প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-০৩]




হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জন্ম-মৃত্যু ও বংশ পরিচয়


হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জন্ম ও মৃত্যু

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ১ম হস্তীবর্ষের ৯ই রবীউল আউয়াল[১] সোমবার ছুবহে ছাদিকের পর মক্কায় নিজ পিতৃগৃহে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১১ হিজরী সনের ১লা রবীউল আউয়াল সোমবার সকাল ১০টার দিকে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন।

রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম ও মৃত্যু দু’টিই সোমবারে হয়েছিল’।[২] বিদায় হজ্জ হয়েছিল ৯ই যিলহজ্জ শুক্রবার। তিনি বিদায় হজ্জের পরে ৮০ বা ৮১ দিন বেঁচে ছিলেন। কেউ বলেছেন ৯০ বা ৯১ দিন (এটা ভুল)। আবু মিখনাফ ও কালবী ওফাতের তারিখ ২রা রবীউল আউয়াল বলেছেন। ইবনু হিশামের ভাষ্যকার সুহায়লী সেটাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ইবনু হাজার বলেন,

فَالْمُعْتَمَدُ مَا قَالَ أَبُو مِخْنَفٍ وَكَأَنَّ سَبَبَ غَلَطِ غَيْرِهِ أَنَّهُمْ قَالُوا مَاتَ فِي ثَانِي شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّلِ فَتَغَيَّرَتْ فَصَارَتْ ثَانِي عَشَرَ وَاسْتَمَرَّ الْوَهْمُ بِذَلِكَ يَتْبَعُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا مِنْ غَيْرِ تَأَمُّلٍ

‘আবু মিখনাফ যেটি বলেছেন, সেটিই নির্ভরযোগ্য। অন্যদের ভুলের কারণ সম্ভবতঃ এটাই যে, তারা বলেছিলেন, রাসূল (ছাঃ) ২রা রবীউল আউয়াল মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু পরে সেটি পরিবর্তিত হয়ে ১২ই রবীউল আউয়াল হয়ে গেছে। পরবর্তীতে লোকেরা কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা না করেই উক্ত ভুলের অনুসরণ করে গেছেন’।[৩] অর্থাৎ ثَانِي شَهْرِ رَبِيعٍ الْأَوَّل পরে ثَانِي عَشَرَ হয়ে গেছে’। তবে এটি মক্কার চাঁদের হিসাবে হ’তে পারে। কেননা মক্কার চাঁদ মদীনার একদিন আগে ওঠে (আল-বিদায়াহ ৫/২২৪-২৫)। অতএব মদীনার হিসাবে ১লা রবীউল আউয়াল ওফাতের দিন হবে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।

সুলায়মান মানছূরপুরীর হিসাব মতে সৌরবর্ষ হিসাবে রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম ৫৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে এপ্রিল সোমবার এবং মৃত্যু ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দের ৬ই জুন সোমবার। চান্দ্রবর্ষ হিসাবে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর ৪দিন এবং সৌরবর্ষ হিসাবে ৬১ বছর ১ মাস ১৪ দিন। তাঁর জন্ম হয়েছিল আবরাহা কর্তৃক কা‘বা আক্রমণের ৫০ দিন পরে (ইবনু হিশাম ১/১৫৮-টীকা ৪)। এটা ছিল ইবরাহীম (আঃ) থেকে ২৫৮৫ বছর ৭ মাস ২০ দিন পরে এবং নূহ (আঃ)-এর প্লাবনের ৩৬৭৫ বছর পরের ঘটনা। রাসূল (ছাঃ) দুনিয়াতে বেঁচে ছিলেন মোট ২২,৩৩০ দিন ৬ ঘণ্টা। তন্মধ্যে তাঁর নবুঅতকাল ছিল ৮১৫৬ দিন।[৪] সঠিক হিসাব আল্লাহ জানেন।

