প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৩৬] || মহানবীর জীবনী ||





পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি কতটুকু জানি। প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।

খন্দক যুদ্ধ ও বনু কুরায়যা যুদ্ধ এবং এর ফলাফল

খন্দক যুদ্ধ

৫ম হিজরীর শাওয়াল ও যুলক্বা‘দাহ (মার্চ ৬২৬ খৃ.)
‘খন্দক’ অর্থ পরিখা। এই যুদ্ধে মদীনার প্রবেশপথে দীর্ঘ পরিখা খনন করা হয়েছিল বলে একে খন্দকের যুদ্ধ বলা হয়। ‘আহযাব’ অর্থ দলসমূহ। মদীনা রাষ্ট্রকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য কুরায়েশদের মিত্র দলসমূহ এক হয়েছিল বিধায় একে ‘আহযাবের যুদ্ধ’ বলা হয়।

মদীনা থেকে বনু নাযীর ইহূদী গোত্রটিকে খায়বরে নির্বাসনের মাত্র ৭ মাসের মাথায় খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদীনার উপরে পুরা হিজাযব্যাপী শত্রু দলগুলির এক সর্বব্যাপী হামলা। যা ছিল প্রায় মাসব্যাপী কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতাপূর্ণ অভিযান। এই যুদ্ধে শত্রু সৈন্যের সংখ্যা ছিল ১০,০০০। যা ছিল মদীনার আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা মিলে মোট জনসংখ্যার চাইতে বেশী। মুসলিম বাহিনীর সৈন্যসংখ্যা ছিল ৩০০০। কিন্তু তারা যে অভিনব যুদ্ধকৌশল অবলম্বন করেন, তা পুরা আরব সম্প্রদায়ের নিকটে ছিল অজ্ঞাত। ফলে তারা হতাশাগ্রস্ত ও পর্যুদস্ত হয়ে অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধের নেপথ্যচারী ছিল মদীনা থেকে বিতাড়িত বনু নাযীর ইহূদী গোত্রের নেতারা। মদীনার শনৈঃশনৈঃ উন্নতি দেখে হিংসায় জর্জরিত খায়বরে বিতাড়িত বনু নাযীরের ইহূদী নেতারা ২০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে মক্কার কুরায়েশ নেতৃবৃন্দ এবং নাজদের বেদুঈন গোত্র বনু গাত্বফান ও অন্যান্য বড় বড় গোত্রের কাছে প্রেরণ করে। তারা সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকলের সাধারণ শত্রু মুসলিম শক্তিকে নির্মূল করার জন্য প্ররোচিত করে। ফলে সমস্ত আরবে মদীনার বিরুদ্ধে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। অতঃপর আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কেনানা ও তেহামা গোত্রের মিত্রবাহিনী মিলে ৪,০০০ এবং বনু সুলায়েম ও বনু গাত্বফানের বিভিন্ন গোত্রের ৬,০০০ মোট দশ হাযার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনী সমুদ্র তরঙ্গের মত গিয়ে মদীনায় আপতিত হয়’ (আর-রাহীক্ব ৩০১-০৩, ৩০৬ পৃঃ)।

অপরপক্ষে মদীনার হুঁশিয়ার নেতৃত্ব গোয়েন্দা রিপোর্টের মাধ্যমে আগেই সাবধান হয়ে যান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিরোধীদের খবর জানার জন্য যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম (রাঃ)-কে নিয়োগ করেন। তিনি বলেন,مَنْ يَأْتِينِى بِخَبَرِ الْقَوْمِ؟ قَالَ الزُّبَيْرُ أَنَا. فَقَالَ النَّبِىُّ– صلى الله عليه وسلم– إِنَّ لِكُلِّ نَبِىٍّ حَوَارِيًّا، وَحَوَارِىَّ الزُّبَيْرُ ‘শত্রুপক্ষের খবর আনার জন্য কে আছ? যুবায়ের বললেন, আমি। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, প্রত্যেক নবীর জন্য একজন ‘হাওয়ারী’ (নিকট সহচর) থাকে। আমার হাওয়ারী হ’ল যুবায়ের’ (বুখারী হা/২৮৪৬)। শত্রুপক্ষ বলতে এখানে বনু কুরায়যাকে বুঝানো হয়েছে। তারা কুরায়েশদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করেছে কি না, তার খবর সংগ্রহের জন্য যুবায়েরকে পাঠানো হয়। অতঃপর যুদ্ধ শেষে কুরায়েশ শিবিরের অবস্থা জানার জন্য হুযায়ফাকে পাঠানো হয় (ফাৎহুল বারী হা/৪১১৩-এর আলোচনা)।

অতঃপর অভিজ্ঞ ছাহাবীগণের সাথে পরামর্শ মোতাবেক রাসূল (ছাঃ) মদীনার উত্তর মুখে ওহোদের দিকে দীর্ঘ পরিখা খনন করেন এবং তার পিছনে ৩,০০০ সুদক্ষ সৈন্য মোতায়েন করেন।[1] এর কারণ ছিল এই যে, তিনদিকে পাহাড় ও খেজুর বাগিচা বেষ্টিত মদীনা নগরী প্রাকৃতিক ভাবে সুরক্ষিত দুর্গের মত ছিল। কেবল উত্তর দিকেই মাত্র খোলা ছিল। যেদিক দিয়ে শত্রুদের হামলার আশংকা ছিল। এখানে পরিখা খনন করা হয়। যার দৈর্ঘ্য ছিল ৫০০০ হাত, প্রস্থ ৯ হাত ও গভীরতা ৭ থেকে ১০ হাত। প্রতি ১০ জনকে ৪০ হাত করে খননের দায়িত্ব দেওয়া হয়’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪২০-২১)। রাসূল (ছাঃ) মদীনার অভ্যন্তর ভাগের সালা‘ (سَلْع) পাহাড়কে পিছনে রেখে তাঁর সেনাবাহিনীকে খন্দকমুখী করে সন্নিবেশ করেন এবং নারী ও শিশুদেরকে বনু হারেছার ফারে‘ (فَارِع) দুর্গে রেখে দেন। যা ছিল মুসলমানদের সবচেয়ে মযবুত দুর্গ’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪২৫)।

মুসলিম বাহিনী তীর-ধনুক নিয়ে সদাপ্রস্ত্তত থাকেন, যাতে শত্রুরা পরিখা টপকে বা ভরাট করে কোনভাবেই মদীনায় ঢুকতে না পারে। মুসলিম বাহিনীর এই নতুন কৌশল দেখে কাফের বাহিনী হতচকিত হয়ে যায়। ফলে তারা যুদ্ধ করতে না পেরে যেমন ভিতরে ভিতরে ফুঁসতে থাকে, তেমনি রসদ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে আতংকিত হ’তে থাকে। মাঝে-মধ্যে পরিখা অতিক্রমের চেষ্টা করতে গিয়ে তাদের ১০ জন নিহত হয়। অমনিভাবে তাদের তীরের আঘাতে মুসলিম পক্ষে ৬ জন শহীদ হন’।[2] উক্ত ৬জন হ’লেন, আউস গোত্রের বনু আব্দিল আশহাল থেকে গোত্রনেতা সা‘দ বিন মু‘আয, আনাস বিন আউস ও আব্দুল্লাহ বিন সাহল। খাযরাজ গোত্রের বনু জুশাম থেকে তুফায়েল বিন নু‘মান ও ছা‘লাবাহ বিন গানমাহ। বনু নাজ্জার থেকে কা‘ব বিন যায়েদ। যিনি একটি অজ্ঞাত তীরের মাধ্যমে শহীদ হন (ইবনু হিশাম ২/২৫২-৫৩)। এঁদের মধ্যে আহত সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ) বনু কুরায়যা যুদ্ধের শেষে মারা যান (ইবনু হিশাম ২/২২৭)।

অতঃপর আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে। একদিন রাতে হঠাৎ প্রচন্ড ঝঞ্ঝাবায়ু এসে কাফেরদের সবকিছুকে লন্ডভন্ড করে দেয়। অতঃপর তারা ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ إِذْ جَاءَتْكُمْ جُنُودٌ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا وَجُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا وَكَانَ اللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرًا ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর, যখন তোমাদের নিকট এসেছিল সেনাদল সমূহ। অতঃপর আমরা তাদের উপরে প্রেরণ করলাম তীব্র ঝঞ্ঝাবায়ু এবং এমন সেনাবাহিনী যাদেরকে তোমরা দেখনি। আর আল্লাহ তোমরা যা কর তা দেখেন’ (আহযাব ৩৩/৯)।

এভাবে ফেরেশতা পাঠিয়ে আল্লাহ সরাসরি সাহায্য করেছেন হিজরতকালে যখন রাসূল (ছাঃ) ও আবুবকর (রাঃ) দু’জনে ছওর গিরিগুহায় আত্মগোপন করেছিলেন’ (তওবা ৯/৪০), অতঃপর বদর যুদ্ধে (আলে ইমরান ৩/১২৩-২৬), অতঃপর হোনায়েন যুদ্ধে (তওবা ৯/২৫-২৬)। এতদ্ব্যতীত তিনি ও ছাহাবায়ে কেরাম এবং যুগে যুগে তাঁর সনিষ্ঠ অনুসারী মুমিনগণ সর্বদা সাহায্য পেয়েছেন ও পাবেন ইনশাআল্লাহ।

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, খন্দকের দীর্ঘায়িত যুদ্ধের অসহনীয় কষ্টের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে আল্লাহর নিকট দো‘আ করতে বলেছিলেন,اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِنَا، وَآمِنْ رَوْعَاتِنَا ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সংকট দূরীভূত কর এবং আমাদের ভীতি দূর কর’ (সিলসিলা ছহীহাহ হা/২০১৮)। আব্দুল্লাহ ইবনু আবী ‘আওফা (রাঃ) বলেন, এদিন রাসূল (ছাঃ) মুশরিকদের বিরুদ্ধে দো‘আ করে বলেছিলেন,اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ سَرِيْعَ الْحِسَابِ اهْزِمِ الْأَحْزَابَ اللَّهُمَّ اهْزِمْهُمْ وَزَلْزِلْهُمْ ‘হে আল্লাহ! হে কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী! সম্মিলিত সেনাদলকে তুমি পরাভূত কর। হে আল্লাহ! তুমি ওদের পরাজিত কর ও ভীত-কম্পিত কর’।[3] তাছাড়া নবীগণের বিজয় সাধারণতঃ এরূপ চূড়ান্ত পরীক্ষার পরেই এসেছে। যেমন আল্লাহ বলেন, أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللهِ أَلاَ إِنَّ نَصْرَ اللهِ قَرِيبٌ ‘তোমরা কি ধারণা করেছ জান্নাতে প্রবেশ করবে? অথচ তোমাদের উপর এখনও তাদের মত অবস্থা আসেনি, যারা তোমাদের পূর্বে গত হয়েছে। নানাবিধ বিপদ ও দুঃখ-কষ্ট তাদেরকে স্পর্শ করেছিল ও তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। এমনকি রাসূল ও তার সাথী মুমিনগণ বলতে বাধ্য হয়েছিল যে, কখন আল্লাহর সাহায্য আসবে? জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য অতীব নিকটবর্তী’ (বাক্বারাহ ২/২১৪)। কুরতুবী বলেন, অধিকাংশ মুফাসসির বলেছেন যে, অত্র আয়াতটি খন্দক যুদ্ধের সময় নাযিল হয়’ (কুরতুবী, তাফসীর উক্ত আয়াত)। অতএব এই বিজয় রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ কবুলের প্রমাণ বৈ কি!

হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) বলেন, খন্দক যুদ্ধের শেষ রাতে যখন প্রচন্ড ঝঞ্ঝাবায়ু আসে এবং সবদিকে ঠান্ডা হয়ে যায়, তখন রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে লক্ষ্য করে বলেন, কে আছ যে আমাকে শত্রু পক্ষের খবর এনে দিতে পারবে? সে আমার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে’। কথাটি রাসূল (ছাঃ) দু’বার বললেন। কিন্তু কেউ জবাব দিল না। অবশেষে তিনি আমার নাম ধরে বললেন, দাঁড়াও হে হুযায়ফা! আমাদের জন্য খবর নিয়ে এস এবং তাদেরকে যেন আমার বিরুদ্ধে উত্তেজিত করো না। অতঃপর আমি উঠলাম এবং এমন আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে চলতে থাকলাম যেন তা গরম (অর্থাৎ ঠান্ডা বাতাস ও ঝড়ের কোন প্রকোপ ছিল না)। আমি চলতে থাকলাম এবং পৌঁছে গিয়ে দেখলাম যে, আবু সুফিয়ান আগুন জ্বালিয়ে দেহ গরম করছেন। আমি তীর তাক করলাম। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর নিষেধাজ্ঞা স্মরণ হওয়ায় বিরত হ’লাম। অতঃপর ফিরে এসে সব খবর জানালাম। তখন রাসূল (ছাঃ) তাঁর মস্তকাবরণ ‘আবা’-র একটি অংশ আমার গায়ের উপর দিলেন। তাতে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। কিছু পরে তিনি আমাকে ডাকলেন, قُمْ يَا نَوْمَانُ ‘উঠ হে ঘুমন্ত! (মুসলিম হা/১৭৮৮)।

উল্লেখ্য যে, কাফের পক্ষের পরাজয়ের কারণ হিসাবে দু’টি বিষয় বর্ণিত হয়েছে, যা প্রসিদ্ধ হ’লেও বিশুদ্ধ নয়।[4] আমরা মনে করি, আহযাব যুদ্ধে বিজয়ের জন্য কোনরূপ ‘যঈফ ও সনদবিহীন’ বর্ণনার আশ্রয় নেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বরং এ ব্যাপারে আল্লাহই পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছেন যে, তিনি তীব্র ঝঞ্ঝাবায়ু এবং তাঁর অদৃশ্য সেনাবাহিনী অর্থাৎ ফেরেশতাদের মাধ্যমে বিজয় দান করেছিলেন।

অতঃপর যুদ্ধ শেষে যুলক্বা‘দাহ মাসের সাত দিন বাকী থাকতে বুধবার পূর্বাহ্নে রাসূল (ছাঃ) মদীনায় ফিরে আসেন’।[5]

[1]. আর-রাহীক্ব ৩০৫-০৬ পৃঃ।

এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) পারস্য থেকে হিজরতকারী ছাহাবী সালমান ফারেসী (রাঃ)-এর পরামর্শক্রমে পরিখা খননের এই নতুন যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করা হয়’ (আর-রাহীক্ব ৩০৩ পৃঃ)। যা বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত নয়। কেননা এটির খবর ‘মুরসাল’ (মা শা-‘আ ১৬২ পৃঃ)। ইবনু হিশাম এটি বিনা সনদে উল্লেখ করে বলেন, يُقَالُ: إنَّ سَلْمَانَ الْفَارِسِيَّ أَشَارَ بِهِ عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ‘বলা হয়ে থাকে যে, সালমান ফারেসী এব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন’ (ইবনু হিশাম ২/২২৪)। অথচ ইবনু ইসহাক এব্যাপারে কিছু না বলেই বর্ণনা করেন যে, فَلَمَّا سَمِعَ بِهِمْ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَا أَجْمَعُوا لَهُ مِنْ الْأَمْرِ، ضَرَبَ الْخَنْدَقَ عَلَى الْمَدِينَةِ، فَعَمِلَ فِيهِ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَرْغِيبًا لِلْمُسْلِمِينَ فِي الْأَجْرِ- ‘যখন রাসূল (ছাঃ) সম্মিলিত বাহিনীর আগমন সংবাদ শুনলেন, তখন তিনি মদীনার প্রবেশ মুখে পরিখা খনন করতে বললেন। অতঃপর তিনি নিজে তাতে অংশগ্রহণ করেন উক্ত নেকীর কাজে মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করার জন্য’ (ইবনু হিশাম ২/২১৬)। অতএব এটাই সঠিক কথা যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহর নির্দেশ (আলে ইমরান ৩/১৫৯) মোতাবেক সকল বৈষয়িক বিষয়ে অভিজ্ঞ ছাহাবীগণের সাথে পরামর্শ করতেন। সালমান ফারেসী (রাঃ) তাদের মধ্যে থাকাটা মোটেই অসম্ভব নয়।

সালমান ফারেসী

আবু আব্দুল্লাহ সালমান পারস্যের রামহুরমুয অথবা ইস্ফাহান এলাকার অধিবাসী ছিলেন। মজূসী ধর্মনেতা পিতা তাকে অগ্নি প্রজ্জ্বলন ও উপাসনার কাজে সারাক্ষণ বন্দী রাখতেন। তিনি বলেন, আমার পিতার একটি বড় শস্যক্ষেত ছিল। একদিন আমাকে তিনি সেখানে পাঠান। যাওয়ার পথে আমি একটি গীর্জা অতিক্রম করলাম। তখন তারা ছালাত আদায় করছিল। বিষয়টি আমার কাছে খুব ভাল লাগল এবং আমি বললাম, আল্লাহর কসম! এটি আমাদের দ্বীনের চাইতে উত্তম। এভাবে সন্ধ্যা হয়ে গেল। কিন্তু আমি শস্যক্ষেতে গেলাম না। আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় গেলে আমি এই দ্বীন পাব? তারা বলল, শামে গেলে পাবেন। অতঃপর আমি পিতার নিকটে ফিরে এলাম। তিনি বললেন, কোথায় ছিলে? শস্যক্ষেত্রে যাওনি কেন? আমি ঘটনা বললাম। তখন তিনি বললেন, ওদের দ্বীনের চাইতে তোমার ও তোমার বাপ-দাদার দ্বীন উত্তম। আমি বললাম, কখনই না। আল্লাহর কসম! ঐ দ্বীন আমাদের দ্বীনের চাইতে উত্তম। অতঃপর তিনি আমার পায়ে বেড়ী দিয়ে ঘরে বন্ধ করে রাখলেন। তখন আমি খ্রিষ্টানদের গীর্জায় খবর পাঠালাম যে, শাম যাত্রী কোন কাফেলা এলে আমাকে খবর দিতে। বেশ কিছুদিন পর আমি উক্ত খবর পেয়ে লোহার বেড়ী খুলে গোপনে তাদের সাথী হয়ে গেলাম। অতঃপর শামে পৌঁছে শেষনবী সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিতে থাকি।... অবশেষে বহুদিন পর আমি ক্রীতদাস হিসাবে ইয়াছরিবে নীত হই। ইতিমধ্যে রাসূল (ছাঃ) হিজরত করে আসেন এবং খ্রিষ্টান পাদ্রীদের বর্ণিত আলামত সমূহ পরীক্ষা করে আমি তাঁর ব্যাপারে নিশ্চিত হই। অতঃপর আমি তাঁর নিকট ইসলামের উপর বায়‘আত গ্রহণ করি। ইতিমধ্যে রাসূল (ছাঃ) বদর ও ওহোদ যুদ্ধ হতে ফারেগ হন। একদিন তিনি আমাকে বলেন, হে সালমান! তুমি তোমার মনিবের সাথে চুক্তিবদ্ধ হও। তখন আমি ৩০০ খেজুর গাছ লাগানো ও তাজা করা এবং ৪০ উক্বিয়ার বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হলাম। রাসূল (ছাঃ) সবাইকে বললেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের মুক্তিতে সাহায্য কর। তখন সবাই খেজুরের চারা দিয়ে আমাকে ৩০০ পূর্ণ করে দিলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর পূর্ব নির্দেশ মতে আমি তাঁকে ডেকে আনলাম এবং তিনি একটি চারা নিজ হাতে লাগালেন। যার হাতে আমার জীবন, তার কসম করে বলছি, এর ফলে একটি চারাও মরেনি এবং সবগুলি দ্রুত তাজা হয়ে ওঠে। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) ডিমের ন্যায় একটি সোনার টুকরা আমাকে দিলেন। যা ছিল ৪০ উক্বিয়ার সমান। অতঃপর আমি সেগুলি মনিবকে দিয়ে দাসত্ব হতে মুক্ত হই। এরপরে আমি খন্দকের যুদ্ধে যোগদান করি এবং পরবর্তী সকল যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে অংশগ্রহণ করি’ (আহমাদ হা/২৩৭৮৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৮৯৪)।

রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক মুক্ত হওয়ায় তিনি তাঁর ‘মুক্তদাস’ (مولى) হিসাবে গণ্য হতেন। তিনি ইনজীল ও কুরআনে পারদর্শী ছিলেন। এজন্য তাঁকে ‘দুই কিতাবের পন্ডিত’ (صاحب الكتابين) বলা হত। অত্যন্ত পরহেযগার ও দুনিয়াত্যাগী ছিলেন। পরবর্তীতে মাদায়েনের গবর্ণর হওয়া সত্ত্বেও নিজ হাতে খেজুরের পাতা দিয়ে চাটাই বানিয়ে তার বিক্রয়লব্ধ আয় দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করতেন। ধনীর দুলাল হওয়া সত্ত্বেও স্রেফ শেষনবীর সন্ধানে ১০ থেকে ১৯ জন মনিবের ক্রীতদাস হতে হতে অবশেষে তিনি ‘আল্লাহর দাস’ হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। নাম জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন, أنا سلمان ابن الإسلام من بني آدم ‘আমি ইসলামের বেটা সালমান একজন আদম সন্তান’। তাঁর ইশারাতেই খন্দক যুদ্ধে পরিখা খনন করা হয় বলে প্রসিদ্ধি আছে। তিনি ২৫০ মতান্তরে ৩৫০ বছরের দীর্ঘ জীবন পেয়েছিলেন। ৩৫ অথবা ৩৬ হিজরীতে হযরত ওছমান (রাঃ)-এর খেলাফতকালে মদীনায় মৃত্যুবরণ করেন (আল-ইছাবাহ, সালমান আবু আব্দুল্লাহ ক্রমিক ৩৩৫৯; আল-ইস্তী‘আব)।

(২) পরিখা খননের সময় মুহাজির ও আনছারগণ প্রত্যেকেই সালমান ফারেসীকে নিজেদের দলভুক্ত বলে দাবী করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) বলেন, سَلْمَانُ مِنَّا أَهْلَ الْبَيْتِ ‘সালমান আমাদের পরিবারভুক্ত’ (হাকেম হা/৬৫৪১; ইবনু হিশাম ২/২২৪)। বর্ণনাটির সনদ যঈফ। আলবানী বলেন, বরং খবরটি আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। যা মওকূফ ছহীহ। বর্ণনাটি হ’ল, আলী (রাঃ)-কে বলা হ’ল, আমাদেরকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর সাথীদের বিষয়ে বর্ণনা করুন। জবাবে তিনি বললেন, তাঁদের কার সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাস করছ? তারা বলল, সালমান। তিনি বললেন, তিনি প্রথম যুগের এবং শেষ যুগের ইল্ম প্রাপ্ত হয়েছেন। যা এমন এক সমুদ্র, যার তলদেশ পাওয়া যায় না। তিনি আমাদের পরিবারভুক্ত’ (যঈফাহ হা/৩৭০৪-এর আলোচনা; মা শা-‘আ ১৬৫ পৃঃ)।

