সাহাবাগণের জীবনকথা-২৭ || হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা)-এর জীবনী (১১তম পর্ব)





কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও কিয়াসে হযরত আয়িশা (রা) এর প্রজ্ঞা

হযরত আয়িশা (রাঃ) এর জীবনী ১১তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

হযরত আবু হুরাইয়া (রা) একদিন ওয়াজ করতে গিয়ে বর্ণনা করেন, রোযার দিনে কারো যদি সকালে গোসল করার প্রয়োজন দেখা দেয় সে যেন সেদিন রোযা না রাখে। লোকেরা হযরত ‘আয়িশা (রা) ও হযরত উম্মু সালামার (রা) নিকট গিয়ে একথার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলো। ‘আয়িশা (রা) বললেনঃ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্ম পদ্ধতি এর বিপরীত ছিল। লোকেরা আবার আবু হুরাইরার (রা) নিকট গিয়ে সতর্ক করলো। অবশেষে তিনি তাঁর পূর্বের ফাতওয়া প্রত্যাহার করেন।

হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা) ফাতওয়া দিতেন যে, কেউ যদি হজ্জ না করে, শুধু মাত্র কুরবানীর পশু মক্কার হারামে পাঠিয়ে দেয়, তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সেই পশু সেখানে জবেহ হবে তার উপর সেই সকল শর্ত আপতিত হবে যা একজন হাজীর উপর হয়। একথা শুনে হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেন, আমি নিজের হাতে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরবানীর পশুর রশি পাকিয়েছি, তিনি নিজ হাতে সেই রশি কুরবানীর পশুর গলায় পরিয়েছেন। তারপর আমার পিতা সেগুলি নিয়ে মক্কায় গেছেন। তা সত্ত্বেও সব কিছু হালাল ছিল। কোন হালাল নিজিসই কুরবানী পর্যন্ত হারাম হয়নি।

আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি, হযরত ‘আয়িশা (রা) অসাদারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তির অধিকারিনী ছিলেন। মূলতঃ স্মৃতিশক্তি আল্লাহ পাকের এক অনুগ্রহ। তিনি পূর্ণমাত্রায় এ অনুগ্রহ লাভ ধন্য হন। ছোট বেলায় খেলতে খেলতে কুরআনের যে সব আয়াত কানে এসেছে, সারা জীবন তা স্মৃতিতে ধরে রেখেছেন। হাদীস শাস্ত্রের নির্ভরতা তো এই স্মৃতি ও মুখস্থ শক্তির উপর। নবুওয়াতী সময়কালের প্রতিদিনের ঘটনা মনে রাখা, প্রতিনয়ত তা হুবহু বর্ণনা করা, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুখ থেকে যে শব্দাবলী যেভাবে শুনেছেন তা সেই ভাবে অন্যের কাছে পৌঁছানো একজন সফল মুহাদ্দিসের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য। হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁর সমকালীনদের যে ভুলত্রুটি ধরেছেন এবং তাঁদের যে সমালোচনা করেছেন, তাতে তাঁদের মধ্যের মুখস্ত শক্তির পার্থক্য ও ভিন্নতা বিশেষভাবে কাজ করেছে। এখানে এমন কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো যা দ্বারা তাঁর প্রখর স্মৃতি শক্তির প্রমাণ পাওয়া যাবে।

হযরত সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস (রা) ইনতিকাল করলেন। হযরত ‘আয়িশা (রা) চাইলেন, লাশ মসজিদে আনা হোক, তাহলে তিনিও জানাযায় শরীফ হতে পারবেন। লোকেরা প্রতিবাদ করলো। হযরতঃ ‘আয়িশা (রা) বললেন, লোকেরা কত তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুহাইল ইবন বায়দার (রা) জানাযার নামায মসজিদেই পড়েছিলেন।
হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমারকে (রা) লোকেরা জিজ্ঞেস করলোঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতবার উমরা আদায় করেছেন? জবাব দিলেনঃ চারবার। তার মধ্যে একটি ছিল রজব মাসে। উরওয়া (রা) চেঁচিয়ে বলে উঠলেনঃ খালা আম্মা! এ কি বলছে আপনি কি শুনছেন না? তিনি জানতে চাইলেনঃ সে কি বলে? ‘উরওয়া বললেনঃ তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চারটি ‘উমরা করেছেন, যার একটি রজব মাসে। তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ আবু ‘আবদির রহমানের (ইবন ‘উমারের উপনাম) উপর রহম করুন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কোন ‘উমরা করেননি যাতে আমি শরীক থাকিনি। রজবে তিনি কোন ‘উমরা করেননি।

মুহাদ্দিসীন কিরাম, হাদীস বর্ণনার দিক দিয়ে সাহাবা-ই কিরামকে পাঁচটি স্তরে ভাগ করেছেন এবং প্রায় প্রতিটি স্তরে পুরুষ সাহাবীদের সাথে মহিলা সাহাবীরাও আছেন। ১ম স্তরঃ যে সকল সাহাবীর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা এক হাজার অথবা তার উর্ধ্বে। হযরত ‘আয়িশা (রা) এই স্তরের অন্তর্গত। ২য় স্তরঃ যে সকল সাহাবীর বর্ণনা পাঁচ শো অথবা তার উর্ধ্বে, কিন্তু এক হাজারের কম। এই স্তরে কোনমহিলা সাহাবী নেই। ৩য় স্তরঃ যে সকল সাহাবীর বর্ণনা এক শ অথবা তার ঊর্ধ্বে; কিন্তু পাঁচ শ’র কম। হযরত উম্মু সালামা (রা) এই স্তরের অন্তর্গত। ৪র্থ স্তরঃ যে সকল সাহাবীর বর্ণনা সংখ্যা চল্লিশ থেকে একশ পর্যন্ত। এই স্তরে বেশির ভাগ মহিলা সাহাবী। যেমন উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মু হাবীবা (রা), উম্মে ‘আতিয়্যা (রা), উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা (রা), আসমা বিনত আবী বকর (রা), উম্মু হানী (রা) প্রমুখ। ৫ম স্তরঃ যে সকল সাহাবীর বর্ণনা সংখ্যা চল্লিশ অথবা তার কম। এই স্তরের সদস্যরা অধিকাংশ মহিলা। যেমনঃ হযরত উম্মু কায়স (রা), হযরত ফতিমা বিনত কায়স (রা), হযরত রাবী‘ বিনত মাসউস (রা), হযরত সুবরা নিবত সাফওয়ান (রা), হযরত কুলসুম বিনত হুসাইন গিফারী (রা), হযরত জা‘দা বিনত ওয়াহাব (রা) প্রমুখ।