[১]. ছহীহ হাদীছসমূহের বর্ণনা অনুযায়ী রাসূল (ছাঃ)-এর জন্ম সোমবারে হয়েছে। কোন তারিখ সেটা বলা নেই। অতএব সোমবার ঠিক রাখতে গেলে আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব মতে ৯ই রবীউল আউয়ালই সঠিক জন্ম তারিখ হয়, ১২ই রবীউল আউয়াল নয়, যা প্রসিদ্ধ আছে (সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী, (মৃ. ১৯৩০ খ্রিঃ) রহমাতুল্লিল ‘আলামীন (উর্দূ), দিল্লী : ১৯৮০ খ্রিঃ ১/৪০; আর-রাহীক্ব পৃঃ ৫৪; মা শা-‘আ ৫-৯ পৃঃ)।

প্রিয় নবীর জন্মের সময়ের আশ্চর্য ঘটনাগুলো ভিত্তিহীন

তাঁর জন্মের কাহিনীতে প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খাৎনাকৃত ও নাড়ী কাটা অবস্থায় ভূমিষ্ট হন। (২) কেউ তার লজ্জাস্থান দেখেনি। (৩) শৈশবে বক্ষবিদারণের দিন জিব্রীল তাঁর খাৎনা করেন (যঈফাহ হা/৬২৭০)। (৪) জান্নাত থেকে আসিয়া ও মারিয়াম নেমে এসে ধাত্রীর কাজ করেন। (৫) আবু লাহাব মৃত্যুর পরে তার পরিবারের কোন একজনকে (বলা হয়ে থাকে, আববাসকে) স্বপ্ন দেখান। তাকে বলা হয় আপনার অবস্থা কি? তিনি বলেন, আমি জাহান্নামে। তবে প্রতি সোমবার আমার আযাব হালকা করা হয় এবং আমার এই দুই আঙ্গুল থেকে পানি চুষে পান করি। আর এটা এ কারণে যে, নবী (ছাঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ দানের ফলে আমি আমার দাসী ছুয়াইবাহকে মুক্ত করে দেই এবং সে নবীকে দুধ পান করায়।

উল্লেখ্য যে, আবু লাহাব ২য় হিজরীতে সংঘটিত বদর যুদ্ধের সপ্তাহকাল পরে মারা যান। আববাস তখন কাফের ছিলেন এবং ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন।

(৬) রাসূল প্রসবের সময় তার মা বলছেন যে, আমার গুপ্তাঙ্গ দিয়ে ‘নূর’ অর্থাৎ জ্যোতি বিকশিত হয়। যা শামে প্রাসাদ সমূহকে আলোকিত করেছিল। উম্মাহাতুল মুমিনীন যা স্বচক্ষে দেখেছিলেন। এটি ছিল ভবিষ্যতে শাম এলাকা ইসলামের আলোকে আলোকিত হওয়ার আগাম সুসংবাদ (৭) পারস্যের কিসরা রাজপ্রাসাদ কেঁপে উঠেছিল এবং তার ১৪টি চূড়া ভেঙ্গে পড়েছিল। আর এটি ছিল তাঁর ভবিষ্যৎ নবী হওয়ার অগ্রিম সুসংবাদ (৮) এ সময় মজূসীদের পূজার আগুন নিভে গিয়েছিল (৯) ইরাকের সাওয়া হ্রদের পানি শুকিয়ে গিয়েছিল এবং তার পার্শ্ববর্তী গীর্জাসমূহ ধ্বসে পড়েছিল ইত্যাদি (আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব নাজদী, মুখতাছার সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) (রিয়াদ: ১ম সংস্করণ ১৪১৪/১৯৯৪ খৃঃ ১৮-২০ পৃঃ; মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম, কুয়েত : ২য় সংস্করণ ১৪১৬/১৯৯৬ খৃঃ ৫৪ পৃঃ)।

