তাফসীরে ইবনে কাসীর -১০ || সুরা ফাতিহা - ১০ || সূরা ফাতিহার সার সংক্ষেপ || আমীন বলা প্রসঙ্গ ||




সুরা ফাতিহার তাফসীর - ১০

সূরা ফাতিহার সার সংক্ষেপ

এই কল্যাণময় ও বারাকাতপূর্ণ সূরাটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলীর সমষ্টি। এই সাতটি আয়াতে আল্লাহ তা'আলার যোগ্য প্রশংসা, তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব, পবিত্র নামসমূহ এবং উচ্চতম বিশেষণের সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই রোজ কিয়ামাতের বর্ণনা দেয়া হয়েছে এবং বান্দাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে যে, তারা যেন সেই মহান প্রভুর নিকট অত্যন্ত বিনীতভাবে যাঞ্চা করে, যেন তাঁর কাছে নিজের দারিদ্রতা ও অসহায়ত্বের কথা অকপটে স্বীকার করে, তাঁকে সব সময় অংশীবিহীন ও তুলনাবিহীন মনে করে, খাঁটি অন্তরে তাঁর ইবাদাত; তাঁর আহদানিয়াত বা একাত্মবাদে বিশ্বাস করে, তাঁর কাছে সরল সোজা পথ ও তার উপর সুদৃঢ় ও অটল থাকার জন্য নিশিদিন আকুল প্রার্থনা জানায় । এই অবিসম্বাদিত পথই একদিন তাকে রোজ কিয়ামাতের পুলসিরাতও পার করাবে এবং নাবী, সিদ্দীক, শহীদ এবং সৎ লোকদের পাশে জান্নাতুল ফিরদাউসের নন্দন কাননে স্থান দিবে। সাথে সাথে আলোচ্য সূরাটির মধ্যে যাবতীয় সৎকার্যাবলী সম্পাদনের প্রতি নিরন্তর উৎসাহ দেয়া হয়েছে যাতে কিয়ামাতের দিন বান্দা আত্মকৃত সাওয়াবসমূহ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া মিথ্যা ও অন্যায় পথে চলার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, যাতে কিয়ামাত দিবসেও সে বাতিলপন্থীদের দল থেকে দূরে থাকতে পারে।

নি‘আমাত হচ্ছে আল্লাহর তরফ হতে দান

ধীর স্থির ও সূক্ষ্মভাবে জাগ্রত মস্তিষ্ক নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলে অতি সহজেই অনুধাবন করা যাবে যে, মহান আল্লাহর বর্ণনারীতি কি সুন্দর! আলোচ্য সূরায় اَنْعَمْتَ নামক ব্যাক্যাংশে দানের ইসনাদ বা সম্পর্ক মহান আল্লাহর দিকে করা হয়েছে এবং اَنْعَمْتَ বলা হয়েছে। কিন্তু غَضَب- এর সম্পর্ক করা হয়নি; বরং এখানে কর্তাকেই লোপ করা হয়েছে এবং مَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ বলা হয়েছে। এখানে বিশ্ব প্রভুর মহান মর্যাদার প্রতি যথাযোগ্য লক্ষ্য রাখা হয়েছে। অবশ্য প্রকৃতপক্ষে মূল কর্তা আল্লাহ তা‘আলাই। যেমন অন্যস্থানে বলা হয়েছেঃ

اَلَمْ تَرَ اِلَى الَّذِیْنَ تَوَلَّوْا قَوْمًا غَضِبَ اللّٰهُ عَلَیْهِمْ 

তুমি কি তাদের প্রতি লক্ষ্য করনি, যারা আল্লাহ যে সম্প্রদায়ের প্রতি রুষ্ট, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে? (সূরা মুজাদালাহ, ৫৮ : ১৪) এরূপভাবেই ভ্রষ্টতার পরিণতি পথভ্রষ্টের দিকেই করা হয়েছে। অথচ অন্য এক জায়গায় আছেঃ

مَنْ یَّهْدِ اللّٰهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ١ۚ وَ مَنْ یُّضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ وَلِیًّا مُّرْشِدًا

মহান আল্লাহ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন সে সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনো তার কোন পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবে না। ( ১৮ নং সূরাহ্ কাহফ, আয়াত নং ১৭) অন্যত্র ইরশাদ হয়েছেঃ

