কেমন ছিল রাসুল (সা:) এর সালাত || রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নামাজ || (পর্ব - ০৪)





সালাত বা নামাজ সম্পর্কে যে বিষয়গুলো আপনাকে জানতে হবে

(দ্বিতীয় অংশ)
[সালাতের ওয়াজিব সমূহ, সালাতের সুন্নাত সমূহ, সালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ, সালাতের ওয়াক্ত সমূহ, সালাতের নিষিদ্ধ সময় ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে পড়ুন]

মহান আল্লাহর বাণী- ‘সফলকাম হবে সেই সব মুমিন যারা সালাতে রত থাকে ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে’। অতএব গভীরভাবে চিন্তা করুন! আপনার প্রভু আল্লাহ কিজন্য আপনাকে সৃষ্টি করেছেন? মনে রাখবেন তিনি আপনাকে বিনা প্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি। তাঁর সৃষ্ট এ সুন্দর সৃষ্টি জগতকে সুন্দরভাবে আবাদ করার দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়েই তিনি আপনাকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। কে এখানে কত বেশী সুন্দর আমল করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার হুকুম যথাযথভাবে পালন করে, তা পরীক্ষার জন্য আল্লাহ মউত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন। আপনার হাত-পা, চক্ষু-কর্ণ, নাসিকা-জিহবা সর্বোপরি যে মূল্যবান জ্ঞান-সম্পদ এবং ভাষা ও চিন্তাশক্তির নেয়ামত দান করে আপনাকে আপনার প্রভু এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তার যথার্থ ব্যবহার আপনি করেছেন কি-না, তার কড়ায়-গন্ডায় হিসাব আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার নিকটে দিতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ও জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ও প্রার্থনার অনুষ্ঠান ‘সালাতে’ রত হই ‘তাকবীরে তাহরীমা’-র মাধ্যমে দুনিয়ার সবকিছুকে হারাম করে একনিষ্ঠভাবে বিনম্রচিত্তে বিগলিত হৃদয়ে!! শ্রেষ্ট ইবাদত সালাত বা নামাজে সফলতার জন্য চাই সালাতের সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ। আর এই সঠিক পদ্ধতিটি পাওয়া যাবে কেবলমাত্র হযরত মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা:) এর সালাত বা নামাজের মধ্যেই। তাই আমরা এখানে রাসুল (সা:) এর সালাত বা নামাজ কেমন ছিল এই বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করবো। পুরো আলোচনাটিই নেওয়া হয়েছে ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত “ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)” নামক গ্রন্থ থেকে। আল্লাহ আমাদেরকে সালাত বা নামাজের সকল বিষয়ে সঠিকভাবে জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।।

সালাতের ওয়াজিব সমূহ

রুকন-এর পরেই ওয়াজিব-এর স্থান, যা আবশ্যিক। যা ইচ্ছাকৃতভাবে তরক করলে ছালাত বাতিল হয়ে যায় এবং ভুলক্রমে তরক করলে ‘সিজদায়ে সহো’ দিতে হয়। যা ৮টি। [118] যেমন-

১. ‘তাকবীরে তাহরীমা’ ব্যতীত অন্য সকল তাকবীর।[119]
২. রুকূতে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম’ বলা।[120]
৩. ক্বাওমার সময় ‘সামি‘আল্লা-হু লেমান হামেদাহ’ বলা।[121]
৪. ক্বওমার দো‘আ কমপক্ষে ‘রববানা লাকাল হাম্দ’ অথবা ‘আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ’ বলা। [122]
৫. সিজদায় গিয়ে তাসবীহ পড়া। কমপক্ষে ‘সুবহা-না রবিবয়াল আ‘লা’ বলা।[123]
৬. দুই সিজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসা ও দো‘আ পাঠ করা। যেমন কমপক্ষে ‘রবিবগফিরলী’ ২ বার বলা।[124]
৭. প্রথম বৈঠকে বসা ও ‘তাশাহহুদ’ পাঠ করা।[125]
৮. সালামের মাধ্যমে ছালাত শেষ করা।[126]
[118] . মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব, ‘ছালাতের আরকান ও ওয়াজিবাত’ গৃহীত: মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: দারুল ইফতা, ১৪০৫ হিঃ) পৃঃ ৭৮।
[119] . বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য, মিশকাত হা/৭৯৯, ৮০১, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২০।
[120] . নাসাঈ, আবুদাঊদ তিরমিযী, মিশকাত হা/৮৮১ ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।
[121] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/ ৮৭০, ৭৪, ৭৫, ৭৭।
[122] . বুখারী হা/৭৩২-৩৫, ৭৩৮, ‘আযান’ অধ্যায়, ৮২, ৮৩ ও ৮৫ অনুচ্ছেদ; মুসলিম হা/৮৬৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়; মুসলিম হা/৯০৪, ৯১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়।
[123] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ৮৮১।
[124] . ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭; আবুদাঊদ হা/৮৫০, তিরমিযী হা/২৮৪; নাসাঈ হা/১১৪৫, মিশকাত হা/৯০০, ৯০১ ‘সিজদা ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪; নায়ল ৩/১২৯ পৃঃ; মজমু‘আ রাসা-ইল ৭৮ পৃঃ।
[125] . আহমাদ, নাসাঈ, নায়ল ৩/১৪০; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
[126] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১; আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৯৫০-৫১, ‘তাশাহহুদের দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৬ পৃঃ।

