আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আস সাজদা’র বাংলা অনুবাদ | সূরা আস সাজদা | Surah As Sajdah | السجدة
সূরা আস সাজদা’র বাংলা অনুবাদ
সূরা আস সাজদা, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৩০ রুকু ৩
সূরা আস সাজদা
১. আলিফ-লা-ম-মী-ম,
২. সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকেই (এ) কেতাবের অবতরণ, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই;
৩. তারা কি একথা বলতে চায় যে, এ (কেতাব)-টা সে (ব্যক্তি) রচনা করে নিয়েছে? (না)বরং এ হচ্ছে তোমার মালিকের কাছ থেকে (নাযিল করা) একটি সত্য (কেতাব, আমি এটা এজন্যে নাযিল করেছি), যাতে করে এর দ্বারা তুমি এমন এক জাতিকে (জাহান্নাম থেকে) সাবধান করে দিতে পারো, যাদের কাছে (নিকট অতীতে) তোমার আগে কোনো সতর্ককারী আসেনি, সম্ভবত তারা হেদায়াত লাভ করতে পারে।
৪. আল্লাহ তায়ালা; যিনি আকাশমালা, যমীন ও উভয়ের মাঝে অবস্থিত (সবকিছু) ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন; (তিনি ছাড়া) তোমাদের কোনো অভিভাবক কিংবা সুপারিশকারী নেই; এর পরও কি তোমরা বুঝতে পাচ্ছো না!
৫. আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সবকিছু তিনিই পরিচালনা করেন, তারপর (সবকিছুকে) তিনি ওপরের দিকে নিয়ে যাবেন (এমন) এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছর।
৬. তিনিই দৃশ্যমান ও অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু,
৭. যিনি যা কিছু সৃষ্টি করেছেন সুন্দর (ও নিখুঁত করেই সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি মানুষ সৃষ্টির সুচনা করেছেন মাটি থেকে,
৮. অতঃপর তিনি তার বংশধরদের তুচ্ছ তরল একটি পদার্থের নির্যাস থেকে বানিয়েছেন,
৯. পরে তিনি তাকে ঠিকঠাক করলেন এবং তার মধ্যে তিনি তাঁর নিজের কাছ থেকে 'রূহ' ফুঁকে দিলেন এবং তোমাদের জন্যে (তাতে) কান, চোখ ও অন্তকরণ দান করলেন; তোমাদের খুব কম লোকই (এ জন্যে আল্লাহ তায়ালার) শোকর কৃতজ্ঞতা আদায় করে।
১০. (আল্লাহ তায়ালাকে যারা অস্বীকার করে) তারা বলে, আমরা (মৃত্যুর পর) যখন মাটিতে মিশে যাবো তারপরও আমাদের আবার নতুন করে পয়দা করা হবে? (মুলত) এরা তাদের মালিকের সাথে সাক্ষাৎকারের বিষয়টিকেই অস্বীকার করে ।
১১. (হে নবী) তুমি (এদের) বলো, জীবন হরণের ফেরেশতা, যাকে তোমাদের (মৃত্যুর) ব্যাপারে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, (অচিরেই) তোমাদের জান কবয করে নেবে, অতঃপর তোমাদের সবাইকেই মালিকের দরবারে ফিরিয়ে নেয়া হবে ।
১২. (হে নবী) যদি তুমি (সে দৃশ্য) দেখতে, যখন অপরাধীরা নিজেদের মালিকের সামনে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে (এবং বলতে থাকবে), হে আমাদের মালিক, আমরা (তো আজ সবকিছুই) দেখলাম এবং (তোমার সিদ্ধান্তের কথাও) শোনলাম, অতএব তুমি আমাদের আরেকবার (দুনিয়ায়) পাঠিয়ে দাও, আমরা ভালো কাজ করবো, নিশ্চয়ই আমরা (এখন) পুর্ণ বিশ্বাসী।
১৩. (আল্লাহ তায়ালা বলবেন,) আমি চাইলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে হেদায়াত দিয়ে দিতাম, কিন্তু আমার পক্ষ থেকে সে ঘোষণা আজ সত্য প্রমাণিত হলো যে, আমি মানুষ ও জ্বিনদের মধ্য থেকে (এদের) সবাইকে দিয়ে জাহান্নাম পুর্ণ করবো।
১৪. অতঃপর (ওদের বলা হবে, যাও, তোমরা জাহান্নামের শাস্তি আস্বাদন করো, যেভাবে তোমরা আজকের এ সাক্ষাৎকারের কথা ভুলে গিয়েছিলে, আমিও (তেমনি আজ) তোমাদের ভুলে গেলাম, যাও, তোমরা নিজেদের কৃতকর্মের প্রতিফল হিসেবে (জাহান্নামের) চিরস্থায়ী শাস্তি ভোগ করো।
১৫. আমার আয়াতসমুহের ওপর তারাই ঈমান আনে, যখন তাদের (আয়াত দ্বারা) উপদেশ দেয়া হয় তখন তারা সাথে সাথেই সাজদাবনত হয়ে পড়ে, উপরন্তু তারা তাদের মালিকের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং নিজেরা অহংকার করে না ।
