প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৩৫] || মহানবীর জীবনী ||





পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি কতটুকু জানি। প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।

বনু নাযীর যুদ্ধঃ কারণ, ফলাফল ও শিক্ষনীয় বিষয়

বনু নাযীর যুদ্ধ

(৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মোতাবেক ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের আগষ্ট মাস)
ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি চরম বিদ্বেষী মদীনার ইহূদী গোত্রগুলির অন্যতম ছিল বনু নাযীর(بَنُو النَضِيرِ) গোত্র। এরা নিজেদেরকে হযরত হারূণ (আঃ)-এর বংশধর বলে দাবী করত। তারা বায়তুল মুক্বাদ্দাস অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হবার পর মদীনায় হিজরত করেছিল। তাদের মধ্যে অনেক পন্ডিত ছিল। তারা তওরাতে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে ঠিকই চিনেছিল। কিন্তু তিনি বনু ইস্রাঈল বংশের না হয়ে বনু ইসমাঈল বংশের হওয়ায় তারা তাঁকে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং সর্বপ্রকার শত্রুতায় লিপ্ত হয়। হুওয়াই বিন আখত্বাব, সাল্লাম বিন আবুল হুক্বাইক্ব, কিনানাহ বিন রবী‘, সাল্লাম বিন মিশকাম প্রমুখ ছিল এদের নেতা। অর্থ-বিত্তে ও অস্ত্র-শস্ত্রে সমৃদ্ধ হ’লেও তারা কখনো সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হ’ত না। ভীরু ও কাপুরুষ হওয়ার কারণে সর্বদা শঠতা-প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের কূট কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকতো। ২য় হিজরীতে বদর যুদ্ধের এক মাস পরে অন্যতম ইহূদী গোত্র বনু ক্বায়নুক্বার বিতাড়ন ও ৩য় হিজরীর মধ্য রবীউল আউয়ালে ইহূদী নেতা কা‘ব বিন আশরাফের হত্যাকান্ডের ফলে তাদের মধ্যে সাময়িকভাবে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। সেকারণ তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করেছিল। কিন্তু ৩য় হিজরীর শাওয়াল মাসে ওহোদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের ফলে তারা তা কার্যতঃ ভঙ্গ করে। তারা পুনরায় মদীনার মুনাফিক ও মক্কার মুশরিক নেতাদের সাহায্য করার মাধ্যমে চক্রান্তমূলক তৎপরতা শুরু করে দেয়। সব জানা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পূর্বের সন্ধিচুক্তির কারণে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে সবকিছু হযম করতেন। কিন্তু ইতিমধ্যে তারা খোদ রাসূল (ছাঃ)-কেই হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরিহার্য হয়ে পড়ে।

বনু নাযীর যুদ্ধের কারণ

(১) কুরায়েশ নেতারা বদর যুদ্ধের পূর্বে আব্দুল্লাহ বিন উবাই এবং মূর্তিপূজারী নেতাদের প্রতি নিম্নোক্ত কঠোর ভাষায় হুমকি দিয়ে চিঠি পাঠায়।-

إِنَّكُمْ آوَيْتُمْ صَاحِبَنَا وَإِنَّا نُقْسِمُ بِاللهِ لَتُقَاتِلُنَّهُ أَوْ لَتُخْرِجُنَّهُ أَوْ لَنَسِيرَنَّ إِلَيْكُمْ بِأَجْمَعِنَا حَتَّى نَقْتُلَ مُقَاتِلَتَكُمْ وَنَسْتَبِيحَ نِسَاءَكُمْ-

