সাহাবাগণের জীবনকথা-২৮ || হযরত আয়িশা সিদ্দীকা (রা)-এর জীবনী (১২তম পর্ব)





চিকিৎসা বিদ্যা, ইতিহাস, সাহিত্য, কবিতা ও বক্তৃতা -ভাষণে আয়িশা (রা) এর পারদর্শিতা


হযরত আয়িশা (রা) এর জীবনী ১২তম পর্বের আলোচ্য বিষয়সমূহঃ

চিকিৎসা বিদ্যা, ইতিহাস, সাহিত্য, কবিতা ও বক্তৃতা-ভাষণে হযরত ‘আয়িশার (রা) আগ্রহ ও পারদর্শিতা সম্পর্কে যদিও আগে কিছু কিছু আলোচনা এসে গেছে, তা সত্ত্বেও স্বতন্ত্রভাবে আরো কিছু আলোচনা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। হযরত ‘আয়িশার (রা) ছাত্র-শিষ্যরা বর্ণনা করেছেন যে, ইতিহাস, বক্ততা-ভাষণ, সাহিত্য ও কবিতায় তার বেশ ভালোই দখল ছিল। আর চিকিৎসা বিদ্যায় ছিল মোটামুটি জ্ঞান। হিশাম ইবন উরওয়ার বর্ণনাঃ “আমি (উরওয়া) কুরআন, ফারায়েজ, হালাল-হারাম (ফিকহ) কবিতা, আরবের ইতিহাস ও নসব (বংশ) বিদ্যায় আয়িশা (রা) অপেক্ষা অধিকতর পারদর্শী আর কাউকে দেখিনি।”

‘উরওয়া আরো বলেনঃ আমি চিকিৎসা বিদ্যায় আয়িশা (রা) অপক্ষো অধিকতর অভিজ্ঞ আর কাউকে পাইনি। তৎকালীন আরবে চিকিৎসা বিদ্যার যথাযথ চর্চা ও প্রচলন ছিল না। সেকালের আরবের সবচেয়ে বড় চিকিৎসাবিদ ছিলেন হারিস ইবন কালদা। তাছাড়া সারা আরবে ছোট ছোট আরো অনেক চিকিৎসক ছিলেন। এটা নিরক্ষর সমাজে চিকিৎসার যতটুকু প্রচলন হয়ে থাকে, সেকালের আরব সমাজে চিকিৎসাবিদ্যা বলতে তাই বুঝায়। গাছ-গাছড়ার কিছু গুণাগুণ জানা, অসুস্থ ব্যক্তিদের পরীক্ষিত কিছু ওষুধ সম্পর্কে জানা ইত্যাদি। এক ব্যক্তি হযরত ‘আয়িশাকে (রা) জিজ্ঞেস করে, আপনি কবিতা বলেন, তা মানলাম যে, আপনি আবু বকরের (রা) মেয়ে, বলতে পারেন; কিন্তু আপনি এ চিকিৎসাবিদ্যা কিভাবে আয়ত্ব করেন তিনি জবাব দেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শেষ জীবনে অসুস্থ থাকতেন। আরবের চিকিৎসকরা আসতো। তারা যে ওষুধের কথা বলতো, আমি মনে রাখতাম। আমরা বুঝতে পারি যে, তাঁরা চিকিৎসাবিদ্যা ছিল সেই পর্যায়ের। তাছাড়া আরো কিছু রোগীর ব্যবস্থাপত্র তিনি মনে রেখেছিলেন। সেই সময় মুসলিম মহিলারা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে যুদ্ধে যেতেন, তাঁরা আহত সৈনিকদের ব্যান্ডেজ লাগাতেন ও সেবা করতেন। ‘আয়িশা (রা) নিজেও উহুদ যুদ্ধে আহত সৈনিকদের সেবা করেছিলেন। এতে ধারণা হয় যে সে যুগের মুসলিম মহিলাদের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানোর মত এই শাস্ত্রের জ্ঞান থাকতো।

প্রাচীন আরবের ইতিহাস, জাহিলিয়াতের রীতি-প্রথা এবং আরবের বিভিন্ন গোত্র-গোষ্ঠীর বংশ সম্পর্কে হযরত আবু বকর (রা) ছিলেন একজন সুবিজ্ঞ ব্যাক্তি। হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁরই মেয়ে। বলা চলে পিতার জ্ঞান তিনি উত্তারাধিকার সূত্রে লাভ করেন। এ কারণে আমরা হযরত ‘উরওয়াকে বলতে শুনি-‘আমি আরবের ইতিহাস ও কুষ্ঠিবিদ্যায় ‘আয়িশার (রা) চেয়ে বেশি জানা কাউকে দেখিনি।’ জাহিলী আরবের রীতি-প্রথা ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ তিনি দিয়েছেন, যা হাদীসের গ্রন্থসমূহ সংকলিত হয়েছে। যেমন, আরবে কত রকমের বিয়ে চালু ছিল, তালাকের পদ্ধতি কেমন ছিল, বিয়ের সময় কি গাওয়া হতো, তারা কোন কোন দিন রোযা রাখতো, হজ্জের সময় কুরাইশরা কোথায় অবস্থান করতো, মৃত ব্যক্তির লাশ দেখে তারা কি কথা উচ্চারণ করতো ইত্যাদি। সহীহ আল বুখারী, তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ প্রভৃতি গ্রন্থে তার এসব বর্ণনা পাওয়া যায়।