সালাতের সুন্নাত সমূহ

ফরয ও ওয়াজিব ব্যতীত ছালাতের বাকী সব আমলই সুন্নাত। যেমনঃ

(১) জুম‘আর ফরয ছালাত ব্যতীত দিবসের সকল ছালাত নীরবে ও রাত্রির ফরয ছালাত সমূহ সরবে পড়া।
(২) প্রথম রাক‘আতে ক্বিরাআতের পূর্বে আ‘ঊযুবিল্লাহ... চুপে চুপে পাঠ করা।
(৩) ছালাতে পঠিতব্য সকল দো‘আ
(৪) বুকে হাত বাঁধা
(৫) রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা
(৬) ‘আমীন’ বলা
(৭) সিজদায় যাওয়ার সময় মাটিতে আগে হাত রাখা
(৮) ‘জালসায়ে ইস্তেরা-হাত’ করা
(৯) মাটিতে দু’হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ানো
(১০) ছালাতে দাঁড়িয়ে সিজদার স্থানে নযর রাখা
(১১) তাশাহহুদের সময় ডান হাত ৫৩-এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ করা ও শাহাদাত আঙ্গুল নাড়াতে থাকা। এছাড়া ফরয-ওয়াজিবের বাইরে সকল বৈধ কর্মসমূহ।

সালাত বিনষ্টের কারণ সমূহ

১. ছালাতরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু খাওয়া বা পান করা।
২. ছালাতের স্বার্থ ব্যতিরেকে অন্য কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা।
৩. ইচ্ছাকৃতভাবে বাহুল্য কাজ বা ‘আমলে কাছীর’ করা। যা দেখলে ধারণা হয় যে, সে ছালাতের মধ্যে নয়।
৪. ইচ্ছাকৃত বা বিনা কারণে ছালাতের কোন রুকন বা শর্ত পরিত্যাগ করা।
৫. ছালাতের মধ্যে অধিক হাস্য করা।[127]
[127] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২০৫ পৃঃ।

সালাতের ওয়াক্ত সমূহ

আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা ফরয। আল্লাহ বলেন, إِنَّ الصَّلاَةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا ‘মুমিনদের উপরে ‘ছালাত’ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্ধারিত করা হয়েছে’ (নিসা ৪/১০৩)। মি‘রাজ রজনীতে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয হওয়ার পরের দিন [128] যোহরের সময় জিবরীল (আঃ) এসে প্রথম দিন আউয়াল ওয়াক্তে ও পরের দিন আখেরী ওয়াক্তে নিজ ইমামতিতে পবিত্র কা‘বা চত্বরে মাক্বামে ইবরাহীমের পাশে দাঁড়িয়ে দু’দিনে পাঁচ পাঁচ দশ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ছালাতের পসন্দনীয় ‘সময়কাল ঐ দুই সময়ের মধ্যে’ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।[129] তবে আউয়াল ওয়াক্তে ছালাত আদায় করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বোত্তম আমল হিসাবে অভিহিত করেছেন।[130] ছালাতের ওয়াক্ত সমূহ নিম্নরূপ :

(১) ফজর: ‘ছুবহে ছাদিক’ হ’তে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা ‘গালাস’ বা ভোরের অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করতেন এবং জীবনে একবার মাত্র ‘ইসফার’ বা চারিদিকে ফর্সা হওয়ার সময়ে ফজরের ছালাত আদায় করেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এটাই তাঁর নিয়মিত অভ্যাস ছিল’। [131] অতএব ‘গালাস’ ওয়াক্তে অর্থাৎ ভোরের অন্ধকারে ফজরের ছালাত আদায় করাই প্রকৃত সুন্নাত।

(২) যোহর: সূর্য পশ্চিম দিকে ঢললেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং বস্ত্তর নিজস্ব ছায়ার এক গুণ হ’লে শেষ হয়। [132]