উপরে এই স্তরগুলির আলোচনা দ্বারা আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হাদীস শাস্ত্রে হযরত ‘আয়িশার (রা) মর্যাদা বা স্থান কোথায়। আমরা দেখতে পেলাম তাঁর স্থান সর্বোচ্চ স্তরে।

উম্মুল মু’মিনীন হযরত ‘আয়িশা (রা) সরাসরি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া পিতা হযরত আবু বকর (রা), ‘উমার (রা), ফাতিমা (রা), সা‘দ (রা) এর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে হযরত ‘আয়িশা (রা) থেকে যাঁরা হাদীস শুনেছেন এবং হাদীস বর্ণনা করেছেন তাঁদের সংখ্যা অনেক। তাঁদের মধ্যে সাহাবী ও তাবে‘ঈ উবয় শ্রেণীর লোক আছেন। ‘আল্লামা জাহাবী প্রায় দুই শো’ লোকের নাম উল্লেখ করার পর বলেছেন, এছাড়া আরো অনেকে।

সাহাবীদের বর্ণনা ও হাদীসের লেখা-লেখি ও গ্রন্থাবদ্ধের কাজ হিজরী প্রথম শতকের মাঝামাঝি শুরু হয়ে যায়। এ শতকের প্রান্তসীমায় উমাইয়্যা খালীফা হযরত ‘উমার ইবন আবদিল আযীয (রহ) খিলাফতের মসনদে আসীন হন। তাঁর সময়ে মদীনার কাজী ছিলেন ইতিহাস-প্রসিদ্ধ ব্যক্তি আবু বকর ইবন ‘আমর ইবন হাযাম আল আনসারী। কুরআন-হাদীসে তিনি এক বিশাল পান্ডিত্যের অধিকারী ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর এই পান্ডিত্যের পিছনে তাঁর খালা হযরত ‘উমরার অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। এই ‘উমরা ছিলেন হযরত ‘আয়িশার (রা) ছাত্রী ও তাঁর তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত। খলীফা ‘উমার ইবন আবদিল আযীয, আবু বকর-কে নির্দেশ দেন, তিনি যে ‘উমরার বর্ণনাসমূহ লিখে তাঁর কাছে পাঠান।

ইলমে ফিকহ্ ও কিয়াস শাস্ত্রে আয়িশা (রা)

আল-কুরআন ও আল-হাদীস বা আস-সুন্নাহ হলো দলিল ও প্রমাণ, আর ফিকহ হলো তার সিদ্ধান্ত ও ফলাফল। কুরআন ও হাদীসের উপর ভিত্তি করে যে সকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে, তাই হলো ফিকহ ও কিয়াস। এই ইলমে ফিকহ ও কিয়াসে হযরত ‘আয়িশা (রা) যে কি পরিমাণ পারদর্শী ছিলেন তা পূর্বের আল-কুরআন ও আল-হাদীসে তাঁর পারদর্শিতার আলোচনা থেকে কিছুটা স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখানে ফিকহ ও কিয়াসে তাঁর উসূল বা নীতিমালা কি ছিলো সে সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করা হলো।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনকালে তিনি নিজেই ছিলেন যাবতীয় ফাতওয়া ও সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দু। কোন সমস্যার উদ্ভব হলে তিনিই তার সামাধান বলে দিতেন। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের পর উঁচু স্তরের সাহাবীগণ, যাঁরা শরীয়াত ও আহকামে ইসলামীর গভীর তাৎপর্য বিষয়ে দক্ষ ছিলেন, তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। হযরত আবু বকর (রা) ও হযরত ‘উমারের (রা) সামনে যখন কোন নতুন সমস্যার উদ্ভব হতো তখন তিনি ‘আলিম সাহাবীদেরকে এমত্র করে তাঁদের নিকট সিদ্ধান্ত চাইলেন। তাঁদের মধ্যে কারো কাছে যদি বিশেষ কোন হাদীস থাকতো তিনি তা বর্ণনা করতেন। অন্যথায় কুরআন ও হাদীসের অন্য কোন হুকুমের উপর কিয়াস বা অনুমান করে সিদ্ধান্ত দিতেন। খিলাফতে রাশেদার তৃতীয় খলীফা পর্যন্ত এই ফিকহ একাডেমী ছিল মদীনাকেন্দ্রিক। হযরত ‘উসমানের (রা) খিলাফতকালে অরাজকতা ও অশান্তি মাথাচাড়া দেয় এবং বহু মানুষ মদীনা ছেড়ে মক্কা, তায়িফ, দিমাশক, বসরা প্রভৃতি স্থানে আবাসন গড়ে তোলে। অতপর হযরত ‘আলী (রা) খলীফা হলেন। তিনি কুপকে বানালেন ‘দারুল খিলাফা’। এসব কারণে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দারসগাহের মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেকই মদীনা ছেড়ে অন্য শহরে চলে যান। তবে এর ফলে জ্ঞান চর্চার বেষ্টনী ও পরিধি আরো বিস্তার লাভ করে। কিন্তু তার সম্মিলিত রূপ বা বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়। যা কিছু বিদ্যামন ছিল তা কেবল মদীনাতেই।

উঁচু স্তরের সাহাবীদের পরে মদীনায় হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমার, হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস, হযরত আবু হুরাইরা ও হযরত ‘আয়িশা (রা)-এ চারজন বেশির ভাগ সময় ফিকহ ও ফাতওয়ার কাজ করেন। কুরআন ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিধান যেখানে নেই সেখানে এ চারজনের নীতিও ছিল ভিন্ন। ‘আবদুল্লাহ ইবন ‘উমারআবু হুরাইরার (রা) রীতি ছিল যে, উপস্থিত মাসয়ালা সম্পর্কে কুরআন ও সুন্নাহ কোন হুকুম বা পূর্ববর্তী খলীফাদের কোন আমল যদি থাকতো, তারা তা বলে দিতেন। আর যদি তা না থাকতো তাঁরা নীরব থাকতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবন ‘আববাস (রা) এ ক্ষেত্রে কুরআন, সুন্নাহ ও পূর্ববর্তী খলীফাদের সময়ে সমাধানকৃত মাসয়ালার উপর কিয়াস করে নিজের বোধ ও বুদ্ধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিতেন। এক্ষেত্রে হযরত ‘আয়িশা (রা) উসুল ছিল, প্রথমে তিনি কুরআন থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজতেন। সেখানে না পেলে সুন্নাহর দিকে দৃষ্টি দিতেন। সেখানে ব্যর্থ হলে নিজের বুদ্ধি অনুযায়ী কিয়াস করতেন। হযরত ‘আয়িশার (রা) ইজতিহাদ ও ইসতিমবাতের (গবেষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ) রীতি-পদ্ধতি সম্পর্কে ইতিপূর্বে কিছু আলাচনা আমরা করেছি। এখানে আরো কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি।

