প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৪৩] || মহানবীর জীবনী ||




মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) এর চূরান্ত বিজয় অর্জন


[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]

রাসুল (ছাঃ) ও তাঁর সাথীদের ক্বাযা ওমরাহ

(৭ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাস)
ইবনু ইসহাক বলেন, খায়বর যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে রবীউল আউয়াল থেকে শাওয়াল পর্যন্ত (৬ মাস) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় অবস্থান করেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি কয়েকটি ছোট ছোট সেনাদল বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করেন। অতঃপর গত বছরে কৃত হুদায়বিয়া সন্ধির শর্তানুযায়ী তিনি এ বছর যুলক্বা‘দাহ মাসে ওমরাহ করার জন্য প্রস্ত্ততি নেন (ইবনু হিশাম ২/৩৭০)। গত বছরে যারা হোদায়বিয়ায় হাযির ছিলেন, তাদের মধ্যে যারা জীবিত আছেন তারা ছাড়াও অন্যান্যগণ মিলে মোট দু’হাযার ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে বের হন। মহিলা ও শিশুরা ছিল এই সংখ্যার বাইরে। মূসা বিন উক্ববাহ ইমাম যুহরী থেকে বর্ণনা করেন যে, মুশরিকদের চুক্তিভঙ্গের আশংকায় যুদ্ধে পারদর্শী লোকদের এবং যুদ্ধাস্ত্র সমূহ সঙ্গে নেওয়া হয় এবং তাদেরকে হারামের বাহিরে রেখে দেওয়া হয়। এ কথা জানতে পেরে কুরায়েশরা ভয় পেয়ে যায়। তখন তাদের পক্ষ থেকে গত বছরে হোদায়বিয়ার সন্ধিকালে অন্যতম আলোচক মিকরায বিন হাফছ রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, তিনি শর্তের উপরেই দৃঢ় আছেন এবং কোষবদ্ধ তরবারী ব্যতীত তারা মক্কায় প্রবেশ করেননি।[1]

এই ওমরাহ চারটি নামে পরিচিত। যথা- ওমরাতুল ক্বাযা (عُمْرَةُ الْقَضَاءِ; হুদায়বিয়ার ওমরাহর ক্বাযা হিসাবে), ওমরাতুল ক্বাযিইয়াহ (عُمْرَةُ الْقَضِيَّةِ; হোদায়বিয়াহর ফায়ছালার প্রেক্ষিতে), ওমরাতুল ক্বিছাছ (عُمْرَةُ الْقِصَاصِ; হোদায়বিয়ার ওমরাহর বদলা হিসাবে), ওমরাতুছ ছুলহ (عُمْرَةُ الصُّلْحِ; হোদায়বিয়া সন্ধির ওমরাহ)।[2]

ইবনু হিশাম বলেন, ‘উওয়াইফ বিন আযবাত্ব আদ-দীলী(عُوَيْفُ بنُ الْأَضبَطِ الدِّيلِيُّ) কে মদীনার প্রশাসক নিযুক্ত করে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।[3] সঙ্গে নেন কুরবানীর জন্য ৬০টি উট। অতঃপর যুল-হুলায়ফা পৌঁছে ওমরাহর জন্য এহরাম বাঁধলেন এবং সকলে উঁচু স্বরে ‘লাববায়েক’ ধ্বনির মাধ্যমে তালবিয়াহ পাঠ করলেন। অতঃপর দীর্ঘ সফর শেষে মক্কা থেকে ৮ মাইল দূরে ইয়া’জাজ (يَأْجَجُ) নামক স্থানে পৌঁছে বর্ম, ঢাল, বর্শা, তীর প্রভৃতি যুদ্ধাস্ত্র সমূহ আওস বিন খাওলা আনছারীর(أَوْسُ بن خَوْلَى الأَنْصَارِيُّ) নেতৃত্বে দু’শো লোককে এগুলির তত্ত্বাবধানে সেখানে রেখে দেওয়া হ’ল। বাকীরা মুসাফিরের অস্ত্র ও কোষবদ্ধ তরবারিসহ মক্কায় গমন করেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উষ্ট্রী ক্বাছওয়া (الْقَصْوَاءُ) এর পিঠে সওয়ার ছিলেন। মুসলমানগণ স্ব স্ব তরবারি কাঁধে ঝুলিয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে মাঝে রেখে ‘লাববায়েক’ ধ্বনি দিতে দিতে ‘হাজূন’ মুখী টিলার পথ ধরে মক্কায় প্রবেশ করেন।[4]

মুশরিকরা সব বেরিয়ে মক্কার উত্তর পার্শ্বে ‘কু‘আইক্বি‘আন’ (القُعَيْقِعَان) পাহাড়ের উপর জমা হয়ে মুসলমানদের আগমন দেখতে থাকে এবং বলাবলি করতে থাকে যে, ইয়াছরিবের জ্বর(قَدْ وَهَنَتْهُمْ حُمَّى يَثْرِبَ) এদের দুর্বল করে দিয়েছে’। একথা জানতে পেরে রাসূল (ছাঃ) সবাইকে নির্দেশ দিলেন যেন ত্বাওয়াফের সময় প্রথম তিন ত্বাওয়াফ দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করে, যাকে ‘রমল’ (الرَمَل) বলা হয়। তবে রুকনে ইয়ামানী ও হাজারে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে স্বাভাবিক ভাবে চলবে। এ নির্দেশ তিনি এজন্য দেন, যাতে মুশরিকরা মুসলমানদের শক্তি-ক্ষমতা দেখতে পায়’।[5] একই উদ্দেশ্যে তিনি তাদের ইযত্বেবার (الاِضْطِبَاع) নির্দেশ দেন (আহমাদ হা/৩১৭)। যার অর্থ হল ডান কাঁধ খোলা রেখে বগলের নীচ দিয়ে চাদর বাম কাঁধের উপরে রাখা। যাতে ব্যক্তিকে সদা প্রস্তুত দেখা যায়। মুশরিকরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখতে থাকে। এরই মধ্যে তিনি ‘লাববায়েক’ ধ্বনি দিতে দিতে মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করেন এবং স্বীয় মাথা বাঁকা লাঠি দ্বারা হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করেন। অতঃপর ত্বাওয়াফ করেন ও মুসলমানেরাও ত্বাওয়াফ করে (আর-রাহীক্ব ৩৮৫ পৃঃ)।

আনাস (রাঃ) বলেন, ত্বাওয়াফের সময় আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) যুদ্ধ ছন্দে কবিতা বলে রাসূল (ছাঃ)-এর আগে আগে চলতে থাকেন। এতে হযরত ওমর (রাঃ) তাকে বলেন, يَا ابْنَ رَوَاحَةَ بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِى حَرَمِ اللهِ تَقُولُ الشِّعْرَ؟ ‘হে ইবনে রাওয়াহা! রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে ও আল্লাহর হারামের মধ্যে তুমি কবিতা পাঠ করছ’? তখন রাসূল (ছাঃ) ওমরকে বললেন, خَلِّ عَنْهُ يَا عُمَرُ فَلَهِىَ أَسْرَعُ فِيهِمْ مِنْ نَضْحِ النَّبْلِ ‘ওকে ছাড় ওমর! এটা ওদের প্রতি তীর নিক্ষেপের চাইতেও দ্রুত কার্যকর’। কবিতাটি ছিল নিম্নরূপ:

خَلُّوا بَنِي الْكُفَّارِ عَنْ سَبِيلِهِ + الْيَوْمَ نَضْرِبُكُمْ عَلَى تَنْزِيلِهِ
ضَرْبًا يُزِيلُ الْهَامَ عَنْ مَقِيلِهِ + وَيُذْهِلُ الْخَلِيلَ عَنْ خَلِيلِهِ

‘হে কাফির সন্তানেরা! তোমরা আল্লাহর পথ থেকে সরে যাও। আজ আমরা তোমাদের মারব আল্লাহর কুরআনের উপরে’। (২) ‘এমন মার, যা খুলিকে মাথা থেকে বিচ্ছিন্ন করবে এবং বন্ধুকে বন্ধু থেকে ভুলিয়ে দেবে’।[6]