ইসলাম পূর্ব আমলে মদীনার আনসারদের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ‘বু-য়াস’-এর বর্ণনা যেমন ‘আয়িশা (রা) দিয়েছেন, মেতনিতাদের ধর্ম বিশ্বাসের কথা, দেব-দেবীর কথাও বলেছেন। যেমন তারা ‘মুশাল্লাল’ তেমনি তাদের ধর্ম বিশ্বাসের কথা, দেব-দেবীর কথাও বলেছেন। যেমন তারা ‘মুশাল্লাল’ পর্বতের মূর্তির পূজা করতো। ইসলামের কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যেমন ওহীর সূচনা পর্ব, ওহী কেমন করে হতো, ওহীর সময় রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অবস্থা কিরূপ দাঁড়াতো, নবুওয়াতের সূচনা পর্বের নানা ঘটনা, হিজরাতের ঘটনা, নিজের জীবনের ইফকের ঘটনা ইত্যাদির তিনি আনুপূর্বিক বর্ণনা দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, এসব ঘটনার সাথে যারা জড়িত ছিলেন অথবা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, সেই সব পরিণত বয়সের লোকেরা যেখানে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি বাক্যে তার বর্ণনা দিয়েছেন, সেখানে হযরত ‘আয়িশার (রা) বর্ণনা হাদীসের গ্রন্থসমূহে কয়েকপৃষ্ঠ ছাড়িয়ে গেছে। অথচ অনেক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সময় তিনি ছিলেন একটি শিশু অথবা বড়জোর একজন কিশোরীমাত্র। কুরআন কিভাবে, কি তারতীবে নাযিল হয়েছে এবং নামাযের পদ্ধতির বর্ণনা তিনি দিয়েছেন। তাছাড়া রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওফাতকালীন অবস্থা, কাফন-দাফনের ব্যবস্থা, কাফনের কাপড়ের সংখ্যা, মাপ ইত্যাদি বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা তো বিশ্বাবাসী তাঁর মাধ্যমে জেনেছে। শুধু কি তাই, তিনি যুদ্ধের ময়দানের অবস্থাও আমাদের শুনিয়েছেন। বদরের ঘটনা, উহুদের অবস্থা, খন্দক ও বনী কুরায়জার কিছু কথা, জাতুর রুকা’ যুদ্ধে সারাতুল খাওফ’ (ভীতিকালীন নামায) এর অবস্থা, মক্কা বিজয়কালীণ মহিলাদের বাই‘য়াত, বিদায় হজ্জের ঘটনাবলীর একাংশ ইত্যাদির কথা আমরা তাঁর মুখে শুনতে পাই। রাসূলুল্লাহর (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) নৈশকালীন ইবাদতের কথা, ঘর-গৃহস্থালীর কথা, তাঁর আদব-আখলাক, স্বাভাব-আচরণের কথা তিনি আমাদের শুনিয়েছেন। এমন কি রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জীবনে সবচেয়ে কঠিন দিন কোনটি গেছে সে কথাও তিনি বলেছেন। মোটকথা, নবী জীবনের একটি স্বচ্ছ ও সঠিক চিত্র তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। হযরত আবু বকরের (রা) খিলাফত, হযরত ফাতিমা (রা) ও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য বিবিগণের দাবী-দাওয়া, বাই‘য়াত ইত্যাদি কথাও তিনি বর্ণনা করেছেন।

একথা ঠিক যে, ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে তাঁর যে জ্ঞান, তা ছিল তাঁর বাস্তবাভিজ্ঞতালব্ধ। অনেক কিছুই তাঁর সামনে ঘটেছিল। কিন্তু জাহেলী আরবের অবস্থার কথা তিনি কার কাছে জেনেছিলেন? নিশ্চয়ই তা পিতা আবু বকরের (রা) মুখে শুনেছেন।

সাহিত্যে আয়িশা (রা) এর পারদর্শিতা

অসংখ্য বর্ণনায় জানা যায় যে, হযরত ‘আয়িশা (রা) ছিলেন একজন সুভাষিণী। তাঁর কথা ছিলাতি স্পষ্ট, বিশুদ্ধ ও প্রাঞ্জল। মূসা ইবন তালহা তাঁর একজন ছাত্র। ইমাম তিরমিযী ‘মানবিক’ পরিচ্ছেদে তার এ মন্তব্য বর্ণনা করেছেন। যার অর্থ-আমি ‘আয়িশার (রা) অপেক্ষা অধিকতর প্রাঞ্জল ও বিশুদ্ধভাষী কাউকে দেখিনি।’ মুসতাদিরিকে হাকেমে আহনাফ ইবন কায়সের একটি মন্তব্য বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি ‘আয়িশার (রা) মুখের চমৎকার বর্ণনা ও শক্তিশালী কথার চেয়ে ভালো কথা আর শুনিনি। হযরত ‘আয়িশার (রা) থেকে যে শত শত হাদীস বর্ণিত হয়েছে, তার মধ্যে তাঁর নিজের ভাষার অনেক বর্ণনাও সংরক্ষিত হয়েছে। সেগুলি পাঠ করলে তার মধ্যে চমৎকার এক শিল্পরূপ পরিলক্ষিত হয়। তাতে রূপক ও উপমা-উৎপ্রেক্ষার সার্থক প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপর ওহী নাযিলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলছেনঃ “প্রথম প্রথম রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে ওহী লাভ করতেন। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন না কেন, তা প্রভাতের দীপ্তির মত উদ্ভাসিত হতো।’’ হযরত ‘আয়িশার (রা) রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সত্য স্বপ্নসমূহকে প্রভাতের দীপ্তি ও আভার সাথে তুলনা করেছেন। ওহী লাভের সময় রাসূলুলত্মাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চেহারা মুবারকে ঘাম জমতো। এই ঘামের ফোঁটাকে তিনি উজ্জ্বল মোতির দানার সাথে তুলনা করেছেন। মুনাফিকরা যখন তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটনা করেছিলো, তাঁর চরিত্রের প্রতি কলঙ্ক আরোপ করেছিলো, তখন সেই দিনগুলি যে কেমন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল, তার একটা সুন্দর চিত্র আমরা পাই তাঁর বর্ণনার মধ্যে। সেই সময়ে তাঁর জীবনের একটি রাতের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেছেনঃ “সারারাত আমি কাঁদলাম। সকাল পর্যন্ত আমার অশ্রুও লুকায়নি এবং আমি চোখে ঘুমের সুরমাও লাগাইনি।’’ তিনি সে রাতটি বিনিদ্র অবস্থায় এবং চোখের পানি ঝরিয়ে কাটিয়েছেন, সে কথাটি সরাসরি না বলে একটি সুন্দর চিত্রকল্পের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। চোখে ঘুম আসাকে তিনি চোখে সুরমা লাগানোর সাথে তুরনা করেছেন। ভাষায় প্রচন্ড অধিকার থাকলেই কেবল এভাবে বলা যায়। একবার তিনি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি এমন দুইটি চারণভূমি থাকে-যার একটিতে পশু চারিত হয়েছে, আর অন্যটি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত হয়েছে। তখন সুরক্ষিত আছে, সিটিতে। মূলতঃ তিনি জানতে চেয়েছেন, যে নারী স্বামীসঙ্গ লাভ করেছে, আর যে লাভ করেনি, এর কোনটি আপনি পছন্দ করেন? আসলে তিনি নিজের সম্পর্কে রাসূরুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইচ্ছার কথা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সরাসরি সে কথাটি না বলে একটি উপমার মাধ্যমে চমৎকারভাবে বুঝিয়ে দেন। উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সালাম) বিবিগণের মধ্যে একমাত্র ‘আয়িশা (রা) ছিলেন কুমারী। অন্যরা সকলেই ছিলেন হয় বিধবা, নয়তো স্বামী পরিত্যক্ত।