আল কুরআনের ব্যাখ্যায় আয়িশা (রা) এর পান্ডিত্য

‘‘তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন ‘কুরূ’ পর্যন্ত।’’ অর্থাৎ তার ইদ্দতের সময়সীমা তিন ‘কুরূ’। এই ‘কুরূ’-এর অর্থ নিয়ে মতভেদ আছে। হযরত ‘আয়িশার (রা) এক ভাতিজীকে তার স্বামী তালাক দেয়। তিন ‘তুহূর’ অর্থাৎ পবিত্রতার তিনটি মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার পর যখন নতুন মাস শুরু হয় তখন তিনি তাকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসতে বলেন। কিছু লোক তাঁর এ কাজের প্রতিবাদ করে বলেন, এটা কুরআনের হুকুমের পরিপন্থী। তাঁরা তাঁদের মতের সপক্ষে কুরআনের উপরে উল্লেখিত আয়াতটি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করেন। জবাবে উম্মুল মু’মিনীন বলেন, ‘তিন কুরূ’-তা ঠিক আছে। তবে তোমরা কি জান ‘কুরূ’-এর অর্থ কি? ‘কুরূ’ অর্থ ‘তুহুর’ (পত্রিবতা)। মদীনার সকল ফকীহ এ মাসয়ালায় হযরত ‘আয়িশার (রা) অনুসরণ করেছেন। তবে ইরাকীরা ‘কুরূ’ অর্থ হায়েজ (মাসিকের বিশেষ দিনগুলি) বুঝেছেন।

হযরত যায়িদ ইবন আরকাম (রা) এক মহিলার নিকট থেকে বাকীতে আট শো দিরহামে একটি দাসী খরীদ করলেন। শর্ত করেন যে ভাতা পেলে মূল্য পরিশোধ করবেন। মূল্য পরিশোধের পূর্বেই তিনি উক্ত দাসীটি নগদ ছয়শো দিরহামে আবার সেই মহিলার নিকট বিক্রি করেন। মহিলা ক্রয় বিক্রয়ের এ বিষয়টি হযরত ‘আয়িশার (রা) অবহিত করেন। হযরত ‘আয়িশা (রা) মিহিলাকে বলেন, তুমিও খারাপ কাজ করেছো এবং যায়িদ ইবন আরকামও। তুমি তাঁকে বলে দিবে, তিনি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে জিহাদ করে যে সাওয়াব অর্জন করেছিলেন তা বরবাদ হয়ে গেছে। তবে তিনি যদি তাওবা করে নেন।

এই বিশেষ অবস্থায় হযরত ‘আয়িশা (রাঃ) অতিরিক্ত দুই শোধ দিরহামকে সুদ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আয়িশা (রা) সূরা আল-বাকারার ২৭৫তম আয়াতের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

স্বামী যদি স্ত্রীকে তালাক দানের ক্ষমতা অর্পণ করে এবং স্ত্রী সে ক্ষমতা স্বামীকে ফিরিয়ে দিয়ে উক্ত স্বামীকে মেনে নেয় তাহলেও কি সেই স্ত্রীর উপর কোন তালাক পড়বে? এ প্রশ্নে হযরত ‘আলী (রা) ও হযরত যায়িদের (রা) মতে এক তালাক হয়ে যাবে। কিন্তু হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেন, একতালাকও হবে না। তিনি তাঁর মতের সপক্ষে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেই ‘তাখঈর-এর ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদেরকে এই ইখতিয়ার বা স্বাধীনতা দিয়েছিলেন যে, তাঁরা তাঁকে ছেড়ে পার্থিব সুখ-ঐশ্বর্য গ্রহণ করতে পারেন অথবা তাঁর সাথে থেকে এই দারিদ্র্য ও অনাহারকে বরণ করতে পারেন। সবাই দ্বিতীয় অবস্থাটি গ্রহণ করেন। এতে কি তাদের উপর এক তালাক পতিত হয়েছে?

কেউ যদি কোন দাস মুক্ত করে তাহলে সেই মনিব ও মুক্তিপ্রাপ্ত দাসের মধ্যে ইসলামী বিধান মতে এক প্রকার সম্পর্ক সৃষ্টি হয় যাকে ইসলামী পরিভাষায় ‘আল-ওয়ালা’ (অভিভাবকত্ব) বলে। যার ফলে মুক্তিদানকারী মনিব মুক্তিপ্রাপ্ত দাসের সম্পদের উত্তারাধিকারী হতে পারে, এবং আইনগতভাবে মুক্তিপ্রাপ্ত দাস পূর্বের মনিবের বংশের লোক বলে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। এ কারণে এ ‘আল-ওয়ালা’ সম্পর্কের গুরুত্ব অত্যাধিক। একজন মুক্তিপ্রাপ্ত দাস একবার হযরত ‘আয়িশার (রা) নিকট এসে বললো, আমি ‘উতবা ইবন আবী লাহাবের দাস ছিলাম। তারা স্বামী-স্ত্রী আমাকে এই শর্তে বিক্রী করে দেয় যে, আমি মুক্ত হলে আমার ‘আল-ওয়ালা’-এর অধিকারী হবে সে। এখন আমি মুক্ত। আমার এই ‘আল-ওয়ালা’ এর সম্পর্ক হবে কার সাথে? ‘উতবা ইবন আবী লাহাবের সাথে, না যে মুক্ত করেছে তার সাথে? হযরত আয়িশা (রা) বললেন, ‘বারীরা’ নাম্নী দাসীর অবস্থাও ছিল এমন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলেন যে, বারীরাকে খরীদ করে আযাদ করে দাও। তুমিই তার ‘আল-ওয়ালা’ এর অধিকারিণী হবে-বিক্রয়কারী আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী যত শর্তই আরোপ করুন না কেন।

