আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ফোরকান’র বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ফোরকান | Surah Al Furqan | الفرقان


সূরা আল ফোরকান’র বাংলা অনুবাদ


সূরা আল ফোরকান মক্কায় অবতীর্ণ আয়াত ৭৭, রুকু ৬

সূরা আল ফোরকান



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে

১. কতো মহান তিনি, যিনি তাঁর বান্দার ওপর (সত্য মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী এই) ফোরকান' নাযিল করেছেন, যাতে করে সে (ব্যক্তি এর দ্বারা) সৃষ্টিকূলের জন্যে সতর্ককারী হতে পারে,

২. (তিনিই আল্লাহ তায়ালা) তাঁর জন্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও যমীনের সার্বভৌমত্ব, তিনি কখনো কাউকে (নিজের) সন্তান বলে গ্রহণ করেননি না (তাঁর এ) সার্বভৌমত্বে অন্য কারো কোনো শরীকানা আছে, তিনিই প্রতিটি বস্তু পয়দা করেছেন এবং তিনি তাঁর (সৃষ্টির) জন্যে (আলাদা আলাদা) পরিমাপ নির্ধারণ করেছেন ।

৩. (এ সত্ত্বেও) এ (মোশরেক) লোকেরা তাঁকে বাদ দিয়ে এমন কিছুকে মাবুদ বানিয়ে নিয়েছে, যারা কিছুই সৃষ্টি করতে পারে না, বরং তাদেরই সৃষ্টি করা হয়েছে, (সত্য কথা হচ্ছে), তারা (যেমন) নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করতে সক্ষম নয়, তেমনি নিজেরা নিজেদের কোনো উপকারও করতে সক্ষম নয়। তারা কাউকে মৃত্যু দিতে পারে না কাউকে জীবনও দিতে পারে না, (তেমনি) পারে না (কেউ একবার মরে গেলে তাকে) পুনরায় উঠিয়ে আনতে ।

৪. যারা (আল্লাহ তায়ালাকে) অবিশ্বাস করে, তারা (এ কোরআন সম্পর্কে) বলে, এ তো মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়, যা এ ব্যক্তি নিজে থেকে বানিয়ে নিয়েছে এবং অন্য জাতির লোকেরা তার ওপর সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে, (মূলত এসব কথা বলে) এরা (এক জঘন্য) যুলুম ও (নির্জলা) মিথ্যা নিয়ে হাযির হয়েছে ।

৫. তারা বলে, এ (কোরআন) হচ্ছে সেকালের উপকথা, যা এ ব্যক্তি লিখিয়ে নিয়েছে এবং সকাল সন্ধ্যায় তার সামনে এগুলো পড়া হয় ।

৬. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, এ (কোরআন) তিনিই নাযিল করেছেন যিনি আকাশসমূহ ও যমীনের সমৃদ্বয় রহস্য জানেন, তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ।

৭. ওরা বলে, এ আবার কেমন (ধরনের) রসুল যে (আমাদের মতো করেই) খাবার খায় এবং (আমাদের মতোই) হাটে বাজারে চলাফেরা করে| কেন তার কাছে কোনো ফেরেশতা নাযিল করা হলো না যে তার সাথে (আযাবের) সতর্ককারী হয়ে থাকতো,

৮. কিংবা (গায়ব থেকে) তার কাছে কোনো ধন ভান্ডার এসে পড়লো না কেন, অথবা (কমপক্ষে) তার কাছে একটি বাগানই না হয় থাকতো, যা থেকে সে (খাবার সংগ্রহ করে) খেতো, এ যালেম লোকেরা (মুসলমানদের আরো) বলে, তোমরা তো (আসলে) একজন যাদুগ্রস্থ ব্যক্তিরই অনুসরণ করছো ।

১৯. (হে নবী,) চেয়ে দেখো, ওরা তোমার সম্পর্কে কি ধরনের কথা বানাচ্ছে, এরা (আসলে) গোমরাহ হয়ে গেছে, কখনো তারা আর সঠিক পথ পাবে না ।

১০. (হে নবী, তুমি এদের বলো,) আল্লাহ তায়ালা (এমন) এক মহান সত্তা, যিনি ইচ্ছা করলে তোমাদের (এ একটি বাগান কেন) এর চাইতে উৎকৃষ্ট বাগানসমূহও দান করতে পারেন, যার নিম্নদেশে (অমীয়) ঝর্ণধারা, প্রবাহিত হবে, (এ ছাড়াও তিনি (তোমাদের) দিতে পারেন (সুরম্য) প্রাসাদসমূহ!