উল্লেখ্য যে, আর-রাহীক্বের বাংলা অনুবাদক ও সম্পাদকগণ তাঁদের অগণিত ভুল অনুবাদের মধ্যে ঐ সাথে এটাও যোগ করেছেন যে, (১০) ঐ সময় কা‘বাগৃহের ৩৬০টি মূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়ে পড়ে’ (বঙ্গানুবাদ, আগস্ট ১৯৯৫, ১০১ পৃঃ; সেপ্টেম্বর ২০০৯, ৭৬ পৃঃ)। যেকথা মূল আরবী, পৃঃ ৫৪ এবং লেখক কর্তৃক অনূদিত উর্দূ সংস্করণ, লাহোর : নভেম্বর ১৯৮৮, পৃঃ ১০১-এ নেই)। বলা বাহুল্য, উপরে বর্ণিত সকল বর্ণনাই ভিত্তিহীন কল্পকথা মাত্র।

[২]. মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত হা/২০৪৫; বুখারী হা/১৩৮৭।

[৩]. বিস্তারিত দ্রঃ ফাৎহুল বারী হা/৪৪২৬-এর পরে ‘রাসূল (ছাঃ)-এর অসুখ ও মৃত্যু’ অনুচ্ছেদ; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৫/২২৪-২৫; মোস্তফা চরিত ৮৬৭-৬৮ পৃঃ।

[৪]. কাযী সুলায়মান বিন সালমান মানছূরপুরী (মৃ. ১৩৪৯/১৯৩০ খৃ:), রহমাতুল্লিল ‘আলামীন (দিল্লী : ১ম সংস্করণ ১৯৮০ খৃঃ) ২/১৬, ৩৬৮ পৃঃ; ১/৪০, ২৫১ পৃঃ।

প্রিয় নবীর (সা:) বংশ

তিনি মক্কার কুরায়েশ বংশের শ্রেষ্ঠ শাখা হাশেমী গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল আব্দুল্লাহ, মাতার নাম আমেনা। দাদার নাম ছিল আব্দুল মুত্ত্বালিব, দাদীর নাম ফাতেমা। নানার নাম ছিল ওয়াহাব, নানীর নাম বাররাহ। নানার বংশসূত্র রাসূল (ছাঃ)-এর ঊর্ধ্বতন দাদা কিলাব-এর সাথে এবং নানীর বংশসূত্র কুছাই বিন কিলাব-এর সাথে যুক্ত হয়েছে। দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব ছিলেন বনু হাশেম গোত্রের সরদার এবং নানা ওয়াহাব ছিলেন বনু যোহরা গোত্রের সরদার। দাদার হাশেমী গোত্র ও নানার যোহরা গোত্র কুরায়েশ বংশের দুই বৃহৎ ও সম্ভ্রান্ত গোত্র হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিল।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِى آدَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا، حَتَّى كُنْتُ مِنَ الْقَرْنِ الَّذِى كُنْتُ فِيهِ ‘আমি যুগ পরম্পরায় বনু আদমের শ্রেষ্ঠ যুগে প্রেরিত হয়েছি। অবশেষে আমি সেই যুগে এসেছি, যে যুগে আমি রয়েছি’ (বুখারী হা/৩৫৫৭)। (২) রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবু সুফিয়ানকে হোদায়বিয়া সন্ধির পরে তার কুফরী অবস্থায় প্রশ্ন করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে নবী দাবীকারী ব্যক্তির বংশ কেমন? উত্তরে আবু সুফিয়ান বলেছিলেন, هُوَ فِينَا ذُو حَسَبٍ ‘তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ বংশীয়’। হেরাক্লিয়াস বলেছিলেন, كَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِى أَحْسَابِ قَوْمِهَا ‘এভাবেই নবী-রাসূলগণ তার সম্প্রদায়ের সেরা বংশে জন্ম গ্রহণ করে থাকেন’।[১]

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ اصْطَفَى مِنْ وَلَدِ إِبْرَاهِيْمَ إِسْمَاعِيْلَ وَاصْطَفَى مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيْلَ بَنِي كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ بَنِي كِنَانَةَ قُرَيْشًا وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنِي هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِى مِنْ بَنِي هَاشِمٍ- ‘আল্লাহ ইবরাহীমের সন্তানগণের মধ্য থেকে ইসমাঈলকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর ইসমাঈলের সন্তানগণের মধ্য থেকে বনু কেনানাহকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর বনু কেনানাহ থেকে কুরায়েশ বংশকে বেছে নিয়েছেন। অতঃপর কুরায়েশ থেকে বনু হাশেমকে এবং বনু হাশেম থেকে আমাকে বেছে নিয়েছেন।[২] এভাবে আল্লাহর অনুগ্রহে শেষনবী (ছাঃ) বনু আদমের সেরা বংশের সেরা গোত্রে সেরা সন্তান হিসাবে জন্মগ্রহণ করেন।