[2]. আর-রাহীক্ব ৩০৭ পৃঃ; রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/১৯১।

লেখক মানছূরপুরী বলেন, এ যুদ্ধ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে আল্লাহ বলেন, أَمْ يَقُوْلُوْنَ نَحْنُ جَمِيْعٌ مُنْتَصِرٌ، سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّوْنَ الدُّبُرَ- ‘কাফেররা বলে যে, আমরা আজ সবাই প্রতিশোধকামী’। ‘কিন্তু দেখবে যে সত্বর ঐ সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হবে এবং তারা পিছন ফিরে পালিয়ে যাবে’ (ক্বামার ৫৩/৪৪-৪৫)। উক্ত আয়াত নাযিলের ২৫ দিন পর যুদ্ধের শেষ দিকে হঠাৎ উত্তপ্ত বায়ুর প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড় আল্লাহর গযব আকারে নেমে আসে। যা অবরোধকারী সেনাদলের তাঁবু সমূহ উড়িয়ে নিয়ে যায় এবং তারা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/৩১৪-১৫ পৃঃ)। উক্ত আয়াতটি মাক্কী সূরার অন্তর্ভুক্ত। যা রাসূল (ছাঃ) ২য় হিজরীতে সংঘটিত বদর যুদ্ধের দিন পাঠ করেছিলেন (বুখারী হা/৩৯৫৩)। অতএব এটি ৪র্থ হিজরীতে সংঘটিত খন্দকের যুদ্ধে নাযিল হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।

[3]. বুখারী হা/২৯৩৩; মুসলিম হা/১৭৪২ (২১); মিশকাত হা/২৪২৬।
[4]. যেমন এ সময় রাসূল (ছাঃ) দু’টি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। (১) মদীনার এক তৃতীয়াংশ উৎপন্ন ফসল দিয়ে শত্রুপক্ষের সঙ্গে সন্ধি করা। (২) শত্রু সেনাদল সমূহের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে তাদের একে অপর থেকে পৃথক করে ফেলা (আর-রাহীক্ব ৩১১ পৃঃ)। প্রথম লক্ষ্য অর্জনে তিনি বনু গাত্বফানের দুই নেতা ওয়ায়না বিন হিছন ও হারেছ বিন ‘আওফের সঙ্গে সন্ধির চিন্তা করেন। যাতে তারা তাদের সেনাদল নিয়ে ফিরে যায়। অতঃপর তিনি উক্ত বিষয়ে দুই সা‘দের মতামত জানতে চাইলেন। তারা বললেন, يَا رَسُولَ اللهِ إنْ كَانَ اللهُ أَمَرَكَ بِهَذَا فَسَمْعًا وَطَاعَةً وَإِنْ كَانَ شَيْئًا تَصْنَعُهُ لَنَا فَلا حَاجَةَ لَنَا فِيهِ- ‘হে আল্লাহর রাসূল! যদি আল্লাহ এ বিষয়ে আপনাকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তবে সেটা করুন। কিন্তু যদি আপনি এটা আমাদের স্বার্থে করতে চান, তবে এতে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই’। কেননা যখন আমরা এবং এসব লোকেরা শিরক ও মূর্তিপূজার মধ্যে ছিলাম, তখন তারা আমাদের একটি শস্যদানারও লোভ করার সাহস করেনি। আর এখন তো আল্লাহ আমাদেরকে ইসলামের দ্বারা সম্মানিত করেছেন। আমাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন ও আপনার মাধ্যমে ইযযত প্রদান করেছেন। এখন কেন আমরা তাদেরকে আমাদের ধন-সম্পদ প্রদান করব’? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের মতামতকে সঠিক গণ্য করেন ও বলেন, إنّمَا هُوَ شَيْءٌ أَصْنَعُهُ لَكُمْ لَمَّا رَأَيْتُ الْعَرَبَ قَدْ رَمَتْكُمْ عَنْ قَوْسٍ وَاحِدَةٍ ‘সমগ্র আরব তোমাদের দিকে একই সাথে অস্ত্রসমূহ তাক করেছে দেখে শুধু তোমাদের স্বার্থেই আমি এরূপ করতে চেয়েছিলাম’ (আর-রাহীক্ব ৩১১ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৪; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক হা/৯৭৩৭; ইবনু হিশাম ২/২২৩। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৬১)।

দ্বিতীয় লক্ষ্য অর্জনে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে কাজে লাগান। যেমন বলা হয়েছে যে, বনু কুরায়যার চুক্তিভঙ্গে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাসূলকে সান্ত্বনা দেবার জন্য এলাহী ব্যবস্থা স্বরূপ আবির্ভূত হন শত্রুপক্ষের জনৈক ব্যক্তি বনু গাত্বফানের নু‘আইম বিন মাসঊদ আশজাঈ। তিনি এসে ইসলাম কবুল করেন ও রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে যুদ্ধের জন্য নির্দেশ কামনা করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে ইহূদী বনু কুরায়যা ও কুরায়েশ বাহিনীর মধ্যকার সহযোগিতা চুক্তি বিনষ্ট করার জন্য কৌশলের আশ্রয় নেবার নির্দেশ দিয়ে বলেন, خَذِّلْ عَنَّا إِنْ اسْتَطَعْتَ، فَإِنَّ الْحَرْبَ خُدْعَةٌ ‘যদি তুমি পার, তবে তুমি আমাদের পক্ষে ওদের মনোবল ভেঙ্গে দাও। কেননা যুদ্ধ হ’ল কৌশলের নাম’ (আর-রাহীক্ব ৩১২ পৃঃ)। বর্ণনাটি সনদ বিহীন। তবে বর্ণনাটির শেষাংশ الْحَرْبُ خُدْعَةٌ ‘যুদ্ধ হ’ল কৌশলের নাম’ কথাটি ‘ছহীহ’ (বুখারী হা/৩৬১১; মুসলিম হা/১০৬৬; মিশকাত হা/৩৯৩৯, ৫৪১৮)।

উক্ত নির্দেশ পেয়ে নু‘আইম বিন মাসঊদ শাওয়াল মাসের এক শনিবারে ইহূদীদের সাপ্তাহিক পবিত্র দিনে বনু কুরায়যার কাছে যান এবং বলেন, কুরায়েশ পক্ষকে আপনারা সাহায্য করবেন না। কেননা যুদ্ধে হার-জিত যাই-ই হৌক, তারা চলে যাবে। কিন্তু আপনারা এখানে থাকবেন। তখন মুসলমানেরা আপনাদের উপর প্রতিশোধ নিবে। অতএব কুরায়েশদের কিছু লোককে বন্ধক রাখার শর্ত করা ব্যতীত আপনারা তাদের সাহায্য করবেন না। এতে তারা রাযী হয়। অন্যদিকে কুরায়েশ পক্ষকে গিয়ে তিনি বলেন, মুহাম্মাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করায় ইহূদীরা লজ্জিত। এক্ষণে তারা আপনাদের সাহায্য করবে না, যতক্ষণ না আপনারা তাদের কাছে আপনাদের কিছু লোককে বন্ধক রাখেন। পরে উভয় পক্ষ পরস্পরের কাছে গেলে একই কথা শোনে এবং তাদের মধ্যে পরস্পরে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। ফলে সহযোগিতা চুক্তি ভেঙ্গে যায় এবং এভাবে নু‘আইমের কূটনীতি সফল হয়’ (ইবনু হিশাম ২/২২৯-৩১)। ইবনু ইসহাক ঘটনাটির সনদ উল্লেখ করেননি। ফলে বর্ণনাটি প্রসিদ্ধ হ’লেও বিশুদ্ধ নয় (সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৭৭৭; মা শা-‘আ ১৭০ পৃঃ)।

হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) ফাৎহুল বারীর মধ্যে নু‘আইম বিন মাসঊদ-এর উপরোক্ত ঘটনাটি ইবনু ইসহাক-এর বরাতে বর্ণনা করে বলেন, নু‘আইম একজন চোগলখোর (رَجُلاً نَمُومًا) ব্যক্তি ছিলেন। যিনি একজনের কথা অন্যজনকে লাগিয়ে কার্যসিদ্ধিতে পটু ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ডেকে বলেন, ইহূদীরা আমার কাছে খবর পাঠিয়েছে যে, কুরায়েশ ও গাত্বফানের কোন একজন নেতাকে তাদের নিকট বন্ধক রাখলে তারা তাদের সাথী হয়ে যুদ্ধ করবে, নইলে নয়। তুমি এ কথাটি উভয় পক্ষকে গিয়ে বল’। তখন নু‘আইম দ্রুত বেরিয়ে গিয়ে ইহূদী বনু কুরায়যা ও কুরায়েশ উভয় পক্ষকে উক্ত কথা বলেন। ফলে তাদের মধ্যকার সন্ধি ভঙ্গ হয়ে যায়। আর এটাই ছিল তাদের পরাজয়ের কারণ’ (ফাৎহুল বারী হা/৪১০৫-এর আলোচনা, ৭/৪০২ পৃঃ)। মূলতঃ উক্ত বর্ণনাটি ইবনু ইসহাকের নয়। বরং বায়হাক্বী দালায়েলুন নবুঅতের এবং সেটিও যঈফ (দালায়েল ৩/৪৪৭ পৃঃ; মা শা-‘আ ১৭০-৭২ পৃঃ)।

ইহূদীদের উক্ত বদ স্বভাবের বিষয়ে দেখুন সূরা বাক্বারাহ ২/১২০, সূরা আনফাল ৮/৫৫-৫৬ প্রভৃতি। আধুনিক যুগে ফিলিস্তীন, ইরাক, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে ইহূদী-নাছারা ও কাফের চক্রের কপটাচরণ ও চুক্তিভঙ্গের অসংখ্য নযীর বিদ্যমান রয়েছে।

[5]. ইবনু সা‘দ ২/৫৪; আর-রাহীক্ব ৩১৩ পৃঃ।

খন্দক যুদ্ধে ফলাফল

খন্দক যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি তেমন না হ’লেও এটি ছিল একটি যুগান্তকারী যুদ্ধ। কেননা আরবদের সম্মিলিত বাহিনীর এই ন্যাক্কারজনক পরাজয়ে মদীনার উঠতি মুসলিম শক্তিকে তারা সমগ্র আরবে এক অদমনীয় ও অপ্রতিরোধ্য শক্তি হিসাবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। এতবড় বিশাল বাহিনী সংগ্রহ করা বিরোধীদের পক্ষে আর কখনো সম্ভব হয়নি। সেদিকে ইঙ্গিত করেই শত্রুদের পলায়নের পর রাসূল (ছাঃ) বলেছিলেন,الْآنَ نَغْزُوْهُمْ وَلاَ يَغْزُوْنَنَا نَحْنُ نَسِيْرُ إِلَيْهِمْ ‘এখন থেকে আমরা ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব, ওরা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। আমরাই ওদের দিকে সৈন্য পরিচালনা করব’।[1]

[1]. বুখারী হা/৪১১০; মিশকাত হা/৫৮৭৯ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯ ‘মু‘জেযা সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৪।

খন্দক যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ

১. ধূলি-ধূসরিত রাসূল(اغبر الرسول صــ) :

খন্দক যুদ্ধে প্রতি ১০ জনের জন্য ৪০ হাত করে পরিখা খননের দায়িত্ব ছিল। ছাহাবী বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে খন্দকের মাটি বহনরত অবস্থায় দেখেছি। যাতে তাঁর সারা দেহ বিশেষ করে পেটের চামড়া ধূলি-ধূসরিত হয়ে গিয়েছিল’ (বুখারী হা/৪১০৪)।

২. রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কবিতা আবৃত্তির মাধ্যমে কাজ করেন(إنشاد الرسولـــ عند العمل) :

বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) বলেন, খন্দকের মাটি বহনকালে আমি রাসূল (ছাঃ)-কে টান দিয়ে দিয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার কবিতার নিম্নোক্ত চরণগুলি আবৃত্তি করতে শুনেছি।-

اللَّهُمَّ لَوْلاَ أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا + وَلاَ تَصَدَّقْنَا وَلاَ صَلَّيْنَا
فَأَنْزِلَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا + وَثَبِّتِ الْأَقْدَامَ إِنْ لاَقَيْنَا
إِنَّ الْأُوْلَى قَدْ بَغَوْا عَلَيْنَا + إِذَا أَرَادُوْا فِتْنَةً أَبَيْنَا-

‘হে আল্লাহ! যদি তোমার অনুগ্রহ না থাকত, তাহ’লে আমরা হেদায়াতপ্রাপ্ত হ’তাম না এবং আমরা ছাদাক্বাও দিতাম না, ছালাতও আদায় করতাম না’। ‘অতএব আমাদের উপরে শান্তি বর্ষণ কর এবং কাফিরদের সঙ্গে যদি আমাদের মুকাবিলা হয়, তাহ’লে আমাদের পা গুলি দৃঢ় রাখ’। ‘নিশ্চয়ই প্রথম পক্ষ আমাদের উপরে বাড়াবাড়ি করেছে। যদি তারা ফিৎনা সৃষ্টি করতে চায়, তাহ’লে আমরা তা অস্বীকার করব’ (বুখারী হা/২৮৩৭)।

৩. কবিতা বলে প্রার্থনার সুরে উৎসাহ দিলেন রাসূল (ছাঃ)(تشجيع الرسول صـ لإنشاد الدعائى) :

ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) বলেন, আমরা খন্দকে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। এ সময় আমরা পরিখা খনন করছিলাম ও কাঁধে করে মাটি বহন করছিলাম’। আনাস (রাঃ) বলেন, শীতের সকালে ক্ষুৎ-পিপাসায় কাতর ছাহাবীগণ পরিখা খনন করছিলেন। এমন সময় রাসূল (ছাঃ) সেখানে আগমন করেন ও তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে প্রার্থনার সুরে গেয়ে ওঠেন,

اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الْآخِرَهْ + فَاغْفِرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ

‘হে আল্লাহ! নেই কোন আরাম পরকালের আরাম ব্যতীত। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা কর’।[1] জবাবে ছাহাবীগণ গেয়ে ওঠেন,

نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوا مُحَمَّدًا + عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِيْنَا أَبَدَا

‘আমরা তারাই, যারা মুহাম্মাদের হাতে জিহাদের বায়‘আত করেছি যতদিন আমরা বেঁচে থাকব’ (বুখারী হা/৪০৯৮-৯৯)।

৪. নেতা ও কর্মী সকলে ক্ষুধার্ত(الأمير والمأمورون كلهم جياع) :

আবু ত্বালহা, জাবের ও আবু হুরায়রাহ (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণের বর্ণনায় প্রমাণিত হয় যে, খন্দকের যুদ্ধে রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ অধিকাংশ সময় ক্ষুধার্ত থাকতেন। এমনকি ক্ষুধার যন্ত্রণা হ্রাস করার জন্য তাঁরা পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন’ (ছহীহাহ হা/১৬১৫)।

৫. পরিখা খননকালে মু‘জিযাসমূহ(ظهور المعجزات عند حفر الخندق) :

(ক) হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, খননকালে একটি বড় ও শক্ত পাথর সামনে পড়ে। যা ভাঙ্গা অসম্ভব হয়। রাসূল (ছাঃ)-কে বিষয়টি জানানো হ’লে তিনি এসে তাতে কোদাল দিয়ে আঘাত করলেন, যাতে তা ভেঙ্গে চূর্ণ হয়ে বালুর স্তূপের ন্যায় হয়ে গেল, যা হাতে ধরা যায় না। অথচ ঐসময় ক্ষুধার্ত রাসূল (ছাঃ)-এর পেটে পাথর বাঁধা ছিল। আমরাও তিনদিন যাবৎ অভুক্ত ছিলাম’ (বুখারী হা/৪১০১)।

(খ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ক্ষুধার ব্যাপারটি অবগত হয়ে ছাহাবী জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) একটি বকরীর বাচ্চা যবেহ করলেন এবং তাঁর স্ত্রী এক ছা‘ (আড়াই কেজি) যব পিষে আটা তৈরী করলেন। অতঃপর রান্না শেষে রাসূল (ছাঃ)-কে কয়েকজন ছাহাবী সহ গোপনে দাওয়াত দিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন ঐ সময় পরিখা খননরত ১০০০ ছাহাবীর সবাইকে সাথে নিয়ে এলেন। অতঃপর সকলে তৃপ্তির সাথে খাওয়ার পরেও আগের পরিমাণ আটা ও গোশত অবশিষ্ট রয়ে গেল।[2]

(গ) ‘আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) পরিখা খনন করছিলেন। এমন সময় রাসূল (ছাঃ) তাকে সুসংবাদ দিয়ে বলেন,أَبْشِرْ عَمَّارُ تَقْتُلُكَ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ ‘হে ‘আম্মার! জান্নাতের সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে’ (তিরমিযী হা/৩৮০০)। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, পরিখা খননের সময় রাসূল (ছাঃ) ‘আম্মার-এর মাথার ধূলি ঝেড়ে দিয়ে বলেন,بُؤْسَ ابْنِ سُمَيَّةَ تَقْتُلُكَ فِئَةٌ بَاغِيةٌ ‘হে সুমাইয়ার পরিশ্রমী সন্তান! তোমাকে একটি বিদ্রোহী দল হত্যা করবে’ (মুসলিম হা/২৯১৫ (৭০)। উক্ত রাবী থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে যে, ইতিপূর্বে মসজিদে নববী নির্মাণের সময় অন্যদের ন্যায় মাথায় একটির বদলে দু’টি করে ইট বহন করছিলেন। এ দৃশ্য দেখে রাসূল (ছাঃ) তার মাথার ধূলা ঝেড়ে দেন ও বলেন, তুমি অন্যদের মত না করে এভাবে করছ কেন? জবাবে তিনি বলেন,إِنِّى أُرِيدُ الأَجْرَ مِنَ اللهِ ‘আমি আল্লাহর নিকট থেকে অধিক নেকী কামনা করি’ (আহমাদ হা/১১৮৭৯)। তখন রাসূল (ছাঃ) তার উদ্দেশ্যে বলেন,وَيْحَ عَمَّارٍ تَقْتُلُهُ الْفِئَةُ الْبَاغِيَةُ، يَدْعُوهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ، وَيَدْعُونَهُ إِلَى النَّارِ ‘আম্মারের উপর আল্লাহর রহমত হৌক! তাকে একটি বিদ্রোহী দল হত্যা করবে। সে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকবে। আর তারা তাকে জাহান্নামের দিকে ডাকবে’। উত্তরে ‘আম্মার বলল, আমি ফিৎনা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই’।[3] আবু ওয়ায়েল (রাঃ) বলেন,لَمَّا بَعَثَ عَلِىٌّ عَمَّارًا وَالْحَسَنَ إِلَى الْكُوفَةِ لِيَسْتَنْفِرَهُمْ خَطَبَ عَمَّارٌ فَقَالَ إِنِّى لأَعْلَمُ أَنَّهَا زَوْجَتُهُ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ ، وَلَكِنَّ اللهَ ابْتَلاَكُمْ لِتَتَّبِعُوهُ أَوْ إِيَّاهَا ‘(উটের যুদ্ধের প্রাক্কালে) যখন আলী (রাঃ) ‘আম্মার ও স্বীয় পুত্র হাসানকে কূফাবাসীদের নিকটে প্রেরণ করেন তাঁর পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করার জন্য, তখন সেখানে গিয়ে ‘আম্মার লোকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি জানি যে তিনি (আয়েশা) দুনিয়া ও আখেরাতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর স্ত্রী। কিন্তু আল্লাহ তোমাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেছেন তোমরা (বর্তমান অবস্থায়) আলীর অনুসরণ করবে, না তাঁর অনুসরণ করবে? (বুখারী হা/৩৭৭২)। এ প্রসঙ্গে উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন, উটের পিঠ আমাকে আন্দোলিত করেনি, যখন থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর উপর আহযাব ৩৩ আয়াতটি নাযিল হয়েছে। অতঃপর তিনি আয়েশা (রাঃ), ত্বালহা ও যুবায়ের (রাঃ)-এর ভূমিকা প্রসঙ্গে বলেন, আয়েশা (রাঃ) উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা করেছিলেন। তারা চেয়েছিলেন পরস্পরের মধ্যে মীমাংসা করতে এবং ওছমানের খুনীদের বদলা নিতে। অন্যদিকে আলী (রাঃ) চেয়েছিলেন সকলকে আনুগত্যের উপর একত্রিত করতে। পক্ষান্তরে নিহতের উত্তরাধিকারীগণ প্রকৃত হত্যাকারীদের নিকট থেকে ক্বিছাছ দাবী করছিলেন’ (ফাৎহুল বারী হা/৩৭৭২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।

বস্ত্ততঃ ‘আমীর’ হিসাবে আলী (রাঃ)-এর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই ছিল সকলের প্রথম কর্তব্য। কেননা শাসন ক্ষমতা সুসংহত না হওয়া পর্যন্ত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। ‘আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) তাঁর ভাষণে সেদিকেই ইঙ্গিত করেছিলেন।

অতঃপর ‘আম্মার (রাঃ) ৩৭ হিজরীতে আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর মধ্যে সংঘটিত ছিফফীন যুদ্ধে আলী (রাঃ)-এর পক্ষে যুদ্ধ করা অবস্থায় ৯৩ বছর বয়সে শহীদ হন’।[4]

(ঘ) বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) বলেন, আমাদের সামনে বড় একটা পাথর পড়ল। যাতে কোদাল মারলে ফিরে আসতে থাকে। তখন আমরা রাসূল (ছাঃ)-কে বিষয়টি জানালে তিনি এসে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে পাথরটিতে কোদাল দিয়ে আঘাত করেন। তাতে তার একাংশ ভেঙ্গে পড়ল। তখন তিনি বলে ওঠেন- আল্লাহু আকবর! আমাকে শামের চাবিসমূহ দান করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি এখন তাদের লাল প্রাসাদগুলো দেখতে পাচ্ছি’। অতঃপর দ্বিতীয়বার আঘাত করেন এবং বলে ওঠেন, আল্লাহু আকবর! আমাকে পারস্যের সাম্রাজ্য দান করা হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি এখন মাদায়েনের শ্বেত-শুভ্র প্রাসাদগুলো দেখতে পাচ্ছি। অতঃপর তৃতীয়বার ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আঘাত করলেন এবং পাথরটির বাকী অংশ ভেঙ্গে পড়ল। তখন তিনি বলে উঠলেন, আল্লাহু আকবর! আমাকে ইয়ামন রাজ্যের চাবিসমূহ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর কসম! আমি এখান থেকে রাজধানী ছান‘আর দরজা সমূহ দেখতে পাচ্ছি’।[5] বস্ত্ততঃ এগুলি ছিল ভবিষ্যৎ ইসলামী বিজয়ের অগ্রিম সুসংবাদ মাত্র। যা খুলাফায়ে রাশেদীনের আমলে বাস্তবায়িত হয়েছিল।

এ বিষয়ে আরও কয়েকটি মু‘জিযা বর্ণিত হয়েছে, যা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।[6]

