আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা ক্বাফ’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা ক্বাফ | Surah Qaaf | سورة ق
সূরা ক্বাফ’এর বাংলা অনুবাদ
সূরা ক্বাফ, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৫, রুকু ৩
সূরা ক্বাফ
রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে
১. ক্বাফ, মর্যাদাসম্পন্ন কোরআনের শপথ (অবশ্যই আমি তোমাকে রসুল করে পাঠিয়েছি),
২. (এ কথা অনুধাবন না করে) বরং তারা বিস্ময়বোধ করে, তাদের নিজেদের মাঝ থেকে (কি করে) একজন সতর্ককারী (নবী) তাদের কাছে এলো, অতপর অবিশ্বাসীরা (এও) বলে, এ তো (আসলেই) একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার,
৩. এটা কি এমন যে, আমরা যখন মরে যাবো এবং আমরা যখন মাটি হয়ে যাবো (তখন পুনরায় আমাদের জীবন দান করা হবে), এ তো সত্যিই এক সুদূরপরাহত ব্যাপার!
৪. আমি তো এও জানি, (মৃত্যুর পর) তাদের (দেহ) থেকে কতোটুকু অংশ যমীন বিনষ্ট করে, আর আমার কাছে একটি গ্রন্থ আছে (যেখানে এ সব বিবরণ) সংরক্ষিত রয়েছে ।
৫. উপরন্তু এদের কাছে যখনি সত্য এসে হাযির হয়েছে, তখনি তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে, অতপর তারা সংশয়ে দোদুল্যামান (থাকে)।
৬. এ লোকগুলো কি কখনো তাদের ওপরে (ভাসমান) আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেনি, কিভাবে তা আমি বানিয়ে রেখেছি এবং কি (অপরূপ) সাজে আমি তা সাজিয়ে রেখেছি, কই, এর কোথাও কোনো (ক্ষুদ্রতম) ফাটলও তো নেই!
৭. আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি, (নড়াচড়া থেকে রক্ষা করার জন্যে) আমি তার মধ্যে স্থাপন করেছি মযবুত (ও অনড়) পাহাড়সমুহ, আবার এ যমীনে আমি উদগত করেছি সব ধরনের চোখ জুড়ানো উদ্ভিদ,
৮. (মূলত) প্রতিটি মানুষ যে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসতে চায়, (এর প্রতিটি জিনিসই) তার চোখ খুলে দেবে এবং তাকে (আল্লাহর অস্তিত্বের) পাঠ মনে করিয়ে দেবে।
৯. আকাশ থেকে আমি বরকতপূর্ণ পানি অবতীর্ণ করেছি এবং তা দিয়ে উদ্যানমালা ও এমন শস্যরাজি পয়দা করেছি, যা (কেটে কেটে) আহরণ করা হয়;
১০(আরো পয়দা করেছি) উঁচু উঁচু খেজুর বৃক্ষ, যার গায়ে গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর (সাজানো) রয়েছে,
১১. (এগুলো আমি) বান্দাদের জীবিকা (হিসেবে) দান করেছি এবং আমি তা দিয়ে মৃত ভূমিকে জীবন দান করি; এমনিই (মৃত মানুষদের কবর থেকে) বেরিয়ে আসার ঘটনাটি (সংঘটিত হবে।
১২. এর আগেও নূহের জাতি, রাস-এর অধিবাসী ও সামুদ জাতির লোকেরা (তাদের নবীদের) অস্বীকার করেছে,
১৩. (অস্বীকার করেছে) আদ, ফেরাউন ও লুতের সম্প্রদায়ও,
১৪. বনের অধিবাসী এবং তুব্বা সম্প্রদায়ের লোকেরাও (তাই করেছে); এরা সবাই আল্লাহর রসুলদের মিথ্যাবাদী বলেছে, অতপর তাদের ওপর (আমার) প্রতিশ্রুত আযাব আপতিত হয়েছে।
১৫. আমি কি মানুষদের প্রথমবার সৃষ্টি করতে গিয়ে (এতোই) ক্লান্ত হয়ে পড়েছি যে, (এরা) আমার নতুন সৃষ্টি করার কাজে সন্দেহ পোষণ করছে!