‘তোমরা আমাদের লোকটিকে (মুহাম্মাদকে) আশ্রয় দিয়েছ। এজন্য আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, হয় তোমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে ও তাকে বের করে দিবে নতুবা আমরা তোমাদের উপরে সর্বশক্তি নিয়ে হামলা করব। তোমাদের যোদ্ধাদের হত্যা করব ও মহিলাদের হালাল করে নেব’।[1] অতঃপর বদর যুদ্ধে কুরায়েশদের পরাজয়ে ভীত হয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ও তার সাথীরা প্রকাশ্যে ইসলাম কবুল করে। এমতাবস্থায় কুরায়েশ নেতারা ইহূদীদের কাছে পত্র লিখে যে,إِنَّكُمْ أَهْلُ الْحَلْقَةِ وَالْحُصُونِ وَإِنَّكُمْ لَتُقَاتِلُنَّ صَاحِبَنَا أَوْ لَنَفْعَلَنَّ كَذَا وَكَذَا وَلاَ يَحُولُ بَيْنَنَا وَبَيْنَ خَدَمِ نِسَائِكُمْ شَىْءٌ ‘তোমরা অস্ত্র ও দুর্গের মালিক। অবশ্যই তোমরা আমাদের লোকটির সাথে যুদ্ধ করবে। অথবা আমরা তোমাদের সাথে এই এই করব। আর তখন আমাদের মধ্যে ও তোমাদের নারীদের পায়ের অলংকারের মধ্যে কোন পর্দা থাকবে না’। তখন বনু নাযীর চুক্তি ভঙ্গের সংকল্প করে। সেমতে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে লোক পাঠায় এই বলে যে, আমাদের নিকট আপনার ত্রিশজন সাথীকে পাঠান। আমরাও তাদের নিকট আমাদের ত্রিশজন আলেমকে পাঠাব। অতঃপর আমরা একটি উপযুক্ত স্থানে বসব। সেখানে আপনি বক্তব্য রাখবেন। অতঃপর যদি তারা আপনার দ্বীন কবুল করে, তাহলে আমরাও তা কবুল করব’ (আবুদাঊদ হা/৩০০৪)।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, অতঃপর যখন তারা উভয় দল একটি প্রকাশ্য স্থানে উপনীত হ’ল, তখন ইহূদীদের জনৈক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে বলল, কিভাবে আমরা এত লোকের মধ্যে মুহাম্মাদের কাছাকাছি হব? অথচ তাঁর সঙ্গে থাকবে ত্রিশজন মানুষ। যারা প্রত্যেকেই নিজের জীবন শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁর কাছে কাউকে পৌঁছতে দিবে না। তখন তারা প্রস্তাব পাঠালো এই মর্মে যে, ষাট জন লোক একত্রিত হলে আমাদের পরস্পরের কথা শুনতে ব্যাঘাত হবে। অতএব আপনি তিনজন সাথীকে নিয়ে আসুন। আমাদেরও তিনজন আলেম আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। যদি তারা আপনার উপর ঈমান আনে তাহলে আমরা আপনার অনুসারী হব। তখন তিনি তাই করলেন। অতঃপর ইহূদীরা তাদের ঐ তিনজন আলেমের সাথে গোপনে খঞ্জর (এক প্রকার দু’ধারী অস্ত্র) পাঠালো। এ খবর বনু নাযীরের জনৈকা মহিলা তার ভাই জনৈক আনছার মুসলিমের নিকটে পাঠান। তিনি এ খবর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে পৌঁছে দেন। তখন রাসূল (ছাঃ) সেখানে পৌছার পূর্বেই ফিরে আসেন এবং পরের দিন সকালেই তাদের বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করেন ও সেদিনই তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে প্রস্তাব পাঠালেন যে, তোমরা আমাদের পক্ষ থেকে কখনোই নিরাপদ হবে না, যতক্ষণ না তোমরা আমাদের সাথে একটি চুক্তিতে উপনীত হবে। কিন্তু তারা চুক্তি করতে অস্বীকার করল। তখন রাসূল (ছাঃ) তাদের সঙ্গে দিনভর যুদ্ধে রত হলেন।... পরের দিন তিনি পুনরায় শান্তিচুক্তির আহবান জানান। কিন্তু তারা অস্বীকার করে। ফলে আবার সারাদিন যুদ্ধ হয়। কারণ মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই গোপনে তাদের খবর পাঠিয়েছিল যে, তারা যুদ্ধ করলে আমরা তোমাদের সঙ্গে থাকব। তোমাদের বের করে দিলে আমরাও তোমাদের সঙ্গে বেরিয়ে যাব (হাশর ৫৯/১১)। কিন্তু দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরেও তাদের কোন সাহায্য না পেয়ে তারা নিরাশ হয়ে পড়ে। অবশেষে তারা চুক্তিতে বাধ্য হয় এবং সার্বিক বহিষ্কারে সম্মত হয়। এই শর্তে যে, অস্ত্র ব্যতীত উটে বহনযোগ্য সহায়-সম্পদ নিয়ে তারা চলে যাবে। ফলে তারা এমনকি তাদের ঘরের দরজা-জানালাসমূহ খুলে নিয়ে যায়। এভাবে তারা নিজেদের গড়া বাড়ি-ঘর নিজেদের হাতে ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। তাদের এই বহিষ্কার ছিল ‘শামের দিকে প্রথম বহিষ্কার’(أَوَّلُ حَشْرِ النَّاسِ إِلَى الشَّامِ)।[2] এই সময় মদীনার প্রশাসক ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ) এবং যুদ্ধের পতাকাবাহী ছিলেন হযরত আলী (রাঃ)।