৬. মুমিন ও মুনাফিকদের দ্বিবিধ প্রতিক্রিয়া(تأثران مضادان من المؤمنين والمنافقين) :

খন্দক যুদ্ধে বিশাল শত্রু সেনাদল দেখে মুনাফিক ও দুর্বলচেতা ভীরু মুসলমানরা বলে ওঠে, রাসূল (ছাঃ)-এর দেওয়া ওয়াদা প্রতারণা বৈ কিছু নয়। এমনকি খাযরাজ গোত্রের বনু সালামারও পদস্খলন ঘটতে যাচ্ছিল, যেমন ইতিপূর্বে ওহোদ যুদ্ধের সময় তাদের অবস্থা হয়েছিল। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

وَإِذْ يَقُوْلُ الْمُنَافِقُوْنَ وَالَّذِيْنَ فِيْ قُلُوْبِهِمْ مَرَضٌ مَا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهُ إِلاَّ غُرُوْرًا- وَإِذْ قَالَت طَّائِفَةٌ مِّنْهُمْ يَا أَهْلَ يَثْرِبَ لاَ مُقَامَ لَكُمْ فَارْجِعُوْا وَيَسْتَأْذِنُ فَرِيْقٌ مِّنْهُمُ النَّبِيَّ يَقُوْلُوْنَ إِنَّ بُيُوْتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ إِن يُرِيْدُوْنَ إِلاَّ فِرَاراً- (الأحزاب 12-13)-

‘আর মুনাফিক ও যাদের অন্তরে ব্যাধি ছিল, তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা প্রতারণা বৈ কিছু নয়’। ‘তাদের আরেক দল বলল, হে ইয়াছরিববাসীগণ! এখানে তোমাদের কোন স্থান নেই, তোমরা ফিরে চল। তাদের মধ্যে আরেক দল নবীর কাছে অনুমতি চেয়ে বলল, আমাদের বাড়ী-ঘর অরক্ষিত। অথচ সেগুলি অরক্ষিত ছিল না। মূলতঃ পালিয়ে যাওয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য’ (আহযাব ৩৩/১২-১৩)।

অপর পক্ষে মুমিনগণ এটাকে পরীক্ষা হিসাবে গ্রহণ করেন এবং তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়। যেমন আল্লাহর ভাষায়-

إِذْ جَاؤُوْكُمْ مِّنْ فَوْقِكُمْ وَمِنْ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَإِذْ زَاغَتِ الْأَبْصَارُ وَبَلَغَتِ الْقُلُوْبُ الْحَنَاجِرَ وَتَظُنُّوْنَ بِاللهِ الظُّنُوْنَا (১০) هُنَالِكَ ابْتُلِيَ الْمُؤْمِنُوْنَ وَزُلْزِلُوْا زِلْزَالاً شَدِيْداً (১১)... وَلَمَّا رَأَى الْمُؤْمِنُوْنَ الْأَحْزَابَ قَالُوْا هَذَا مَا وَعَدَنَا اللهُ وَرَسُوْلُهُ وَصَدَقَ اللهُ وَرَسُوْلُهُ وَمَا زَادَهُمْ إِلاَّ إِيْمَاناً وَتَسْلِيْمًا- (الأحزاب ১০-১১، ২২)-

‘যখন তারা তোমাদের উপর আপতিত হ’ল উচ্চভূমি থেকে ও নিম্নভূমি থেকে এবং যখন (ভয়ে) তোমাদের চক্ষু ছনাবড়া হয়ে গিয়েছিল ও প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল। আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানারূপ ধারণা করতে শুরু করেছিলে’ (১০)। ‘সে সময় মুমিনগণ পরীক্ষায় নিক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং ভীষণভাবে ভীত-কম্পিত হয়েছিল’ (১১)। ...‘অতঃপর যখন মুমিনরা শত্রু বাহিনীকে প্রত্যক্ষ করল, তখন তারা বলল, এতো সেটাই, যার ওয়াদা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আমাদেরকে দিয়েছিলেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সত্য বলেছেন। এমতাবস্থায় তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হ’ল’ (আহযাব ৩৩/১০-১১, ২২)।

৭. মুসলিম বাহিনীর প্রতীক চিহ্ন(شعار جيش المسلمين) : খন্দকের যুদ্ধে মুসলমানদের প্রতীক চিহ্ন ছিল,حم- لاَ يُنْصَرُوْنَ হা-মীম। তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না’।[7] এটি যেকোন যুদ্ধের জন্য হ’তে পারে।

৮. বর্শা ফেলে পালালেন কুরায়েশ সেনাপতি(فرَّ قائدُ قريش تاركا رمحه) : যুদ্ধ ছাড়াই অবরোধে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় আবু জাহল পুত্র ও কুরায়েশ বাহিনীর অন্যতম দুর্ধর্ষ সেনাপতি ইকরিমা বিন আবু জাহল দু’জন সাথীকে নিয়ে দুঃসাহসে ভর করে একস্থান দিয়ে খন্দক পার হ’লেন। অমনি হযরত আলীর প্রচন্ড হামলায় তার একজন সাথী নিহত হ’ল। এমতাবস্থায় ইকরিমা ও তার সাথী ভয়ে পালিয়ে আসেন এবং তিনি এতই ভীত হয়ে পড়েন যে, নিজের বর্শাটাও ফেলে আসেন’ (আর-রাহীক্ব ৩০৬-০৭ পৃঃ)।

৯. ছালাত ক্বাযা হ’ল যখন(قضت الصلوات الراةبة) : খন্দক যুদ্ধের সময় শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে অব্যাহত নযরদারি ও মুকাবিলার কারণে কোন কোন দিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের ছালাত ক্বাযা হয়ে যায়। একবার আছরের ছালাত ক্বাযা হয়। যা তারা মাগরিবের পরে প্রথমে আছর অতঃপর মাগরিবের ছালাত আদায় করেন’ (বুখারী হা/৫৯৬)। এ সময় রাসূল (ছাঃ) মুশরিকদের বিরুদ্ধে বদদো‘আ করে বলেন,مَلَأَ اللهُ بُيُوْتَهُمْ وَقُبُوْرَهُمْ نَارًا ‘আল্লাহ ওদের বাড়ি ও কবরগুলিকে আগুন দ্বারা পূর্ণ করে দিন’।[8] একবার যোহর হ’তে এশা পর্যন্ত চার ওয়াক্ত ছালাত ক্বাযা হয়’।[9] উল্লেখ্য যে, তখন পর্যন্ত ছালাতুল খাওফ-এর বিধান (নিসা ৪/১০১-১০২) নাযিল হয়নি। কেননা উক্ত বিধান নাযিল হয় ৬ষ্ঠ হিজরীর যিলক্বা‘দ মাসে হোদায়বিয়ার সফর কালে।

১০. খন্দক যুদ্ধের বিষয়ে কুরআন(القرآن فى غزوة الأحزاب) :

খন্দক ও বনু কুরায়যার যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহপাক সূরা আহযাবে ৯ থেকে ২৭ পর্যন্ত ১৯টি আয়াত নাযিল করেন। যাতে এই দুই যুদ্ধের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

[1]. একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, اللَّهُمَّ إِنَّ الْعَيْشَ عَيْشُ الْآخِرَهْ + فَاغْفِرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَه ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আরাম হ’ল পরকালের আরাম। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা কর’ (বুখারী হা/২৮৩৪)।
[2]. বুখারী হা/৪১০২; মুসলিম হা/২০৩৯; মিশকাত হা/৫৮৭৭ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মু‘জেযা সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[3]. বুখারী হা/৪৪৭। আরনাঊত্ব বলেন, একই ভবিষ্যদ্বাণী মসজিদে নববী নির্মাণকালে এবং পরবর্তীতে খন্দক যুদ্ধে পরিখা খনন কালে হ’তে পারে (আহমাদ হা/১১০২৪-এর তা‘লীক্ব দ্রঃ)।

ইবনু হাজার বলেন, জান্নাতের দিকে আহবান অর্থ, জান্নাতে যাওয়ার কারণের দিকে আহবান। আর তা হ’ল ইমামের (খলীফার) আনুগত্য করা। ‘আম্মার লোকদের প্রতি আলী (রাঃ)-এর আনুগত্যের আহবান জানিয়েছিলেন। কেননা তিনি ছিলেন সে সময়ের ইমাম। যার আনুগত্য করা ওয়াজিব ছিল। অন্যদিকে বিরোধী পক্ষ মু‘আবিয়া (রাঃ) ও তার সাথী ছাহাবীগণ তার বিপরীত দিকে আহবান জানিয়েছিলেন। তারা এ ব্যাপারে মা‘যূর (مَعْذُوْرُوْنَ) ছিলেন। কেননা তারা মুজতাহিদ ছিলেন, যারা তাদের ধারণার অনুসরণ করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোন তিরষ্কার নেই (وَهُمْ مُجْتَهِدُونَ لاَ لَوْمَ عَلَيْهِمْ فِي اتِّبَاعِ ظُنُونِهِمْ)। (ফাৎহুল বারী হা/৪৪৭-এর আলোচনা দ্রঃ)।

[4]. আল-ইছাবাহ, ‘আম্মার ক্রমিক ৫৭০৮; আল-ইস্তী‘আব, ‘আম্মার ক্রমিক ১৮৬৩।
[5]. নাসাঈ হা/৩১৭৬, হাদীছ হাসান; ছহীহাহ হা/৭৭২।
[6]. প্রসিদ্ধ আছে যে, (১) নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ)-এর বোন তার পিতা ও মামুর খাওয়ার জন্য একটা পাত্রে কিছু খেজুর নিয়ে এলো। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার কাছ থেকে পাত্রটি নিয়ে খেজুরগুলি একটা কাপড়ের উপরে ছড়িয়ে দিলেন। অতঃপর পরিখা খননরত ছাহাবীদের সবাইকে দাওয়াত দিলেন এবং তাতে বরকতের দো‘আ করলেন। অতঃপর ছাহাবীগণ যতই খেতে থাকেন, ততই খেজুরের পরিমাণ বাড়তে থাকে। পূর্ণ তৃপ্তি সহকারে সকলের খাওয়ার পরেও কাপড়ের উপর আগের পরিমাণ খেজুর অবশিষ্ট রইল। এমনকি কাপড়ের বাইরেও কিছু পড়ে ছিল’ (আর-রাহীক্ব ৩০৫ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/২১৮)। বর্ণনাটির সনদ ‘মুনক্বাতি‘ বা যঈফ (মা শা-‘আ ১৬৩ পৃঃ)।

(২) পরিখা খননের সময় একটি স্থানের মাটি অত্যন্ত শক্ত পাওয়া যায়। এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হ’লে তিনি এক পাত্র পানি আনতে বলেন এবং তাতে দো‘আ পড়ে ফুঁক দেন। অতঃপর তিনি উক্ত পানি ঐ শক্ত মাটির উপরে ছিটিয়ে দেন। তখন খননরত ছাহাবীগণ বলেন, যে আল্লাহ তাঁকে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম করে বলছি, ঐ মাটিগুলি বালুর ঢিবির মত সরল হয়ে যায়’ (ইবনু হিশাম ২/২১৭)। এটিরও সনদ ‘মুনক্বাতি‘।

[7]. ইবনু হিশাম ২/২২৬; যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৩; তিরমিযী হা/১৬৮২; আবুদাঊদ হা/২৫৯৭, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩০৮; মিশকাত হা/৩৯৪৮ ‘জিহাদ’ অধ্যায়-১৯ অনুচ্ছেদ-৪; মিরক্বাত শরহ ঐ।
[8]. বুখারী হা/৪১১১, ৪১১২; মুসলিম হা/৬২৭; মিশকাত হা/৬৩৩।

