আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল কাছাছ’র বাংলা অনুবাদ | সূরা আল কাছাছ | Surah Al Qasas | القصص


সূরা আল কাছাছ’র বাংলা অনুবাদ


সূরা আল কাছাছ, মক্কায় অবতীর্ণ - আয়াত ৮৮ রুকু ৯

সূরা আল কাছাছ



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. ত্বা-সীম-মীম

২. এ হচ্ছে সুস্পষ্ট কেতাবের আয়াত।

৩. (হে নবী, এ আয়াতসমূহের মাধ্যমে) আমি তোমাকে মুসা ও ফেরাউনের কিছু ঘটনা ঠিক ঠিক করে বলে দিতে চাই, (এটা) তাদের জন্যে, যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে।

৪. (ঘটনাটা ছিলো এই,) ফেরাউন (আল্লাহর) যমীনে অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো, সে তার (দেশের) অধিবাসীদের বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে রেখেছিলো, সে তাদের একটি দলকে হীনবল করে রেখেছিলো, সে তাদের পুত্রদের হত্যা করতো এবং নারীদের জীবিত রেখে দিতো; অবশ্যই সে ছিলো (যমীনে) বিপর্যয় সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের একজন।

৫. (ফেরাউনের এসব নিপীড়নের মোকাবেলায়) আমি সে যমীনে যাদের হীনবল করে রাখা হয়েছিল তাদের ওপর (কিছুটা) অনুগ্রহ করতে এবং আমি তাদের (ফেরাউনের সেবাদাস থেকে উঠিয়ে দেশের) নেতা বানিয়ে দিতে এবং তাদেরকে (এ যমীনের) উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেয়ার এরাদা করলাম;

৬. আমি (ইচ্ছা করলাম) সে দেশে তাদের ক্ষমতার আসনে বসিয়ে দেবো এবং তাদের মাধ্যমে ফেরাউন, হামান ও তার লয় লশকরদের সে ব্যাপারটা দেখিয়ে দেবো, যে ব্যাপারে তারা আশংকা করতো।

৭. (এমনি এক সময় মুসার জন্ম হলো, যখন) আমি মুসার মায়ের কাছে এ আদেশ পাঠালাম, তুমি তাকে বুকের দুধ খাওয়াও, যদি কখনো তার (নিরাপত্তার) ব্যাপারে তোমার ভয় হয় তাহলে (বাক্সে ভরে) তাকে সমুদ্রে ফেলে দিয়ো, কোনো রকম ভয় করো না, দুশ্চিন্তাও করো না, অবশ্যই আমি তাকে তোমার কাছে ফিরিয়ে দেবো, আমি তাকে রসুলদের মধ্যে শামিল করবো ।

৮. (আল্লাহ তায়ালার আদেশ অনুযায়ী মুসার মা তাকে সমুদ্রে ফেলে দিলো,) অতপর ফেরাউনের লোকজন তাকে (সমুদ্র থেকে) উঠিয়ে নিলো, যেন সে তাদের জন্যে দুশমনী ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে পড়তে পারে; এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ফেরাউন, হামান ও তাদের বাহিনী ছিলো ভয়ানক অপরাধী।

৯. ফেরাউনের স্ত্রী(এ শিশুটিকে দেখে তার স্বামীকে) বললো, এ শিশুটি আমার এবং তোমার জন্যে চক্ষু শীতলকারী (হবে), একে হত্যা করো না, হয়তো একদিন এ আমাদের কোনো উপকারও করতে পারে, অথবা আমরা তাকে সন্তান হিসেবেও (তো) গ্রহণ করতে পারি, কিন্তু তারা (তখন আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই) বুঝতে পারেনি।

১০. ( ওদিকে) মুসার মায়ের মন অস্থির হয়ে পড়েছিলো, (আমার প্রতি) আস্থাশীল থাকার জন্যে যদি আমি তার মনকে দৃঢ় না করে দিতাম, তাহলে সে তো (দুশমনদের কাছে) তার খবর প্রকাশ করেই দিচ্ছিলো!

১১. সে মুসার বোনকে বললো, তুমি (সাগরের পাড় ধরে) এর পেছনে পেছনে যাও, (কথানুযায়ী) সে তাকে দুর থেকে এমনভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলো যে, ফেরাউনের লোকেরা টেরও করতে পারলো না।

১২. (ওদিকে) আগে থেকেই আমি তার ওপর (ধাত্রীদের) সন্তানের দুধ খাওয়ানো নিষদ্ধি করে রেখেছিলাম, (এ অবস্থা দেখে) সে (বোনটি) বললো, আমি কি তোমাদের এমন একটি পরিবারের নাম (ঠিকানা) বলে দেবো, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন পালন করবে, সাথে সাথে তারা এর শুভানুধ্যায়ীও হবে।

