আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মোমেনুন’র বাংলা অনুবাদ | সূরা আল মোমেনুন | Surah Al-Muminun | المؤمنون


সূরা আল মোমেনুন’র বাংলা অনুবাদ


সূরা আল মোমেনুন মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১৮, রুকু ৬

সূরা আল মোমেনুন



রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. নিঃসন্দেহে (সেসব) ঈমানদার মানুষরা মুক্তি পেয়ে গেছে,

২. যারা নিজেদের নামাযে একা বিনয়াবনত (হয়),

৩. যারা অর্থহীন বিষয় থেকে বিমুখ থাকে,

৪. যারা (রীতিমতো) যাকাত প্রদান করে, ৫. যারা তাদের যৌন অংগসমূহের হেফাযত করে,

৬. তবে নিজেদের স্বামী-স্ত্রী কিংবা (পুরুষদের বেলায়) নিজেদের অধিকারভুক্ত দাসী)-দের ওপর (এ বিধান প্রযোজ্য) নয়, (এখানে হেফাযত না করার জন্যে) তারা কিছুতেই তিরস্কৃত হবে না,

৭. অতপর এ (বিধিবদ্ধ উপায়) ছাড়া যদি কেউ অন্য কোনো (পন্থায় যৌন কামনা চরিতার্থ করতে) চায়, তাহলে তারা সীমালংঘনকারী (বলে বিবেচিত) হবে,

৮. যারা তাদের (কাছে রক্ষিত) আমানত ও (অন্যদের দেয়া) প্রতিশ্রুতিসমূহের হেফাযত করে,

৯. যারা নিজেদের নামাযসমূহের ব্যাপারে (সমধিক) যত্নবান হয়।

১০. এ লোকগুলোই হচ্ছে (মূলত যমীনে আমার যথার্থ) উত্তরাধিকারী,

১১. জান্নাতুল ফেরদাউসের উত্তরাধিকারও এরা পাবে, এরা সেখানে চিরকাল থাকবে।

১২. (হে মানুষ, তোমার সৃষ্টি প্রক্রিয়াটা লক্ষ্য করো,) আমি মানুষকে মাটি (-র মূল উপাদান) থেকে পয়দা করেছি, ১৩. অতপর তাকে আমি শুক্রকীট হিসেবে একটি সংরক্ষিত জায়গায় (সুনির্দষ্টি সময়ের জন্যে) রেখে দিয়েছি,

১৪. এরপর এ শুক্রবিন্দুকে আমি এক ফোঁটা জমাট রক্তে পরিণত করি, অতপর এ জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করি, (কিছুদিন পর) এ পিন্ডকে অস্থি পাঁজরে পরিণত করি, তারপর (এক সময়) এ অস্থি পাঁজরকে আমি গোশতের পোশাক পরিয়ে দেই, অতপর (বানানোর প্রক্রিয়া শেষ করে) আমি তাকে (সম্পূর্ণ) ভিন্ন এক সৃষ্টি (তথা পূর্ণাঙ্গ মানুষ)-রূপে পয়দা করি, আল্লাহ তায়ালা কতো উত্তম সৃষ্টিকর্তা (কতো নিপুণ তাঁর সৃষ্টি),

১৫. (একটি সুনির্দষ্টি সময় দুনিয়ায় কাটিয়ে) এরপর আবার তোমরা মৃত হয়ে যাও,

১৬. তারপর কেয়ামতের দিন তোমরা (সবাই) পুনরুত্থিত হবে।

১৭. আমিই তোমাদের ওপর এ সাত আসমান বানিয়েছি এবং আমি আমার সৃষ্টি সম্পর্কে (কিন্তু মোটেই) উদাসীন নই।

১৮. আমিই আসমান থেকে পরিমাণমতো পানি বর্ষণ করেছি এবং তাকে যমীনে সংরক্ষণ করে রেখেছি, আবার (এক সময়ে) তা (উড়িয়ে) নিয়ে যাবার ব্যাপারেও আমি সম্পূর্ণ ক্ষমতাবান।