[9]. মুসলিম, শরহ নববী, হা/৬২৮-এর আলোচনা ‘আছরের ছালাতকে ‘মধ্যবর্তী ছালাত’ বলা হয়’ অনুচ্ছেদ, ৫/১৩০।

খন্দক যুদ্ধের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

(১) কুচক্রীদেরকে বিতাড়িত করার পরেও তাদের চক্রান্ত অব্যাহত থাকে।

(২) সম্মিলিত শক্তির সামনে বাহ্যতঃ দুর্বল অবস্থায় সর্বোচ্চ যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করা অতীব যরূরী।

(৩) ভিতরে-বাইরে প্রচন্ড বাধার মধ্যেও কেবলমাত্র প্রবল আত্মশক্তি ও আল্লাহর উপর দৃঢ় নির্ভরশীলতা মুসলমানদেরকে যেকোন পরিস্থিতিতে বিজয়ী করে থাকে।

(৪) বিজয়ের জন্য আল্লাহপাক মুমিনের চূড়ান্ত ঈমানী পরীক্ষা নিয়ে থাকেন।

(৫) অবশেষে আল্লাহর গায়েবী মদদে বিজয় এসে থাকে।

বনু কুরায়যা যুদ্ধ

[৫ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ ও যুলহিজ্জাহ (মার্চ ও এপ্রিল ৬২৬ খৃ.)]
খন্দক যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে উম্মে সালামার ঘরে যোহরের সময় যখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) গোসল করছিলেন, তখন জিব্রীল এসে বললেন, আপনি অস্ত্র নামিয়ে ফেলেছেন, অথচ ফেরেশতারা এখনো অস্ত্র নামায়নি। দ্রুত তাদের দিকে ধাবিত হউন! রাসূল (ছাঃ) বললেন, কোন দিকে? জবাবে তিনি বনু কুরায়যার দিকে ইশারা করলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) সেদিকে বেরিয়ে গেলেন’ (বুখারী হা/৪১১৭)। বনু কুরায়যার দুর্গ ছিল মসজিদে নববী থেকে ৬ মাইল বা প্রায় ১০ কি. মি. দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাৎক্ষণিকভাবে ঘোষণা প্রচার করে দিলেন, لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلاَّ فِى بَنِى قُرَيْظَةَ ‘কেউ যেন বনু কুরায়যায় পৌঁছানোর আগে আছর না পড়ে’ (বুখারী হা/৯৪৬)। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূমের উপরে মদীনার প্রশাসন ভার অর্পণ করে ৩,০০০ সৈন্য নিয়ে তিনি বনু কুরায়যা অভিমুখে রওয়ানা হ’লেন। অবশ্য ছাহাবীদের কেউ রাস্তাতেই আছর পড়ে নেন। কেউ পৌঁছে গিয়ে আছর পড়েন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এজন্য কাউকে কিছু বলেননি (ঐ)। কেননা এর দ্বারা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সকলের দ্রুত বের হওয়া। অতঃপর যথারীতি বনু কুরায়যার দুর্গ অবরোধ করা হয়, যা ২৫ দিন স্থায়ী হয়। অবশেষে তারা আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের সাবালক ও সক্ষম পুরুষদের বন্দী করা হয়। এদের সম্পর্কে ফায়ছালার দায়িত্ব তাদের দাবী অনুযায়ী তাদের মিত্র আওস গোত্রের নেতা সা‘দ বিন মু‘আযকে অর্পণ করা হয়। তিনি তাদের বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি স্বরূপ সবাইকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। সেমতে তাদের নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব সহ সবাইকে হত্যা করা হয়’ (বুখারী হা/৪১২১)।

নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন। ইবনু ইসহাক ৬০০, ক্বাতাদাহ ৭০০ ও সুহায়লী ৮০০ থেকে ৯০০-এর মধ্যে বলেছেন। পক্ষান্তরে জাবের (রাঃ) বর্ণিত ছহীহ হাদীছ সমূহে ৪০০ বর্ণিত হয়েছে (তিরমিযী হা/১৫৮২ ও অন্যান্য)। এর সমন্বয় করতে গিয়ে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, সম্ভবতঃ ৪০০ জন ছিল যোদ্ধা। বাকীরা ছিল তাদের সহযোগী’ (বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৪১২২-এর আলোচনা)।

যদি তারা ফায়ছালার দায়িত্ব রাসূল (ছাঃ)-কে দিত, তাহ’লে হয়ত পূর্বেকার দুই গোত্রের ন্যায় তাদেরও নির্বাসন দন্ড হ’ত। অতঃপর তাদের কয়েদী ও শিশুদের নাজদে নিয়ে বিক্রি করে তার বিনিময়ে ঘোড়া ও অস্ত্র-শস্ত্র খরীদ করা হয়। অবরোধ কালে মুসলিম পক্ষে খাল্লাদ বিন সুওয়াইদ (خَلاَّد بن سُوَيْد) শহীদ হন এবং উক্কাশার ভাই আবু সিনান বিন মিহছান(أبو سنان بن مِحْصَن) স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেন। তাঁকে বনু কুরায়যার গোরস্থানে দাফন করা হয়। উপর থেকে চাক্কি ফেলে খাল্লাদকে হত্যা করার অপরাধে বনু কুরায়যার একজন মহিলাকে হত্যা করা হয়। উক্ত মহিলা ব্যতীত কোন নারী বা শিশুকে হত্যা করা হয়নি।[1]

সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ)-এর ফায়ছালা অনুযায়ী বনু নাজ্জার-এর বিনতুল হারেছ-এর বাগানে কয়েকটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে খন্ড খন্ড দলে নিয়ে বনু কুরায়যার বিশ্বাসঘাতকদের হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়া হয়। যার উপরে এখন মদীনার মার্কেট তৈরী হয়েছে।[2]

বনু কুরায়যার আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পূর্বেই তাদের কিছু লোক ইসলাম কবুল করেছিল। কেউ কেউ দুর্গ থেকে বেরিয়েও এসেছিল। তাদের জীবন ও সম্পদ নিরাপদ থাকে। এতদ্ব্যতীত ‘আত্বিয়া কুরাযীর (عَطِيَّةُ الْقُرَظِيُّ) নাভির নিম্নদেশের লোম না গজানোর কারণে তিনি বেঁচে যান ও পরে ছাহাবী হবার সৌভাগ্য লাভ করেন। এভাবে কাছীর বিন সায়েবও বেঁচে যান।[3]

ছাবেত বিন ক্বায়েস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বৃদ্ধ ইহূদী নেতা যুবায়ের বিন বাত্বা আল-কুরাযী(الزُّبَيرُ بنُ بَاطَا الْقُرَظِيُّ) এবং তার পরিবার ও মাল-সম্পদ তাকে ‘হেবা’ করার জন্য আবেদন করেন। কারণ যুবায়ের ছাবেতের উপর জাহেলী যুগে কিছু অনুগ্রহ করেছিল। তখন ছাবেত বিন ক্বায়েস যুবায়েরকে বললেন, রাসূল (ছাঃ) তোমাকে তোমার পরিবার ও মাল-সম্পদসহ আমার জন্য ‘হেবা’ করেছেন। এখন এগুলি সবই তোমার। অতঃপর যখন যুবায়ের জানতে পারল যে, তার সম্প্রদায়ের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। তখন সে বলল, হে ছাবেত! তুমি আমাকে আমার বন্ধুদের সাথে মিলিয়ে দাও। তখন তাকে হত্যা করা হ’ল এবং তার নিহত ইহূদী বন্ধুদের সাথে তাকে মিলিয়ে দেওয়া হ’ল।[4] যুবায়ের-পুত্র আব্দুর রহমান নাবালক হওয়ার কারণে বেঁচে যান। অতঃপর তিনি ইসলাম কবুল করেন ও ছাহাবী হন।[5]

অনুরূপভাবে বনু নাজ্জারের জনৈকা মহিলা উম্মুল মুনযির সালমা বিনতে ক্বায়েস-এর আবেদনক্রমে রেফা‘আহ বিন সামাওয়াল(رِفَاعَةُ بْنُ سَمَوْأَلَ) কুরাযীকে তার জন্য ‘হেবা’ করা হয়। পরে রেফা‘আহ ইসলাম কবুল করেন ও ছাহাবী হন।

এদিন রাসূল (ছাঃ) বনু কুরায়যার গণীমতের মাল এক পঞ্চমাংশ বের করে নিয়ে বাকীটা বণ্টন করে দেন। তিনি অশ্বারোহীদের তিন অংশ ও পদাতিকদের এক অংশ করে দেন। বন্দীদের সা‘দ বিন যায়েদ আনছারীর নেতৃত্বে নাজদের বাজারে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তাদের বিক্রি করে ঘোড়া ও অস্ত্র-শস্ত্র খরীদ করেন। বন্দীনীদের মধ্যে রায়হানা বিনতে ‘আমর বিন খানাক্বাহকে(رَيْحَانَةُ بِنْتِ عَمْرِو بْنِ خَنَاقَةَ) রাসূল (ছাঃ) নিজের জন্য মনোনীত করেন। কালবীর বর্ণনা মতে ৬ষ্ঠ হিজরীতে তাকে মুক্তি দিয়ে রাসূল (ছাঃ) তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। বিদায় হজ্জ শেষে রাসূল (ছাঃ) যখন মদীনায় ফিরে আসেন, তখন তাঁর মৃত্যু হয় এবং রাসূল (ছাঃ) তাকে বাক্বী‘ গোরস্থানে দাফন করেন’।[6]

[1]. ইবনু হিশাম ২/২৪২; সনদ ছহীহ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৩৯২)।
[2]. ইবনু হিশাম ২/২৪০-৪১; সনদ ‘মুরসাল’ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৩৯১)।
[3]. আর-রাহীক্ব ৩১৭ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/২৪২-৪৩। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ বা যঈফ। বরং এটাই প্রমাণিত যে, বনু কুরায়যার ঐ সমস্ত পুরুষই কেবল হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে যায়, যাদের গুপ্তাঙ্গে লোম গজায়নি (ইবনু হিশাম ২/২৪৪; সনদ ছহীহ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৩৯৫)। তাদের মধ্যে অনেকেই ইসলাম কবুল করেন। যেমন কা‘ব আল-কুরাযী, কাছীর বিন সায়েব, ‘আত্বিয়া আল-কুরাযী, আব্দুর রহমান বিন যুবায়ের বিন বাত্বা প্রমুখ (মা শা-‘আ ১৭৫ পৃঃ)।
[4]. আর-রাহীক্ব ৩১৭ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/২৪২-৪৩। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৯৩)।
[5]. প্রসিদ্ধ আছে যে, অতি বৃদ্ধ ইহূদী নেতা যুবায়ের বিন বাত্বা, যিনি বু‘আছ যুদ্ধের সময় ছাবিত বিন ক্বায়েস বিন শাম্মাস (রাঃ)-এর প্রতি অনুগ্রহ করেছিলেন, তার নিকটে এসে নিজেকে তার নিহত ইহূদী বন্ধুদের মধ্যে শামিল করার জন্য অনুরোধ করেন এবং বলেন, ঐ সব বন্ধুদের মৃত্যুর পরে আমার দুনিয়াতে কোন আরাম-আয়েশ নেই।... অতঃপর ছাবিত তাকে এগিয়ে দেন এবং তাকে হত্যা করা হয়’। বর্ণনাটি ইবনু ইসহাক বিনা সনদে (ইবনু হিশাম ২/২৪২-৪৩) এবং বায়হাক্বী দালায়েলুন নবুঅত-এর মধ্যে (৪/২৩) ইবনু ইসহাকের বরাতে বর্ণনা করেছেন। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ (মা শা- ‘আ ১৭৪-৭৫ পৃঃ)।
ইহূদী নেতাদের মধ্যে যুবায়ের বিন বাত্বা নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণিত। কিন্তু উপরোক্ত বর্ণনায় তার নিহত হওয়ার যে আগ্রহ বর্ণিত হয়েছে, তা সরাসরি কুরআনের বিরোধী। যেখানে আল্লাহ বলেন, وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَى حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ وَمَا هُوَ بِمُزَحْزِحِهِ مِنَ الْعَذَابِ أَنْ يُعَمَّرَ وَاللهُ بَصِيرٌ بِمَا يَعْمَلُونَ ‘তুমি তাদেরকে দীর্ঘ জীবনের ব্যাপারে অন্যদের চাইতে অধিক আকাংখী পাবে এমনকি মুশরিকদের চাইতেও। তাদের প্রত্যেকে কামনা করে যেন সে হাযার বছর আয়ু পায়। অথচ এরূপ আয়ু প্রাপ্তি তাদেরকে শাস্তি থেকে দূরে রাখতে পারবে না। বস্ত্ততঃ তারা যা করে, সবই আল্লাহ দেখেন’ (বাক্বারাহ ২/৯৬)।
[6]. আর-রাহীক্ব ৩১৭ পৃঃ; বায়হাক্বী হা/১৭৮৮৮; আল-বিদায়াহ ৪/১২৬; ইবনু হিশাম ২/২৪৫। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৯৮)।