১৩. আমি তাকে (আবার) তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে আনলাম, যাতে করে (নিজের সন্তানকে দেখে) তার চোখ ঠান্ডা হয়ে যায় এবং সে কোনো রকম দুঃখ না পায়, সে (একথাটাও ভালো করে) জেনে নিতে পারে, আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য, যদিও অধিকাংশ লোক এটা জানে না।

১৪. যখন সে (পূর্ণ) েেযৗবনে উপনীত হলো এবং (শারীরিক শক্তিতে) পূর্ণতা প্রাপ্ত হলো, (তখন আমি তাকে) জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দান করলাম; আমি নেককার লোকদের এভাবেই প্রতিফল দান করি।

১৫. (একদিন) সে নগরীতে প্রবেশ করলো, যখন (সেখানে) নগরবাসীরা অসতর্ক অবস্থায় (আরাম কর) ছিলো, অতপর সে সেখানে দু'জন মানুষকে মারামারি করতে দেখলো, এদের একজন ছিলো তার নিজ জাতি (বনী ইসরাঈলের) আর দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলো তার শত্রু দলের (লোক), যে ব্যক্তি ছিলো তার দলের, সে তখন দ্বিতীয় ব্যক্তির মোকাবেলায় তার সাহায্য চাইলো, যে ছিলো তার শত্রু দলের, তখন মুসা তাকে একটি ঘুষি মারলো, এভাবে সে তাকে হত্যাই করে ফেললো, (সাথে সাথে অনুতপ্ত হয়ে) সে বললো, এ তো একটা শয়তানী কাজ; অবশ্যই সে (হচ্ছে মানুষের) দুশমন এবং প্রকাশ্য বিভ্রান্তকারী।

১৬. সে (আরো) বললো, হে আমার মালিক, (অনিচ্ছাকৃত এ কাজ করে) আমি তো আমার নিজের ওপর (বড়ো) যুলুম করে ফেলেছি (হে আল্লাহ তায়ালা), তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, অতপর আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিলেন, কেননা তিনি হচ্ছেন ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।

১৭. সে (আরো) বললো, হে আমার মালিক, তুমি যেভাবে আমার ওপর মেহেরবানী করেছো, (সে অনুযায়ী) আমিও (তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি,) আমি আর কখনো কোনো অপরাধী ব্যক্তির জন্যে সাহায্যকারী হবো না ।

১৮. অতপর ভীত শংকিত অবস্থায় সে নগরীতে তার ভোর হলো, হঠাৎ সে দেখতে পেলো, আগের দিন যে ব্যক্তি তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলো, সে (আবার) তাকে সাহায্যের জন্য চীৎকার করছে; মুসা (এবার) তাকে বললো, তুমি তো দেখছি ভারী ভেজালে লোক !

১৯. (তারপরও) যখন সে ( ও ফরিয়াদী ব্যক্তিটি) তাদের উভয়ের শত্রর ওপর হাত উঠাতে চাইলো (তখন এ ফরিয়াদী ব্যক্তিটি মনে করলো, মুসা বুঝি তাকে মেরেই ফেলবে), তাই সে বললো, তুমি কি আজ আমাকে সেভাবেই হত্যা করতে চাও, যেভাবে কাল তুমি এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছো, তুমি তো যমীনে দারুণ স্বেচ্ছাচারী হতে চলেছো, তুমি কি মোটেই শান্তি স্থাপনকারী হতে চাও না!

২০. (এর কিছুক্ষণ পরই) এক ব্যক্তি নগরীর (আরেক) প্রান্তর থেকে দৌড়ে এসে বললো, হে মুসা (আমি এমাত্র শুনে এলাম), ফেরাউনের দরবারীরা তোমাকে হত্যা করার ব্যাপারে পরামর্শ করছে, অতএব তুমি এক্ষুণি (শহর থেকে) বের হয়ে যাও, আমি হচ্ছি তোমার একজন শুভাকাংখী (বন্ধু)!

২১. অতপর সে ভীত আতংকিত অবস্থায় নগরী থেকে বের হয়ে গেলো এবং (যেতে যেতে) বললো, হে মালিক, তুমি আমাকে যালেম জাতি (-র হাত) থেকে রক্ষা করো।

২২. (মিসর ছেড়ে) যখন সে মাদইয়ান অভিমুখে যাত্রা করলো তখন বললো, আমি আশা করি আমার মালিক আমাকে সঠিক পথই দেখাবেন।

২৩. অবশেষে যখন সে মাদইয়ানের (একটি) পানির (কূপের) কাছে পৌঁছলো, তখন দেখলো তার পাশে অনেক মানুষ, তারা (পশুদের) পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের অদুরে সে দু'জন রমণীকে (দেখতে) পেলো, যারা (নিজ নিজ পশুদের) আগলে রাখছে, সে (তাদের) জিজ্ঞেস করলো, তোমাদের কি হলো (তোমরা পশুদের পানি খাওয়াচ্ছো না)? তারা বললো, আমরা (পশুদের) পানি খাওয়াতে পারবো না, যতোক্ষণ না এ রাখালরা (তাদের পশুদের) সরিয়ে না নিয়ে যায় এবং আমাদের পিতা একজন বৃদ্ধ মানুষ বলে আমরা পশুদের পানি খাওয়াতে নিয়ে এসেছি)।

