আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা সাবা’র বাংলা অনুবাদ | সূরা সাবা | Surah Saba | سورة سبإ


সূরা সাবা’র বাংলা অনুবাদ


সূরা সাবা, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৪ রুকু ৬

সূরা সাবা



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, (এ) আকাশমন্ডলী ও যমীনে (যেখানে) যা কিছু আছে সবই তাঁর একক মালিকানাধীন এবং পরকালেও সমস্ত প্রশংসা হবে একমাত্র তাঁর জন্যে; তিনি সর্ববিষয়ে প্রজ্ঞাময়।

২. তিনি জানেন যা কিছু যমীনের ভেতরে প্রবেশ করে, (আবার) যা কিছু তা থেকে উদগত হয়, যা কিছু আসমান থেকে বর্ষিত হয় এবং যা কিছু তাতে উত্থিত হয় (এর প্রতিটি বিষয় সম্পর্কেই তিনি পরিজ্ঞাত আছেন); তিনি পরম দয়ালু, পরম ক্ষমাশীল।

৩. যারা (আল্লাহ তায়ালার এসব কুদরত) অস্বীকার করে তারা বলে, আমাদের ওপর কখনোই কেয়ামত আসবে না; (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, আমার মালিকের কসম, হ্যাঁ, অবশ্যই তা তোমাদের ওপর আপতিত হবে, (আমার মালিক) অদৃশ্য (জগত) সম্পর্কে অবহিত, এ আকাশমণ্ডলী ও যমীনের অণু পরমাণু, তার চাইতেও ক্ষুদ্র কিংবা বড়ো, এর কোনো কিছুই তাঁর (জ্ঞানসীমার) অগোচরে নয়, এমন কিছু নেই যা সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লিপিবদ্ধ) নেই! 

৪. যেন (এর ভিত্তিতে) তিনি তাদের পুরস্কার দিতে পারেন যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে; (বস্তুত ) তারাই হচ্ছে সে (সৌভাগ্যবান) মানুষ, যাদের জন্যে আল্লাহ তায়ালার (প্রশস্ত) ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা রয়েছে।

৫. যারা (এ যমীনে) প্রাধান্য পাবার জন্যে আমার আয়াতকে ব্যর্থ করে দেয়ার চষ্টো করে, তাদের জন্যে (পরকালে) ভয়ংকর মর্মন্তুদ শাস্তি রয়েছে।

৬. (হে নবী,) যাদের জ্ঞান দেয়া হয়েছে তারা জানে, তোমার মালিকের পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া এ (কেতাব) একান্ত সত্য, এটি তাদের পরাক্রমশালী প্রশংসিত আল্লাহ তায়ালার (দিকেই) পথনির্দেশ করে।

৭. যারা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করে তারা বলে (হে আমাদের সাথীরা), আমরা কি তোমাদের এমন এক ব্যক্তির সন্ধান দেবো যে তোমাদের কাছে বলবে, তোমরা (মৃত্যুর পর) যখন ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে, তখন (পুনরায়) তোমরা নতুন সৃষ্টিরূপে উত্থিত হবে,

৮. (আমরা জানি না) এ ব্যক্তি কি আল্লাহ তায়ালার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, না তার সাথে কোনো উন্মাদনা রয়েছে; না, আসল ব্যাপার হচ্ছে, যারা আখেরাতের ওপর ঈমান আনে না, তারাই ( সেখানকার) আযাব ও (দুনিয়ার) ঘোর গোমরাহীতে নিমজ্জিত আছে।

৯. তারা কি তাদের সামনে পেছনে যে আকাশ ও পৃথিবী রয়েছে তার দিকে তাকিয়ে (তাদের স্রষ্টাকে খুঁজে) দেখে না? আমি চাইলে ভূমিকে তাদের সহ ধসিয়ে দিতে পারি, কিংবা পারি তাদের ওপর কোনো আকাশ খন্ডের পতন  ঘটাতে; তাতে অবশ্যই এমন প্রতিটি বান্দার জন্যে কিছু নিদর্শন রয়েছে যারা একান্তভাবে আল্লাহ তায়ালার অভিমুখী।

