আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ক্বামার’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আল ক্বামার | Surah Al Qamar | سورة القمر‎


সূরা আল ক্বামার’এর বাংলা অনুবাদ

সূরা আল ক্বামার, মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৫৫, রুকু ৩

সূরা আল ক্বামার


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. কেয়ামত নিকটবর্তী হয়ে গেছে এবং চাঁদ বিদীর্ণ হয়ে গেছে !

২. (এদের অবস্থা হচ্ছে) এরা কোনো নিদর্শন দেখলে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, এটা তো হচ্ছে এক চিরাচরিত যাদুকরী (ব্যাপার) ।

৩.(তারা সত্য) অস্বীকার করে এবং নিজেদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করে চলে, (অথচ) প্রত্যেক কাজের একটি চূড়ান্ত নিস্পত্তির (সময়) রয়েছে।

৪. অবশ্যই এ লোকদের কাছে (অতীত জাতিসমূহের ওপর আযাবের) সংবাদসমূহ এসেছে, (এমন সংবাদ) যাতে (বিদ্রোহের শাস্তির) হুঁশিয়ারী রয়েছে,

৫. এগুলো হচ্ছে পুরোপুরি জ্ঞানসমৃদ্ধ ঘটনা, যদিও এসব সতর্কবাণী তাদের কোনোই উপকারে আসে না,

৬. (হে নবী) তুমি এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। যেদিন একজন আহ্বানকারী এদের একটি অপ্রিয় বিষয়ের দিকে আহ্বান করবে।

৭.(সেদিন) তারা অবনত দৃষ্টি নিয়ে (একে একে) কবর থেকে এমনভাবে বেরিয়ে আসবে, যেন ইতস্তত বিক্ষিপ্ত পঙ্গপালের দল,

৮. তারা সবাই (তখন সেই) আহ্বানকারীর দিকে েেদৗড়াতে থাকবে; যারা (এ দিনকে) অস্বীকার করেছিলো, তারা বলবে, এ তো (দেখছি আসলেই) এক ভয়াবহ দিন!

৯. এদের আগে নুহের জাতিও (এভাবে তাদের নবীকে) অস্বীকার করেছিলো, তারা আমার বান্দা (নুহ নবী)-কে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছে, তারা তাকে পাগল বলে আখ্যায়িত করেছে, তাকে (নানাভাবে) ধমক দেয়া হয়েছিলো।

১০. অবশেষে সে তার মালিককে ডাকলো (এবং বললো হে আমার মালিক), অবশ্যই আমি অসহায় (হয়ে পড়েছি), অতএব তুমিই (এদের কাছ থেকে) প্রতিশোধ নাও।

১১. এরপর আমি (তার ডাকে সাড়া দিলাম এবং) প্রবল বৃষ্টির পানি বর্ষণের জন্যে আসমানের দ্বারসমূহ খুলে দিলাম,

১২. ভূমির স্তর (বিদীর্ণ করে তাকে পানির) প্রচন্ড প্রস্রবণে পরিণত করলাম, অতঃপর (আসমান ও যমীনের) পানি এক জায়গায় মিলিত হলো এমন একটি কাজের জন্যে, যা আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয়েছিলো,

১৩. তখন আমি তাকে কাঠ ও পেরেক (নির্মিত একটি) যানে উঠিয়ে নিলাম,

১৪. যা আমার (প্রত্যক্ষ) দৃষ্টির সামনে (ধীরে ধীরে) বয়ে চললো, এটি ছিলো সে ব্যক্তির জন্যে একটি বিনিময়, যাকে (মাত্র কিছু দিন আগেও) অস্বীকার করা হয়েছিলো ।

১৫. আমি (জলযান সদৃশ) সে জিনিসটিকে (পরবর্তী মানুষদের জন্যে) একটি নিদর্শন হিসেবে রেখে দিয়েছি, কে আছে (আজ এর থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করার?

১৬. (হ্যাঁ, এমন কেউ থাকলে এসো, দেখে নাও,) কেমন (কঠোর) ছিলো আমার আযাব এবং (কতো সত্য ছিলো) আমার সতর্কবাণী!

১৭. আমি (অবশ্যই) উপদেশ গ্রহণ করার জন্যে এ কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি, কে আছে (তোমাদের মাঝে এর থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করার?

১৮. আ'দ জাতির লোকেরাও (আমার নবীকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, (তোমরা দেখে নিতে পারো তাদের প্রতি) আমার আযাব কেমন (কঠোর) ছিলো এবং (কতো সত্য ছিলো) আমার সতর্কবাণী!