(৩) আছর: বস্ত্তর মূল ছায়ার এক গুণ হওয়ার পর হ’তে আছরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং দু’গুণ হ’লে শেষ হয়। তবে সূর্যাস্তের প্রাক্কালের রক্তিম সময় পর্যন্ত আছর পড়া জায়েয আছে।[133]

(৪) মাগরিব: সূর্য অস্ত যাওয়ার পরেই মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যের লালিমা শেষ হওয়া পর্যন্ত বাকী থাকে। [134]

(৫) এশা: মাগরিবের পর হ’তে এশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাতে শেষ হয়।[135] তবে যরূরী কারণ বশতঃ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত এশার ছালাত আদায় করা জায়েয আছে।[136]

প্রচন্ড গ্রীষ্মে যোহরের ছালাত একটু দেরীতে এবং প্রচন্ড শীতে এশার ছালাত একটু আগেভাগে পড়া ভাল। তবে কষ্টবোধ না হ’লে এশার ছালাত রাতের এক তৃতীয়াংশের পর আদায় করা উত্তম।[137]

সালাতের নিষিদ্ধ সময়

সূর্যোদয়, মধ্যাহ্ন ও সূর্যাস্ত কালে ছালাত শুরু করা সিদ্ধ নয়। [138]

অনুরূপভাবে আছরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যাস্ত পর্যন্ত এবং ফজরের ছালাতের পর হ’তে সূর্যোদয় পর্যন্ত কোন ছালাত নেই’। [139]
তবে এ সময় ক্বাযা ছালাত আদায় করা জায়েয আছে। [140]
বিভিন্ন হাদীছের আলোকে অনেক বিদ্বান নিষিদ্ধ সময়গুলিতে ‘কারণবিশিষ্ট’ ছালাত সমূহ জায়েয বলেছেন। যেমন- তাহিইয়াতুল মাসজিদ, তাহিইয়াতুল ওযূ, সূর্য গ্রহণের ছালাত, জানাযার ছালাত ইত্যাদি। [141]
জুম‘আর ছালাত ঠিক দুপুরের সময় জায়েয আছে। [142]
অমনিভাবে কা‘বা গৃহে দিবারাত্রি সকল সময় ছালাত ও ত্বাওয়াফ জায়েয আছে। [143]

[128] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৩ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মিরাজ’ অনুচ্ছেদ-৬; নায়লুল আওত্বার ২/২৮ পৃঃ।
[129] . (الوَقْتُ مَا بَيْنَ هَذَيْنِ الْوَقْتَيْنِ) আবুদাঊদ হা/৩৯৩; তিরমিযী হা/১৪৯; ঐ, মিশকাত হা/৫৮৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮২, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; নায়লুল আওত্বার ২/২৬ পৃঃ।
[130] . سُئِلَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَىُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: الصَّلاَةُ لِأَوَّلِ وَقْتِهَا- আহমাদ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৬০৭, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; দারাকুৎনী হা/৯৫৬-৫৭।
[131] . আবুদাঊদ হা/৩৯৪, আবু মাসঊদ আনছারী (রাঃ) হ’তে; নায়ল ২/৭৫ পৃঃ; অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, أَسْفِرُوْا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ ‘তোমরা ফজরের সময় ফর্সা কর। কেননা এটাই নেকীর জন্য উত্তম সময়’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৬১৪)। সাইয়িদ সাবিক্ব বলেন, এর অর্থ হ’ল গালাসে প্রবেশ কর ও ইসফারে বের হও। অর্থাৎ ক্বিরাআত দীর্ঘ কর এবং ফর্সা হ’লে ছালাত শেষে বের হও, যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করতেন (আবুদাঊদ হা/৩৯৩)। তিনি ফজরের ছালাতে ৬০ হ’তে ১০০টি আয়াত পড়তেন। অথবা এর অর্থ এটাও হ’তে পারে যে, ‘তোমরা ফজর হওয়া সম্পর্কে নিশ্চিত হও। ধারণার ভিত্তিতে ছালাত আদায় করো না’ (তিরমিযী হা/১৫৪-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮০ পৃঃ)। আলবানী বলেন, এর অর্থ এই যে, গালাসে ফজরের ছালাত শুরু করবে এবং ইসফারে শেষ করে বের হবে’ (ইরওয়া ১/২৮৭ পৃঃ)।
[132] . মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাতের ওয়াক্তসমূহ’ অনুচ্ছেদ-১; আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩; ইমাম আবু ইউসুফ, ইমাম মুহাম্মাদ ও ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) একটি মতে (ছহীহ হাদীছে বর্ণিত) উক্ত সময়কালকে সমর্থন করেছেন। - হেদায়া, পৃঃ ১/৮১ ‘ছালাত’ অধ্যায়, ‘সময়’ অনুচ্ছেদ।
[133] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৮৩; নায়ল ২/৩৪-৩৫ পৃঃ ‘আছরের পসন্দনীয় ও শেষ সময়’ অনুচ্ছেদ।