১৯. তারপর (সংরক্ষিত সেই পানি) দিয়ে তোমাদের জন্যে খেজুর ও আংগুরের বাগান সৃষ্টি করি । তোমাদের জন্যে তাতে প্রচুর ফল পাকড়াও (উৎপাদিত) হয়, আর তা থেকে তোমরা (পর্যাপ্ত পরিমাণ) আহারও (গ্রহণ) করো,

২০. আর (যমীনে সংরক্ষিত পানি থেকে) এক প্রকার গাছ সিনাই পাহাড়ে তেল (এর উপাদান) নিয়ে জন্ম লাভ করে, খাদ্য গ্রহণকারীদের জন্যে তা ব্যঞ্জন (হিসেবেও ব্যবহৃত) হয়।

২১. (হে মানুষ,) তোমাদের জন্যে অবশ্যই চতুষ্পদ জন্তুর মাঝে (প্রচুর) শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে, তার পেটের ভেতরে যা কিছু আছে তা থেকে আমি তোমাদের (দুধ) পান করাই, (এ ছাড়াও) তোমাদের জন্যে তাতে আরো অনেক উপকারিতা রয়েছে, তার (গোশত) থেকে তোমরা আহারও করো।

২২. (আবার কিছু আছে) তার ওপর তোমরা (বাহন হিসেবে) সওয়ার হও, অবশ্য নৌ-যানেও তোমাদের (কখনো কখনো) আরোহণ করানো হয় ।

২৩. অবশ্যই আমি নুহকে তার জাতির কাছে (হেদায়াত নিয়ে) পাঠিয়েছিলাম, সে (তার জাতিকে) বলেছিলো, হে আমার জাতি, তোমরা ইবাদাত করো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার, তিনি ছাড়া তোমাদের অন্য কোনো মাবুদ নেই, তোমরা কি (তাঁকে) ভয় করবে না?

২৪. তখন তার জাতির মোড়লরা, যারা (আগে থেকেই) কুফরী করছিলো (একথা শুনে অন্যদের) বললো, এ (ব্যক্তি) তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ, (আসলে) এ ব্যক্তি তোমাদের ওপর নেতৃত্ব করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা যদি (নবী পাঠাতেই) চাইতেন তাহলে ফেরেশতাদেরই ( নবী করে) পাঠাতেন, আমরা তো এমন কোনো কথা আমাদের পূর্বপুরুষদের যমানায়ও (ঘটেছে বলে) শুনিনি।

২৫. (মূলত) এ (মানুষটি ) এমন, যার মধ্যে (মনে হয় কিছু) পাগলামী এসে গেছে, অতএব তোমরা (তার কোনো কথায়ই কান দিয়ো না), বরং এর ব্যাপারে কয়টা নির্দষ্টি দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করো (হয়তো তার পাগলামী এমনিই সেরে যাবে)।

২৬. (এ কথা শুনে) নুহ দোয়া করলো, হে আমার মালিক, এরা যেভাবে আমাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করলো, তুমি (সেভাবেই তাদের মোকাবেলায়) আমাকে সাহায্য করো।

২৭. অতপর আমি তার কাছে ওহী পাঠালাম, তুমি আমার তত্ত্বাবধানে আমারই ওহী অনুযায়ী একটি নৌকা প্রস্তুত করো, তারপর যখন আমার (আযাবের) আদেশ আসবে এবং (যমীনের) চুল্লি প্লাবিত হয়ে যাবে, তখন (সব কিছু থেকে) এক এক জোড়া নৌকায় উঠিয়ে নেবে, তোমার পরিবার পরিজনদেরও (ওঠিয়ে নেবে, তবে) তাদের মধ্যে যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত এসে গেছে সে ছাড়া, (দেখো,) যারা যুলুম করেছে তাদের ব্যাপারে আমার কাছে কোনো আরবী পেশ করো না, কেননা (মহাপ্লাবনে আজ) তারা নিমজ্জিত হবেই।

২৮. তারপর যখন তুমি এবং তোমার সাথীরা (নৌকায়) আরোহণ করবে তখন (শুধু) বলবে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্যে, যিনি আমাদের (একটি) অত্যাচারী জাতি থেকে উদ্ধার করেছেন ।

