কেমন ছিল রাসুল (সা:) এর সালাত || রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নামাজ || (পর্ব - ০৮)





ক্বওমা, রুকু, সিজদা ও সালাম


মহান আল্লাহর বাণী- ‘সফলকাম হবে সেই সব মুমিন যারা সালাতে রত থাকে ভীত সন্ত্রস্ত ভাবে’। অতএব গভীরভাবে চিন্তা করুন! আপনার প্রভু আল্লাহ কিজন্য আপনাকে সৃষ্টি করেছেন? মনে রাখবেন তিনি আপনাকে বিনা প্রয়োজনে সৃষ্টি করেননি। তাঁর সৃষ্ট এ সুন্দর সৃষ্টি জগতকে সুন্দরভাবে আবাদ করার দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়েই তিনি আপনাকে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। কে এখানে কত বেশী সুন্দর আমল করে এবং তার সৃষ্টিকর্তার হুকুম যথাযথভাবে পালন করে, তা পরীক্ষার জন্য আল্লাহ মউত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন। আপনার হাত-পা, চক্ষু-কর্ণ, নাসিকা-জিহবা সর্বোপরি যে মূল্যবান জ্ঞান-সম্পদ এবং ভাষা ও চিন্তাশক্তির নেয়ামত দান করে আপনাকে আপনার প্রভু এ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, তার যথার্থ ব্যবহার আপনি করেছেন কি-না, তার কড়ায়-গন্ডায় হিসাব আপনাকে আপনার সৃষ্টিকর্তার নিকটে দিতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে ও জান্নাত লাভের উদ্দেশ্যে ইসলামের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত ও প্রার্থনার অনুষ্ঠান ‘সালাতে’ রত হই ‘তাকবীরে তাহরীমা’-র মাধ্যমে দুনিয়ার সবকিছুকে হারাম করে একনিষ্ঠভাবে বিনম্রচিত্তে বিগলিত হৃদয়ে!! শ্রেষ্ট ইবাদত সালাত বা নামাজে সফলতার জন্য চাই সালাতের সঠিক পদ্ধতির অনুসরণ। আর এই সঠিক পদ্ধতিটি পাওয়া যাবে কেবলমাত্র হযরত মোহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সা:) এর সালাত বা নামাজের মধ্যেই। তাই আমরা এখানে রাসুল (সা:) এর সালাত বা নামাজ কেমন ছিল এই বিষয়টি নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করবো। পুরো আলোচনাটিই নেওয়া হয়েছে ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত “ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ)” নামক গ্রন্থ থেকে। আল্লাহ আমাদেরকে সালাত বা নামাজের সকল বিষয়ে সঠিকভাবে জানার ও মানার তৌফিক দান করুন। আমিন।।

ক্বওমা

রুকূ থেকে উঠে সুস্থির হয়ে দাঁড়ানোকে ‘ক্বওমা’ বলে। ‘ক্বওমা’র সময় দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে ও ইমাম-মুক্তাদী সকলে বলবে, سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ(সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ) অর্থাৎ ‘আল্লাহ শোনেন তার কথা যে তাঁর প্রশংসা করে’। অতঃপর বলবে رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ (রববানা ওয়া লাকাল হাম্দ) অথবা رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (রববানা লাকাল হাম্দ) অথবা (اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ) (আল্লা-হুম্মা রববানা লাকাল হাম্দ) ‘হে আল্লাহ হে আমাদের প্রভু! আপনার জন্যই যাবতীয় প্রশংসা’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যার কথা ফেরেশতাদের কথার সঙ্গে মিলে যাবে তার বিগত দিনের সকল গোনাহ মাফ করা হবে।[84] অথবা বলবে, رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ (রববানা ওয়া লাকাল হাম্দ হাম্দান কাছীরান ত্বাইয়েবাম মুবা-রাকান ফীহি) ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার জন্য অগণিত প্রশংসা, যা পবিত্র ও বরকতময়’। দো‘আটির ফযীলত বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, ‘আমি ৩০-এর অধিক ফেরেশতাকে দেখলাম যে, তারা প্রতিযোগিতা করছে কে এই দো‘আ পাঠকারীর নেকী আগে লিখবে’।[85]

ক্বওমার অন্যান্য দো‘আ সমূহ :

1- رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى- (مالك والبخاري وابوداؤد)-

2- اَللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ- (مسلم، صفة صلاة النبى 117-119)-

উল্লেখ্য যে, ‘ইয়া রববী লাকাল হামদু কামা ইয়াম্বাগী লিজালা-লি ওয়াজহিকা ওয়া লি ‘আযীমি সুলত্বা-নিকা’ বলে এই সময়ে যে দো‘আ প্রচলিত আছে, তার সনদ যঈফ। [86]

ক্বওমাতে রুকূর ন্যায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে দো‘আ পড়তে হয়। কেননা ‘ক্বওমার সময় সুস্থির হয়ে না দাঁড়ালে এবং সিজদা থেকে উঠে সুস্থির ভাবে না বসলে ছালাত সিদ্ধ হবে না।[87] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

لاَ تُجْزِئُ صَلاَةُ الرَّجُلِ حَتَّى يُقِيْمَ ظَهْرَهُ فِي الرُّكُوْعِ وَالسُّجُوْدِ-

‘ঐ ব্যক্তির ছালাত যথার্থ হবে না, যতক্ষণ না সে রুকূ ও সিজদাতে তার পিঠ সোজা রাখে’।[88]

জ্ঞাতব্য : ক্বওমার সময় অনেকে হাত কিছুক্ষণ খাড়াভাবে ধরে রাখেন। কেউ পুনরায় বুকে হাত বাঁধেন। যা ঠিক নয়। এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ সমূহ নিম্নরূপ:

(১) বিখ্যাত ছাহাবী আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) যিনি ১০ জন ছাহাবীর সম্মুখে রাসূলের (ছাঃ) ছালাতের নমুনা প্রদর্শন করে সত্যায়ন প্রাপ্ত হয়েছিলেন, সেখানে বলা হয়েছে-

فَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ اسْتَوَى حَتَّى يَعُوْدَ كُلُّ فَقَارٍ مَكَانَهُ، رواه البخاريُّ-

‘তিনি রুকূ থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা দাঁড়িয়ে গেলেন এমনভাবে যে, মেরুদন্ডের জোড় সমূহ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসে’। [89]

(২) ছালাতে ভুলকারী (مسيئ الصلاة) জনৈক ব্যক্তিকে রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক হাতে-কলমে ছালাত শিখানোর প্রসিদ্ধ হাদীছে এসেছে حَتَّى تَرْجِعَ الْعِظَامُ إِلَى مَفَاصِلِهَا ‘যতক্ষণ না অস্থি সমূহ স্ব স্ব জোড়ে ফিরে আসে’।[90] ওয়ায়েল বিন হুজ্র ও সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বর্ণিত ‘ছালাতে বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখার ‘আম’ হাদীছের[91] উপরে ভিত্তি করে রুকূর আগে ও পরে ক্বওমা-র সময় বুকে হাত বাঁধার কথা বলা হয়।[92] কিন্তু উপরোক্ত হাদীছগুলি রুকূ পরবর্তী ‘ক্বওমা’র অবস্থা সম্পর্কে ‘খাছ’ ভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাছাড়া বুকে হাত বাঁধার বিষয়টি হাতের স্বাভাবিক অবস্থার পরিপন্থী। এক্ষণে শিরদাঁড়া সহ দেহের অন্যান্য অস্থি সমূহকে স্ব স্ব জোড়ে ফিরে আসতে গেলে ক্বওমার সময় হাতকে তার স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াটাই ছহীহ হাদীছ সমূহের যথাযথ অনুসরণ বলে অনুমিত হয়। [93] আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

[84] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৭৪-৭৭; বুখারী হা/৭৩২-৩৫, ৭৩৮; মুসলিম হা/৮৬৮, ৯০৪, ৯১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়; ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, ১১৭-১৯ পৃঃ।
[85] . বুখারী, মিশকাত হা/৮৭৭, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।
[86] . ইবনু মাজাহ হা/৩৮০১; যঈফুল জামে‘ হা/১৮৭৭।
[87] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৯০ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২১।
[88] . আবুদাঊদ, তিরমিযী প্রভৃতি, মিশকাত হা/৮৭৮, আবু মাস‘ঊদ আনছারী (রাঃ) হ’তে; নায়ল ৩/১১৩-১৪ পৃঃ।
[89] . বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২।
[90] . তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮০৪।
[91] . মুসলিম, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৭,৭৯৮।
[92] . দারুল ইফতা, মাজমূ‘আ রাসা-ইল ফিছ ছালাত (রিয়াদ: ১৪০৫ হিঃ), পৃঃ ১৩৪-৩৯; বদীউদ্দীন শাহ রাশেদী সিন্ধী, যিয়াদাতুল খুশূ‘ (কুয়েত, ১৪০৬/১৯৮৬), পৃঃ ১-৩৮।
[93] . বিস্তারিত দেখুন : আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ১২০ টীকা, ‘ক্বওমা দীর্ঘ করা’ অনুচ্ছেদ; আলবানী, মিশকাত হা/৮০৪ টীকা, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০; মুহিববুল্লাহ শাহ রাশেদী সিন্ধী, নায়লুল আমানী (করাচী তাবি) পৃঃ ১-৪২; মাসিক আত-তাহরীক, রাজশাহী, ডিসেম্বর’ ৯৮, ২য় বর্ষ ৩য় সংখ্যা, পৃঃ ৫০-৫১।