১০. আমি (নবী) দাউদকে আমার কাছ থেকে (অনেকগুলো) অনুগ্রহ দান করেছিলাম; (এমনকি আমি পাহাড়কেও এই বলে আদেশ দিয়েছিলাম,) হে পর্বতমালা, তোমরাও তার সাথে আমার তাসবীহ পাঠ করো, (একই আদেশ আমি) পাখীকুলকেও দিয়েছিলাম, আমি তার জন্যে লোহাকে নরম করে দিয়েছিলাম,

১১. (তাকে আমি বলেছিলাম, সে বিগলিত লোহা দ্বারা) তুমি পুর্ণ মাপের বর্ম তৈরী করো এবং সেগুলোর কড়াসমুহ যথাযথভাবে সংযুক্ত করো, (কিন্তু এ শিল্পগত কলাকৌশলের পাশাপাশি) তোমরা তোমাদের নেক কাজও অব্যাহত রাখো; তোমরা যা কিছুই করো না কেন, আমি তার সবকিছুই পর্যবেক্ষণ করি।

১২. এমনিভাবে আমি সোলায়মানের জন্যে বাতাসকে (তার) অনুগত বানিয়ে দিয়েছিলাম, তার প্রাতকালীন ভ্রমণ ছিলো এক মাসের পথ, আবার সান্ধ্যকালীন ভ্রমণও ছিলো এক মাসের পথ, আমি তার জন্যে (গলিত) তামার একটি ঝর্ণা প্রবাহিত করেছিলাম; তার মালিকের অনুমতিক্রমে জ্বিনদের কিছুসংখ্যক (কর্মী) তার সামনে থেকে (তার জন্যে) কাজ করতো (আমি বলেছিলাম), তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি আমার (ও আমার নবীর) আদেশ অমান্য করে, তাহলে তাকে আমি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি আস্বাদন করাবো।

১৩. সে (সোলায়মান) যা কিছু চাইতো তারা (জ্বিনরা) তার জন্যে তাই তৈরী করে দিতো, (যেমন সুরম্য) প্রাসাদ, (নানা ধরনের) ছবি, (বড়ো বড়ো) পুকুরের ন্যায় থালা ও চুলার ওপর স্থাপন করার (জন্তু-জানোয়ারসহ সবার আতিথেয়তার উপযোগী) বৃহদাকারের ডেগ; আমি বলেছি, হে দাউদ পরিবারের লোকেরা, তোমরা (আমার) শোকরস্বরূপ নেক কাজ করো; (আসলে) আমার বান্দাদের মাঝে খুব অল্প সংখ্যক মানুষই (তাদের মালিকের) শোকর আদায় করে।

১৪. যখন আমি তার ওপর মৃত্যুর আদেশ জারি করলাম, তখন তাদের (জ্বিন ও মানুষ কর্মীবাহিনীর) কেউই বাইরের লোকদের তার মৃত্যুর খবর দেখায়নি, (দেখিয়েছে) কেবল একটি (ক্ষুদ্র) মাটির পোকা, যা (তখনো) তার লাঠিটি খেয়ে যাচ্ছিলো, (সোলায়মানের লাঠি পোকায়) খাওয়ায় যখন সে (মাটিতে) পড়ে গেলো, তখন (মাত্র) জ্বিনেরা বুঝতে পারলো (সোলায়মান আগেই মারা গেছে), তারা যদি (তখন) গায়বের বিষয় জানতো, তাহলে তাদের (এতোকাল) লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তিতে থাকতে হতো না;

১৫. ‘সাবা’ (নগরের) অধিবাসীদের জন্যে তাদের (স্বীয়) বাসভূমিতে আল্লাহর একটি কুদরতের নিদর্শন (মজুদ) ছিলো, দুই (সারি) উদ্যান, একটি ডান দিকে আরেকটি বাঁ দিকে, (আমি তাদের বলেছিলাম, এ থেকে পাওয়া) তোমাদের মালিকের দেয়া রেযেক খাও এবং (এ জন্যে) তোমরা তাঁর শোকর আদায় করো; (কতো) সুন্দর নগরী এটা! কতো ক্ষমাশীল (এ নগরীর) মালিক আল্লাহ তায়ালা।