২৯. তুমি (নৌকায় ওঠে) বলো, হে আমার মালিক, তুমি আমাকে (যমীনের কোথাও) বরকতের সাথে নামিয়ে দাও, একমাত্র তুমিই আমাকে শান্তির সাথে (কোথাও) নামিয়ে দিতে পারো।

৩০. নিসন্দেহে এ (কাহিনীর) মধ্যে আমার (কুদরতের) নিদর্শন রয়েছে, (তা ছাড়া মানুষদের) পরীক্ষা তো আমি (সব সময়ই) নিয়ে থাকি ।

৩১. এদের পরে আমি আরেক জাতিকে পয়দা করেছিলাম,

৩২. অতপর তাদেরই একজনকে তাদের কাছে নবী করে পাঠিয়েছি (যার দাওয়াত ছিলো, হে আমার জাতি), তোমরা এক আল্লাহ তায়ালারই ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোনো মাবুদ নেই, তোমরা (নুহের জাতির ভয়াবহ আযাব দেখেও) কি সাবধান হবে না?

৩৩. (নবীর কথা শুনে) তার জাতির নেতৃস্থানীয় লোকজন, যারা আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে পরকালে আল্লাহ তায়ালার সাথে সাক্ষাতের বিষয়টিকে, (সর্বোপরি) যাদের আমি দুনিয়ার জীবনে প্রচুর ভোগ সামগ্রী দিয়ে রেখেছিলাম তারা (অন্যদের) বললো, এ ব্যক্তিটি তোমাদের মতো মানুষ ছাড়া অন্য কিছু নয়, তোমরা যা খাও সেও তা খায়, তোমরা যা কিছু পান করো সেও তা পান করে,

৩৪. (এমতাবস্থায়) তোমরা যদি তোমাদেরই মতো একজন মানুষকে (নবী মনে করে তার কথা) মেনে চলো, তাহলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হবে,

৩৫. (এ) ব্যক্তিটি কি তোমাদের সাথে এই ওয়াদা করছে যে, তোমরা যখন মরে যাবে, যখন তোমরা মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হয়ে যাবে, তখন তোমাদের সবাইকে (কবর থেকে আবার) উঠিয়ে আনা হবে?

৩৬. (আসলে) এ যে বিষয়টি (যা) দিয়ে তোমাদের সাথে এ ওয়াদা করা হচ্ছে, এটা (মানুষের বৈষয়িক বুদ্ধি থেকে) অনেক দুরে (এবং ধরা ছোঁয়ার) ও অনেক বাইরে,

৩৭. (তারা বললো, কিসের আবার পুনরুত্থান?) দুনিয়ার জীবনই তো হচ্ছে আমাদের একমাত্র জীবন, আমরা (এখানে) মরবো, (এখানেই) বাঁচবো, আমাদের কখনোই পুনরুত্থিত করা হবে না ।

৩৮. (নবুওতের দাবীদার) এ ব্যক্তিটি হচ্ছে (এমন) এক মানুষ, যে ( এসব কথা দ্বারা) আল্লাহর ওপর মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে, আমরা তার ওপর ঈমান আনবো না।

৩৯. (এদের মিথ্যাচার দেখে সে নবী আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া চাইলো এবং) বললো, হে আমার মালিক, তুমি এদের মিথ্যার মোকাবেলায় আমাকে সাহায্য করো।

৪০. আল্লাহ তায়ালা বললেন, হাঁ (তুমি ভেবো না), অচিরেই এরা (নিজেদের কর্মকান্ডের জন্যে) অনুতপ্ত হবে।

৪১. অতপর (সত্যি সত্যিই একদিন) আমার এক মহা তান্ডব এসে তাদের ওপর (মরণ) আঘাত হানলো এবং আমি (মুহূর্তের মধ্যে) তাদের সবাইকে তরঙ্গতাড়িত আবর্জনার স্তুপ সদৃশ (বস্তুতে পরিণত করে দিলাম, অতপর (সবাই বলে ওঠলো, আল্লাহর) গযব নাযিল হোক যালেম সমপ্রদায়ের ওপর ।