রাফ‘উল ইয়াদায়েন

এর অর্থ- দু’হাত উঁচু করা। এটি আল্লাহর নিকটে আত্মসমর্পণের অন্যতম নিদর্শন।[94] রুকূ থেকে উঠে ক্বওমাতে দাঁড়িয়ে দু’হাত ক্বিবলামুখী স্বাভাবিকভাবে কাঁধ বা কান বরাবর উঁচু করে তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতে মোট চারস্থানে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করতে হয়।
(১) তাকবীরে তাহরীমার সময়
(২) রুকূতে যাওয়ার সময়
(৩) রুকূ থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় এবং
(৪) ৩য় রাক‘আতে দাঁড়িয়ে বুকে হাত বাঁধার সময়। এমনিভাবে প্রতি তাশাহ্হুদের বৈঠকের পর উঠে দাঁড়াবার সময় রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতে হয়।

রুকূতে যাওয়া ও রুকূ হ’তে ওঠার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে। একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশ্শারাহ’[95] সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী[96] এবং সর্বমোট ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চার শত। [97] ইমাম সুয়ূত্বী ও আলবানী প্রমুখ বিদ্বানগণ ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ -এর হাদীছকে ‘মুতাওয়াতির’ (যা ব্যাপকভাবে ও অবিরত ধারায় বর্ণিত) পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন।[98] ইমাম বুখারী বলেন,

لَمْ يَثْبُتْ عَنْ أَحَدٍ مِّنْهُمْ تَرْكُهُ. و قَالَ : لاَ أَسَانِيْدَ أَصَحُّ مِنْ أَسَانِيْدِ الرَّفْعِ-

অর্থাৎ কোন ছাহাবী রাফ‘উল ইয়াদায়েন তরক করেছেন বলে প্রমাণিত হয়নি। তিনি আরও বলেন ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছ সমূহের সনদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সনদ আর নেই’। [99] রাফ‘উল ইয়াদায়েন সম্পর্কে প্রসিদ্ধতম হাদীছ সমূহের কয়েকটি নিম্নরূপঃ

(১) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكَبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلاَةَ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ... مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ، وفي رِوَايةٍ عنه: وَ إِذَا قَامَ مِنَ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ.... رواه البخاريُّ-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের শুরুতে, রুকূতে যাওয়াকালীন ও রুকূ হ’তে ওঠাকালীন সময়ে..... এবং ২য় রাক‘আত থেকে উঠে দাঁড়াবার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করতেন’। [100] হাদীছটি বায়হাক্বীতে বর্ধিতভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, فََمَا زَالَتْ تِلْكَ صَلاَتُهُ حَتَّي لَقِيَ اللهَ تَعَالَي- ‘এভাবেই তাঁর ছালাত জারি ছিল, যতদিন না তিনি আল্লাহর সাথে মিলিত হন’। অর্থাৎ আমৃত্যু তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন সহ ছালাত আদায় করেছেন। ইমাম বুখারীর উস্তাদ আলী ইবনুল মাদ্বীনী বলেন, এই হাদীছ আমার নিকটে সমস্ত উম্মতের উপরে ‘হুজ্জাত’ বা দলীল স্বরূপ (حُجَّةٌ عَلَي الْخَلْقِ)। যে ব্যক্তি এটা শুনবে, তার উপরেই এটা আমল করা কর্তব্য হবে। হাসান বছরী ও হামীদ বিন হেলাল বলেন, সকল ছাহাবী উক্ত তিন স্থানে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন’। [101]

(২) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিছ (রাঃ) বলেন,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا كَبَّرَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ، وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا أُذُنَيْهِ، وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرُّكُوْعِ فَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ، رواه مسلمٌ-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন ছালাতের জন্য ‘তাকবীরে তাহরীমা’ দিতেন, তখন হাত দু’টি স্বীয় দুই কান পর্যন্ত উঠাতেন। অতঃপর রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হ’তে উঠার সময় তিনি অনুরূপ করতেন এবং ‘সামি‘আল্লা-হু লিমান হামিদাহ’ বলতেন’।[102]

উল্লেখ্য যে, শত শত ছহীহ হাদীছের বিপরীতে তাকবীরে তাহরীমা ব্যতীত বাকী সময়ে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে প্রধানতঃ যে চারটি হাদীছ পেশ করা হয়ে থাকে, তার সবগুলিই ‘যঈফ’। তন্মধ্যে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বর্ণিত হাদীছটিই সর্বাধিক প্রসিদ্ধ। যেমন আলক্বামা বলেন যে, একদা ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) আমাদেরকে বলেন,

أَلاَ أُصَلِّيْ بِكُمْ صَلاَةَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى وَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلاَّ مَرَّةً وَاحِدَةً مَعَ تَكْبِيْرَةِ الْاِفْتِتَاحِ، رواه الترمذىُّ وابوداؤدَ-

‘আমি কি তোমাদের নিকটে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত আদায় করব না? এই বলে তিনি ছালাত আদায় করেন। কিন্তু তাকবীরে তাহরীমার সময় একবার ব্যতীত অন্য সময় আর রাফ‘উল ইয়াদায়েন করলেন না’।[103] উক্ত হাদীছ সম্পর্কে ইবনু হিববান বলেন,

هَذَا أَحْسَنُ خَبَرٍ رَوَى أَهْلُ الْكُوْفَةِ فِي نَفْيِ رَفْعِ الْيَدَيْنِ فِي الصَّلاَةِ عِنْدَ الرُّكُوْعِ وَعِنْدَ الرَّفْعِ مِنْهُ، وَهُوَ فِي الْحَقِيْقَةِ أَضْعَفُ شَيْءٍ يُعَوَّلُ عَلَيْهِ، لِأَنَّ لَهُ عِلَلاً تُبْطِلُهُ-

‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটিই সবচেয়ে বড় দলীল হ’লেও এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল, যার উপরে নির্ভর করা হয়েছে। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে, যা একে বাতিল গণ্য করে’।[104]

শায়খ আলবানী বলেন, হাদীছটিকে ছহীহ মেনে নিলেও তা ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ -এর পক্ষে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহের বিপরীতে পেশ করা যাবে না। কেননা

لأنه نافٍ وتلك مُثْبِتَةٌ ومن المقرَّر في علم الأصول أن المثبتَ مقدَّمٌ علي النافي-

‘এটি না-বোধক এবং ঐগুলি হাঁ-বোধক। ইলমে হাদীছ-এর মূলনীতি অনুযায়ী হাঁ-বোধক হাদীছ না-বোধক হাদীছের উপর অগ্রাধিকার যোগ্য’।[105]

শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী বলেন,

وَالَّذِيْ يَرْفَعُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّنْ لاَّ يَرْفَعُ ، فَإِنَّ أَحَادِيْثَ الرَّفْعِ أَكْثَرُ وَأَثْبَتُ-

‘যে মুছল্লী রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে, ঐ মুছল্লী আমার নিকট অধিক প্রিয় ঐ মুছল্লীর চাইতে, যে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করে না। কেননা রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এর হাদীছ সংখ্যায় বেশী ও অধিকতর মযবুত’।[106]

রাফ‘উল ইয়াদায়নের ফযীলত

রাফ‘উল ইয়াদায়েন হ’ল আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের অন্যতম নিদর্শন। হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন হ’ল ছালাতের সৌন্দর্য (رفع اليدين من زينة الصلاة)।’ রুকূতে যাওয়ার সময় ও রুকূ হ’তে ওঠার সময় কেউ রাফ‘উল ইয়াদায়েন না করলে তিনি তাকে ছোট পাথর ছুঁড়ে মারতেন।[107] উক্ববাহ বিন ‘আমের (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক রাফ‘উল ইয়াদায়েন-এ ১০টি করে নেকী আছে। [108] যদি কেউ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের মহববতে একটি নেকীর কাজ করেন, আল্লাহ বলেন, আমি তার নেকী ১০ থেকে ৭০০ গুণে বর্ধিত করি।[109] শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী (রহঃ) বলেন, ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ হ’ল فعل تعظيمي বা সম্মান সূচক কম,র্ যা মুছল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার ব্যাপারে ও ছালাতে তন্ময় হওয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দেয়’। [110]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সিজদা থেকে উঠে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না’।[111] ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, ইমাম আহমাদ -এর অধিকাংশ বর্ণনাও একথা প্রমাণ করে যে, তিনি সিজদাকালে রাফ‘উল ইয়াদায়েন -এর সর্মথক ছিলেন না’।[112] শায়খ আলবানী সিজদায় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনো কখনো রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন বলে যে হাদীছ বর্ণনা করেছেন,[113] তার অর্থ রুকূর ন্যায় রাফ‘উল ইয়াদায়েন নয়। বরং সাধারণভাবে সিজদা থেকে হাত উঠানো বুঝানো হয়েছে বলে অনুমিত হয়। ইমাম আহমাদ বলেন, রাসূল (ছাঃ) দুই সিজদার মাঝে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না’।[114]