১৬. (কিন্তু) পরে ওরা (আমার আদেশ) অমান্য করলো, ফলে আমি তাদের ওপর এক বাঁধভাঙ্গা বন্যা প্রবাহিত করে দিলাম, তাদের সে (সুফলা) উদ্যান দু'টোও এমন দুটো উদ্যান দ্বারা বদলে দিলাম, যাতে থেকে গেলো বিস্বাদ ফল, ঝাউগাছ এবং কিছু কুল (বৃক্ষ)।

১৭. এভাবে আমি তাদের শাস্তি দিয়েছিলাম, কেননা তারা (আমার নেয়ামত) অস্বীকার করেছে; আর আমি অকৃতজ্ঞ বান্দা ছাড়া কাউকেই শাস্তি দেই না।

১৮. আমি তাদের (সাবা নগরীর অধিবাসীদের) সাথে সেসব জনপদের ওপরও বরকত দান করেছিলাম, উভয়ের মাঝে আরো কিছু দৃশ্যমান জনবসতি আমি স্থাপন করেছিলাম এবং তাতে আমি (সফরের) মনযিলও নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম (তাদের আমি বলেছিলাম), তোমরা সেখানে (এবার) দিনে কিংবা রাতে নিরাপদে ভ্রমণ করো।

১৯. কিন্তু তারা বললো, হে আমাদের মালিক, আমাদের সফরের মনযিলসমুহ তুমি দুরে দুরে স্থাপন করো, তারা নিজেদের ওপর যুলুম করলো, ফলে আমিও তাদের (শাস্তি দিয়ে মানুষদের জন্যে) একটি কাহিনীর বিষয়ে পরিণত করে দিলাম, ওদের আমি ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে (তছনছ করে) দিলাম, এতে প্রত্যেকটি ধৈর্যশীল কৃতজ্ঞ বান্দার জন্যেই (শিক্ষণীয়) নিদর্শন রয়েছে ।

২০. ইবলীস তাদের (মোমেনদের) ব্যাপারে নিজের ধারণা সত্য পেয়েছে, কেননা তারা তাঁরই আনুগত্য করেছে, অবশ্য ঈমানদারদের একটি দল ছাড়া।

২১. (অথচ) তাদের ওপর শয়তানের তো কোনো রকম আধিপত্য ছিলো না (আসলে ঘটনাটি ছিলো), আমি জানতে চেয়েছিলাম তোমাদের মাঝে কে আখেরাতের ওপর ঈমান আনে, আর কে সে ব্যাপারে সন্দিহান; তোমার মালিক তো সবকিছুর ওপরই নেগাহবান!

২২. (হে নবী,) তুমি বলো, তোমরা যাদের আল্লাহর বদলে শরীক মনে করো তাদের ডাকো, তারা (আসমানসমুহ ও যমীনের) এক অণু পরিমাণ কিছুরও মালিক নয়, এ দুটো বানানোর ব্যাপারেও তাদের কোনো অংশ নেই, না তাঁর কোনো সাহায্যকারী রয়েছে।

২৩. (কেয়ামতের দিন) তাঁর সামনে কারো সুপারিশ কাজে আসবে না, অবশ্য তিনি যাকে অনুমতি দেবেন সে ব্যক্তি বাদে, এমনকি যখন তাদের অন্তর থেকে ভয় দুরীভূত করে দেয়া হবে, তখন ফেরেশতারা (একে অপরকে বলবে, কি ব্যাপার, সে বলবে, তোমাদের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা | তারা বলবে (হাঁ তাই) সত্য, তিনি সমুচ্চ, তিনি মহান।

২৪. (হে নবী,) তুমি জিজ্ঞেস করো, (তোমরাই বলো, কে আছে তোমাদের আসমানসমূহ ও যমীন থেকে রেযেক সরবরাহ করে; তুমি বলো, আল্লাহ তায়ালা; (এখানে) আমরা কিংবা তোমরা, হয় আমরা উভয়ে হেদায়াতের উপর আছি না হয় উভয়ে সুস্পষ্ট গোমরাহীর (মধ্যে) আছি।