মুসলমানদের এই দ্রুতগতির ত্বাওয়াফ ও সাহসী কার্যক্রম দেখে মুশরিকদের ধারণা পাল্টে গেল এবং তারা বলতে লাগল যে, তোমাদের ধারণা ছিল ভুল।هَؤُلاَءِ أَجْلَدُ مِنْ كَذَا وَكَذَا ‘ওরা তো দেখছি অমুক অমুকের চাইতে বেশী শক্তিশালী’ (মুসলিম হা/১২৬৬)।

ত্বাওয়াফ শেষে তাঁরা সাঈ করেন এবং এ সময় মারওয়ার নিকটে তাদের কুরবানীর পশুগুলি দাঁড়ানো ছিল। সাঈ শেষে রাসূল (ছাঃ) সেখানে গিয়ে বললেন, هَذَا الْمَنْحَرُ، وَكُلُّ فِجَاجِ مَكَّةَ مَنْحَرٌ ‘এটাই হল কুরবানীর স্থান এবং মক্কার সকল অলি-গলি হল কুরবানীর স্থল’ (আবুদাঊদ হা/২৩২৪)। অতঃপর তিনি সেখানে উটগুলি নহর করেন এবং মাথা মুন্ডন করেন। মুসলমানেরাও তাই করেন।

এভাবে হালাল হওয়ার পর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একদল ছাহাবীকে মক্কা থেকে আট মাইল দূরে ইয়া’জাজ পাঠিয়ে দেন। তারা সেখানে গিয়ে অস্ত্র-শস্ত্র পাহারায় থাকেন এবং অন্যদের ওমরাহর জন্য পাঠিয়ে দেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৩২৮)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কায় তিনদিন অবস্থান করেন। চতুর্থ দিন সকালে মুশরিক নেতারা এসে আলী (রাঃ)-কে বলেন, সন্ধিচুক্তি অনুযায়ী তিনদিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এবার তোমাদের নেতাকে যেতে বল।[7] তখন রাসূল (ছাঃ) মক্কা থেকে ৬ কি.মি. উত্তরে তান‘ঈম-এর নিকটবর্তী ‘সারিফ’ (السَرِف) নামক স্থানে অবতরণ করেন। অতঃপর সেখানে চাচা আববাস-এর ব্যবস্থাপনায় মায়মূনাহ বিনতুল হারেছ-এর সাথে বিবাহ হয় ও সেখানে বাসর যাপন করেন’ (বুখারী হা/৪২৫৮)।

মক্কা থেকে বেরিয়ে আসার সময় সাইয়েদুশ শুহাদা হযরত হামযা (রাঃ)-এর শিশুকন্যা আমাতুল্লাহ হে চাচা হে চাচা(يَا عَمِّ يَا عَمِّ) বলতে বলতে ছুটে আসে। আলী (রাঃ) তাকে কোলে তুলে নেন। এরপর আলী, জা‘ফর ও যায়েদ বিন হারেছাহর মধ্যে বিতর্ক হয়। কেননা সবাই তাকে নিতে চান। তখন রাসূল (ছাঃ) জা‘ফরের অনুকূলে ফায়ছালা দেন। কেননা জা‘ফরের স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (أَسمَاء بنت عُمَيْس) ছিলেন মেয়েটির আপন খালা। এ সময় রাসূল (ছাঃ) বলেন, الْخَالَةُ بِمَنْزِلَةِ الأُمِّ ‘খালা হলেন মায়ের স্থলাভিষিক্ত’।[8] হামযা-কন্যার পাঁচটি নাম এসেছে। যথাক্রমে ‘উমারাহ, ফাতেমা, উমামাহ, আমাতুল্লাহ ও সালমা। তন্মধ্যে প্রথম নামটিই অধিক প্রসিদ্ধ’।[9]

উল্লেখ্য যে, ‘উমরাতুল ক্বাযা আদায়ের মাধ্যমেই সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াত-এর ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হয়। যেখানে আল্লাহ বলেন,لَقَدْ صَدَقَ اللهُ رَسُولَهُ الرُّؤْيَا بِالْحَقِّ لَتَدْخُلُنَّ الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ إِنْ شَاءَ اللهُ آمِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُؤُوسَكُمْ وَمُقَصِّرِينَ لاَ تَخَافُونَ فَعَلِمَ مَا لَمْ تَعْلَمُوا فَجَعَلَ مِنْ دُونِ ذَلِكَ فَتْحًا قَرِيبًا ‘আল্লাহ তাঁর রাসূলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো তোমরা অবশ্যই মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে মস্তক মুন্ডিত অবস্থায় এবং কেশ কর্তিত অবস্থায়। এমনভাবে যে, তোমরা কাউকে ভয় করবে না। অতঃপর তিনি জানেন, যা তোমরা জানো না। অতঃপর তিনি দিবেন তোমাদেরকে একটি নিকটবর্তী বিজয়’।[10] অর্থাৎ হোদায়বিয়ার সন্ধি। যার ফলে পরবর্তী বছর নিরাপদে ক্বাযা ওমরাহ আদায়ের সুযোগ হয়।

[1]. ফাৎহুল বারী হা/৪২৫১-৫২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; ‘যুদ্ধ বিগ্রহ’ অধ্যায়-৬৪, ‘ক্বাযা ওমরাহ’ অনুচ্ছেদ-৪৩।
[2]. ফাৎহুল বারী ‘ক্বাযা ওমরাহ’ অনুচ্ছেদ; সীরাহ হালাবিইয়াহ ২/৭৭৯; শারহুল মাওয়াহেব ৩/৩১১।
[3]. ইবনু হিশাম ২/৩৭০; মুবারকপুরী এখানে আবু রুহুম ‘উওয়াইফ আল-গিফারী লিখেছেন (আর-রাহীক্ব ৩৮৪ পৃঃ)। কিন্তু তাঁর প্রদত্ত সূত্রগুলিতে ঐ নাম পাওয়া যায়নি।
[4]. আর-রাহীক্ব ৩৮৪ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/৩২৭।
[5]. মুসলিম হা/১২৬৬; বুখারী হা/৪২৫৬।
[6]. তিরমিযী হা/২৮৪৭ ‘শিষ্টাচার ও অনুমতি প্রার্থনা’ অধ্যায়, ‘কবিতা আবৃত্তি’ অনুচ্ছেদ; নাসাঈ হা/২৮৭৩।
[7]. বুখারী হা/৪২৫১; মিশকাত হা/৪০৪৯।
[8]. বুখারী হা/২৬৯৯; আহমাদ হা/৯৩১; ছহীহাহ হা/১১৮২।
[9]. ফাৎহুল বারী হা/৪২৫১-এর আলোচনা।

আসমা বিনতে ‘উমায়েস (রাঃ) স্বামী জা‘ফর বিন আবু ত্বালেব (রাঃ)-এর সাথে হাবশায় হিজরত করেন। অতঃপর মুতার যুদ্ধে জা‘ফর শহীদ হ’লে আবুবকর (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। তাঁর গর্ভে মুহাম্মাদ বিন আবুবকরের জন্ম হয়। আবুবকর (রাঃ) মৃত্যুর সময় আসমাকে অছিয়ত করে যান তাঁকে গোসল দেওয়ার জন্য। পরে তিনি আলী (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন’ (আল-ইছাবাহ, আসমা ক্রমিক ১০৮০৩)। হযরত আলী (রাঃ)-এর শাহাদাতের পরেও তিনি বেঁচেছিলেন (সিয়ারু আ‘লাম ক্রমিক ৫১, ২/২৮৭)। তিনি উম্মুল মুমিনীন যয়নব বিনতে খুযায়মাহ ও মায়মূনা বিনতুল হারেছ (রাঃ)-এর সহোদর বোন ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি ৬০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।

[10]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা ফাৎহ ২৭ আয়াত; সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৫।

