আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আর রোম’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আর রোম | Surah Ar RUM | سورة الروم‎‎



সূরা আর রোম’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা আর রোম, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৬০ রুকু ৬

সূরা আর রোম



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. আলিফ লা-ম-মীম,

২. রোম (জাতি) পরাজিত হয়ে গেছে,

৩. (পরাজিত হয়েছে) ভূমন্ডলের সবচাইতে নিচু অঞ্চলে, তাদের এ পরাজয়ের পর অচিরেই তারা (আবার) বিজয় লাভ করবে,

৪. (তিন থেকে নয়; এ) বিজোড় বছরের মাঝেই (এ ঘটনা ঘটবে), এর আগেও (চুড়ান্ত) ক্ষমতা ছিলো আল্লাহ তায়ালার হাতে এবং (এ ঘটনার) পরেও (সে চাবিকাঠি থাকবে) তাঁরই হাতে; (রোমকদের বিজয়ে) সেদিন ঈমানদার ব্যক্তিরা ভীষণ খুশী হবে,

৫. আল্লাহ তায়ালার সাহায্যেই (এটা ঘটবে), তিনি (যখন) যাকে চান তাকেই (বিজয়ে) সাহায্য দান করেন; তিনি মহাপরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু,

৬. (এটা হচ্ছে) আল্লাহ তায়ালারই ওয়াদা; আল্লাহ তায়ালা (কখনো) তাঁর ওয়াদার বরখেলাপ করেন না, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (তা) জানে না।

৭. তারা তো পার্থিব জীবনের (শুধু) বাইরের দিকটি (সম্পর্কেই) জানে, কিন্তু আখেরাতের জীবন সম্পর্কে তারা (সম্পূর্ণই) গাফেল।

৮. এ মানুষগুলো কি নিজেদের মনে এ কথা চিন্তা করে না, আল্লাহ তায়ালা (কিভাবে) আসমানসমুহ, যমীন ও অন্য সব কিছু যথাযথভাবে এবং একটি সুনির্দিষ্ট সময় দিয়ে পয়দা করেছেন; কিন্তু মানুষদের মাঝে অধিকাংশই (এসব কিছুর শেষে) তাদের মালিকের সামনে হাযির হওয়াকে অস্বীকার করে ।

৯. এরা কি (আমার) যমীনে ভ্রমণ করে না এবং তাদের আগের লোকদের পরিণাম প্রত্যক্ষ করে না? অথচ তারা শক্তিতে এদের চাইতে ছিলো অনেক প্রবল, তারা এ যমীনে অনেক চাষবাস করেছে, (আজ) এরা যেমন একে আবাদ করছে, তাদের চাইতে (বরং) তারা বেশী পরিমাণেই একে আবাদ করেছিলো, (অতঃপর) তাদের কাছে তাদের রসুলরা সুস্পষ্ট নিদর্শন নিয়ে হাযির হয়েছিলো (কিন্তু তারা রসুলদের মানতে অস্বীকার করায় আমার গযব আবাদ করা সেই শখের যমীন থেকে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দিলো); আল্লাহ তায়ালা তাদের ওপর (গযব পাঠিয়ে) কোনো যুলুম করেননি, বরং (কুফরী করে) তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর যুলুম করেছে ।

১০. অতঃপর যারা মন্দ কাজ করেছে তাদের পরিণাম মন্দই হয়েছে, কেননা তারা আল্লাহ তায়ালার আয়াতকে অস্বীকার করেছে, তা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপও করেছে!

১১. আল্লাহ তায়ালা (নিজেই তাঁর) সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন, আবার তিনিই তাকে তার (মুলের) দিকে ফিরিয়ে নেন, অতঃপর তোমাদের তাঁর কাছেই ফিরিয়ে নেয়া হবে ।

১২. যেদিন কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে, সেদিন (এর ভয়াবহতা দেখে) অপরাধী ব্যক্তিরা ভীতবিহ্বল হয়ে পড়বে ।

১৩. (সেদিন) তাদের শরীকদের কেউই তাদের জন্যে সুপারিশ করার মতো থাকবে না, বরং তারা তাদের এ শরীক করার ঘটনাই (তখন) অস্বীকার করবে ।

১৪. যেদিন কেয়ামত হবে সেদিন মানুষরা (ঈমান ও কুফুরের ভিত্তিতে) আলাদা হয়ে পড়বে ।

১৫. যারা আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং (সাথে সাথে) নেক কাজ করেছে, তারা (জান্নাতের) বাগিচায় থাকবে, তাদের (সেখানে প্রাচুর্যপূর্ণ) মেহমানদারী করা হবে ।