১১. বরং এরা কেয়ামতের দিনকে অস্বীকার করে, আর যারাই কেয়ামত অস্বীকার করে তাদের জন্যে আমি (জাহান্নামের) জ্বলন্ত আগুন প্রস্তুত করে রেখেছি।

১২. তারা যখন দূর থেকে তাদের (মতো অন্যান্য জাহান্নামীদের) দেখবে, তখন তারা (স্পষ্টত) তার গর্জন ও চীৎকার শুনতে পাবে।

১৩. অতপর হস্তপদ শৃংখলিত অবস্থায় যখন তাদের জাহান্নামের কোনো সংকীর্ণ স্থানে ফেলে দেয়া হবে, তখন সেখানে তারা শুধু (মৃত্যুর) ধ্বংসকেই ডাকতে থাকবে,

১৪. (তাদের তখন বলা হবে,) আজ তোমরা ধ্বংস হওয়াকে একবারই শুধু ডেকো না, বরং বহুবার ধ্বংসকে ডাকো (কোনো কিছুই আজ তোমাদের কাজে আসবে না )।

১৫. (হে নবী, এদের) তুমি বলো, এটা (জাহান্নামের) এ (কঠোর আযাব) শ্রেয় না সেই স্থায়ী জান্নাত, যার ওয়াদা পরহেযগার লোকদের (আগেই) দিয়ে রাখা হয়েছে, এ (জান্নাতই) হচ্ছে তাদের যথাযথ পুরস্কার ও (চূড়ান্ত) প্রত্যাবর্তনের স্থান!

১৬. সেখানে তারা যা কিছু পেতে চাইবে তাই তাদের জন্যে (মজুদ) থাকবে, (তাও আবার) থাকবে স্থায়ীভাবে, এ প্রতিশ্রুতির যথাযথ পালন তোমার মালিকেরই দায়িত্ব ।

১৭. যেদিন তিনি এ (মোশরেক) ব্যক্তিদের এবং তাদের ও তাদের (মাবুদদের), যাদের এরা আল্লাহর বদলে ইবাদত করতো, (সবাইকে) একত্রিত করবেন অতপর তিনি (সে মারদদের) জিজ্ঞেস করবেন, তোমরাই কি আমার এ বান্দাদের গোমরাহ করেছো, না তারা নিজেরাই (সত্য থেকে) বিচ্যুত হয়ে গেছে,

১৮. ওরা (জবাবে) বলবে (হে আল্লাহ তায়ালা), তুমি পবিত্র, তুমি মহান, আমরা (তো ছিলাম তোমারই বান্দা,) তোমার বদলে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করা আমাদের শোভনীয় ছিলো না, তুমি তো এদের এবং এদের পিতৃপুরুষদের (যথষ্টে) ভোগের সামগ্রী দিয়েছিলে, (এগুলো পেয়ে) তারা এমনকি তোমার কথাই ভুলে বসেছে এবং (এভাবেই) তারা একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত হয়ে গেছে ।

১৯. (আল্লাহ তায়ালা বলবেন,) তোমাদের এ মাবুদরা তো তোমরা যা বলছো তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, অতএব (এখন) তোমরা (আর আমার আযাব) সরাতে পারবে না, না (তোমরা আজ) কারো সাহায্য পাবে | তোমাদের মধ্যে কেউ যদি (আমার আনুগত্যের) সীমালংঘন করে তাহলে তাকে আমি কঠোর আযাব আস্বাদন করাবো।

২০. (হে নবী,) তোমার আগে আমি আরো যতো রসূল পাঠিয়েছি, তারা (মানুষের মতোই) আহার করতো, (অন্য মানুষদের মতোই) তারা হাটে বাজারে যেতো। (আসল কথা হচ্ছে) মানুষদের মধ্য থেকে রসূল পাঠিয়ে আমি তোমাদের একজনকে আরেকজনের জন্যে পরীক্ষা (-র উপকরণ) বানিয়েছি, (এ পরীক্ষায়) তোমরা কি ধৈর্য ধারণ করবে না? তোমার মালিক (কিন্তু তোমাদের) সবকিছুই দেখছেন।