প্রসিদ্ধ চার ইমাম সহ ইমাম আবু ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) এই মত পোষণ করেন। তবে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) অন্য মতে ‘মূল ছায়ার দ্বিগুণ হওয়া’ সমর্থন করেছেন এবং সেটার উপরেই হানাফী মাযহাবের ফৎওয়া জারি আছে। দলীল: হাদীছ-‘তোমরা যোহরকে ঠান্ডা কর। কেননা প্রচন্ড গ্রীষ্মতাপ জাহান্নামের উত্তাপ মাত্র’ (হেদায়া ১/৮১)। ঘটনা হ’ল এই যে, ‘একদা এক সফরে প্রচন্ড দুপুরে বেলাল (রাঃ) যোহরের আযান দেওয়ার পর জামা‘আতের জন্য এক্বামত দিতে চাইলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, যোহরকে ঠান্ডা কর’ অর্থাৎ দেরী কর। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘ছালাতকে ঠান্ডা কর। কেননা প্রচন্ড দাবদাহ জাহান্নামের উত্তাপের অংশ’ (তিরমিযী, আবু যর গেফারী (রাঃ) হ’তে, হা/১৫৭-৫৮, তুহফা হা/১৫৮, ‘ছালাত’ অধ্যায়, ১১৯ অনুচ্ছেদ; আবুদাঊদ হা/৪০১-০২)।

উক্ত হাদীছে দু’টি বিষয় রয়েছে : ১. সময়টি ছিল সফরের। যেখানে খোলা ময়দানে কঠিন দাবদাহে যোহর আদায় করা বাস্তবিকই কঠিন ছিল। কিন্তু মুক্বীম অবস্থায় সাধারণ আবহাওয়ায় কিংবা ছাদ, ফ্যান ও এসিযুক্ত মসজিদের বেলায় এই হুকুম চলে কি? ২. এটি ছিল গ্রীষ্মের মওসুম। কিন্তু শীতকালে যখন দুপুরের রৌদ্র মজা লাগে, তখনকার হুকুম কেমন হবে? এক্ষণে ইবনু আববাস ও জাবের (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ হাদীছে যেখানে ‘মূল ছায়ার এক গুণ ও দু’গুণের মধ্যবর্তী সময়’কে আছরের ওয়াক্ত হিসাবে সীমা নির্দেশ করা হয়েছে, সেখানে উক্ত সাময়িক যরূরী সমস্যাযুক্ত হাদীছের দোহাই দিয়ে আছরের শেষ সময় অর্থাৎ ‘মূল ছায়ার দ্বিগুণ’ উত্তীর্ণ হওয়ার পর আছরের ছালাত শুরু করা ঠিক হবে কি? বরং আবু যর (রাঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীছের সরলার্থ এটাই যে, অনুরূপ সাময়িক তাপদগ্ধ আবহাওয়ায় যোহরের ছালাত একটু দেরী করে পড়বে। এক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর অন্য মতটি গ্রহণ করলে এবং ছহীহ হাদীছ এবং তিন ইমাম ও ছাহেবায়েনের মতামতকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘মূল ছায়ার এক গুণ’ হওয়ার পর থেকে আছরের ওয়াক্ত নির্ধারণ করলে অন্ততঃ এই ক্ষেত্রে মুসলমানগণ এক হ’তে পারতেন।

[134] ও ১৫১. মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ওয়াক্ত সমূহ’ অনুচ্ছেদ-১।
[136] . মুসলিম হা/১৫৬২ (৬৮১/৩১১) ‘মসজিদ সমূহ’ অধ্যায়-৫, ‘ক্বাযা ছালাত আদায়’ অনুচ্ছেদ-৫৫, আবু ক্বাতাদাহ হ’তে; ফিক্ব্হুস সুন্নাহ ১/৭৯।
[137] . বুখারী, মিশকাত হা/৫৯০-৯১, ‘ছালাত আগেভাগে পড়া’ অনুচ্ছেদ-২; আহমাদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৬১১; ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ‘যোহরের ওয়াক্ত’ অনুচ্ছেদ ১/৭৬।
[138] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/১০৩৯-৪০ ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮১-৮৩ পৃঃ।
[139] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪১, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।
[140] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/১০৪৩; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১২৭৭।
[141] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[142] . তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী, দ্রষ্টব্য: হা/১৮৩-এর ব্যাখ্যা, ১/৫৪১ পৃঃ ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৮২ পৃঃ।
[143] . নাসাঈ, আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/ ১০৪৫, ‘নিষিদ্ধ সময়’ অনুচ্ছেদ-২২।



*******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url