সাহাবাগণের জীবনকথা-২৬ || হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা)-এর জীবনী (১০ম পর্ব)





হাদীস শাস্ত্রে আয়িশা (রা) এর পান্ডিত্য

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাস্তব সত্তাই হচ্ছে মূলত ইলমে হাদীসের বিষয়বস্তু। এই কারণে যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সবচেয়ে বেশি নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়েছিলেন, হিজরাতের তিন বছর পূর্বে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিজরাতের পরে অবশ্য ছয় মাসের জন্য স্বামীর দীদার থেকে মাহরূম থাকেন। মদীনায় আসার অল্প কিছুদিন পর স্বামীর ঘরে চলে যান, তারপর থেকে আর বিচ্ছিন্ন হননি। তাঁর শৈশব জীবনেই ইসলামের প্রথম পর্বটি অতিবাহিত হয়। কিন্তু তা হলে কি হবে, তাঁর স্বাভাবগত মেধা ও স্মৃতিশক্তি সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেগমদের মধ্যে একমাত্র হযরত সাওদা (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে সহাবস্থানের ব্যাপারে হযরত ‘আয়িশা (রা) ছিলেন বয়োবৃদ্ধ। তাঁর দৈহিক ও মানসিক শক্তি ক্ষয়িষ্ণু হতে চলেছিল। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের কয়েক বছর পূর্বেই তিনি স্বামী সেবায় অক্ষম হয়ে পড়েছিলেন। অপর দিকে হযরত ‘আয়িশা (রা) ছিলেন উঠতি বয়সের এক নারী। সেই বয়সে দিন দিন তাঁর বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার উন্নতি ঘটছিল। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পার্থিব জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি সেবার সুযোগ লাভ করেন। এই কারণে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সার্বিক অবস্থা এবং শরীয়াতের যাবতীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে তাঁর অবগতির ছিল সবার চেয়ে বেশি।

হযরত সাওদা (রা) ছাড়া অন্য বেগমগণ হযরত ‘আয়িশার (রা) পরে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে বিয়ের বাঁধনে আবদ্ধ হন। যেহেতু হযরত সাওদা (রা) বার্ধক্যের কারণে নিজের বারির দিনটি হযরত ‘আয়িশা (রা) কে দান করেন, তাই অন্যরা যখন প্রতি আট দিনে একদিন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একান্ত সান্নিধ্য লাভের সুযোগ পেতেন তখন হযরত ‘আয়িশা (রা) পেতেন দুইদিন। আর যে মসজিদ ছিল আল্লাহর রাসূলের (রা) গণশিক্ষাকেন্দ্র, সৌভাগ্যক্রমে হযরত ‘আয়িশার (রা) ঘরটি ছিল তারই সাথে। এই সকল কারণে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস ও জীবনধারা সম্পর্কে অবগতির ব্যাপারে বেগমগনের কেউই হযরত ‘আয়িশার (রা) সমকক্ষতা অর্জন করতে পারেননি।

হযরত ‘আয়িশা (রা) বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা এত বেশি যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেগমগণ তথা সকল মহিলা সাহাবীদের শুধু নন হাতে গোনা চার-পাঁচজন পুরুষ সাহাবী ছাড়া আর কেউই তাঁর সমকক্ষতা দাবি করতে পারেন না। হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা), হযরত ‘উমার (রা), হযরত ‘উসমান (রা), হযরত ‘আলী (রা) প্রমুখের মত বড় বড় সাহাবীরা তাঁদের দীর্ঘ সুহবত বা সাহচার্য, তীক্ষ্ণ বোধ ও মেধা শক্তি ইত্যাদি কারণে ‘আয়িশা (রা) থেকে মর্যাদার দিক দিয়ে অনেক উর্ধ্বে ছিলেন। তবে একজন স্ত্রী স্বাভাবিকভাবে স্বামী সম্পর্কে এক মাসে যতটুকু জ্ঞান লাভ করতে পারে, আত্মীয়-বন্ধুরা বহু বছরেও তা পারে না। অন্যদিকে উল্লেখিত উঁচু স্তরের সাহাবীরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের পর পরই খিলাফতের গুরু দায়িত্ব পালনে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তাই তাঁরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীস বর্ণনার সময় ও সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন। তারপরেও তাঁদের বর্ণিত হাদীস বা সংরক্ষিত আছে তা বিচার ও বিধি বিধান সংক্রান্ত। সেগুলিই আমাদের ফিকাহ শাস্ত্রের ভিত্তি। মূলত হাদীস বর্ণনার মূল দায়িত্ব পালন করেছেন যাঁরা খিলাফত পরিচালনার দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিলেন।

তাছাড়া ঐসকল উঁচু মর্যাদার সাহাবীর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা এত কম হওয়ার আরো একটি কারণ আছে। তাঁদের যুগ ছিল পূর্ণভাবে সাহাবীদের যুগ। সে সময় একজনের অন্যজনের নিকট রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণী বা কর্ম সম্পর্কে প্রশ্নকরার খুব কমই প্রয়োজন পড়তো। সুতরাং হাদীস বর্ণনার সুযোগও হতো অতি অল্প। যাঁরা রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দেখেননি বা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুগ লাভ করেননি সেই পরবর্তী প্রজন্ম হলেন তাবে‘ঈন। মূলত তাঁদের যুগ শুরু হয় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের বিশ-পঁচিশ বছর পরে। তাঁরাই রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন সম্পর্কে খুঁটিয়ে জানতে চাইতেন। কিন্তু তখন ঐসব উঁচু স্তরের সাহাবী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। অন্যদিকে অল্পবয়সী সাহাবীরা তখণ জীবনের মধ্য অথবা শেষ স্তরে এসে পৌছেছেন। তাঁরাই রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবন ও কর্ম সম্পর্কে তাবে‘ঈদের জানার তৃষ্ণা মিটিয়েছেন। এ কারণে অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে যে সকল সাহাবীর নাম হাদীসের গ্রন্থসমূহে দেখা যায় তাঁরা প্রায় সকলে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাতের সময়ে কম বয়সী সাহাবী।