ইবনু হাজার বলেন, অত্র হাদীছে ইবনুত তীনের প্রতিবাদ রয়েছে। যিনি ধারণা করেন যে, বনু নাযীর যুদ্ধের বিষয়ে ছহীহ সনদে কোন হাদীছ নেই। তিনি বলেন, আমি বলব যে, এটি অধিকতর শক্তিশালী ইবনু ইসহাকের বর্ণনার চাইতে। যেখানে তিনি বনু নাযীর যুদ্ধের কারণ হিসাবে বলেছেন যে, রাসূল (ছাঃ) তাদের নিকটে দু’জন ব্যক্তির রক্তমূল্য আদায়ে সাহায্য নেয়ার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ জীবনীকার ইবনু ইসহাকের উক্ত বর্ণনার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত’।[3] এ ঘটনা উপলক্ষে সূরা হাশর নাযিল হয় (বুখারী হা/৪৮৮২)। ইবনু আববাস (রাঃ) একে ‘সূরা নাযীর’(سُورَةُ النَّضِيرِ) বলতেন (বুখারী হা/৪৮৮৩)।

বনু নাযীর-এর বহিষ্কার বিষয়ে ছহীহ হাদীছসমূহ রয়েছে’।[4] তবে তাদের উপরে অবরোধ কতদিন আরোপিত ছিল, এবিষয়ে ইবনু কাছীর বলেন, ৬দিন এবং ওয়াক্বেদী ও ইবনু সা‘দ বিনা সনদে ১০ দিনের কথা বলেছেন’।[5] তাদের কিছু খেজুর গাছ কাটা হয়েছিল এবং কিছু ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল, সেটাও কুরআন ও হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত’।[6] যেমন আল্লাহ বলেন, مَا قَطَعْتُمْ مِنْ لِينَةٍ أَوْ تَرَكْتُمُوهَا قَائِمَةً عَلَى أُصُولِهَا فَبِإِذْنِ اللهِ وَلِيُخْزِيَ الْفَاسِقِينَ ‘তোমরা যে কিছু খেজুর গাছ কেটে দিয়েছ এবং কিছু রেখে দিয়েছ, তা আল্লাহর অনুমতিক্রমেই হয়েছে। যাতে তিনি পাপাচারীদের লাঞ্ছিত করেন’ (হাশর ৫৯/৫)।

[1]. আবুদাঊদ হা/৩০০৪ ‘খারাজ’ অধ্যায় ‘বনু নাযীর-এর বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ-২৩।
[2]. ইবনু মারদাবিয়াহ, সনদ ছহীহ; ফাৎহুল বারী ‘বনু নাযীরের বর্ণনা’ অনুচ্ছেদ, ৭/৩৩১ পৃঃ; আবু দাঊদ হা/৩০০৪, সনদ ছহীহ; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৯৭৩৩; কুরতুবী, তাফসীর সূরা হাশর ২ আয়াত।

বনু নাযীরের বহিষ্কার সম্পর্কে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ) তাদের কাছে বনু কেলাবের নিহত দুই ব্যক্তির রক্তমূল্য সংগ্রহের জন্য এলে তারা তাঁকে ও তাঁর সাথীদেরকে শঠতার মাধ্যমে বসিয়ে রাখে। অতঃপর দেওয়ালের উপর থেকে পাথরের চাক্কি ফেলে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। তখন সেখান থেকে ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের দুর্গ অবরোধ করেন। অতঃপর ছয় বা পনের দিন অবরোধের পরে তারা আত্মসমর্পণ করলে তাদেরকে মদীনা থেকে চিরদিনের মত বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু ঘটনাটি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়, বরং ‘মুরসাল’ (ইবনু হিশাম ২/১৯০; সিলসিলা যঈফাহ হা/৪৮৬৬)।