(৪) তিনি বলতেন, أَنَا دَعْوَةُ أَبِي إِبْرَاهِيْمَ، وَبُشْرَى عِيْسَى عَلَيْهِمَا السَّلاَم ‘আমি আমার পিতা ইবরাহীমের দো‘আ ও ঈসার সুসংবাদ’।[৩] কেননা ইবরাহীম ও ইসমাঈল বায়তুল্লাহ নির্মাণের সময় দো‘আ করেছিলেন, যা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত ভাষায়-

رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيْهِمْ رَسُوْلاً مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيْهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ- (بقرة ১২৯)-

‘হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি তাদের মধ্য হ’তে একজনকে তাদের প্রতি রাসূল হিসাবে প্রেরণ কর, যিনি তাদের নিকটে তোমার আয়াতসমূহ পাঠ করে শুনাবেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত (সুন্নাহ) শিক্ষা দিবেন ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন’ (বাক্বারাহ ২/১২৯)।

পিতা-পুত্রের এই মিলিত দো‘আ দুই হাযারের অধিক বছর পরে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ লাভ করে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

প্রিয় নবীর জন্ম সম্পর্কে কিছু জাল হাদিস

উল্লেখ্য যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বংশের উচ্চ মর্যাদা ও পবিত্রতা বর্ণনায় ছহীহ হাদীছসমূহ থাকা সত্ত্বেও অনেক বানোয়াট হাদিস তৈরী করা হয়েছে। যেমন, (১) আমি পিতা-মাতার মাধ্যমে দুনিয়াতে এসেছি। আদম থেকে শুরু করে জাহেলী যুগের কোনরূপ ব্যভিচারের মাধ্যমে কখনো দুই পিতা আমাকে স্পর্শ করেনি’ (বায়হাক্বী, দালায়েল ১/১৭৪ পৃঃ)। (২) ‘যদি আল্লাহ জানতেন যে, আমার বংশের চাইতে উত্তম কোন বংশ আছে, তাহ’লে আমাকে সেখান থেকেই ভূমিষ্ট করাতেন’। (৩) ‘জিব্রীল আমার উপরে অবতীর্ণ হ’য়ে বললেন, আল্লাহ জাহান্নামকে হারাম করেছেন ঐ ব্যক্তির জন্য, যার ঔরসে আপনাকে পাঠান হয়েছে এবং ঐ গর্ভকে, যা আপনাকে ধারণ করেছে এবং ঐ ক্রোড়কে, যা আপনাকে প্রতিপালন করেছে’ (ইবনুল জাওযী, মাওযূ‘আত ১/২৮১-৮৩)। এগুলি সবই ‘জাল’ এবং অতিশয়োক্তি ছাড়া কিছুই নয়।

[১]. বুখারী হা/৪৫৫৩; মুসলিম হা/১৭৭৩; মিশকাত হা/৫৮৬১।
[২]. মুসলিম হা/২২৭৬; ওয়াছেলাহ ইবনুল আসক্বা‘ হ’তে; মিশকাত হা/৫৭৪০ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল অধ্যায়।
[৩]. আহমাদ, ছহীহ ইবনু হিববান, আবু উমামাহ হ’তে; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫৪৫।