যে সকল সাহাবীর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা এক হাজারের ঊর্ধ্বে তাঁরা হলেন মাত্র সাতজন। নিম্নে তাঁদের নাম ও বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা উল্লেখ করা হলোঃ

১। হযরত আবু হুরাইরাহ (রা) ৫৩৬৪ টি হাদীস
২। হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা) ২৬৬০ টি হাদীস
৩। হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রা) ২৬৩০ টি হাদীস
৪। হযরত জাবির ইবন ‘আবদিল্লাহ (রা) ২৫৪০ টি হাদীস
৫। হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) ২৬৮৬ টি হাদীস
৬। হযরত আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী (রা) ২২৭০ টি হাদীস
৭। হযরত ‘আয়িশা সিদ্দীকা (রা) ২২১০ টি হাদীস

উপরে উল্লেখিত নামের পাশের সংখ্যা অনুযায়ী হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে হযরত ‘আয়িশার (রা) স্থান সপ্তম। অবশ্য এই তালিকাটি সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অনেকের মতে হযরত আবু হুরাইরাহ (রা) ও হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা) ছাড়া আর কেউ হযরত ‘আয়িশা (রা) চেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেননি। তাঁদের মতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে হযরত ‘আয়িশার (রা) স্থান তৃতীয়।

অধিক হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে যাঁদের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁদেরকে অধিকাংশ উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশার (রা) ইনতিকালের পরেও জীবিত ছিলেন। সুতরাং তাঁদের বর্ণনার ধারাবাহিকতা আরো কিছুকাল অব্যাহত ছিল। পুরুষদের তুলনায় হযরত ‘আয়িশার (রা) অতিরিক্ত কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল। যেমন তিনি ছিলেন একজন পর্দাানশীল নারী। পুরুষ বর্ণনাকারীদের মত প্রতিটি মজলিসে উপস্থিত থাকতে পারতেন না এবং শিক্ষার্থীরাও ইচ্ছা করলেই যখন তখন তাঁর কাছে যেতে পারতো না। অন্যদের মত তিনি তৎকালীন ইসলামী খিলাফতের বড় বড় শহরসমূহে যাওয়ার সুযোগ পাননি। পুরুষ বর্ণনাকারীদের মত তিনি যদি সকল পুযোগ-সুবিধা লাভ করতে সমর্থ হতেন তাহলে তাঁরই স্থান হতো সবার উপরে।

পূর্বের আলোচনা থেকে জানা গেছে, হযরত ‘আয়িশার (রা) সর্বমোট বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা দুই হাজার দুইশো দশ (২২১০)। তার মধ্যে সহীহাইন-বুখারী ও মুসলিমে ২৮৬টি হাদীস সংকলিত হয়েছে। ১৭৪টি মুত্তাফাক আলাইহি, ৫৩টি শুধু বুখারীতে এবং ৬৯টি মুসলিমে এককভাবে বর্ণিত হয়েছে। এই হিসেবে বুখারীতে সর্বমোট ২২৮টি এবং মুসলিম ২৪৩টি হাদীস এসেছে। এছাড়া হযরত ‘আয়িশার (রা) অন্য হাদীসগুলি বিভিন্ন গ্রন্থে সনদ সহকারে সংকলিত হয়েছে। ইমাম আহমাদের (রা) মুসনাদের ৬ষ্ঠ খন্ডে (মিসর) হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণিত সকল হাদীস সংকলিত হয়েছে। মুসলিম উম্মার নিকট হযরত ‘আয়িশার (রা) যে উঁচু মর্যাদা ও বিরাট সম্মান তা তাঁর অধিক হাদীস বর্ণনার জন্য নয়, বরং হাদীসের গভীর ও সূক্ষ্ণ তাৎপর্য এবং মূল ভাবধারানুধাবনই প্রধান কারণ। সাহাবীদের মধ্যে অনেকেই এমন আছেন যাঁদের বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা খুবই অল্প। কিন্তু তাঁরা উঁচু স্তরের ফকীহ সাহাবীদের অন্তর্গত। যাঁরা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাণীর মূল তাৎপর্য অনুধাবন না করে যা কিছু শুনেছেন তাই বর্ণনা করে দিয়েছেন, তাঁদের বর্ণনার সংখ্যা বেশি। আমরা দেখতে পাই যে, সকল সাহাবী বেশি হাদীস বর্ণনাকরী হিসেবে প্রসিদ্ধ তাঁদের মধ্যে কেবল হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা) ও হযরত ‘আয়িশা (রা) ফকীহ ও মুজতাহিদ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন। কথিত আছে শরীয়াতের যাবতীয় আহকামের এক-চতুর্থাংশ তাঁর থেকে বর্ণিত হয়েছে। তাই আল্লামা জাহাবী বলেছেনঃ

-রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফকীহ (গভীর জ্ঞানসম্পন্ন) সাহাবীরা তাঁর কাছ থেকে জানতেন। একদল লোক তাঁর নিকট থেকেই দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন।
বর্ণনার আধিক্যের সাথে সাথে দীনের তাৎপর্যের গভীর উপলব্ধি এবং হুকুম-আহকাম বের করার প্রবল এক ক্ষমতা হযরত ‘আয়িশার (রা) মধ্যে ছিল। তাঁর বর্ণনাসমূহের এ এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, আহকাম ও ঘটনাবলী বর্ণনার সাথে সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর কারণও বলে দিয়েছেন। তাঁর বর্ণনার বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্য এখানে অন্যান্য রাবীর (বর্ণনাকারী) বর্ণনার সাথে একটি সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।

জুম‘আর দিন গোসল করা সম্পর্কে সহীহ বুখারীতে হযরত ‘আবদুল্লাহর ইবন ‘উমার (রা), হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা) ও হযরত ‘আয়িশা (রা) থেকে বর্ণনা এসেছে। এখানে তিনজনের বর্ণনার নমুনা দেয়া হলো। 

হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার বলেনঃ
-আমি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি, তোমাদের যে ব্যক্তি জুম‘আয় আসে, সে যেন অবশ্যই গোসল করে আসে।

হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা) বলেনঃ
-রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ প্রত্যেক বালিগ ব্যক্তির উপর জুম‘আর দিনের গোসল ওয়াজিব।

একই বিষয়ে হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণনা নিম্নরূপঃ
-মানুষ নিজেদের ঘর-বাড়ী থেকে এবং মদীনার বাইরের বসতি থেকে আসতো। তারা ধুলো বালির মধ্য দিয়ে আসতো। এতে তারা ঘামে ও ধুলো-বালিতে একাকার হয়ে যেত। একবার রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট অবস্থান করছেন, এমন সময় তাদেরই এক ব্যক্তি তাঁর কাছে আসে। তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা যদি এই দিনটিতে গোসল করতে তাহলে ভালো হতো।

হযরত ‘আয়িশার (রা) অন্য একটি বর্ণনা এভাবে এসেছেঃ
-লোকেরা নিজ হাতে কাজ করতো। যখন তারা জুম‘আর নামাযে যেত তখন সেই অবস্থায় চলে যেত। তখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা যদি গোসল করতে তাহলে ভালো হতো।

আমরা উপরের একই বিষযের তিনটি বর্ণনা লক্ষ্য করলাম। কি কারণে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জুম‘আর দিনে গোসলের নির্দেশ দেন, তা হযরত ‘আয়িশার (রা) স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন-যা অন্য দুইটি বর্ণনায় নেই।

একবার হযরত রাসূলে কারীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিলেন, কুরবানীর গোশত তিন দিনের মধ্যে খেয়ে শেষ করতে হবে। তিন দিনের বেশি রাখা যাবে না। হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রা) ও হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা)সহ আরো অনেক সাহাবী এই নির্দেশকে চিরস্থায়ী বলে মনে করতেন। তাঁদের অনেকে এ ধরনের কথাই লোকদের বলতেন। কিন্তু হযরত আয়িশা (রা) এটাকে চিরস্থায়ী বা অকাট্য নির্দেশ বলে মনে করতেন না। তিনি এটাকে একটা সাময়িক নির্দেশ বলে বিশ্বাস করতেন।

বিষয়টি তিনি বর্ণনা করছেন এভাবেঃ
-আমরা কুরবানীর গোশত লবণ দিয়ে রেখে দিতাম। মদীনায় আমরা ঐ গোশত রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে খাওয়া জন্য উপস্থাপন করতাম। তিনি বললেনঃ তোমরা এই গোশত তিন দিন ছাড়া খাবে না। এটা কোন চূড়ান্ত নিষেধাজ্ঞা ছিলনা। বরং তিনি চেয়েছেন মানুষ যেন এই গোশত থেকে কিছু অন্যদেরকেও খেতে দেয়।

হযরত ‘আয়িশার (রা) অন্য একটি হাদীস যো ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করেছেন, তাতে তিনি এই নিষেধাজ্ঞাও প্রকৃত কারণ বলে দিয়েছেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলোঃ উম্মুল মু’মিনীন! কুরবারীন গোশত তিন দিনের বেশি খাওয়া কি নেষেধ! তিনি বলেনঃ
-না। তবে সেই সময় কুরবানী করার লোক কম ছিল। এজন্য তিনি চান, যারা কুরবানী করতে পারেনি তাদেরকেও যেন ঐ গোশত খেতে দেয়।

ইমাম আহমাদ হাদীসটি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ
-এটা সঠিক নয় যে, কুরবানীর গোশত তিন দিন পর খাওয়া যাবে না। বরং সেই সময় খুব কম লোক কুরবানী করতে পারতো। এ কারণে তিনি এই নির্দেশ দেন যে, যারা কুরবানী করে তারা যেন তাদেরকে গোশত খেতে দেয় যারা কুরবানী করতে পারেনি।

ইমাম মুসলিম এই হাদীসটি একটি তথ্যের আকারে বর্ণনা করেছেন। যেমন, এক বছর মদীনার আশে-পাশে এবং গ্রাম এলাকায় অভাব দেখা দেয়। সেবার তিনি এই হুকুম দেন। পরের বছর যখন অভাব থাকলো না তখন ঐ হুকুম রহিত করেন।হযরত সালামা ইবন আকওয়া (রা) থেকেও এ ধরনের একটি বর্ণনা আছে।