مَنْ یُّضْلِلِ اللّٰهُ فَلَا هَادِیَ لَهٗ١ؕ وَ یَذَرُهُمْ فِیْ طُغْیَانِهِمْ یَعْمَهُوْنَ

মহান আল্লাহ যাদেরকে বিপথগামী করেন, তাদের কোন পথ প্রদর্শক নেই, আর মহান আল্লাহ তাদেরকে তাদেরই বিভ্রান্তির মধ্যে উদভ্রান্তের ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন। (৭ নং সূরাহ্ আ‘রাফ, আয়াত নং ১৮৬) এ রকমই আরো বহু আয়াত রয়েছে যা দ্বারা এ কথা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, পথপ্রদর্শনকারী ও পথ বিভ্রান্তকারী হচ্ছেন একমাত্র মহান আল্লাহ।
কাদরিয়্যাহ দল, যারা কতকগুলি অস্পষ্ট আয়াতকে দলীলরূপে গ্রহণ করে বলে থাকে যে, বান্দা তার ইচ্ছাধীন ও মুক্ত স্বাধীন, সে নিজেই পছন্দ করে এবং নিজেই সম্পাদন করে। কিন্তু তাদের এ কথা ভ্রমাত্মক ও প্রমাদপূর্ণ। এটা খণ্ডনের জন্য ভূরি ভূরি স্পষ্ট আয়াতসমূহ বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু বাতিল পন্থীদের এটাই রীতি যে, তারা স্পষ্ট আয়াতকে পরিহার করে অস্পষ্ট আয়াতের পিছনে লেগে থাকে। বিশুদ্ধ হাদীসে আছেঃ

"যখন তোমরা ঐ লোকদেরকে দেখ যারা অস্পষ্ট আয়াতসমূহের পিছনে লেগে থাকে তখন বুঝে নিবে যে, তারা ওরাই যাদের নাম স্বয়ং আল্লাহ তা'আলা নিয়েছেন এবং স্বীয় কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সতর্ক থাক।' (ফাতহুল বারী ৮/৫৭) এ নির্দেশনামায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইঙ্গিত এই আয়াতের প্রতি রয়েছেঃ

فَاَمَّا الَّذِیْنَ فِیْ قُلُوْبِهِمْ زَیْغٌ فَیَتَّبِعُوْنَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَآءَ الْفِتْنَةِ وَ ابْتِغَآءَ تَاْوِیْلِهٖ

অতএব যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে, ফলতঃ তারাই অশান্তি সৃষ্টি ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের উদ্দেশে অস্পষ্টের অনুসরণ করে। (সূরা আলে ইমরান, ৩ : ৭)

সুতরাং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত যে, বিদ'আতীদের অনুকূলে কুরআনুল হাকীমের মধ্যে সঠিক ও অকাট্য দলীল একটিও নেই। কুরআন মাজীদের আগমন সূচিত হয়েছে সত্য ও মিথ্যা, হিদায়াত ও গুমরাহীর মধ্যে পার্থক্য প্রদর্শনের জন্যই। বৈপরীত্য ও মতবিরোধের জন্য আসেনি বা তার অবকাশও এতে নেই । এতো মহাবিজ্ঞ ও প্রশংসিত আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ হয়েছে।

আমীন বলা প্রসঙ্গ

সূরাহ্ ফাতিহা শেষে আমীন বলা মুস্তাহাব। آمِيْن শব্দটি یَاسِیْنَ শব্দটির মতো এবং এটা آمِيْن ও পড়া হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘হে মহান আল্লাহ! আপনি কবূল করুন।’ আমীন বলা মুস্তাহাব হওয়ার দালীল হলো ঐ হাদীসটি যা মুসনাদ আহমাদ, আবূ দাঊদ এবং জামি‘ তিরমিযীতে ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে

غَیْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ وَلَا الضَّآلِّیْنَ

পড়ে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি স্বর দীর্ঘ করতেন।’ (মুসনাদ আহমাদ ৪/৩১৬, আবূ দাঊদ ১/৯৩২, তিরমিযী ২/২৪৮, হাদীস সহীহ) সুনান আবূ দাঊদে আছে যে, তিনি স্বর উচ্চ করতেন। ইমাম তিরমিযী (রহঃ) হাদীসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন। ‘আলী (রাঃ), ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্বশব্দ আমীন তাঁর নিকটবর্তী প্রথম সারির লোকেরা স্পষ্টতই শুনতে পেতেন। (সুনান আবূ দাঊদ ১/৯৩৪, ইবনু মাজাহ ১/৮৫৩, দারাকুতনী ১/৩৩৫, কানযুল ‘উম্মাল ১৭৯০৪। বিভিন্ন জন য‘ঈফ বলেছেন, আর ইবনু হিব্বান অন্য একটি সনদেও স্বীয় গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। আলবানী (রহঃ) বিভিন্ন সনদের ভিত্তিতে মতন কে جيد তথা উত্তম বলেছেন)