১৬. নিঃসন্দেহে আমি মানুষদের সৃষ্টি করেছি, তার মনের কোণে যে খারাপ চিন্তা উদয় হয় সে সম্পর্কেও আমি জ্ঞাত আছি, (কারণ) আমি তার ঘাড়ের রগ থেকেও তার অনেক কাছে (অবস্থান করি)।
১৭. (এই সরাসরি জ্ঞান ছাড়াও সেখানে আরো দু'জন (ফেরেশতা) একজন তার ডানে আরেকজন তার বামে বসে (তার প্রতিটি তৎপরতা সংরক্ষণ করার কাজে নিয়োজিত) আছে।
১৮. (ক্ষুদ্র) একটি শব্দও সে উচ্চারণ করে না, যা সংরক্ষণ করার জন্যে একজন সদা সতর্ক প্রহরী তার পাশে নিয়োজিত থাকে না!
১৯. মৃত্যু যন্ত্রণার মুহূর্তটি সত্যিই এসে হাযির হবে (তখন তাকে বলা হবে, ওহে নির্বোধ), এ হচ্ছে সে (মুহূর্ত)-টা, যা থেকে তুমি পালিয়ে বেড়াতে!
২০. অতপর (সবাইকে একত্রিত করার জন্যে) শিঙ্গায় ফুঁ দেয়া হবে (তখন তাদের বলা হবে), এ হচ্ছে সেই শাস্তির দিন (যার কথা তোমাদের বলা হয়েছিলো)!
২১. (সেদিন) প্রতিটি মানুষ (আল্লাহর আদালতে এমনভাবে) হাযির হবে যে, তাকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে সাথে একজন (ফেরেশতা) থাকবে, অপরজন হবে (তার যাবতীয় কর্মকান্ডের প্রত্যক্ষ) সাক্ষী।
২২. (একজন বলবে, এ হচ্ছে সে দিন) যে (দিন) সম্পর্কে তুমি উদাসীন ছিলে, এখন আমরা তোমার (চোখের সামনে) থেকে তোমার সে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, অতএব, (আজ) তোমার দৃষ্টিশক্তি হবে অত্যন্ত প্রখর (সব কিছুই এখন তুমি দেখতে পাবে) ।
২৩. তার (অপর) সাথী (ফেরেশতা) বলবে (হে মালিক), এ হচ্ছে (তোমার আসামী, আর এ হচ্ছে) আমার কাছে রক্ষিত (তার জীবনের) নথিপত্র;
২৪.(অতপর উভয় ফেরেশতাকে বলা হবে,) তোমরা দু'জন মিলে একে এবং (এর সাথে) প্রতিটি ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী কাফেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করো,
২৫. কেননা) এরা ভালো কাজে বাধা দিতো, (যত্রতত্র ) সীমালংঘন করতো, (স্বয়ং আল্লাহর ব্যাপারে) এরা সন্দেহ পোষণ করতো,
২৬. যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কিছুকে মাবূদ বানিয়ে নিতো, তাকেও (আজ) জাহান্নামের কঠিন আযাবে নিক্ষেপ করো।
২৭.(এ সময়) তার সহচর (শয়তান) বলে উঠবে, হে আমাদের মালিক, আমি (কিন্তু) এ ব্যক্তিটিকে (তোমার) বিদ্রোহী বানাইনি, (বস্তুত) সে নিজেই (ঘোর) বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত ছিলো।
২৮. আল্লাহ তায়ালা বলবেন, এখন তোমরা আমার সামনে বাকবিতন্ডা করো না, আমি তো আগেই তোমাদের (আজকের আযাব সম্পর্কে) সতর্ক করে দিয়েছিলাম ।
২৯. আমার এখানে কোনো কথারই রদবদল হয় না, আমি বান্দাদের ব্যাপারে অবিচারকও নই (যে, সতর্ক না করেই তাদের আযাব দেবো)!
৩০. সেদিন আমি জাহান্নামকে (লক্ষ্য করে বলবো, তুমি কি সত্যি সত্যিই পূর্ণ হয়ে গেছো? জাহান্নাম বলবে, (হে মালিক, এখানে আসার মতো) আরো কেউ আছে কি?
