আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আয যারিয়াত’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আয যারিয়াত | Surah Adh Dhariyat | الذّاريات


সূরা আয যারিয়াত’এর বাংলা অনুবাদ

সূরা আয যারিয়াত, মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৬০, রুকু ৩

সূরা আয যারিয়াত


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. (ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ) বাতাসের শপথ, যা ধুলাবালি উড়িয়ে নিয়ে যায়,

২. অতপর (মেঘমালার) শপথ যা পানির বোঝা বয়ে চলে,

৩.(জলযানসমুহের) শপথ যা ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে,

৪. অতপর তাদের (ফেরেশতাদের) শপথ, যারা (আল্লাহর) আদেশ মোতাবেক প্রত্যেক বস্তু বন্টন করে,

৫.(কেয়ামতের) যে দিনের ওয়াদা তোমাদের সাথে করা হচ্ছে তা (অবশ্যম্ভাবী) সত্য,

৬. বিচার আচারের একটা দিন অবশ্যই আসবে;

৭. বহু কক্ষ বিশিষ্ট আকাশের শপথ,

৮. তোমরাও (কেয়ামতের ব্যাপারে) নানা কথাবার্তার মধ্যে (নিমজ্জিত) রয়েছো;

৯.(মূলত)যে ব্যক্তি সত্যভ্রষ্ট সে ব্যক্তিই (কোরআনকে) পরিত্যাগ করেছে;

১০. ধ্বংস হোক, যারা শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে (কথা বলে),

১১. (সর্বোপরি) যারা জাহেলিয়াতে (নিমজ্জিত হয়ে) মূল সত্য থেকে উদাসীন হয়ে পড়েছে,

১২. এরা (তামাশার ছলে) জিজ্ঞেস করে, বিচারের দিনটি কবে আসবে?

১৩. (এদের তুমি বলো,) যেদিন তাদের আগুনে দগ্ধ করা হবে (সেদিন কেয়ামত হবে।

১৪. (সেদিন তাদের বলা হবে, এবার) তোমরা তোমাদের শাস্তি ভোগ করতে থাকো; এ হচ্ছে (সেদিন) যে জন্যে তোমরা খুব তাড়াহুড়ো করছিলে!

১৫. যারা (আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে, তারা (আল্লাহ তায়ালার) জান্নাতে ও ঝর্ণাধারায় (চির শান্তিতে) থাকবে,

১৬. সেদিন আল্লাহ তায়ালা তাদের যা (যা পুরস্কার) দেবেন, তা সবই তারা (সানন্দ চিত্তে গ্রহণ করতে থাকবে; নিঃসন্দেহে এরা আগে সৎকর্মশীল ছিলো;

১৭. তারা রাতের সামান্য অংশ ঘুমিয়ে কাটাতো।

১৮. রাতের শেষ প্রহরে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতো।

১৯. (এরা বিশ্বাস করতো,) তাদের ধন সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিত লোকদের অধিকার রয়েছে।

২০. যারা (নিশ্চিতভাবে) বিশ্বাস করতো, তাদের জন্যে পৃথিবীর মাঝে (আল্লাহকে চেনা জানার) অসংখ্য নিদর্শন (ছড়িয়ে) রয়েছে।

২১. তোমাদের নিজেদের (এ দেহের) মধ্যেও তো (আল্লাহকে চেনার অসংখ্য নিদর্শন) রয়েছে; তোমরা কি দেখতে পাও না?

২২. আকাশের মাঝে রয়েছে তোমাদের রেকে, তোমাদের দেয়া যাবতীয় প্রতিশ্রুতি।

২৩. অতএব এ আসমান যমীনের মালিকের শপথ, এ (গ্রন্থ)-টা নির্ভূল, ঠিক যেমনি তোমরা (এখন) একে অপরের সাথে কথাবার্তা বলছো।

২৪. (হে নবী,) তোমার কাছে ইবরাহীমের সেই সম্মানিত মেহমানদের কাহিনী পৌঁছেছে কি?