বনু কুরায়যা যুদ্ধের কারণ

মদীনায় অবস্থিত তিনটি ইহূদী গোত্রের সর্বশেষ গোত্রটি ছিল বনু কুরায়যা। তারা ছিল আউস গোত্রের মিত্র। এদের সঙ্গে রাসূল (ছাঃ)-এর চুক্তি ছিল যে, তারা বহিঃশত্রুর আক্রমণ কালে সর্বদা রাসূল (ছাঃ)-কে সাহায্য করবে। গোত্রনেতা কা‘ব বিন আসাদ আল-ক্বোরাযী নিজে উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। তাদের বাসস্থান ছিল মুসলিম আবাসিক এলাকার পিছনে। মাসব্যাপী খন্দক যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তারা মুসলিম বাহিনীকে কোনরূপ সাহায্য করেনি। মুনাফিকদের ন্যায় তারাও যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছিল। ইতিমধ্যে বিতাড়িত বনু নাযীর ইহূদী গোত্রের নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব খায়বর থেকে অতি সঙ্গোপনে বনু কুরায়যার দুর্গে আগমন করে এবং তাদেরকে নানাভাবে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে ফুসলাতে থাকে। সে তাদেরকে বুঝায় যে, কুরাইশের নেতৃত্বে সমস্ত আরবের দুর্ধর্ষ সেনাদল সাগরের জোয়ারের মত মদীনার উপকণ্ঠে সমবেত হয়েছে। তারা সবাই এই মর্মে আমার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হয়েছে যে,قَدْ عَاهَدُونِي وَعَاقَدُونِي عَلَى أَنْ لاَ يَبْرَحُوا حَتَّى نَسْتَأْصِلَ مُحَمَّدًا وَمَنْ مَعَهُ ‘মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীদের উৎখাত না করা পর্যন্ত তারা ফিরে যাবে না’। কা‘ব বিন আসাদ দুর্গের দরজা বন্ধ করে দেন ও বারবার তাকে ফিরে যেতে বলেন এবং মুহাম্মাদের সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। কিন্তু ধুরন্ধর হুয়াইয়ের অব্যাহত চাপ ও তোষামোদীতে অবশেষে তিনি কাবু হয়ে পড়েন। তখন একটি শর্তে তিনি রাযী হন যে, যদি কুরায়েশ ও গাত্বফানীরা ফিরে যায় এবং মুহাম্মাদকে কাবু করতে না পারে, তাহ’লে হুয়াই তাদের সঙ্গে তাদের দুর্গে থেকে যাবেন। হুয়াই এ শর্ত মেনে নেন এবং বনু কুরায়যা চুক্তিভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়। এখবর রাসূল (ছাঃ)-এর কর্ণগোচর হ’লে তিনি আউস ও খাযরাজ গোত্রের দু’নেতা সা‘দ বিন মু‘আয ও সা‘দ বিন ওবাদাহ এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা ও খাউয়াত বিন জুবায়েরকে(خَوَّاتُ بنُ جُبَير) পাঠান সঠিক তথ্য অনুসন্ধানের জন্য। তিনি তাদেরকে বলে দেন যে, চুক্তিভঙ্গের খবর সঠিক হ’লে তারা যেন তাকে এসে ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয় এবং অন্যের নিকটে প্রকাশ না করে। তারা সন্ধান নিয়ে এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন,عَضَلٌ وَالْقَارَّةُ অর্থাৎ রাজী‘-এর আযাল ও ক্বাররাহ গোত্রদ্বয়ের ন্যায় বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘটেছে’।[1]

প্রথমে ২য় হিজরীর রামাযান মাসে বনু ক্বায়নুক্বা, অতঃপর ৪র্থ হিজরীর রবীউল আউয়ালে বনু নাযীর এবং সর্বশেষ ৫ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাসে তৃতীয় ও সর্বশেষ ইহূদী গোত্র বনু কুরায়যার নির্মূলের ফলে মদীনা ইহূদীমুক্ত হয় এবং মুসলিম শক্তি প্রতিবেশী কুচক্রীদের হাত থেকে রেহাই পায়। এক্ষণে আমরা বনু কুরায়যা যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ বিবৃত করব।

[1]. আর-রাহীকব ৩০৯ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/২২১-২২। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৫৮)।

বনু কুরায়যা যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য বিষয়সমূহ

১. ইহূদী মহিলার হাতে শহীদ হ’লেন যিনি(اسةشهاد المسلم بيد يهودية) :

অবরোধকালে বনু কুরায়যার জনৈকা মহিলা যাঁতার পাট নিক্ষেপ করে ছাহাবী খাল্লাদ বিন সুওয়াইদকে হত্যা করে। এর বদলা স্বরূপ পরে উক্ত মহিলাকে হত্যা করা হয়। খাল্লাদ ছিলেন এই যুদ্ধে একমাত্র শহীদ। তিনি বদর, ওহোদ, খন্দক ও বনু কুরায়যার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার মাথা কঠিনভাবে চূর্ণ হওয়ার কারণে লোকেরা ধারণা করত যে, রাসূল (ছাঃ) তার সম্পর্কে বলেন,إنَّ لَهُ لَأَجْرَ شَهِيدَيْنِ ‘তিনি দুই শহীদের সমান নেকী পাবেন’।[1]

২. আহত সা‘দ বিন মু‘আযের প্রার্থনা(دعاء سعد بن معاذ الجريح) :

উভয় পক্ষে তীর নিক্ষেপের এক পর্যায়ে আউস নেতা সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) তীর বিদ্ধ হন। এতে তাঁর হাতের মূল শিরা কর্তিত হয়। যাতে প্রচুর রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মৃত্যুর আশংকা করেন। ফলে তিনি আল্লাহর নিকটে দো‘আ করেন এই মর্মে যে,

اللَّهُمَّ .. فَإِنْ كَانَ بَقِىَ مِنْ حَرْبِ قُرَيْشٍ شَىْءٌ، فَأَبْقِنِى لَهُ حَتَّى أُجَاهِدَهُمْ فِيكَ، وَإِنْ كُنْتَ وَضَعْتَ الْحَرْبَ فَافْجُرْهَا، وَاجْعَلْ مَوْتَتِى فِيهَا

‘হে আল্লাহ!... যদি কুরায়েশদের সঙ্গে যুদ্ধ এখনো বাকী থাকে, তাহ’লে তুমি আমাকে সে পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখো, যাতে আমি তোমার জন্য তাদের সাথে জিহাদ করতে পারি। আর যদি তুমি যুদ্ধ চালু রাখ, তা’হলে আমার এই যখম প্রবাহিত করে দাও এবং এতেই আমার মৃত্যু ঘটিয়ে দাও’ (বুখারী হা/৪১২২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, দো‘আর শেষাংশে তিনি বলেন,

اللَّهُمَّ لاَ تُخْرِجْ نَفْسِى حَتَّى تُقِرَّ عَيْنِى مِنْ بَنِى قُرَيْظَةَ. فَاسْتَمْسَكَ عِرْقُهُ فَمَا قَطَرَ قَطْرَةً حَتَّى نَزَلُوا عَلَى حُكْمِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ فَحَكَمَ أَنْ يُقْتَلَ رِجَالُهُمْ وَيُسْتَحْيَى نِسَاؤُهُمْ يَسْتَعِينُ بِهِنَّ الْمُسْلِمُونَ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- «أَصَبْتَ حُكْمَ اللهِ فِيهِمْ». وَكَانُوا أَرْبَعَمِائَةٍ فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قَتْلِهِمُ انْفَتَقَ عِرْقُهُ فَمَاتَ

‘হে আল্লাহ! তুমি আমার জান বের করো না, যে পর্যন্ত না বনু কুরায়যার ব্যাপারে আমার চক্ষু শীতল হয়। ফলে তার রক্তস্রোত বন্ধ হয়ে যায়। অতঃপর একটি ফোঁটাও আর পড়েনি, যতক্ষণ না তারা সা‘দ-এর ফায়ছালার উপরে রাযী হয়ে যায়। তখন রাসূল (ছাঃ) তার নিকটে এই খবর পাঠান। অতঃপর তিনি (এসে) সিদ্ধান্ত দেন যে, তাদের পুরুষদের হত্যা করা হবে এবং নারীদের বাঁচিয়ে রাখা হবে। যাদেরকে মুসলমানরা ব্যবহার করবে। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তুমি তাদের মধ্যে আল্লাহর ফায়ছালা অনুযায়ী সঠিক ফায়ছালা করেছ। তারা ছিল ৪০০ জন। অতঃপর যখন তাদের হত্যা করা শেষ হয়ে গেল, তখন তার রক্তস্রোত প্রবাহিত হ’ল এবং তিনি মৃত্যুবরণ করলেন’।[2]

৩. ‘তোমরা তোমাদের (অসুস্থ) নেতাকে এগিয়ে আনো’(قوموا إلى سيدكم) :