হযরত বারীরা (রা) ছিলেন একজন দাসী। তাঁর মনিব তাঁকে এ শর্তে বিক্রী করতে চায় যে, তিনি মুক্ত হলে তাঁর আল-ওয়ালা-এর অধিকারী সে হবে। হযরত বারীরা (রাঃ) হযরত ‘আয়িশার (রা) নিকট এসে নিজের অবস্থার কথা তাঁকে বলেন। হযরত আয়িশা (রা) তাঁকে ক্রয় করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন; কিন্ত তাঁর মনিবের আল-ওয়ালার শর্তটি মানতে রাজি হলেন না। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে এলে তিনি বিষয়টি অবহিত করেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আয়িশাকে (রা) বলেন-তুমি নির্দ্বিধায় তাঁকে ক্রয় করে মুক্তি দিতে পার। আল্লাহর কিতাবের বিরোধী শর্ত স্বাভাবিকভাবেই রহিত হয়ে যাবে। বারীরা (রা) দাসত্ব থেকে মুক্তি লাভ করেন। দাসী অবস্থায় যার সাথে বিয়ে হয়েছিল, মুক্ত হয়ে তাঁকে আর স্বামী হিসেবে গ্রহণ করলেন না। লোকেরা তাঁকে সাদাকা দিত। তিনি সেই সাদাকা থেকে কিছু খাদ্য বস্তু রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা গ্রহণ করতেন।

হযরত বারীরার (রা) এ ঘটনা থেকে হযরত ‘আয়িশা (রা) শরীয়াতের একাধিক হুকুম বের করেছেন। তিনি বলতেনঃ বারীরার মাধ্যমে ইসলালে তিনটি বিধান জানা যায়। যথাঃ 
মুক্তিদানকারী ব্যক্তিই হবে আল-ওয়ালার অধিকারী। 
দাসত্ব অবস্থায় যদি একটি দাস ও একটি দাসীর বিয়ে হয় এবং পরে স্ত্রী দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়, কিন্তু স্বামী দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকে, তাহলে দাস স্বামীকে গ্রহণ করা বা না করার ইখতিয়ার স্ত্রী লাভ করে।
যদি দান-সাদাকা পাওয়ার উপযুক্ত কোন ব্যক্তি কোন কিছু দান-সাদাকা হিসেবে পায় এবং সে তা থেকে কিছু এমন ব্যক্তিকে হাদিয়া হিসেবে দেয় যে সাদাকা পাওয়ার উপযুক্ত নয়, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য তা গ্রহণ করা জায়েয হবে।

বিদায় হজ্জে কিছু কম-বেশি প্রায় একলাখ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন। উঁচু স্তরের সকল সাহাবী এ সফরে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরসঙ্গী ছিলেন। এ সফরের যাবতীয় ঘটনা সকলের জানা থাকার কথা। হযরত ‘আয়িশাও (রা) নিজের ঘটনাবলী স্মৃতিতে ধরে রাখেন। বিভিন্ন হাদীসে তা হুবহু বর্ণিতও হয়েছে। তবে হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণনাসমূহ ফকীহ ও মুজতাহিদদের মূলনীতিতে পরিণত হয়েছে। হযরত ‘আয়িশা (রা) ঠিক হজ্জের অনুষ্ঠানগুলি আদায়কালীন সময়ের মধ্যে নারী প্রকৃতির বিশেষ অবস্থা দেখা দেওয়ায় হজ্জের কিছু অনুষ্ঠান আদায়ে অপারগ হয়ে পড়েন। এতে তিনি ভীষণ কষ্ট পান। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সান্ত্বানা দেন এবং তাঁরই নির্দেশে তিনি ‘তানঈম’-এ নতুন করে ‘ইহরাম’ বেঁধে কা‘বার তাওয়াফ করেন।

হযরত ‘আয়িশার (রা) এ হাদীস থেকে হজ্জের অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মূলনীতি গৃহীত হয়েছে। যেমনঃ
1. যে ব্যক্তি হজ্জের সাথে ‘উমরার নিয়্যত অর্থাৎ ‘কিরান’ হজ্জের নিয়্যত করবে তার জন্য একটি তাওয়াফ ও সা‘ঈ করলে হয়ে যাবে।
2. নারীদের ক্ষেত্রে শারীরিক বিশেষ অবস্থান প্রেক্ষিতে ‘তাওয়াফুল কুদুম’ রহিত হয়ে যাবে।
3. নারীদের বিশেষ অবস্থা দেখা দিলে হজ্জের পরে ‘উমরার নিয়্যত করা জায়িয।
4. নারীরা বিশেষ অবস্থায় শুধু কা‘বার তাওয়াফ ছাড়া হজ্জের অন্য সব কাজ আদায় করতে পারবে।
5.‘তান‘ঈম’ ‘হারাম’-এর অন্তর্ভূক্ত নয়। হারাম-এর বাইরে।
6.‘উমরা এক বছরে, বরং এক মাসেও দুইবার আদায় করা যায়।

কেবলমাত্র হযরত ‘আয়িশার (রা) এ ঘটনা প্রমাণ করে যে, মক্কার বাইরের লোকেরা মক্কা থেকেই (তান‘ঈম) ইহরাম বেঁধে উমরা আদায় করতে পারে।

