যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ (০৫) || খুৎবা চলাকালীন কথা বলা || প্লেটের মধ্যভাগ থেকে খাওয়া শুরু করা ||



একজন মুসলিম হিসাবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষিদ্ধ

(পঞ্চম পর্ব)

সংবাদ না দিয়ে হঠাৎ স্ত্রীর নিকট উপস্থিত হওয়া
জারজ সন্তানকে ওয়ারিসি সম্পত্তি দেয়া
খুৎবা চলাকালীন কথা বলা
নামাযরত অবস্থায় বায়ু নির্গমন সন্দেহে নামায ছেড়ে দেয়া
নামাযরত অবস্থায় কাউকে সামনে দিয়ে যেতে দেয়া
আরোহণ হিসেবে ব্যবহৃত কোন পশুর গলায় ঘন্টা লাগানো
প্লেটের মধ্যভাগ থেকে খাওয়া শুরু করা
পিঁপড়া, মৌমাছি, হুদহুদ ও শ্রাইককে হত্যা করা
ইহুদি-খ্রিস্টানদের প্লেটে খাদ্য গ্রহণ করা
নিজকে, নিজের ধন-সম্পদকে ও সন্তানদেরকে অভিশাপ দেয়া

সংবাদ না দিয়ে হঠাৎ স্ত্রীর নিকট উপস্থিত হওয়া 

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا قَدِمَ أَحَدُكُمْ لَيْلاً فَلاَ يَأْتِيَنَّ أَهْلَهُ طُرُوْقًا حَتَّى تَسْتَحِدَّ الْـمُغِيْبَةُ وَتَمْتَشِطَ الشَّعِثَةُ

‘‘যখন তোমাদের কেউ সফর শেষে নিজ এলাকায় রাত্রি বেলায় পদার্পণ করে তখন সে যেন তড়িঘড়ি নিজ স্ত্রীর নিকট না আসে যতক্ষণ না উক্ত স্বামী অনুপস্থিত মহিলাটি নিজ নাভিনিম্ন কেশ পরিষ্কার করে এবং নিজের এলোমেলো চুলগুলো আঁচড়ে নেয়’’।[1]

রাসূল (সা.) সফর শেষে নিজ এলাকায় পৌঁছুলে সকাল অথবা সন্ধ্যা বেলায় নিজ স্ত্রীদের সাথে সাক্ষাৎ করতেন। রাত্রি বেলায় নয়।

আনাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ يَطْرُقُ أَهْلَهُ لَيْلاً ، وَكَانَ يَأْتِيْهِمْ غُدْوَةً أَوْ عَشِيَّةً

‘‘রাসূল (সা.) (সফর শেষে রাত্রি বেলায় নিজ এলাকায় পৌঁছুলে) রাত্রি বেলায় নিজ স্ত্রীদের নিকট যেতেন না। বরং তিনি তাঁদের নিকট যেতেন সকাল অথবা সন্ধ্যা বেলায়’’।[2]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৭১৫)
[2] (মুসলিম, হাদীস ১৯২৮)

জারজ সন্তানকে ওয়ারিসি সম্পত্তি দেয়া

আমর বিন্ শু’আইব তাঁর পিতা থেকে এবং তাঁর পিতা তাঁর (’আমরের) দাদা থেকে বর্ণনা করেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا رَجُلٍ عَاهَرَ بِحُرَّةٍ أَوْ أَمَةٍ ؛ فَالْوَلَدُ وَلَدُ زِنَا ؛ لاَ يَرِثُ وَلاَ يُوْرَثُ

‘‘যে ব্যক্তি কোন স্বাধীনা অথবা বান্দির সাথে ব্যভিচার করলো। অতঃপর যে সন্তান হলো সেটি হবে ব্যভিচারের সন্তান। সে নিজেও কারোর থেকে মিরাস পাবে না এবং তার থেকেও কেউ মিরাস পাবে না’’।[1]
[1] (তিরমিযী, হাদীস ২১১৩)

খুৎবা চলাকালীন কথা বলা

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِكَ : أَنْصِتْ يَوْمَ الْـجُمُعَةِ وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ

‘‘জুমু’আর দিন তুমি যদি তোমার সাথীকে বলোঃ চুপ থাকো; অথচ ইমাম সাহেব খুৎবা দিচ্ছেন তা হলে তুমি একটি অযথা কাজ করলে’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৯৩৪ মুসলিম, হাদীস ৮৫১)