সুনান আবূ দাঊদ ও সুনান ইবনু মাজাহ গ্রন্থে এটাও আছে যে, ‘আমীনের শব্দে মাসজিদ প্রতিধ্বনিত হয়ে বেজে উঠে।’ (সুনান আবূ দাঊদ ১/৯৩৭, ইবনু মাজাহ ১/২৭৯) ইমাম দারাকুতনীও (রহঃ) এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং একে ‘হাসান’ বলে মন্তব্য করেছেন।
আরো বর্ণিত আছে যে, বিলাল (রাঃ) বললেনঃ ‘হে মহান আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি সালাতে যোগ দেয়ার পূর্বে ‘আমীন’ বলা শেষ করবেন না।’ (সুনান আবূ দাউদ ১/৯৩৭, দারাকুতনী ১/৩৩৫, মুসনাদ আহমাদ ৬/১২, ১৫, হাদীস য‘ঈফ) সালাতের বাইরে থাকলেও ‘আমীন’ বলতে হবে। তবে যে ব্যক্তি সালাতে থাকবে তার জন্য বেশি জোর দেয়া হয়েছে। সালাত আদায়কারী একাকী হোক বা মুক্তাদী হোক বা ইমাম হোক, সর্বাবস্থায় তাকে আমীন বলতেই হবে।

সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

إِذَا أَمَّنَ الإِمَامُ فَأَمِّنُوا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِينُهُ تَأْمِينَ الْمَلاَئِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

‘ইমাম যখন ‘আমীন’ বলে তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। কেননা যার এ আমীন বলা ফিরিশতাগণের আমীন বলার সাথে একই সময় হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মা‘ফ করে দেয়া হয়।’ (সহীহুল বুখারী হাঃ ৭৮২, ৪৪৭৫; আ.প্র. হাঃ ৭৩৮, ই.ফা. হাঃ ৭৪৬। ফাতহুল বারী ১১/২০৩, সহীহ মুসলিম ১/৩০৭, ৯৪২) সহীহ মুসলিমে আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

إِذَا قَالَ أَحَدُكُمْ فِى الصَّلاَةِ آمِينَ. وَالْمَلاَئِكَةُ فِى السَّمَاءِ آمِينَ فَوَافَقَ إِحْدَاهُمَا الأُخْرَى غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه.

যখন তোমাদের কেউ আমীন বলে এবং ফিরিশতাগণও আমীন বলে তখন ফিরিশতার আমীন বলার সাথে যাদের আমীন বলা মিলে যাবে তাদের পিছনের সমস্ত পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (সহীহ মুসলিম ১/৩০৭, ৯৪৪)

এর ভাবার্থ এই যে, তার ‘আমীন’ ও ফিরিশতার ‘আমীন’ বলার সময় একই হয় বা কবূল হওয়া হিসেবে অনুরূপ হয় অথবা আন্তরিকতায় অনুরূপ হয়।
সহীহ মুসলিমে আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে মারফূ‘ রূপে বর্ণিত আছেঃ ইমাম যখন ﴿وَلَا الضَّآلِّیْنَ﴾ বলেন তখন তোমরা ‘আমীন’ বলো, মহান আল্লাহ দু‘আ কবূল করবেন।’ (সহীহ মুসলিম ১/৩০৩)

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, آمِيْن এর অর্থ কি? উত্তরে তিনি বললেন, হে মহান আল্লাহ! তুমি কবূল করো। জাওহারী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো যেন এরূপই হয়।

ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছেঃ ‘আমাদের আশা ভঙ্গ করবেন না।’ অধিকাংশ ‘আলিম বলেন যে, এর অর্থ হলোঃ ‘হে মহান আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রার্থনা কবূল করুন।’