আয়িশা (রা) এর কিয়াসে আকলী বা প্রজ্ঞা

এখানে কিয়াসে আকলী বা প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিনির্ভর অনুমান সম্পর্কে একটু আলোচনা করা দরকার। কিয়াসে আকলী অর্থ এই নয় যে, যে কেউ নিজের বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে শরীয়াতের কোন হুকুম স্মপর্কে সিদ্ধান্ত দান করবে। বরং তার অর্থ হলো, আলিমগণ, যাঁরা শরীয়াতেরও গূঢ় রহস্য এবং দীনী ইলমসমূহে অভিজ্ঞ, কিাত ও সুন্নাহর অধ্যয়ন; গবেষণা এবং নিজেদের জীভনে তা বাস্তবায়নের কারণে তাঁদের মধ্যে এমন এক যোগ্যতা সৃষ্টি হয়ে যায় যে, যখন তাঁদের সামনে কোন নতুন মাসয়ালা আসে তখন তাঁরা তাঁদের সেই যোগ্যতা বলে বুঝতে সক্ষম হন যে, যদি শারে’ (আ) (বিধানদাতা) অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবিত থাকতেন, তাহলে তিনি এই জবাব দিতেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, কোন অভিজ্ঞ আইনজীবি কোন বিশেষ আদালতের বহু মামলার রায় যিনি দেখেছেন। তারপর তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ঐ জাতীয় কোন মোকদ্দমা সম্পর্কে সেই সকল রায়ের উপর অনুমান করে যদি একথা বলে দেন যে, মোকদ্দামাটি এই আদালতে উঠলে তার রায় এমন হবে। তখন তাকে কিয়াসে আকলী বলা হবে। ইসলামী শরীয়াতে নজীর ও ফায়সালা (দৃষ্টান্ত ও সিদ্ধান্ত) সমূহ সম্পর্কে হযরত আয়িশা (রা) যে কতখানি অবহিত ছিলেন তা আমাদের পূর্বের আলোচনায় মোটামুক্তি স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে তাঁর কিয়াসে ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনা খুব কম থাকাই স্বাভাবিক। এখানে আমরা হযরত ‘আয়িশার (রা) কিয়াসে আকলীর একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবদ্দশায় সাধারণভাবে মহিলারা মসজিদে আসতো এবং নামাযের জামায়াতে শরীক হতো। পুরুষদের পিছনে শিশু-কিশোররা এবং তাদের পিছনে মহিলারা সারিবদ্ধ হতো, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাদের মসজিদে আসতে বারণ করতে নিষেধ করেন।
তিনি বলেনঃ
রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাতের পর বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর লোকদের সাথে আরবদের উঠা-বসা, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও আর্থিক প্রাচুর্যের কারণে মহিলাদের চাল-চলন, সাজ্জা ও বেশ-ভুষায় পরিবর্তন আসে। এ অবস্থা দেখে হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেনঃ ‘আজ যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবিত থাকতেন তাহলে মহিলাদের মসজিদে আসতে বারণ করতেন।’ তাঁর বক্তব্য নিম্নরূপঃ
‘‘আমারাহ থেকে বর্ণিত। হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেন, ‘‘আজকাল মহিলারা যে সব নতুন কথা ও কাজের জন্ম দিচ্ছে, যদি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ সময় জীবিত থাকতেন তাহলে তাদের মসজিদে আসা বন্ধ করে দিতেন, যেমন ইহুদী মহিলাদের বন্ধ করা হয়েছিল।’’

হযরত ‘আয়িশার (রা) এ সিদ্ধান্ত যদিও সে সময় বাস্তবায়িত হয়নি, তবে তার ভিত্তি ছিল ঐ কিয়াসে আকলী। তিনি তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা দ্বারা বুঝেছিলেন, এক্ষেত্রে শরীয়াতের হুকুম কেমন হতে পারতো।

হযরত আবু হুরাইরা (রা) ফাতওয়া দিতেন, কোন ব্যক্তি মৃতকে গোসল দিলে তাকেও গোসল করতে হবে। আর যদি কেউ মৃতের খাটিয়া বহন করে তাকে দ্বিতীয়বার ওজু করতে হবে। একথা হযরত ‘আয়িশার (রা) কানে গেলে বলেনঃ “মুসলমান মোর্দাও কি নাপাক হয়ে যায়? আর কেউ যদি কাঠ বহন করে তাতে তার কি হয়?’’

গোসল ওয়াজিব হওয়ার জন্য ধাতু নির্গত হওয়া প্রয়োজন কিনা, সে সম্পর্কে সাহাবীদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দেয়। হযরত জাবির (রা) বলতেনঃ আরবী হবে ‘পানির জন্য পানি।’ -অর্থাৎ ধাতু নির্গত হলেই কেবল পানি ব্যবহার প্রয়োজন, অন্যথায় নয়। হযরত ‘আয়িশা (রা) এ মতের বিপরীত একটি হাদীস বর্ণনা করে বলেন, ‘‘কেউ যদি ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং পানি বের না হলেও তো তোমরা তাকে রজম করে থাক, তাহলে গোসল ওয়াজিব হবে না কেন?’’

সাহবায়ে কিরামের (রা) মধ্যে হযরত ইবন ‘উমার (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাবতীয় কর্মকে সুন্নাত বলে মনে করতেন এবং সে অনুযায়ী আমল করতেন। ফকীহগণ সুন্নাতকে যে ইবাদী ও ‘আদী দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন, তিনি তা করতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন, রাসূরুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন কাজ যে কারণেই করুন না কেন, তা সুন্নাত। তা অনুসরণ করা জরুরী।এ কারণে তিনি সফরের মানযিল-এর ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসরণ করতেন। অর্থাৎ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন সফরে যেখানে যেখানে অবস্থান করেছেন, ইবন ‘উমার (রা) পরবর্তীকালে ঠিক সেখানেই অবস্থান করতেন। যদি কোন মানযিলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘটনাক্রমে পাক-পবিত্র হয়ে থাকেন, তিনিও সেখানে বিনা প্রয়োজনে পাক-পবিত্র হতেন। কিন্তু হযরত ‘আয়িশা (রা)হযরত ইবন আববাস (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাতের উপরোক্ত পার্থক্যের প্রবক্তা ছিলেন। তাঁরা ইবন ‘উমারের (রা) মতকে সমর্থন করেননি। হজ্জের সময় রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবতাহ’ উপত্যকায় তাবু গেড়ে অবস্থান করেছিলেন। কিন্তু ‘আয়িশা (রা) এটাকে সুন্নাত মনে করেননি। সহীহ মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছেঃ‘‘আল-আবতাহ উপত্যকায় অবস্থানকরা সুন্নাত নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেখানে এ জন্য অবস্থান করেছিলেন যে, সেখান থেকে বের হওয়া তাঁর জন্য সহজ ছিল।’’

হযরত ‘আয়িশা (রা) বহু ফিকহী মাসয়ালায় তাঁর সমকালীনদের থেকে দ্বিমত পোষণ করেছেন। পরবর্তী কালে হিজাযের পকীহরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরই মতের উপর আমল করেছেন। হযরত ‘আয়িশার (রা) এসব মতামত ও আমলের বিরাট একটি অংশ ইমাম মালিক (রা) তাঁর আল-মুওয়াত্তা’ গ্রন্থে সংকলন করেছেন।