১৬. (অপরদিকে) যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে, (অস্বীকার করেছে) শেষ (বিচারের দিনে আমার) সামনাসামনি হওয়ার ঘটনাকে, তাদের (ভয়াবহ ) আযাবের সম্মুখীন করা হবে ।

১৭. অতএব (দিবাশেষে) যখন তোমরা সন্ধ্যা করো তখন আল্লাহ তায়ালার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো, ( ঘোষণা করো) যখন সকাল (বেলার মাধ্যমে দিনের শুরু) করো তখনও ।

১৮. আসমানসমুহ ও যমীনের যাবতীয় প্রশংসা তো একমাত্র তাঁরই জন্যে, (তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো) যখন তোমরা (দিনের) দ্বিতীয় প্রহর (শুরু) করো, আবার যখন (দিনের) তৃতীয় প্রহর (শুরু) করো (তখনো তার মাহাত্ম্য ঘোষণা করো) ।

১৯. তিনিই মৃত থেকে জীবন্ত কিছুর আবির্ভাব ঘটান, একইভাবে জীবন্ত কিছু থেকে মৃতকে বের করে আনেন, তিনিই (সেই সত্তা, যিনি এ) যমীনকে তার নির্জীব অবস্থার পর পুনরায় জীবন দান করেন; (ঠিক) এভাবেই তোমাদেরও (আবার) পুনরুত্থিত করা হবে ।

২০. আল্লাহ তায়ালার (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের মধ্যে (একটি নিদর্শন) এই যে, (শুরুতে) তিনি তোমাদের মাটি থেকে পয়দা করেছেন, অতঃপর তোমরা মানুষ হিসেবে যমীনে ( সর্বত্র) ছড়িয়ে পড়লে ।

২১. তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের (মাঝে) এও (একটি) যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে (তোমাদের) সংগী সংগিনীদের বানিয়েছেন, যাতে করে তোমরা তাদের কাছে সুখ শান্তি লাভ করতে পারো, (উপরন্তু) তিনি তোমাদের মাঝে ভালোবাসা ও (পারস্পরিক সৌহার্দ্যর্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন, অবশ্যই এর মাঝে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে।

২২. আকাশমালা ও যমীনের সৃষ্টি, তোমাদের পারস্পরিক ভাষা ও বর্ণ বৈচিত্র (নিঃসন্দেহে) তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের মাঝে (এক একটি বড়ো নিদর্শন); অবশ্যই জ্ঞানবান মানুষদের জন্যে এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে।

২৩. তোমাদের রাত ও দিনের ঘুম, তোমাদের তাঁর দেয়া রেযেক তালাশ করাও তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের অন্তর্ভুক্ত (একটি); অবশ্য এসব কিছুর মাঝে যে জাতি (আল্লাহর কথা) শোনে তাদের জন্যে অনেক নিদর্শন রয়েছে।

২৪. তাঁর (কুদরতের) নিদর্শনসমুহের মাঝে এও একটি যে, তিনি তোমাদের বিদ্যুৎ (ও তার আলো) দেখান ভয় এবং আশা সঞ্চারের মাঝ দিয়ে (তা প্রতিভাত হয়), তিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তা দিয়ে যমীন একবার নির্জীব হয়ে যাওয়ার পর তাকে পুনরায় জীবন দান করেন; অবশ্য এতেও বোধশক্তিসম্পন্ন জাতির জন্যে (আল্লাহকে চেনার) অনেক নিদর্শন রয়েছে ।

২৫. তাঁর নিদর্শনসমুহের মাঝে এও (একটি) যে, তাঁর আদেশেই আসমান যমীন (নিজ নিজ অবস্থানের ওপর) দাঁড়িয়ে আছে; (তোমরা এক সময় মাটির ভেতরে চলে যাবে) অতঃপর যখন তিনি তোমাদের (সে) মাটির (ভেতর) থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে ডাক দেবেন, তখন (সে ডাক শোনামাত্রই) তোমরা বেরিয়ে আসবে ।

২৬. (এ) আকাশমালা ও যমীনে (যেখানে) যা কিছু আছে তা তো (একান্তভাবে) তাঁর জন্যেই; সবকিছু তাঁর (আদেশেরই) অনুগত।

২৭. (তিনিই সেই মহান সত্তা) যিনি (গোটা) সৃষ্টি (জগত)-কে প্রথমবার পয়দা করেছেন, অতঃপর (কেয়ামতের দিন) তাকে আবার আবর্তিত করবেন, সৃষ্টির (প্রক্রিয়ায়) সে (কাজ)-টি তাঁর জন্যে খুবই সহজ; (কেননা) আসমানসমুহ ও যমীনে সর্বোচ্চ মর্যাদা তো তাঁর জন্যেই নির্ধারিত এবং তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