কা‘বা ঘরে এক দিকের দেওয়ালের পরে কিছু জায়গা ছেড়ে দেয়া আছে, যাকে ‘হাতীম’ বলে। তাওয়াফের সময় ‘হাতীমকে’ বেষ্টনীর মধ্যে নিয়েই তাওয়াফ করতে হয়। মানুষের অন্তরে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, যেটি কা‘বার অংশ নয়, সেটিও তাওয়াফ করতে হবে কেন? হয়তো অনেক সাহাবী রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ে থাকবেন। কিন্তু হাদীসের গ্রন্থসমূহে তাঁদের থেকে তেমন কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না। আমরা হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণনা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাই। তিনি বলেন, আমি প্রশ্ন করিঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই দেওয়ালও কি কা‘বা ঘরের অন্তর্গত? বললেনঃ হ্যঁ! বললামঃ তাহলে নির্মাণের সময় লোকেরা এটাকে ভিতরে ঢুকিয়ে নিল না কেন? বললেনঃ তোমার স্বাজাতির হাতে পুঁজি ছিল না। তাই এটুকু বাদ দেয়। আবার প্রশ্ন করলামঃ তা কা‘বার দরজা এত উঁচুতে কেন? বললেনঃ এজন্য যে, সে যাকে ইচ্ছা ভিতরে যেতে দেবে, আর যাকে ইচ্ছা বাধা দেবে।

হযরত ‘উমার (রা) বলেন, ‘আয়িশার (রা) বর্ণনা সঠিক হলে বুঝা যায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেদিকেও স্তম্ভ দুইটি এই কারণে চুমো দেননি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন জানতেন যে, কা‘বা ঘর তার মূলভিত্তির উপর সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত নেই, তখন হযরত ইবরাহীমের (আ) শরীয়াতের পুনরুজ্জীবনকারী হিসেবে তাঁর উত্তরাধিকারী নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জানা থাকার ব্যাপারে কোন সন্দোহ নেই। তাই তিনি হযরত ‘আয়িশার (রা) প্রশ্নের উত্তরে বলেছেনঃ আয়িশা! তোমার কাওম যদি তাদের কুফরীর সময়কালের নিকটবর্তী না হতো তাহলে আমি কা‘বাকে ভেঙ্গে আবার ইবরাহীমের মূল ভিত্তির উপর নির্মাণ করতাম। যেহেতু সাধারণ আরববাসী সদ্য ইসলাম গ্রহণ করেছেন, এমতাবস্থায় নতুন করে কা‘বা গৃহ নির্মাণ করলে তারা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারতো, এই আশঙ্কায় তা করা হয়নি। এই হাদীস থেকে জানা যায় যে, অধিকতর কোন কল্যাণের ভিত্তিতে যদি শরীয়াতের কোন কাজের বাস্তাবায়নে বিলম্ব করা হয় তাহলে তা তিরস্কারযোগ্য হবে না। তবে শর্ত হচ্ছে সেই কাজটির বাস্তবায়ন যদি শরীয়াত তাৎক্ষণিকভাবে দাবী না করে।

হযরত ‘আয়িশার (রা) এই বর্ণনার ভিত্তিতে তাঁর ভাগ্নে হযরত আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা) স্বীয় খিলাফতকালে কা‘বা ঘর বাড়িয়ে ইবরাহীমের (আ) মূল ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন। হযরত ইবন যুবাইরের (রা) শাহাদাতের পর খলীফা ‘আবদুল্লাহ মালিক যখন পুনরায় মক্কার উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন তখন তিনি এ ধারণার ভিত্তিতে যে, ‘আবদুল্লাহ (রা) এ কাজ তাঁর নিজের ইজতিহাদ থেকে করেছেন, ভেঙ্গে ফেলেন এবং পূর্বের মত তৈরি করেন। কিন্তু তিনি যখন জানতে পারলেন ‘আবদুল্লাহ (রা) নিজের ইজতিহাদ থেকে নয়, বরং উম্মুল মু’মিনীনের এ বর্ণনার ভিত্তিতে করেছেন, তখন তিনি নিজের এই কাজের জন্য ভীষণ লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন।

হযরত রাসূলে কারীমের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের পর তাঁকে কোথায় দাফন করা হবে তা নিয়ে বিশিষ্ট সাহাবীদের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দেয়। একটি বর্ণনায় এসেছে, হযরত আবু বকর (রা) তখন বলেন, নবীরা যেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সেখানেই দাফন করা হয়। এ কারণে রাসূলে কারীমকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশার (রা) ঘরে, যেখানে মৃত্যুবরণ করেন, দাফন করা হয়। কিন্তু এর আসল কারণ হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণনায় পাওয়া যায়। তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্তিম রোগশয্যায় বলেন, আল্লাহ ইহুদী ও নাসারাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করুন। তারা তাদের নবীদের কবরসমূহকে উপাসনালয় বানিয়ে নিয়েছে। ‘আয়িশা (রা) বলেন, যদি এমন আশঙ্কা না থাকতো তাহলে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবর মাঠেই হতো। কিন্তু তিনি কবরকে মসজিদ বানানোর ব্যাপারে শঙ্কাবোধ করেন।মূলতঃ রাসূরুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই শঙ্কা প্রকাশের কারণেই তাঁকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের স্থলেই দাফন করা হয়।