২৫. যখন তারা তার ঘরে প্রবেশ করলো, তখন তারা (তাকে) সালাম পেশ করলো; (সেও উত্তরে) বললো সালাম, (কিন্তু তার কাছে এদের একটি) অপরিচিত দল বলে মনে হলো,

২৬. এরপর (চুপে চুপে) সে নিজ ঘরের লোকদের কাছে চলে গেলো, কিছুক্ষণ পর সে একটি (ভুনা করা) মোটা তাজা বাছুরসহ (ফিরে) এলো,

২৭. অতপর সে তা তাদের সামনে পেশ করলো এবং বললো, কি ব্যাপার, তোমরা খাচ্ছো না যে,

২৮.(তাদের খেতে না দেখে) সে মনে মনে তাদের ব্যাপারে ভয় পেলো, (তার ভয় দেখে) তারা বললো, তুমি ভয় করো না; তার সাথে তারা তাকে গুণধর একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলো।

২৯. এটা শুনে তার স্ত্রী চীৎকার করতে করতে সামনে এলো এবং (খুশীতে) নিজের মাথায় হাত মারতে মারতে বললো (কি ভাবে তা সম্ভব), আমি তো বৃদ্ধা এবং বন্ধ্যা।

৩০. (তারা বললো,) হ্যাঁ তোমার ব্যাপারটি এভাবেই হবে, তোমার মালিক বলেছেন; তিনি প্রবল প্রজ্ঞাময়, তিনি সব কিছু জানেন (এটা তাঁর জন্যে অসম্ভব কিছু নয় ।

৩১. সে বললো, হে (আল্লাহ তায়ালার) প্রেরিত (মেহমান)-রা, (এবার) বলো, তোমাদের (এখানে আসার পেছনে আসল) ব্যাপারটা কি?

৩২. তারা বললো, আমাদের (আল্লাহর পক্ষ থেকে) একটি অপরাধী জাতির কাছে (তাদের শায়েস্তা করার জন্যে) পাঠানো হয়েছে,

৩৩. (আমাদের বলা হয়েছে,) আমরা যেন মাটির (শক্ত) পাথর তাদের ওপর বর্ষণ করি,

৩৪. যাতে (তাদের নাম ধাম) তোমার মালিকের কাছ থেকে চিহ্নিত করে দেয়া হয়েছে, এটা হচ্ছে সীমালংঘনকারী যালেমদের জন্যে।

৩৫. অতঃপর আমি সেই (জনপদ) থেকে এমন প্রতিটি মানুষকে বের করে এনেছি, যারা ঈমানদার ছিলো,

৩৬. (আসলে)সেখানে মুসলমানদের একটি ঘর ছাড়া (উদ্ধার করার মতো দ্বিতীয়) কোনো ঘরই আমি পাইনি,

৩৭.(তাদের ধ্বংস করে) আমি পরবর্তী এমন সব মানুষদের জন্যে একটি নিদর্শন সেখানে রেখে এসেছি, যারা আমার কঠিন আযাবকে ভয় করে;

৩৮. (আরো নিদর্শন রেখেছি) মুসার (কাহিনীর) মাঝেও, যখন আমি তাকে একটি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ ফেরাউনের কাছে পাঠিয়েছিলাম।

৩৯. সে তার সাংগপাংগসহ (হেদায়াত থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং সে বললো, (এ তো হচ্ছে) যাদুকর কিংবা (আস্ত) পাগল।

৪০. অতঃপর আমি তাকে এবং তার লয় লশকরদের (এ বিদ্রোহের জন্যে) চরমভাবে পাকড়াও করলাম এবং তাদের সবাইকে সমুদ্রে নিক্ষেপ করলাম, (আসলেই) সে ছিলো এক (দন্ডযোগ্য) অপরাধী ব্যক্তি।

৪১. আ'দ জাতির ঘটনার মাঝেও (শিক্ষণীয় উপদেশ) রয়েছে, যখন আমি তাদের ওপর এক সর্ববিধ্বংসী (ঝড়) বাতাস পাঠিয়েছিলাম।



৪২. এ (বিধ্বংসী) বাতাস যা কিছুর ওপর দিয়ে ( ধেয়ে এসেছে, তাকেই পঁচা হাড়ের মতো চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়ে গেছে;