হযরত ‘আয়িশা (রা) প্রাচীন আরবের অনেক লোক কাহিনীও জানতেন এবং সুন্দরভাবে তা বর্ণনাও করতে পারতেন। হাদীসের কোন কোন গ্রন্থ তাঁর বলা দুই একটি গল্প বর্ণিত হয়েছে। আরবের এগারো সহোদরার একটি দীর্ঘ কাহিনী তিনি একদিন স্বামী রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনিয়েছিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে তাঁর গল্প শোনেন। এ গল্পে তাঁর চমৎকার বাচনভঙ্গি এবং শির্পকারিতা লক্ষ্য করা যায়। শব্দ ও বাক্যালংকারের ছড়াছড়ি দেখা যায়।

বক্তৃতা ভাষণে আয়িশা (রা) এর পারদর্শিতা

বাগ্মী ও বাকপটু ব্যক্তিরাই বক্তৃতা-ভাষণ দিতে পারে। এ এক খোদাপ্রদত্ত গুণ। মানুষকে স্ব-মতে আনার জন্য, প্রভাবিত করার জন্য এ এক অসাধারণ শিল্প। সেই আদিকাল থেকে নিয়ে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীতে সকল জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে এ শিল্পের চর্চা দেখা যায়। সেই প্রাচীন আরবদের মধ্যে এর ব্যাপক চর্চা ছিল। জাহিলী আরবের বড় বড় খতীব এবং তারে খুতবা বা ভাষণের কথা ইতিহাসে দেখা যায়। নানা কারণ ও প্রয়োজনে ইসলামী আমলে এই খুতবা শাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতি ও বিকাশ ঘটে। পুরুষদের গন্ডিাতিক্রম করে নারীদের মধ্যেও এর বিস্তার ঘটে। হযরত ‘আয়িশা (রা) একজন শ্রেষ্ঠ মহিলা খতীব বা বক্তা ছিলেন। আরবী সাহিত্যের প্রাচীন সূত্রসমূহে হযরত ‘আয়িশা (রা) বহু খুতবা বা বক্তৃতা সংকলিত হয়েছে। উটের যুদ্ধের ডামাডোলের সময় তিনি যে সকল খুতবা দিয়েছিলেন তাবারীর ইতিহাসে তা সংকলিত হয়েছে। ইবন ‘আবদি রাবি্বহি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আল-ইকদুল ফরীদ’ এ তার কিছু নকল করেছেন।

বাগ্মিতা ও বিশুদ্ধভাষিতা যেমন একজন সুবক্তার অন্যতম গুণ, তেমনি স্পষ্ট উচারণ, উচ্চকণ্ঠ এবং ভাব-গাম্ভীর্যের অধিকারী হওয়াও তার জন্য জরুরি। হযরত ‘আয়িশার (রা) কষ্ঠধ্বনি এমনই ছিল। তাবারী বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘হযরত ‘আয়িশা (রা) ভাষণ দিলেন। তিনি ছিলেন উচ্চকষ্ঠ। তাঁর গলার আওয়ায অধিকাংশ মানুষকে প্রভাবিত করতো। যেন তা কোন সম্ভ্রান্ত মহিলার গলার আওয়ায।’’

আহনাফ ইবন কায়স একজন বিখ্যাত তাবে‘ঈ। সম্ভবত তিনি বসরায় হযরত ‘আয়িশার (রা) একটি ভাষন শোনার সুযোগ লাভ করেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘আমি হযরত আবু বকর (রা), হযরত উমার (রা), হযরত উসমান (রা), হযরত আলী (রা) এবং এই সময় পর্যন্ত সকল খলীফার ভাষণ শুনেছি; কিন্তু আয়িশার (রা) মুখ থেকে বের হওয়া কথায় সে কলামন্ডিত সৌন্দর্য ও জোর থাকতো তা আর কারও কথায় পাওয়া যেত না।’ আল্লামা সাইয়েদ সুলায়মান নাদভী আহনাফ ইবন কায়সের মন্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে বলছেন, আমার মতে, আহনাফ ইবন কায়সের এ কথা অতিরঞ্জিত থেকে মুক্ত নয়, তবে এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ‘আয়িশা (রা) একজন স্বচ্ছন্দ ও শুদ্ধভাষী বক্তা ছিলেন।’

আহনাফের মত ঠিক একই রকম মন্তব্য করেছেন হযরত ‘আমীর মু‘য়াবিযা (রা) ও মূসা ইবন তালহা। উটের যুদ্ধের সময়ে তিনি যে সকল বক্ততা ভাষণ দান করেছিলেন, তাতে যে আবেগময় শক্তি ও উত্তাপ দেখা যায় তা অনেকটা তুলনাহীন। পূর্বেই আমরা উটের যুদ্ধের আলোচনা প্রসঙ্গে তাঁর একটি ভাষণের অনুবাদ উপস্থাপন করেছিল। এখানে আমরা তাঁর ঐ সময়ের আর একটি ভাষণের ছোট্ট উদ্ধৃতি টেনে এ আলোচনা সমাপ্তি টানবো।