এমনি ভাবে হিজরাতের একটি স্পষ্ট ব্যাখ্যাও বুখারী বর্ণিত ‘আয়িশার (রা) একটি হাদীস থেকে পাওয়া যায়। সাধারণভাবে হিজরাত বলতে মানুষ বুঝতো নিজের জন্মস্থান ত্যাগ করে মদীনায় এসে বসবাস করা। কিন্তু তিনি বলেন, এখন আর হিজরাত নেই। হিজরাত তো তখন ছিল যখন মানুষ নিজেদের দীন-ধর্মকে বাঁচানোর জন্য প্রাণের ভয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট আসতো। এখন তো আর সে অবস্থা নেই। সুতরাং প্রকৃত হিজরাতও হবে না। এ কারণে ইবন উমার (রা) বলতেনঃ মক্কা বিজয়ের পর আর হিজরাত নেই।

মুহাদ্দিসীন ও জারাহ ও তা‘দীল (সমালোচনা ও মূল্যায়ন) শাস্ত্রবিদদের মতে হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণিত হাদীসসমূহের মধ্যে ভুল-ভ্রান্তি তুলনামূলকভাবে খুব কম। এর বিশেষ কারণও আছে। সাধারণ সাহাবীরা হয়তো একবার রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কথা শুনতেন বা কোনকাজ করতে দেখতেন, তারপর বুবহু সেই কথা বা কাজের বর্ণনা অন্যদের নিকট দিতেন। এক্ষেত্রে হযরত ‘আয়িশার (রা) রীতি ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন কথা বা ঘটনা ভালোমত বুঝতে পারতেন, অন্যের নিকট বর্ণনা করতেন না। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কথা বা আচরণ বুঝতে অক্ষম হলে তিনি বারবার প্রশ্ন করে তা বুঝে নিতেন। হাদীসের গ্রন্থসমূহে তাঁর এ ধরনের বহু জিজ্ঞাসা বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অন্যরা এ সুযোগ খুব কমই পেতেন।

যে সকল হাদীস তিনি সরাসরি শোনেননি, বরং অন্যদের মাধ্যমে শুনেছেন, সেগুলির বর্ণনার ক্ষেত্রে দারুণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন। চূড়ান্ত রকমের যাচাই-বাছাই, বিচার-বিশ্লেষণ ও খোঁজ-খবর নেওয়ার পর পূর্ণ আস্থা হলে তখন বর্ণনা করতেন। একবার প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আ‘স (রা) তাঁকে একটি হাদীস শোনালেন। একবছর পর তিনি যখন আসলেন তখন হযরত আয়িশা (রা) এক ব্যক্তিকে তাঁর নিকট পাঠালেন সেই হাদীসটি আবার শুনে আসার জন্য। আবদুল্লাহ (রা) কোনরকম কম-বেশি ছাড়াই পূর্বের মত হাদীসটি হুবহু বর্ণনা করেন। লোকটি ফিরে এসে হাদীসটি আয়িশাকে (রা) শোনান। তিনি তখন মন্তব্য করেন, আল্লাহর কসম, ইবন আমরের কথা স্মারণ আছে।

এই মূলনীতির ভিত্তিতে তিনি যদি কারও নিকট থেকে কোন বর্ণনা গ্রহণ করতেন, আর কেউ যদি সেটি শোনার ইচ্ছা নিয়ে তাঁর কাছে আসতো, তাঁকে মূল বর্ণনাকারীর নিকট পাঠিয়ে দিতেন। আসলে উদ্দেশ্য হতো হাদীসটির বর্ণনা সূত্রের মাঝখানের মাধ্যম যতখানি সম্ভব কমিয়ে দেওয়া এবং আলী সনদে রূপান্তরিত করা। যেমন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে আসরের নামায আদায়ের পর ঘরে এসে সুন্নাত নামায আদায় করতেন। অথচ চূড়ান্ত নির্দেশ ছিল আসরের পরে আর কোন নামায নেই। কিছু লোক হযরত আয়িশার (রা) নিকট এক ব্যক্তিকে পাঠালো একথা জানার জন্য যে, তাঁর সূত্রে যে এই হাদীস বর্ণিত হচ্ছে, এর বাস্তবতা কতটুকু? তিনি বললেন, তোমরা উম্মু সালামার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। হাদীসটির আসল রাবী বা বর্ণনাকারী তিনিই। আর একবার এক ব্যক্তি তাঁকে মোযার উপর মাসেহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলেনঃ আলীর (রা) কাছে যাও। তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে সংগে থাকতেন।

হযরত ‘আয়িশা (রা) নিজের বর্ণনাসমূহকে যে কোন রকমের ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেমন যুক্ত রেখেছেন, তেমনিভাবে বহুক্ষেত্রে অন্যদের বর্ণনাসমূহও সংশোধন করে দিয়েছেন। তিনি তাঁর সমকালীনদের বর্ণনাসমূহের অতি তুচ্ছ ক্রটি-বিচ্যুতিও অত্যন্ত কঠোরভাবে পাকড়াও করতেন এবং সংশোধন করে দিতেন। মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় যা ‘ইদরাক’ নামে পরিচিত।
হযরত ‘আয়িশা (রা) বিশ্বাস করতেন, কোন বর্ণনা আল্লাহর কালামের বিরোধী হলে তা সঠিক নয়। পরবর্তীকালে হাদীস শাস্ত্র বিশারদরা এটাকে হাদীস যাচাই বাছাইরের একটি অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই মূলনীতির ভিত্তিতে হযরত ‘আয়িশা (রা) অন্যদের অনেক বর্ণনা সঠিক বলে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আর নিজের জ্ঞান অনুযায়ী সেই সব বর্ণনার প্রকৃত রহস্য ও ভাব বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবন আববাস (রা), হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রা) এবং আরও কতিপয় সাহাবী বর্ণনা করেছেনঃ “পরিবারের লোকদের কান্নার জন্য মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হয়।’’

