আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল হুজুরাত’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল হুজুরাত | Surah Al-Hujurat | الحجرات
সূরা আল হুজুরাত’এর বাংলা অনুবাদ
সূরা আল হুজুরাত মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৮, রুকু ২
সূরা আল হুজুরাত
রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে
১. হে (মানুষ), তোমরা যারা ঈমান এনেছো, আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের সামনে (কখনো) অগ্রণী হয়ো না এবং (সর্বদা) আল্লাহকে ভয় করে চলো; আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে (সব কিছু) শোনেন এবং দেখেন।
২. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, কখনো নিজেদের আওয়াজ নবীর আওয়াযের ওপর উঁচু করো না এবং নিজেরা যেভাবে একে অপরের সাথে উঁচু (গলায়) আওয়াজ করো নবীর সামনে কখনো সে ধরনের উঁচু আওয়াজ এ কথা বলো না, এমন যেন কখনো না হয় যে, তোমাদের সব কাজকর্ম (এ কারণেই) বরবাদ হয়ে যাবে এবং তোমরা তা জানতেও পারবে না।
৩. যারা আল্লাহর রসুলের সামনে নিজেদের গলার আওয়াজ নিম্নগামী করে রাখে, তারা হচ্ছে সেসব মানুষ যাদের মন (মগজ)-কে আল্লাহ তায়ালা তাকওয়ার জন্যে যাচাই বাছাই করে নিয়েছেন; এমন ধরনের লোকদের জন্যেই রয়েছে আল্লাহর ক্ষমা ও অসীম পুরস্কার।
৪.(হে নবী,) যারা তোমাকে (সময় অসময়) তোমার কক্ষের বাইরে থেকে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ লোক।
৫. যতোক্ষণ তুমি তাদের কাছে বের হয়ে না আসো, ততোক্ষণ পর্যন্ত তারা যদি ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতো, তাহলে এটা তাদের জন্যে হতো খুবই উত্তম; আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৬. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, যদি কোনো দুষ্ট (প্রকৃতির) লোক তোমাদের কাছে কোনো তথ্য নিয়ে আসে, তবে তোমরা (তার সত্যতা) পরখ করে দেখবে (কখনো যেন আবার এমন না হয়), না জেনে তোমরা কোনো একটি সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে ফেললে এবং অতপর নিজেদের কৃতকর্মের ব্যাপারে তোমাদেরই অনুতপ্ত হতে হলো!
৭. তোমরা জেনে রাখো, (সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্যে) তোমাদের মাঝে (এখনো) আল্লাহর রসুল মজুদ রয়েছে; (আর) আল্লাহর রসুল যদি অধিকাংশ ব্যাপারে তোমাদের মতেরই অনুসরণ করে চলে, তাহলে তোমরা (এর ফলে) সংকটে পড়ে যাবে; কিন্তু আল্লাহ তায়ালা (তা চাননি বলেই) তোমাদের কাছে তিনি ঈমানকে প্রিয় বস্তু বানিয়ে দিয়েছেন, তোমাদের অন্তরে সে ঈমানকে (আকর্ষণীয় ও) শোভনীয় বিষয় করে রেখে দিয়েছেন, আবার তোমাদের কাছে কুফরী, সত্যবিমুখতা ও গুনাহের কাজকে অপ্রিয় অনাকাংখিত বিষয় করে দিয়েছেন; এরাই হচ্ছে সঠিক পথের অনুসারী,
৮. (আসলে এ হচ্ছে) আল্লাহ তায়ালার এক মহা অনুগ্রহ ও নেয়ামত, আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও প্রবল প্রজ্ঞাময়।
৯. মোমেনদের দুটো দল যদি নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে বসে, তখন তোমরা উভয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে, অতপর তাদের এক দল যদি আরেক দলের ওপর যুলুম করে, তাহলে যে দলটি যুলুম করছে তার বিরুদ্ধেই তোমরা লড়াই করো যতোক্ষণ পর্যন্ত সে দলটি (সম্পূর্ণত) আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে না আসে, (হ্যাঁ, একবার) যদি সে দলটি (আল্লাহর হুকুমের দিকে) ফিরে আসে তখন তোমরা দুটো দলের মাঝে ন্যায় ও ইনসাফের সাথে মীমাংসা করে দেবে এবং তোমরা ন্যায়বিচার করবে; অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা ন্যায়বিচারকদের ভালোবাসেন।
১০. মোমেনরা তো (একে অপরের) ভাই বেরাদর, অতএব (বিরোধ দেখা দিলে) তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা করে দাও, আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো, আশা করা যায় তোমাদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করা হবে।