২৪. (একথা শোনার পর) সে এদের (পশুগুলোকে) পানি খাইয়ে দিলো, তারপর (সরে) একটি (গাছের) ছায়ার দিকে গেলো এবং (আল্লাহকে) বললো, হে আমার মালিক, (এ মুহূর্তে) তুমি (নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে) যে নেয়ামতই আমার ওপর নাযিল করবে, আমি একান্তভাবে তারই মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবো।

২৫. (আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত আসতে দেরী হলো না, মুসা দেখতে পেলো) সে দুই রমণীর একজন লজ্জা জড়ানো অবস্থায় তার কাছে এলো এবং বললো, আমার পিতা তোমাকে তার কাছে ডেকেছেন, তুমি যে আমাদের (পশুগুলোকে) পানি খাইয়ে দিয়েছিলে তার জন্যে তিনি তোমাকে কিছু পারিশ্রমিক দিতে চান; অতপর সে তার কথামতো তার (পিতার) কাছে এলো এবং (নিজের) কাহিনী তার কাছে বর্ণনা করলো, (সব শুনে) সে (মুসাকে) বললো, তুমি কোনো ভয় করো না | (এখন) তুমি যালেমদের কাছ থেকে বেঁচে গেছো।

২৬. সে দু'জন (রমণীর) একজন তার (পিতাকে) বললো, হে (আমার) পিতা, একে বরং তুমি (তোমার) কাজে নিয়োগ করো, কেননা তোমার মজুর হিসেবে সে (ব্যক্তিই) উত্তম (বলে প্রমাণিত) হবে, যে হবে (শারীরিক দিক থেকে) শক্তিশালী এবং (চরিত্রের দিক থেকে) বিশ্বস্ত ।

২৭. (এরপর রমণীদের) পিতা (তাকে) বললো, আমি আমার এ দুই মেয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, (তবে তা হবে) এ কথার ওপর, তুমি আট বছর আমার কাজ করবে, যদি তুমি (আট বছরের জায়গায়) দশ বছর পুরো করতে চাও, তবে তা হবে একান্ত তোমার ব্যাপার, আমি তোমার ওপর কোনো কষ্ট (-কর শর্ত) আরোপ করতে চাই না; আল্লাহ তায়ালা চাইলে তুমি আমাকে সদাচারী ব্যক্তি হিসেবেই দেখতে পাবে।

২৮. সে (এতেই রাখি হলো এবং) বললো (ঠিক আছে), আমার এবং আপনার মাঝে এ চুক্তিই (পাকা হয়ে) থাকলো; আপনার দেয়া দু'টো মেয়াদের যে কোনো একটি যদি আমি পুরণ করি, তাহলে (আপনার পক্ষ থেকে) আমার ওপর কোনো বাড়াবাড়ি করা হবে না (এ নিশ্চয়তাটুকু আমি চাই); আমাদের এ কথার ওপর আল্লাহ তায়ালাই সাক্ষী (হয়ে থাকলেন)।

২৯. অতপর মুসা যখন (তার চুক্তিবদ্ধ) মেয়াদ পূর্ণ করে নিলো, তখন সপরিবারে (নিজ দেশের দিকে) রওনা করলো, যখন সে তূর পাহাড়ের পাশে আগুন দেখতে পেলো, তখন সে তার পরিবারের লোকদের বললো, তোমরা (এখানেই) অপেক্ষা করো, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, সম্ভবত আমি সেখান থেকে (রাস্তারঘাট সম্পর্কিত) কোনো খোঁজ খবর নিয়ে আসতে পারবো, আর তা না হলে (কমপক্ষে) জ্বলন্ত আগুনের কিছু টুকরো তো নিয়ে আসতেই পারবো, যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পারবে ।

৩০. যখন সে আগুনের কাছে পৌঁছালো, তখন উপত্যকার ডান পাশের পবিত্র ভূমিস্থিত একটি গাছ থেকে (গায়রী) আওয়ায এলো, হে মুসা, আমিই আল্লাহ সৃষ্টিকূলের একমাত্র মালিক,

৩১. (তাকে আরো বলা হলো,) তুমি তোমার হাতের লাঠিটি যমীনে নিক্ষেপ করো; যখন সে তাকে দেখলো, তা (জীবন্ত) সাপের মতোই ছুটাছুটি করছে, তখন সে উল্টো দিকে ছুটতে লাগলো, পেছনের দিকে তাকিয়েও দেখলো না; (তার প্রতি তখন আদেশ করা হলো,) হে মুসা, তুমি এগিয়ে এসো, ভয় পেয়ো না। তুমি হচ্ছো নিরাপদ মানুষদেরই একজন ।