হযরত ‘আয়িশাকে (রা) যখন এই বর্ণনাটি শোনানো হলো তখন তিনি তা মানতে অস্বীকার করলেন। বললেনঃ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কথা কক্ষনো বলেননি। ঘটনা হলো, একদিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ইহুদীর লাশের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন তার আত্মীয় স্বজনরা চিল্লাপাল্লা ও মাতম করতে আরম্ভ করেছে। তখন তিনি বলেনঃ এরা কান্নাকাটি করছে আর তার উপর শাস্তি হচ্ছে। ‘আয়িশার (রা) বক্তব্যের মর্ম হলো, শাস্তির কারণ কান্নাকাটি করা নয়। অর্থাৎ এরা মাতম করছে, আর ওদিকে মৃতব্যক্তির উপর অতীত কৃতকর্মের জন্য শাস্তি হচ্ছে। কারণ, কান্নাকাটি করা তো অন্যের কর্ম। আর অন্যের কর্মফল মৃত ব্যক্তি কেন ভোগ করবে? তাই তিনি বলেন, তোমাদের জন্য কুরাআনই যথেষ্ট। আল্লাহ বলেছেনঃ “কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।” বর্ণনাকারী ইবন আবী মুলাইকা বলেন, হযরত ইবন ‘উমার (রা) হযরত ‘আয়িশার (রা) এমন বর্ণনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা যখন শুনলেন তখন কোন উত্তর দিতে পারেননি।

ইমাম বুখারী (রা) তাঁর সহীহ গ্রন্থের আল-জানায়িয’ অধ্যায়ে পৃথক একটি অনুচ্ছেদে হযরত ‘আয়িশার (রা)ইবন ‘উমারের (রা) বর্ণনা দুইটির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, কান্নাকাটি ও মাতম করা যদি মৃত ব্যক্তির জীবিত অবস্থার অভ্যাস থেকে থাকে, আর সে যদি জীবদ্দশায় আপনজনদেরকেও এমন কাজ থেকে বিরত থাকার কথা না বলে থাকে তাহলে তাদের মাতমের আযাব তার উপর হবে। কারণ, তাদের শিক্ষা-দীক্ষার দায়িত্ব সে তাঁর জীবদ্দশায় পালন করেনি। আল্লাহ বলেনঃ “হে ঈমানদার ব্যক্তিরা! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও।” আর জীবদ্দশায় পরিবার-পরিজনকে যথাযথ শিক্ষাদান সত্ত্বেও যদি তারা মৃত ব্যক্তির জন্য মাতম করতে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আয়িশার (রা) মতই সঠিক। কারণ আল্লাহ তো বলেছেন, কেউ অপরের বোঝা বহন করব না।’ তিনি আরো বলেছেনঃ “কেউ যদি তার গুরুভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না- যদি সে নিকটবর্তী আত্মীয়ও হয়।”

প্রখ্যাত ইমাম ও মুহাদ্দিস হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন মুবারাকও ইমাম বুখারীর মত বলেছেন। তবে কেউ কেউ ইমাম বুখারীর সামঞ্জস্য চেষ্টার প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন এভাবে-কেউ যদি জীবদ্দশায় পরিবার-পরিজনের সঠিক শিক্ষা-দীক্ষার দায়িত্ব পালন না করে থাকে, তাহলে মৃত্যুর পর সে দায়িত্ব পালন না করার অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে। জীবিতদের অপরাধের শাস্তি ভোগ করবে কেন? মুজতাহিদদের মধ্যে ইমাম শাফি’ঈ ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবু হানীফা (রা) এই মাসয়ালায় হয়রত ‘আয়িশার (রা) মতের অনুসারী।

হযরত ইবন ‘আববাস (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুইবার আল্লাহ রাববুল আলামীনকে দেখেছেন। হযরত মাসরূক (রা) হযরত ‘আয়িশা (রা)কে প্রশ্ন করলেনঃ আম্মা! মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আল্লাহকে দেখেছেন? ‘আয়িশা (রা) বললেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলেছো যা শুনে আমার দেহের প্রতিটি লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। যে তোমাকে বলে যে, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহকে দেখেছেন সে মিথ্যা বলে। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেনঃ “দৃস্টিসমূহ তাঁকে বেষ্টন করতে পারে না, অবশ্য তিনি দৃষ্টিসমূহকে বেষ্টন করতে পারেন। তিনি অত্যন্ত সূক্ষ্মদর্শী, সুঅভিজ্ঞ। তারপর তিনি এই আয়তটি পাঠ করেনঃ “কোন মানুষের জন্য এমন হওয়ার নয় যে, আল্লাহ তার সাথে কথা বলবেনঃ কিন্তু ওহীর মাধ্যমে অথবা পর্দার অন্তরাল থেকে অথবা তিনি কোন দূরে পাঠাবেন। 

আরো কিছু হাদীসে হযরত ‘আয়িশার (রা) বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া যায়। সহীহ মুসিলমে সংকলিত একটি হাদীস থেকে জানা যায়, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তিনি তো নূর বা জ্যোতি। তাঁকে আমি কিভাবে দেখতে পারি। 