১১. ওহে মানুষ! তোমরা যারা ঈমান এনেছো, তোমাদের কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে (নিয়ে) কোনো উপহাস না করে, (কেননা) এমনও তো হতে পারে, (যাদের আজ উপহাস করা হচ্ছে) তারা উপহাসকারীদের চাইতে উত্তম, আবার নারীরাও যেন অন্য নারীদের উপহাস না করে, কারণ, যাদের উপহাস করা হয়, হতে পারে তারা উপহাসকারিণীদের চাইতে অনেক ভালো। (আরো মনে রাখবে), একজন আরেকজনকে (অযথা) দোষারোপ করবে না, আবার একজন আরেকজনকে খারাপ নাম ধরেও ডাকবে না, (কারণ) ঈমান আনার পর কাউকে খারাপ নামে ডাকা একটা বড়ো ধরনের অপরাধ, যারা এ আচরণ থেকে ফিরে না আসবে তারা হবে (সত্যিকার) যালেম।
১২. হে ঈমানদার ব্যক্তিরা, তোমরা বেশী বেশী অনুমান করা থেকে বেঁচে থাকো, (কেননা) কিছু কিছু ক্ষেত্রে) অনুমান (আসলেই) অপরাধ এবং একে অপরের দোষ খোঁজার জন্যে তার) পেছনে গোয়েন্দাগিরী করো না, একজন আরেকজনের গীবত করো না; তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে আর (অবশ্যই) তোমরা এটা অত্যন্ত ঘৃণা করো; (এসব ব্যাপারে) আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তাওবা কবুল করে এবং তিনি একান্ত দয়ালু।
১৩. হে মানব সম্প্রদায়, আমি তোমাদের একটি পুরুষ ও একটি নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, তারপর আমি তোমাদের জন্যে জাতি ও গোত্র বানিয়েছি, যাতে করে (এর মাধ্যমে) তোমরা একে অপরের সাথে পরিচিত হতে পারো, কিন্তু আল্লাহর কাছে তোমাদের মাঝে সর্বাধিক মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি হচ্ছে সে, যে (আল্লাহ তায়ালাকে) বেশী ভয় করে, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা সব কিছু জানেন এবং সব কিছুর (পুংখানুপুংখ ) খবর রাখেন ।
১৪. এ (আরব) বেদুইনরা বলে, আমরা তো ঈমান এনেছি; তুমি বলো, না, তোমরা (সঠিক অর্থে এখনও) ঈমান আনোনি, তোমরা (বরং) বলো, আমরা (তোমাদের রাজনৈতিক) বশ্যতাই স্বীকার করেছি মাত্র, (কারণ, যথার্থ) ঈমান তো এখনো তোমাদের অন্তরে প্রবেশই করেনি; যদি তোমরা সত্যিই আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করো, তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কর্মফলের সামান্য পরিমাণও লাঘব করবেন না; আল্লাহ তায়ালা নিঃসন্দেহে পরম ক্ষমাশীল ও একান্ত দয়ালু।
১৫. সত্যিকার ঈমানদার ব্যক্তি হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রসুলের ওপর ঈমান আনে, অতপর (আল্লাহ তায়ালার বিধানে) সামান্যতম সন্দেহও তারা পোষণ করে না এবং জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জেহাদ করে; এরাই হচ্ছে সত্যনিষ্ঠ ।
১৬. (যারা তোমার কাছে এসেছে তাদের) তুমি বলো, তোমরা কি তোমাদের দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালাকে অবহিত করতে চাও; অথচ এই আকাশমণ্ডলী এবং এ যমীনে যা কিছু আছে তার সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা জানেন; আল্লাহ তায়ালা সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত রয়েছেন।
১৭. এরা তোমার কাছে প্রতিদান চায় এ জন্যে, তারা (তোমার) বশ্যতা স্বীকার করেছে; তুমি (তাদের) বলো, তোমাদের এ বশ্যতা স্বীকার করার প্রতিদান চাইতে আমার কাছে এসো না, বরং যদি তোমরা যথার্থ সত্যনিষ্ঠ হয়ে থাকো তাহলে (জেনে রেখো), আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদের ধন্য) করেছেন ।
১৮. নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর যাবতীয় অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন, এ যমীনে তোমরা যা করে বেড়াও তার সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা পর্যবেক্ষণ করেন ।
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url