আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা নূহ’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা নূহ | Surah Nuh | سورة نوح
সূরা নূহ’এর বাংলা অনুবাদ
সূরা নূহ, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ২৮, রুকু ২
সূরা নূহ
রহমান রহীম আল্লাহ তা'আলার নামে
১. আমি নূহকে তার জাতির কাছে পাঠিয়েছিলাম (তাকে আমি বলেছিলাম, হে নূহ), তোমার জাতির ওপর এক ভয়াবহ আযাব আসার আগেই তুমি তাদের সে সম্পর্কে সাবধান করে দাও।
২. (আমার আদেশ পেয়ে সে তার জাতিকে বললো,) হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা, আমি তোমাদের জন্যে একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী ব্যক্তি (মাত্র),
৩. তোমরা সবাই আল্লাহর আনুগত্য করো, (সর্বাবস্থায়) তাঁকেই ভয় করো, তোমরা আমার কথা মেনে চলো,
৪. (এতে করে) আল্লাহ তা'আলা তোমাদের (আগের) গুনাহখাতা মাফ করে দেবেন এবং (এ দুনিয়ায়) তিনি তোমাদের এক সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (নিজেদের শুধরে নেয়ার) সুযোগ দেবেন; হ্যাঁ, আল্লাহর সেই নির্দিষ্ট সময় যখন এসে যাবে তখন তাকে কেউই পিছিয়ে দিতে পারবে না। কতো ভালো হতো যদি তোমরা বুঝতে পারতে!
৫.(নিরাশ হয়ে আল্লাহকে) সে বললো, হে আমার মালিক, আমি আমার জাতির মানুষগুলোকে দিনে রাতে (সব সময়ই ঈমানের) দাওয়াত দিয়েছি,
৬. কিন্তু আমার এ (দিবানিশি) দাওয়াতের ফলে ( সত্য থেকে) পালিয়ে বেড়ানো ছাড়া তাদের আর কিছুই বৃদ্ধি হয়নি।
৭. যতোবার আমি তাদের (তোমার পথে) ডেকেছি (ডেকেছি) যেন তুমি (তাদের অতীত কৃতকর্ম) ক্ষমা করে দাও, তারা (ততোবারই) কানে আংগুল ঢুকিয়ে দিয়েছে এবং নিজেদের (অজ্ঞতার) আবরণ দিয়ে নিজেদের (মুখমন্ডল) ঢেকে দিয়েছে (শুধু তাই নয়), তারা (অন্যায়ের ওপর ক্ষমাহীন) জেদ ও অহমিকা প্রদর্শন করেছে, (হেদায়াতকে অবজ্ঞা করার) ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে,
৮. তারপর আমি তাদের কাছে প্রকাশ্যভাবে (দ্বীনের) দাওয়াত পেশ করেছি,
৯. তাদের জন্যে আমি (দ্বীনের) প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছি, আমি চুপে চুপেও তাদের কাছে (দ্বীনের কথা) পেশ করেছি,
১০. পরন্তু (বার বার) আমি তাদের বলেছি, (অহমিকা বাদ দিয়ে) তোমরা তোমাদের মালিকের দুয়ারে (নিজেদের অপরাধের জন্যে) ক্ষমা প্রার্থনা করো; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা'আলা অত্যন্ত ক্ষমাশীল,
১১. (তদুপরি) আল্লাহ তা'আলা তোমাদের ওপর আকাশ থেকে অঝোর বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন,
১২. এবং (পর্যাপ্ত পরিমাণ) ধনসম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে তিনি তোমাদের সাহায্য করবেন, তোমাদের জন্যে বাগবাগিচা ও উদ্যান স্থাপন করবেন, (বিরান ভূমি আবাদ করার জন্যে) তিনি এখানে নদীনালা প্রবাহিত করবেন;
১৩. এ কি হলো তোমাদের! তোমরা কি আল্লাহ তা'আলার কাছ থেকে মানমর্যাদা পাওয়ার মোটেই আশা পোষণ করো না?
