আল কুরআনের বাংলা অনুবাদ | সূরা আন নাজম’এর বাংলা অনুবাদ | সূরা আন নাজম | Surah An Najm | النّجْم‎



সূরা আন নাজম’এর বাংলা অনুবাদ

সূরা আন নাজম,মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৬২, রুকু ৩

সূরা আন নাজম


রহমান রহীম আল্লাহ তায়ালার নামে


১. নক্ষত্রের শপথ যখন তা ডুবে যায়,

২. তোমাদের সাথী পথ ভুলে যায়নি, সে পথভ্রষ্টও হয়নি,

৩. সে কখনো নিজের থেকে কোনো কথা বলে না,

৪. বরং তা হচ্ছে ওহী', যা (তার কাছে) পাঠানো হয়,

৫. তাকে এটা শিখিয়ে দিয়েছে এমন একজন (ফেরেশতা), যে প্রবল শক্তির অধিকারী,

৬. (সে হচ্ছে) সহজাত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী; অতঃপর সে (একদিন সত্যি সত্যিই) নিজ আকৃতিতে (তার সামনে এসে) দাঁড়ালো,

৭. (এমনভাবে দাঁড়ালো যেন) সে ঊর্ধ্বাকাশের উপরিভাগে (অধিষ্ঠিত);

৮. তারপর সে কাছে এলো, অতঃপর সে আরো কাছে এলো,

৯. (এ সময়) তাদের (উভয়ের) মাঝে ব্যবধান থাকলো (মাত্র) দুই ধনুকের (সমান), কিংবা তার চাইতেও কম!

১০. অতঃপর সে তাঁর (আল্লাহর) বান্দার কাছে ওহী পৌঁছে দিলো, যা তার পৌঁছানোর (দায়িত্ব) ছিলো;

১১. (বাইরের চোখ দিয়ে) যা সে দেখেছে (তার ভেতরের) অন্তর তা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেনি।

১২. তোমরা কি সে বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হতে চাচ্ছো যা সে নিজের চোখে দেখেছে!

১৩. (সে ভুল করেনি, কারণ) সে তাকে আরেকবারও দেখেছিলো,

১৪. (সে তাকে দেখেছিলো) সেদরাতুল মোন্তাহা'র কাছে।

১৫. যার কাছেই রয়েছে (মোমেনদের চিরস্থায়ী) ঠিকানা জান্নাত;

১৬. সে সেরাটি' (তখন) এমন এক (জ্যোতি) দিয়ে আচ্ছন্ন ছিলো, যা দ্বারা তার আচ্ছন্ন হওয়া (শোভনীয়) ছিলো,

১৭.(তাই এখানে তার) কোনো দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং তার দৃষ্টি কোনোরকম সীমালংঘনও করেনি।

১৮. অবশ্যই সে আল্লাহ তায়ালার বড়ো বড়ো নিদর্শনসমূহ দেখেছে।

১৯. তোমরা কি ভেবে দেখেছো লাত ও উযযা' সম্পর্কে?

২০. এবং তৃতীয় আরেকটি (দেবী) মানাত' সম্পর্কে!

২১.(তোমরা কি মনে করে নিয়েছো,) পুত্র সন্তান সব তোমাদের জন্যে আর কন্যা সন্তান সব আল্লাহর জন্যে?

২২. (তা হলে তো) এ (বন্টন) হবে নিতান্তই একটা অসংগত বন্টন !

২৩. ( মূলত) এগুলো কতিপয় (দেব দেবীর) নাম ছাড়া আর কিছুই নয়, যা তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের বাপ দাদারা ঠিক করে নিয়েছো, আল্লাহ তায়ালা এ (নামে)-র সমর্থনে কোনো রকম দলীল প্রমাণ নাযিল করেননি; এরা (নিজেদের মনগড়া) আন্দায অনুমানেরই অনুসরণ করে এবং (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই) এরা নিজেদের প্রবৃত্তির ইচ্ছা আকাংখার ওপর চলে, অথচ তাদের কাছে (ইতিমধ্যেই) তাদের মালিকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট হেদায়াত এসে গেছে।

২৪. অতঃপর (তোমরাই বলো, এদের কাছ থেকে) মানুষ যা পেতে চায় তা কি সে কখনো পেতে পারে?

২৫. দুনিয়া ও আখেরাত তো আল্লাহ তায়ালার জন্যেই ।

২৬. কতো ফেরেশতাই তো রয়েছে আসমানে, (কিন্তু) তাদের কোনো সুপারিশই ফলপ্রসূ হয় না যতোক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা, যাকে ইচ্ছা এবং যাকে ভালোবাসেন তাকে অনুমতি না দেন।

২৭. যারা পরকালের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, তারা ফেরেশতাদের (দেবী তথা) নারীবাচক নামে অভিহিত করে।

২৮. অথচ এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো জ্ঞানই নেই; তারা তো কেবল আন্দায অনুমানের ওপরই চলে, আর সত্যের মোকাবেলায় (আন্দায) অনুমান তো কোনো কাজেই আসে না,

২৯. অতএব (হে নবী), যে ব্যক্তি আমার (সুস্পষ্ট) স্মরণ থেকে সরে গেছে, তার ব্যাপারে তুমি কোনো পরোয়া করো না, (কারণ) সে তো পার্থিব জীবন ছাড়া আর কিছুই কামনা করে না;

৩০. তাদের (মতো হতভাগ্য ব্যক্তিদের) জ্ঞানের সীমারেখা তো ওটুকুই; (এ কথা) একমাত্র তোমার মালিকই ভালো জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে এবং তিনিই ভালো করে বলতে পারেন কে সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছে।