[94] . নায়লুল আওত্বার ৩/১৯ পৃঃ।
[95] . ‘আশারায়ে মুবাশ্‌শারাহ’ অর্থাৎ স্ব স্ব জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন দশজন ছাহাবী। তাঁরা হলেন : ১.আবুবকর ছিদ্দীক্ব ‘আব্দুল্লাহ বিন ‘উছমান আবু কুহাফা (মৃঃ ১৩ হিঃ বয়স ৬৩ বৎসর)। ২. ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব (মৃঃ ২৩ হিঃ বয়স ৬০) ৩. ‘উছমান ইবনু ‘আফফান (মৃঃ ৩৫ হিঃ বয়স অন্যূন ৮৩) ৪. ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব (মৃঃ ৪০ হিঃ বয়স ৬০) ৫. আবু ‘উবায়দাহ ‘আমের বিন ‘আব্দুল্লাহ ইবনুল জাররাহ (মৃঃ ১৮ হিঃ বয়স ৫৮) ৬. ‘আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (মৃঃ ৩২ হিঃ বয়স ৭৫) ৭. ত্বাল্হা বিন ‘উবায়দুল্লাহ (মৃঃ ৩৬ হিঃ বয়স ৬২) ৮. যোবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (মৃঃ ৩৬ হিঃ বয়স ৭৫) ৯. সা‘ঈদ বিন যায়েদ বিন ‘আমর (মৃঃ ৫১ হিঃ বয়স ৭১) ১০. সা‘দ বিন আবী ওয়াক্ক্বাছ (মৃঃ ৫৫ হিঃ বয়স ৮২) রাযিয়াল্লা-হু ‘আনহুম।
[96] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৭ পৃঃ ; ফাৎহুল বারী ২/২৫৮ পৃঃ, হা/৭৩৭-এর ব্যাখ্যা, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৮৪।
[97] . মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী (৭২৯-৮১৭ হিঃ), সিফরুস সা‘আদাত (লাহোর : ১৩০২ হিঃ, ফার্সী থেকে উর্দূ), ১৫ পৃঃ।
[98] . তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬ পৃঃ; আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী পৃঃ ১০৯।
[99] . ফাৎহুল বারী ২/২৫৭ পৃঃ, হা/৭৩৬-এর ব্যাখ্যা, ‘আযান’ অধ্যায়-১০, অনুচ্ছেদ-৮৪।
[100] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৩-৯৪ ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।
[101] . বায়হাক্বী, মা‘রিফাতুস সুনান ওয়াল আছার হা/৮১৩, ‘মুরসাল হাসান’ ২/৪৭২ পৃঃ; মুওয়াত্ত্বা মালেক ‘ছালাত শুরু’ অনুচ্ছেদ; ‘মুরসাল ছহীহ’, মিশকাত হা/৮০৮; নায়লুল আওত্বার ৩/১২-১৩; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৮।
[102] . মুসলিম হা/৮৬৫ ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯।
[103] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮০৯, ‘ছালাতের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-১০।
[104] . নায়লুল আওত্বার ৩/১৪ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৮।
[105] . মিশকাত হা/৮০৯-এর টীকা (আলবানী) ১/২৫৪ পৃঃ।
[106] . হুজ্জাতুল্লা-হিল বালিগাহ ২/১০ পৃঃ।
[107] . নায়লুল আওত্বার ৩/১২; ফাৎহুল বারী ২/২৫৭।
[108] . নায়লুল আওত্বার ৩/১২; ছিফাত ১০৯।
[109] . বুখারী, মুসলিম, ছহীহ আত-তারগীব হা/১৬; মিশকাত হা/৪৪।
[110] . হুজ্জাতুল্লা-হিল বালিগাহ ২/১০ পৃঃ।
[111] . ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৬৯৪।
[112] . মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, (মদীনা ত্বাইয়েবাহ : ১৪০৬/১৯৮৬, ১ম সংস্করণ) মাসআলা-৩২০।
[113] . আলবানী, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী ১২১ পৃঃ।
[114] . ইবনুল ক্বাইয়িম, বাদায়ে‘উল ফাওয়ায়েদ ৩/৮৯-৯০; মাসায়েলে ইমাম আহমাদ, মাসআলা-৩২০, ১/২৩৬ পৃঃ।

রুকূ-সিজদার আদব

বারা’ বিন আযেব (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর রুকূ, সিজদা, দুই সিজদার মধ্যকার বৈঠক এবং রুকূ পরবর্তী ক্বওমা-র স্থিতিকাল প্রায় সমান হ’ত। [115] আনাস (রাঃ) বলেন, এগুলি এত দীর্ঘ হ’ত যে, মুক্তাদীগণের কেউ কেউ ধারণা করত যে, রাসূল (ছাঃ) হয়তোবা ছালাতের কথা ভুলে গেছেন’।[116]

[115]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৬৯, ‘রুকূ’ অনুচ্ছেদ-১৩।
[116]. মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, ইরওয়াউল গালীল হা/৩০৭।

সিজদা

‘সিজদা’ অর্থ চেহারা মাটিতে রাখা (وضع الجبهة على الأرض) পারিভাষিক অর্থ, আল্লাহর ইবাদতের উদ্দেশ্যে বিনম্রচিত্তে চেহারা মাটিতে রাখা’। রুকূ হ’তে উঠে ক্বওমার দো‘আ শেষে ‘আল্লা-হু আকবর’ বলে আল্লাহর নিকটে সিজদায় লুটিয়ে পড়বে এবং সিজদার দো‘আ সমূহ পাঠ করবে। নাক সহ কপাল, দু’হাত, দু’হাঁটু ও দু’পায়ের আংগুল সমূহের অগ্রভাগ সহ মোট ৭টি অঙ্গ মাটিতে লাগিয়ে সিজদা করবে।[117] সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে দু’হাত মাটিতে রাখবে। কেননা এ বিষয়ে আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ হাদীছটি ‘ছহীহ’।[118] কিন্তু ওয়ায়েল বিন হুজ্র (রাঃ) বর্ণিত আগে হাঁটু রাখার হাদীছটি ‘যঈফ’।[119] সিজদার সময় হাত দু’খানা ক্বিবলামুখী করে [120] মাথার দু’পাশে কাঁধ বা কান বরাবর[121] মাটিতে স্বাভাবিকভাবে রাখবে[122] এবং কনুই ও বগল ফাঁকা রাখবে। [123] হাঁটু বা মাটিতে ঠেস দিবে না।[124] সিজদায় দুই কনুই উঁচু রাখবে এবং কোনভাবেই দু’হাত কুকুরের মত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া যাবে না।[125]

সিজদা এমন (লম্বা) হবে, যাতে বুকের নীচ দিয়ে একটা বকরীর বাচ্চা যাওয়ার মত ফাঁকা থাকে।[126] সহজ হিসাবে প্রত্যেক মুছল্লী নিজ হাঁটু হ’তে নিজ হাতের দেড় হাত দূরে সিজদা দিলে ঠিক হ’তে পারে। সিজদা হ’তে উঠে বাম পায়ের পাতার উপরে বসবে এবং ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে ও আঙ্গুলগুলি ক্বিবলামুখী রাখবে।[127]

অতঃপর বৈঠকের দো‘আ পাঠ শেষে তাকবীর বলে দ্বিতীয় সিজদায় যাবে। অনেক মহিলা সিজদায় গিয়ে মাটিতে নিতম্ব রাখেন। এই মর্মে ‘মারাসীলে আবুদাঊদে’ বর্ণিত হাদীছটি নিতান্তই ‘যঈফ’।[128] এর ফলে সিজদার সুন্নাতী তরীকা বিনষ্ট হয়। সিজদা হ’ল ছালাতের অন্যতম প্রধান ‘রুকন’। সিজদা নষ্ট হ’লে ছালাত বিনষ্ট হবে। অতএব এই বদভ্যাস এখনই পরিত্যাজ্য।

সিজদা হ’ল দো‘আ কবুলের সর্বোত্তম সময়। যেমন আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَّبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ رواه مسلم وفي رواية له عن ابن عباس قال : فَاجْتَهِدُوْا فِي الدُّعَاءِ فَقَمِنٌ أَنْ يُّسْتَجَابَ لَكُمْ-

‘বান্দা স্বীয় প্রভুর সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়, যখন সে সিজদায় রত হয়। অতএব তোমরা ঐ সময় বেশী বেশী প্রার্থনা কর’। অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমরা প্রার্থনায় সাধ্যমত চেষ্টা কর। আশা করা যায়, তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে’।[129] রুকূ ও সিজদাতে কমপক্ষে তিনবার তাসবীহ পাঠ করবে।[130] দশবার দো‘আ পাঠের যে হাদীছ এসেছে, তা যঈফ। [131]

দুই সিজদার মধ্যেকার সংক্ষিপ্ত বৈঠকে হাতের আঙ্গুলগুলি দুই হাঁটুর মাথার দিকে স্বাভাবিকভাবে ক্বিবলামুখী ছড়ানো থাকবে। [132]

[117] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৭, ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।
[118] . আবুদাঊদ হা/৮৪০; ঐ, মিশকাত হা/৮৯৯ অনুচ্ছেদ-১৪।
[119] . আবুদাঊদ হা/৮৩৮; ঐ, মিশকাত হা/৮৯৮ অনুচ্ছেদ-১৪, টীকা, পৃঃ ১/২৮২; মির‘আত ৩/২১৭-১৮; ইরওয়া হা/৩৫৭।
[120] . ‘কেননা দুই হাতও সিজদা করে যেমন মুখমন্ডল সিজদা করে থাকে’। -মুওয়াত্ত্বা, মিশকাত হা/৯০৫ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।
[121] . ফিক্বহুস্ সুন্নাহ ১/১২৩; আবুদাঊদ, তিরমিযী, নায়লুল আওত্বার ৩/১২১।
[122] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, বুখারী, মিশকাত হা/৭৯২ অনুচ্ছেদ-১০, হা/৮৮৮ অনুচ্ছেদ-১৪।
[123] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৯১ অনুচ্ছেদ-১৪।
[124] . আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮০১।
[125] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৮৮৮ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।
[126] . মুসলিম, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৮৯০।
[127] . বুখারী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২, ৮০১।
[128] . সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম হা/২৮২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য, ‘সিজদার অঙ্গ সমূহ’ অধ্যায়, ১/৩৭৩ পৃঃ ; যঈফুল জামে‘ হা/৬৪৩; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৬৫২।
[129] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪, অনুচ্ছেদ-১৪, হা/৮৭৩, অনুচ্ছেদ-১৩; নায়ল ৩/১০৯; মির‘আত ১/৬৩৫; ঐ, ৩/২২১-২২।
[130] . ইবনু মাজাহ হা/৮৮৮; আহমাদ, আবুদাঊদ, প্রভৃতি, ছিফাত পৃঃ ১১৩, ১২৭।
[131] . আবুদাঊদ হা/৮৮৮; নাসাঈ, মিশকাত হা/৮৮৩।
[132] . নাসাঈ, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৬।

