রহ ও নসীহত রয়েছে ।

৫২. (হে নবী,) তুমি বলো, আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট, (কেননা) আসমানসমুহ ও যমীনে যা আছে (তার) সবকিছু তিনি জানেন; যারা বাতিলের ওপর ঈমান আনে এবং আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে, তারাই হচ্ছে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ।

৫৩. (হে নবী,) এরা তোমার কাছে আযাব ত্বরান্বিত করার কথা বলে; যদি (আল্লাহ তায়ালার কাছে) এদের (শাস্তি দেয়ার) জন্যে একটি দিনক্ষণ সুনির্দিষ্ট না থাকতো, তাহলে কবেই না তাদের ওপর আযাব এসে যেতো; অবশ্যই এদের ওপর আকস্মিকভাবে আযাব আসবে এবং তারা জানতেও পারবে না ।

৫৪. তোমার কাছে এরা আযাব ত্বরান্বিত করার কথা বলে; (অথচ) জাহান্নাম তো কাফেরদের পরিবেষ্টন করেই নেবে।

৫৫. যেদিন আযাব তাদের গ্রাস করবে তাদের ওপর থেকে এবং তাদের পায়ের নীচ থেকে, আল্লাহ তায়ালা (তখন) বলবেন, (দুনিয়ায়) তোমরা যা কিছু করতে (এখন তার) মজা উপভোগ করো।

৫৬. হে আমার বান্দারা, যারা আমার ওপর ঈমান এনেছো, আমার যমীন অনেক প্রশস্ত, সুতরাং তোমরা অতঃপর একমাত্র আমারই এবাদাত করো।

৫৭. প্রতিটি জীবকেই মরণের স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। এর পর তোমাদের সবাইকে আমার কাছেই ফিরিয়ে আনা হবে।

৫৮. যারা আমার ওপর ঈমান আনবে এবং নেক কাজ করবে, আমি তাদের জন্যে অবশ্যই জান্নাতে (সুরমা) কোঠা তৈরী করবো, যার পাদদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহমান থাকবে, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে; কতো উত্তম পুরস্কার এ নেককার মানুষগুলোর জন্যে!

৫৯. (নেককার মানুষ হচ্ছে তারা,) যারা ধৈর্য ধারণ করেছে (এবং সর্বাবস্থায়) নিজেদের মালিকের ওপরই নির্ভর করেছে ।

৬০. কতো (ধরনের) বিচরণশীল জীব (এ দুনিয়ায়) রয়েছে, যারা কেউই নিজেদের রেযেক (নিজেরা কাঁধে) বহন করে বেড়ায় না, আল্লাহ তায়ালাই তাদের এবং তোমাদের (নিত্যদিনের) রেযেক সরবরাহ করেন, তিনি সবকিছু শোনেন এবং সবকিছু জানেন।

৬১. (হে নবী,) তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, আসমানসমুহ ও যমীন কে পয়দা করেছেন, সুর্য ও চন্দ্রকে কে বশিভূত করে রেখেছেন, তারা অবশ্যই বলবে, (একমাত্র) আল্লাহ তায়ালা, (কিন্তু তারপরও) এরা কোথায় কোথায় ঠোকর খাচ্ছে ?

৬২. (বস্তুত) আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মাঝে যাকে চান তার রেযেক প্রশস্ত করে দেন, (আবার যাকে চান) তার জন্যে তা কমিয়ে দেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সবকিছুর ব্যাপারে সম্যক অবগত আছেন।

৬৩. (হে নবী,) যদি তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো, আসমান থেকে কে পানি বর্ষণ করেছেন, অতঃপর কে যমীন একবার মরে যাওয়ার পর সে (পানি) দ্বারা তাতে জীবন সঞ্চার করেছেন, অবশ্যই এরা বলবে, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই; তুমি বলো, যাবতীয় তারীফ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যে; কিন্তু ওদের অধিকাংশ মানুষই (তা) অনুধাবন করে না ।

৬৪. এ পার্থিব জীবন তো অর্থহীন কতিপয় খেল তামাশা ছাড়া (আসলেই) আর কিছু নয়; নিশ্চয় আখেরাতের জীবন হচ্ছে সত্যিকারের জীবন | কতো ভালো হতো যদি তারা (এ বিষয়টা জানতো!

৬৫. যখন এরা জলযানে আরোহণ করে (নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়), তখন তারা নিষ্ঠার সাথে আল্লাহ তায়ালাকেই ডাকে, জীবন বিধানকে একমাত্র তার জন্যে (নিবেদন করে), কিন্তু আল্লাহ তায়ালা যখন তাদের মুক্তি দিয়ে স্থলে নামিয়ে নিরাপদ করে দেন, (তখন) সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার সাথেই এরা শরীক করতে শুরু করে,

৬৬. যেন আমি তাদের ( ওপর) যা কিছু অনুগ্রহ করেছি তা তারা অস্বীকার করতে পারে এবং (এভাবেই এরা) কয়টা দিন (দুনিয়ায়) ভোগবিলাস করে কাটিয়ে দিতে পারে | অচিরেই এরা (আসল ঘটনা) জানতে পারবে ।

৬৭. এরা কি দেখতে পাচ্ছে না, (কিভাবে) আমি (এ মক্কাকে) শান্তি ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানিয়ে রেখেছি, অথচ তার চারপাশে মানুষদের (প্রতিনিয়ত জোর করে) ছিনিয়ে নেয়া হচ্ছে; এরপরও কি তারা বাতিলের ওপর ঈমান আনবে এবং আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত অস্বীকার করবে ?

৬৮. তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে হতে পারে যে (স্বয়ং) আল্লাহ তায়ালার ওপরই মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে, অথবা তার কাছে যখন সত্য এসে যায় তখন তাকেই অস্বীকার করে; (হে নবী,) এমন ধরনের অস্বীকারকারীদের জন্যে জাহান্নামই কি (একমাত্র) আশ্রয়স্থল (হওয়া উচিত) নয়?

৬৯. (অপরদিকে) যারা আমারই পথে জেহাদ করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথে পরিচালিত করি, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা নেককার বান্দাদের সাথে রয়েছেন |


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url