হযরত ‘আয়িশা (রা) যখন হযরত তালহা ও যুবাইরকে (রা) সঙ্গে নিয়ে বসরায় পৌঁছলেন তখন বসরাবাসীরা ‘আল-মিরবাদ’-এর সমবেত হলো। হমবেত জনমন্ডলীকে সম্বোধন করে প্রথমে তালহা (রা) তারপরে যুবাইর (রা) ভাষণ দিলেন। সবশেষে হযরত ‘আয়িশা (রা) বক্ততা করলেন। সর্বপ্রথম তিনি আল্লাহর হামদ এবং রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রতি দরূদ ও সালাম পেশ করলেন। তারপর বললেনঃ ‘‘মানুষ উসমানের (রা) অপরাধের কথা বলতো, তাঁর কর্মচারী-কর্মকর্তাদের প্রতি দোষারোপ করতো। তারা মদীনায় আসতো এবং তাঁদের সম্পর্কে নানা রকম তথ্য আমাদেরকে জানিয়ে পরামর্শ চাইতো। আমরা বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতাম। আমরা ‘উসমানকে (রা) পবিত্র, খোদাভীরু অঙ্গীকার পালনকারী হিসেবে দেখতে পেতাম। আর অভিযোগকারীরা আমাদের কাছে পাপাচারী, ধোঁকাবাজ ও মিথ্যাবাদী বলে প্রতীয়শান হতো। তারা মুখে যা বলতো, তার বিপরীত কাজ করার চেষ্টা করতো। যখন তারা মুকাবিলা করার মত শক্তিশালী হলো, সম্মিলিতভাবে তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালো। তারা তাঁর উপর তাঁর বাড়ীতেই হামলা চালালো। যে রক্ত ঝরানো হারাম ছিল তা তারা তাঁর উপর তাঁর বাড়ীতেই হামলা চালালো। যে রক্ত ঝরানো হারাম ছিল তা তারা হালাল করলো, আর যে মাল লুট করা, যে শহরের অবমাননা করা অবৈধ ছিল তা তারা বিনা দ্বিধায় ও বিনা কারণে বৈধ করে নিল। শোন! এখন যা কারণীয় এবং যা ব্যতীত অন্য কিছু করা তোমাদের উচিত হবে না, তা হলো ‘উসমানের (রা) হত্যকারীদের ধরা এবং তাদের উপর কিতাবুল্লাহর হুকম কার্যকরী করা। তারপর তিনি সূরা আরে ইমরানের ২৩নং আয়তাটি পাঠ করেনঃ ‘আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা কিতাবের কিছু অংশ পেয়েছে-আল্লাহর কিতাবের প্রতি তাদের আহবান করা হয়েছিল যাতে তাদের মধ্যে মীমাংসা করা যায়। অতঃপর তাদের মধ্যে একদল তা অমান্য করে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’

বসরায় তিনি আকেরটি আগুন ঝরা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তার কিছু অংশের অনুবাদ উপস্থাপন করা হয়েছে। সেই দীর্ঘ বক্তৃতার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য যেন একটা প্রবল আবেগ ও উদ্দীপনা ঢেলে দিয়ে শ্রেতাদের সম্মেহিত করে তুলেছে। এখানে তাঁর মূর ভাষায় কয়েকটি লাইন তুলে ধরা হলো- ‘ওহে জনমগুলী চুপ করুন, চুপ করুন। নিশ্চয় আপনাদের উপর আমার মায়ের দাবী আছে, উপদেশ দানের অধিকার আছে। আমার প্রতি কেউ কলঙ্ক আরোপ করতে পারে না-একমাত্র সেই ব্যক্তি ছাড়া যে তার প্রভুর বিরুদ্ধাচরণ করেছে। রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমারই বুকে মাথা রেখে ইনতিকাল করেছেন। জান্নাতে আমি হবো তাঁর অন্যতম স্ত্রী। আমার রব আমাকে তাঁর জন্যই সংরক্ষিত রেখেছেন এবং অন্যদের থেকে পবিত্র রেখেছেন। আমার সত্তা দ্বারাই তোমদের মুনাফিকদের তোমাদের মু’মিনদের থেকে পৃথক করেছেন। আমার দ্বারাই আল্লাহ তোমাদেরকে আবওয়ার মাটিতে তায়াম্মুমের সুযোগ দিয়েছেন। অতঃপর আমার পিতা সেই সাওর পর্বতের গুহায় দুই জনের মধ্যে দ্বিতীয়, আর আল্লাহ ছিলেন তৃতীয়। তিনিই সর্বপ্রথম সিদ্দীক উপাধি লাভ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রতি খুশী থাকা অবস্থান ইহলোক ত্যাগ করেছেন…..হ্যাঁ, এখন আমি মানুষের এই প্রশ্নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছি যে, আমি কিভাবে বাহিনী নিয়ে বের হলাম? এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য কোন পাপের বাসনা ও ফিতনা ফাসাদের অম্বেষণ করা নয়।

চিঠিপত্র আদান প্রদানে আয়িশা (রা) এর পারদর্শিতা

আরবী সাহিত্যের নির্ভরযোগ্য প্রাচীন সংকলনসমূহে হযরত ‘আয়িশার (রা) বহু গুরুত্বপূর্ণ চিঠি দেখেতে পাওয়া যায়। সে সব চিঠি তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিকট লিখেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, এ সব চিঠি কি তিনি নিজ হাতে লিখেছিলেন না কেন, তার ভাব ও ভাষা যে হযরত ‘আয়িশার (রা) ছিল না, এমন কোন প্রমাণ নেই। তাই আরবী সাহিত্যের প্রাচীন কালের পন্ডিতরা হযরত ‘আয়িশার (রা) এসব চিঠির সাহিত্যমূল্য বিবেচনা করে নিজেরদ রচনাবলীতে স্থান দিয়ে গেছেন। ইবন ‘আবদি রাবিবহি আল-আন্দালুসীর বিখ্যাত সংকলন-আল-ইকদুল ফরীদ’ এর ৪র্থ খন্ডে তার অনেকগুলি চিঠি সংকলিত হয়েছে। যেমন, তিনি বসরায় পৌঁছে তথাকার এক নেতা যায়িদ ইবন সুহানকে লিখেছেনঃ ‘‘উম্মুল মুমিনীন ‘আয়িশার (রা) পক্ষ থেকে তার নিষ্ঠাবান ছেলে যায়িদ ইবন সুহানের প্রতি। সালামুন আলাইকা। অতঃপর তোমার পিতা জাহিলী আমলে নেতা ছিলেন, ইসলামী আমলেও। তুমি তোমার পক্ষ থেকে মাসবূক মুসল্লীর অবস্থানে আছ যাকে বলা যায় প্রায় অথবা নিশ্চিতভাবে লাহেক হয়েছে। তুমি তোমার পক্ষ থেকে মাসবূল মুসল্লীর অবস্থানে আছে যাকে বলা যায় প্রায় অথবা নিশ্চিতভাবে লাহেক হয়েছে। তুমি জেনেছো যে, উসমান ইবন আফফান হত্যার মাধ্যমে ইসলামে কী বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আমরা তোমাদের কাছে আমার এ চিঠি পৌঁছার পর মানুষকে আলী ইবনে আবী তালিবের পক্ষাবলম্বন থেকে ঠেকিয়ে রাখবে। তুমি তোমার গৃহে অবস্থান করতে থাক, যতক্ষণ না আমার নির্দেশ তোমার কাছে পৌঁছে। ওয়াস সালাম।’’

উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশার (রা) উপরোক্ত চিঠির যে জবাব যায়িদ ইবন সুহান দিয়েছিলেন তা একটু দেখার বিষয়। আমরা সেই চিঠিটি তুলে দিয়ে এ প্রসঙ্গে সমাপ্তি টানছি। যায়িদ ইবন সুহান লিখছেনঃ ‘‘যায়িদ ইবন সুহানে পক্ষ থেকে উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশার (রা) প্রতি। আপনার প্রতি সালাম। অতঃপর আপনাকে কিছু কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আর আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ভিন্ন কিছু কাজের। আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ঘরে অবস্থান করার জন্য, আর আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মানুষের সাথে যুদ্ধ করার জন্য যতক্ষণ ফিতনা দূরীভূত না হয়। আপনি ছেড়ে দিয়েছেন। যা আপনাকে করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের যা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা থেকে বিরত থাকার জন্য আপনি লিখেছেন। ওয়াস সালাম।’’

আয়িশার (রা) এর কাব্যপ্রীতি

ইসলাম-পূর্ব আমলের আরবরা ছিল একটি কাব্যরসিক জাতি। তাদের ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে কবি ও কবিতার প্রভাব ছিল অপরিসীম। তাদের নিকট কবির স্থান ছিল সবার উপরে। তারা কবি ও নবীকে একই কাতারের মানুষ বলে মনে করতো। তাইতো তারা রাসূলুল্লাহকেও (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবি বলে আখ্যায়িত করেছিল। ইবন রাশীকে আল-কায়রোয়ানী জাহিলী আরবে কবির স্থান ও মর্যাদার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেনঃ ‘‘আরবের কোন গোত্রে যখন কোন কবি প্রতিষ্ঠা লাভ করতেন তখন অন্যান্য গোত্রের লোকেরা এসে সেই গোত্রকে অভিনন্দন জানাতো। নানা রকম খাদ্যদ্রব্য তৈরি করা হতো। বিয়ের অনুষ্ঠানের মতো মেয়েরা সমবেত হয়ে বাদ্য বাজাতো। পুরুষ ও শিশু-কিশোররা এসে আনন্দ প্রকাশ করতো। এর কারণ, কবি তাদের মান-মর্যাদার রক্ষক, বংশের প্রতিরোধক এবং নাম ও খ্যাতির প্রচারক।’’

প্রাচীন আরবী সাহিত্যের ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, জাহিলী আরবে যেন কাব্যচর্চার প্লাবন বয়ে চলেছে। অসংখ্য কবির নাম পাওয়া যায় যা গুণেও শেষ করা যাবে না। ইবন কুতায়বা বলেছেনঃ ‘‘কবিরা-যাঁরা কবিতার জন্য তাদের সমাজে ও গোত্রে জাহিলী ও ইসলামী আমলে প্রসিদ্ধিার্জন করেছেন তাঁদের সংখ্যা এত বেশি যে কেউ তা শুমার করতে পারবে না।’’

তিনি আরও বলেছেনঃ ‘‘যারা কবিতা বলেনি-তাদের সংখ্যা খুবই কম-তাদের নাম যদি আমরা উল্লেখ করতে চাই তাহলে অধিকাংশ লোকের নাম উল্লেখ করতে পারবো।’’ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদেম প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আনাস ইবন মালিক (রা) বলেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন আমাদের এখানে আসেন তখন আনসারদের প্রতিটি গৃহে কবিতা বলা হতো।’’

মোটকথা একজন আরব কবি তার কবিতার মাধ্যমে কোথাও যেমন আগুন জ্বালিয়ে দিত তেমনিভাবে কোথাও জীবনের বারি বর্ষণও করতো। এ গুণটি কেবল পুরুষদের সাথে সংযুক্ত ছিল না; বরং নারীরাও এর সাথে প্রযুক্ত ছিল। ইসলামের পূর্বে এবং ইসলামের পরেও শতবর্ষ পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে আরবীর এ গুণ বৈশিষ্ট্যটি পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান ছিল। সে আমলের এমন অসংখ্য নারীর পরিচয় পাওয়া যায় যাঁরা কবিতা ও সঙ্গীত রচনায় এমন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন যে, তাঁদের কথা আরবী কাব্যজগতের এককেটি  সৌন্দর্যে পরিণত হয়েছে। 

উম্মুল মু’মিনীন হযরত ‘আয়িশার (রা) আরবের সাংস্কৃতিক ইতহাসের এমন একটি পর্বে জন্মলাভ করেন। তাঁর নিজের পরিবারেও কবিতার চর্চা ছিল। পিতা আবু বকর (রা) একজন কবি ছিলেন। প্রখ্যাত তাবে‘ঈ হযরত সা‘ঈদ ইবন আল-মুসাইব বলেনঃ ‘‘আবু বকর (রা) কবি ছিলেন। ‘উমার (রা) কবি ছিলেন। আর ‘আলী (রা) ছিলেন তিনজনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কবি।’’ তাই বলা চলে পিতার কাছ থেকেই তিনি কাব্যশাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেন। কবিতার আঙ্গিক, বিষয়বস্তু , চিত্রকল্প ইত্যাদি বিষয়ে তিনি যেসব মন্তব্য ও মতামত রেখেছেন তাতে এ শাস্ত্রে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা প্রমাণিত হয়। তাঁর এক গুণমুগ্ধ শাগরিদ আল-মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ বলেছেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের মধ্যে কাব্য ও ফারায়েজ শাস্ত্রে ‘আয়িশার (রা) চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখে এমন কাউকে আমি জানিনে।’’