প্রিয় নবীর (সা:) বংশধারা

তাঁর বংশধারাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। ১ম ভাগে মুহাম্মাদ (ছাঃ) থেকে ঊর্ধ্বতন পুরুষ ‘আদনান পর্যন্ত ২২টি স্তর। যে ব্যাপারে কারু কোন দ্বিমত নেই। এর উপরে ২য় ভাগে ‘আদনান থেকে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত ৪১টি স্তর এবং তার উপরে তৃতীয় ভাগে ইবরাহীম (আঃ) থেকে আদম (আঃ) পর্যন্ত ১৯টি স্তর।[১] সর্বমোট ৮২টি স্তর। যেখানে নাম ও স্তরের ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আমরা নিম্নে ‘আদনান পর্যন্ত বংশধারা উল্লেখ করলাম। যেখানে কোন মতভেদ নেই এবং এতেও কোন মতভেদ নেই যে, ‘আদনান নবী ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন’।[২]

(১) মুহাম্মাদ বিন (২) আব্দুল্লাহ বিন (৩) আব্দুল মুত্ত্বালিব বিন (৪) হাশেম বিন (৫) ‘আবদে মানাফ বিন (৬) কুছাই বিন (৭) কিলাব বিন (৮) মুররাহ বিন (৯) কা‘ব বিন (১০) লুওয়াই বিন (১১) গালিব বিন (১২) ফিহর (লকব কুরায়েশ) বিন (১৩) মালেক বিন (১৪) নাযার বিন (১৫) কিনানাহ বিন (১৬) খুযায়মা বিন (১৭) মুদরেকাহ বিন (১৮) ইলিয়াস বিন (১৯) মুযার বিন (২০) নিযার বিন (২১) মা‘দ বিন (২২) ‘আদনান।[৩]

এর মধ্যে পরদাদা হাশেম-এর নামে হাশেমী গোত্র এবং দ্বাদশতম পুরুষ ফিহর যার উপাধি ছিল কুরায়েশ, তাঁর নামানুসারে ‘কুরায়েশ’ বংশ প্রসিদ্ধি লাভ করে। কুরায়েশ অর্থ তিমি মাছ। যা হ’ল সাগরের বৃহত্তম ও অপরাজেয় প্রাণী (বায়হাক্বী, দালায়েল ১/১৮১ পৃঃ)। ইয়ামনের বাদশাহ হাসসান মক্কা আক্রমণ করে কা‘বা উঠিয়ে নিজ দেশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। ফিহর তাকে যুদ্ধে হারিয়ে তিন বছর বন্দী করে রাখেন। অতঃপর মুক্তি দেন। হাসসান ইয়ামনে ফেরার পথে রাস্তায় মারা যান। এই ঘটনার পর থেকে ফিহর ‘আরবের কুরায়েশ’ (قُرَيْشُ الْعَرَبِ) বলে খ্যাতি লাভ করেন’।[৪]

ইবনু কাছীর বলেন, আরবদের সকল গোত্র ‘আদনানে এসে জমা হয়েছে। যেকারণে আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন, قُلْ لاَ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلاَّ الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى ‘তুমি বল, আমি আমার দাওয়াতের জন্য তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাইনা, কেবল আত্মীয়তাসূলভ ভালবাসা ব্যতীত’... (শূরা ৪২/২৩)। উক্ত আয়াত নাযিলের কারণ হিসাবে ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, لَمْ يَكُنْ بَطْنٌ مِنْ قُرَيْشٍ إِلاَّ وَلَهُ فِيهِ قَرَابَةٌ، فَنَزَلَتْ عَلَيْهِ إِلاَّ أَنْ تَصِلُوا قَرَابَةً بَيْنِى وَبَيْنَكُمْ ‘কুরায়েশদের এমন কোন গোত্র ছিল না, যার সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল না। অতএব নাযিল হয়, তোমরা কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখ’।[৫]

[১]. ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, আর-রাহীকুল মাখতূম ৪৮-৪৯ পৃঃ; সুলায়মান মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২৫-৩১ পৃঃ; ইবনু হিশাম ১/১-৪; ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ ১/৭০ পৃঃ।-