২৫. তুমি (এদের আরো) বলো, আমরা যে অপরাধ করেছি সে সম্পর্কে তোমাদের কিছুই জিজ্ঞেস করা হবে না, আবার তোমরা যা করে বেড়াচ্ছো সে ব্যাপারেও আমাদের কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।

২৬. (এদের আরো) বলো, (কেয়ামতের দিন) আমাদের মালিক আমাদের (ও তোমাদের) সবাইকে (এক জায়গায়) জড়ো করবেন, অতঃপর তিনি আমাদের মধ্যে (হেদায়াত ও গোমরাহীর) যথার্থ ফয়সালা করে দেবেন; কেননা তিনিই হচ্ছেন শ্রেষ্ঠ বিচারক, প্রবল প্রজ্ঞাময়।

২৭. (হে নবী,) তুমি (আরো) বলো, তোমরা আমাকে সেসব কিছু দেখাও, যাদের তোমরা (আল্লাহ তায়ালার সাথে) শরীক বানিয়ে তাঁর সাথে মিলিয়ে রেখেছো, জেনে রেখো; তাঁর কোনো শরীক নেই, তিনি পরাক্রমশালী, তিনি কুশলী।

২৮. (হে নবী,) আমি তোমাকে সমগ্র মানব জাতির জন্যে (জান্নাতের) সুসংবাদদাতা ও (জাহান্নামের) সতর্ককারীরূপে পাঠিয়েছি, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (তা) জানে না।

২৯. তারা বলে (হে মুসলমানরা), যদি তোমরা সত্যবাদী হও তাহলে বলো, তোমাদের এ ওয়াদা করে (বাস্তবায়িত হবে।

৩০. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, তোমাদের জন্যে যে দিনের ওয়াদা করা হয়েছে তোমরা তার থেকে এক মুহূর্ত (যেমনি) পিছিয়ে থাকতে পারবে না, (তেমনি) তোমরা এক মুহূর্ত এগিয়েও আসতে পারবে না ।

৩১. কাফেররা বলে, আমরা কোনোদিনই এ কোরআনের ওপর ঈমান আনবো না এবং আগের কেতাবগুলোর ওপরও (ঈমান আনবো না, হে নবী, সেই ভয়াবহ দৃশ্য) যদি তুমি দেখতে পেতে, যখন যালেমদের তাদের মালিকের সামনে দাঁড় করানো হবে, তখন তারা একজন আরেকজনের ওপর (কথা) চাপাতে থাকবে, যাদের পদানত করে রাখা হয়েছিলো তারা (এ) প্রাধান্য বিস্তারকারীদের বলবে, যদি তোমরা (সেদিন) না থাকতে তাহলে অবশ্যই আমরা মোমেন থাকতাম!

৩২. (এ কথার জবাবে) এ অহংকারী লোকেরা, যাদের দাবিয়ে রাখা হয়েছিলো তাদের বলবে, আমরা কি তোমাদের হেদায়াতের পথে না চলার জন্যে বাধ্য করেছিলাম? (বিশেষ করে) যখন হেদায়াত তোমাদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলো, (আসলে) তোমরা নিজেরাই ছিলে না-ফরমান।

৩৩. যাদের পদানত করে রাখা হয়েছিলো, এবার তারা অহংকারী নেতাদের বলবে, (জবরদস্তি না হলেও তোমাদের) রাত দিনের চক্রান্ত (নাফরমানী করতে) আমাদের বাধ্য করেছিলো, (বিশেষ করে) যখন তোমরা আমাদের আদেশ দিতে, যেন আমরা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করি এবং অন্যদের তাঁর সমকক্ষ দাঁড় করাই; (এভাবে একে অপরকে অভিযুক্ত করতে করতে) যখন তারা (তাদের চোখের সামনেই) আযাব দেখতে পাবে; তখন তারা মনে মনে ভীষণ অনুতাপ করতে থাকবে; সেদিন যারা (আমাকে) অস্বীকার করেছে আমি তাদের গলদেশে শেকল পরিয়ে দেবো; (তুমিই বলো,) স্বীয় কৃতকর্মের জন্যে এদের এর চাইতে ভালো কোনো বিনিময় কি দেয়া যেতো?