নামাযরত অবস্থায় বায়ু নির্গমন সন্দেহে নামায ছেড়ে দেয়া

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِيْ الصَّلاَةِ ، فَوَجَدَ حَرَكَةً فِيْ دُبُرِهِ ، أَحْدَثَ أَوْ لَمْ يُحْدِثْ ؟ فَأَشْكَلَ عَلَيْهِ ؛ فَلاَ يَنْصَرِفْ حَتَّى يَسْمَعَ صَوْتًا أَوْ يَجِدَ رِيْحًا

‘‘তোমাদের কেউ নামাযে থাকাবস্থায় নিজ পায়ুপথে নড়াচড়া অনুভব করলে সে যদি এ ব্যাপারে সন্দিহান হয় যে, তার ওযু ভেঙ্গে গিয়েছে না কি ভাঙ্গেনি ? তা হলে সে যেন নামায ছেড়ে না দেয় যতক্ষণ না সে (বায়ু নির্গমনের) আওয়াজ শুনতে পায় অথবা (তার নাকে) দুর্গন্ধ অনুভব করে’’।[1]
[1] (আবু দাউদ, হাদীস ১৭৭)

নামাযরত অবস্থায় কাউকে সামনে দিয়ে যেতে দেয়া

আবু সা’ঈদ্ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّيْ فَلاَ يَدَعْ أَحَـدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ ، وَلْيَدْرَأْهُ مَا اسْتَطَاعَ ، فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ

‘‘যখন তোমাদের কেউ নামাযরত অবস্থায় থাকে তখন সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে যেতে না দেয়। বরং সে যেন তাকে যথাসাধ্য বাধা দেয়। তাতেও সে নিশ্চেষ্ট না হলে তাকে শক্তি প্রয়োগে বাধা দিবে। কারণ, সে হচ্ছে শয়তান’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৫০৫)

আরোহণ হিসেবে ব্যবহৃত কোন পশুর গলায় ঘন্টা লাগানো

আব্দুল্লাহ্ বিন্ উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَصْحَبُ الْـمَلاَئِكَةُ رَكْبًا مَعَهُمْ جُلْجُلٌ

‘‘ফিরিশতাগণ এমন কোন আরোহী দল অথবা ভ্রমণকারী জামাতের সাথী হবেন না যাদের সাথে রয়েছে ঘন্টা’’।[1]
উম্মু হাবীবাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَصْحَبُ الْـمَلاَئِكَةُ رِفْقَةً فِيْهَا جَرَسٌ

‘‘ফিরিশতাগণ এমন কোন ভ্রমণকারী জামাতের সাথী হবেন না যাদের সাথে রয়েছে ঘন্টা’’।[2]
আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) একদা ঘন্টা সম্পর্কে বলেন:

مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ

‘‘ঘন্টা হচ্ছে শয়তানের একটি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র’’।[3]
[1] (নাসায়ী, হাদীস ৫২২১)
[2] (আবু দাউদ, হাদীস ২৫৫৪)
[3] (আবু দাউদ, হাদীস ২৫৫৬)

প্লেটের মধ্যভাগ থেকে খাওয়া শুরু করা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ الْبَرَكَةَ تَنْزِلُ فِيْ وَسَطِ الطَّعَامِ ، فَكُلُوْا مِنْ حَافَاتِهِ ، وَلاَ تَأْكُلُوْا مِنْ وَسَطِهِ

‘‘নিশ্চয়ই বরকত খাদ্যের মধ্যভাগেই অবতীর্ণ হয়। সুতরাং তোমরা প্লেটের চতুষ্পার্শ্ব থেকেই খাওয়া শুরু করবে। মধ্যভাগ থেকে নয়’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ১৫৯১)

পিঁপড়া, মৌমাছি, হুদহুদ ও শ্রাইককে হত্যা করা

আব্দুল্লাহ্ বিন্ আব্বাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَرْبَعَةٌ مِنَ الدَّوَابِّ لاَ يُقْتَلْنَ : النَّمْلَةُ ، وَالنَّحْلَةُ ، وَالْـهُدْهُدُ ، وَالصُّرَدُ

