আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা লোকমান’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা লোকমান | Surah Luqman | سورة لقمانم



সূরা লোকমান’এর বাংলা অনুবাদ


সূরা লোকমান, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৩৪ রুকু ৪

সূরা লোকমান


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. আলিফ-লা-ম-মীম,

২. এগুলো হচ্ছে একটি জ্ঞানগর্ভ কেতাবের আয়াত,

৩. নেককার মানুষদের জন্যে (এ হচ্ছে) হেদায়াত ও রহমত,

৪. যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত আদায় করে, (সর্বোপরি ) যারা শেষ বিচার দিনের ওপর নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে;

৫. এ লোকগুলোই তাদের মালিকের পক্ষ থেকে (যথার্থ) হেদায়াতের ওপর রয়েছে, (মুলত) এরাই হচ্ছে সফলকাম।

৬. মানুষদের মাঝে এমন ব্যক্তিও আছে যে অর্থহীন ও বেহুদা গল্প কাহিনী খরিদ করে, যাতে করে সে (মানুষদের নিতান্ত) অজ্ঞতার ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারে, সে একে হাসি, বিদ্রূপ, তামাশা হিসেবেই গ্রহণ করে; তাদের জন্যে অপমানকর শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে ।

৭. যখন তার সামনে আমার আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে আেেদৗ তা শুনতেই পায়নি, তার কান দুটি যেন বধির, তাকে তুমি কঠোর আযাবের সুসংবাদ দাও !

৮. নিঃসন্দেহে যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে নেয়ামতের (সমাহার) জান্নাতসমুহ ।

৯. সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে; আল্লাহ তায়ালার প্রতিশ্রুতি অতীব সত্য; তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

১০. তিনি আসমানসমুহকে কোনো স্তম্ভ ছাড়াই পয়দা করেছেন, তোমরা তো তা দেখতেই পাচ্ছো তিনি যমীনে পাহাড়সমুহ স্থাপন করে রেখেছেন যাতে করে তা তোমাদের নিয়ে কখনো (একদিকে) ঢলে না পড়ে, (আবার) তাতে প্রত্যেক প্রকারের বিচরণশীল জন্তু তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন; (হাঁ, আমিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছি, অতঃপর (সে পানি দিয়ে) সেখানে আমি সুন্দর সুন্দর জিনিসপত্র উৎপাদন করিয়েছি ।

১১. এ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টি, অতঃপর তোমরা আমাকে দেখাও তো, আল্লাহকে বাদ দিয়ে (যাদের তারা উপাসনা করে) তারা কি সৃষ্টি করেছে? (আসলেই) যালেমরা সুস্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত রয়েছে ।

১২. আমি লোকমানকে জ্ঞান দান করেছিলাম যে, তুমি আল্লাহ তায়ালার (নেয়ামতের) শোকর আদায় করো; (কেননা) যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করে সে তো তা করে তার নিজের (ভালোর) জন্যেই, (আর) যদি কেউ অকৃতজ্ঞতা (-জনক আচরণ) করে (তার জানা উচিত), আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে কারোই মুখাপেক্ষী নন, তিনি যাবতীয় প্রশংসার অধিকারী।

১৩. (হে নবী, স্মরণ করো,) যখন লোকমান তার ছেলেকে নসীহত করতে গিয়ে বললো, হে বৎস, আল্লাহ তায়ালার সাথে শেরেক করো না; (অবশ্যই) শেরেক হচ্ছে সবচাইতে বড়ো যুলুম।

১৪. আমি মানুষকে (তাদের) পিতা-মাতার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছি (যেন তারা তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে, কেননা), তার মা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং দুই বছর পরই সে (সন্তান) বুকের দুধ খাওয়া ছেড়েছে, তুমি (তোমার নিজের সৃষ্টির জন্যে) আমার শোকর আদায় করো এবং তোমার (লালন পালনের জন্যে) পিতা-মাতারও কৃতজ্ঞতা আদায় করো; (অবশ্য তোমাদের সবাইকে) আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।

১৫. যদি তারা উভয়ে তোমাকে এ বিষয়ের ওপর পীড়াপীড়ি করে যে, তুমি আমার সাথে শেরেক করবে, যে ব্যাপারে তোমার কোনো জ্ঞানই নেই, তাহলে তুমি তাদের দু'জনের (কারোই) কথা মানবে না, তবে দুনিয়ার জীবনে তুমি অবশ্যই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবে, তুমি কথা তো শুধু তারই শোনবে যে ব্যক্তি আমার অভিমুখী হয়ে আছে, অতঃপর তোমাদের আমার দিকেই ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তোমাদের বলে দেবো তোমরা (দুনিয়ার জীবনে) কি কি কাজ করতে ।