৩৪. (কখনো এমন হয়নি) আমি কোনো জনপদে (জাহান্নামের) সতর্ককারী ( রূপে কোনো নবী) পাঠিয়েছি, অথচ তাদের বিত্তশালী লোকেরা একথা বলেনি, তোমাদের যে পয়গাম দিয়ে পাঠানো হয়েছে, আমরা তা অস্বীকার করি।

৩৫. তারা আরো বলেছে, আমরা (এ দুনিয়ায়) ধনে জনে (তোমাদের চাইতে) সমৃদ্ধশালী এবং (পরকালে) আমাদের কখনোই আযাব দেয়া হবে না।

৩৬. (হে নবী,) তুমি বলো, আমার মালিক যাকে ইচ্ছা করেন তার রেযেক প্রশস্ত করে দেন, (যাকে ইচ্ছা) সংকুচিত করে দেন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই (এটা) বুঝে না।

৩৭. (হে মানুষ,) তোমাদের ধন সম্পদ, তোমাদের সন্তান-সন্ততি এমন (কোনো বিষয়) নয় যে, এগুলো তোমাদের আমার নৈকট্য লাভ করতে সহায়ক হবে, তবে যে ব্যক্তি ঈমান এনেছে এবং (সে অনুযায়ী) নেক কাজ করেছে (সেই এ নৈকট্য লাভ করতে পারবে), এ ধরনের লোকদের জন্যেই (কেয়ামতে) দ্বিগুণ পুরস্কারের ব্যবস্থা রয়েছে, তারা জান্নাতের (সুরমা) বালাখানায় নিরাপদে অবস্থান করবে, কেননা তারা নেক আমল করেছে ।

৩৮. যারা আমার আয়াতকে (নানা কৌশলে) ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছে, তারা হামেশাই আযাবে পড়ে থাকবে।

৩৯. (হে নবী,) তুমি বলো, আমার মালিক তাঁর বান্দাদের মাঝে যার প্রতি ইচ্ছা করেন তার রেযেক বাড়িয়ে দেন, (আবার যার প্রতি ইচ্ছা) তার জন্যে (তা) সংকুচিত করে দেন; তোমরা যা কিছু (আল্লাহর পথে) খরচ করবে, তিনি (তোমাদের অবশ্যই) তার প্রতিদান দেবেন, (কেননা) তিনিই হচ্ছেন সর্বোত্তম রেযেকদাতা।

৪০. যেদিন তিনি এদের সকলকে (হাশরের ময়দানে) একত্রিত করবেন, অতঃপর ফেরেশতাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলবেন, এ (মানুষ)-রা কি (দুনিয়াতে) শুধু তোমাদেরই এবাদাত করতো?

৪১. ফেরেশতারা বলবে (হে আমাদের মালিক), তুমি মহান, তাদের বদলে তুমিই আমাদের অভিভাবক, ওরা তো বরং জ্বিনদের এবাদাত করতো এবং এদের অধিকাংশ তাদের ওপর বিশ্বাসও করতো ।

৪২. আজ তোমাদের একে অন্যের উপকার কিংবা অপকার কোনো কিছুই করার ক্ষমতা নেই; যালেমদের আমি (আরো) বলবো, যে আগুনের আযাব তোমরা অস্বীকার করতে, আজ তারই মজা উপভোগ করো।

৪৩. যখন এদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমুহ তেলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, এ ব্যক্তি (আমাদের মতো) একজন মানুষ বৈ কিছু নয়, তোমাদের পুর্বপুরুষরা যাদের এবাদাত করতো, তা থেকে সে তোমাদের ফিরিয়ে রাখতে চায় এবং (কোরআন সম্পর্কে) তারা বলতো, এটা তো মনগড়া মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়, আর এ কাফেরদের কাছে যখনই কোনো সত্য এসে হাযির হয় তখনই তারা বলে, এ হচ্ছে এক সুস্পষ্ট যাদু ।