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) মুজাহিদ, জা‘ফর সাদিক ও হিলাল ইবনু ইয়াসাফ (রহঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নিশ্চয় آمِيْن হলো মহান আল্লাহর নাম সমূহের একটি নাম। আবূ বাকর ইবনু ‘আরবী বলেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকেও মারফূ‘ সূত্রে এরূপ বর্ণিত হয়েছে। তবে তা সহীহ নয়।
ইমাম মালিক (রহঃ)-এর শিষ্যবৃন্দ বলেন যে, ইমাম ‘আমীন’ বলবে না, শুধু মুক্তাদীগণ আমীন বলবে। কেননা ইমাম মালিক (রহঃ) স্বীয় মুওয়াত্তায় বর্ণনা করেছেন যা আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

وَإِذَا قَالَ يَعْنَيْ الْإِمَامُ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقُوْلُوْا: آمِيْن"

আর যখন ইমাম وَلَا الضَّالِّيْن বলবে তখন তোমরা ‘আমীন’ বলো। (সহীহুল বুখারী, ২/৭৮২, সুনান আবূ দাউদ, ১/৯৩৫, মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, ১/৪৫, মুসনাদ আহমাদ, ২/৪৫৯) আর এর সমর্থনে তারা আবূ মূসা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটিও উল্লেখ করেছেন, আর তা হলো,

وَإِذَا قَرَأَ:وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقُوْلُوْا: آمِيْن.

আর যখন তিনি অর্থাৎ ইমাম وَلَا الضَّالِّيْن পড়বে তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। (মুসনাদ আহমাদ, ৬/১৩৫, অত্র হাদীসে ইমাম আহমাদের ওস্তায ‘আলী ইবনু ‘আসিম অত্যধিক ভুল করার কারণে মুহাদ্দিসগণ তার সম্পর্কে সমালোচনা করেছেন) অবশ্য পূর্বেই আমরা সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেছি,

إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوا.

অর্থাৎ ‘ইমাম যখন ‘আমীন’ বলে তখন তোমরাও ‘আমীন’ বলো। (সহীহুল বুখারী হাঃ ৭৮২, ৪৪৭৫; আ.প্র. হাঃ ৭৩৮, ই.ফা. হাঃ ৭৪৬। ফাতহুল বারী ১১/২০৩, সহীহ মুসলিম ১/৩০৭, ৯৪২) তাছাড়া স্বয়ং মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এরও ‘আমল ছিলো যে, তিনি

غَیْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ وَلَا الضَّآلِّیْنَ

পড়ে ‘আমীন’ বলতেন। (সহীহুল বুখারী হাঃ ১ম ১০৭-১০৮ পৃষ্ঠা; সহীহ মুসলিম ১৭৬ পৃষ্ঠা। সুনান আবূ দাঊদ ১৩৪ পৃষ্ঠা। জামি‘ তিরমিযী ৫৭-৫৮ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ ১৪০ পৃষ্ঠা। সুনান ইবনু মাজাহ ৬২ পৃষ্ঠা। মিশকাতুল মাসাবীহ ১ম খণ্ড ৭৯-৮০ পৃষ্ঠা। মুওয়াত্তা ইমাম মালিক ১০৮ পৃষ্ঠা। সহীহ ইবনু খুযায়মাহ ১ম ২৮৭ পৃষ্ঠা। যাদুল মা‘য়াদ ১ম খণ্ড ১৩২ পৃষ্টা। হিদায়া দিরায়াহ ১০৮ পৃষ্ঠা। মিশকাতুল মাসাবীহ নূর মোহাম্মদ আযমী ২য় খণ্ড ও মাদ্রাসা পাঠ্য হাদীস নং ৭৬৮-৭৮৭। সহীহুল বুখারী হাঃ ‘আযীযুল হক ১ম খণ্ড হাদীস নং ৪৫৩, সহীহুল বুখারী হাঃ আধুনিক প্রকাশনী ১ম খণ্ড হাদীস নং ৭৩৬-৭৩৮, সহীহুল বুখারী হাঃ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম খণ্ড অনুচ্ছেদসহ হাদীস নং ৭৪১-৭৪৩। সহীহ মুসলিম ইঃ ফাঃ ২য় খণ্ড হাদীস নং ৭৯৭-৮০৪ পর্যন্ত। সুনান আবূ দাঊদ ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ২য় খণ্ড হাদীস নং ৯৩২। জামি‘ তিরমিযী ইসলামিক ফাউণ্ডেশন ১ম হাদীস নং ২৪৮ বুলূগুল মারাম বাংলা ৮৫ পৃষ্ঠা কিমিয়ায়ে সা‘আদাত ১ম খণ্ড ১৯০ পৃষ্ঠা। ইসলামিয়াত বি-এ হাদীস পর্ব-১৫৭ পৃষ্ঠা)