২৮. (হে মানুষরা,) আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (বুঝার) জন্যে তোমাদের (নিত্যদিনের ঘটনা) থেকে উদাহরণ পেশ করছেন; (সে উদাহরণটির জিজ্ঞাস্য হচ্ছে,) আমি তোমাদের যে রেযেক দান করেছি তাতে কি তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসদাসীরা সমভাবে অংশীদার? (এমন অংশীদার) যাতে করে তোমরা (এবং তারা) সমান হয়ে যেতে পারো (বলতে পারো), তোমরা কি তাদের ব্যাপারে) ততোটুকু ভয় করো, যতোটুকু ভয় নিজেদের ব্যাপারে করো; (বস্তুত) এভাবেই আমি বোধশক্তিসম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে (আমার কথাগুলো) খুলে খুলে বর্ণনা করি ।

২৯. কিন্তু যারা সীমালংঘনকারী, তারা অজ্ঞানতাবশত নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে রেখেছে, সুতরাং আল্লাহ তায়ালা যাকে গোমরাহ করে দিয়েছেন তাকে কে হেদায়াতের পথ দেখাতে পারে? এমন সব লোকদের কোনো সাহায্যকারীও নেই ।

৩০. অতএব (হে নবী), তুমি নিষ্ঠার সাথে নিজেকে (সঠিক) দ্বীনের ওপর কায়েম রাখো; আল্লাহ তায়ালার প্রকৃতির ওপর (নিজেকে দাঁড় করাও), যার ওপর তিনি মানুষকে পয়দা করেছেন (মনে রেখো); আল্লাহর সৃষ্টির মাঝে কোনো রদবদল নেই; এ হচ্ছে সহজ (সরল) জীবন বিধান, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না,

৩১. তোমরা একনিষ্ঠভাবে তাঁরই অভিমুখী হও এবং শুধু তাঁকেই ভয় করো, তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা করো এবং কখনো মোশরেকদের দলভুক্ত হয়ো না,

৩২. (তাদের মাঝে এমনও আছে) যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে এবং তারা নানা ফের্কায়ও পরিণত হয়ে গেছে; প্রত্যেক দলই নিজেদের কাছে যা কিছু রয়েছে তা নিয়ে মত্ত আছে ।

৩৩. মানুষদের যখন কোনো দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে তখন তারা (আল্লাহর) দিকে বিনয়ের সাথে আল্লাহর দিকে ধাবিত হয়ে তাদের মালিককে ডাকতে থাকে, অতঃপর যখন তিনি তাদের তাঁর দয়া (নেয়ামতের স্বাদ) উপভোগ করান, তখন সাথে সাথে তাদের একদল লোক তাদের মালিকের সাথে (অন্যদের) শরীক করতে শুরু করে,

৩৪. উদ্দেশ্য হচ্ছে, যা কিছু (অনুগ্রহ) আমি তাদের দান করেছি তার (প্রতি) যেন অকৃতজ্ঞতা (-জনিত আচরণ) করতে পারে, সুতরাং তোমরা ভোগ করে নাও, অতঃপর অচিরেই তোমরা (তোমাদের কুফরীর ফলাফল) জানতে পারবে ।

৩৫. কিংবা আমি কি তাদের ওপর এমন কোনো দলীল প্রমাণ পাঠিয়েছি যে, যে শেরেক এরা করে চলেছে তা (তাদের) এমন কথা বলে ।

৩৬. আমি যখন মানুষদের অনুগ্রহ (-এর স্বাদ) আস্বাদন করাই, তখন তারা তাতে (ভীষণ) খুশী হয়; আবার যখন তাদেরই (মন্দ) কাজের কারণে তাদের ওপর কোনো মসিবত পতিত হয় তখন তারা সাথে সাথেই নিরাশ হয়ে পড়ে।

৩৭. এরা কি এ বিষয়টি নিয়ে ভেবে দেখেনি, আল্লাহ তায়ালা যার জন্যে চান তার রেযেক প্রসারিত করে দেন, আবার (যাকে চান তাকে) কম করে দেন; নিঃসন্দেহে যারা ঈমানদার, এতে (তাদের জন্যে) অনেক নিদর্শন রয়েছে।

৩৮. অতএব (হে ঈমানদার ব্যক্তি), তুমি আত্মীয় স্বজনকে তার অধিকার আদায় করে দাও, অভাবগ্রস্থ মোসাফেরদেরও (নিজ নিজ পাওনা বুঝিয়ে দাও), এ (বিষয়টি) তাদের জন্যে ভালো যারা (একমাত্র) আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি কামনা করে, (আর সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে সফলকাম ।