হযরত উরওয়া ইবন যুবাইর ঠিক একই রকম কথা বলেছেন। তাঁরা অন্য একজন শাগরিদ বলেছেন, ‘‘আমি ‘আয়িশার (রা) কাব্য-জ্ঞান দেখে বিম্মিত হইনে। কারণ তিনি আবু বকরের (রা) মেয়ে।’’ হযরত ‘আয়িশা (রা) নিজেও একজন কবি ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি যে শোকগাঁথাটি রচনা করেন, তার কিছু অংশ আল্লামা আলসী তাঁর বুলুগুল আরিব’ গ্রন্থর ২য় খন্ডে সংকলন করেছেন।

ইমাম বুখারী আবদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে হযরত উরওয়ার একটি বর্ণনা নকল করেছেন। তিনি বলেছেন, হযরত কা‘ব ইবন মালিকের (রা) একটি পূর্ণ কাসীদা হযরত আয়িশার (রা) মুখস্থ ছিল। একটি কাসীদায় কম-বেশি চল্লিশটি শ্লোক ছিল। হযরত আয়িশা (রা) বলতেনঃ
‘‘তোমরা তোমাদের সন্তনদের কবিতা শেখাও। তাতে তাদের ভাষা মাধুরীময় হবে।’’

জাহিলী ও ইসলামী যুগের কবিদের বহু কবিতা হযরত ‘আয়িশার (রা) মুখস্থ ছিল। সেই সকল কবিতা বা তার কিছু অংশ সময় ও সুযোগমত উদ্ধৃতির আকারে উপস্থাপন করতেন। তার বর্ণিত বহু কবিতা বা পংক্তি হাদীসের বিভিন্ন গ্রন্থ বর্ণিত হয়েছে। এক ব্যক্তি হযরত আয়িশাকে (রা) জিজ্ঞেস করে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি কখনও কবিতা আবৃত্তি করেছেন? বললেনঃ হাঁ, আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার কিছু শ্লোক তিনি আবৃত্তি করতেন। যেমনঃ ‘‘তুমি যাকে পাথেয় দিয়ে পাঠাওনি সে অনেক খবর নিয়ে তোমার কাছে আসবে।’’ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদিন শুনলেন ‘আয়িশা (রা) কবি যুহাইর ইবন জানাবের নিম্নোক্ত পংক্তি দুইটি আবৃত্তি করছেনঃ ‘‘তুমি উঠাও তোমার দুর্বলকে। যার দুর্বলতা তোমার বিরুদ্ধে কোন দিন যুদ্ধ করবে না। অতঃপর সে যা অর্জন করেছে তার পরিণতি লাভ করবে। সে তোমকে প্রতিদান দিবে, অথবা তোমার প্রশংসা করবে। তোমার কর্মের যে প্রশংসা করে সে ঐ ব্যক্তির মত যে প্রতিদান দিয়েছেন।’’ পংক্তি দুইটি শুনে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘আয়িশা! সে সত্য বলেছে। যে ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।

আবু কাবীর আ-হুজালী একজন জাহিলী কবি। তিনি তাঁর সৎ ছেলে কবি তায়াববাতা শাররান-এর প্রশংসায় একটি কবিতা রচনা করেন। যার দুইটি পংক্তি নিম্নরূপঃ ‘‘সে তার মায়ের গর্ভের সকল অশুচিতা এবং দুধদানকারী দাত্রীর যাবতীয় রোগ-থেকে মুক্ত। যখন তুমি তার মুখমন্ডলের মজবুত শিরা উপশিরার দিকে দৃষ্টিপাত করবে, তখন তা প্রবল বর্ষণের সাথে বিদ্যুতের চমকের মত চমকাতে দেখবে।’’

হযরত ‘আয়িশ (রা) একদিন উপরোক্ত শ্লোক দুইটি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শুনিয়ে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ‘‘আপনিই তো এ দুইটি শ্লোকের বেশি হকদার। তাঁর এ কথায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উৎফুল্ল হন। ‘‘আয়িশা (রা) নিম্নের দুইটি বয়েত দিয়ে প্রায়ই মিছাল দিতেনঃ ‘‘কালচক্র যখন তার বিপদ মুসীবতসহ কোন জনমন্ডলীর উপর দিয়ে ধাবিত হয় তখন তা আমাদের সর্বশেষ ব্যক্তিটির কাছে গিয়ে থামে। আমাদের এ বিপদ ধেকে যারা উৎফুল্লা হয় তাদের বলে দাও-তোমরা সতর্ক হও। খুব শিগগিরই তোমরাও মুখেমুখি হবে, যেমন আমরা হয়েছি।’’

হযরত ‘আয়িশার (রা) ভাই আবদুর রহমান ইবন আবী বকরের (রা) ইনতিকাল হয় মক্কার পাশে এবং মক্কায় দাফন করা হয়। পরে যখন হযরত ‘আয়িশা (রা) মক্কায় যান তখন ভাইয়ের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত শ্লোক দুইটি আবৃত্তি করেনঃ ‘‘আমরা দুই জন বাদশাহ জাজীমার দুইজন সহচরের মত একটা দীর্ঘ সময় একসাথে থেকেছি। এমনকি লোকে আমাদের সম্পর্কে বলাবলি করতো যে, আমরা আর কখনও পৃথক হবো না।অতঃপর আমরা যখন বিছিন্ন হয়ে গেলাম তখন আমি ও মালিক যেন দীর্ঘকাল সহঅবস্থান সত্ত্বেও একটি রাতও এক সাথে কাটাইনি।’’