তা‘লীম ও ইফতা’র দায়িত্ব পালনে হযরত আয়িশা (রা) এর গুরুত্ব

ইলম বা জ্ঞান অন্যের নিকট পৌঁছানো ইলমের অন্যতম খিদমাত বলে ইসলাম বিশ্বাস করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশ দিয়েছেন-
‘‘উপস্থিত ব্যক্তি অনুপস্থির ব্যক্তির নিকট অবশ্যই পৌঁছাবে।’’ হযরত ‘আয়িশা (রা) এ দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছিলেন তা আমাদের পূর্বের আলোচনাসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এখানে আমরা আরো একটু বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই।

রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইনতিকালের পর সাহাবায়ে কিরাম (রা) ইসলামী দা‘ওয়াত ও ইলমের প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে ইসলামী খিলাফতের বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েন। মক্কা মু‘য়াজ্জামা, তায়িফ, রাহরাইন, ইয়ামান, দিমাশক, মিসর, কুফা, বসরা প্রভৃতি বড় বড় শহর ও নগরে এই মহান শিক্ষকবৃন্দের এক একটি ছোট দল অবস্থান করতেন। খিলাফাত ও সরকারের কেন্দ্র ২৭ বছর পর মদীনা থেকে প্রথমে কুফায় অবস্থান করতেন। খিলাফাত ও সরকারের কেন্দ্র ২৭ বছর পর মদীনা থেকে প্রথমে কুফায় এবং পরবর্তীকালে দিমাশকে স্থানান্তরিত হয়। তা সত্ত্বেও মদীনার রূহানী ও ইল্মী (আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানগত) শ্রেষ্ঠত্বের কোন অংশে ভাটা পড়েনি। তখনও মদীনায় হযরত ইবন ‘উমার (রা), হযরত আবু হুরাইয়া (রা), হযরত ইবন ‘আববাস (রা) ও হযরত যায়িদ ইবন সাবিত (রা) প্রমুখের পৃথক পৃথক দারসগাহ্ চালু ছিল। তবে সবচেয়ে বড় দারসগাহ্টি ছিল হযরত ‘আয়িশার (রা) হুজরাকেন্দ্রিক মসজিদে নববীর সেই বিশেষ স্থান।

মদীনা ছিল ইসলামী খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র। যিযারত ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে চতুর্দিক থেকে মানুষ সেখানে ছুটে আসতো। যারা আসতো তারা অবশ্যই একবার না একবার উম্মুল মু‘মিনীনের হুজরার দরজায় হাজিরা দিত। তারা সালাম পেশ করতো। তিনি আগন্তুকদের প্রতি যথোচিত সম্মান প্রদর্শন করতেন। কথাবার্তা, সালাম-কালাম, মাসয়ালা জিজ্ঞাসা ও জবাব দান সবই হতো পর্দাার অন্তরাল থেকে। ইরাক, মিসর, শাম প্রভৃতি অঞ্চল থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে তাঁর খিদমতে হাজির হতো এবং বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ও ফাতওয়া চাইতো। যে সব শিক্ষার্থী সর্বক্ষণ উম্মুল মু’মিনীনের খিদমতে থাকতো, এসকল আগন্তুক তাদেরকেও সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করতো। এ ধররেন একজন শিক্ষার্থী আয়িশা বিনত তালহা বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘প্রতিটি শহর থেকে মানুষ হযরত ‘আয়িশার (রা) নিকট আসতো। তাঁর সাথে আমার সম্পর্কের কারণে বৃদ্ধরা আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসতো। যুবকরা আমার সাথে ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্ক পড়ে তুলতো। লোকেরা আমার কাছে হাদিয়া-তোহফা পাঠাতো এবং বিভিন্ন শহর থেকে চিঠি-পত্র লিখতো। আমি তা হযরত ‘আয়িশার (রা) সামনে উপস্থাপন করে বলতাম, খালা আম্মা! এ অমুকের চিঠি ও হাদিয়া। তিনি বলতেন, বেটি! তুমি এর জবাব দাও এবং বিনিময়ে তুমিও কিছু পাঠিয়ে দাও।’

স্বাভাবিক ভাবেই পুরুষের চেয়ে মহিলাদেরই ভীড় হতো বেশি। মহিলা বিষয়ক মাসয়ালার সমাধান দানের সাথে সাথে বলে দিতেন, তোমরা পুরুষদেরকেও অবহিত করবে। একবার বসরা থেকে কিছু মহিলা আসে। তিনি তাদের কিছু নসীহত করে বলেন, তোমরা পুরুষদেরকে অবহিত করবে। তাদেরকে অনেক কথা বলতে আমার শরম হয় তাদের বলবে তারা যেন পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করে।

নারী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে এবং যে পুরুষদের থেকে হযরত ‘আয়িশার (রা) পর্দা করার প্রয়োজন ছিল না, তাঁরা সকলে হুজরার ভিতরের মসজিদে বসতেন, আর অন্যরা বসতেন হুজরার বাইরে মসিজদে নববীর মধ্যে। দরজায় পর্দা টানানো থাকতো। পর্দার আড়ালে তিনি নিজে বসে যেতেন। লোকেরা প্রশ্ন করতো, তিনি জবাব দিতেন। কোন কোন মাসয়ালায় শিক্ষয়িত্রী ও শিক্ষার্থীর মধ্যে তর্ক-বাহাছ হতো। কখনও কোন মাসয়ালা নিজেই বিস্তারিত বর্ণনা করতেন, লোকেরা নীরবে কান লাগিয়ে শুনতো। তিনি শিক্ষার্থীদের ভাষা, প্রকাশভঙ্গি এবং সঠিক উচ্চারণের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। একবার তাঁর দুই ভাতিজা আসেন। তাঁরা দুইজন ছিলেন দুই মায়ের সন্তান। একজনের ভাষা তেনম শুদ্ধ ছিল না। তার ভাষায় যথেষ্ট ভুল-ভ্রুটি ছিল। হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁর ভুল ধরে দিয়ে বলেন, তুমি তেমন ভাষায় কথা বল না কেন যেমন আমার এই ভাতিজা কথা বলে? হাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি, তাকে তার মা এবং তোমাকে তোমার মা শিক্ষা দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, যাঁর ভাষা শুদ্ধ ছিল না, তার মা ছিলেন দাসী।