ক্বাযা ওমরাহ পরবর্তী যুদ্ধসমূহ

সারিইয়া ইবনু আবিল ‘আওজা

ক্বাযা ওমরাহ থেকে ফিরেই ৭ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে বনু সুলায়েম(بَنُو سُلَيْم) গোত্রকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য ৫০ জনের এই দলটিকে পাঠানো হয়। কিন্তু তারা তাদের দাওয়াতকে অগ্রাহ্য করে বলে,لاَ حَاجَةَ لَنَا إِلَى مَا دَعَوْتُمْ ‘তোমরা যেদিকে আমাদের আহবান করছ, আমাদের তাতে কোন প্রয়োজন নেই’। অতঃপর তারা মুসলিম দাঈ দলটির বিরুদ্ধে ঘোরতর যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ত্বাবারী বলেন, সেনাপতি সহ মুসলিম পক্ষের সবাই শহীদ হন। তিনি বলেন, ওয়াক্বেদী ধারণা করেন যে, সবাই শহীদ হন। তবে সেনাপতি আহত অবস্থায় মদীনায় ফিরে আসতে সক্ষম হন। তারা ৮ম হিজরীর ১লা ছফর মদীনায় ফিরে আসেন।[1]

সারিইয়া গালিব বিন আব্দুল্লাহ লায়ছী

৮ম হিজরীর ছফর মাস। ২০০ লোকের একটি সেনাদল নিয়ে তিনি ফাদাক অঞ্চলের বনু মুররাহ গোত্রের বিরুদ্ধে প্রেরিত হন বশীর বিন সা‘দের ৩০ জন সাথীর শাহাদাত স্থলে। যা ৭ম হিজরীর শা‘বান মাসে সংঘটিত হয়েছিল (ক্রমিক সংখ্যা ৬১ দ্রঃ)। শত্রুদের অনেকে নিহত হয় ও বহু গবাদিপশু হস্তগত হয় (আর-রাহীক্ব ৩৮৬ পৃঃ)।

সারিইয়া যাতু আত্বলাহ

৮ম হিজরীর রবীউল আউয়াল মাস। মুসলমানদের উপরে হামলা করার জন্য বনু কুযা‘আহ (بَنْو قُضَاعَة) বিরাট একটি দলকে একত্রিত করছে জানতে পেরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কা‘ব বিন ওমায়ের আনছারীর নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি সেনাদল সেখানে প্রেরণ করেন। তারা ‘যাতু আত্বলাহ’(ذَاتُ أَطْلَح) নামক স্থানে শত্রুদের মুখোমুখি হন। তাঁরা প্রথমে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেন। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যাতে সকল ছাহাবীকে তীর দিয়ে ছিদ্র করে করে মর্মান্তিকভাবে শহীদ করা হয়। যাদের মধ্যে একজন মাত্র কোনভাবে বেঁচে যান (আর-রাহীক্ব ৩৮৬ পৃঃ)।

সারিইয়া যাতু ইরক্ব

৮ম হিজরীর রবীউল আউয়াল মাস। বনু হাওয়াযেন গোত্র বারবার শত্রুদের সাহায্য করে যাচ্ছিল। ফলে তাদের দমনের জন্য শুজা‘ বিন ওয়াহাব আল-আসাদীর নেতৃত্বে ২৫ জনের একটি সেনাদল উক্ত গোত্রের যাতু ইরক্ব(ذَاتُ عِرْق) নামক স্থানে প্রেরিত হয়। যুদ্ধ হয়নি। তবে কিছু গবাদিপশু হস্তগত হয় (আর-রাহীক্ব ৩৮৬ পৃঃ)। যাতু ইরক্ব হ’ল ইরাকবাসীদের জন্য হজ্জের মীক্বাত। যা মক্কা থেকে উত্তরে ৯৪ কি. মি. দূরে অবস্থিত।

[1]. তারীখ ত্বাবারী ৩/২৬; আর-রাহীক্ব ৩৮৬ পৃঃ; আল-বিদায়াহ ৪/২৩৫; ইবনু সা‘দ ২/৯৪।

মানছূরপুরী তাঁর প্রদত্ত যুদ্ধ তালিকায় এখানে মুসলিম পক্ষে ১ জন আহত ও ৪৯ জন শহীদ বলেছেন’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/১৯৮)

মুতার যুদ্ধ

৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা (আগষ্ট অথবা সেপ্টেম্বর ৬২৯ খৃ.)
ওমরাতুল ক্বাযা থেকে ফিরে এসে যিলহাজ্জ মাসের শেষ দিনগুলিসহ পরবর্তী চার মাস রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মদীনায় অবস্থান করেন। অতঃপর মদীনার নিরাপত্তা বিধান ও শাম অঞ্চলে মুসলমানদের উপর খ্রিষ্টান শাসকদের অব্যাহত অত্যাচার দমনের উদ্দেশ্যে জুমাদাল ঊলা মাসে এই অভিযান প্রেরণ করেন। এটিই ছিল খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম যুদ্ধাভিযান (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৭০)। এ যুদ্ধের কারণ হিসাবে ওয়াক্বেদী যা বর্ণনা করেছেন,[1] তা বিদ্বানগণের নিকট গ্রহণযোগ্য না হ’লেও এটা নিশ্চিত যে, إن الله إذا أراد شيئا هيأ له الأسباب ‘আল্লাহ যখন কোন কিছু করার ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্য কারণসমূহ সৃষ্টি করে দেন’। অতএব বাহ্যিক ও প্রত্যক্ষ কারণ নিশ্চয়ই কিছু ছিল। যার জন্য যুদ্ধ যাত্রা অপরিহার্য হয়েছিল। তবে এটা নিশ্চিত ধারণা করা যায় যে, মদীনাকে ইহূদীমুক্ত করার পর এবং হোদায়বিয়াতে প্রধান প্রতিপক্ষ কুরায়েশদের সঙ্গে সন্ধিচুক্তি হওয়ার পর তৃতীয় প্রতিপক্ষ খ্রিষ্টান রোমক শক্তিকে পদানত করা ও ইসলামী বিজয়ের পথ সুগম করা মুতা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ হ’তে পারে। এর মাধ্যমে আল্লাহ চেয়েছিলেন শাম ও পারস্যে রাজত্বকারী রোমক ও পারসিক দুই পরাশক্তির বিরুদ্ধে ইসলামের বিজয়াভিযান শুরু করতে। যা ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতকালে সুসম্পন্ন হয়।

যায়েদ বিন হারেছাহর নেতৃত্বে ৩০০০ সৈন্যের অত্র বাহিনী প্রেরিত হয়। পক্ষান্তরে বিরোধী বুছরার রোমক গবর্ণর শুরাহবীল বিন ‘আমর আল-গাসসানীর ছিল প্রায় ২ লাখ খ্রিষ্টান সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী (ইবনু হিশাম ২/৩৭৫)। বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নিকটবর্তী মু’তা (مُؤْتَة) নামক স্থানে সংঘটিত এই যুদ্ধে সেনাপতি যায়েদ বিন হারেছাহ, অতঃপর জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব, অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা পরপর তিনজন সেনাপতি শহীদ হ’লে সকলের পরামর্শে খালেদ বিন অলীদ সেনাপতি হন। অতঃপর তাঁর হাতে বিজয় অর্জিত হয়। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।-

এই বাহিনীর সেনাপতি হিসাবে যায়েদ বিন হারেছাহকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসময় রাসূল (ছাঃ) বলেন, যদি যায়েদ নিহত হয়, তবে তার স্থলে জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব সেনাপতি হবে। যদি সে নিহত হয়, তাহ’লে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি হবে (বুখারী হা/৪২৬১)। বস্ত্ততঃ এই ধরনের সাবধানতা ছিল এটাই প্রথম (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৭)।