১৬. তাদের পার্শ্বদেশ (রাতের বেলায়) বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা (নিশুতি রাতে আযাবের) ভয়ে এবং (জান্নাতের) আশায় তাদের মালিককে ডাকে, তদুপরি আমি তাদের যা কিছু দান করেছি তারা তা থেকে (আমার পথে) ব্যয় করে।
১৭. কোনো মানুষই জানে না, কি ধরনের নয়ন প্রীতিকর (বিনিময়) তাদের জন্যে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, (মুলত) তা হবে তাদের কাজের (যথার্থ) পুরস্কার ।
১৮. যে ব্যক্তি মোমেন, সে নাফরমান ব্যক্তির মতো হয়ে যাবে? (না) এরা কখনো এক সমান হতে পারে না।
১৯. অতএব, যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, তাদের জন্যে (সুরমা) জান্নাতে বাসস্থান হবে, এ মেহমানদারী হবে তাদের (নেক) কাজের পুরস্কার, যা তারা করে এসেছে।
২০. যারা আল্লাহ তায়ালার নাফরমানী করবে তাদের বাসস্থান হবে (জাহান্নামের) আগুন; যখনি তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চষ্টো করবে, তখনি তাদের (ধাক্কা দিয়ে) তার ভেতরে ঠেলে দেয়া হবে এবং তাদের বলা হবে, যাও, আগুনের সে আযাব ভোগ করে নাও, যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে!
২১. (জাহান্নামের) বড়ো আযাবের আগে আমি অবশ্যই তাদের (দুনিয়ার) ছোটোখাটো আযাবও আস্বাদন করাবো (এ আশায়, হয়তো বা এতে করে তারা আমার দিকে ফিরে আসবে।
২২. তার চাইতে বড়ো যালেম আর কে হতে পারে যে ব্যক্তিকে তার মালিকের আয়াতসমুহ দ্বারা নসীহত করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়; অবশ্যই আমি নাফরমানদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেবো ।
২৩. (হে নবী, তোমার আগে) আমি মুসাকেও কেতাব দিয়েছিলাম, অতএব তুমি তার (আল্লাহর) সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিতে কোনোরকম সন্দেহ করো না, (আমি যে কেতাব তাকে দিয়েছি) তা আমি বনী ইসরাঈলদের জন্যে পথপ্রদর্শক বানিয়ে দিয়েছিলাম,
২৪. আমি তাদের মধ্য থেকে কিছু লোককে নেতা বানিয়েছিলাম, তারা আমারই আদেশে মানুষদের হেদায়াত করতো, যখন তারা (অত্যাচারের সামনে কঠোর) ধৈর্য ধারণ করেছে, (সর্বোপরি) তারা ছিলো আমার আয়াতের ওপর একান্ত বিশ্বাসী ।
২৫. অবশ্যই (হে নবী), তোমার মালিক কেয়ামতের দিন সেসব কিছুর ফয়সালা করে দেবেন যে সব বিষয়ে তারা দুনিয়ায় মতবিরোধ করে বেড়াতো ।
২৬. (হে নবী,) তোমার জাতির লোকদের কি এ থেকেও হেদায়াত আসেনি যে, আমি তাদের আগে কতো জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যাদের বাসস্থানসমুহের মাঝ দিয়েই তারা (সব সময়) চলাফেরা করে; অবশ্যই এতে তাদের (আল্লাহ তায়ালাকে জানা ও চেনার) জন্যে অনেকগুলো নিদর্শন রয়েছে; এরপরও কি এরা শোনবে না!
২৭. ওরা কি লক্ষ্য করে দেখে না, আমি (কিভাবে) উর্বর ভূমির ওপর পানি প্রবাহিত করি এবং (পরে) তারই সাহায্যে আমি সে ভূমি থেকে ফসল বের করে আনি, যা থেকে তাদের গৃহপালিত জন্তুগুলো যেমনি খাবার গ্রহণ করে, তেমনি খায় তারা নিজেরাও, এ সত্ত্বেও কি এরা (আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের চিহ্ন) দেখতে পায় না?
২৮. তারা বলে, যদি তোমরা (তোমাদের দাবীতে) সত্যবাদী হও তাহলে সে বিজয়ের ক্ষণটি কখন আসবে (যার কথা বলে তোমরা আমাদের ভয় দেখাচ্ছো)।
২৯. (হে নবী,) তুমি বলো, যারা কুফরী করেছে, বিচারের দিন তাদের ঈমান কোনোই কাজে আসবে না, না তাদের কোনো রকম অবকাশ দেয়া হবে!
৩০. অতএব (হে নবী,) তুমি এদের (এসব কথাবার্তা) থেকে বিমুখ থাকো এবং তুমি (শেষ দিনের) অপেক্ষা করো, নিঃসন্দেহে তারাও (সেদিনের) অপেক্ষা করছে ।
💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url