[3]. ফাৎহুল বারী, ‘মাগাযী’ অধ্যায়, ‘বনু নাযীর’-এর বৃত্তান্ত, অনুচ্ছেদ-১৪, ৭/৩৩২ পৃঃ।
[4]. বুখারী হা/৪০৩১ প্রভৃতি; মুসলিম হা/১৭৪৬ (২৯); মিশকাত হা/৩৯৪৪।
[5]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা হাশর ৫ আয়াত; সীরাহ ছহীহাহ ২/৩০৮-০৯।
[6]. বুখারী হা/৪০৩২; মুসলিম হা/১৭৪৬ (৩০); মিশকাত হা/৩৯৪৪।

ফাই-য়ের বিধান

এই যুদ্ধে ফাই-য়ের বিধান নাযিল হয়। বিনা যুদ্ধে অর্জিত শত্রু সম্পত্তিগুলি রাসূল (ছাঃ)-এর মালিকানাধীন ‘ফাই’ হিসাবে গণ্য হয়। যে বিষয়ে আল্লাহ বলেন,وَمَا أَفَاءَ اللهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلا رِكَابٍ وَلَكِنَّ اللهَ يُسَلِّطُ رُسُلَهُ عَلَى مَنْ يَشَاءُ وَاللهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘আল্লাহ জনপদবাসীদের নিকট থেকে তাঁর রাসূলকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, যার জন্য তোমরা ঘোড়ায় বা উটে সওয়ার হয়ে যুদ্ধ করোনি। কিন্তু আল্লাহ যার উপর ইচ্ছা করেন, স্বীয় রাসূলগণকে কর্তৃত্ব দান করে থাকেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ সকল কিছুর উপরে ক্ষমতাশালী’ (হাশর ৫৯/৬)।

বনু নাযীরের পরিত্যক্ত সম্পত্তি গণীমত নয় বরং ‘ফাই’ হিসাবে গণ্য হয়। কেননা এখানে কোন যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। ফলে তা বণ্টিত হয়নি। সবটাই রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসাবে সংরক্ষিত হয়। যা রাসূল (ছাঃ) পরবর্তী যুদ্ধ প্রস্ত্ততি ও অন্যান্য দান-ছাদাক্বাহর কাজে ব্যয় করেন। অবশ্য সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি ব্যয় করেন নিজস্ব অধিকার বলে প্রথম দিকে হিজরতকারী ছাহাবীগণের মধ্যে। কিছু দেন অভাবগ্রস্ত আনছার ছাহাবী আবু দুজানা ও সাহল বিন হুনায়েফকে এবং কিছু রাখেন নিজ স্ত্রীগণের সংবৎসরের খোরাকির জন্য। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে অস্ত্র-শস্ত্র ছাড়া বাকী সব মালামাল নিয়ে পরিবার-পরিজনসহ চলে যাবার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফলে তারা নিজেদের হাতে গড়া ঘরবাড়ি নিজেরা ভেঙ্গে দরজা-জানালা সহ ৬০০ উট বোঝাই করে নিয়ে চলে যায়। গোত্রনেতা হুয়াই বিন আখত্বাব, সাল্লাম বিন আবুল হুক্বাইক্ব সহ অধিকাংশ ইহূদী ৬০ মাইল দূরে খায়বরে চলে যায়। বাকী কিছু অংশ সিরিয়া চলে যায়। তবে তাদের মধ্যে ইয়ামীন বিন ‘আমর ও আবু সা‘দ বিন ওয়াহাব (يامين بن عمرو وأبو سعد بنُ وَهْب) নামক দু’জন ব্যক্তি ইসলাম কবুল করেন। ফলে তাদের মালামাল সবই অক্ষত থাকে’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৩১০)।

মুনাফিক ও শয়তান

বনু নাযীরকে রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে উসকে দেবার কাজে মুনাফিকদের প্ররোচনা দান, অতঃপর পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে আল্লাহ পাক সরাসরি শয়তানের কাজের সঙ্গে তুলনা করে বলেন,