৪২. আমি তাদের (ধ্বংসের) পর (আরো) অনেক জাতিকেই সৃষ্টি করেছি,

৪৩. কোনো জাতিই তার (দুনিয়ায় বাঁচার) নির্দষ্টি কাল (যেমন) ত্বরান্বিত করতে পারেনি, (তেমনি সময় এসে গেলে) তা কেউ বিলম্বিতও করতে পারেনি,

৪৪. অতপর (দুনিয়ার জাতিসমুহের কাছে) আমি একের পর এক রসুল পাঠিয়েছি, যখনি কোনো জাতির কাছে তার (প্রতি পাঠানো আমার) রসুল এসেছে, তখনই তাকে তারা মিথ্যাবাদী বলেছে, অতপর আমিও ধ্বংস করার জন্যে তাদের এক এক জনকে একেক জনের পেছনে (ক্রমিক নম্বর) লাগিয়ে দিয়েছি, (এভাবেই) আমি তাদের (একদিন ইতিহাসের) কাহিনী বানিয়ে দিয়েছি, বিধ্বংস হোক সে জাতি, যারা আল্লাহ তায়ালার ওপর ঈমান আনেনি।

৪৫. তারপর আমি (এক সময়ে) আমার আয়াতসমূহ ও সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণ দিয়ে মুসা এবং তার ভাই হারুনকে পাঠিয়েছি,

৪৬. (তাদের আমি পাঠিয়েছি) ফেরাউন ও তার পরিষদের কাছে, কিন্তু তারা (তাদের মেনে নেয়ার বদলে) অহংকার করলো, তারা ছিলো (স্পষ্টত) একটি নাফরমান জাতি,

৪৭. তারা বলতে লাগলো, আমরা কি আমাদের মতোই দু'জন মানুষের ওপর ঈমান আনবো, (তাছাড়া) তাদের জাতিও হচ্ছে (বংশানুক্রমে) আমাদের সেবাদাস,

৪৮. তারা তাদের উভয়কেই মিথ্যাবাদী বললো, ফলে তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত মানুষদের দলভুক্ত হয়ে গেলো।

৪৯. (অথচ) আমি মুসাকে (আমার) কেতাব দান করেছিলাম, যেন লোকেরা (তা থেকে) হেদায়াত লাভ করতে পারে ।

৫০. (এভাবেই) আমি মারইয়াম পুত্র (ঈসা) ও তার মাকে (আমার কুদরতের) নিদর্শন বানিয়েছি এবং তাদের এক নিরাপদ ও প্রস্রবণবিশষ্টি উচ্চ ভূমিতে আমি আশ্রয় দিয়েছি।

৫১. হে রসুলরা, তোমরা পাক পবিত্র জিনিসসমূহ খাও, (হামেশা) নেক আমল করো, (কেননা) তোমরা যা কিছু করো সে সম্পর্কে আমি সবিশেষ অবহিত আছি।

৫২. এই (যে) তোমাদের জাতি তা (কিন্তু দ্বীনের বন্ধনে) একই জাতি, আর আমি হচ্ছি তোমাদের একমাত্র মালিক, অতএব তোমরা আমাকেই ভয় করো।

৫৩. কিন্তু লোকেরা নিজেদের মাঝে (এ মৌলিক) বিষয়টাকে বহুধাবিভক্ত করে দিয়েছে, আর প্রত্যেক দলের কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই তারা পরিতুষ্ট।

৫৪. অতএব (হে নবী), তুমি তাদের একটা সুনির্দষ্টি সময়ের জন্যে (নিজ নিজ) বিভ্রান্তিতে (পড়ে থাকার জন্যে) ছেড়ে দাও,

৫৫. তারা কি এটা ধরে নিয়েছে, আমি তাদের যে ধন সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে সাহায্য করছি

৫৬. এবং আমি সব সময়ই তাদের জন্যে সকল প্রকার কল্যাণ ত্বরান্বিত করে যাবো? (না, আসলে তা নয়[]) কিন্তু এরা (সে সম্পর্কে) কিছুই বোঝে না।

