আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ওয়াকেয়াহ’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ওয়াকেয়াহ | Al Waqiah | الواقعة


সূরা আল ওয়াকেয়াহ’এর বাংলা অনুবাদ

সূরা আল ওয়াকেয়াহ, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৯৬, রুকু ৩

সূরা আল ওয়াকেয়াহ


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. যখন (কেয়ামতের অবশ্যম্ভাবী) ঘটনাটি সংঘটিত হবে,

২.(তখন) কেউই তার সংঘটিত হওয়ার অস্বীকারকারী থাকবে না।

৩. এ (ঘটনা)-টি হবে (কারো মর্যাদা) ভূলুণ্ঠনকারী, (আর কারো মর্যাদা) সমুন্নতকারী,

৪. পৃথিবী যখন প্রবল কম্পনে কম্পিত হবে,

৫. পর্বতমালা সম্পূর্ণরূপে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া হবে,

৬. অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধূলাবালিতে পরিণত হয়ে যাবে,

৭. আর তোমরা (মানুষরা তখন) তিন ভাগ হয়ে যাবে;

৮. (প্রথমত হবে) ডান দিকের দল, জানো এ ডান দিকের লোক কারা?

৯. (দ্বিতীয়ত হবে) বাম দিকের দল, কারা এ বাম দিকের লোক?

১০. (তৃতীয়ত হবে) অগ্রবর্তী (ঈমান আনয়নকারী) দল, এরাই (হলো মূলত প্রধান) অগ্রগামী দল,

১১. এরা হচ্ছে (আল্লাহ তায়ালার) একান্ত ঘনিষ্ঠ বান্দা,

১২.(এরা অবস্থান করবে) নেয়ামতে পরিপূর্ণ জান্নাতসমূহে।

১৩.(এদের) বড়ো অংশটি (অবশ্য হবে) আগের লোকদের মধ্য থেকে,

১৪. আর সামান্য (অংশই) থাকবে পরবর্তী লোকদের মাঝ থেকে;

১৫. (তারা থাকবে) স্বর্ণখচিত আসনের ওপর,

১৬. তার ওপর তারা (একে অপরের) মুখোমুখি (আসনে) হেলান দিয়ে (বসবে)।

১৭. তাদের চারপাশে (তাদের সেবার জন্যে) চির কিশোরদের একটি দল ঘুরতে থাকবে,

১৮. পানপাত্র ও প্রবাহমান সূরা ভর্তি পেয়ালা নিয়ে (এরা প্রস্তুত থাকবে),

১৯. সেই (সূরা পান করার) কারণে তাদের কোনো শিরঃপীড়া হবে না, তারা (কোনো রকম) নেশাও করবে না,

২০.(সেখানে আরো থাকবে) তাদের নিজ নিজ পছন্দমতো ফলমূল,

২১. (থাকবে) তাদের মনের চাহিদা মোতাবেক (রকমারি) পাখীর গোশত;

২২.(সেবার জন্যে মজুদ থাকবে) সুন্দরী সুনয়না সাথী তরুণী দল,

২৩. তারা যেন (সযত্নে) এক একটি ঢেকে রাখা মুক্তা,

২৪.(এর সব কিছুই হচ্ছে তাদের) সে (কাজের) পুরস্কার যা তারা (দুনিয়ায়) করে এসেছে।

২৫. সেখানে তারা কোনো অর্থহীন প্রলাপ (বা কথাবার্তা) শুনতে পাবে না,

২৬. (সেখানে) বরং বলা হবে (শুধু) শান্তি, নিরবচ্ছিন্ন শান্তি!

২৭.(অতঃপর আসবে) ডান পাশের লোক, আর কারা (এ) ডান পাশের লোক;

২৮. (তারা অবস্থান করবে এমন এক উদ্যানে) যেখানে থাকবে (শুধু) কাঁটাবিহীন বরই গাছ,

২৯. (থাকবে) কাঁদি কাঁদি কলা,

৩০. (শান্তিদায়িনী) ছায়া দূর-দূরান্ত পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে,

৩১. আর থাকবে প্রবাহমান (ঝর্ণাধারার) পানি,

৩২. পর্যাপ্ত (পরিমাণ) ফলমূল,

৩৩. (এমন সব ফল) যার সরবরাহ কখনো শেষ হবে না এবং (যার ব্যবহার কখনো) নিষিদ্ধও করা হবে না,

৩৪. আর থাকবে উঁচু উঁচু বিছানা;

৩৫. . আমি তাদের (সাথী হুরদের) বানিয়েছি বানানোর মতো করেই),

৩৬. (তাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,) আমি তাদের চির কুমারী করে রেখেছি,