৩১. (অপরদিকে) জান্নাতকে পরহেযগার লোকদের কাছে নিয়ে আসা হবে, (সেদিন তাদের জন্যে তা) মোটেই দূরে (-র বস্তু) হবে না।
৩২. (জান্নাতকে দেখিয়ে বলা হবে,) এ হচ্ছে সেই জায়গা, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হয়েছিলো, (এ স্থান) সে ধরনের প্রতিটি মানুষের জন্যে (নির্দিষ্ট), যে (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে এবং (তা) হেফাযত করে।
৩৩. (এ ব্যবস্থা তার জন্যে,) যে না দেখে পরম দয়ালু আল্লাহকে ভয় করেছে এবং বিনয় চিত্তে আল্লাহ তায়ালার কাছে হাযির হয়েছে,
৩৪. শ(সেদিন তাদের বলা হবে, হ্যাঁ, আজ) তোমরা একান্ত প্রশান্তির সাথে এতে দাখিল হয়ে যাও; এ হচ্ছে (তোমাদের) অনন্ত যাত্রার (প্রথম) দিন।
৩৫. সেখানে তারা যা যা পেতে চাইবে তার সব তো পাবেই, (এর সাথে) আমার কাছে তাদের জন্যে আরো থাকবে (অপ্রত্যাশিত পুরস্কার)।
৩৬. আমি তাদের আগেও অনেক মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যারা ছিলো শক্তি সামর্থে এদের চাইতে অনেক বেশী বড়ো, (দুনিয়ার) শহর বন্দরগুলো তারা চষে বেড়িয়েছে; কিন্তু (আল্লাহর আযাব থেকে তাদের) কোনো পলায়নের জায়গা কি ছিলো?
৩৭. এর মাঝে সে ব্যক্তির জন্যে (প্রচুর) শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, যার (কাছে একটি জীবন্ত) মন রয়েছে, অথবা যে ব্যক্তি একাগ্রচিত্তে (সে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ) শুনতে চায়।
৩৮. আমি আকাশমালা, পৃথিবী ও উভয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু আছে তার সব কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি, কোনো ধরণের ক্লান্তিই আমাকে স্পর্শ করেনি।
৩৯. অতএব (হে নবী, সৃষ্টি সংক্রান্ত ব্যাপারে) এরা যা বলে তাতে তুমি ধৈর্য্য ধারণ করো, তুমি (যথাযথ) প্রশংসার সাথে তোমার মালিকের পবিত্রতা ও মাহাত্ম্য ঘোষণা করো সূর্য উদয়ের আগে এবং সূর্য অস্ত যাবার আগে,
৪০. রাতের একাংশেও তাঁর পবিত্রতা ( ও মহিমা) ঘোষণা করো এবং সাজদা আদায়ের কাজ শেষ করে (পুনরায়) তাঁর তাসবীহ পাঠ করো।
৪১. কান পেতে শোনো, (সেদিন দূরে নয়) যেদিন একজন আহ্বানকারী একান্ত কাছে থেকে (সবাইকে) ডাকতে থাকবে,
৪২. সেদিন তারা কেয়ামতের মহাগর্জন ঠিকমতোই শুনতে পাবে; সে দিনটিই (হবে কবর থেকে) উত্থিত হবার দিন।
৪৩. (সত্য কথা হচ্ছে,) আমিই জীবন দান করি, আমিই মৃত্যু ঘটাই এবং (সবাইকে আবার) আমার কাছেই ফিরে আসতে হবে।
৪৪. সেদিন তাদের ওপর থেকে (কবরের) মাটি ফেটে যাবে, যখন তারা (দ্রুত হাশরের মাঠের দিকে) েেদৗড়াতে থাকবে; (বলা হবে,) এ হচ্ছে হাশরের দিন, (মূলত) আমার জন্যে এটি একটি সহজ কাজ।
৪৫. (হে নবী,) এরা যা কথাবার্তা বলে তার সব কিছুই আমি জানি, তুমি তো তাদের ওপর জোর জবরদস্তি করার কেউ নও | অতপর এ কোরআন দিয়ে তুমি সে ব্যক্তিকে সদুপদেশ দাও, যে আমার শাস্তিকে ভয় করে ।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url