৩৯. যা (কিছু ধন সম্পদ) তোমরা সুদের ওপর দাও, (তা তো এ জন্যেই দাও) যেন তা অন্য মানুষদের মালের সাথে (শামিল হয়ে) বৃদ্ধি পায়, আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে তা (কিন্তু মোটেই) বাড়ে না, অপরদিকে যে যাকাত তোমরা দান করো তা (যেহেতু একান্তভাবে) আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে দান করো, তাই বরং বৃদ্ধি পায়, জেনে রেখো, এরাই হচ্ছে (সেসব লোক) যারা (যাকাতের মাধ্যমে) আল্লাহর দরবারে নিজেদের সম্পদ বহুগুণে বাড়িয়ে নেয়।

৪০. আল্লাহ তায়ালা (সেই পরাক্রমশালী সত্তা) যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি তোমাদের রেযেক দান করেছেন, তিনিই আবার তোমাদের মৃত্যু দেবেন, অতঃপর (কেয়ামতের দিন) তিনি তোমাদের (আবার) জীবন দেবেন; তোমরা যাদের (আল্লাহর সাথে) শরীক করে নিয়েছো তাদের কেউ কি এমন আছে, যে এর কোনো একটি কাজও করতে পারবে? (মুলত) তারা (আল্লাহর সাথে) যাদের শরীক বানায়, আল্লাহ তায়ালা তা থেকে অনেক পবিত্র, অনেক মহান।

৪১. মানুষের কৃতকর্মের দরুন জলে স্থলে ( সর্বত্র আজ) বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে, (মুলত) আল্লাহ তায়ালা তাদের কতিপয় কাজকর্মের জন্যে তাদের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাতে চান, সম্ভবত তারা (সেসব কাজ থেকে) ফিরে আসবে।

৪২. (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা (আল্লাহর) যমীনে ভ্রমণ করো এবং যারা আগে (এখানে মজুদ) ছিলো, (আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করায়) তাদের কি (পরিণতি) হয়েছিলো তা অবলোকন করো; (মুলত) তাদের অধিকাংশ লোকই ছিলো মোশরেক।

৪৩. অতএব (হে নবী), তুমি তোমার নিজেকে সত্য দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে রাখো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে (ভয়াবহ) দিনটি আসার আগে (পর্যন্ত), যা কেউই ফিরিয়ে রাখতে পারবে না, আর সেদিন যখন আসবে তখন (মোমেন ও কাফের) সবাই আলাদা হয়ে যাবে।

৪৪. যে ব্যক্তি (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকার করলো, তার (এ) কুফরী ( আযাব হিসেবে) তার ওপরই (এসে পড়বে, অপর দিকে) যে ব্যক্তি নেক আমল করলো, তারা (যেন এর মাধ্যমে) নিজেদের জন্যে (সুখ) শয্যা রচনা করলো,

৪৫. (মুলত) যারাই (আল্লাহ তায়ালার ওপর) ঈমান আনবে এবং (সে অনুযায়ী) নেক আমল করবে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর অনুগ্রহ দ্বারা তাদের ( যথোপযুক্ত) বিনিময় দান করবেন; আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের কখনো পছন্দ করেন না।

৪৬. তাঁর (মহান কুদরতের) নিদর্শনসমুহের মাঝে এও (একটি) যে, তিনি (বৃষ্টির) সুসংবাদবাহী বাতাস প্রেরণ করেন, যাতে করে তিনি তোমাদের তাঁর অনুগ্রহের (স্বাদ) আস্বাদন করাতে পারেন, (উপরন্তু) তাঁর আদেশে (সমুদ্রে) জলযানগুলো যেন চলতে পারে এবং তোমরাও (এর মাধ্যমে) তাঁর কাছ থেকে) রেযেক তালাশ করতে পারো এবং আশা করা যায়, তোমরা (এসব কিছুর জন্যে) তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবে।

৪৭. (হে রসুল,) আমি তোমার আগে আরো রসুল তাদের জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম, তারা (নবুওতের) সুস্পষ্ট নিদর্শনসমুহ নিয়েও এসেছিলো (কিন্তু তারা তা অস্বীকার করেছে), অতঃপর যারা অপরাধ করেছে আমি তাদের কাছ থেকে (মর্মান্তিক) প্রতিশোধ গ্রহণ করেছি; (কেননা, তাদের মোকাবেলায়) ঈমানদারদের সাহায্য করা ছিলো আমার ওপর কর্তব্য ।