উপরে উল্লেখিত এ ধরনের অস্থায়ী শিক্ষার্থীরা ছাড়া তিনি বিভিন্ন খান্দানের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে এবং ইয়াতীম শিশুদেরকে নিজের তত্ত্বাবধানে লালন-পালন করতেন এবং শিক্ষা দিতেন। কখনও এমন হয়েছে যে, শিশু নয়, রবং যারা বড় হয়ে গেছে এমন ছেলেদেরকে তাঁদের দুধ-থালা বা দুধ-নানী হওয়ার কারণে নিজের ঘরের মধ্যে ঢোকার অনুমতি দিতেন। আর যাদের ঘরের ঢোকার অনুমতি ছিল না, এমন গায়ের মুহাররম ব্যক্তিরা আফসোস করে বলতো, ইলম হাসিলের ভালো সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত। কুবায়সা বলতেন, ‘উরওয়া আমার চেয়ে জ্ঞানে এগিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, সে ‘আয়িশার (রা) গৃহাভ্যন্তরে যেতে পারতো। ইরাকের সর্বজন মান্য ইমাম নাখ‘ঈ ছোটবেলায় হযরত ‘আয়িশার (রা) সান্নিধ্যে যাওয়ার সুযোগ লাভ করেছিলেন। এজন্য তার সমকালীনরা তাঁকে ঈর্ষা করতেন।

হযরত ‘আয়িশা (রা) প্রতিবছর হজ্জে যেতেন। হিরা ও সাবীর পর্বতদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে তাঁর তাবু স্থাপন করা হতো। দূর-দূরান্তের জ্ঞান পিপাসুরা সেই তাঁবুর পাশে ভীড় জমাতো। কখনো কখনো কা‘বার চত্বরে যমযমের ছাদের নিচে বসে যেতেন, জ্ঞান পিপপাসুরা সমনে জমায়েত হতো। তিনি যখন চলতেন মহিলারা চারিদিক থেকে ঘিরে রাখতো। ইমামের মত তিনি চলতেন আগে আগে, আর অন্যরা পিছনে। লোকেরা বিভিন্ন মাসয়ালার সমাধান চাইতো এবং সন্দেহ-সংশয় দূর করতে চাইতো, তিনি তাদের সমাধান বলে দিতে সন্দেহ দূর করে দিতেন। তিনি লোকদের যে কোন ধরনের প্রশ্ন করার জন্য উৎসাহ দিতেন। বলতেন, তেমরা তোমাদের মা‘র কাছে যে প্রশ্ন করতে পার, তা আমার কাছেও করতে পার। একবার তিনি হযরত আবু মূসা আল-আশয়ারীকেও (রা) রকম কথা বলেছিলেন। তিনি বলতেন, আমি তোমাদের মা। আসলেই তিনি শিক্ষার্থীদের মায়ের মতই শিক্ষা দিতেন। ‘উরওয়া, কাসেম, আবু সালামা, মাসরূকসাফিয়্যাকে মাতৃস্নেহে শিক্ষাদীক্ষা দেন। ছোট ছেলে-মেয়েদেরকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতেন এবং তাদের যাবতীয় খরচও নিজে বহন করতেন। কোন কোন শিক্ষার্থীর সাথে তিনি এমন মাতৃসুলভ আচরণ করতেন যে, তা দেখে তাঁর আপন জনেরাও ঈর্ষা করতেন। হযরত ‘আবদুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা) ছিলেন হযরত আয়িশার (রা) অতি স্নেহের ভাগ্নে। তিনি একবার খালার এক শাগরিদ আসওয়াদকে বলেন, ‘উম্মুল মুমিনীন তোমার কাছে যে সব গোপন কথা বলতেন, তা কিছু আমাকেও বলো।

হযরত আয়িশা (রা) এর ছাত্র ও শাগরিদগণ

হযরত ‘আয়িশার (রা) শাগরিদরা তাঁকে খুবই সম্মান করতেন। হযরত ‘আমারাহ্ ছিলেন আনসার-কন্যা। তিনি হযরত ‘আয়িশাকে (রা) খালা বলেন ডাকতেন। ইমাম আশ-খা‘বী বলেনঃ আয়িশা (রা) মাসরূক ইবন আজদা‘কে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন। হযরত ‘আয়িশার (রা) জ্ঞান ভান্ডার থেকে অসংখ্য মানুষ গ্রহণ করেছেন। তবে যাঁরা শৈশব থেকে তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বেড়ে ওঠেন এবং পরবর্তীকালে ‘আয়িশার (রা) জ্ঞানের সত্যিকার বাহকরূপে মুহাদ্দিসদের নিকট সমাদৃত হন নিম্নে তাঁদের কয়েকজনের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেওয়া হলোঃ

1.‘উরওয়া- তাঁর পিতা যুবাইর (রা), মাতা আসমা বিনত আবী বকর (রা)। নানা হযরত আবু বকর (রা) এবং খালা হযরত ‘আয়িশা (রা)। খালা অতি আদরে তাঁকে লালন-পালন করেন। মদীনার জ্ঞান ও মহত্বের শিরোমণিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ইমাম যুহরী ও আরো অনেকে তাঁর ছাত্র ছিলেন। তাঁকে সীরাত ও মাগযীশাস্ত্রের ইমাম গণ্য করা হয়। ইমাম যুহরী বলেন, আমি তাঁকে অফুরন্ত সাগররূপে দেখেছি। হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণনা, ফিকাহ ও ফাতওয়ার জ্ঞানে তাঁর চেয়ে বড় কোন আরিম সে যুগে আর কেউ ছিলেন না। হিজরী ৯৪ সনে ইনতিকাল করেন।

2. কাসিম ইবন মুহাম্মদ- তাঁর দাদা হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) এবং ফুফু হযরত ‘আয়িশা (রা)। ছোটবেলা থেকেই ফুফুর স্নেহে বেড়ে ওঠেন এবং তাঁর কাছেই শিক্ষা লাভ করেন। বড় হয়ে মদীনার ফিকহর একজন ইমাম হন। মদীনায় সাত সদস্যবিশিষ্ট ফকীহদের যে মজলিস ছিল, তিনি ছিলেন তার অন্যতম সদস্য। আবু যিয়াদ বলেনঃ ‘আমি কাসিমের চেয়ে বড় ফকীহ যেমন দেখিনি, তেমনি সুন্নাতের জ্ঞানে তাঁর চেয়ে বড় জ্ঞানী আর কাউকে দেখেনি।’ ইবন ‘উয়ায়না বলেনঃ ‘কাসিম ছিলেন তাঁর সময়ের সবচেয়ে বড় আলিম।’ হিজরী ১০৬, মতান্তরে ১০৭ সনে ইনতিকাল করেন।