كَمَثَلِ الشَّيْطَانِ إِذْ قَالَ لِلْإِنْسَانِ اكْفُرْ فَلَمَّا كَفَرَ قَالَ إِنِّيْ بَرِيْءٌ مِّنْكَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعَالَمِيْنَ- فَكَانَ عَاقِبَتَهُمَا أَنَّهُمَا فِي النَّارِ خَالِدَيْنِ فِيْهَا وَذَلِكَ جَزَاءُ الظَّالِمِيْنَ-

‘তারা শয়তানের মত, যে মানুষকে কাফের হতে বলে। অতঃপর যখন সে কাফের হয়, তখন শয়তান বলে, তোমার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি বিশ্বপালক আল্লাহকে ভয় করি’। ‘অতঃপর তাদের পরিণতি হবে এই যে, তারা উভয়ে জাহান্নামে যাবে এবং সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। এটাই হল যালেমদের যথাযোগ্য প্রতিফল’ (হাশর ৫৯/১৬-১৭)।

এ বিষয়ে সূরা হাশর ৬-৭ আয়াতদ্বয় নাযিল হয়। তাদের এই নির্বাসনকে কুরআনে أَوَّلُ الْحَشْرِ বা ‘প্রথম একত্রিত বহিষ্কার’ (হাশর ৫৯/২) বলে অভিহিত করা হয়।

মূলতঃ এর দ্বারা আল্লাহ পাক আরব উপদ্বীপকে কাফেরমুক্ত করতে চেয়েছেন এবং সেটাই পরের বছর বাস্তবায়িত হয় সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যার বিশ্বাসঘাতকতার চূড়ান্ত শাস্তি ও সার্বিক বিতাড়নের মাধ্যমে। অতঃপর ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে (১৩-২৩ হি.) এদের অবাধ্যতা ও চুক্তি ভঙ্গের কারণে তিনি খায়বর থেকে এদেরকে নাজদ ও আযরূ‘আতে, মতান্তরে তায়মা ও আরীহা-তে নির্বাসিত করেন। ইতিহাসে যাকে ‘২য় হাশর’ বলা হয়ে থাকে’ (কুরতুবী, তাফসীর সূরা হাশর ২ আয়াত)।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে যে,

لاَ إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنُ بِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انْفِصَامَ لَهَا وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ- (البقرة 256)

‘দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ যবরদস্তি নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। অতঃপর যে ব্যক্তি ত্বাগূতকে প্রত্যাখ্যান করবে ও আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে দৃঢ়মুষ্ঠিতে ধারণ করবে এমন এক সুদৃঢ় হাতল, যা ভাঙ্গবার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৫৬) আয়াতটি মদীনার আনছারদের কারণে নাযিল হয়। যদিও এর হুকুম সর্বযুগে সকলের জন্য প্রযোজ্য। জনৈকা আনছার মহিলা যার কোন সন্তান বাঁচতো না, তিনি মানত করেন যে, যদি এবার তার কোন পুত্র সন্তান হয় ও বেঁচে থাকে, তাহ’লে তিনি তাকে ইহূদী বানাবেন। কিন্তু (৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে) যখন মদীনা থেকে বনু নাযীর ইহূদী গোত্রের উচ্ছেদের হুকুম হ’ল, তখন আনছারগণ বলে উঠলেন যে, আমরা আমাদের সন্তানদের ছাড়তে পারি না, যারা দুগ্ধপানের জন্য ইহূদী দুধমাতাদের কাছে রয়েছে। তখন অত্র আয়াত নাযিল হয়।[1] যাতে বলা হয় যে, ধর্মের ব্যাপারে কোন যবরদস্তি নেই। হক ও বাতিল স্পষ্ট হয়ে গেছে। অতএব আনছার সন্তানরা দুগ্ধপানের কারণে ইহূদী দুধমাতাদের কাছে থাকলেও তারা ‘হক’ বুঝে সময়মত ইসলামে ফিরে আসবে’।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, বনু নাযীরকে মদীনা থেকে বিতাড়নকালে আনছাররা যখন তাদের সন্তানদের ইহূদী দুধমাতাদের নিকট থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার আবেদন করল, তখন রাসূল (ছাঃ) চুপ থাকলেন। অতঃপর উপরোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়। অতঃপর তিনি বললেন,قَدْ خُيِّرَ أَصْحَابُكُمْ فَإِنِ اخْتَارُوكُمْ فَهُمْ مِنْكُمْ وَإِنِ اخْتَارُوهُمْ فَأَجْلُوهُمْ مَعَهُمْ ‘সন্তানের অভিভাবকদের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। এক্ষণে যদি সন্তানেরা তোমাদের পসন্দ করে, তাহ’লে তারা তোমাদের মধ্যকার বলে গণ্য হবে। আর যদি তারা তাদেরকে (ইহূদীদেরকে) পসন্দ করে, তাহ’লে তাদের সাথে এদেরকেও বহিষ্কার কর’।[2]