৪৮. আল্লাহ তায়ালা (সেই মহান সত্তা, যিনি তোমাদের জন্যে) বায়ু প্রেরণ করেন, অতঃপর তা (এক সময়) মেঘমালা সঞ্চালিত করে, তারপর তিনি যেভাবে চান তাকে আসমানে ছড়িয়ে দেন, তাকে টুকরো টুকরো করেন, (এক পর্যায়ে) তুমি দেখতে পাও তার ভেতর থেকে বৃষ্টি (কণা) বেরিয়ে আসছে, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকেই চান তার ওপরই তা পৌঁছে দেন, তখন তারা (এটা দেখে) ভীষণ হর্ষোৎফুল্ল হয়ে যায়,

৪৯. অথচ এরাই (একটু আগে) তাদের ওপর (বৃষ্টি) নাযিলের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাশ ছিলো!

৫০. তাকিয়ে দেখো আল্লাহ তায়ালার (অফুরন্ত রহমতের প্রভাবের দিকে, কিভাবে তিনি যমীনকে একবার মরে যাওয়ার পর পুনরায় (শ্যামল ও) জীবন্ত করে তোলেন; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (এভাবে কেয়ামতের দিন) সব মৃতকে জীবন দান করবেন, কেননা তিনি সর্ববিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান।

৫১. যদি আমি কখনো এমন বায়ু পাঠাতে শুরু করি, (যার ফলে) মানুষ ফসলকে হলুদ রঙের দেখতে পায়, তখন তারা আমার অকৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে শুরু করে।

৫২. (হে নবী,) মৃতকে তো তুমি তোমার কথা শোনাতে পারবে না, না পারবে বধিরকে তোমার ডাক শোনাতে, (বিশেষ করে) যখন ওরা (তোমাকে দেখেই) মুখ ফিরিয়ে নেয়।

৫৩. তুমি অন্ধদের তাদের গোমরাহী থেকে (বের করে) সঠিক পথ দেখাতে পারবে না, তুমি তো কেবল এমন লোকদেরই (আমার কথা) শোনাতে পারবে যে আমার আয়াতসমুহের ওপর ঈমান আনে, কেননা এরাই হচ্ছে (নিবেদিত) মুসলমান।

৫৪. আল্লাহ তায়ালাই (হচ্ছেন সেই মহান সত্তা) যিনি তোমাদের দুর্বল করে পয়দা করেছেন, অতঃপর তিনি (এ) দুর্বলতার পর (দেহে) শক্তি সৃষ্টি করেছেন, আবার (তিনি এ) শক্তির পর (পুনরায়) দুর্বলতা ও বার্ধক্য সৃষ্টি করেছেন; (বস্তুত) তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বোচ্চ ক্ষমতাবান ও সর্বজ্ঞ।

৫৫. যেদিন কেয়ামত কায়েম হবে সেদিন অপরাধী ব্যক্তিরা কসম খেয়ে বলবে, তারা তো (কবরে) মুহূর্তকালের বেশী অবস্থান করেনি; (আসলে) এরা এভাবেই সত্যবিমুখ থেকেছে (এবং দ্বারে দ্বারে ঠোকর খেয়েছে)।

৫৬. কিন্তু সেসব লোক, যাদের যথার্থ জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে, তারা বলবে (না), তোমরা তো আল্লাহ তায়ালার হিসাবমতো (কবরে) পুনরুত্থান দিবস পর্যন্তই অবস্থান করে এসেছো, আর আজকের দিনই হচ্ছে (সেই প্রতিশ্রুত) পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা (এ দিনটাকে সঠিক বলে) জানতে না।

৫৭. সেদিন যালেমদের ওযর আপত্তি তাদের কোনোই উপকারে আসবে না, না তাদের আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের সুযোগ দেয়া হবে ।

৫৮. (হে নবী,) আমি মানুষদের (বোঝানোর জন্যে এ কোরআনে সব ধরনের উদাহরণই পেশ করেছি; (তারপরও) যদি তুমি এদের কাছে কোনো আয়াত নিয়ে হাযির হও, তবুও এ কাফেররা বলবে, তোমরা ( তো কতিপয়) বাতিলপন্থী ব্যক্তি ছাড়া আর কিছুই নও।

৫৯. এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেন, যারা (সত্য সম্পর্কে কিছুই জানে না।

৬০. অতএব (হে নবী), তুমি ধৈর্য ধারণ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য, যাদের (শেষ বিচার দিনের ওপর) আস্থা নেই, তারা যেন তোমাকে কখনোই (সত্য দ্বীন থেকে) বিচলিত করতে না পারে ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url