১৪. অথচ তিনিই (ক্ষুদ্র একটি শুক্রকীট থেকে) বিভিন্ন পর্যায়ে তোমাদের (মানুষ হিসেবে) সৃষ্টি করেছেন।
১৫. তোমরা কি দেখতে পাও না, কিভাবে আল্লাহ তা'আলা সাত আসমান বানিয়ে স্তরে স্তরে (সাজিয়ে রেখেছেন,
১৬. কিভাবে এর মাঝে তিনি চাঁদকে আলো (গ্রহণকারী) ও সূর্যকে (আলোদানকারী) প্রদীপ বানিয়েছেন।
১৭. আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মাটি থেকে (এক বিশেষ পদ্ধতিতে) উদগত করেছেন (ঠিক একটি তৃণ খন্ডের মতো করে),
১৮. আবার (জীবনের শেষে) তিনি তোমাদের সেই মাটির কোলেই ফিরিয়ে নেবেন এবং তা থেকেই একদিন তিনি তোমাদের সহসা বের করে এনে নতুন জীবন দান) করবেন ।
১৯. আল্লাহ তা'আলা তোমাদের জন্যে (এ) যমীনকে বিছানার মতো (সমতল করে) বানিয়েছেন,
২০. যাতে করে তোমরা এর উন্মুক্ত (ও প্রশস্ত) পথ ধরে চলাফেরা করতে পারো ।
২১. নূহ বললো, হে আমার মালিক, আমার জাতির লোকেরা আমার কথা অমান্য করেছে, (আমার বদলে) তারা এমন কিছু লোকের অনুসরণ করেছে যাদের ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি কেবল তাদের বিনাশ ছাড়া অন্য কিছুই বৃদ্ধি করেনি,
২২. তারা (সত্যের বিরুদ্ধে) সাংঘাতিক ধরনের এক ষড়যন্ত্র শুরু করেছে,
২৩. তারা বলে, তোমরা তোমাদের (সেসব) দেবতাদের কোনো অবস্থায়ই পরিত্যাগ করো না ওয়াদ' সূয়া' (নামক দেবতাদের) উপাসনা কিছুতেই ছেড়ে দিয়ো না, ইয়াগুস ইয়াউক' ও নাছর' নামের দেব দেবীকেও (ছাড়বে না,
২৪. (হে মালিক,) এরা বিশাল এক জনগোষ্ঠীকে পথভ্রষ্ট করেছে, তুমিও আজ এ যালেমদের জন্যে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছুই বাড়িয়ে দিয়ো না।
২৫. (অতঃপর) তাদের নিজেদের অপরাধের জন্যেই তাদের (মহাপ্লাবনে) ডুবিয়ে দেয়া হয়েছে, (পরকালেও) তাদের জাহান্নামের কঠিন অনলে প্রবেশ করানো হবে, এ (অবস্থায়) তারা আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত দ্বিতীয় কাউকেই কখনোই সাহায্যকারী হিসেবে পাবে না ।
২৬. নূহ (আরও) বললো, হে আমার মালিক, এ যমীনের অধিবাসী (যালেমদের) একজন (গৃহবাসী)-কেও তুমি (আজ শাস্তি থেকে রেহাই দিয়ো না,
২৭. (আজ) যদি তুমি এদের (শাস্তি থেকে) অব্যাহতি দাও, তাহলে এরা (পুনরায়) তোমার বান্দাদের পথভ্রষ্ট করে দেবে, (শুধু তাই নয়), এরা (ভবিষ্যতেও) দুরাচার পাপী কাফের ছাড়া কাউকেই জন্ম দেবে না।
২৮. হে আমার প্রতিপালক, তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে তোমার ওপর ঈমান এনে যারা আমার (সাথে ঈমানের এই) ঘরে আশ্রয় নিয়েছে, এমন সব ব্যক্তিদের এবং সব ঈমানদার পুরুষ ও মহিলাদের ক্ষমা করে দাও, যালেমদের জন্যে চূড়ান্ত ধ্বংস ছাড়া কিছুই তুমি বৃদ্ধি করো না।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url