৩১. আসমানসমূহ ও যমীনের সব কিছু আল্লাহ তায়ালার জন্যে, এতে করে যারা খারাপ কাজ করে বেড়ায় তিনি তাদের (খারাপ) প্রতিফল দান করবেন এবং যারা ভালো কাজ করে তাদের তিনি (এ জন্যে) মহাপুরস্কার প্রদান করবেন;

৩২. (এটা তাদের জন্যে) যারা বড়ো বড়ো গুনাহ থেকে এবং (বিশেষত) অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাকে, ছোটোখাটো গুনাহ (সংঘটিত) হলেও (তারা আল্লাহর ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হবে না, কারণ), তোমার মালিকের ক্ষমা (-র পরিধি) অনেক বিসস্তৃত; তিনি তোমাদের তখন থেকেই ভালো করে জানেন, যখন তিনি তোমাদের (এ) যমীন থেকে পয়দা করেছেন, (তখনও তিনি তোমাদের জানতেন) যখন তোমরা ছিলে তোমাদের মায়ের পেটে (ক্ষুদ্র একটি) ভ্রুণের আকারে, অতএব কখনো নিজেদের পবিত্র দাবী করো না; আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন কোন ব্যক্তি (তাঁকে ) বেশী ভয় করে।

৩৩. (হে নবী,) তুমি কি সে ব্যক্তিটিকে দেখোনি, যে (আল্লাহ তায়ালার পথ থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিলো,

৩৪. যে ব্যক্তি সামান্য কিছুই দান করলো, অতঃপর সম্পূর্ণভাবে (নিজের) হাত গুটিয়ে নিলো।

৩৫. তার কাছে কি অদৃশ্য জগতের কোনো জ্ঞান ছিলো যে, তা দিয়ে সে (অন্য কিছু) দেখতে পাচ্ছিলো।

৩৬. তাকে কি (একথা) জানানো হয়নি যে, মুসার (কাছে পাঠানো আমার) সহীফাসমূহে কি (কথা লেখা আছে,

৩৭. (তাকে কি) ইবরাহীমের কথা জানানো হয়নি, ইবরাহীম তো (আল্লাহর) বিধানাবলী পুরোপুরিই পালন করেছে,

৩৮. (তাকে কি এটা বলা হয়নি যে,) কোনো মানুষই অন্যের (পাপের) বোঝা উঠাবে না,

৩৯. মানুষ ততোটুকুই পাবে যতোটুকু সে চেষ্টা করবে,

৪০. আর তার কাজকর্ম (পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে এবং অচিরেই তা) দেখা হবে,

৪১. অতঃপর তাকে তার পুরোপুরি বিনিময় দেয়া হবে,

৪২. পরিশেষে (সবাইকে একদিন) তোমার মালিকের কাছেই পৌঁছুতে হবে,

৪৩. তিনিই (সবাইকে) হাসান, তিনিই (সবাইকে কাঁদান,

৪৪. তিনিই (মানুষকে) মারেন, তিনিই (তাদের) বাঁচান, ৪৫. তিনিই নর নারীর যুগল পয়দা করেছেন,

৪৬. (পয়দা করেছেন) এক বিন্দু (স্খলিত) শুক্র থেকে,

৪৭. নিশ্চয়ই পুনরায় এদের জীবন দান করার দায়িত্বও (কিন্তু) তাঁর (একার),

৪৮. তিনিই (তাকে) ধনশালী করেন এবং তিনিই পুঁজি দান করে তা স্থায়ী রাখেন,

৪৯. তিনি শেরা' (নামক) নক্ষত্রেরও মালিক,

৫০. তিনিই প্রাচীন আদ সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দিয়েছেন,

৫১. (তিনি আরো ধ্বংস করেছেন) সামূদ জাতিকে (এমনভাবে), তাদের একজনকেও অবশিষ্ট রাখেননি,

৫২. এর আগে (তিনি ধ্বংস করেছেন) নূহের জাতিকে; কেননা তারা ছিলো ভীষণ যালেম ও চরম বিদ্রোহী;

৫৩. তিনি একটি জনপদকে ওপরে উঠিয়ে উল্টো করে ফেলে দিয়েছেন ।

৫৪. অতঃপর সে জনপদের ওপর তিনি ছেয়ে দিলেন এমন এক (ভয়ংকর) আযাব, যা (তাকে পুরোপুরিভাবে ) ছেয়ে দিলো,

৫৫. তারপরও (হে নির্বোধ মানুষ,) তুমি তোমার মালিকের কোন কোন নিদর্শনে সন্দেহ প্রকাশ করো! 

৫৬. (আযাবের) সতর্ককারী (এ নবী তো) আগের (পাঠানো) সতর্ককারীদেরই একজন!

৫৭. (ত্বরিত আগমনকারী কেয়ামতের) ক্ষণটি (আজ) আসন্ন হয়ে গেছে,

৫৮. আল্লাহ তায়ালা ছাড়া কেউই সে ক্ষণটির (দিন কাল সম্পর্কিত তথ্য) উদ্ঘাটন করতে পারবে না;

৫৯. এগুলোই কি (তাহলে) সেসব বিষয় যার ব্যাপারে তোমরা (আজ রীতিমতো) বিস্ময়বোধ করছো,

৬০. (এসব বিষয় নিয়ে) তোমরা (আজ) হাসাহাসি করছো, অথচ (পরিণামের কথা ভেবে) তোমরা মোটেই কাঁদছো না,

৬১. (মনে হচ্ছে) তোমরা (মূলব্যাপারেই) উদাসীন হয়ে রয়েছো।

৬২. অতএব তোমরা আল্লাহ তায়ালার সামনে সাজদাবনত হও এবং (কাউকে শরীক করা ব্যতীত) তাঁরই এবাদাত করো।


💖💝Thanks for being with Mohammadia Foundation. Pls Stay with us always💝💖

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url