3. আবু সালামা- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত ‘আবদুর রহমান ইবন আউফের (রা) ছেলে। অল্প বয়সে পিতার মৃত্যুর পর তিনি হযরত ‘আয়িশার (রা) স্নেহে বড় হন। তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের মদীনার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘আলিম। ইমাম মুহরী বলেনঃ ‘আমি চারজনকে সাগরে মত পেয়েছি। তাঁরা হলেন ‘উরওয়া ইবন যুবাইর, ইবনুল মুসায়্যাব, আবু সালামা ও উবাইদুল্লাহ ইবন ‘আবদিল্লাহ।’ জিহরী ৯৪, মতান্তরে ১০৪ সনে ইনতিকাল করেন।

4. মাসরূক ইবনুল আজদা- তাঁর পিতা ছিলেন ইয়ামনের একজন বিখ্যাত অশ্বারোহী। আরবের বিখ্যাত বীর আমর ইবন মা‘দিকারিব ছিলেন তাঁর মামা। ইমাম জাহাবী শা‘বীর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আয়িশা (রা) মাসরূককে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন। ইবন সা‘দ বণৃনা করেছেন যে, একবার তিনি উম্মুল মু’মিনীন আয়িশার (রা) সাথে দেখা করতে এলে তিনি মাসরূকের জন্য শরবত তেরি করতে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমার ছেলের জন্য শরবত বানাও। তিনি ‘আয়িশা (রা) থেকে যে সকল হাদীস বর্ণনা করেছেন তা অধিকাংশ ইমাম আহমাদ মুসনাদে এবং ইমাম বুখারী তাঁর আল-জামে গ্রন্থ বর্ণনা করেছেন। তাঁর চেয়ে বড় জ্ঞানপিপাসু আর কাকেও জানিনে। তিনি কাজী শুরাইহ থেকেও বড় মুফতী ছিলেন। কাজী শুরাইহ তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ করতেন। কিন্তু মাশরূপকের কাজী শুরাইহ এর কোন প্রয়োজন হতো না। তিনি কুফার বিচারকের দায়িত্ব পালন করতেন। তবে কোন পারিম্রমিক নিতে না। উঁচুস্তরের আবেদ ব্যক্তি ছিলেন। আবু ইসহাক বলেনঃ একবার তিনি হজ্জে যান। বাড়ি থেকে বের হয়ে ফিরে না আসা পর্যন্ত সিজদারত অবস্থায় ছাড়া ঘুমাননি।’ তাঁর স্ত্রী বলেছেনঃ ‘নামাযে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তাঁর পা ফুলে যেত।’ হিজরী ৬৩ সনে ইনতিকাল করেন।

5.আমারাহ বিনত আবদির রহমান- তিনি ছিলেন প্রখ্যাত আনসারী সাহাবী আস‘য়াদ ইবন যুরারার (রা) পৌত্রী। মহিলাদের মধ্যে হযরত ‘আয়িশার (রা) তা‘লীম-তারবিয়্যাত বা শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সর্বোত্তম নমুনা হলেন তিনি। মুহাদ্দিসগণ অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধা সহকারে তাঁর নামটি উচ্চারণ করে থাকেন। ‘আয়িশার (রা) হাদীস সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারিনী ছিলেন তিনি’-একথা বরেছেন ইবন হিববান। সুফইয়ান সাওরী বলেনঃ আমারাহ, কাসিম ও উরওয়াব হাদীসই হচ্ছে আয়িশার (রা) সর্বাধিক শক্তিশালী ও প্রমাণিত হাদীস। উম্মুল সম্না ও শ্রদ্ধা করতো। ইমাম বুখারীর র্বণনামতে তিনি ছিলেন উম্মুল মু’মিনীনের সেক্রেটারী। লোকেরা তাঁরই মাধ্যমে হাদিয়া-তোহফা ও চিঠি-পত্র হযরত আয়িশার (রা) নিকট পাঠাতো।

6. সাফিয়্যা বিনত শায়বা- কা‘বার চারি রক্ষক শায়বার কন্যা, সাফিয়্যা। হাদীসের প্রায় সকল গ্রন্থে তাঁর বর্ণিত হাদীস সংকলিত হয়েছে। হাদীসের সনদে তাঁকে ‘শায়বার কন্যা সাফিয়্যা, ‘আয়িশার (রা) বিশেষ শাগরিদ’ অথবা আয়িশার (রা) সাহচর্যপ্রাপ্ত’-এভাবে পচিচয় দেওয়া হয়েছে। মানুষ তাঁর কাছে বিভিন্ন মাসয়ালা এবং হযরত ‘আয়িশার (রা) হাদীস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে আসতো। আবু দাউদ বলেনঃ “আমি ‘আদী ইবন ‘আদী আল-কিন্দীর সাথে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হলাম। মক্কায় পৌঁছোর পর তিনি আমাকে সাফিয়্যা বিনত শায়বার নিকট পাঠালেন। তিনি হযরত ‘আয়িশা (রা) থেকে হাদীস শুনে মুখস্ত করেছিলেন।

7.আয়িশা বিনত তালহা (রা)- প্রখ্যাত সাহাবী হযরত তালহার কন্যা। হরত আবু বকর সিদ্দীক (রা) তাঁর নানা এবং হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁর খালা। খালার তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। আবু যার‘আ দিমাশকী বলেন, লোকেরা তাঁর সম্মান, মর্যাদা ও শিষ্টাচারিতা দেখে তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

মু‘য়াজা বিনত ‘আবদিল্লাহ আল- ‘আদাবিয়্যাঃ একজন বসরী মেয়ে। হযরত ‘আয়িশার (রা) শাগরিদ হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। তিনি বহু হাদীস হযরত ‘আয়িশার (রা) ভাষায়ই বর্ণনা করেছেন। একজন উঁচু স্তরের আবেদা ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি আর কোন দিন বিছানায় ঘুমাননি। এখানে মাত্র কয়েকজনের নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হলো। এছাড়া আরো অনেকে আছেন।

হযরত আয়িশা (রাঃ) এর ১২ পর্বের পুরো জীবনী পড়ুন-



*****************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url