মক্কার মুহাজিরদের শরীরে প্রথম প্রথম মদীনার আবহাওয়া খাপ খাচ্ছিল না। হযরত আবু বকর (রা), হযরত ‘আমির ইবন ফুহায়রা (রা), হযরত বিলাল (রা) এবং আরো অনেকে, এমনকি খোদ ‘আয়িশা (রা) মদীনায় আসার পর প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হন। জ্বরের ঘোরে তাঁদের অনেকের মুখ থেকে তখন কবিতার পংক্তি উচ্চারিত হতো। এমন কছিু পংক্তি হযরত ‘আয়িশার (রা) স্মৃতিতে ছিল এবং তিনি বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ হযরত আবু বকরের (রা) জ্বারের প্রকোপ দেখা দিলে নিম্নোক্ত শ্লোকটি উওড়াতেনঃ ‘‘প্রতিটি মানুষ তার পরিবার পরিজনের মধ্যে দিনের সূচনা করে।অথচ মৃত্যু তার জুতোর ফিতার চেয়েও বেশি নিকটবর্তী। হযরত বিলাল (রা) জ্বরের ঘোরে নিম্নের পংক্তি দুইটি জোরে জোরে আওরাতেনঃ ‘‘হায়! আমি যদি জানতে পারতাম যে, কোন একটি রাত আমি মক্কার উপত্যকায় কাটাবো এবং আমার চারপাশে হজখীর ও জলীল ঘাস থাকবে। অথবা মাজ্জান্নার সরোবরে কোন একদিন আমার বিচরণ ঘটবে, অথবা শামা ও তুফায়েল পর্বতদ্বয় কোনদিন আমার দৃষ্টিগোচর হবো।’’

হযরত ‘‘আমির ইবন ফুহাইরাকে (রা) তাঁর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে এই পংক্তিটি আবৃত্তি করতেনঃ ‘‘আমি স্বাদ চাখার আগেই মৃত্যুকে পেয়ে গেছি। ভীরু কাপুরুষের মৃত্যু তার উপর দিক থেকেই আসে।’’ বদর যুদ্ধে কুরাইশদের অনেক বড় বড় নেতা নিহত হয় এবং তাদেরকে বদরের কুয়োয় নিক্ষেপ করা হয়। কুরাইশ কবিরা তাদের স্মরণে অনেক আবেগজড়িত মরসিয়া রচনা করেছিল। সেই সকল কবিতার অনেক পংক্তি হযরত ‘আয়িশার (রা) স্মৃতিতে ছিল এবং তিনি তা বর্ণনাও করেছেন। নিম্নের বয়েত দুইটিও তিনি বর্ণনা করেছেন।

‘‘বদরের কূপের মধ্যে কতনা নর্তকী ও অভিজাত শরাবখোর পড়ে আছে, তাদের অবস্থা কি? উম্মে বকর তাদের শান্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছে। আমার স্বগোত্রের লোকদের মৃত্যুর পরে আমার জন্য কোন শান্তি আসতে পারে কি?’’ হযরত সা‘দ ইবন মু‘য়াজ (রা) খন্দক যুদ্ধের সময় আরবী রজয ছন্দের একটি গানের একটি কলি আওড়াতেন, তাও হযরত ‘আয়িশা (রা) মনে রেখেছিলেন। সেটি তিনি এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘হায়! যদি অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে উট যুদ্ধের নাগাল পেয়ে যেত। মরণের সময় যখন ঘনিয়ে আসে তখন সে মরণ কতনা সুন্দর।

মক্কার কুরাইশ কবিরা যখন রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিন্দায় কবিতা বলতো তখন মদীনার মুসলমান কবিরা কিভাবে তার জবাব দিতেন, সে কথাও আমরা হযরত ‘আয়িশার (রা) মাধ্যমে জানতে পারি। তিনি বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কুরাইশদের নিন্দা করে কবিতা রচনা কর। এ কবিতা তাদের উপর তরবারির আঘাতের চেয়েও বেশি কার্যকর হবে। হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহা (রা) একজন কবি ছিলেন। তিনি একটি কবিতা রচনা করলেন; কিন্তু তা রাসূলুল্লহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তেমন পছন্দ হলো না। তিনি কবি কা‘ব ইবন মালিককে (রা) নির্দেশ দিলেন কুরাইশদের জবাবে একটি কবিতা লিখতে। অবশেষে হযরত হাসসান ইবন সাবিতের পালা এলো। তিনি এসে আরজ করলেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! সেই সত্তার শপথ! যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন। আমি তাদের এমন বিধ্বস্ত করে ছাড়বো, যেমন লোকেরা চামড়াকে করে থাকে।’ রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই। আবু বকর গোটা কুরাইশ খান্দানের মধ্যে কুরাইশদের নসবনামা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। আমারও তার তিনি আবু বকরের (রা) নিকট যান এবং বংশসূত্রের নানা রকম প্যাঁচ ও জটিলতা সম্পর্কে জেনে আবার রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট এসে বলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! তাদের নিকট এমনভাবে বরে করে আনবো, যেমন লোকেরা আটার দলা থেকে চুল টেনে বের করে আনে। তারপর হাসনার (রা) একটি কাসীদা পাঠ করেন যার একটি বয়েত এইঃ 
‘‘আলে হাশিমের সম্মান ও মর্যাদার শিখর হচ্ছেন মাখযূমের নাতি। আর তোমার বাপ ছিল দাস।’’
হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহকে র বলতে শুনেছি, ‘হাসসান! যতক্ষণ তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করতে থাকবে, রুহুল কুদুসের সাহায্য তুমি লাভ করবে।’ তিনি আরও র্বণনা করেছেন যে, আমি রাসূলুল্লাহকে (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথাও বলতে শুনেছি, ‘হাসসান তারে জবাব দিয়ে দুঃখ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করেছে।’ এ সব কথা বর্ণনার পর উম্মুল মু’মিনীন আমাদেরকে হাসসানের এ কাসীদাটিও শুনিয়েছেনঃ “তুমি করেছো মুহাম্মাদের নিন্দা, আর আমি তার জবাব দিয়েছি। আমার এ কাজের প্রতিদান রয়েছে আল্লাহর কাছে। তুমি মুহাম্মাদের নিন্দা করছো, যিনি সৎকর্মশীল, ধার্মিক ও আল্লাহর রাসূল। প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা পালন যার স্বাভাব-বৈশিষ্ট্য। আমার বাপ-দাদা, আমার ইজ্জত-আবরু সবই তোমাদের আক্রমণ থেকে মুহাম্মাদের মান-ইজ্জত রক্ষার জন্য ঢাল স্বরূপ। তোমাদের মধ্যে থেকে কেউ রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিন্দা, প্রশংসা বা সাহায্য করুক না কেন, সবই তাঁর জন্য সমান। জিবরীল আমাদের মধ্যে আছেন। যিনি আল্লাহর বার্তাবাহক ও পবিত্র রূহ-যার সমকক্ষ কেউ নেই।’’