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ

দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আঃ

اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاجْبُرْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াজ্বুরনী ওয়াহদিনী ওয়া ‘আ-ফেনী ওয়ারঝুক্বনী ।

অনুবাদ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপরে রহম করুন, আমার অবস্থার সংশোধন করুন, আমাকে সৎপথ প্রদর্শন করুন, আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমাকে রূযী দান করুন’।

অথবা কমপক্ষে ২ বার বলবে ‘রব্বিগফিরলী’ (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর)। [133] অতঃপর ২য় সিজদা করবে ও দো‘আ পড়বে।
[133] . ইবনু মাজাহ হা/৮৯৭; নাসাঈ, দারেমী, মিশকাত হা/৯০১, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘সিজদা ও উহার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪।

জালসায়ে ইস্তেরা-হা

২য় ও ৪র্থ রাক‘আতে দাঁড়াবার প্রাক্কালে সিজদা থেকে উঠে সামান্য সময়ের জন্য স্থির হয়ে বসা সুন্নাত। একে ‘জালসায়ে ইস্তেরা-হাত’ বা স্বস্তির বৈঠক বলে। যেমন হাদীছে এসেছে,

عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّهُ رَأَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّيْ فَإِذَا كَانَ فِيْ وِتْرٍ مِّنْ صَلاَتِهِ لَمْ يَنْهَضْ حَتَّى يَسْتَوِيَ قَاعِدًا رواه البخارىُّ-

অর্থাৎ ‘ছালাতের মধ্যে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বেজোড় রাক‘আতে পৌঁছতেন, তখন দাঁড়াতেন না যতক্ষণ না সুস্থির হয়ে বসতেন’। [134] একই রাবীর অন্য বর্ণনায় এসেছে,

وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ عَنِ السَّجْدَةِ الثَّانِيَةِ جَلَسَ وَاعْتَمَدَ عَلَى الْأَرْضِ ثُمَّ قَامَ
‘যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দ্বিতীয় সিজদা হ’তে মাথা উঠাতেন তখন বসতেন এবং মাটির উপরে (দু’হাতে) ভর দিতেন। অতঃপর দাঁড়াতেন’। [135]

‘হাতের উপরে ভর না দিয়ে তীরের মত সোজা দাঁড়িয়ে যেতেন’ বলে ‘ত্বাবারাণী কাবীরে’ বর্ণিত হাদীছটি ‘মওযূ’ বা জাল এবং উক্ত মর্মে বর্ণিত সকল হাদীছই ‘যঈফ’। [136]

ইসহাক্ব বিন রাহ্ওয়াইহ বলেন, যুবক হৌক বা বৃদ্ধ হৌক রাসূল (ছাঃ) থেকে এ সুন্নাত জারি আছে যে, তিনি প্রথমে মাটিতে দু’হাতে ভর দিতেন। অতঃপর দাঁড়াতেন। দশজন ছাহাবী কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে সত্যায়ন প্রাপ্ত আবু হুমায়েদ সা‘এদী (রাঃ) প্রদর্শিত ছালাতের প্রসিদ্ধ হাদীছেও এর স্পষ্ট দলীল রয়েছে। [137]

[134] . বুখারী, মিশকাত হা/৭৯৬, অনুচ্ছেদ-১০; নায়ল ৩/১৩৮।
[135] . বুখারী, ফাৎহ সহ হা/৮২৪, ‘ওঠার সময় কিভাবে মাটির উপরে ভর দেবে’ অনুচ্ছেদ-১৪৩, ‘আযান’ অধ্যায়-১৩, ২/৩৫৩-৫৪ পৃঃ।
[136] . ছিফাত, ১৩৭ পৃঃ ; সিলসিলা যঈফাহ হা/৫৬২, ৯২৯, ৯৬৭; নায়ল ৩/১৩৮-১৩৯।
[137] . বুখারী, ছিফাত, পৃঃ ১৩৬-৩৭ টীকা; তিরমিযী, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৮০১; ইরওয়া হা/৩০৫, ৩৬২; ২/১৩, ৮২-৮৩ পৃঃ।

সিজদার ফযীলত

(১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ : مَا مِنْ عَبْدٍ يَسْجُدُ لِلَّهِ سَجْدَةً إِلاَّ كَتَبَ اللهُ لَهُ بِهَا حَسَنَةً وَمَحَا عَنْهُ بِهَا سَيِّئَةً وَرَفَعَ لَهُ بِهَا دَرَجَةً، فَاسْتَكْثِرُوْا مِنَ السُّجُوْدِ، رواه ابنُ ماجه-

‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করে, আল্লাহ তার জন্য একটি নেকী লেখেন ও তার একটি পাপ দূর করে দেন এবং তার মর্যাদার স্তর একটি বৃদ্ধি করে দেন। অতএব তোমরা বেশী বেশী সিজদা কর’।[138]

(২) ক্বিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ঈমানদারগণকে চিনবেন তাদের সিজদার স্থান ও ওযূর অঙ্গ সমূহের ঔজ্জ্বল্য দেখে’। [139]

(৩) আল্লাহ জাহান্নামবাসীদের মধ্য থেকে কিছু লোকের উপরে অনুগ্রহ করবেন এবং ফেরেশতাদের বলবেন, যাও ঐসব লোকদের বের করে নিয়ে এসো, যারা আল্লাহর ইবাদত করেছে। অতঃপর ফেরেশতাগণ তাদের সিজদার চিহ্ন দেখে চিনে নিবেন ও বের করে আনবেন। বনু আদমের সর্বাঙ্গ আগুনে খেয়ে নিবে, সিজদার চিহ্ন ব্যতীত। কেননা আল্লাহ পাক জাহান্নামের উপরে হারাম করেছেন সিজদার চিহ্ন খেয়ে ফেলতে’।[140]

সিজদার অন্যান্য দো‘আ সমূহের কয়েকটি :

1- اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذَنْبِيْ كُلَّهُ دِقَّهُ وَجِلَّهُ وَ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ وَعَلاَنِيَتَهُ وَسِرَّهُ (مسلم)
2- سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ (مسلم)
3- اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ (النسائي والحاكم)
4- اَللَّهُمَّ إنِّيْ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَأَعُوْذُ بِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوْبَتِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ، لاَ أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ (مسلم)
5- اَللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ وَ أَنْتَ رَبِّىْ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ فَأَحْسَنَ صُوَرَهُ وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، فَتَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ (مسلم) (صفة صلاة النبي 127-129)

[138] . ইবনু মাজাহ হা/১৪২৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-২০১।
[139] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৯০ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায়-৩; মুসলিম, মিশকাত হা/২৯৮; আহমাদ হা/১৭৭২৯, ছিফাত, ১৩১ পৃঃ।
[140] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৮১ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায়-২৮, ‘হাউয ও শাফা‘আত’ অনুচ্ছেদ-৪; ছিফাত, ১৩১ পৃঃ।

শেষ বৈঠক

যে বৈঠকের শেষে সালাম ফিরাতে হয়, তাকে শেষ বৈঠক বলে। এটি ফরয, যা না করলে ছালাত বাতিল হয়। তবে ১ম বৈঠকটি ওয়াজিব, যা ভুলক্রমে না করলে সিজদায়ে সহো ওয়াজিব হয়। ২য় রাক‘আত শেষে বৈঠকে বসবে। যদি ১ম বৈঠক হয়, তবে কেবল ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ে ৩য় রাক‘আতের জন্য উঠে যাবে। [141] আর যদি শেষ বৈঠক হয়, তবে ‘আত্তাহিইয়া-তু’ পড়ার পরে দরূদ, দো‘আয়ে মাছূরাহ এবং সম্ভব হ’লে অন্য দো‘আ পড়বে।[142] ১ম বৈঠকে বাম পা পেতে তার উপরে বসবে ও শেষ বৈঠকে ডান পায়ের তলা দিয়ে বাম পায়ের অগ্রভাগ বের করে দিয়ে বাম নিতম্বের উপরে বসবে ও ডান পায়ের পাতা খাড়া রাখবে। এই সময় ডান পায়ের আঙ্গুলী সমূহের অগ্রভাগ ক্বিবলামুখী থাকবে।[143] জোড়-বেজোড় যেকোন ছালাতের সালামের বৈঠকে নারী-পুরুষ সকলকে এভাবেই বাম নিতম্বের উপর বসতে হয়। একে ‘তাওয়ার্রুক’ (التورك) বলা হয়।[144]

বৈঠকের সময় বাম হাতের আঙ্গুলগুলো বাম হাঁটুর প্রান্ত বরাবর ক্বিবলামুখী ও স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবে[145] এবং ডান হাত ৫৩ -এর ন্যায় মুষ্টিবদ্ধ থাকবে ও শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করবে।[146] বৈঠকের শুরু থেকে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ইশারা করতে থাকবে।[147] ছাহেবে মির‘আত ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (১৯০৪-৯৪ খৃ:) বলেন, আঙ্গুল ইশারার মাধ্যমে আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়।[148] দো‘আ পাঠের সময় আকাশের দিকে তাকানো নিষেধ।[149] ইশারার সময় আঙ্গুল দ্রুত নাড়ানো যাবে না, যা পাশের মুছল্লীর দৃষ্টি কেড়ে নেয়’। [150] ‘আশহাদু’ বলার সময় আঙ্গুল উঠাবে ও ইল্লাল্লা-হ’ বলার পর আঙ্গুল নামাবে’ বলে যে কথা চালু আছে তার কোন ভিত্তি নেই।[151] মুছল্লীর নযর ইশারার বাইরে যাবে না। [152] এই সময় নিম্নোক্ত দো‘আসমূহ পড়বে-