ইমাম খাত্ত্বাবী (৩১৯-৩৮৮ হি.) বলেন, উক্ত হাদীছে দলীল রয়েছে যে, ইসলাম আসার পূর্বে শিরক ও কুফরী থেকে ইহূদী বা নাছারা ধর্মে গমন করা জায়েয ছিল। অতঃপর ইসলাম আসার পরে সেটি নিষিদ্ধ হয়’ (‘আওনুল মা‘বূদ শরহ আবুদাঊদ হা/২৬৮২)।

[1]. ইবনু জারীর, কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ২৫৬ আয়াত; আবুদাঊদ হা/২৬৮২; হাদীছ ছহীহ।
[2]. ইবনু জারীর হা/৫৮১৮; বাগাভী, মা‘আলিমুত তানযীল, তাফসীর সূরা বাক্বারাহ ২৫৬ আয়াত; বায়হাক্বী হা/১৮৪২০ ৯/১৮৬ পৃঃ।

বনু নাযীর যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত বিধান সমূহ

১. ইসলাম আসার পূর্বে শিরক ও কুফরী থেকে ইহূদী বা নাছারা ধর্মে গমন করা জায়েয ছিল। কিন্তু ইসলাম আসার পরে সেটি নিষিদ্ধ হয়। এখন পৃথিবীতে কেবল ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত ধর্ম (আলে ইমরান ৩/১৯)।

২. জিহাদের প্রয়োজনে ফলদার বৃক্ষ ইত্যাদি কাটা যাবে’ (হাশর ৫৯/৫)।[1]

৩. যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত নয়, বরং শত্রুপক্ষীয় কাফেরদের পরিত্যক্ত সকল সম্পদ ফাই (فئ)-এর অন্তর্ভুক্ত হবে, যা পুরোপুরি রাষ্ট্রপ্রধানের এখতিয়ারে থাকবে। তিনি সেখান থেকে যেভাবে খুশী ব্যয় করবেন। অনুরূপভাবে খারাজ, জিযিয়া, বাণিজ্যিক ট্যাক্স প্রভৃতি আকারে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যা কিছু জমা হয়, সবই ফাই-য়ের অন্তর্ভুক্ত।

জাহেলী যুগে নিয়ম ছিল, এ ধরনের সকল সম্পদ কেবল বিত্তশালীরাই কুক্ষিগত করে নিত। তাতে নিঃস্ব ও দরিদ্রদের কোন অধিকার ছিল না। কিন্তু ইসলামী রাষ্ট্রে উক্ত সম্পদ নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য রাষ্ট্রপ্রধানকে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে এবং পুঁজি যাতে কেবল ধনিক শ্রেণীর মধ্যে আবর্তিত না হয়, তার ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’ (হাশর ৫৯/৬-৭)। সে মতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত ফাই কেবলমাত্র বিত্তহীন মুহাজির ও দু’জন বিত্তহীন আনছারের মধ্যে বণ্টন করেন। কিন্তু কোন বিত্তবানকে দেননি। এর উদ্দেশ্য ছিল সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা। উল্লেখ্য যে, গণীমত হ’ল ঐ সম্পদ যা যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়। যার এক পঞ্চমাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। বাকী চার পঞ্চমাংশ ইসলামী সেনাবাহিনীর মধ্যে বণ্টিত হয়’ (আনফাল ৮/১, ৪১)।

৪. ইসলামী এলাকায় ইহূদী-নাছারাদের বসবাস নিরাপদ নয়। সেকারণ রাষ্ট্র প্রয়োজন বোধ করলে তাদেরকে বহিষ্কারাদেশ ও নির্বাসন দন্ড দিতে পারে (হাশর ৫৯/২)।