৫৭. যারা নিজেদের মালিকের ভয়ে সদা ভীত সন্ত্রস্ত থাকে,

৫৮. যারা তাদের মালিকের (নাযিল করা) আয়াতসমূহের ওপর ঈমান আনে,

৫৯. যারা তাদের মালিকের (মালিকানার) সাথে অন্য কাউকে শরীক করে না,

৬০. যারা (তাঁর পথে) যা কিছু দিতে পারে (মুক্তহস্তে) দান করে, (তারপরও) তাদের মন ভীত কম্পিত থাকে, তাদের একদিন তাদের মালিকের কাছে ফিরে যেতে হবে,

৬১. (সত্যিকার অর্থে) এরাই হচ্ছে সেসব মানুষ, যারা নেকীর কাজে সদা তৎপর, (উপরন্তু) তারা (সবার চাইতে) অগ্রগামীও।

৬২. আমি কারো ওপরই তার সাধ্যাতীত বোঝা চাপাই না, (প্রত্যেক মানুষের আমল সংক্রান্ত) একটি গ্রন্থ আমার কাছে (সংরক্ষিত) আছে, যা (তাদের অবস্থার কথা একদিন ঠিক) ঠিক বলে দেবে, তাদের ওপর কোনো যুলুম করা হবে না।

৬৩. বরং তাদের অন্তর এ বিষয়ে আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, এ ছাড়াও তাদের (জীবনে) আরো বহুতরো (খারাপ) কাজ আছে যা তারা সব সময়ই করে থাকে।

৬৪. (এরা এসব কাজ থেকে কখনো ফিরে আসে না,) যতোক্ষণ না আমি তাদের ঐশ্বর্যশালী লোকদের শাস্তি দ্বারা আঘাত করি, তখন তারা সাথে সাথেই আর্তনাদ করে ওঠে,

৬৫. (তখন বলা হবে,) আজ আর আর্তনাদ করো না, আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কোনো সাহায্য করা হবে না।

৬৬. যখন আমার আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে পড়ে পড়ে শোনানো হতো, তখন (তা শোনামাত্রই) তোমরা উল্টো দিকে সরে পড়তে,

৬৭. (সরে পড়তে) নেহায়াত দম্ভভরে, (পরে নিজেদের মজলিসে গিয়ে) অর্থহীন গল্প গুজব জুড়ে দিতে ।

৬৮. এরা কি (কোরআন)-এর কথার ওপর চিন্তা ভাবনা করে না, কিংবা তাদের কাছে (নতুন কিছু একটা) এসেছে যা তাদের বাপ দাদাদের কাছে আসেনি,

৬৯. অথবা তারা কি তাদের রসুলকে চিনতে পারেনি যে জন্যে তারা তাকে অস্বীকার করছে?

৭০. কিংবা তারা কি একথা বলে, তার সাথে ( কোনো রকম) পাগলামী রয়েছে, বরং (আসল কথা হচ্ছে,) রসুল তাদের কাছে সত্য নিয়ে হাযির হয়েছে এবং তাদের অধিকাংশ লোকই এ সত্যকে অপছন্দ করে।

৭১. যদি সত্য তাদের ইচ্ছা আকাংখার অনুগামী হয়ে যেতো, তাহলে আসমানসমূহ ও যমীন এবং আরো যা কিছু এ উভয়ের মাঝে আছে, অবশ্যই তা বিপর্যস্ত হয়ে পড়তো, পক্ষান্তরে আমি তাদের কাছে তাদের (নিজেদের) কাহিনীই নিয়ে এসেছি, কিন্তু (আশ্চর্য), তারা (এখন) তাদের নিজেদের কথাবার্তা থেকেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।

৭২. (হে নবী,) তবে কি (এরা মনে করে) তুমি এদের কাছে (দ্বীন পৌঁছানোর জন্যে) কোনো রকম পারিশ্রমিক দাবী করছো, (অথচ) তোমার মালিকের দেয়া পারিশ্রমিক ( এদের পার্থিব পারিশ্রমিকের তুলনায়) অনেক উৎকৃষ্ট, আর তিনি তো হচ্ছেন সর্বোত্তম রেযেকদাতা।