তাশাহহুদ (আত্তাহিইয়া-তু)

নবীকে সম্বোধন:
তাশাহহুদ সম্পর্কিত সকল ছহীহ মরফূ হাদীছে রাসূল (ছাঃ)-কে সম্বোধন সূচক ‘আইয়ুহান্নাবী’ শব্দ বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ কতিপয় ছাহাবী ‘আইয়ুহান্নাবী’-এর পরিবর্তে ‘আলান্নাবী’ বলতে থাকেন। যেমন বুখারী ‘ইস্তীযা-ন’ অধ্যায়ে এবং অন্যান্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। অথচ সকল ছাহাবী, তাবেঈন, মুহাদ্দেছীন, ফুক্বাহা পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ পড়েছেন। এই মতভেদের কারণ হ’ল এই যে, রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁকে সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলা গেলেও তাঁর মৃত্যুর পরে তো আর তাঁকে ঐভাবে সম্বোধন করা যায় না। কেননা সরাসরি এরূপ গায়েবী সম্বোধন কেবল আল্লাহকেই করা যায়। মৃত্যুর পরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে এভাবে সম্বোধন করলে তাঁকে আল্লাহ সাব্যস্ত করা হয়ে যায়। সেকারণ কিছু সংখ্যক ছাহাবী ‘আলান্নাবী’ অর্থাৎ ‘নবীর উপরে’ বলতে থাকেন।

পক্ষান্তরে অন্য সকল ছাহাবী পূর্বের ন্যায় ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতে থাকেন। ত্বীবী (মৃ: ৭৪৩ হিঃ) বলেন, এটা এজন্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁদেরকে উক্ত শব্দেই ‘তাশাহহুদ’ শিক্ষা দিয়েছিলেন। তার কোন অংশ তাঁর মৃত্যুর পরে পরিবর্তন করতে বলে যাননি। অতএব ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত শব্দ পরিবর্তনে রাযী হননি। ছাহেবে মির‘আত বলেন, জীবিত-মৃত কিংবা উপস্থিতি-অনুপস্থিতির বিষয়টি ধর্তব্য নয়। কেননা স্বীয় জীবদ্দশায়ও তিনি বহু সময় ছাহাবীদের থেকে দূরে সফরে বা জিহাদের ময়দানে থাকতেন। তবুও তারা তাশাহহুদে নবীকে উক্ত সম্বোধন করে ‘আইয়ুহান্নাবী’ বলতেন। তারা তাঁর উপস্থিতি বা অনুপস্থিতিতে উক্ত সম্বোধনে কোন হেরফের করতেন না। তাছাড়া বিষয়টি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য ‘খাছ’ বিষয়াবলীর (من خصائصه) অন্তর্ভুক্ত। এটা স্রেফ তাশাহহুদের মধ্যেই পড়া যাবে, অন্য সময় নয়।

উল্লেখ্য যে, এই সম্বোধনের মধ্যে কবর পূজারীদের জন্য কোন সুযোগ নেই। তারা এই হাদীছের দ্বারা রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বত্র হাযির-নাযির প্রমাণ করতে চায় [153] ও মনোবাসনা পূর্ণ করার জন্য তাঁকে ‘অসীলা’ হিসাবে গ্রহণ করতে চায়। এটা পরিষ্কারভাবে ‘শিরকে আকবর’ বা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
এরপর দরূদ পাঠ করবে।

দরূদ

জ্ঞাতব্য : দরূদে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারকে ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর পরিবারের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এর ফলে মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে মনে হ’লেও প্রকৃত অর্থে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কেননা মুহাম্মাদ (ছাঃ) স্বয়ং ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর এবং মানব জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ও সর্বশেষ রাসূল। পিতা ইবরাহীমের সাথে সন্তান হিসাবে তাঁর তুলনা মোটেই অমর্যাদাকর নয়। দ্বিতীয়ত: ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশে হাযার হাযার নবী ছিলেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গের মধ্যে কোন নবী না থাকা সত্ত্বেও তাঁদেরকে অগণিত নবী-রাসূল সমৃদ্ধ মহা সম্মানিত ইবরাহীমী বংশের সাথে তুলনা করার মাধ্যমে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারের মর্যাদা নিঃসন্দেহে বৃদ্ধি করা হয়েছে।[154]

দরূদ -এর ফযীলত

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন,

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلاةً وَاحِدَةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ عَشْرَ صَلَوَاتٍ وَحُطَّتْ عَنْهُ عَشْرُ خَطِيْئَاتٍ وَ رُفِعَتْ لَهُ عَشْرُ دَرَجَاتٍ، رواه النسائيُّ-

‘যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে, আল্লাহ তার উপরে দশটি রহমত নাযিল করেন। তার আমলনামা হ’তে দশটি গুনাহ ঝরে পড়ে ও তার সম্মানের স্তর আল্লাহর নিকটে দশগুণ বৃদ্ধি পায়’।[155]

অতঃপর নিম্নের দো‘আ পাঠ করবে, যা ‘দো‘আয়ে মাছূরাহ’ নামে পরিচিত। এতদ্ব্যতীত জানা মত অন্যান্য দো‘আ পড়বে। এই সময় কুরআনী দো‘আও পড়া যাবে।

দো‘আয়ে মাছূরাহ

এর পর অন্যান্য দো‘আ সমূহ পড়তে পারে।
তাশাহহুদের শেষে নিম্নোক্ত দো‘আটি পাঠ করার জন্য বিশেষভাবে তাকীদ এসেছে -

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ -

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-বি জাহান্নামা ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ‘আযা-বিল ক্বাব্রে, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিল মাসীহিদ্ দাজ্জা-লি, ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন ফিৎনাতিল মাহ্ইয়া ওয়াল মামা-তি।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করছি জাহান্নামের আযাব হ’তে, কবরের আযাব হ’তে, দাজ্জালের ফিৎনা হ’তে এবং জীবন ও মৃত্যুকালীন ফিৎনা হ’তে’। [157]

তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যেকার দো‘আ সমূহের শেষে আললাহর রাসূল (ছাঃ) নিম্নের দো‘আ পড়তেন :

اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ لآ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ

(১) উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাগফিরলী মা ক্বাদ্দামতু অমা আখখারতু, অমা আসরারতু অমা আ‘লানতু, অমা আসরাফতু, অমা আনতা আ‘লামু বিহী মিন্নী; আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা’ ।

অনুবাদ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পূর্বাপর গোপন ও প্রকাশ্য সকল গোনাহ মাফ কর (এবং মাফ কর ঐসব গোনাহ) যাতে আমি বাড়াবাড়ি করেছি এবং ঐসব গোনাহ যে বিষয়ে তুমি আমার চাইতে বেশী জানো। তুমি অগ্র-পশ্চাতের মালিক। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই’।[158]

(২) اَللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনান্না-র’ (হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি)।[159]

তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে দো‘আ বিষয়ে জ্ঞাতব্য:
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাশাহ্হুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বিভিন্ন দো‘আ পড়তেন।[160] ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বর্ণিত তাশাহহুদে (অর্থাৎ আত্তাহিইয়াতু)-এর শেষে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ثُمَّ لِيَتَخَيَّرْ مِنَ الدُّعَاءِ أَعْجَبَهُ إِلَيْهِ فَيَدْعُوْهُ- ‘অতঃপর দো‘আ সমূহের মধ্যে যে দো‘আ সে পসন্দ করে, তা করবে’।[161] এ কথার ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের মধ্যে একদল বলেছেন, এ সময় গোনাহ নেই এবং আদবের খেলাফ নয়, দুনিয়া ও আখেরাতের এমন সকল প্রকার দো‘আ করা যাবে। পক্ষান্তরে অন্যদল বলেছেন, কুরআন-হাদীছে বর্ণিত দো‘আ সমূহের মাধ্যমেই কেবল প্রার্থনা করতে হবে। কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আমাদের এই ছালাতে মানুষের সাধারণ কথা-বার্তা বলা চলে না। এটি কেবল তাসবীহ, তাকবীর ও কুরআন পাঠ মাত্র’।[162]

বর্ণিত উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য এটাই হ’তে পারে যে, অন্যের উদ্দেশ্যে নয় এবং আদবের খেলাফ নয়, আল্লাহর নিকট এমন সকল দো‘আ করা যাবে। তবে ছালাতের পুরা অনুষ্ঠানটিই যেহেতু আরবী ভাষায়, সেহেতু অনারবদের জন্য নিজেদের তৈরী করা আরবীতে প্রার্থনা করা নিরাপদ নয়। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় সকলের জন্য হাদীছের দো‘আ পাঠ করাই উত্তম। কিন্তু যখন দো‘আ জানা থাকে না, তখন তার জন্য সবচেয়ে উত্তম হবে প্রচলিত দো‘আয়ে মাছূরাহ (আল্লা-হুম্মা ইন্নী যালামতু...) শেষে নিম্নের দো‘আটির ন্যায় যে কোন একটি সারগর্ভ দো‘আ পাঠ করা, যা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রয়োজনকে শামিল করে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ দো‘আটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অধিকাংশ সময় পড়তেন।-

اَللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ، أو اَللَّهُمَّ آتِنَا فِى الدُّنْيَا...