৩২. তুমি তোমার হাত তোমার (ব্লক) পকেটের ভেতরে রাখো (দেখবে), কোনো রকম অসুস্থতা ছাড়াই তা উজ্জ্বল হয়ে বেরিয়ে আসছে, (মন থেকে) ভয় (দুরীভূত) করার জন্যে তোমার হাতের বাড় তোমার (ব্লকের) সাথে মিলিয়ে রাখো, এ হচ্ছে ফেরাউন ও তার দলীয় প্রধানদের কাছে তোমার মালিকের পক্ষ থেকে (নরওতের) দুটো প্রমাণ; সত্যিই তারা এক গুনাহগার জাতি ।

৩৩. সে বললো, হে আমার মালিক, আমি (নিতান্ত ভুলবশত) তাদের একজন মানুষকে হত্যা করেছি, তাই আমার ভয় হচ্ছে তারা (সে হত্যার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে) আমাকে মেরে ফেলবে!

৩৪. আমার ভাই হারূন, সে আমার চাইতে ভালো করে কথা বলতে পারে, অতএব তুমি তাকে সাহায্যকারী হিসেবে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও, যাতে করে সে আমাকে সমর্থন করতে পারে, আমার ভয় হচ্ছে, (আমি একা গেলে) তারা আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে ।

৩৫. আল্লাহ তায়ালা বললেন (তুমি চিন্তা করো না), আমি তোমার ভাইকে দিয়ে তোমার হাত শক্তিশালী করবো এবং আমার আয়াতসমূহ দিয়ে আমি তোমাদের (এমন) শক্তি যোগাবো যে, অতপর তারা (আর) কখনো তোমাদের কাছে পৌঁছতে পারবে না, ( পরিশেষে) তোমরা এবং তোমাদের অনুসারীরাই তাদের ওপর বিজয়ী হবে ।

৩৬. অতপর যখন মুসা আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নিয়ে ওদের কাছে হাযির হলো, তখন তারা বললো, এ তো কতিপয় অলীক ইন্দ্রজাল ছাড়া আর কিছুই নয়, আমরা আমাদের বাবা-দাদাদের যমানায়ও তো এমন কিছু (ঘটতে) শুনিনি!

৩৭. মুসা বললো, আমার মালিক ভালো করেই জানেন কে তাঁর কাছ থেকে হেদায়াত নিয়ে এসেছে এবং (সেদিনের মতো আজ) কার পরিণাম কি হবে? (তবে একথা ঠিক,) যালেমরা কখনোই সফল হয় না।

৩৮. ফেরাউন বললো, হে আমার পারিষদরা, আমি তো জানি না, আমি ছাড়া তোমাদের আরও কোনো মাবুদ আছে (অতপর সে হামানকে বললো), হে হামান (যাও), আমার জন্যে (ইট তৈরীর জন্যে) মাটি আগুনে পোড়াও, অতপর (তা দিয়ে) আমার জন্যে একটি সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণ করো, যেন আমি (তাতে ওঠে) মুসার মারদকে দেখে নিতে পারি, আমি অবশ্য তাকে মিথ্যাই মনে করি!

৩৯. সে এবং তার বাহিনীর লোকেরা অন্যায়ভাবেই (আল্লাহর) যমীনে অহংকার করলো, ওরা ধরে নিয়েছিলো, ওদের কখনো আমার কাছে ফিরে আসতে হবে না!

৪০. অতপর আমি তাকে এবং তার গোটা বাহিনীকে ধরে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম, অতএব (হে নবী), তুমি দেখো, (বিদ্রোহ করলে) যালেমদের পরিণাম কি ভয়াবহ হয়ে থাকে!

৪১. আমি ওদের এমন সব লোকদের নেতা বানিয়েছি যারা (জাহান্নামের) আগুনের দিকেই ডাকবে, (এ কারণেই) কেয়ামতের দিন তাদের (কোনো রকম) সাহায্য করা হবে না ।

৪২. দুনিয়ায় (যেমন) আমি তাদের পেছনে আমার লানত লাগিয়ে রেখেছি, (তেমনি) কেয়ামতের দিনও তারা নিতান্ত ঘৃণিত লোকদের মধ্যে শামিল হবে।

৪৩. অতীতের বহু মানবগোষ্ঠীকে আমার সাথে বিদ্রোহের আচরণের জন্যে ধ্বংস করার পর আমি মুসাকে (তাওরাত) কেতাব দান করেছি, এ কেতাব ছিলো মানুষদের জন্যে জ্ঞান ও তত্ত্বকথার সমাহার, (সর্বোপরি) এ (কেতাব ছিলো) তাদের জন্যে হেদায়াত ও রহমত, যাতে করে তারা (এ থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে ।

৪৪. (হে নবী,) মুসাকে যখন আমি (নওরওতের) বিধান দিয়েছিলাম, তখন তুমি (তুর পাহাড়ের) পশ্চিম পাশে (সে বিশেষ স্থানটিতে উপস্থিত) ছিলে না, না তুমি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দলে শামিল ছিলে,