৭৩. তুমি তো তাদের সঠিক পথের দিকেই আহ্বান করছো।

৭৪. অবশ্য যারা আখেরাতের ওপর ঈমান আনে না তারা (হেদায়াতের) সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে।

৭৫. (আজ) যদি আমি এদের ওপর দয়া করি এবং যে বিপদ মসিবত তাদের ওপর আপতিত হয়েছে তা যদি দূর করে দেই, তাহলেও এরা নিজেদের নাফরমানীতে শক্তভাবে বিভ্রান্ত হয়ে যাবে।

৭৬. (এক পর্যায়ে) আমি এদের কঠোর আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম, তারপরও এরা নিজেদের মালিকের প্রতি নত হলো না এবং কখনো এরা কাতর প্রার্থনাটুকু পর্যন্ত (আমার কাছে) পেশ করলো না ।

৭৭. অতপর যখন (সত্যিই) আমি এদের ওপর কঠোর আযাবের দুয়ার খুলে দেবো তখন তুমি দেখবে, এরা (কতো) হতাশ হয়ে পড়ছে।

৭৮. (হে মানুষ,) তিনিই আল্লাহ তায়ালা, যিনি তোমাদের (শোনার জন্যে) কান. (দেখার জন্যে) চোখ (ও চিন্তা গবেষণার জন্যে) মন দিয়েছেন, কিন্তু তারা খুব অল্পই (এসব দানের) শোকর আদায় করে।

৭৯. তিনি তোমাদের সৃষ্টি করে যমীনে (তোমাদের) বংশ বিস্তার করে (চারদিকে ছড়িয়ে) রেখেছেন, (একদিন) তোমাদের সবাইকে (আবার) তাঁর কাছেই একত্রিত করা হবে ।

৮০. তিনিই তোমাদের জীবন দান করেন, তিনিই তোমাদের মৃত্যু ঘটান, রাতদিনের আবর্তনও তাঁর (ইচ্ছায় সংঘটিত হয়, এতো সব কিছু দেখেও) তোমরা কি (সত্য) অনুধাবন করবে না?

৮১. (নবীদের সামনে) এরাও কিন্তু সে ধরনের অর্থহীন কথাই বলে, যেমনি করে তাদের আগের লোকেরা বলেছে।

৮২. তারা বলেছিলো, আমরা যখন মরে যাবো, আমরা যখন মাটি ও হাড্ডিতে পরিণত হয়ে যাবো, তখনও কি আমরা পুনরুত্থিত হবো?

৮৩. (তারা বলে, আসলে এভাবেই) আমাদের ও আমাদের পূর্ববর্তী লোকদের (পুনরুত্থানের) ওয়াদা দিয়ে আসা হচ্ছে, (মৃত্যুর পর আবার জীবনলাভের) এ কথাগুলো অতীত দিনের উপকথা ব্যতীত আর কিছুই নয়।

৮৪. (হে নবী, এদের) জিজ্ঞেস করো, এ যমীনে এবং এখানে যা (কিছু সৃষ্টি) আছে তা কার (মালিকানাধীন )

৮৫. ওরা বলবে (হ্যাঁ), সব কিছুই আল্লাহর, (তুমি) বলো, এরপরও তোমরা কি চিন্তা ভাবনা করবে না? ৮৬. তুমি (এদের আরো) জিজ্ঞেস করো, এ সাত আসমান ও মহান আরশের অধিপতি কে ?

৮৭. ওরা জবাব দেবে, (এসব কিছুই) আল্লাহর, তুমি বলো, তারপরও তোমরা কি (আল্লাহকে) ভয় করবে না?

৮৮. তুমি (আবারও) জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা (সত্যি সত্যিই) জানো তাহলে বলো, কার হাতে রয়েছে (আসমান যমীন) সবকিছুর একক কতৃত্ব? (হ্যাঁ,) তিনি (যাকে ইচ্ছা তাকেই) পানাহ দেন, কিন্তু তাঁর ওপর কাউকে পানাহ দেয়া যায়না ।

৮৯. ওরা (আবারও) সাথে সাথে বলবে, (হ্যাঁ) মহান আল্লাহ তায়ালার, তুমি বলো, এ সত্ত্বেও তোমরা কেমন করে বিভ্রান্ত হচ্ছো ?