আল্লা-হুম্মা রববানা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাঁও ওয়া ফিল আ-খিরাতে হাসানাতাঁও ওয়া ক্বিনা আযা-বান্না-র’ । অথবা আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া ..।

‘হে আল্লাহ! হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি আমাদেরকে দুনিয়াতে মঙ্গল দাও ও আখেরাতে মঙ্গল দাও এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে বাঁচাও’। [163] এ সময় দুনিয়াবী চাহিদার বিষয়গুলি নিয়তের মধ্যে শামিল করবে। কেননা আল্লাহ বান্দার অন্তরের খবর রাখেন ও তার হৃদয়ের কান্না শোনেন’।[164] দো‘আর সময় নির্দিষ্টভাবে কোন বিষয়ে নাম না করাই ভাল। কেননা ভবিষ্যতে বান্দার কিসে মঙ্গল আছে, সেটা আল্লাহ ভাল জানেন।[165]

সালাম

দো‘আয়ে মাছূরাহ ও অন্যান্য দো‘আ শেষে ডাইনে ও বামে ‘আস্সালা-মু আলায়কুম ওয়া রাহমাতুল্লা-হ’ বলবে।[166] কেবল ডাইনে সালামের শেষদিকে ‘ওয়া বারাকা-তুহূ’ বৃদ্ধি করা যাবে। [167] দু’দিকে নয়।[168] অতঃপর একবার সরবে ‘আল্লা-হু আকবার’[169] এবং তিনবার ‘আসতাগ্ফিরুল্লা-হ’ ও একবার‘আল্লা-হুম্মা আনতাস সালা-মু ওয়া মিনকাস সালা-মু, তাবা-রক্তা ইয়া যাল জালা-লে ওয়াল ইকরা-ম’ বলবে। এটুকু পড়েই উঠে যেতে পারে।[170] অতঃপর ডাইনে অথবা বামে ঘুরে সরাসরি মুক্তাদীগণের দিকে ফিরে বসবে। [171] ডান দিক দিয়ে ফেরার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনো পড়েছেন, رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ ‘রবেব ক্বিনী আযা-বাকা ইয়াওমা তাব‘আছু ইবা-দাকা’ (হে আমার প্রতিপালক! তোমার আযাব হ’তে আমাকে বাঁচাও! যেদিন তোমার বান্দাদের তুমি পুনরুত্থান ঘটাবে)।[172]

[141] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯; আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯১৫, ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
[142] . ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯; মির‘আত ১/৭০৪; ঐ, পৃঃ ৩/২৯৪-৯৫, হা/৯৪৭, ৯৪৯।
[143] . বুখারী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৯২,৮০১; নায়ল ৩/১৪৩-৪৫ ‘তাশাহহুদে বসার নিয়ম’ অনুচ্ছেদ।
[144] . ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৮৬২,৬৭,৭৩; বুখারী হা/৮২৮, আবুদাঊদ হা/৭৩০; ঐ, মিশকাত হা/৭৯১, ৮০১।
[145] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৭ ‘তাশাহহুদ’ অনুচ্ছেদ-১৫।
[146] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯০৬, ৯০৮। ৫৩ -এর ন্যায় অর্থ কনিষ্ঠা, অনামিকা ও মধ্যমা অঙ্গুলী মুষ্টিবদ্ধ করা ও বৃদ্ধাঙ্গুলীকে তাদের সাথে মিলানো এবং শাহাদাত অঙ্গুলীকে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া।
[147] . মির‘আত ৩/২২৯; আলবানী, মিশকাত হা/৯০৬ -এর টীকা।
[148] . মির‘আত ৩/২২৯ পৃঃ।
[149] . নাসাঈ হা/১২৭৬; মুসলিম, মিশকাত হা/৯৮৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৯।
[150] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭৫৭ ‘সতর’ অনুচ্ছেদ-৮ ; মির‘আত হা/৭৬৩, ১/৬৬৯ পৃঃ, ঐ, ২/৪৭৩ পৃঃ।
[151] . আলবানী, মিশকাত হা/৯০৬-এর টীকা-২ দ্রষ্টব্য; ঐ, ছিফাতু ছালা-তিন্নবী, পৃঃ ১৪০; মির‘আত ৩/২২৯।
[152] . আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯১৭, ৯১১; আবুদাঊদ হা/৯৯০; নাসাঈ হা/১২৭৫; মিশকাত হা/৯১২।

* ক্বাযী ‘আয়ায (৪৭৬-৫৪৪ হিঃ) বলেন, আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য এবং শেষনবীর রিসালাতের সাক্ষ্য শামিল থাকায় অন্য দো‘আ সমূহের উপর প্রাধান্যের কারণে যিকরের এই বিশেষ অনুষ্ঠানটিকে সামষ্টিক ভাবে তাশাহহুদ বলা হয়’। -মির‘আত ৩/২২৭।

[153] . মির‘আত ১/৬৬৪-৬৫; ঐ, ৩/২৩৩-৩৪, হা/৯১৫ -এর ভাষ্য দ্রঃ।
[154] . মির‘আত ১/৬৭৮-৬৮০; ঐ, ৩/২৫৩-৫৫।
[155] . নাসাঈ, মিশকাত হা/৯২২, ‘নবীর উপরে দরূদ ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৬।
[156] . ‘মাছূরাহ’ অর্থ ‘হাদীছে বর্ণিত’। সেই হিসাবে হাদীছে বর্ণিত সকল দো‘আই মাছূরাহ। কেবলমাত্র অত্র দো‘আটি নয়। তবে এ দো‘আটিই এদেশে ‘দো‘আয়ে মাছূরাহ’ হিসাবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। -লেখক।
[157] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪০-৪১।
[158] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘তাকবীরের পরে কি পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।
[159] . আবুদাঊদ হা/৭৯৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১২৮; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৮৬৫।
[160] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১; নববী, রিয়াযুছ ছালেহীন ‘যিকর’ অধ্যায় হা/১৪২৪।
[161] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯০৯; মির‘আত হা/৯১৫, ৩/২৩৫।
[162] . মুসলিম, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৭৮ ‘ছালাতের মাঝে যে সকল কাজ অসিদ্ধ এবং যা সিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-১৯ ; মির‘আত হা/৯৮৫, ৩/৩৩৯-৪০ পৃঃ।
[163] . বুখারী হা/৪৫২২, ৬৩৮৯; বাক্বারাহ ২/২০১; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৮৭ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯।
[164] . আলে ইমরান ৩/১১৯, ৩৮; ইবরাহীম ১৪/৩৯; গাফির/মুমিন ৪০/১৯।
[165] . বাক্বারাহ ২/২১৬।
[166] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৯৫০, ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।
[167] . আবুদাঊদ, ইবনু খুযায়মা, ছিফাত, পৃঃ ১৬৮।
[168] . আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১৭১ পৃঃ।
[169] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৫৯; বুখারী ফাৎহসহ হা/৮৪১-৪২।
[170] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০, ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[171] . বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪৪-৪৬; মির‘আত হা/৯৫১-৫৪ -এর ব্যাখ্যা, ৩/৩০০-০৪।
[172] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪৭ ‘তাশাহহুদে দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-১৭।

সালাত পরবর্তী যিকর সমূহ

(1) اَللهُ أَكْبَرُ، أَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ، اَسْتَغْفِرُ اللهَ-

উচ্চারণ: ১. আল্লা-হু আকবার (একবার সরবে)। আস্তাগফিরুল্লা-হ, আসতাগফিরুল্লা-হ, আস্তাগফিরুল্লা-হ (তিনবার)।

অর্থ: আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।[173]

(2) اَللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَ الْإِكْرَامِ.

২. আল্লা-হুম্মা আন্‌তাস্ সালা-মু ওয়া মিনকাস্ সালা-মু, তাবা-রক্‌তা ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, আপনার থেকেই আসে শান্তি। বরকতময় আপনি, হে মর্যাদা ও সম্মানের মালিক’। ‘এটুকু পড়েই ইমাম উঠে যেতে পারেন’। [174]

এই সময় তিনি তাঁর স্থান থেকে একটু সরে গিয়ে সুন্নাত পড়বেন, যাতে দুই স্থানের মাটি ক্বিয়ামতের দিন তার ইবাদতের সাক্ষ্য দেয়। যেমন আল্লাহ বলেন, يَوْمَئِذٍ تُحَدِّثُ أَخْبَارَهَا ‘ক্বিয়ামতের দিন মাটি তার সকল বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে’।[175]

(3) لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ، لاَحَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إلاَّ بِاللهِ- اَللَّهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَ شُكْرِكَ وَ حُسْنِ عِبَادَتِكَ، اَللَّهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ-

৩. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ (উঁচুস্বরে)।[176] আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনে ‘ইবা-দাতিকা। আল্লা-হুম্মা লা মা-নে‘আ লেমা আ‘ত্বায়তা অলা মু‘ত্বিয়া লেমা মানা‘তা অলা ইয়ান্ফা‘উ যাল জাদ্দে মিনকাল জাদ্দু।

অর্থ : নেই কোন উপাস্য আল্লাহ ব্যতীত, যিনি একক ও শরীকবিহীন। তাঁরই জন্য সকল রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী। নেই কোন ক্ষমতা, নেই কোন শক্তি, আল্লাহ ব্যতীত’।[177] ‘হে আল্লাহ! আপনাকে স্মরণ করার জন্য, আপনার শুকরিয়া আদায় করার জন্য এবং আপনার সুন্দর ইবাদত করার জন্য আমাকে সাহায্য করুন’।[178] ‘হে আল্লাহ! আপনি যা দিতে চান, তা রোধ করার কেউ নেই এবং আপনি যা রোধ করেন, তা দেওয়ার কেউ নেই। কোন সম্পদশালী ব্যক্তির সম্পদ কোন উপকার করতে পারে না আপনার রহমত ব্যতীত’। [179]