২১. যারা আমার সাথে (তাদের) সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তারা বলে, কতো ভালো হতো যদি আমাদের কাছে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে কোনো ফেরেশতা নাযিল করা হতো, অথবা আমরা যদি আমাদের মালিককে (নিজেদের চোখে) দেখতে পেতাম! তারা (এ সব বলে) নিজেদের বড়ো (অহংকারী) মনে করলো এবং (আল্লাহ তায়ালার নাফরমানীতেও) তারা মাত্রাতিরিক্ত সীমালংঘন করে ফেললো ।

২২. যেদিন (সত্যি সত্যিই) তারা সে ফেরেশতাদের দেখবে, তখন (কিন্তু) অপরাধীদের জন্যে সেদিন কোনো সুসংবাদ থাকবে না, (বরং) তারা বলবে, (হে আল্লাহ, এই ফেরেশতাদের থেকে) আমরা পানাহ চাই পানাহ চাই ।

২৩. (এবার) আমি তাদের সে সব কর্মকান্ডের দিকে মনোনিবেশ করবো, যা তারা (দুনিয়ায়) করে এসেছে, তখন আমি তা উড়ন্ত ধুলিকণার মতোই (নিষ্ফল) করে দেবো ।

২৪. সেদিন জান্নাতীদের বাসস্থান ও তাদের বিশ্রামের জায়গা হবে অত্যন্ত মনোরম ।

২৫. (হে মানুষ, তোমরা সেদিনকে ভয় করো,) যেদিন আসমান তার মেঘমালা নিয়ে ফেটে পড়বে, আর (তারই মাঝ দিয়ে) দলে দলে ফেরেশতারা (যমীনে) নেমে আসবে ।

২৬. সেদিন চূড়ান্ত বাদশাহী হবে দয়াময় আল্লাহ তায়ালার জন্যে; যারা অস্বীকার করেছে তাদের ওপর সেদিনটি হবে (বড়োই) কঠিন!

২৭. সেদিন যালেম ব্যক্তি (ক্ষোভে দুঃখে) নিজের হাত দুটো দংশন করতে করতে বলবে, হায়! আমি যদি দুনিয়ায় রসুলের সাথে (দ্বীনের) পথ অবলম্বন করতাম!

২৮. দুর্ভাগ্য আমার, আমি যদি অমুককে (নিজের) বন্ধু না বানাতাম!

২৯. আমার কাছে (দ্বীনের) উপদেশ আসার পর সে তা থেকে আমাকে বিচ্যুত করে দিয়েছিলো; আর শয়তান তো (হামেশাই) মানুষকে (বিপদের সময় একলা) ফেলে কেটে পড়ে।

৩০. সেদিন রসুল বলবে, হে মালিক, অবশ্যই আমার জাতি কোরআনকে (একটি) পরিত্যাজ্য (বিষয়) মনে করেছিলো।

৩১. (হে নবী,) এভাবেই আমি (প্রত্যেক যুগের) অপরাধীদের প্রত্যেক নবীর দুশমন বানিয়ে থাকি; অতএব (তুমি মনোক্ষুণ্ন হয়ো না), তোমার পথ প্রদর্শন ও সাহায্য করার জন্যে তোমার মালিকই যথষ্টে!

৩২. যারা (কোরআন) অস্বীকার করে তারা বলে, (আচ্ছা এই) পুরো কোরআনটা তার ওপর একবারে নাযিল হলো না কেন? (আসলে কোরআন তো) এভাবেই (নাযিল) হওয়া উচিত ছিলো, যাতে করে এ (ওহী) দ্বারা আমি তোমার অন্তরকে মযরত করে দিতে পারি, (এ কারণেই) আমি একে থেমে থেমে নাযিল করেছি ।

৩৩. (তা ছাড়া) ওরা তোমার কাছে যে কোনো ধরনের বিষয় (ও সমস্যা) নিয়েই আসুক না কেন, আমি (সাথে সাথেই) তোমার কাছে (এর একটা) যথার্থ সত্য (সমাধান) এনে হাযির করতে পারি এবং (প্রয়োজনে তার) একটা সুন্দর ব্যাখ্যাও বলে দিতে পারি;

৩৪. এরা হচ্ছে সে সব লোক যাদের (কেয়ামতের দিন) মুখের ওপর ভর দিয়ে জাহান্নামের সামনে জড়ো করা হবে, ওদের সে স্থানটি হবে অতি নিকৃষ্ট, আর ওরা নিজেরাও হবে অতিশয় পথভ্রষ্ট ।

৩৫. অবশ্যই আমি মুসাকে (তাওরাত) গ্রন্থ দান করেছিলাম এবং তার ভাই হারুনকে তার সাথে তার সাহায্যকারী করেছিলাম,