হযরত উসমানের (রা) শাহাদাতের পর মদীনার বিশৃঙ্খল অবস্থার কথা যখন জানতেন তখন তাঁর মুখে নিম্নোক্ত পংক্তিটি উচ্চরিত হলোঃ ‘‘যদি আমার সম্প্রদায়ের নেতারা আমার কথা মানতো তাহলে আমি তাদের এই ফাঁদ ও ধ্বংস থেকে বাঁচাতে পারতাম।’’ বসরা পৌঁছার পর তাঁর মুখে নিম্নের দুইটি বয়েত শোনা যেতঃ ‘‘অত্যাচারীদের আবাসভূমি ছেড়ে দাও-যদিও সেখানে পানি বিশুদ্ধ থাকে এবং ভীতিগ্রস্তদের চলার মত চল। ঘাস নির্বাচন কর। অতঃপর দামাদের সবুজ উপত্যকায় রোদের মধ্যে চরতে থাক।’’

আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি, উটের দুধ কোন কোন বীর সৈনিক -- ছন্দের যে চরণ দুইটি আবৃত্তি করেছিলেন, তা হযরত ‘আয়িশার (রা) স্মরণে ছিল। একবার তিনি চরণ দুইটি আবৃত্তি করে খুব কেঁদেছিলেন। সেই চরণ দুইটি এইঃ ‘‘হে আমাদের মা! যাঁকে আমরা সর্বোত্তম মা বলে জানি, আপনি কি দেখছেন না, কত বীর আহত হয়েছে, কত মাথা ও হাত ঘাসের মত কাটা গেছে।’’ হিশাম ইবন ‘উরওয়া তাঁর পিতা উরওয়া থেকে বর্ণনা করেছেন। ‘আয়িশা (রা) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা কবি লাবীদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করুন। তিনি বলতেনঃ ‘‘যাঁদের পাশে বসবাস করা যেত, তাঁরা সব চলে গেছেন। এখন আমি বেঁচে আছি চর্মরোগগ্রস্ত উটের মত উত্তরাসূরীদের মাঝে।’’ তারপর হযরত ‘আয়িশা (রা) বলেনঃ ‘‘তিনি যদি আমাদের এ কালের অবস্থা দেখতেন, তাহলে কী করতেন! আমি কবি লাবীদের এ রকম হাজারটি বয়েত বলতে পারি। অবশ্য আন্য কবিদের যে পরিমাণ বয়েত আমি বলতে পারি তার তুলনায় এ অতি নগণ্য।’’

হযরত ‘আয়িশার (রা) এ মন্তব্য থেকে আমরা অনুমান করতে পারি, তিনি কি পরিমাণ কাব্যরসিক ছিলেন, এ শাস্ত্রে তাঁর কি পরিমাণ দখল ছিল এবং কত শত আরবী বয়েত তার মুখস্থ ছিল। আমরা হাদীস শাস্ত্রে তাঁর অবদান সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে দেখিছি, কী অসাধারণ প্রতিভার স্বাক্ষর তিনি সেখানে রেখেছেন! আরবী কবিতার ক্ষেত্রে একই দৃশ্য দেখা যায়।

হযরত ‘আয়িশার (রা) এমন কাব্যরুচি এবং শিল্পরস আস্বাদন ক্ষমতা দেখে অনেক কবি তাঁকে নিজের কবিতা শোনাতেন। হযরত হাসসান ইবন সাবিত (রা) আনসারদের মধ্যে কবিত্বের স্বীকৃত উসতাদ ছিলেন। ইফকের ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার কারণে হযরত ‘আয়িশা (রা) তাঁর প্রতি অসন্তোষ থাকা স্বাভাবিক ছিল। তা সত্ত্বেও তিনি হযরত ‘আয়িশার (রা) খিদমতে হাজির হয়ে তাঁকে নিজের কবিতা শোনাতেন। হযরত ‘আয়িশা (রা) তার প্রশংসা করতেন এবং তাঁর বিভিন্ন গুণাবলী বর্ণনা করতেন। তাছাড়া প্রসঙ্গক্রমে নবীর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জলসার অপর দুইজন শ্রেষ্ঠ কবি হযরত কা’ব ইবন মালিক (রা) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহার (রা) নামও উল্লেখ করতেন।

মূলগতভাবে কাব্যচর্চা করা না ভালো, না মন্দ। কবিতাও কথার একটি প্রকার। কথার ভালো মন্দ কবিতার ছন্দের উপর নির্ভরশীল নয়; বরং বিষয়বস্তুর উপর নির্ভরশীল। বিষয়বন্তু যদি খারাপ না হয় তাহলে সেই কবিতায় কোন দোষ নেই। গদ্যেরও ঠিকএকই অবস্থা। ভালোমন্দ নির্ভর করে বিষয়বস্তুর উপর।

কবিতার ভালোমন্দ সম্পর্কে হযরত ‘আয়িশা (রা) ঠিক এ রকম কথাই বলেছেনঃ ‘‘কিছু কবিতা ভালো হয়, কিছু কবিতা খারাপ হয়। ভালোটি গ্রহণ কর, খারাপটি পরিত্যগ কর।’’ তিনি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেছেনঃ ‘সবচেয়ে বড় গুনাহগার ঐ কবি, যে গোটা গোত্রের নিন্দা করে। অর্থাৎ এক দুই জনের খারাপ কাজের জন্য গোটা গোত্রের নিন্দা করা নৈতিকতার পদস্খলন এবং কবিত্ব শক্তির অপব্যবহার মাত্র।


হযরত আয়িশা (রাঃ) এর ১২ পর্বের পুরো জীবনী পড়ুন-




**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url