(4) رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا وَّبِالْإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ نَبِيًّا-

৪. রাযীতু বিললা-হে রববাঁও ওয়া বিল ইসলা-মে দ্বীনাঁও ওয়া বিমুহাম্মাদিন্ নাবিইয়া।

অর্থ: আমি সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম আল্লাহর উপরে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামের উপরে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদের উপরে নবী হিসাবে’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এই দো‘আ পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[180]

(5) اَللَّهُمَّ إِنِّىْ أَعُوْذُبِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ الْبُخْلِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ أَرْذَلِ الْعُمُرِ وَأَعُوْذُبِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَ عَذَابِ الْقَبْرِ-

৫. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল জুব্নে ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিনাল বুখ্লে ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন আরযালিল ‘উমুরে; ওয়া আ‘ঊযুবিকা মিন্ ফিৎনাতিদ দুন্ইয়া ওয়া ‘আযা-বিল ক্বাবরে।

অর্থঃ ‘হে আল্লাহ! (১) আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভীরুতা হ’তে (২) আশ্রয় প্রার্থনা করছি কৃপণতা হ’তে (৩) আশ্রয় প্রার্থনা করছি নিকৃষ্টতম বয়স হ’তে এবং (৪) আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুনিয়ার ফিৎনা হ’তে ও (৫) কবরের আযাব হ’তে’।[181]

(6) اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَالْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ -

৬. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিনাল হাম্মে ওয়াল হাযানে ওয়াল ‘আজঝে ওয়াল কাসালে ওয়াল জুবনে ওয়াল বুখলে ওয়া যালা‘ইদ দায়নে ওয়া গালাবাতির রিজা-লে।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখণ্ডবেদনা হ’তে, অক্ষমতা ও অলসতা হ’তে, ভীরুতা ও কৃপণতা হ’তে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হ’তে’।[182]

(7) سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ عَدَدَ خَلْقِهِ وَ رِضَا نَفْسِهِ وَ زِنَةَ عَرْشِهِ وَ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ-

৭. সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহাম্দিহী ‘আদাদা খাল্ক্বিহী ওয়া রিযা নাফ্সিহী ওয়া ঝিনাতা ‘আরশিহী ওয়া মিদা-দা কালেমা-তিহ (৩ বার)।

অর্থ : মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। তাঁর সৃষ্টিকুলের সংখ্যার সমপরিমাণ, তাঁর সত্তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ এবং তাঁর আরশের ওযন ও মহিমাময় বাক্য সমূহের ব্যাপ্তি সমপরিমাণ।[183]

(8) يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِيْنِكَ، اَللَّهُمَّ مُصَرِّفَ الْقُلُوْبِ صَرِّفْ قُلُوْبَنَا عَلَى طَاعَتِكَ-

৮. ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল কবুলূবে ছাররিফ ক্বুলূবানা ‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা।

অর্থ : হে হৃদয় সমূহের পরিবর্তনকারী! আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর দৃঢ় রাখো’। ‘হে অন্তর সমূহের রূপান্তরকারী! আমাদের অন্তর সমূহকে তোমার আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে দাও’।[184]

(9) اَللَّهُمَّ أَدْخِلْنِىْ الْجَنَّةَ وَ أَجِرْنِىْ مِنَ النَّارِ-

৯. আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)।

অর্থ : হে আল্লাহ তুমি আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাও এবং জাহান্নাম থেকে পানাহ দাও! [185]

(10) اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى-

১০. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিণা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে সুপথের নির্দেশনা, পরহেযগারিতা, পবিত্রতা ও সচ্ছলতা প্রার্থনা করছি।[186]

(11) سُبْحَانَ اللهِ، اَلْحَمْدُ ِللهِ، اَللهُ أَكْبَرُ، لآ إلهَ إلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَ لَهُ الْحَمْدُ وَ هُوَ عَلَى كُلِّ شَيْئٍ قَدِيْرٌ-

১১. সুবহা-নাল্লা-হ (৩৩ বার)। আলহাম্দুলিল্লা-হ (৩৩ বার)। আল্লাহু-আকবার (৩৩ বার)। লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ; লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লে শাইয়িন ক্বাদীর (১ বার)। অথবা আল্লা-হু আকবার (৩৪ বার)।

অর্থ : পবিত্রতাময় আল্লাহ। যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ সবার চেয়ে বড়। নেই কোন উপাস্য একক আল্লাহ ব্যতীত; তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই জন্য সমস্ত রাজত্ব ও তাঁরই জন্য যাবতীয় প্রশংসা। তিনি সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী।[187]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয ছালাতের পর উক্ত দো‘আ পাঠ করবে, তার সকল গোনাহ মাফ করা হবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়’। [188] অন্য বর্ণনায় এসেছে, তিনি আয়েশা ও ফাতেমা (রাঃ)-কে বলেন, তোমরা এ দো‘আটি প্রত্যেক ছালাতের শেষে এবং শয়নকালে পড়বে। এটাই তোমাদের জন্য একজন খাদেমের চাইতে উত্তম হবে’।[189]

(12) سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ-

১২. সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহাম্দিহী, সুব্হা-নাল্লা-হিল ‘আযীম। অথবা সকালে ও সন্ধ্যায় ১০০ বার করে ‘সুবহা-নাল্লা-হে ওয়া বেহামদিহী’ পড়বে।

অর্থ : ‘মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য। মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি মহান’। এই দো‘আ পাঠের ফলে তার সকল গোনাহ ঝরে যাবে। যদিও তা সাগরের ফেনা সমতুল্য হয়’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এই দো‘আ সম্পর্কে বলেন যে, দু’টি কালেমা রয়েছে, যা রহমানের নিকটে খুবই প্রিয়, যবানে বলতে খুবই হালকা এবং মীযানের পাল্লায় খুবই ভারী। তা হ’ল সুব্হা-নাল্লা-হি....।[190] ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর জগদ্বিখ্যাত কিতাব ছহীহুল বুখারী উপরোক্ত হাদীছ ও দো‘আর মাধ্যমে শেষ করেছেন।

(13) اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-

১৩. আয়াতুল কুরসী : আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূম। লা তা’খুযুহু সেনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতে ওয়ামা ফিল আরয। মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইন্দাহূ ইল্লা বিইয্নিহি। ইয়া‘লামু মা বায়না আয়দীহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহীতূনা বিশাইয়িম্ মিন ‘ইল্মিহী ইল্লা বিমা শা-আ; ওয়াসে‘আ কুরসিইয়ুহুস্ সামা-ওয়া-তে ওয়াল আরয; ওয়ালা ইয়াউদুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ুল ‘আযীম (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।

অর্থ : আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে যে তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হ’তে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসী[191] সমগ্র আসমান ও যমীন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক ফরয ছালাত শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠকারীর জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আর কোন বাধা থাকে না মৃত্যু ব্যতীত’ (নাসাঈ)। শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে। যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হ’তে না পারে’ (বুখারী)। [192]

(14) اَللَّهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَ أَغْنِنِىْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ-

১৪. আল্লা-হুম্মাকফিনী বেহালা-লেকা ‘আন হারা-মেকা ওয়া আগ্নিনী বেফাযলেকা ‘আম্মান সেওয়া-কা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হারাম ছাড়া হালাল দ্বারা যথেষ্ট করুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে অন্যদের থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন! রাসূল (ছাঃ) বলেন, এই দো‘আর ফলে পাহাড় পরিমাণ ঋণ থাকলেও আল্লাহ তার ঋণ মুক্তির ব্যবস্থা করে দেন’।[193]

(15) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِىْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ أَتُوْبُ إِلَيْهِ-

১৫. আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে’।

অর্থ : আমি আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। আমি অনুতপ্ত হৃদয়ে তাঁর দিকে ফিরে যাচ্ছি বা তওবা করছি’। এই দো‘আ পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়’।[194] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দৈনিক ১০০ করে বার তওবা করতেন’।[195]

১৬. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রত্যেক ছালাতের শেষে সূরা ‘ফালাক্ব’ ও ‘নাস’ পড়ার নির্দেশ দিতেন।[196] তিনি প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে মাথা ও চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন। [197]