মুসলিম বাহিনী শামের মা‘আন (مَعَانُ) অঞ্চলে অবতরণ করে। অতঃপর তারা হঠাৎ জানতে পারেন যে, রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস এসময় এক লাখ সৈন্য নিয়ে শামের বালক্বা অঞ্চলের মাআবে (مَآبُ) অবস্থান করছেন। সেখানে তার সাথে যোগ হয়েছে লাখাম, জুযাম, ক্বাইন (الْقَيْنُ), বাহরা ও বালী প্রভৃতি আরব-খ্রিষ্টান গোত্র সমূহের আরো এক লাখ যোদ্ধা।

অভাবিতভাবে বিরোধী পক্ষের বিশাল সৈন্য সমাবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে তাঁরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। অতঃপর পরামর্শ সভায় বসেন। এটি ছিল বদর যুদ্ধের মত। যেখানে পূর্ব থেকে কেউ জানতেন না যে, তারা এত বড় একটি সিদ্ধান্তকারী যুদ্ধের সম্মুখীন হবেন। সভায় কেউ মত প্রকাশ করেন যে, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে শত্রু সংখ্যার খবর দিয়ে পত্র লিখি। অতঃপর তিনি আমাদের জন্য সাহায্যকারী বাহিনী পাঠাবেন অথবা আমাদেরকে যা নির্দেশ দিবেন, তাই করব। তখন আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ওজস্বিনী ভাষায় সকলের উদ্দেশ্যে বলেন,

يَا قَوْمِ، وَاللهِ إنَّ الَّتِي تَكْرَهُونَ لَلَّتِي خَرَجْتُمْ تَطْلُبُونَ، الشَّهَادَةُ- وَمَا نُقَاتِلُ النَّاسَ بِعَدَدِ وَلاَ قُوَّةٍ وَلاَ كَثْرَةٍ، مَا نُقَاتِلُهُمْ إلاَّ بِهَذَا الدِّينِ الَّذِي أَكْرَمَنَا اللهُ بِهِ، فَانْطَلِقُوا فَإِنَّمَا هِيَ إحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ إمَّا ظُهُورٌ وَإِمَّا شَهَادَةٌ. قَالَ: فَقَالَ النَّاسُ: قَدْ وَاللهِ صَدَقَ ابْنُ رَوَاحَةَ-

‘হে আমার কওম! আল্লাহর কসম! তোমরা যেটাকে অপছন্দ কর, নিশ্চয় তোমরা সেটা অন্বেষণের জন্যই বের হয়েছ। আর তা হ’ল ‘শাহাদাত’। আমরা মানুষের সঙ্গে যুদ্ধ করিনা সংখ্যা দ্বারা, শক্তি দ্বারা বা আধিক্য দ্বারা। আর আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করিনা কেবলমাত্র এই দ্বীনের স্বার্থ ব্যতীত। যার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন। অতএব সামনে বাড়ুন। নিশ্চয় এর মধ্যে কেবলমাত্র দু’টি কল্যাণের একটি রয়েছে। হয় বিজয় নয় শাহাদাত। অতঃপর সকলে বললেন,قَدْ وَاللهِ صَدَقَ ابْنُ رَوَاحَةَ অবশ্যই, আল্লাহর কসম! ইবনু রাওয়াহা সত্য বলেছেন’। এরপর তিনি সকলের উদ্দেশ্যে ৮ লাইনের একটি স্বতঃস্ফূর্ত কবিতা পাঠ করেন’।[2]

অতঃপর সকলে নতুন উদ্দীপনায় স্রেফ আল্লাহর উপর ভরসা করে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি শুরু করেন এবং দু’দিন পর যুদ্ধে রওয়ানা হন ও মুতা (مُؤْتَةُ) নামক স্থানে খ্রিষ্টান বাহিনীর মুখোমুখি হন। অতঃপর তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে সেনাপতি যায়েদ বিন হারেছাহ বর্শার আঘাতে শহীদ হন। অতঃপর জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব যুদ্ধের ঝান্ডা তুলে নেন। এসময় তাঁর ঘোড়া শাক্বরা (شَقْرَاءُ) নিহত হয়। অতঃপর মাটিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধাবস্থায় তাঁর ডান হাত কর্তিত হয়। তখন তিনি বাম হাতে ঝান্ডা আঁকড়ে ধরেন। এরপর বাম হাত কর্তিত হয়। তখন বগলে ঝান্ডা চেপে ধরেন। অতঃপর তিনি শহীদ হন। তাঁর পরে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা পতাকা তুলে ধরেন। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনিও শহীদ হয়ে যান।[3] তখন সকলের পরামর্শক্রমে খালেদ বিন অলীদ সেনাপতি হন।[4] অতঃপর তাঁর হাতেই বিজয় অর্জিত হয়। মুসলিম বাহিনীর সীসাঢালা ঐক্য, অপূর্ব বীরত্ব, অভূতপূর্ব শৌর্য-বীর্য, নিখাদ শাহাদাতপ্রিয়তা, খালেদের অতুলনীয় যুদ্ধ নৈপুণ্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে অত্যন্ত অল্প ক্ষতির বিনিময়ে বিশাল বিজয় সাধিত হয়। ফালিল্লাহিল হাম্দ।[5]

এ যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মাত্র ১২ জন শহীদ হন’ (ইবনু হিশাম ২/৩৮৮-৮৯)। রোমক বাহিনীর হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা না গেলেও একা খালেদ বিন অলীদের যেখানে নয় খানা তরবারি ভেঙ্গেছিল’ (বুখারী হা/৪২৬৫), তাতে অনুমান করা চলে কত সৈন্য তাদের ক্ষয় হয়েছিল। বলা বাহুল্য, এটাই ছিল ‘খন্দক’ যুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ।

[1]. ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৭৫৫; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৩৬-৩৭; আর-রাহীক্ব ৩৮৭ পৃঃ।

(১) ওয়াক্বেদী বর্ণনা করেন যে, রোম সম্রাট ক্বায়ছারের পক্ষ হ’তে সিরিয়ার বালক্বায় (الْبَلْقَاءُ) নিযুক্ত গবর্ণর শুরাহবীল বিন ‘আমর আল-গাসসানীর নিকটে পত্র সহ প্রেরিত রাসূল (ছাঃ)-এর দূত হারেছ বিন উমায়ের আযদীকে হত্যা করা হয়। যা ছিল তৎকালীন সময়ের রীতি-নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। ফলে তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযান প্রেরিত হয় (ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৭৫৫)। এটি ওয়াক্বেদী এককভাবে বর্ণনা করেছেন। আর ওয়াক্বেদীর একক বর্ণিত কোন খবর বিদ্বানগণের নিকট مَتْرُوكٌ বা পরিত্যক্ত’ (মা শা-‘আ ১৮৩ পৃঃ; আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৬৮ পৃঃ)।   

(২) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, যোহরের ছালাতের পর রাসূল (ছাঃ) তাঁর সাথীদের নিয়ে মসজিদে বসেন এবং যায়েদ বিন হারেছাহকে মুতার যুদ্ধের সেনাপতি হিসাবে ঘোষণা দেন। অতঃপর তিনি শহীদ হ’লে জা‘ফর বিন আবু ত্বালেব এবং তিনি শহীদ হ’লে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা সেনাপতি হবেন বলে নির্দেশনা প্রদান করেন। ঐ সময় নু‘মান বিন ফুনহুছ (نُعْمَانُ بْنُ فُنْحُصٍ) নামক জনৈক ইহূদী এসে লোকদের মধ্যে দাঁড়িয়ে যায়। অতঃপর সে সরাসরি রাসূল (ছাঃ)-কে বলে, আপনি যাদের নাম বললেন, তারা অবশ্যই নিহত হবে। যেমন আমাদের বনু ইস্রাঈলের কোন নবী এভাবে যদি ১০০ ব্যক্তিরও নাম বলতেন, তাহ’লে তারা নিহত হ’ত। অতঃপর সে যায়েদ বিন হারেছাহকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমি নিশ্চিত জেনে রাখ তুমি কখনই মুহাম্মাদের কাছে ফিরে আসতে পারবেনা, যদি তিনি নবী হন। উত্তরে যায়েদ বললেন, أَشْهَدُ أَنَّهُ نَبِيٌّ صَادِقٌ بَارٌّ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি অবশ্যই সত্যবাদী নবী ও পূত-চরিত্র’ (ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৭৫৬; রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২২৯)। বর্ণনাটি ‘মাতরূক’ ও অবাস্তব। কেননা ৫ম হিজরীর যিলহজ্জ মাসেই সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যার বিতাড়নের পর মদীনা ইহূদীশূন্য হয়। ফলে ৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে মুতার যুদ্ধের সময় মদীনায় কোন ইহূদীর অবস্থান এবং রাসূল (ছাঃ)-এর মুখের পরে এসে এরূপ দুঃসাহস প্রদর্শন আদৌ সম্ভব নয়।