[1]. এর অর্থ এটা নয় যে, সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য গাছ কেটে গুঁড়ি ফেলে রাস্তা বন্ধ করা যাবে। এটি নিষিদ্ধ। বরং সরকার রাষ্ট্রীয় বা সামরিক প্রয়োজনে এটা করতে পারে। শো‘আয়েব (আঃ)-এর কওম মাপ ও ওযনে কম দিত, রাস্তা বন্ধ করে রাহযানী করত ও জনগণকে কষ্ট দিত (আ‘রাফ ৭/৮৫-৮৬)। সেকারণ তাদের উপর মেঘমালা আকারে আগুনের গযব নেমে আসে এবং এক নিমেষে সবাই জ্বলে পুড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় (কুরতুবী, ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা শো‘আরা ১৮৯ আয়াত; দ্রঃ নবীদের কাহিনী-১, ২৭১-৭৩ পৃঃ)।

 

বনু নাযীর যুদ্ধের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

(১) ইহূদী-নাছারা নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের প্রতি সর্বদা বিদ্বেষপরায়ণ এবং মুসলমানদের সাথে কৃত সন্ধিচুক্তির প্রতি তারা কখনো শ্রদ্ধাশীল থাকে না’ (বাক্বারাহ ২/১২০; মায়েদাহ ৫/৫১)।

(২) ইহূদীরা অর্থ-বিত্তে ও অস্ত্র-শস্ত্রে সমৃদ্ধ হ’লেও তারা সব সময় ভীরু ও কাপুরুষ। সেকারণ তারা সর্বদা শঠতা ও প্রতারণার মাধ্যমে মুসলিম শক্তির ধ্বংস কামনা করে’ (হাশর ৫৯/২, ১৪)।

(৩) তারা সর্বদা শয়তানের তাবেদারী করে। কোনরূপ ধর্মীয় অনুভূতি বা এলাহী বাণী তাদেরকে শয়তানের আনুগত্য করা হ’তে ফিরাতে পারে না’ (হাশর ৫৯/১১-১২, ১৬)।

বস্তুতঃ আল্লাহর গযবপ্রাপ্ত এই জাতি (বাক্বারাহ ২/৬১) পৃথিবীর কোথাও কোনকালে শান্তি ও স্বস্তির সাথে বসবাস করতে পারেনি এবং পারবেও না। ফিলিস্তিনী আরব মুসলমানদের তাদের আবাসভূমি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে যে ইহূদী বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং ১৯৪৮ সাল থেকে যাকে ‘ইসরাঈল রাষ্ট্র’ নামকরণ করা হয়েছে, ওটা আসলে কোন রাষ্ট্র নয়। বরং মধ্যপ্রাচ্যের বুকে পরাশক্তিগুলির তৈরী একটি সামরিক কলোনী মাত্র। পাশ্চাত্যের দয়া ও সমর্থন ব্যতীত যার একদিনের জন্যও টিকে থাকা সম্ভব নয়। যতদিন দুনিয়ায় ইহূদীরা থাকবে, ততদিন তাদেরকে এভাবেই অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে বেঁচে থাকতে হবে। কেননা এটাই আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত বিধান’ (আলে ইমরান ৩/১১২)। এক্ষণে আল্লাহর গযব থেকে তাদের বাঁচার একটাই পথ রয়েছে- খালেছ তওবা করে পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে ইসলাম কবুল করা এবং আরব ও মুসলিম বিশ্বের সাথে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা।

গাযওয়া নাজদ

৪র্থ হিজরীর রবীউল আখের মাস। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সংবাদ পেলেন যে, বনু গাত্বফানের দু’টি গোত্র বনু মুহারিব ও বনু ছা‘লাবাহ মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বেদুঈন ও পল্লীবাসীদের মধ্য হ’তে সৈন্য সংগ্রহ করছে। এ খবর পাওয়ার সাথে সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নাজদ অভিমুখে যাত্রা করেন। এই আকস্মিক অভিযানে উদ্ধত বেদুঈনরা ভয়ে পালিয়ে যায় ও তাদের মদীনা আক্রমণের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এই সময় মদীনার দায়িত্বে ছিলেন ওছমান বিন ‘আফফান (রাঃ)’ (আর-রাহীক্ব ২৯৭-৯৮ পৃঃ)।