৩৭. তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) তারা (হবে) সমবয়সের প্রেম সোহাগিনী,

৩৮. (এগুলো হচ্ছে প্রথম দলের সব) ডান পাশের লোকদের জন্যে;

৩৯.(এ ডান পাশের লোকদের) এক বিরাট অংশই হবে আগের লোকদের মাঝ থেকে,

৪০. (আবার) অনেকে হবে পরবর্তী লোকদের মাঝ থেকেও;

৪১. যারা বাম পাশের লোক, তুমি কি জানো এ বাম পাশের লোক কারা;

৪২. (যাদের অবস্থান হবে জাহান্নামের) উত্তপ্ত ও ফুটন্ত পানিতে,

৪৩. এবং (ঘন) কালো রঙের ধোঁয়ার ছায়ায়,

৪৪. (সে ছায়া যেমন) শীতল নয়, (তেমনি তা কোনো রকম) আরামদায়কও হবে না।

৪৫. এরা (হচ্ছে সেসব লোক যারা) এর আগে (দুনিয়ায়) অত্যন্ত সুখ সম্পদে কাটাতো,

৪৬. এরা বার বার জঘন্য পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়তো,

৪৭. এরা বলতো, আমরা যখন মরে যাবো এবং (মরে যাওয়ার পর) আমরা যখন মাটি ও হাড়ের সমষ্টিতে পরিণত হয়ে যাবো, তখনও কি আমাদের পুনরায় জীবিত করা হবে?

৪৮. (জীবিত করা হবে) কি আমাদের বাপদাদা এবং পূর্বপুরুষদেরও?

৪৯. (হে নবী) তুমি বলো, অবশ্যই আগে পরের সব লোককেই

৫০. একটি নির্দিষ্ট দিনে (একটা নির্দিষ্ট সময়ে) জড়ো করা হবে !

৫১. অতঃপর (কাফেরদের বলা হবে,) ওহে পথভ্রষ্ট ও (এ দিনের আগমনকে) মিথ্যা প্রতিপন্নকারী ব্যক্তিরা,

৫২. (দুনিয়ায় যা অর্জন করেছো তার বিনিময়ে আজ) তোমরা ভক্ষণ করবে যাককুম' (নামক একটি) গাছের অংশ,

৫৩. অতঃপর তা দিয়েই তোমরা (তোমাদের) পেট ভরবে,

৫৪. তার ওপর তোমরা পান করবে (জাহান্নামের) ফুটন্ত পানি,

৫৫. তাও আবার পান করতে থাকবে (মরুভূমির) তৃষ্ণার্ত উটের মতো করে;

৫৬. এ হবে (কেয়ামতে) তাদের (যথার্থ) মেহমানদারী;

৫৭. . আমি (যে) তোমাদের সবাইকে পয়দা করেছি (এ কথাটা) তোমরা কি বিশ্বাস করছো না?

৫৮. তোমরা যে (সন্তান উৎপাদনের জন্যে এক বিন্দু) বীর্যপাত করে আসো, সে সম্পর্কে (কখনো) কি ভেবে দেখেছো ?

৫৯. বলো তো, তাকে কি তোমরা (পূর্ণাংগ) মানুষ বানিয়ে দাও না আমি তার স্রষ্টা?

৬০. তোমাদের মাঝে (সবার) মৃত্যু আমিই নির্ধারণ করি এবং আমি এ ব্যাপারে মোটেই অক্ষম নই যে,

৬১. তোমাদের মতোই আরেক দল মানুষ দিয়ে তোমাদের বদল করে দেবো এবং (প্রয়োজনে) তোমাদেরই (আবার) এমনভাবে তৈরী করবো যে, তোমরা কিছুই জানতে পারবে না।

৬২. তোমরা (যখন) তোমাদের প্রথম সৃষ্টির ঘটনাটা সুনিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছো, (তখন দ্বিতীয় বার সৃষ্টির ভবিষ্যদ্বাণী থেকে) কেন শিক্ষা গ্রহণ করছো না?

৬৩. তোমরা (যমীনে) যে বীজ বপন করে আসো সে সম্পর্কে কি কখনো চিন্তা করেছো?

৬৪. (তা থেকে) ফসলের উৎপাদন কি তোমরা করো না আমিই তার উৎপাদক?

৬৫. অথচ আমি যদি চাই তাহলে (অংকুরিত সব) বীজ খড়কুটায় পরিণত করে দিতে পারি, আর (তা দেখে) তোমরা হতভম্ব হয়ে পড়বে,

৬৬. (তোমরা বলতে থাকবে, হায়! আজ) তো আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেলো,

৬৭. আমরা তো (ফসল থেকে আজ) বঞ্চিতই থেকে গেলাম!