(৩) আরও প্রসিদ্ধ আছে যে, মদীনা থেকে রওয়ানার সময় লোকেরা তাদেরকে বিদায় জানাতে আসে। তখন আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা কাঁদতে থাকেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! দুনিয়ার মহববত বা তোমাদের প্রতি ভালবাসা নয়, বরং আমি রাসূল (ছাঃ)-কে একটি আয়াত পড়তে শুনেছি। যেখানে জাহান্নাম সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,وَإِنْ مِنْكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا- ‘আর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যে সেখানে পৌঁছবে না। এটা তোমার পালনকর্তার অমোঘ সিদ্ধান্ত’ (মারিয়াম ১৯/৭১)। আমি জানিনা সেখানে (পুলছিরাতে) পৌঁছার পর আমার অবস্থা কি হবে? অতঃপর লোকেরা তাকে বিদায় দেওয়ার সময় তিনি তিন লাইন কবিতা পাঠ করেন। যার শুরুতে তিনি বলেন,

لَكِنَّنِي أَسْأَلُ الرَّحْمَنَ مَغْفِرَةً + وضربة ذَات فرغ تَقْذِفُ الزَّبَدا

أَوْ طَعْنَةً بِيَدَيْ حَرَّانَ مُجْهِزَةً + بِحَرْبَةٍ تُنْفِذُ الْأَحْشَاءَ وَالْكَبِدَا

‘বরং আমি দয়াময়ের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তরবারির একটি বড় আঘাত কামনা করছি, যা ফিনকি দিয়ে রক্ত বের করে দিবে’। ‘অথবা রক্তপিপাসু সুসজ্জিত ব্যক্তির দু’হাতে ধরা একটি বর্শার আঘাত, যা আমার নাড়ী-ভুঁড়ি ও কলিজা ভেদ করে যাবে’... (আর-রাহীক্ব ৩৮৮ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/৩৭৩-৭৪)। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬২৩)।

[2]. ইবনু হিশাম ২/৩৭৫; আর-রাহীক্ব ৩৮৯ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৮। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’। তবে উরওয়া বিন যুবায়ের (রাঃ) পর্যন্ত বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬২৬)।

[3]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ) যখন মুতা যুদ্ধের সেনাপতিদের শাহাদতের ঘটনা বর্ণনা করছিলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা সম্পর্কে বলতে গিয়ে চুপ হয়ে যান। এতে আনছারদের চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং তারা আব্দুল্লাহ সম্পর্কে মন্দ কিছু ধারণা করতে থাকেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাদের সবাইকে আমার নিকটে স্বর্ণের খাটের উপর উঁচু করে জান্নাতে দেখানো হয়েছে। যেভাবে স্বপ্নযোগে মানুষ দেখে থাকে। আমি দেখলাম যে, সাথী দু’জনের খাটের চাইতে আব্দুল্লাহর খাটটি একটু বাঁকাচোরা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এটা কিজন্য? তখন বলা হ’ল যে, ঐ দু’জন জিহাদে চলে গেল, কিন্তু আব্দুল্লাহ কিছুটা ইতস্ততঃ করেছিল। অতঃপর গিয়েছিল’ (ইবনু হিশাম ২/৩৮০; আর-রাউযুল উনুফ ৪/১২৬; আল-বিদায়াহ ৪/২৪৫)। বর্ণনাটির সনদ মুনক্বাতি‘ বা ছিন্নসূত্র (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬৩৩; মা শা-‘আ ১৮৪-৮৫ পৃঃ)।

[4]. প্রসিদ্ধ আছে যে, পরপর তিন জন সেনাপতি শহীদ হওয়ার পর বনু ‘আজলানের ছাবেত বিন আরক্বাম এগিয়ে এসে ঝান্ডা উত্তোলন করেন এবং সবাইকে ডেকে বলেন, হে মুসলমানেরা! তোমরা একজন ব্যক্তির উপরে ঐক্যবদ্ধ হও। লোকেরা বলল, তুমি হও। তিনি বললেন, আমি এ কাজের যোগ্য নই। তখন সকলে খালেদ বিন অলীদের ব্যাপারে একমত হ’ল। অতঃপর তিনি ঝান্ডা হাতে নিলেন এবং তীব্র বেগে যুদ্ধ শুরু করলেন’ (আর-রাহীক্ব ৩৯০-৯১ পৃঃ)। ঘটনাটি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়। বরং যঈফ (আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৬৮ পৃঃ)।

[5]. এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, এদিন সেনাপতি খালেদ বিন অলীদ সম্মুখের দলকে পিছনে ও পিছনের দলকে সম্মুখে এবং ডাইনের দলকে বামে ও বামের দলকে ডাইনে নিয়ে এক অপূর্ব রণকৌশলের মাধ্যমে মুসলিম বাহিনীকে সসম্মানে শত্রুদের হাত থেকে বাঁচিয়ে আনেন। নতুন সেনাদল যুক্ত হয়েছে ভেবে এবং মুসলমানেরা তাদেরকে মরু প্রান্তরে নিক্ষেপ করবে সেই ভয়ে রোমকরা পিছু হটে যায় (আর-রাহীক্ব ৩৯১ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৮)। ঘটনাটি ওয়াক্বেদী কর্তৃক এককভাবে বর্ণিত। যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ওয়াক্বেদীর একক বর্ণনা বিদ্বানদের নিকট مَتْرُوكٌ বা পরিত্যক্ত’ (মা শা-‘আ ১৮৬ পৃঃ)। বরং স্থানীয় খ্রিষ্টান অধিবাসী ও নওমুসলিমদের প্রতি রোমকদের অব্যাহত অত্যাচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ, খালেদের অভূতপূর্ব রণকৌশল, তাঁর নিজস্ব শক্তিমত্তা, মুসলিম বাহিনীর সুদৃঢ় ঐক্য এবং সর্বোপরি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ছিল এ যুদ্ধ জয়ের মূল উৎস। যেমন বদরের যুদ্ধে বিজয় সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই (বদরের যুদ্ধে) দু’টি দলের মুখোমুখি হওয়ার মধ্যে তোমাদের জন্য নিদর্শন ছিল। একটি দল আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছিল এবং অপরটি ছিল অবিশ্বাসী। যারা স্বচক্ষে মুসলমানদেরকে তাদের দ্বিগুণ দেখছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা নিজ সাহায্য দানে শক্তিশালী করেন। নিশ্চয়ই এর মধ্যে চক্ষুষ্মানদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে’ (আলে ইমরান ৩/১৩)।  

মুতার যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) এর মু‘জিযা

এ যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) থেকে মু‘জেযা প্রকাশিত হয়। যেমন মদীনায় খবর পৌছার পূর্বেই তিনি সকলকে সেনাপতিদের পরপর শাহাদাতের খবর দেন এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন,حَتَّى أَخَذَ الرَّايَةَ سَيْفٌ مِنْ سُيُوفِ اللهِ حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَيْهِمْ ‘অবশেষে ঝান্ডা হাতে নিয়েছে ‘আল্লাহর তরবারি সমূহের অন্যতম তরবারি’। অতঃপর আল্লাহ তাদের হাতে বিজয় দান করেছেন’ (বুখারী হা/৪২৬২)।[1]