৩৬. অতপর আমি তাদের বলেছিলাম, তোমরা উভয়েই (আমার হেদায়াত নিয়ে) এমন এক জাতির কাছে যাও, যারা আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে; অতপর (আমাকে অস্বীকার করায়) আমি তাদের সম্পূর্ণরূপে বিনাশ করে দিয়েছি;

৩৭. (একইভাবে) যখন নুহের সম্প্রদায়ও আমার রসুলদের মিথ্যা সাব্যস্ত করলো, তখন আমি তাদের সবাইকে (প্লাবনের পানিতে) ডুবিয়ে দিয়েছি এবং আমি ওদের (পরবর্তী) মানুষদের জন্যে শিক্ষণীয় বিষয় করে রেখেছি; আমি যালেমদের জন্যে মর্মন্তুদ আযাব ঠিক করে রেখেছি,

৩৮. (একই নিয়মে) আমি ধ্বংস করে দিয়েছি আদ, সামুদ ও 'রাস' এর অধিবাসীদের এবং তাদের অন্তর্বর্তীকালীন আরো বহু সম্প্রদায়কেও,

৩৯. (তাদের) প্রত্যেকের কাছেই আমি (আগের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিসমূহের) নিদর্শনসমূহ উপস্থাপন করেছি, (কিন্তু কেউই যখন সতর্কবাণী শোনলো না তখন) আমি তাদের সবাইকে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করে দিয়েছি ।

৪০. এরা তো সে জনপদ দিয়ে প্রতি নিয়ত আসা যাওয়া করে, যার ওপর আযাবের বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়েছিলো; ওরা কি তা দেখছে না? (আসল কথা হচ্ছে, এরা (পুনরায়) জীবিত হওয়ার কোনো আশাই পোষণ করে না। 

৪১. (হে নবী,) এরা যখন তোমাকে দেখে তখন তোমাকে কেবল ঠাট্টা বিদ্রূপের পাত্ররূপেই গণ্য করে (বলে); এ কি সে লোক, যাকে আল্লাহ তায়ালা রসুল করে পাঠিয়েছেন!

৪২. এ ব্যক্তিই তো আমাদের দেবতাদের (এবাদাত) থেকে আমাদের সম্পূর্ণ বিচ্যুতই করে দিতো যদি আমরা তাদের ওপর দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত না থাকতাম; (হ্যাঁ,) তারা যখন (আল্লাহ তায়ালার) আযাব (স্বচক্ষে দেখতে পাবে তখন ভালো করেই জানতে পারবে, কে তোমাদের মাঝে বেশী পথভ্রষ্ট ছিলো ।

৪৩. (হে নবী,) তুমি কি সে ব্যক্তির (অবস্থা) দেখোনি যে তার কামনা বাসনাকে নিজের মারুদ বানিয়ে নিয়েছে; তুমি কি তার (মতো ব্যক্তির) ওপর (অভিভাবক হতে পারো?

৪৪. (হে নবী,) তুমি কি সত্যিই মনে করো, তাদের অধিকাংশ লোক (তোমার কথা শুনে কিংবা (এর মর্ম) বুঝে; (আসলে) ওরা হচ্ছে পশুর মতো, বরং (কোনো কোনো ক্ষেত্রে) তারা (আরো) বেশী বিভ্রান্ত।

৪৫. (হে নবী,) তুমি কি তোমার মালিকের (কুদরতের) দিকে তাকিয়ে দেখো না? কি ভাবে তিনি ছায়াকে (সর্বত্র) বিস্তার করে রেখেছেন, তিনি ইচ্ছা করলে তা তো (একই স্থানে) স্থায়ী করে রাখতে পারতেন, অতপর আমি (কিন্তু) সুর্যকে তার ওপর একটি স্থায়ী নির্ঘন্ট বানিয়ে রেখেছি,

৪৬. পরে আমি ধীরে ধীরে তাকে আমার দিকে গুটিয়ে আনবো ।

৪৭. আল্লাহ তায়ালাই তোমাদের জন্যে রাতকে আবরণ, ঘুমকে আরাম ও দিনকে জেগে ওঠার সময় করে দিয়েছেন।

৪৮. তিনি তাঁর (বৃষ্টিরূপী) রহমতের আগে সুসংবাদবাহী বায় প্রেরণ করেন, অতপর আসমান থেকে (তার মাধ্যমে) বিশুদ্ধ পানি বর্ষণ করেন, 