৯০. আমি তো বরং সত্য কথাই এদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলাম, কিন্তু এরাই মিথ্যাবাদী!

৯১. আল্লাহ তায়ালা (কাউকেই) সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেননি না তাঁর সাথে অন্য কোনো মাবুদ রয়েছে, যদি (তাঁর সাথে অন্য কোনো মাবুদ) থাকতো তাহলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেতো এবং (এ মাদরা) একে অন্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে চাইতো, এরা যা কিছু আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে বলে তিনি তা থেকে অনেক পবিত্র ও মহান।

৯২. দৃশ্য অদৃশ্য সবকিছুর সম্যক ওয়াকেফহাল তিনি, সুতরাং এরা আল্লাহ তায়ালার সাথে অন্যদের যেভাবে শরীক করে তিনি তার চাইতে (অনেক) পবিত্র।

৯৩. (হে নবী,) তুমি বলো, হে আমার মালিক, যে (আযাবের) ওয়াদা এ (কাফেরদের) সাথে করা হচ্ছে, তা যদি তুমি আমাকে দেখাতেই চাও,

৯৪. (তাহলে) হে আমার মালিক, তুমি আমাকে যালেম সম্প্রদায়ের মধ্যে শামিল (করে এ আযাব প্রত্যক্ষ) করায়ো না।

৯৫. (হে নবী,) আমি তাদের কাছে যে (আযাবের) ওয়াদা করেছি তা অবশ্যই তোমাকে দেখাতে সক্ষম।


৯৬. (হে নবী, তারা তোমার সাথে) কোনো খারাপ ব্যবহার করলে তুমি এমন পন্থায় তা দূর করার চষ্টো করো, যা হবে নিতান্ত উত্তম (পন্থা), আমি তো ভালো করেই জানি ওরা তোমার ব্যাপারে কি বলে।

৯৭. (হে নবী) তুমি (বরং) বলো, হে আমার মালিক, শয়তানদের যাবতীয় ওয়াসওয়াসা থেকে আমি তোমার পানাহ চাই।

৯৮. (আরো বলো, হে আমার মালিক,) আমি এ থেকেও তোমার পানাহ চাই যে, শয়তান আমার (ধারে) কাছে ঘেঁষবে

৯৯. এমনকি (এ অবস্থায় যখন) এদের কারো মৃত্যু এসে হাযির হবে, তখন সে বলবে, হে আমার মালিক, তুমি আমাকে (আরেকবার পৃথিবীতে) ফেরত পাঠাও,

১০০. যাতে করে (সেখানে গিয়ে) এমন কিছু নেক কাজ আমি করে আসতে পারি, যা আমি (আগে) ছেড়ে এসেছি (তখন বলা হবে), না, তা আর কখনো হবার নয়, (মূলত) সেটা হচ্ছে এক (অসম্ভব) কথা, যা সে শুধু বলার জন্যেই বলবে, এ (মৃত) ব্যক্তিদের সামনে একটি যবনিকা (তাদের আড়াল করে রাখবে) সে দিন পর্যন্ত, যেদিন তারা (কবর থেকে) পুনরুত্থিত হবে!

১০১. অতপর যেদিন শিংগায় ফুঁ দেয়া হবে, সেদিন (মানুষ এমনি দিশেহারা হয়ে পড়বে যে,) তাদের মধ্যে আত্মীয়তার বন্ধন (বলতে কিছুই) অবশষ্টি থাকবে না, না তারা একজন আরেকজনকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে!

১০২. অতএব (সেদিন) যাদের (নেকীর) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সেসব মানুষ যারা মুক্তিপ্রাপ্ত।

১০৩. আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে তারা হবে সেসব (ব্যর্থ) মানুষ যারা নিজেদের জীবন ( মিথ্যার পেছনে) বিনষ্ট করে দিয়েছে, তারা জাহান্নামে থাকবে চিরকাল ।

১০৪. (জাহান্নামের) আগুন তাদের মুখমণ্ডল জ্বালিয়ে দেবে, তাতে (তাদের) চেহারা (জ্বলে) বীভৎস হয়ে যাবে ।

১০৫. (তাদের তখন জিজ্ঞেস করা হবে,) এমন অবস্থা কি হয়নি যে, আমার আয়াতসমূহ তোমাদের সামনে পড়ে শোনানো হয়েছিলো এবং তোমরা তা অস্বীকার করেছিলে!