[1]. প্রসিদ্ধ আছে যে, মুতার যুদ্ধ থেকে ফেরার সময় মদীনার নিকটবর্তী হলে রাসূল (ছাঃ) ও মুসলমানগণ তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য এগিয়ে যান। এমতাবস্থায় লোকেরা সেনাবাহিনীর দিকে মাটি ছুঁড়ে মারতে থাকে এবং বলতে থাকে يَا فُرَّارُ، فَرَرْتُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ؟ ‘হে পলাতক দল! তোমরা আল্লাহর রাস্তা থেকে পালিয়ে এসেছ? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, لَيْسُوا بِالْفُرَّارِ، وَلَكِنَّهُمْ الْكُرَّارُ إنْ شَاءَ اللهُ تَعَالَى ‘ওরা পলায়নকারী নয় বরং ওরা হামলাকারী হবে ইনশাআল্লাহ’ (ইবনু হিশাম ২/৩৮২; সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৬৯)। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৬৩৮; মা শা-‘আ ১৮৩ পৃঃ)। বরং এটাই সত্য যে, মুতার যুদ্ধে শেষের দিকে খালেদ বিন অলীদ-এর মাধ্যমে ঐতিহাসিক বিজয় লাভ হয়। অতএব রাসূল (ছাঃ) যদি তাদের সাথে সাক্ষাতের জন্য এগিয়ে যেয়ে থাকেন, তবে সেটি হবে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য।

মুতার যুদ্ধের শহীদদের মর্যাদা

(১) মদীনায় অশ্রুসজল নেত্রে শহীদগণের খবর দেওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَا يَسُرُّهُمْ أَنَّهُمْ عِنْدَنَا ‘তাদেরকে এ বিষয়টি খুশী করবে না যে, তারা আমাদের কাছে থাকুক’ (বুখারী হা/২৭৯৮)। অর্থাৎ তারা জান্নাতে অবস্থান করাতেই খুশী হয়ে গেছে। দুনিয়াতে তারা থাকতে চায় না’ (ফাৎহুল বারী হা/২৭৯৮-এর ব্যাখ্যা)।

(২) আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব জিব্রীল ও মীকাঈল-এর সাথে দু’টি ডানাসহ অতিক্রম করার সময় আমাকে সালাম করল। অতঃপর যুদ্ধে তার দু’হাত হারানোর ঘটনা বর্ণনা করল। এ কারণে জান্নাতে সে জা‘ফর আত-ত্বাইয়ার(جَعْفَرٌ الطَّيَّارُ) ‘উড়ন্ত জা‘ফর’ নামে অভিহিত হয়েছে’।[1] তিনি বলেন, আমি জা‘ফরকে জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে দুই ডানায় উড়তে দেখেছি’ (ছহীহাহ হা/১২২৬)। এজন্য তাঁকে ‘যুল-জানাহাইন’(ذُوالْجَناحَين) বা ‘দুই ডানা ওয়ালা’ বলা হয়ে থাকে (মির‘আত শরহ মিশকাত হা/১৭৪৩-এর ব্যাখ্যা)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জা‘ফর বিন আবু ত্বালিবের সন্তানদের ডেকে এনে সান্ত্বনা দিয়ে তাদের মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, أَنَا وَلِيُّهُمْ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ‘দুনিয়া ও আখেরাতে আমিই ওদের অভিভাবক’ (আহমাদ হা/১৭৫০, সনদ ছহীহ)।

[1]. ত্বাবারাণী আওসাত্ব হা/৬৯৩৬; আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব হা/১৩৬২।

মুতার যুদ্ধের গুরুত্ব

(১) তৎকালীন বিশ্বের সেরা পরাশক্তির বিরুদ্ধে স্বল্পসংখ্যক মুসলিম বাহিনীর এই বীরত্বপূর্ণ মুকাবিলায় খ্রিষ্টান বিশ্ব যেমন ভয়ে চুপসে যায়, আরব বিশ্ব তেমনি হতচকিত হয়ে পড়ে। মাথা উঁচু করার স্বপ্ন ভুলে গিয়ে চির বৈরী বনু গাত্বফান, বনু সুলায়েম, বনু আশজা‘, বনু যুবিয়ান, বনু ফাযারাহ প্রভৃতি গোত্রগুলি ইসলাম কবুল করে। অন্যদিকে রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন আরব অঞ্চলে ও দূরবর্তী অঞ্চল সমূহে মুসলিম বিজয়ের সূচনা হয়।

(২) এই যুদ্ধের ফলে অমুসলিম শক্তি নিশ্চিত হয় যে, ঈমানী বলে বলিয়ান মুসলিম বাহিনী আল্লাহর গায়েবী মদদে পুষ্ট এবং এদের মহান নেতা মুহাম্মাদ নিঃসন্দেহে সত্য নবী।

(৩) এই যুদ্ধে বিজয় মুসলমানদের জন্য ভবিষ্যৎ বিশ্ব জয়ের সিংহ দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়।

মুতার যুদ্ধের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

(১) মুতার যুদ্ধ আরেকবার প্রমাণ করল যে, সংখ্যাশক্তি বা অস্ত্রশক্তি নয়, কেবল ঈমানী শক্তিই বড় শক্তি। যা বিজয়ের আবশ্যিক পূর্বশর্ত।

(২) জিহাদ কেবলমাত্র আখেরাতের উদ্দেশ্যেই হয়ে থাকে, দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে নয়। এই উদ্দেশ্য বা নিয়তের মধ্যে দুর্বলতা থাকলে কখনোই বিজয় লাভ সম্ভব নয়।

(৩) নেতৃত্ব নির্বাচনে তাক্বওয়া ও যোগ্যতাই বড় মাপকাঠি তার প্রমাণ রয়েছে মুতার যুদ্ধে। যায়েদ বিন হারেছাহ ছিলেন একজন ক্রীতদাস মাত্র। যাদের সামাজিক অবস্থান ছিল সেযুগে সবচাইতে নিম্নে। অন্যদিকে জা‘ফর বিন আবু ত্বালিব ছিলেন বিশ্বসেরা কুরায়েশ বংশের নেতার পুত্র এবং রাসূল (ছাঃ)-এর আপন চাচাতো ভাই। আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ছিলেন মদীনার অন্যতম সেরা গোত্র খাযরাজের স্বনামধন্য নেতা ও কবি। তিনি ছিলেন মদীনার প্রথমদিকে বায়‘আতকারী ৭৫ জন মুসলমানের ১২ জন নেতার অন্যতম। অথচ আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করলেন মুক্তদাস যায়েদকে। এটি যোগ্যতার মূল্যায়ন ও ইসলামী সাম্যের এক অনন্য দৃষ্টান্ত বটে।

(৪) কিংকর্তব্যবিমুঢ় অবস্থায় স্রেফ আল্লাহর উপরে ভরসা করে নেক মাকছূদ হাছিলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ইবনু রাওয়াহার ভাষণ ও পরামর্শ সভায় যুদ্ধ যাত্রার সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ।

(৫) ইসলামী বিজয়ে নেতার জন্য তাক্বওয়া ও যোগ্যতার সাথে সাথে কুশলী হওয়া আবশ্যক। সাথে সাথে কর্মীদের জন্য প্রয়োজন সুশৃংখল ও অটুট আনুগত্য। মুতার যুদ্ধে ইসলামী বাহিনীর মধ্যে যার অনন্য দৃষ্টান্ত দেখা গেছে।