১৬. (লোকমান আরো বললো,) হে বৎস, যদি (তোমার) কোনো আমল সরিষার দানা পরিমাণ (ছোটোও) হয় এবং তা যদি কোনো শিলাখন্ডের ভেতর কিংবা আসমানসমুহেও (লুকিয়ে থাকে, অথবা (যদি তা থাকে) যমীনের ভেতরে, তাও আল্লাহ তায়ালা (সেদিন সামনে) এনে হাযির করবেন; আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই সুক্ষ্মদর্শী এবং সকল বিষয়ে সম্যক অবগত।

১৭. (লোকমান আরো বললো,) হে বৎস, তুমি নামায প্রতিষ্ঠা করো, মানুষদের ভালো কাজের আদেশ দাও, মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখো, তোমার ওপর কোনো বিপদ মসিবত এসে পড়লে তার ওপর ধৈর্য ধারণ করো; ( বিপদে ধৈর্য ধারণ করার) এ কাজটি নিঃসন্দেহে একটি বড়ো সাহসিকতাপুর্ণ কাজ,

১৮. (হে বৎস,) কখনো অহংকারবশে তুমি মানুষদের জন্যে তোমার গাল ফুলিয়ে রেখে তাদের অবজ্ঞা করো না এবং (আল্লাহর) যমীনে কখনো ঔদ্ধত্যপূর্ণভাবে বিচরণ করো না; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উদ্ধত অহংকারীকেই অপছন্দ করেন।

১৯. (হে বৎস, যমীনে চলার সময়) তুমি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো, তোমার কণ্ঠস্বর নীচু করো, কেননা আওয়াযসমুহের মধ্যে সবচাইতে অপ্রীতিকর আওয়ায হচ্ছে গাধার আওয়ায।

২০. তোমরা কি (একথা কখনো চিন্তা করে দেখোনি, যা কিছু আসমানসমুহে রয়েছে, যা কিছু রয়েছে যমীনের মধ্যে, আল্লাহ তায়ালা তা তোমাদের অধীন করে রেখেছেন এবং তোমাদের ওপর তিনি তাঁর দেখা অদেখা যাবতীয় নেয়ামত পুর্ণ করে দিয়েছেন; (কিন্তু এ সত্ত্বেও) মানুষের মাঝে কিছু এমন আছে যারা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে (অর্থহীন) তর্ক করে, (তাদের কাছে) না আছে (তর্ক করার মতো) কোনো জ্ঞান, না আছে কোনো দীপ্তিমান গ্রন্থ!

২১. আর যখন তাদের বলা হয়, (আল্লাহ তায়ালা) যা কিছু নাযিল করেছেন তোমরা তার অনুসরণ করো, (তখন) তারা বলে, আমরা কেবল সে বস্তুরই অনুসরণ করবো যার ওপর আমরা আমাদের বাপদাদাদের পেয়েছি; (কিন্তু) শয়তান যদি তাদের (বাপদাদাদের) জাহান্নামের আযাবের দিকে ডাকতে থাকে (তাহলেও কি এরা তাদের অনুসরণ করবে)?

২২. যদি কোনো ব্যক্তি সৎকর্মশীল হয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেকে (সম্পূর্ণ) সঁপে দেয়, (তাহলে) সে (যেন মনে করে এর দ্বারা) একটা মযবুত হাতল ধরেছে; (কেননা) যাবতীয় কাজকর্মের চূড়ান্ত পরিণাম আল্লাহ তায়ালার কাছে।

২৩. যদি কেউ কুফরী করে তবে তার কুফরী যেন (হে নবী,) তোমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ না করে; (কারণ) তাদের তো আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে, অতঃপর আমি তাদের বলে দেবো, (দুনিয়ায়) তারা কি আমল করে এসেছে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা মানুষের অন্তরে যা কিছু লুকায়িত আছে সে ব্যাপারে সম্যক অবগত রয়েছেন ।

২৪. আমি তাদের স্বল্প সময়ের জন্যে কিছু জীবনোপকরণ দিয়ে রাখবো, অতঃপর আমি তাদের কঠিন আযাবের দিকে টেনে নিয়ে যাবো।