১৯. এক স্থায়ী কুলক্ষণের দিনে আমি তাদের ওপর প্রবল বায়ু প্রেরণ করেছিলাম,

২০. যা মানুষদের এমনভাবে ছুঁড়ে মারছিলো, যেন তা খেজুর গাছের এক একটি উৎপাটিত কান্ড !

২১. (হ্যাঁ, দেখে নাও,) কেমন (কঠোর) ছিলো আমার আযাব আর (কতো সত্য ছিলো) আমার সতর্কবাণী!

২২. অবশ্যই আমি উপদেশ গ্রহণের জন্যে কোরআনকে সহজ করে দিয়েছি, কে আছে (তা থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করার?

২৩. সামূদ সম্প্রদায়ও (আযাবের) সতর্ককারী (নবী ও রাসূল)-দের মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিলো।

২৪. তারা বলেছিলো, আমরা কি এমন একজন লোকের কথা মেনে চলবো, যে ব্যক্তি একা আমাদেরই একজন, (এভাবে) তার আনুগত্য করলে সত্যিই তো আমরা বড়ো গোমরাহী ও পাগলামী কাজে নিমজ্জিত হয়ে পড়বো।

২৫. আমাদের মাঝে সে-ই কি একমাত্র ব্যক্তি, যার ওপর (আল্লাহর) ওহী নাযিল করা হয়েছে, (আসলে) সে হচ্ছে একজন চরম মিথ্যাবাদী ও অহংকারী ব্যক্তি।

২৬. আগামীকাল (মহাবিচারের দিন) তারা ভালো করেই এটা জানতে পারবে, কে ছিলো তাদের মধ্যে মিথ্যাবাদী ও অহংকারী ব্যক্তি!

২৭. আমি (অচিরেই) তাদের পরীক্ষার জন্যে একটি উষ্ট্রী পাঠাবো, তুমি একান্ত কাছে থেকে তাদের দিকে লক্ষ্য করো এবং (একটুখানি) ধৈর্য্য ধরো এবং তাদের পরিণামটা দেখো,

২৮. তাদের বলে দাও, (কুয়ার) পানি অবশ্যই তাদের (ও উষ্ট্রীর) মধ্যে ভাগ করে দেয়া হয়েছে এবং তাদের সবাই (পালাক্রমে) কুয়ার পাশে হাযির হবে।

২৯. পরিশেষে তারা (বিদ্রোহ করার জন্যে) তাদের (এক) বন্ধুকে ডেকে আনলো, সে (উষ্ট্রীকে ছুরি দিয়ে) আক্রমণ করলো এবং (সেটির পায়ের) নলি কেটে ফেললো।

৩০. (হ্যাঁ, অতঃপর তোমরাই দেখেছো) কেমন ছিলো আমার আযাব, (কতো সত্য ছিলো) আমার সতর্কবাণী!

৩১. অতঃপর আমি তাদের ওপর প্রেরণ করলাম মাত্র একটি গর্জন, এতেই তারা শুষ্ক শাখাপল্লব নির্মিত জন্তু জানোয়ারদের দলিত খোয়াড়ের মতো হয়ে গেলো।

৩২. বোঝার জন্যে আমি কোরআন সহজ করে নাযিল করেছি, (তা থেকে) উপদেশ গ্রহণ করার মতো কেউ আছে কি?

৩৩. লূতের জাতির লোকেরাও সতর্ককারী (নবী)-দের মিথ্যাবাদী বলেছিলো।

৩৪. (ফলে) আমি তাদের ওপর প্রেরণ করলাম পাথর (নিক্ষেপকারী এক ধরনের) বৃষ্টি, লূতের পরিবার পরিজন ও তার অনুবর্তনকারীদের বাদে; রাতের শেষ প্রহরেই আমি তাদের উদ্ধার করে নিয়েছিলাম,

৩৫. এ (কাজ)-টা ছিলো (তাদের প্রতি) আমার একান্ত অনুগ্রহ; যে ব্যক্তি আমার (অনুগ্রহের) কৃতজ্ঞতা আদায় করে আমি তাকে এভাবেই পুরস্কৃত করি।

৩৬. সে (লূত) আমার কঠোর পাকড়াও সম্পর্কে তাদের বার বার ভয় দেখিয়েছিলো, কিন্তু এ সতর্কীকরণে তারা বাকবিতন্ডা শুরু করে দিলো ।

৩৭. (অতঃপর) তারা তার কাছে এসে (কুমতলবের জন্যে) তার মেহমানদের (নিয়ে যাবার) দাবী করলো, আমি (তখন) তাদের দৃষ্টিশক্তি বিলুপ্ত করে দিলাম, (আমি তাদের বললাম), এবার তোমরা আমার আযাব উপভোগ করো এবং (আমার) সতর্কবাণী (অবজ্ঞা করার পরিণামটা)-ও দেখে নাও!