৪৯. যেন তা দিয়ে তিনি মৃত ভূখন্ডে জীবনের সঞ্চার করতে পারেন এবং তা দিয়ে তাঁর সৃষ্ট অসংখ্য জীবজন্তু ও মানুষের পিপাসা নিবারণ করতে পারেন।

৫০. আমি বার বার এ (ঘটনা)টি তাদের মাঝে সংঘটিত করি, যাতে করে তারা (এ বিষয়টি থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে, কিন্তু অধিকাংশ মানুষই আমার অকৃতজ্ঞতা ছাড়া অন্য কিছু করতে অস্বীকার করলো ।

৫১. আমি ইচ্ছা করলে প্রতিটি জনপদে এক একজন সতর্ককারী (নবী) পাঠাতে পারতাম,

৫২. অতএব, তুমি কাফেরদের (এ অভিযোগের) পেছনে পড়ো না, তুমি (বরং) এ (কোরআন) দিয়ে তাদের প্রচন্ড মোকাবেলা করো ।

৫৩. তিনি (একই জায়গায়) দুটো সাগর এক সাথে প্রবাহিত করে রেখেছেন, একটি হচ্ছে মষ্টি ও সুপেয়, আরেকটি লোনা ও ক্ষারবিশষ্টি, উভয়ের মাঝখানে তিনি একটি সীমারেখা বানিয়ে রেখেছেন, (সত্যিই) এটি একটি অনতিক্রম্য ব্যবধান ।

৫৪. তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি মানুষকে (এক বিন্দু) পানি থেকে পয়দা করেছেন, অতপর তিনি তাকে (রক্ত সম্পর্ক দ্বারা) পরিবার (বন্ধন) ও (বৈবাহিক বন্ধন দ্বারা) জামাইয়ে (শ্বশুরে) পরিণত করেছেন; তোমার মালিক প্রভূত ক্ষমতাবান,

৫৫. (এসব কিছু সত্ত্বেও) তারা আল্লাহর বদলে এমন সবকিছুর এবাদাত করে যা না তাদের কোনো উপকার করতে পারে, না তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে; (আসলে প্রতিটি) কাফের ব্যক্তি নিজের মালিকের মোকাবেলায় (বিদ্রোহীরই বেশী) সাহায্যকারী (হয়)।

৫৬. (হে নবী,) আমি তো তোমাকে কেবল (জান্নাতের) সংবাদদাতা ও (জাহান্নামের) সতর্ককারীরূপেই পাঠিয়েছি।

৫৭. তুমি (এদের) বলো, আমি তো তোমাদের কাছ থেকে এ জন্যে কোনো পারিশ্রমিক দাবী করছি না, (হ্যাঁ, আমি চাই তোমাদের) প্রতিটি ব্যক্তিই যেন তার মালিক পর্যন্ত পৌঁছার (সঠিক) রাস্তাটি অবলম্বন করে ।

৫৮. (হে নবী,) তুমি সেই চিরঞ্জীব সত্তার ওপর নির্ভর করো, যাঁর মৃত্যু নেই। তুমি তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করো; তিনি তাঁর বান্দাদের গুনাহখাতা সম্পর্কে সম্যক ওয়াকেফহাল,

৫৯. তিনিই মহান আল্লাহ তায়ালা, যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও ওদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতপর তিনি (তাঁর) আরশে সমাসীন হন, (তিনি) অতি দয়াবান আল্লাহ, তাঁর (মর্যাদা) সম্পর্কে সে লোককে তুমি জিজ্ঞেস করো যে (এ সম্পর্কে) অবগত আছে।

৬০. যখন ওদের বলা হয়, তোমরা দয়াময় (আল্লাহ তায়ালা)-এর প্রতি সাজদাবনত হও, তখন তারা বলে, দয়াময় (আল্লাহ আবার) কে? যাকেই তুমি সাজদা করতে বলবে তাকেই কি আমরা সাজদা করবো? (বস্তুত তোমার এ আহ্বান) তাদের বিদ্বেষকে বরং আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

৬১. কতো মহান সেই সত্তা, যিনি আসমানে অসংখ্য গম্বুজ বানিয়েছেন, এরই মাঝে তিনি (আবার) পয়দা করেছেন প্রদীপ (-সম একটি সূর্য) এবং একটি জ্যোতির্ময় চাঁদ।

৬২. তিনি রাত ও দিনকে (পরস্পরের) অনুগামী করেছেন (তাদের জন্যে), যারা এসব কিছু থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে কিংবা (সে জন্যে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চায়।