৪৫. বরং তারপর আমি আরো অনেক মানবগোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটিয়েছিলাম, অতপর তাদের ওপরও বহু যুগ অতিবাহিত হয়ে গেছে (তারাও আজ কেউ অবশষ্টি নেই), আর তুমি মাদইয়ানবাসীদের মাঝেও উপস্থিত ছিলে না যে, তুমি তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পড়ে পড়ে শুনিয়েছো, কিন্তু (সে সময়ের খবরাখবর তোমার কাছে) পৌঁছানোর জন্যে আমিই (সেখানে মজুদ) ছিলাম ।

৪৬. মুসাকে যখন আমি (প্রথম বার) আওয়ায দিয়েছিলাম, তখনও তুমি তুর পাহাড়ের (কোনো) দিকেই মজুদ ছিলে না, কিন্তু এটা হচ্ছে (তোমার প্রতি) তোমার মালিকের রহমত (যে, তিনি তোমাকে এ সব অবহিত করেছেন), যাতে করে (এর মাধ্যমে) তুমি এমন এক সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারো, যাদের কাছে তোমার আগে কোনো সতর্ককারী আসেনি যে, তারা উপদেশ গ্রহণ করবে ।

৪৭. এমন যেন না হয়, ওদের কৃতকর্মের জন্যে ওদের ওপর কোনো বিপর্যয় এসে পড়বে এবং (তখন) তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের কাছে কোনো রসূল পাঠালে না কেন? তাহলে আমরা তোমার আয়াতসমূহের অনুবর্তন করতাম এবং আমরা (সবাই) ঈমানদারদের দলে শামিল হয়ে যেতাম।

৪৮. অতপর যখন আমার কাছ থেকে তাদের কাছে সত্য (দ্বীন) এলো, তখন তারা বলতে লাগলো, এ (নবী)-কে সে ধরনের কিছু (কেতাব) দেয়া হলো না কেন, যা মুসাকে দেয়া হয়েছিলো, (কিন্তু তুমি বলো,) মুসাকে যা দেয়া হয়েছিলো তা কি ইতিপূর্বে এরা অস্বীকার করেনি? তারা তো (এও) বলেছে, এ উভয়টিই হচ্ছে যাদু, এর একটি আরেকটির সমর্থক এবং তারা বলেছে, আমরা (এর) কোনোটাই মানি না।

৪৯. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, যদি (উভয়টাই মিথ্যা হয় এবং) তোমরা (তোমাদের এ দাবীতে) সত্যবাদী হও, তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে অন্য কোনো কেতাব নিয়ে এসো, যা এ দুটোর তুলনায় ভালো হবে, (তাহলে) আমিও তার অনুসরণ করবো।

৫০. যদি এরা তোমার এ কথার কোনো জবাব না দেয়, তাহলে জেনে রেখো, এরা (আসলে) নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করেই (এসব বলে); তার চাইতে বেশী গোমরাহ ব্যক্তি আর কে আছে যে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোনো হেদায়াত (পাওয়া) ছাড়াই কেবল নিজের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে; আল্লাহ তায়ালা কখনো যালেম জাতিকে পথ দেখান না ।

৫১. আমি (আমার) বাণী (কোরআনের এ কথাকে) তাদের জন্যে ধীরে ধীরে পাঠিয়েছি, যাতে করে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে ।

৫২. (কোরআন নাযিলের) আগে আমি যাদের আমার কেতাব দান করেছিলাম (তাদের মধ্যে যারা সত্যানুসন্ধ ছিলো), তারা এর ওপর ঈমান এনেছে।

৫৩. যখন তাদের সামনে এ কেতাব তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, আমরা এর ওপর ঈমান এনেছি, (কেননা) আমরা জানি, এটাই সত্য, এটা আমাদের মালিকের কাছ থেকেই এসেছে, আমরা আগেও (আল্লাহর কেতাব) মানতাম।

৫৪. এরাই হচ্ছে সেসব লোক যাদের তাদের (দ্বীনের পথে) ধৈর্য ধারণের জন্যে দু'বার পুরস্কৃত করা হবে, তারা তাদের ভালো (আমল) দ্বারা মন্দ (আমল) দুর করে, আমি তাদের যে রেযেক দান করেছি তারা তা থেকে (আল্লাহর পথে) ব্যয় করে।

৫৫. এরা যখন কোনো বাজে কথা শুনে তখন তা পরিহার করে চলে এবং (এদের) বলে, আমাদের কাজের (দায়িত্ব) আমাদের (ওপর), আর তোমাদের (কাজের) দায়িত্ব তোমাদের (ওপর), তোমাদের জন্যে সালাম, তা ছাড়া আমরা জাহেলদের সাথে তর্ক করতে চাই না!