১০৬. তারা বলবে, হে আমাদের মালিক, আমাদের দুর্ভাগ্য (সেদিন চারদিক থেকে) আমাদের ঘিরে ধরেছিলো এবং নিশ্চয়ই আমরা ছিলাম গোমরাহ সম্প্রদায়।

১০৭. হে আমাদের মালিক, তুমি আজ আমাদের এ (আগুন) থেকে বের করে নাও, আমরা যদি দ্বিতীয় বারও (দুনিয়ায়) ফিরে গিয়ে সীমালংঘন করি, তাহলে অবশ্যই আমরা যালেম হিসেবে পরিগণিত হবো।

১০৮. আল্লাহ তায়ালা বলবেন, তোমরা অপমানিত হয়ে সেখানে পড়ে থাকো, (আজ) কোনো কথাই আমাকে বলো না।

১০৯. অবশ্যই আমার বান্দাদের মধ্যে একদল এমনও আছে, যারা বলতো, হে আমাদের মালিক, আমরা তোমার ওপর ঈমান এনেছি, অতএব তুমি আমাদের (দোষ ত্রুটি সমূহ) মাফ করে দাও, তুমি আমাদের ওপর দয়া করো, তুমি হচ্ছো (দয়ালুদের মধ্যে) সর্বোৎকৃষ্ট দয়ালু।

১১০. অতপর তোমরা তাদের উপহাসের বস্তু বানিয়ে রেখেছিলে, এমনকি তা তোমাদের আমার স্মরণ পর্যন্ত ভুলিয়ে দিয়েছে, আর তোমরা তো তাদের নিয়ে হাসি তামাশাই করতে

১১১. তাদের সে ধৈর্যের কারণেই আজ আমি তাদের (এই) প্রতিফল দিলাম, (মূলত) তারাই হচ্ছে (সত্যিকার অর্থে) সফল মানুষ।

১১২. আল্লাহ তায়ালা বলবেন (বলো তো), তোমরা পৃথিবীতে কতো বছর কাটিয়ে এসেছো?

১১৩. তারা বলবে, আমরা (সেখানে) অবস্থান করেছিলাম একদিন কিংবা একদিনের কিছু অংশ, তুমি (না হয়) তাদের কাছে জিজ্ঞেস করো যারা হিসাব রেখেছে।

১১৪. আল্লাহ তায়ালা বলবেন, (আসলে) তোমরা পৃথিবীতে খুব সামান্য সময়ই কাটিয়ে এসেছো, কতো ভালো হতো যদি তোমরা (এ কথাটা) ভালো করে জানতে।

১১৫. তোমরা কি (সত্যি সত্যিই) এটা ধরে নিয়েছো, আমি তোমাদের এমনিই অনর্থক পয়দা করেছি এবং তোমাদের (কখনোই) আমার কাছে একত্রিত করা হবে না,

১১৬. (না, তা কখনো নয়,) মহিমান্বিত আল্লাহ তায়ালা, তিনিই সব কিছুর যথার্থ মালিক, তিনি ছাড়া আর কোনো মাবুদ নেই, সম্মানিত আরশের একক অধিপতিও তিনি।

১১৭. অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো মারদকে ডাকে, তার কাছে যার (জন্যে) কোনো রকম সনদ নেই, (সে যেন জেনে রাখে), তার হিসাব তার মালিকের কাছে (যথার্থই মজুদ) আছে, সেদিন তারা কোনো অবস্থায়ই সফলকাম হবে না যারা তাঁকে অস্বীকার করেছে ।

১১৮. (হে নবী,) তুমি বলো, হে আমার মালিক, তুমি (আমায়) ক্ষমা করো, কেননা তুমি হচ্ছো দয়ালুদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট |


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url