৬৮. কখনো কি তোমরা সেই পানি সম্বন্ধে চিন্তা করে দেখেছো যা তোমরা (সব সময়) পান করো;

৬৯. (বলতে পারো? আকাশের) মেঘমালা থেকে এ পানি কি তোমরা নিজেরা বর্ষণ করো না আমি এর বর্ষণকারী?

৭০. অথচ আমি চাইলে এ (সুপেয় পানি লবণাক্ত করে দিতে পারি, (পানির এ সুন্দর ব্যবস্থাপনার জন্যে) তোমরা কেন আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করছো না?

৭১. আগুন যা (প্রতিদিন) তোমরা প্রজ্বলিত করে থাকো তা সম্পর্কে কি কখনো ভেবে দেখেছো?

৭২. তার (জ্বালানোর) গাছটি কি তোমরা সৃষ্টি করেছো না আমি এর স্রষ্টা?

৭৩. ( মূলত) আমিই একে (সভ্যতার) নিদর্শন করে রেখেছি এবং একে ভ্রমণকারীদের জন্যে প্রয়োজন পূরণের সামান বানিয়ে দিয়েছি।

৭৪. অতঃপর (হে নবী, এসব কিছুর জন্যে) তুমি তোমার মহান মালিকের নামের মাহাত্ম্য ঘোষণা করো।

৭৫. অতঃপর আমি শপথ করছি তারকাগুলোর অস্তাচলের,

৭৬. সত্যিই (আমার গোটা সৃষ্টি নৈপুণ্যের আলোকে) তা হচ্ছে এক মহা শপথ, যদি তোমরা জানতে;

৭৭. অবশ্যই কোরআন এক মহামর্যাদাবান গ্রন্থ।

৭৮. এটি লিপিবদ্ধ রয়েছে একটি (সযত্নে রক্ষিত গ্রন্থে

৭৯. পূত পবিত্র ব্যতিরেকে তা কেউ স্পর্শও করে না;

৮০. (কেননা তা) নাযিল করা হয়েছে সৃষ্টিকূলের মালিক আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে ।

৮১. তোমরা এ (গ্রন্থের আনীত) বাণীকে কি সাধারণ কথাই মনে করতে থাকবে?

৮২. এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করাটাকেই তোমরা তোমাদের জীবিকা (আহরণের পেশা) বানিয়ে নেবে?

৮৩. যখন কোনো (মানুষের) প্রাণ (তার) কণ্ঠনালীতে এসে পৌঁছে যায়,

৮৪. তখন (কেন) তোমরা (অসহায়ের মতো) তাকিয়ে থাকো,

৮৫.(এ সময় তো বরং) তোমাদের চাইতে আমিই সেই (মুমূর্ষু) ব্যক্তির বেশী কাছে থাকি, (কিন্তু) তোমরা এর কিছুই দেখতে পাও না।

৮৬. তোমরা যদি এমন অক্ষম না-ই হও,

৮৭. তোমরা যদি (তোমাদের ক্ষমতার দাবীতে) সত্যবাদী হও, তাহলে কেন সেই (বেরিয়ে যাওয়া প্রাণ)-কে (পুনরায় তার দেহে) ফিরিয়ে আনো না।

৮৮. হ্যাঁ যদি সে (মৃত) ব্যক্তিটি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত (প্রথম দলের) একজন হয়ে থাকে,

৮৯. তাহলে (তার জন্যে) থাকবে আরাম আয়েশ, উন্নত মানের আহার্য ও নেয়ামতে ভরপুর (এক চিরন্তন) জান্নাত।

৯০. আর যদি সে হয় ডান পাশের (দ্বিতীয় দলের) কেউ,

৯১. তাহলে (তাকে এই বলে অভিনন্দন জানানো হবে,) তোমার জন্যে রয়েছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শাস্তি (আর শান্তি, কারণ), তুমি তো (ছিলে) ডান পাশেরই (একজন);

৯২. আর যদি সে হয় (আল্লাহ তায়ালাকে) অস্বীকারকারী মিথ্যাবাদী পথভ্রষ্ট দলের কেউ,

৯৩. তাহলে ফুটন্ত পানি দ্বারা (তার) আপ্যায়ন করা হবে,

৯৪. এবং সে জাহান্নামের (কঠিন) আগুনে উপনীত হবে ।

৯৫. নিশ্চয়ই এ হচ্ছে এক অমোঘ সত্য (ঘটনা) ।

৯৬. অতএব (হে নবী,) তুমি তোমার মহান মালিকের পবিত্র নামের তাসবীহ পাঠ করো।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url