৫৬. যাকে তুমি ভালোবাসো (তবে এ ভালোবাসার কারণেই) তুমি তাকে হেদায়াত দান করতে পারবে না, তবে হ্যাঁ, আল্লাহ তায়ালা যাকে চান তাকে অবশ্যই তিনি হেদায়াত দান করেন, তিনি ভালো করেই জানেন কারা এ হেদায়াতের অনুসারী (হবে) ।

৫৭. (হে নবী,) এরা বলে, যদি আমরা তোমার সাথে মিলে হেদায়াতের পথ ধরি তাহলে (অবিলম্বে) আমাদের এ যমীন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হবে; (তুমি তাদের জিজ্ঞেস করো,) আমি কি তাদের (বসবাসের) জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তার শহরে জায়গা করে দেইনি? যেখানে তাদের রেযেকের জন্যে আমার কাছ থেকে সব ধরনের ফলমুল আসে, কিন্তু তাদের অধিকাংশ মানুষই (শোকর আদায় করতে) জানে না।

৫৮. আমি এমন অসংখ্য জনপদ নির্মূল করে দিয়েছি, যার অধিবাসীদের তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি মদমত্ত করে রেখেছিলো, (অথচ) এ হচ্ছে তাদের ঘরবাড়িগুলো (আর এ হচ্ছে তার ধ্বংসাবশেষ), এদের (ধ্বংসের) পর (এসব জায়গায়) সামান্যই কোনো মানুষের বসতি ছিলো; (শেষ পর্যন্ত) আমিই (সব কিছুর) মালিক হয়ে থাকলাম।

৫৯. (হে নবী,) তোমার মালিক কোনো জনপদকেই ধ্বংস করেন না, যতোক্ষণ না সে (জনপদের) কেন্দ্রস্থলে কোনো নবী না পাঠান, যে তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবে, আমি জনপদসমূহ কখনো বরবাদ করি না, যতোক্ষণ না সেখানকার অধিবাসীরা যালেম (হিসেবে পরিগণিত) হয়ে যায়।

৬০. তোমাদের যা কিছু দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে কেবল এ (অস্থায়ী) পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস ও তার শোভা সামগ্রী মাত্র, (মনে রাখবে) যা কিছু আল্লাহ তায়ালার কাছে আছে তা (এর চাইতে অনেক উৎকৃষ্ট এবং স্থায়ী, তোমরা কি বুঝতে পারো না?

৬১. যাকে আমি (জান্নাতের) উত্তম প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছি এবং যে ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন) তা পেয়েও যাবে, সে ব্যক্তি কি করে তার মতো হবে যাকে আমি পার্থিব জীবনের কিছু ভোগসম্ভার দিয়ে রেখেছি অতপর যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে গন্য হবে যাদের কেয়ামতের দিন আমার সম্মুখে তলব করা হবে।

৬২. সেদিন আল্লাহ তায়ালা তাদের ডাক দেবেন এবং বলবেন, আজ কোথায় আমার ( সেসব) শরীক, যাদের তোমরা (আমার সার্বভৌমত্বে) অংশীদার মনে করতে!

৬৩. (আযাবের) এ বিধান যাদের ওপর কার্যকর হবে তারা (তখন) বলবে, হে আমাদের মালিক, এরাই হচ্ছে সেসব ব্যক্তি যাদের আমরা গোমরাহ করেছিলাম, আমরা যেমনি এদের গোমরাহ করেছিলাম, তেমনি আমরা নিজেরাও গোমরাহ হয়ে গিয়েছিলাম, (আজ) আমরা তোমার দরবারে দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাচ্ছি, এরা কেবল আমাদেরই গোলামী করতো না (এরা নিজেদের প্রবৃত্তির গোলামীও করতো)।

৬৪. অতপর (মোশরেকদের) বলা হবে, ডাকো আজ তোমাদের শরীকদের, তারপর তারা তাদের ডাকবে, কিন্তু তারা তাদের কোনোই জবাব দিতে পারবে না, ( ইতিমধ্যে) মোশরকেরা নিজের চোখেই আযাব দেখতে পাবে, কতো ভালো হতো যদি এরা সঠিক পথের সন্ধান পেতো!

৬৫. সেদিন (আল্লাহ তায়ালা পুনরায়) তাদের ডাক দেবেন এবং বলবেন, নবীদের তোমরা কি জবাব দিয়েছিলে?

৬৬. সেদিন তাদের (মনের) ওপর (থেকে) সব বিষয়ই হারিয়ে যাবে, তারা একে অপরের কাছে কোনো কথা জিজ্ঞেস করার সুযোগ পাবে না ।

৬৭. তবে যে ব্যক্তি তাওবা করেছে এবং ঈমান এনেছে, নেক আমল করেছে (তার কথা আলাদা), আশা করা যায় সে মুক্তিপ্রাপ্তদের দলে শামিল হবে!