সালাতে মুক্তাদীগণের ‘আমীন’ বলার বিধান

যিহরী সালাতে মুক্তাদী উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলবে না নীরবে ‘আমীন’ বলবে এ ব্যাপারে আমাদের সহচরবৃন্দের মধ্যে মতভেদ বিদ্যমান। মতভেদের সারকথা হলো, ইমাম যদি ‘আমীন’ বলতে ভুলে যায় তাহলে মুক্তাদীগণ উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলবে। কিন্ত যদি ইমাম নিজেই উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলেন, তবে নতুন কথা মতে মুক্তাদীগণ উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলবে না। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর মাযহাব এটাই। ইমাম মালিক (রহঃ) থেকেও এরূপ বর্ণনা আছে। তাঁদের মতে অন্যান্য যিকরের ন্যায় এটা একটি যিকর। তাই সালাতের অন্যান্য যিকরের ন্যায় এটাও স্বশব্দে না হয়ে চুপে চুপে হবে। আর পুরাতন কথা হলো মুক্তাদীগণও উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলবে। আর ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ)-এর মাযহাব এটাই। আর এটা ইমাম মালিক (রহঃ)-এর দু’টি মতের দ্বিতীয় মত। কেননা ইতোপূর্বে বর্ণিত হয়েছে,

حَتَّى يَرْتَجَّ الْمَسْجِدُ

‘এমনকি মাসজিদ আমীনের শব্দে প্রকম্পিত হতো।’
আমাদের তৃতীয় আরেকটি মত হলো, মাসজিদ যদি ছোট হয় তাহলে মুক্তাদীগণ উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলবে না। কেননা এ ক্ষেত্রে তারা ইমামের ক্বিরা’আত শুনতে পায়। আর মাসজিদ যদি বড় হয় তাহলে মুক্তাদীগণ উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলবে। যাতে মাসজিদের প্রান্তসীমা পর্যন্ত ‘আমীন’ এর শব্দ পৌছে যায়। মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন। (যিহ্রী সালাতে উঁচুস্বরে আমীন না বলা মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের ‘আমলের বিপরীত, বরং ইমাম ও মুক্তাদির সকলেরই সরবে আমীন বলতে হবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যিহ্রী সালাতে উঁচুস্বরে আমীন বলতেন এবং ইমাম যখন আমীন বলে তখন মুক্তাদিকে আমীন বলার নির্দেশ দিতেন, যেমন ৭৮০ নং হাদীসে বর্ণিত। এছাড়াও জামি‘ তিরমিযীতে বর্ণিত আছেঃ

عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ قَرَأَ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ فَقَالَ آمِينَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.

ওয়ায়িল বিন হুজর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে “গায়রিল মাগযূবি ‘আলাইহিম ওয়ালায্যাল্লীন” পড়তে শুনেছি। তারপর তিনি নিজের স্বরকে উচ্চ করে আমীন বলেছেন।
(সহীহুল বুখারী হাঃ ১ম ১০৭-১০৮ পৃষ্ঠা; সহীহ মুসলিম ১৭৬ পৃষ্ঠা। সুনান আবূ দাঊদ ১৩৪ পৃষ্ঠা। জামি‘ তিরমিযী ৫৭-৫৮ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ ১৪০ পৃষ্ঠা। সুনান ইবনু মাজাহ ৬২ পৃষ্ঠা। মিশকাতুল মাসাবীহ ১ম খণ্ড ৭৯-৮০ পৃ?
সূরা ফাতিহার তাফসীর সমাপ্ত।





*************************************
Thank you for visiting the site. If you like the article, share it on social media to invite other Vines to the path of truth and justice. Click on OUR ACTION PLAN button to know about activities, goals and objectives of Mohammadia Foundation and to participate in the service of religion and humanity.
Almost all articles on this website are written in Bengali. But you can also read it in your language if you want. Click the “ভাষা বেছে নিন” button at the bottom of the website to read in your own language.



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url