৬৩. দয়াময় (আল্লাহ তায়ালা)-এর বান্দা তো হচ্ছে তারা, যারা যমীনে নেহায়াত বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন জাহেল ব্যক্তিরা (অশালীন ভাষায়) তাদের সম্বোধন করে, তখন তারা নেহায়াত প্রশান্তভাবে জবাব দেয় ।

৬৪. যারা তাদের মালিকের উদ্দেশে সাজদাবনত হয়ে ও দন্ডায়মান থেকে (তাদের) রাতগুলো কাটিয়ে দেয় ।

৬৫. যারা বলে, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের থেকে জাহান্নামের আযাব দূরে রেখো, কেননা তার আযাব হচ্ছে নিশ্চিত বিনাশ,

৬৬. (তদুপরি) আশ্রয় ও থাকার জন্যে তা হবে একটি নিকৃষ্ট জায়গা!

৬৭. তারা যখন ব্যয় করে তখন অপব্যয় (যেমন) করে না, (তেমনি কোনো প্রকার) কার্পণ্যও তারা করে না; বরং তাদের ব্যয় (সব সময় এ দুয়ের) মধ্যবর্তী (একটি ভারসাম্যমূলক) অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে।

৬৮. যারা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্য কোনো মাবুদকে ডাকে না, যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে যাকে হত্যা করতে আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন তাকে যারা হত্যা করে না, (উপরন্তু) যারা ব্যভিচার করে না, যে ব্যক্তিই এসব (অপরাধ) করবে সে (তার গুনাহের) শাস্তি ভোগ করবে,

৬৯. কেয়ামতের দিন তার জন্যে এ শাস্তি আরো বাড়িয়ে দেয়া হবে, সেখানে সে অপমানিত হয়ে চিরকাল পড়ে থাকবে,

৭০. কিন্তু যারা (এসব থেকে) তাওবা করেছে, আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, আল্লাহ তায়ালা এমন সব লোকদের (পেছনের) গুনাহসমূহ তাদের নেক আমল দ্বারা বদলে দেবেন; আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু ।

৭১. যে ব্যক্তি তাওবা করে এবং নেক আমল করে, সে (এর দ্বারা সম্পূর্ণত) আল্লাহ অভিমুখীই হয়ে পড়ে ।

৭২. (দয়াময় আল্লাহ তায়ালার নেক বান্দা তারাও) যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না, (ঘটনাচক্রে) যদি কোনো অযথা বিষয়ের তারা সম্মুখীন হয়ে যায় তাহলে একান্ত ভদ্রতার সাথে তারা (সেখান থেকে) সরে পড়ে।

৭৩. (এরা হচ্ছে এমন কিছু লোক,) তাদের কাছে যখন তাদের মালিকের কোনো আয়াত পড়ে (কোনো কিছু) স্মরণ করানো হয়, তখন তারা তার ওপর অন্ধ ও বধির হয়ে (দাঁড়িয়ে) থাকে না।

৭৪. (নেক বান্দা তারাও) যারা বলে, হে আমাদের মালিক, তুমি আমাদের (স্বামী) স্ত্রী ও সন্তান সন্ততিদের থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান করো, (উপরন্তু) তুমি আমাদের পরহেযগার লোকদের ইমাম বানিয়ে দাও ।

৭৫. এরাই হচ্ছে সেসব লোক, তাদের কঠোর ধৈর্যের বিনিময় স্বরূপ যাদের (সুরমা) বালাখানা দেয়া হবে, (ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে) তাদের (সম্মানজনক) অভিবাদন ও সালামসহ অভ্যর্থনা জানানো হবে,

৭৬. সেখানে তারা চিরকাল থাকবে; কতো উৎকৃষ্ট সে জায়গা আশ্রয় নেয়ার জন্যে, (কতো সুন্দর সে জায়গা) থাকার জন্যে!

৭৭. (হে নবী,) তুমি (এদের) বলো, তোমরা যদি (তাঁকে) না ডাকো তর আমার মালিক তোমাদের মোটেই পরোয়া করবেন না, যদি তোমরা তাঁকে ডাকো তবে তা তোমাদেরই কল্যাণ বয়ে আনবে, কিন্তু তোমরা তো (তাঁকে) অস্বীকার করেছো, (তাই) অচিরেই (এটা) তোমাদের জন্যে কাল হয়ে দেখা দেবে ।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url