৬৮. (হে নবী, তুমি তাদের বলো,) তোমার মালিক যা চান তাই তিনি পয়দা করেন এবং (তাদের জন্যে) যে বিধান তিনি পছন্দ করেন তাই তিনি জারি করেন, (এ ব্যাপারে) তাদের কারোই কোনো ক্ষমতা নেই, আল্লাহ তায়ালা মহান, ওদের শেরেক থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে।

৬৯. তোমার মালিক আরো জানেন, যা কিছু এদের অন্তর গোপন করে এবং যা কিছু এরা প্রকাশ করে ।

৭০. আর তিনিই মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি) ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই; সমস্ত তারীফ তাঁর জন্যে দুনিয়াতে (যেমন) এবং আখেরাতেও (তেমনি), আইন ও বিধান তাঁরই, তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।

৭১. (হে নবী,) এদের জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছো, যদি আল্লাহ তায়ালা রাতকে তোমাদের ওপর কেয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন তাহলে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া এমন কোন মাবুদ আছে যে তোমাদের একটুখানি আলো এনে দিতে পারবে; (তারপরও) তোমরা কর্ণপাত করবে না?

৭২. তুমি (আরো) বলো, তোমরা কখনো একথা কি ভেবে দেখেছো, আল্লাহ তায়ালা যদি দিনকেও (রোয) কেয়ামত পর্যন্ত (স্থায়ী করে) তোমাদের ওপর বসিয়ে দেন, তাহলে (বলো) আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কোন মাবুদ আছে যে তোমাদের (জন্যে) রাত এনে দিতে পারবে, যেখানে তোমরা এতোটুকু বিশ্রাম নেবে, তোমরা কি (আল্লাহ তায়ালার এ নেয়ামত) দেখতে পাও না?

৭৩. এটা তো তাঁরই রহমত যে, তিনি তোমাদের জন্যে রাত ও দিন বানিয়েছেন। যাতে করে তোমরা (রাতে) আরাম করতে পারো এবং (দিনের বেলায়) তাঁর (জীবিকার) অনুগ্রহ সন্ধান করতে পারো, যেন তোমরা তাঁর শোকর আদায় করতে পারো!

৭৪. সেদিন (আবার) আল্লাহ তায়ালা তাদের ডাক দেবেন এবং বলবেন, কোথায় (আজ) আমার সেসব শরীক যাদের তোমরা (আমার সার্বভৌমত্বে) অংশীদার মনে করতে!

৭৫. সেদিন আমি প্রত্যেক জাতির মাঝ থেকে এক একজন সাক্ষী বের করে আনবো, অতপর (তাদের) বলবো, তোমরা (সবাই তোমাদের পক্ষে) দলীল প্রমাণ হাযির করো, (সেদিন) ওরা সবাই বুঝতে পারবে, (যাবতীয় সত্য) একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যেই নির্ধারিত, তারা (আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে) যেসব কথা উদ্ভাবন করতো তা নিমিষেই তাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাবে।

৭৬. নিসন্দেহে কারূন ছিলো মুসার জাতির লোক, (কিন্তু তা সত্ত্বেও) সে তাদের ওপর ভারী যুলুম করেছিলো, (অথচ) আমি তাকে (এতো) বিশাল পরিমাণ ধনভান্ডার দান করেছিলাম যে, তার ( ভান্ডারের) চাবিগুলো (বহন করা) একদল শক্তিশালী লোকের পক্ষেও ছিলো (একটা) কষ্টসাধ্য ব্যাপার, তার জাতির লোকেরা তাকে বললো, (ধন সম্পদ নিয়ে) দন্ত করো না, নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা দাম্ভিকদের পছন্দ করেন না।

৭৭. (এবং এই যে সম্পদ) যা আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দিয়েছেন, তা দিয়ে পরকালের কল্যাণ তালাশ করো এবং দুনিয়া থেকে সম্পদের যে (আসল) অংশ (পরকালে নিয়ে যেতে হবে) তা ভুলে যেয়ো না এবং আল্লাহ তায়ালা যেভাবে (ধন সম্পদ দিয়ে) তোমার ওপর মেহেরবানী করেছেন, তুমিও তেমনি (তাঁর পথে তা ব্যয় করে তাঁর বান্দাদের ওপর) দয়া করো, (সম্পদের বাহাদুরী দিয়ে) যমীনে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে যেয়ো না; নিসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ফাসাদী লোকদের ভালোবাসেন না ।

৭৮. কারূন (একথা শুনে) বললো, এ (বিশাল) ধন সম্পদ আমার জ্ঞান ( ও যোগ্যতা)-বলেই আমাকে দেয়া হয়েছে; কিন্তু এ (মূর্খ) লোকটা কি জানতো না, আল্লাহ তায়ালা তার আগে বহু মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, যারা শক্তি সামর্থে তার চাইতে ছিলো অনেক প্রবল এবং তাদের জমা মূলধনও (তার তুলনায়) ছিলো অনেক বেশী; অপরাধীদের তাদের অপরাধ (-জনিত অজুহাত) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না।