মুত‘আ বিয়ে যা একটি নির্দিষ্ট সময় সীমা পর্যন্ত জাহিলী যুগ এবং ইসলামের সূচনাকাল থেকে ৭ম হিজরী পর্যন্ত প্রচলিত ছিল। খায়বার বিজয়ের সময় এ জাতীয় বিয়ে হারাম ঘোষিত হয়। এরপর হযরত ইবন ‘আববাস (রা)সহ আরো কিছু লোক এই বিয়ে জায়েয আছে বলে মনে করতেন। কিন্তু সাহাবীদের গরিষ্ঠ অংশ হারাম বলে বিশ্বাস করতেন। হযরত ‘আয়িশার (রা) এক ছাত্র একদিন এই মুত‘আ বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে প্রশ্ন করে। হযরত ‘আয়িশার (রা) তার জবাব হাদীস দ্বারা দেননি। তিনি বলেন, আমার ও তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব আছে। তারপর তিনি এই আয়াতটি পাঠ করেনঃ “এবং যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভূক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবেনা।” এ কারণে এই দুই পদ্ধতি ছাড়া আর কোন পদ্ধতি জায়েয নেই। উল্লেখ্য যে, মুত‘আ বিয়ের মাধ্যমে লাভ করা নারী, স্ত্রী বা দাসী কোনটিই নয়।

হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেছেন, অবৈধ ছেলে তিনজনের মধ্যে (পিতা-মাতা ও সন্তান) নিকৃষ্টতম। একথা হযরত ‘আয়িশার (রা) কানে গেলে বলেন, এ কথা সঠিক নয়। ঘটনা হলো, একজন মুনাফিক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিন্দামন্দ করতো। লোকেরা একদিন বললোঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! লোকটি জারজ সন্তানও। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মন্তব্য করেনঃ সে তিনজনের মধ্যে অধিকতর নিকৃষ্ট। অর্থাৎ তার মা-বাবা তো শুধু অপকর্ম করেছেঃ কিন্তু তারা আল্লাহর রাসূলের নিন্দামন্দা করেনি। আর তাদের সেই অপকর্মের ফসল এই সন্তান আল্লাহর রাসূলের নিন্দামন্দা করে। সুতরাং সে তাদের থেকেও খারাপ। ‘আয়িশা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই মন্তব্য ছিল এক বিশেষ ঘটনার জন্য, সবার জন্য নয়। কারণ আল্লাহ তো বলেছেনঃ ‘কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না।’ অর্থাৎ অপরাধ মা-বাবার। সন্তান তার জন্য দায়ী হবে কেন?

বদর যুদ্ধে যে সকল কাফির নিহত হয়, তাদেরকে বদরেই একত্রে মাটি চাপা দেওয়া হয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে দাঁড়িয়ে সমাধিস্থ ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ “তোমরা কি তোমদের প্রতিপালকের ওয়াদা সত্য পেয়েছো? সাহাবীরা প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহর! আপনি মৃতদেরকে সম্বোধন করছেন? ইবন ‘উমার পিতা ‘উমার (রা) থেকে এবং আনাস ইবন মালিক আবু তালহা (রা) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা তাদের চেয়ে বেশি শুনতে পাওনা। তবে তারা জবাব দিতে পারে না।
হযরত ‘আয়িশার (রা) যখন এই বর্ণনার কথা বলা হলো, তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা নয়, বরং এই বলেছেনঃ “এখন তারা নিশ্চিতভাবে জানতে পেরেছে যে, আমি তাদেরকে যা কিছু বলতাম তা সবই সত্য।” তারপর হযরত ‘আয়িশা (রা) কুরআনের এই আয়াত দুইটি পাঠ করেনঃ “আপনি আহবান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে’ ‘আপনি কবরে, শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন।’

পরবর্তীকালে মুহাদ্দিসগণ হযরত ‘আয়িশার (রা) যুক্তি-প্রমাণ মেনে নিয়ে দুইটি বর্ণনার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেছেন। প্রখ্যাত তাবে’ঈ হযরত কাতাদা (রা) বলেনঃ বদরে নিহতদের কিছু সময়ের জন্য আল্লাহ জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মু‘জিযা হিসেবে তাদেরকে সেই সময়ের জন্য শ্রবণ শক্তি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

কোন বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে যে বর্ণনা পার্থক্য দেখা যায়, তার ভিত্তি অনেকটা তাদের বুঝার পার্থক্য। আল্লাহ প্রদত্ত এই বুঝ শক্তি ও মেধা আবার হযরত ‘আয়িশা (রা)  অনেকের চেয়ে বেশি পরিমাণে লাভ করেছিলেন। তাঁর এই অতুলনীয় বোধশক্তি ও অনুধাবন ক্ষমতা তিনি কাজে লাগান হাদীস বর্ণনা ও ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। এখানে আমরা এমন কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করছি যাতে তার তীক্ষ্ম বোধ ও বুদ্ধির ছাপ ফুটে উঠেছে।

হযরত আবু সা‘ঈদ খুদরীর (রা) জীবনসন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে নতুন কাপড় চেয়ে নিয়ে পরেন। এর কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘একজন মুসলমান যে লিবাসে (পোশাকে) মারা যায় তাকে সেই লিবাসেই উঠানো। হয়।’ একথা হযরত ‘আয়িশা (রা) জানতে পেরে বলেন, আল্লাহ আবু সা‘ঈদের উপর রহমত বর্ষণ করুন। ‘লিবাস’ বলতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বুঝাতে চেয়েছেন মানুষের ‘আমল বা কর্ম’। অন্যথায় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তো স্পষ্টভাবে বলেছন, কিয়ামতের দিন মানুষ খালি গা, খালি পা ও খালি মাথায় উঠবে।