৩৮. প্রত্যূষেই তাদের ওপর আমার এক অমোঘ আযাব প্রচন্ড আঘাত হানলো,

৩৯. (আমি বললাম,) অতঃপর তোমরা আমার এ আযাব আস্বাদন করতে থাকো এবং (আমার) সতর্ককারীদের উপেক্ষা করার (পরিণামটাও একবার) দেখে নাও।

৪০. আমি এ কোরআনকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্যে সহজ (করে নাযিল করেছি, কিন্তু কেউ আছে কি (এ থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করার?

৪১. ফেরাউনের জাতির লোকদের কাছেও আমার পক্ষ থেকে সতর্ককারী (অনেক নিদর্শন) এসেছিলো,

৪২. কিন্তু তারা আমার সমুদয় নিদর্শন অস্বীকার করেছে, (আর পরিণামে) আমিও তাদের (শক্ত হাতে) পাকড়াও করলাম ঠিক যেমনি করে সর্বশক্তিমান সত্তা (বিদ্রোহীদের) পাকড়াও করে থাকেন ।

৪৩. (তোমরা কি সত্যিই মনে করছো,) তোমাদের (সমাজের) এ কাফেররা তোমাদের পূর্ববর্তী কাফেরদের চাইতে (শক্তি ও ক্ষমতার দিক থেকে) উৎকৃষ্ট? অথবা (আমার) কেতাবের কোথাও কি তোমাদের জন্যে অব্যাহতি (- মূলক কিছু লিপিবদ্ধ রয়েছে?

৪৪. অথবা তারা বলছে, আমরা হচ্ছি (সত্যিই) একটি অপরাজেয় দল।

৪৫. অচিরেই এ (অপরাজেয়) দলটি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে যাবে এবং (সম্মুখসমর থেকে) পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালাতে থাকবে।

৪৬. (কিন্তু এ পালানোই তো তাদের শেষ নয়,) বরং তাদের (শাস্তিদানের) নির্ধারিত ক্ষণ কেয়ামত তো রয়েছেই, আর কেয়ামত হবে তাদের জন্যে বড়োই কঠিন ও বড়োই তিক্ত।

৪৭. অবশ্যই এসব অপরাধী (নিদারুণ) বিভ্রান্তি ও বিকারগ্রস্ততার মাঝে পড়ে আছে ।

৪৮. যেদিন তাদের উপুড় করে (জাহান্নামের) আগুনের দিকে ঠেলে নেয়া হবে (তখন তাদের ঘোর কেটে যাবে, অতঃপর তাদের বলা হবে); এবার তোমরা জাহান্নামের আযাবের) স্বাদ উপভোগ করো,

৪৯. আমি সব কয়টি জিনিসকে অবশ্যই একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণমতো সৃষ্টি করেছি ।

৫০. (আর) আমার হুকুম! সে তো এক নিমেষে চোখের পলকের মতোই (কার্যকর হয়)।

৫১. তোমাদের (মতো) বহু (বিদ্রোহী) জাতিকে আমি বিনাশ করে দিয়েছি, অতএব আছে কি (তা থেকে) শিক্ষা গ্রহণ করার মতো কেউ?

৫২. তারা যা কিছু করছে (তার) সবটুকুই (তাদের আমলনামায়) সংরক্ষিত আছে।

৫৩.(সেখানে যেমনি রয়েছে) প্রতিটি ক্ষুদ্র বিষয়, (তেমনি) লিপিবদ্ধ আছে প্রতিটি বড়ো বিষয়ও।

৫৪. (অপরদিকে এ বিদ্রোহের পথ পরিহার করে) যারা (আল্লাহকে) ভয় করেছে, তারা অনাদিকাল (এক সুরম্য) জান্নাতে ও (প্রবাহমান) ঝর্ণাধারায় থাকবে,

৫৫. (তারা অবস্থান করবে) যথাযোগ্য সম্মানজনক জায়গায়, বিশাল ক্ষমতার অধিকারী সার্বভৌম আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্যে।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url