৪৩. (নিদর্শন রয়েছে) সামূদ জাতির (কাহিনীর) মাঝেও, যখন তাদের বলা হয়েছিলো, একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমরা (নেয়ামত) ভোগ করতে থাকো।

৪৪.(কিন্তু) তারা তাদের মালিকের কথার নাফরমানী করলো, অতঃপর এক প্রচন্ড বজ্রাঘাত তাদের ওপর এসে পড়লো এবং তারা চেয়েই থাকলো।

৪৫.(আযাবের সামনে) তারা (একটুখানি) দাঁড়াবার শক্তিও পেলো না এবং এ আযাব থেকে নিজেদের তারা বাঁচাতেও পারলো না,

৪৬. এর আগেও (বিদ্রোহের জন্যে আমি) নুহের জাতিকে (ধ্বংস করেছিলাম); নিঃসন্দেহে তারাও ছিলো একটি পাপী সম্প্রদায়।

৪৭. আমি (আমার) হাত দিয়েই আসমান বানিয়েছি, (নিঃসন্দেহে) আমি মহান ক্ষমতাশালী।

৪৮. আমি এ যমীনকেও (তোমাদের জন্যে) বিছিয়ে দিয়েছি, (তোমাদের সুবিধার জন্যে) আমি একে কতো সুন্দর করেই না (সমতল) করে রেখেছি!

৪৯. (সৃষ্টি জগতের) প্রত্যেকটি বস্তু আমি জোড়ায় জোড়ায় পয়দা করেছি, যাতে করে (এ নিয়ে) তোমরা চিন্তা গবেষণা করতে পারো।

৫০. অতএব তোমরা (এ সবের আসল স্রষ্টা) আল্লাহ তায়ালার দিকেই ধাবিত হও; আমি তো তাঁর পক্ষ থেকে (আগত) তোমাদের জন্যে সুস্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র,

৫১. তোমরা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কাউকে মাবূদ বানিয়ে নিয়ো না; আমি তো তোমাদের জন্যে তাঁর (পক্ষ) থেকে একজন সুস্পষ্ট সাবধানকারী মাত্র,

৫২.(রাসূলদের ব্যাপারটি) এমনটিই (হয়ে এসেছে), এর আগের মানুষদের কাছে এমন কোনো রাসূল আসেনি, যাদের এরা যাদুকর কিংবা পাগল বলেনি,

৫৩. (একি ব্যাপার!) এরা কি একে অপরকে এই একই পরামর্শ দিয়ে এসেছে (যে, বংশানুক্রমে সবাই একই কথা বলছে,) না, (আসলেই) এরা ছিলো সীমালংঘনকারী জাতি,

৫৪. অতএব (হে নবী), তুমি এদের উপেক্ষা করো, অতঃপর (এ জন্যে) তুমি (কোনোক্রমেই অভিযুক্ত হবে না,

৫৫. তুমি (মানুষদের আল্লাহ তায়ালার পথে) উপদেশ দিতে থাকো, অবশ্যই উপদেশ ঈমানদারদের উপকারে আসে।

৫৬. আমি মানুষ এবং জ্বিন জাতিকে আমার এবাদাত করা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশে সৃষ্টি করিনি।

৫৭. আমি তো তাদের কাছ থেকে কোনো রকম জীবিকা দাবী করি না, তাদের কাছ থেকে আমি এও চাই না, তারা আমাকে খাবার যোগাবে।

৫৮. সন্দেহে আল্লাহ তায়ালাই জীবিকা সরবরাহকারী, তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রবল ক্ষমতার অধিকারী ।

৫৯. অতএব যারা সীমালংঘনকারী যালেম তাদের জন্যে প্রাপ্য আযাবের অংশ ততোটুকুই নির্দিষ্ট থাকবে যতোটুকু তাদের পূর্ববর্তী (যালেম) লোকেরা ভোগ করেছে, অতঃপর (আযাবের ব্যাপারে) তারা যেন খুব তাড়াহুড়ো না করে।

৬০. দুর্ভোগ (ও ভোগান্তি) তো তাদের জন্যেই যারা শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করেছে, যার প্রতিশ্রুতি তাদের (বার বার) দেয়া হয়েছে ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url