ইসলামের নির্দেশ হলো, তালাকপ্রাপ্ত নারী স্বামীর ঘরেই ইদ্দত পালন করবে। এই নির্দেশের বিরোধী ফাতিমা নাম্নী একজন মহিলা সাহাবী তাঁর নিজের জীবনের একটি ঘটনা বর্ণনা করতেন। তিনি বলতেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ইদ্দত পালনকারীন সময়ে স্বামীর ঘর থেকে অন্যত্র যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বহু সাহাবীর সামনে প্রমাণ হিসেবে নিজের এই ঘটনা উপস্থাপন করেন। অনেকে তাঁর এই বর্ণনা গ্রহণ করেন, তবে বেশির ভাগ সাহাবী তা মানতে অস্বীকার করেন। ঘটনাক্রমে মারওয়ান যখন মদীনার গভর্নর তখন এই ধরনের একটি মোকদ্দমা দায়ের হয়। এক পক্ষ ফাতিমার বর্ণনাকে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করায়। এ কথা হযরত ‘আয়িশার (রা) জানতে পেরে ফাতিমাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করেন। তিনি বলেন, ফাতিমার এই ঘটনা বর্ণনাতে কোন কল্যাণ নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইদ্দত পালনকালীন সময়ে তাকে স্বামীর গৃহ থেকে অন্যত্র যাওয়ার অনুমতি অবশ্যই দিয়েছিলেন। তিন্তু তা এই কারণে যে, তার স্বামীর বাড়িটি ছিল একটি অনিরাপদ ও ভীতিকর স্থানে।

একধিক সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, ছাগলের বাহুর গোশত রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অধিক পছন্দ ছিল। হযরত ইবন মাস‘উদ (রা) বলেন, নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে বাহুর গোশতই বেশি পছন্দনীয় ছিল। বাহুর গোশতেই বিষ প্রয়োগ করে তাঁকে দেওয়া হয়েছিল।

আবূ ‘উবায়েদও বলেনঃ নবী (সাললাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) বাহুর গোশতই বেশি পছন্দ করতেন। কিন্তু এ ব্যাপারে হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহর (সালালাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) নিকট বাহুর গোশতই অধিক প্রিয় ছিল তা নয়, বরং প্রকৃত ব্যাপার এই যে, অনেক দিন পর পর তিনি গোশত খাওয়ার সুযোগ পেতেন। তাকে বাহুর গোশত পরিবেশন করা হতো। কেননা বাহুর গোশত দ্রুত সিদ্ধা হয় এবং গলে যায়। কোন ব্যক্তি সম্পর্কে তাঁর দীর্ঘদিনের কোন অতি ঘনিষ্ঠ ও অন্তরঙ্গ বন্ধু যত বেশিই জানুক না কেন, একজন স্ত্রী তার চেয়ে অনেক বেশিই চেনে থাকেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত গোটা দেহ ছিল প্রতিটি মুহূর্তের জন্য একটি দুষ্টান্ত ও আদর্শ স্বরূপ। এ কারণে তাঁর জীবনের প্রতিটি সময়ের প্রতিটি কর্ম আইন ও বিধানের মর্যাদা লাভ করেছে। সুতরাংয বলা চলে, তাঁর বেগমগণ তাঁর সম্পর্কে ব্যক্তিগতভাবে জানার যে সুযোগ লাভ করেন তান্যদের জন্য ছিল অসম্ভব। কিছু কিছু মাসয়ালা এমন আছে,…দেখা যায় অন্য সাহাবায়ে কিরাম সেকানে নিজ নিজ ইজতিহাদ অথবা কোন বর্ণনার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, কিন্তু হযরত ‘আয়িশার (রা) নিজের একান্ত ব্যক্তিগতাভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আজ পর্যন্ত ঐ সব মাসয়ালায় তাঁরই কথা প্রমাণ হিসেবে গৃহীত হয়ে আসছে। পাঠকদেরাবগতির জন্য এখানে স রকম কয়েকটি মাসয়ালা উরে্খ করা হলো।
হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার (রা) ফাতওয়া দিতেন, গোসলের সময় মেয়েদের চুলের খোপা খুলে চুল ভিজানো জরুরী। হযরত ‘আয়িশা (রা) একথা শুনে বললেন, তিনি মহিলাদেরকে একথা কেনবলেন দেন না যে, তারা যেন তাদের খোপা কেটে ফেলে। আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে গোসল করতাম এবং চুল খুলতাম না।
হযরত ইবন ‘উমার (রা) বলেতেন, অজু অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিলে আজু ভেঙে যায়। একথা ‘আয়িশা (রা) শুনে বললেন, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুমু খাওয়ার পর অজু করতেন না। একথা বলে তিনি মৃতু হেসে দেন।

হযরত আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করতেন, নামায আদায়কারী পুরুষের সামনে দিয়ে যদি নারী, গাধা অথবা কুকুর যায়, তাহলে পুরুষের নামায নষ্ট হয়ে যায়। হযরত ‘আয়িশা (রা) একথা শুনে রেগে যান। তিনি বলেন, আমরা, নারীদেরকে তোমরা গাধা ও কুকুরের সমান করে দিয়েছো। আমি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সামনে পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকতাম, আর তিনি নামাযে দাঁড়ানো থাকতেন। যখণ সিজদায় যেতেন, হাত দিয়ে টোকা দিতেন। আমি পা গুটিয়ে নিতাম। তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আবার পা ছড়িয়ে দিতান। আবার কখনো প্রয়োজন হলে নিজেকে গুটিয়ে সামনে দিয়ে চলে যেতাম।

হযরত আয়িশা (রাঃ) এর ১২ পর্বের পুরো জীবনী পড়ুন-



*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url