২৫. তুমি যদি তাদের জিজ্ঞেস করো, আসমানসমুহ ও যমীন কে পয়দা করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে (হাঁ), আল্লাহ তায়ালাই (সৃষ্টি করেছেন); তুমি বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে; কিন্তু তাদের অধিকাংশ মানুষই বুঝে না।

২৬. আকাশমালা ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা (সবই) আল্লাহ তায়ালার জন্যে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা (সব ধরনের) অভাবমুক্ত এবং তিনি সমস্ত প্রশংসার মালিক।

২৭. যমীনের সমস্ত গাছ যদি কলম হয় এবং মহাসমুদ্রগুলোর সাথে যদি আরো সাত সমুদ্র যুক্ত হয়ে তা কালি হয়, তবুও আল্লাহ তায়ালার গুণাবলী সম্পর্কিত কথাগুলো লিখে শেষ করা যাবে না; নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়।

২৮. (হে মানুষ,) তোমাদের সৃষ্টি করা, তোমাদের সবাইকে পুনরুত্থিত করা (মুলত আল্লাহ তায়ালার কাছে) একজন মানুষের সৃষ্টি ও তার পুনরুত্থানের মতোই; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা (সব কিছু) শোনেন এবং দেখেন।

২৯. তুমি কি চিন্তা করে দেখোনি, আল্লাহ তায়ালা (কিভাবে) রাতকে দিনের ভেতর প্রবেশ করান, আবার দিনকে রাতের ভেতর প্রবেশ করান, (কিভাবে) তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে (তাঁর হুকুমের) অধীন করে রাখেন, প্রত্যেক (গ্রহ উপগ্রহই আপন কক্ষপথে) এক সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবর্তন করতে থাকবে, নিশ্চয়ই তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তায়ালা সে সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন ।

৩০. এটাই (চূড়ান্ত), যেহেতু আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সত্য, (তাই) তাঁকে ছাড়া এরা অন্য যা কিছুকেই ডাকুক না কেন তা বাতিল (বলে গণ্য হবে), মহান আল্লাহ তায়ালা, তিনি সুউচ্চ ও অতি মহান।

৩১. তুমি কি (এটা) লক্ষ্য করোনি, (উত্তাল সাগরে (একমাত্র) আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহেই জলযান ভেসে চলেছে, যাতে করে তিনি (এর মাধ্যমে) তোমাদের তাঁর (সৃষ্টি বৈচিত্রের) নিদর্শনসমুহ দেখাতে পারেন; অবশ্যই প্রতিটি ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্যে এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে।

৩২. যখন (সমুদ্রের) তরঙ্গমালা চাঁদোয়ার মতো হয়ে তাদের আচ্ছাদিত করে ফেলে, তখন তারা আল্লাহ তায়ালাকে ডাকে; দ্বীন একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্যেই নিবেদন করে, অতঃপর যখন আমি তাদের ভূখন্ডে এনে উদ্ধার করি তখন তাদের কিছু লোক বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝামাঝি অবস্থান করে; অবশ্য যখন স্থলভাগে পৌঁছে দেই (মুলত ) বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ ছাড়া কেউই আমার নিদর্শনসমুহ অস্বীকার করে না!

৩৩. হে মানুষ, তোমরা তোমাদের মালিককে ভয় করো এবং এমন একটি দিনকে ভয় করো, যেদিন কোনো পিতা তার সন্তানের পক্ষ থেকে বিনিময় আদায় করবে না, না কোনো সন্তান তার পিতার পক্ষ থেকে বিনিময় আদায় করতে পারবে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার ওয়াদা সত্য, সুতরাং (হে মানুষ), এ পার্থিব জীবন যেন তোমাদের কোনোরকম প্রতারিত করতে না পারে এবং প্রতারক (শয়তানও) যেন কখনো তোমাদের আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে কোনো ধোকা দিতে না পারে ।

৩৪. অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার কাছে কেয়ামতের (সময়) জ্ঞান আছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন, (সন্তানের) শুক্রকীটের মাঝে (তার বুদ্ধি, জ্ঞান, মেধা ও জীবনের ভাগ্যলিপি সক্রান্ত) যা কিছু (মজুদ) রয়েছে তা তিনি জানেন, কোনো মানুষই বলতে পারে না আগামীকাল সে কি অর্জন করবে; না কেউ এ কথা বলতে পারে যে, কোন যমীনে সে মৃত্যুবরণ করবে; নিঃসন্দেহে (এ তথ্যগুলো একমাত্র) আল্লাহ তায়ালাই জানেন, (তিনি) সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url