[173] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/৯৫৯, ৯৬১ ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[174] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬০। উল্লেখ্য যে, শায়খ জাযারী বলেন, এই সাথে ‘ইলায়কা ইয়ারজি‘উস সালাম, হাইয়েনা রব্বানা বিস সালা-ম, ওয়া আদখিলনা দা-রাকা দা-রাস সালাম...’-বৃদ্ধি করার কোন ভিত্তি নেই। এটি কোন গল্পকারের সৃষ্টি। -মিশকাত আলবানী হা/৯৬১-এর টীকা দ্র:।
[175] . যিলযাল ৯৯/৪; নায়ল ৪/১০৯-১০ পৃঃ।
[176] . সালাম ফিরানোর পরে রাসূল (ছাঃ) এটুকু তাঁর সর্বোচ্চ স্বরে পড়তেন। মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৩।
[177] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৩, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাতের পর যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[178] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৪৯।
[179] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৯৬২।
[180] . আবুদাঊদ হা/১৫২৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-২, ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৩৬১।
[181] . বুখারী, মিশকাত হা/৯৬৪।
[182] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৪৫৮ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৮।
[183] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৩০১ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়, ‘তাসবীহ ও হামদ পাঠের ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ-৩; আবুদাঊদ হা/১৫০৩।
[184] . তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/১০২ ‘ঈমান’ অধ্যায়-১, ‘তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ-৩; মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯।
[185] . তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/২৪৭৮ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘আশ্রয় প্রার্থনা’ অনুচ্ছেদ-৮।
[186] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৮৪ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সারগর্ভ দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৯।
[187] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৬, ৯৬৭, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[188] . মুসলিম, মিশকাত হা/৯৬৭।
[189] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৮৭-৮৮ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘সকালে, সন্ধ্যায় ও শয়নকালে কি দো‘আ পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ- ৬।
[190] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২২৯৬-৯৮, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘তাসবীহ, তাহমীদ, তাহলীল ও তাকবীর পাঠের ছওয়াব’ অনুচ্ছেদ-৩; বুখারী হা/৭৫৬৩ ‘তাওহীদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৫৮।
[191] . ইবনু কাছীর বলেন, সঠিক কথা এই যে, কুরসী ও আরশ পৃথক বস্ত্ত এবং আরশ কুরসী হ’তে বড়, বিভিন্ন হাদীছ ও আছার থেকে যা প্রমাণিত হয়’ (ঐ, তাফসীর)। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, কুরসীর তুলনায় সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী ময়দানে পড়ে থাকা একটি ছোট লোহার বেড়ীর ন্যায়। আরশের তুলনায় কুরসী একই রূপ ছোট হিসাবে গণ্য। - ইবনু কাছীর, তাফসীর বাক্বারাহ ২/২৫৫; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১০৯।
[192] . নাসাঈ কুবরা হা/৯৯২৮, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৯৭২; মিশকাত হা/৯৭৪, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, অনুচ্ছেদ-১৮; মুসলিম, বুখারী, মিশকাত হা/২১২২-২৩ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮।
[193] . তিরমিযী, বায়হাক্বী (দা‘ওয়াতুল কাবীর), মিশকাত হা/২৪৪৯, ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দো‘আ’ অনুচ্ছেদ-৭ ; ছহীহাহ হা/২৬৬।
[194] . তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/২৩৫৩ ‘দো‘আসমূহ’ অধ্যায়-৯, ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।
[195] . মুসলিম, মিশকাত হা/২৩২৫ ‘ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করা’ অনুচ্ছেদ-৪।
[196] . আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, মিশকাত হা/৯৬৯, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘ছালাত পরবর্তী যিকর’ অনুচ্ছেদ-১৮।
[197] . মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২১৩২ ‘কুরআনের ফাযায়েল’ অধ্যায়-৮।

মুনাজাত

‘মুনাজাত’ অর্থ ‘পরস্পরে গোপনে কথা বলা’ (আল-মুনজিদ প্রভৃতি)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا صَلَّى يُنَاجِىْ رَبَّهُ ‘তোমাদের কেউ যখন ছালাতে রত থাকে, তখন সে তার প্রভুর সাথে ‘মুনাজাত’ করে অর্থাৎ গোপনে কথা বলে’।[198] তাই ছালাত কোন ধ্যান (Meditation) নয়, বরং আল্লাহর কাছে বান্দার সরাসরি ক্ষমা চাওয়া ও প্রার্থনা নিবেদনের নাম। দুনিয়ার কাউকে যা বলা যায় না, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে বান্দা তাই-ই বলে। আল্লাহ স্বীয় বান্দার চোখের ভাষা বুঝেন ও হৃদয়ের কান্না শোনেন।

আল্লাহ বলেন, أُدْعُوْنِىْ أَسْتَجِبْ لَكُمْ ‘তোমরা আমাকে ডাক। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব’ (মুমিন/গাফির ৪০/৬০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, اَلدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ ‘দো‘আ হ’ল ইবাদত’।[199] অতএব দো‘আর পদ্ধতি সুন্নাত মোতাবেক হ’তে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কোন পদ্ধতিতে দো‘আ করেছেন, আমাদেরকে সেটা দেখতে হবে। তিনি যেভাবে প্রার্থনা করেছেন, আমাদেরকে সেভাবেই প্রার্থনা করতে হবে। তাঁর রেখে যাওয়া পদ্ধতি ছেড়ে অন্য পদ্ধতিতে দো‘আ করলে তা কবুল হওয়ার বদলে গোনাহ হওয়ারই সম্ভাবনা বেশী থাকবে।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাতের মধ্যেই দো‘আ করেছেন। তাকবীরে তাহরীমার পর থেকে সালাম ফিরানো পর্যন্ত সময়কাল হ’ল ছালাতের সময়কাল। [200] ছালাতের এই নিরিবিলি সময়ে বান্দা স্বীয় প্রভুর সাথে ‘মুনাজাত’ করে। ‘ছালাত’ অর্থ দো‘আ, ক্ষমা প্রার্থনা ইত্যাদি। ‘ছানা’ হ’তে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত ছালাতের সর্বত্র কেবল দো‘আ আর দো‘আ। অর্থ বুঝে পড়লে উক্ত দো‘আগুলির বাইরে বান্দার আর তেমন কিছুই চাওয়ার থাকে না। তবুও সালাম ফিরানোর পরে একাকী দো‘আ করার প্রশস্ত সুযোগ রয়েছে। তখন ইচ্ছামত যেকোন ভাষায় যেকোন বৈধ দো‘আ করা যায়। হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, এই দো‘আ دبر الصلاة বা সালাত শেষের দো‘আ নয়, বরং তাসবীহ-তাহলীলের মাধ্যমে عبادة ثانية বা দ্বিতীয় ইবাদত শেষের দো‘আ হিসাবে গণ্য হবে। কেননা মুছল্লী যতক্ষণ ছালাতের মধ্যে থাকে, ততক্ষণ সে তার প্রভুর সাথে গোপনে কথা বলে বা মুনাজাত করে। কিন্তু যখনই সালাম ফিরায়, তখনই সে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। [201]

সালাতে দো‘আর স্থান সমূহ : (১) ছানা বা দো‘আয়ে ইস্তেফতা-হ, যা ‘আল্লা-হুম্মা বা-‘এদ বায়নী’ দিয়ে শুরু হয় (২) শ্রেষ্ঠ দো‘আ হ’ল সূরায়ে ফাতিহার মধ্যে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ও‘ইহ্দিনাছ ছিরা-ত্বাল মুস্তাকীম’ (৩) রুকূতে ‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা...’। (৪) রুকূ হ’তে উঠার পর ক্বওমার দো‘আ ‘রববানা ওয়া লাকাল হাম্দ হাম্দান কাছীরান’... বা অন্য দো‘আ সমূহ। (৫) সিজদাতেও ‘সুবহা-নাকা আল্লা-হুম্মা’... বা অন্য দো‘আ সমূহ। (৬) দুই সিজদার মাঝে বসে ‘আল্লা-হুম্মাগ্ফিরলী...’ বলে ৬টি বিষয়ের প্রার্থনা। (৭) শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদের পরে ও সালাম ফিরানোর পূর্বে দো‘আয়ে মাছূরাহ সহ বিভিন্ন দো‘আ পড়া। এ ছাড়াও রয়েছে (৮) ক্বওমাতে দাঁড়িয়ে দো‘আয়ে কুনূতের মাধ্যমে দীর্ঘ দো‘আ করার সুযোগ।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সিজদার সময় বান্দা তার প্রভুর সর্বাধিক নিকটে পৌঁছে যায়। অতএব ঐ সময় তোমরা সাধ্যমত বেশী বেশী দো‘আ কর।[202] অন্য হাদীছে এসেছে যে, তিনি শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও সালামের মধ্যবর্তী সময়ে বেশী বেশী দো‘আ করতেন। [203] সালাম ফিরানোর পরে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ‘মুনাজাত’ বা গোপন আলাপের সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব সালাম ফিরানোর আগেই যাবতীয় দো‘আ শেষ করা উচিৎ, সালাম ফিরানোর পরে নয়। এক্ষণে যদি কেউ মুছল্লীদের নিকটে কোন ব্যাপারে বিশেষভাবে দো‘আ চান, তবে তিনি আগেই সেটা নিজে অথবা ইমামের মাধ্যমে সকলকে অবহিত করবেন। যাতে মুছল্লীগণ স্ব স্ব দো‘আর নিয়তের মধ্যে তাকেও শামিল করতে পারেন।

[198] . বুখারী (দিল্লী ছাপা) ১/৭৬ পৃঃ; মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৭১০, ‘ছালাত’ অধ্যায়-৪, ‘মসজিদ ও ছালাতের স্থানসমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭ ; إِنَّ الْمُصَلِّى يُنَاجِى رَبَّهُ আহমাদ, মিশকাত হা/৮৫৬ ‘ছালাতে ক্বিরাআত’ অনুচ্ছেদ-১২।
[199] . আহমাদ, আবুদাঊদ প্রভৃতি, মিশকাত হা/২২৩০ ‘দো‘আ সমূহ’ অধ্যায়-৯, ২য় পরিচ্ছেদ।
[200] . আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৩১২ ‘ত্বাহারৎ’ অধ্যায়-৩, ‘যা ওযূ ওয়াজিব করে’ অনুচ্ছেদ-১, পরিচ্ছেদ-২।
[201] . যা-দুল মা‘আ-দ (বৈরূত : মুওয়াসসাসাতুর রিসালাহ, ২৯তম সংস্করণ ১৯৯৬), ১/২৫০।
[202] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮৯৪ ‘সিজদা ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১৪ ; নায়ল ৩/১০৯ পৃঃ।
[203] . মুসলিম, মিশকাত হা/৮১৩ ‘তাকবীরের পর যা পড়তে হয়’ অনুচ্ছেদ-১১।




******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url