৪৪. অথচ আমি এদের কখনো কোনো (আসমানী) কেতাব দেইনি যা তারা পড়তে (পড়াতে) পারে, না আমি তোমার আগে এদের কাছে অন্য কোনো সতর্ককারী পাঠিয়েছি;

৪৫. এদের আগের লোকেরাও (নবীদের) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো, (অথচ) আমি তাদের যা কিছু দান করেছিলাম তার এক দশমাংশ পর্যন্তও এরা পৌঁছুতে পারেনি, অতঃপর (যখন) তারা আমার নবীদের অস্বীকার করেছে, (তখন তুমিও দেখেছো) আমার আযাব কতো ভয়ংকর ছিলো!

৪৬. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো (এসো), আমি তোমাদের শুধু একটি কথাই উপদেশ দিচ্ছি, তা হচ্ছে, তোমরা আল্লাহ তায়ালার জন্যেই (সত্যের ওপর) দাঁড়িয়ে যাও, দু'দুজন করে, (দুজন না হলে) একা একা, অতঃপর ভালো করে চিন্তা করে দেখো, তোমাদের সাথী (মোহাম্মদ) কোনো রকম পাগল নয়; সে তো হচ্ছে তোমাদের জন্যে আসন্ন ভয়াবহ আযাবের একজন সতর্ককারী মাত্র ।

৪৭. (হে নবী) তুমি বলো, আমি তো তোমাদের কাছে (হেদায়াত পৌঁছাবার জন্য) কোনো পারিশ্রমিক দাবী করিনি, বরং এ কাজের যা কল্যাণ তাতো তোমদেরই জন্য, আমার পাওনা তো আল্লাহ তায়ালার কাছেই, তিনি (মানুষের) প্রতিটি বিষয়ের ওপরই সাক্ষী ।

৪৮. তুমি (আরো) বলো, আমার মালিক সত্য দিয়ে বাতিলকে চূর্ণ বিচূর্ণ করেন, যাবতীয় অদৃশ্য বিষয়ে তিনি পরিজ্ঞাত ।

৪৯. তুমি বলো, সত্য এসে গেছে (বাতিল নির্মূল হয়ে গেছে), এর না (আর কখনো) সুচনা হবে আর না হবে পুনরাবৃত্তি।

৫০. (হে নবী,) এদের বলে দাও, আমি যদি (সত্য পথ থেকে) বিচ্যুত হয়ে যাই, তাহলে আমার এ বিচ্যুতির পরিণাম আমার ওপরই বর্তাবে, আর যদি আমি হেদায়াতের ওপর থাকি তবে তা শুধু এ জন্যে যে, আল্লাহ তায়ালা সব কিছু শোনেন এবং (সবার) একান্ত নিকটে অবস্থান করছেন।

৫১. হে নবী, যদি তুমি (সেদিনটি) দেখতে পেতে, যখন এরা ভীতবিহ্বল হয়ে ঘুরতে থাকবে এবং তাদের জন্যে পালানোর পথ থাকবে না এবং একান্ত কাছ থেকেই তাদের পাকড়াও করা হবে,

৫২. (এ সময়) তারা বলতে থাকবে (হ্যাঁ), আমরা তাঁর ওপর ঈমান আনলাম, কিন্তু এখন (এতো) দুর থেকে (ঈমানের) নাগাল তারা (কিভাবে) পাবে?

৫৩. অথচ এরাই ইতিপুর্বে তাঁকে অস্বীকার করেছে, দুর থেকে (ভালো করে) না দেখে (অনুমানের ভিত্তিতেই) কথা বলছে।

৫৪. (আজ) তাদের মাঝে ও (জান্নাত সম্পর্কিত) তাদের কামনা-বাসনার মাঝে একটি (অপ্রতিরোধ্য) দেয়াল (দাঁড় করিয়ে) দেয়া হবে, যেমনি করা হয়েছিলো তাদের পুর্ববর্তী (মোশরেক) সাথীদের বেলায়, (মুলত) ওরা সবাই বিভ্রান্তিকর সন্দেহে সন্দিহান ছিলো।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url