‘‘চার জাতীয় প্রাণীকে হত্যা করা যাবে নাঃ পিপীলিকা, মধুমক্ষিকা, হুদহুদ ও শ্রাইক’’।[1]
[1] (স্বা’হীহুল-জা’মি’, হাদীস ৮৭৯)

ইহুদি-খ্রিস্টানদের প্লেটে খাদ্য গ্রহণ করা

আবু সা’লাবাহ্ আল-খুশানী (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَمَّا مَا ذَكَرْتَ أَنَّكَ بِأَرْضِ أَهْلِ كِتَابٍ ، فَلاَ تَأْكُلُوْا فِيْ آنِيَتِهِمْ إِلاَّ أَنْ لاَ تَجِـدُوْا بُدًّا ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوْا بُدًّا فَاغْسِلُوْهَا وَكُلُوْا فِيْهَا

‘‘তুমি উল্লেখ করেছো যে, তুমি ইহুদি-খ্রিস্টানদের এলাকায় অবস্থান করছো। সুতরাং যথাসাধ্য তাদের প্লেটে খাদ্য গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে। তবে তা সম্ভব না হলে তা ধুয়ে তাতে খাদ্য গ্রহণ করবে’’।[1]
[1] (বুখারী, হাদীস ৫৪৯৪ মুসলিম, হাদীস ১৯৩০)

নিজকে, নিজের ধন-সম্পদকে ও সন্তানদেরকে অভিশাপ দেয়া

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমরা একদা রাসূল (সা.) এর সঙ্গে বাত্বনে বুওয়াত্ব নামক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছিলাম। যাতে আমরা পালাক্রমে একই উটে পাঁচ, ছয় অথবা সাত জন করে আরোহণ করতাম। এভাবে জনৈক আন্সারী সাহাবীর উটে চড়ার পালা আসলে সে উটটিতে আরোহণ করেই তাকে তাড়া দিলে উটটি থেমে থেমে চলতে লাগলো। তখন সে উটটিকে ধমক দিয়ে আল্লাহ্’র অভিশাপ দিলে রাসূল (সা.) বললেন: কে তার উটের অভিশাপকারী ? লোকটি বললোঃ আমি। তখন রাসূল (সা.) বললেন:

انْزِلْ عَنْهُ ، فَلاَ تَصْحَبْنَا بِمَلْعُوْنٍ ، لاَ تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ ، وَلاَ تَدْعُوْا عَلَى أَوْلاَدِكُمْ ، وَلاَ تَدْعُوْا عَلَى أَمْوَالِكُمْ ، لاَ تُوَافِقُوْا مِنَ اللهِ سَاعَةً يُسْأَلُ فِيْهَا عَطَاءٌ فَيَسْتَجِيْبُ لَكُمْ

‘‘তুমি উটটি থেকে নেমে যাও। অভিশপ্ত উট নিয়ে আমাদের সাথী হয়ো না। তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদকে বদ্দো’আ দিও না। হয়তো-বা উক্ত বদ্দো’আ এমন এক সময়ে পড়ে বসবে যখন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট কিছু চাওয়া হলে আললাহ্ তা’আলা তা দ্রুত কবুল করেন’’।[1]
[1] (মুসলিম, হাদীস ৩০০৯)


একজন মুসলিম হিসেবে যে কাজগুলো আপনার জন্য নিষেধ- এর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুনঃ
১ম পর্ব    ২য় পর্ব    ৩য় পর্ব    ৪র্থ পর্ব    ৫ম পর্ব    ৬ষ্ট পর্ব    ৭ম পর্ব    ৮ম পর্ব    ৯ম পর্ব    ১০ম পর্ব    ১১তম পর্ব    ১২তম পর্ব    ১৩তম পর্ব    ১৪তম পর্ব    ১৫তম পর্ব  ১৬তম পর্ব    ১৭তম পর্ব    ১৮তম পর্ব    ১৯তম পর্ব    ২০ম পর্ব    ২১তম পর্ব    ২২তম পর্ব    ২৩তম পর্ব    ২৪তম পর্ব    ২৫তম পর্ব    ২৬তম পর্ব    ২৭তম পর্ব     ২৮তম পর্ব    ২৯তম পর্ব    ৩০ম পর্ব    ৩১তম পর্ব    ৩২তম পর্ব    ৩৩তম পর্ব    ৩৪ম পর্ব




***************************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url