মুতার যুদ্ধের পরবর্তী যুদ্ধসমূহ

সারিইয়া যাতুস সালাসেল

৮ম হিজরীর জুমাদাল আখেরাহ। মুতার যুদ্ধ শেষে মদীনায় ফেরার পরপরই আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে প্রথমে ৩০০ এবং পরে আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ২০০ মোট ৫০০ সৈন্যের এই দলটি সিরিয়া সীমান্তে বনু কুযা‘আহ(بنو قُضَاعَةَ) গোত্রের বিরুদ্ধে প্রেরিত হয়। এরা রোমকদের সঙ্গে মিলে মদীনায় হামলার প্রস্ত্ততি নিচ্ছিল। মুসলিম বাহিনী উক্ত গোত্রের ‘সালসাল’ (سَلْسَل) নামক প্রস্রবণের নিকটে অবতরণ করে বিধায় অভিযানটির নাম হয় ‘যাতুস সালাসেল’। শত্রুরা ভীত হয়ে পালিয়ে যায়। শেষোক্ত সাহায্যকারী বাহিনীতে হযরত আবুবকর ও ওমর (রাঃ) ছিলেন। কিন্তু আমর ইবনুল ‘আছকে সেনাপতি করার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তাঁর দাদী ছিলেন অত্র এলাকার ‘বালী’ (بلىّ) গোত্রের মহিলা। সেই সুবাদে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। যাতে তারা রোমকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে মুসলমানদের জন্য হুমকি হয়ে না দাঁড়ায়।[1]

এ যুদ্ধে আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর মত প্রথম যুগের জ্যেষ্ঠ ছাহাবীগণের উপরে নতুন মুসলিম আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ)-কে সেনাপতি নিয়োগ করার মধ্যে প্রমাণিত হয় যে, সংশ্লিষ্ট ও পারিপার্শ্বিক কারণে অনেক সময় অনুত্তম ব্যক্তিকে উত্তম ব্যক্তিগণের উপরে নেতৃত্ব অর্পণ করা যায়।

এই যুদ্ধে প্রচন্ড শীতে মৃত্যুর আশংকায় আমর ইবনুল ‘আছ সূরা নিসা ২৯ আয়াতের আলোকে ইজতিহাদ করে ফরয গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে ছালাতে ইমামতি করেন। এ খবর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে পৌঁছলে তিনি হেসে ফেলেন। কিন্তু কিছু বলেননি’ (আবুদাঊদ হা/৩৩৪, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ তিনি তাঁর এই ইজতিহাদের স্বীকৃতি প্রদান করেন। এতে বুঝা যায় যে, এমন অবস্থায় এটি করা জায়েয।

সারিইয়া আবু ক্বাতাদাহ

৮ম হিজরীর শা‘বান মাস। নাজদের বনু গাত্বফানের শাখা ‘মুহারিব’ (مُحَارِب) গোত্রের লোকেরা মদীনায় হামলার জন্য তাদের এলাকায় খাযেরাহ (خَضِرَة) নামক স্থানে সেনাদল প্রস্ত্তত করছে জানতে পেরে ১৫ জনের এই দলটি প্রেরিত হয়। তারা তাদের অনেককে হত্যা করেন ও বাকীরা পালিয়ে যায়। অনেক গণীমত হস্তগত হয়। তারা এ সফরে ১৫ দিন মদীনার বাইরে থাকেন।[2]

[1]. ইবনু হিশাম ২/৬২৩; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৪০; আর-রাহীক্ব ৩৯২ পৃঃ।
[2]. আর-রাহীক্ব ৩৯৩ পৃঃ; ইবনু সা‘দ ২/১০০-১০১।

মক্কা বিজয়

(৮ম হিজরীর ১৭ই রামাযান সোমবার মোতাবেক ৮ই জানুয়ারী ৬৩০ খৃ.)
৮ম হিজরীর ৭ই রামাযান[1] মোতাবেক ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে ডিসেম্বর শুক্রবার ১০,০০০ ছাহাবী নিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মদীনা হতে রওয়ানা হন এবং ১৭ই রামাযান মোতাবেক ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারী সোমবার এক প্রকার বিনা যুদ্ধে মক্কা বিজয় সম্পন্ন হয়।[2] মুসলিম পক্ষে দলছুট ২ জন শহীদ ও কাফের পক্ষে অতি উৎসাহী হয়ে অগ্রবর্তী ১২ জন নিহত হয়। এ সময় মদীনার দায়িত্বে ছিলেন আবু রুহুম কুলছূম(أبو رُهْمٍ كُلثومُ بنُ حُصَينِ) বিন হোছায়েন আল-গেফারী।[3] এটি ছিল একটি সিদ্ধান্তকারী যুদ্ধ। এই যুদ্ধের পর রাসূল (ছাঃ)-এর সত্যতার ব্যাপারে সমগ্র আরব বিশ্বে সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায়। কেননা ইতিপূর্বে কা‘বাগৃহের উপর কর্তৃত্বের কারণে মানুষ কুরায়েশ নেতাদের প্রতি একটা অন্ধ আবেগ ও আনুগত্য পোষণ করত। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।-

জন্মভূমি মক্কা হতে হিজরত করার ৭ বছর ৩ মাস ২৭ দিন পর বিজয়ীর বেশে পুনরায় মক্কায় ফিরে এলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ব মানবতার মুক্তিদূত, নবীকুল শিরোমণি শেষনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। বিনা যুদ্ধেই মক্কার নেতারা তাঁর নিকটে আত্মসমর্পণ করলেন। এতদিন যারা ছিলেন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও মুসলমানদের যাবতীয় দুঃখ-কষ্টের মূল। বিজয়ী রাসূল (ছাঃ) তাদের কারু প্রতি কোনরূপ প্রতিশোধ নিলেন না। সবাইকে উদারতা ও ক্ষমার চাদরে ঢেকে দিয়ে বললেন, ‘আজ তোমাদের উপরে কোনরূপ অভিযোগ নেই, তোমরা মুক্ত’। কিন্তু কি ছিল এর কারণ? কিভাবে ঘটলো হঠাৎ করে এ ঐতিহাসিক বিজয়? দু’বছর আগেও যে মুসলিম বাহিনীতে তিন হাযার লোক সংগ্রহ করাও দুঃসাধ্য ছিল, তারা কোথা থেকে কিভাবে দশ হাযার লোক নিয়ে ঝড়ের বেগে হঠাৎ ধূমকেতুর মত আবির্ভূত হল মক্কার উপরে? অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখল মক্কার নেতারা ফ্যালফ্যাল করে। টুঁ শব্দটি করার সাহস কারু হল না? নিমেষে বন্ধ হয়ে গেল মক্কা-মদীনার সংঘাত। পৌত্তলিক মক্কা দু’দিনের মধ্যেই হয়ে গেল তাওহীদবাদী মুসলমান। কা‘বাগৃহ হল মূর্তিশূন্য। ‘উয্যার বদলে শুরু হ’ল আল্লাহর জয়গান। শিরকী সমাজ পরিবর্তিত হল ইসলামী সমাজে। সমস্ত আরব উপদ্বীপে বয়ে চলল শান্তির সুবাতাস। কি সে কারণ? কিভাবে সম্ভব হল এই অসম্ভব কান্ড? এক্ষণে আমরা সে বিষয়ে আলোকপাত করব।-

[1]. ইমাম যুহরী (৫০-১২৪হিঃ) বলেন, মক্কা বিজয়ের সফরে রাসূল (ছাঃ) রাস্তায় ১২ দিন(أَقَامَ فِي الطَّرِيقِ اثْنَيْ عَشَرَ يَوْمًا) অতিবাহিত করেন’ (ফাৎহুল বারী, ‘রামাযানে মক্কা বিজয়ের যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ; হা/৪২৭৫-এর আলোচনা)। সে হিসাবে মদীনা থেকে রওয়ানার তারিখ ৭ই রামাযান হয়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

[2]. আর-রাহীক্ব ৪০১ পৃঃ; মানছূরপুরী ২০শে রামাযান বৃহস্পতিবার বলেছেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/১১৮, ২/৩৬৮)। মক্কা বিজয়ের তারিখ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে সেটা যে ৮ম হিজরীর রামাযান মাসে হয়েছিল তাতে কোন মতভেদ নেই (ফাৎহুল বারী হা/৪২৭৫-এর আলোচনা)।