الْجُزْءُ الْأَوَّلُ : هُوَ مُحَمّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطّلِبِ- اسْمُه شَيْبَةُ- بْنِ هَاشِمٍ- اسْمُه عَمْرُو- بْنِ عَبْدِ مَنَافِ- اسْمُه الْمُغِيرَةُ- بْنِ قُصَيٍّ- اسْمُه زَيْدُ- بْنِ كِلاَبِ بْنِ مُرَّةَ بْنِ كَعْبِ بْنِ لُؤَيِّ بْنِ غَالِبِ بْنِ فِهْرِ- الْمُلَقَّبُ بِقُرَيْشٍ- بْنِ مَالِكِ بْنِ النَّضْرِ- اسْمُه قَيْسٌ- بْنِ كِنَانَةَ بْنِ خُزَيْمَة َ بْنَ مُدْرِكَةَ- اسْمُه عَامِرُ- بْنِ إلْيَاسَ بْنِ مُضَرَبْنِ نِزَارِ بْنِ مَعْدِ بْنِ عَدْنَانَ- (زاد المعاد لابن القيم ১/৭০، سيرة ابن هشام ১/১-২، الرحيق المختوم ص ৪৮)-

الْجُزْءُ الثَّانِيُ : ما فوق عدنان، هو بْنُ أُدٍّ- او أُدَدُ- بن هَمَيْسَع بن سلامان بن عوص بن بوز بن قموال بن أُبَيّ بن عَوَّام بن ناشد بن حزا بن بلداس بن يدلاف بن طابخ بن جاحم بن ناحش بن ماخي بن عيض بن عبقر بن عبيد بن الدعا بن حمدان بن سَنْبَر بن يثربي بن يحزن بن يلحن بن أرعويِ بن عيض بن ديشان بن عِيْصَر بن أَفْنَاد بن أيهام بن مقصر بن ناحث بن زارح بن سمي بن مَزِّي بن عوضة بن عَرَّام بن قَيْدَار بن إِسْمَاعِيْلُ بن إِبْرَاهِيْمُ عليهما السلام- (قد جمع العلامة محمد سليمان المنصور فوري هذا الجزء من النسب برواية الكلبي وابن سعد بعد تحقيق دقيق. انظر رحمة للعالمين ২/ ১৪، ১৫، ১৬، ১৭ وفيه اختلاف كبير بين المصادر الةاريخية. (الرحيق ৪৮)-

الْجُزْءُ الثَّالِثُ : ما فوق إبراهيم عليه السلام، وهو ابن تارح- واسمه آزر- بن ناحور بن ساروع- أو ساروغ- بن راعو بن فَالَخ بن عابر بن شالخ بن أَرْفَخْشَد بن سام بن نوح- عليه السلام- بن لامك بن مَتَوَشْلَخ بن أخنوخ- يقال هو إدريس عليه السلام- ابن يَرْد بن مَهْلائيل بن قَيْنَان بن يَانِشَ بن شِيْث بن آدم عليهما السلام- (ابن هشام ১/ ২، ৩، ৪، تلقيح فهوم أهل الأثر ص ৬، خلاصة السير للطبري ص ৬، ورحمة للعالمين ২/ ১৮ واختلفت هذه المصادر في تلفظ بعض هذه الأسماء، وكذا سقط من بعض المصادر بعض الأسماء- (الرحيق ৪৯ حاشية-১)

[২]. যাদুল মা‘আদ ১/৭০; ইবনু কাছীর, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩ পৃঃ।
[৩]. বুখারী, ‘আনছারদের মর্যাদা’ অধ্যায়, ২৮ অনুচ্ছেদ ‘নবী (ছাঃ)-এর আগমন’।

প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূল (ছাঃ) স্বীয় বংশধারা বর্ণনার ক্ষেত্রে ‘আদনান পর্যন্ত উল্লেখ করার পর উপরের স্তরসমূহের ব্যাপারে চুপ থাকতেন এবং বলতেন, كَذَبَ النَّسَّابُونَ ‘বংশবিদরা মিথ্যা বলেছে’ (আর-রাহীক্ব ২০ পৃঃ)। বর্ণনাটি ‘মওযূ’ বা জাল (আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/১১১)।
[৪]. মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/৫৯ পৃঃ।
[৫]. বুখারী হা/৩৪৯৭; ইবনু কাছীর, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৩ পৃঃ।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




********************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url