গাযওয়া বদর আখের

৪র্থ হিজরীর শা‘বান মোতাবেক ৬২৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারী মাস। দেড় হাযার সৈন্য নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বদর অভিমুখে রওয়ানা হন। গত বছর ওহোদ যুদ্ধ থেকে ফিরে যাওয়ার সময় আবু সুফিয়ান আগামী বছর পুনরায় মদীনা আক্রমণ করবেন বলে ওয়াদা করেছিলেন। তার হামলা মুকাবিলার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আগে ভাগেই বদর প্রান্তরে উপস্থিত হন। ওদিকে আবু সুফিয়ান ২০০০ সৈন্যের বাহিনী নিয়ে যথাসময়ে রওয়ানা হয়ে মার্রুয যাহরান পৌঁছে ‘মাজিন্নাহ’ (مَجِنَّة) ঝর্ণার নিকটে শিবির স্থাপন করেন। কিন্তু তিনি যুদ্ধ করার মনোবল হারিয়ে ফেলেন এবং বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মক্কায় ফিরে যেতে চান। তাতে সৈন্যদের সকলে এক বাক্যে সায় দেয় এবং সেখান থেকেই তারা মক্কায় ফিরে যায়।

৮ দিন অপেক্ষার পর শত্রুপক্ষের দেখা না পেয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মদীনায় ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এরি মধ্যে মুসলমানেরা সেখানে ব্যবসা করে দ্বিগুণ লাভবান হন। উল্লেখ্য যে, বদর ছিল অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাণিজ্য কেন্দ্র। সংঘর্ষ না হ’লেও এই অভিযানকে বদরে আখের বা বদরের শেষ যুদ্ধ বলা হয়। আবু সুফিয়ানের পশ্চাদপসারণের ঘটনায় সারা আরবে মুসলিম শক্তির প্রতি সকলের শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত হয়। সাথে সাথে মুসলমানদের মনোবল দারুণভাবে বৃদ্ধি পায়। এই যুদ্ধে যাওয়ার সময় মদীনার দায়িত্বে থাকেন আব্দুল্লাহ ইবনে রওয়াহা (রাঃ) এবং যুদ্ধের পতাকাবাহী ছিলেন হযরত আলী (রাঃ)।[1]

[1]. ইবনু হিশাম ২/২০৯, আর-রাহীক্ব ২৯৮-৯৯ পৃঃ।

গাযওয়া দূমাতুল জান্দাল

৫ম হিজরীর ২৫শে রবীউল আউয়াল। খবর এলো যে, সিরিয়ার নিকটবর্তী দূমাতুল জান্দাল শহরের একদল লোক সিরিয়া যাতায়াতকারী ব্যবসায়ী কাফেলা সমূহের উপরে ডাকাতি ও লুটপাট করে। তারা মদীনায় হামলার জন্য বিরাট এক বাহিনী প্রস্ত্তত করছে। রাসূল (ছাঃ) কালবিলম্ব না করে ১০০০ ফৌজ নিয়ে মদীনা হ’তে ১৫ রাত্রির পথ অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু সেখানে পৌঁছে কাউকে পেলেন না। শত্রুপক্ষ টের পেয়ে আগেই পালিয়ে গিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করেন ও চারদিকে ছোট ছোট সেনাদল প্রেরণ করেন। কিন্তু শত্রুদের কারু নাগাল পাওয়া যায়নি। অবশেষে কিছু গবাদিপশু নিয়ে তিনি ফিরে আসেন। এতে লাভ হয় এই যে, শত্রুরা আর মাথা চাড়া দেয়নি। তাতে ইসলাম প্রচারের শান্ত পরিবেশ তৈরী হয়। পথিমধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু ফাযারাহ গোত্রের নেতা ওয়ায়না বিন হিছন-এর সাথে সন্ধিচুক্তি করেন। এ যুদ্ধের সময় মদীনার আমীর ছিলেন সিবা‘ বিন ‘উরফুত্বাহ আল-গিফারী।[1]

[1]. ইবনু হিশাম ২/২১৩; যাদুল মা‘আদ ৩/২২৩।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  



**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url