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এক সফরে মক্কায় ১৯ দিন ছিলাম এবং ছালাতে ক্বছর করেছিলাম’। ইবনু হাজার বলেন, উক্ত সফর ছিল মক্কা বিজয়ের সফর (বুখারী হা/৪২৯৬-এর পরে ‘মক্কা বিজয়কালে রাসূল (ছাঃ) কত দিন সেখানে অবস্থান করেন’ অনুচ্ছেদ)। জীবনীকারগণের মতে রাসূল (ছাঃ) ৬ই শাওয়াল শনিবার হোনায়েন যুদ্ধের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন (ওয়াক্বেদী ৩/৮৮৯; ফাৎহুল বারী হা/৪৩১৩-এর পরে সূরা তওবা ২৫ আয়াতের তাফসীর অনুচ্ছেদ)। এক্ষণে মক্কায় ১৯ দিন অবস্থানকাল ঠিক রাখতে গেলে রাসূল (ছাঃ)-এর মক্কা বিজয়ের তারিখ হয় ১৭ই রামাযান সোমবার।

১৪ নববী বর্ষের ২৭শে ছফর মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২/১৩ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত শেষ রাতে মক্কা থেকে হিজরত শুরু হয় (আর-রাহীক্ব ১৬৪ পৃঃ; রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/৩৬৭)। অতঃপর ৮ম হিজরীর ১৭ই রামাযান মোতাবেক ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জানুয়ারী সোমবার মক্কা বিজয় পর্যন্ত মোট সময়কাল হয়, ৭ বছর ৩ মাস ২৭ দিন। যদিও ইমাম বুখারী গড় হিসাবে বলেছেন সাড়ে ৮ বছর এবং ইবনু হাজার বলেছেন সাড়ে ৭ বছর (ফাৎহুল বারী হা/৪২৭৬-এর আলোচনা)। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
[3]. ইবনু হিশাম ২/৩৯৯; আর-রাউযুল উনুফ ৪/১৫৩।

মক্কা বিজয় অভিযানের কারণ

প্রায় দু’বছর পূর্বে ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে সম্পাদিত হোদায়বিয়ার চার দফা সন্ধিচুক্তির তৃতীয় দফায় বর্ণিত ছিল যে, ‘যে সকল গোত্র মুসলমান বা কুরায়েশ পক্ষের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে, তারা তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে এবং তাদের কারু উপরে অত্যাচার করা হলে সংশ্লিষ্ট দলের উপরে অত্যাচার বলে ধরে নেওয়া হবে’। উক্ত শর্তের আওতায় মক্কার নিকটবর্তী গোত্র বনু খোযা‘আহ(بَنُو خُزَاعَة) মুসলমানদের সাথে এবং বনু বকর(بَنُو بَكْرٍ) কুরায়েশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সংশ্লিষ্ট দলের মিত্রপক্ষ হিসাবে গণ্য হয়। কিন্তু দু’বছর পুরা না হতেই বনু বকর উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করল এবং ৮ম হিজরীর শাবান মাসে রাত্রির অন্ধকারে বনু খোযা‘আহর উপরে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে বহু লোককে হতাহত করল। ঐসময় বনু খোযা‘আহ গোত্র ‘ওয়াতীর’ (الْوَتِيرُ) নামক প্রস্রবণের ধারে বসবাস করত, যা ছিল মক্কার নিম্নভূমিতে অবস্থিত (মু‘জামুল বুলদান)।

বনু বকরের এই অন্যায় আক্রমণে কুরায়েশদের ইন্ধন ছিল। তারা অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করেছিল। এমনকি কুরায়েশ নেতা ইকরিমা বিন আবু জাহেল, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং খোদ হোদায়বিয়া সন্ধিচুক্তিতে কুরায়েশ পক্ষের আলোচক ও স্বাক্ষর দানকারী সোহায়েল বিন ‘আমর সশরীরে উক্ত হামলায় অংশগ্রহণ করেন।[1]

বনু খোযা‘আহ গোত্রের এই হৃদয়বিদারক দুঃসংবাদ নিয়ে ‘আমের বিন সালেম আল-খোযাঈ ৪০ জনের একটি দল সহ দ্রুত মদীনায় আসেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তখন মসজিদে নববীতে ছাহাবায়ে কেরাম সহ অবস্থান করছিলেন। এমন সময় ‘আমের কবিতা পাঠ করতে করতে রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে এসে মর্মস্পর্শী ভাষায় তাদের নির্মম হত্যাকান্ড এবং কুরায়েশদের চুক্তি ভঙ্গের কথা বিবৃত করেন। সাড়ে আট লাইনের সেই কবিতার শেষের সাড়ে চার লাইন ছিল নিম্নরূপ:

إنَّ قُرَيْشًا أَخْـلَفُوْكَ الْمَوْعِدَا * وَنَقَضُوْا مِيْثَـاقَكَ الْمُؤَكَّدَا
وَجَعَلُوْا لِيْ فِيْ كَدَاءٍ رُصَّدَا * وَزَعَمُوْا أَنْ لَسْتُ أَدْعُوْ أَحَدَا
وَهُـمْ أَذَلُّ وَأَقَـلُّ عَـدَدَا * هُمْ بَيَّتُـوْنَا بِالْوَتِيْـرِ هُجَّدًا
وَقَتَلُـوْنَا رُكَّـعًا وَّسُجَّدَا * فَانْصُرْ هَدَاك اللهُ نَصْرًا أَيِّدَا
نَحْنُ وَلَدْنَاك فَكُنْتَ وَلَدًا -

(১) ‘নিশ্চয়ই কুরায়েশগণ আপনার সাথে কৃত ওয়াদা খেলাফ করেছে এবং আপনাকে দেওয়া পাক্কা অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে’। (২) ‘তারা ‘কাদা’ নামক স্থানে আমার জন্য ওঁৎ পেতে আছে। তারা ধারণা করেছে যে আমি সাহায্যের জন্য কাউকে আহবান করবো না’। (৩) ‘তারা নিকৃষ্ট ও সংখ্যায় অল্প। তারা ‘ওয়াতীর’ নামক স্থানে রাত্রি বেলায় ঘুমন্ত অবস্থায় আমাদের উপরে হামলা চালিয়েছে’। (৪) ‘তারা রুকূ ও সিজদারত অবস্থায় আমাদেরকে হত্যা করেছে। অতএব আপনি আমাদেরকে দৃঢ় হস্তে সাহায্য করুন। ‘আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ প্রদর্শন করুন’। (৫) ‘আমরা আপনাকে প্রসব করেছি। অতএব আপনি আমাদের সন্তান’ (ইবনু হিশাম ২/৩৯৪-৯৫)।

কবিতার শেষের চরণ দ্বারা বুঝা যায় যে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ তখন মুসলমান হয়েছিলেন। যদিও জীবনীকারগণ এ বিষয়ে একমত যে, ঐ সময় পর্যন্ত তারা মুসলমান হয়নি’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৪৯)।

[1]. তারীখু ত্বাবারী ৩/৪৪। এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, বনু বকর বনু খোযা‘আহকে তাড়িয়ে হারাম পর্যন্ত নিয়ে গেলে বনু বকরের লোকেরা তাদের নেতা নওফালকে বলল, আমরা এখন হারামে প্রবেশ করেছি। অতএব إلَهَكَ إلَهَكَ ‘তোমার প্রভুর দোহাই’ ‘তোমার প্রভুর দোহাই’। জবাবে নওফাল তাচ্ছিল্য ভরে ভয়ানক কথা বলে,لاَ إِلَهَ الْيَوْمَ يَا بَنِي بَكْرٍ ‘হে বনু বকর! আজ আর কোন প্রভু নেই’। অতঃপর বলল, তোমরা আজকে বদলা নিয়ে নাও। আমার জীবনের কসম! যদি তোমরা হারামে চুরি কর, তাহ’লে কি হারামে তার বদলা নিতে না?’ (আল-বিদায়াহ ৪/২৭৯; আর-রাহীক্ব ৩৯৪-৯৫; ইবনু হিশাম ২/৩৯০; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৪৮; ফিক্বহুস সীরাহ ৩৭৪ পৃঃ, সনদ যঈফ)।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  



**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url