৭৯. অতপর (একদিন) সে তার লোকদের সামনে (নিজের শান শওকতের প্রদর্শনী করার জন্যে) জাঁকজমকের সাথে বের হলো; (মানুষদের মাঝে) যারা পার্থিব জীবনের (ভোগবিলাস) কামনা করতো তখন তারা বললো, আহা! (কতো ভালো হতো) কারুনকে যা দেয়া হয়েছে তা যদি আমাদেরও থাকতো, আসলেই সে মহাভাগ্যবান ব্যক্তি ।

৮০. (অপরদিকে) যাদের (আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে) জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা বললো, ধিক তোমাদের (সম্পদের) ওপর, (বস্তুত) যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনে এবং নেক কাজ করে, তাদের জন্যে তো আল্লাহ তায়ালার দেয়া পুরস্কারই শ্রেষ্ঠ, আর তা শুধু ধৈর্যশীলরাই পেতে পারে।

৮১. পরিশেষে আমি তাকে এবং তার (ঐশ্বর্যে ভরা) প্রাসাদকে যমীনে গেড়ে দিলাম | তখন (যারা তার এ সম্পদের জন্যে একটু আগেই আক্ষেপ করছিলো তাদের) এমন কোনো দলই (সেখানে মজুদ) ছিলো না, যারা আল্লাহ তায়ালার (গযবের) মোকাবেলায় তাকে (একটু) সাহায্য করতে পারলো, না সে নিজে নিজেকে (গযব থেকে) রক্ষা করতে পারলো!

৮২. মাত্র গতকাল (সন্ধ্যা) পর্যন্ত যারা তার জায়গায় পৌঁছার কামনা করছিলো, তারা আজ সকাল বেলায়ই বলতে লাগলো, (আসলে) আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মাঝে যাকে চান (তার জন্যে) রেযেক বাড়িয়ে দেন, আর যাকে চান (তার জন্যে) তা সংকীর্ণ করে দেন, যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহ না করতেন, তবে আমাদেরও তিনি (কারূনের মতোই আজ) যমীনের ভেতর পুঁতে দিতেন; (আসলেই) কাফেররা কখনোই সফলকাম হয় না।

৮৩. এটা হচ্ছে আখেরাতের (চির শান্তির) ঘর, আমি এটা তাদের জন্যে নির্ধারিত করে রেখেছি যারা দুনিয়ায় (কোনো রকম) প্রাধান্য বিস্তার করতে চায় না- না তারা (যমীনে) কোনো রকম বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চায়, শুভ পরিণাম তো (এই) পরহেযগার মানুষদের জন্যেই রয়েছে।

৮৪. যে ব্যক্তিই (কেয়ামতের দিন কোনো) নেকী নিয়ে হাযির হবে, তাকে তার (পাওনার) চাইতে বেশী পুরস্কার দেয়া হবে, আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ নিয়ে আসবে (সে যেন জেনে রাখে), যারাই মন্দ কাজ করেছে তাদের কেবল সেটুকু পরিমাণ শাস্তিই দেয়া হবে, যে পরিমাণ (মন্দ তারা নিয়ে এখানে) হাযির হবে ।

৮৫. (হে নবী,) যে আল্লাহ তায়ালা এ কোরআন তোমার ওপর অবশ্য পালনীয় করেছেন, তিনি অবশ্যই তোমাকে তোমার (কাংখিত পুণ্য) ভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন; তুমি (তাদের) বলো, আমার মালিক এটা ভালো করেই জানেন, কে তাঁর কাছ থেকে হেদায়াত নিয়ে এসেছে আর কে সুস্পষ্ট গোমরাহীতে (নিমজ্জিত) রয়েছে ।

৮৬. (হে নবী,) তুমি (তো কখনো) এ আশা করোনি, তোমার ওপর কোনো কেতাব নাযিল হবে, (হ্যাঁ, এটা ছিলো) তোমার মালিকের একান্ত মেহেরবানী (যে, তিনি তোমাকে কেতাব দান করেছেন), সুতরাং তুমি কখনো (সত্য প্রত্যাখ্যানকারী) যালেমদের পক্ষ নেবে না।

৮৭. (দেখো,) এমন যেন কখনো না হয় যে, তোমার ওপর আল্লাহ তায়ালার আয়াতসমূহ নাযিল হবার পর তারা তোমাকে (এর অনুসরণ থেকে) বিরত রাখবে, (তোমার কাজ হবে) তুমি মানুষদের তোমার মালিকের দিকে আহ্বান করবে এবং নিজে তুমি কখনো মোশরেকদের অন্তরভুক্ত হবে না ।

৮৮. কখনো আল্লাহ তায়ালার সাথে তুমি অন্য কোনো মারদকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো মাবুদ নেইও | তাঁর মহান সত্তা ছাড়া প্রতিটি বস্তুই ধ্বংসশীল; যাবতীয় সার্বভৌমত্ব তাঁর জন্যেই এবং তোমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url