বন্দী বনু কুরায়যার মিত্র আউস গোত্রের নেতারা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে বারবার অনুরোধ করতে লাগল যেন তাদের প্রতি বনু ক্বায়নুক্বার ইহূদীদের ন্যায় সদাচরণ করা হয়। অর্থাৎ সবকিছু নিয়ে মদীনা থেকে জীবিত বের হয়ে যাবার সুযোগ দেওয়া হয়। বনু ক্বায়নুক্বা ছিল খাযরাজ গোত্রের মিত্র। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তোমাদেরই এক ব্যক্তি এ বিষয়ে ফায়ছালা করুন। তারা রাযী হ’ল। তখন তিনি আউস গোত্রের নেতা সা‘দ বিন মু‘আযের উপরে এর দায়িত্ব দিলেন। তাতে তারা খুব খুশী হ’ল। অতঃপর সা‘দ বিন মু‘আযকে মদীনা থেকে গাধার পিঠে বসিয়ে সেখানে আনা হ’ল। তিনি খন্দকের যুদ্ধে আহত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। সেকারণ তিনি বনু কুরায়যার যুদ্ধে আসতে পারেননি। সা‘দ কাছে এসে পৌঁছলে রাসূল (ছাঃ) বললেন,قُومُوا إلَى سَيِّدِكُمْ ‘তোমরা তোমাদের (অসুস্থ) নেতাকে এগিয়ে আনো’। অতঃপর তাঁকে গাধার পিঠ থেকে নামিয়ে আনা হ’ল। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, হে সা‘দ!إنَّ هَؤُلاَءِ الْقَوْمَ قَدْ نَزَلُوْا عَلَى حُكْمِكَ ‘ঐসব লোকেরা তোমার ফায়ছালার উপরে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছে’। সা‘দ বললেন,وَحُكْمِي نَافِذٌ عَلَيْهِمْ؟ ‘আমার ফায়ছালা কি তাদের উপরে প্রযোজ্য হবে? তারা বলল, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে তাকালেন। তখন তিনিও বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি ফায়ছালা দেন এই মর্মে যে, এদের পুরুষদের হত্যা করা হবে, নারী ও শিশুদের বন্দী করা হবে এবং মাল-সম্পদ সব বন্টিত হবে’।[3] এ ফায়ছালা শুনে রাসূল (ছাঃ) বলে ওঠেন,لَقَدْ حَكَمْتَ فِيْهِمْ بِحُكْمِ اللهِ أَوْ بِحُكْمِ الْمَلِكِ ‘নিশ্চয় তুমি আল্লাহর ফায়ছালা অনুযায়ী অথবা ফেরেশতার ফায়ছালা অনুযায়ী ফায়ছালা করেছ’।[4] এই ফায়ছালা যে কত বাস্তব সম্মত ছিল, তা পরে প্রমাণিত হয়। মদীনা থেকে মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা গোপনে তাদের দুর্গে ১৫০০ তরবারি, ২০০০ বর্শা, ৩০০ বর্ম, ৫০০ ঢাল মওজুদ করেছিল। যার সবটাই মুসলমানদের হস্তগত হয়’ (আর-রাহীক্ব ৩১৬ পৃঃ)।

অতঃপর উক্ত বিষয়ে সূরা আনফালের ৫৫-৫৮ এবং সূরা আহযাবের ২৬ ও ২৭ আয়াত নাযিল হয় (তাফসীর কুরতুবী)। দুর্ভাগ্য একদল বিদ‘আতী লোকقُومُوا إلَى سَيِّدِكُمْ বাক্যটিকে মীলাদের মজলিসে রাসূল (ছাঃ)-এর রূহের আগমন কল্পনা করে তাঁর সম্মানে উঠে দাঁড়িয়ে ক্বিয়াম করার পক্ষে দলীল হিসাবে পেশ করে থাকে। এমনকি অনেকে রূহের বসার জন্য একটা খালি চোখ রেখে দেন।

যাঁর মৃত্যুতে আরশ কেঁপে ওঠে

বনু কুরায়যার ব্যাপারে ফায়ছালা শেষে আহত নেতা সা‘দ বিন মু‘আযের যখম বিদীর্ণ হয়ে যায়। তখন তিনি মসজিদে নববীতে অবস্থান করছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদেই তার চিকিৎসার জন্য তাঁবু স্থাপন করেন। অতঃপর ক্ষত স্থান দিয়ে রক্তস্রোত প্রবাহিত হওয়া অবস্থায় তিনি সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এভাবে খন্দক যুদ্ধকালে করা তাঁর পূর্বেকার শাহাদাত নছীব হওয়ার দো‘আ কবুল হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,اِهْتَزَّ عَرْشُ الرَّحْمَنِ لِمَوْتِ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ ‘সা‘দ বিন মু‘আযের মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে’।[5] ফেরেশতাগণ তার লাশ উত্তোলন করে কবরে নিয়ে যান।[6] অর্থাৎ কবরে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর লাশ হালকা অনুভূত হওয়ায় মুনাফিকরা তাচ্ছিল্য করে বলে, তার লাশটি কতই না হালকা! এর দ্বারা তারা বনু কুরায়যার ব্যাপারে সা‘দের কঠিন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যুলুম করার প্রতি ইঙ্গিত করে। এ খবর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে পৌঁছে গেলে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন (তুহফাতুল আহওয়াযী শরহ তিরমিযী)।

[1]. ইবনু হিশাম ২/২৫৪; সনদ ছহীহ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৩৯২, ১৪১৯); বায়হাক্বী হা/১৭৮৮৮।

প্রসিদ্ধ আছে যে, খন্দকের যুদ্ধকালে মদীনার ফারে‘ (فارع) নামক দুর্গে রাসূল (ছাঃ)-এর সভাকবি ও খ্যাতনামা ছাহাবী হাসসান বিন ছাবেত (রাঃ)-এর তত্ত্বাবধানে মুসলিম মহিলা ও শিশুগণ অবস্থান করছিলেন। একদিন সেখানে চুক্তি ভঙ্গকারী বনু কুরায়যার জনৈক ইহূদীকে ঘুরাফেরা করতে দেখে রাসূল (ছাঃ)-এর ফুফু ছাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্ত্বালিব রক্ষীপ্রধান হাসসানকে বলেন, আমাদের তত্ত্বাবধানে এখানে যে কোন সেনাদল নেই, সেকথা এই গুপ্তচর গিয়ে এখুনি তার গোত্রকে জানিয়ে দেবে। এই সুযোগে তারা আমাদের উপরে হামলা করতে পারে। এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে কাউকে পাঠানোও সম্ভব নয়। অতএব আপনি এক্ষুণি গিয়ে ঐ গুপ্তচরটিকে খতম করে আসুন। জবাবে হাসসান বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আপনি তো জানেন যে, আমি একাজের লোক নই’। তার একথা শুনে কালবিলম্ব না করে হযরত ছাফিয়া কোমর বেঁধে তাঁবুর একটা খুঁটি হাতে নিয়ে বের হয়ে যান এবং ইহূদীটির কাছে গিয়ে ভীষণ জোরে আঘাত করে তাকে শেষ করে দেন’ (ইবনু হিশাম ২/২২৮)।

সীরাতে ইবনু হিশামের শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকার আব্দুর রহমান সুহায়লী (মৃ. ৫৮১ হি.) বলেন, উক্ত হাদীছের বর্ণনায় বুঝা যায়, হাসসান অত্যন্ত কাপুরুষ ব্যক্তি ছিলেন। অনেক বিদ্বান এর বিরোধিতা করেছেন। কারণ হাদীছটির সনদ ‘মুনক্বাতি‘। তাছাড়া যদি এটি সঠিক হ’ত, তাহ’লে তাঁর বিরুদ্ধে এজন্য ব্যঙ্গ কবিতা রচিত হ’ত। কেননা তিনি সমকালীন কবি যেরার (ضرار), ইবনুয যিবা‘রা (ابْنُ الزِّبَعْرَى) ও অন্যান্য কবিদের বিরুদ্ধে ব্যঙ্গ কবিতা লিখতেন এবং তারাও তার প্রতিবাদে লিখতেন। কিন্তু কেউ তার কাপুরুষতার অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে কিছু লিখেননি। এটাই ইবনু ইসহাকের উক্ত বর্ণনার দুর্বলতার প্রমাণ বহন করে। আর যদি এটি ছহীহ হয়, তাহ’লে সম্ভবতঃ ঐ সময়ে তিনি অসুস্থ ছিলেন। যা তাকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখে। আর এটাই তার ব্যাপারে উত্তম ব্যাখ্যা’ (ইবনু হিশাম ২/২২৮ পৃঃ, টীকা-৪)।

উল্লেখ্য যে, কবি হাসসান ৪০ হিজরীতে প্রায় ১২০ বছর বয়সে মারা যান। সে হিসাবে খন্দকের সময় তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮৫ বছর (ইবনু হাজার, আল-ইছাবাহ, হাসসান ক্রমিক সংখ্যা ১৭০৬)। এটাও উল্লেখ্য যে, হাসসান বিন ছাবেত রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে বদর, ওহোদ ও হোনায়েনসহ সকল যুদ্ধে যোগদান করেছেন। ভীরু হ’লে তা করতেন না। পক্ষান্তরে খন্দকের যুদ্ধে পরিখা খনন ও মাঝে মধ্যে উভয় পক্ষের তীর বর্ষণ ব্যতীত কিছুই হয়নি। যাতে আউস নেতা সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ) আহত হন। ফলে এখানে তার মত বৃদ্ধ ছাহাবীকে সম্ভবতঃ যুদ্ধে যোগদান করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি’ (মা শা-‘আ ১৬৬-৬৯ পৃঃ)।

[2]. তিরমিযী হা/১৫৮২; আহমাদ হা/১৪৮১৫ সনদ ছহীহ; ইবনু হিশাম ২/২২৭।
[3]. যাদুল মা‘আদ ৩/১২১; বুখারী হা/৩০৪৩; মুসলিম হা/১৭৬৮; মিশকাত হা/৩৯৬৩, ৪৬৯৫।
[4]. বুখারী হা/৩৮০৪; মুসলিম হা/১৭৬৮; তবে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘আসমান সমূহের উপর থেকে’ (مِنْ فَوْقِ السَمَاوَاتِ) হাকেম হা/২৫৭০, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭৪৫।

এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, অবরুদ্ধ বনু কুরায়যা গোত্র আত্মসমর্পণের পূর্বে পরামর্শের উদ্দেশ্যে ছাহাবী আবু লুবাবাহ বিন আব্দুল মুনযির (রাঃ)-কে তাদের নিকটে প্রেরণের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে প্রস্তাব পাঠায়। কেননা আবু লুবাবার বাগ-বাগিচা, সন্তান-সন্ততি এবং গোত্রীয় লোকেরা ঐ অঞ্চলের বাসিন্দা হওয়ায় তার সাথে তাদের সখ্যতা ছিল। অতঃপর আবু লুবাবাহ সেখানে উপস্থিত হ’লে পুরুষেরা ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসে। নারী ও শিশুরা করুণ কণ্ঠে ক্রন্দন করতে থাকে। এতে তার মধ্যে ভাবাবেগের সৃষ্টি হয়। অতঃপর ইহূদীরা বলল, হে আবু লুবাবাহ! আপনি কি যুক্তিযুক্ত মনে করছেন যে, বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য আমরা মুহাম্মাদের নিকটে অস্ত্র সমর্পণ করি’। আবু লুবাবাহ বললেন, হ্যাঁ। বলেই তিনি নিজের কণ্ঠনালীর দিকে ইঙ্গিত করলেন। যার অর্থ ছিল ‘হত্যা’। কিন্তু এতে তিনি উপলব্ধি করলেন যে, একাজটি খেয়ানত হ’ল। তিনি ফিরে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে না গিয়ে সরাসরি মসজিদে নববীতে গিয়ে খুঁটির সাথে নিজেকে বেঁধে ফেলেন ও শপথ করেন যে, রাসূল (ছাঃ) নিজ হাতে তার বন্ধন না খোলা পর্যন্ত নিজেকে মুক্ত করবেন না এবং আগামীতে কখনো বনু কুরায়যার মাটিতে পা দেবেন না’। ওদিকে তার বিলম্বের কারণ সন্ধান করে রাসূল (ছাঃ) যখন প্রকৃত বিষয় জানতে পারলেন, তখন তিনি বললেন, যদি সে আমার কাছে আসত, তাহ’লে আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতাম। কিন্তু যেহেতু সে নিজেই একাজ করেছে, সেহেতু আল্লাহ তার তওবা কবুল না করা পর্যন্ত আমি তাকে বন্ধনমুক্ত করতে পারব না’।

আবু লুবাবাহ এভাবে ছয় দিন মসজিদে খুঁটির সাথে বাঁধা থাকেন। ছালাতের সময় তার স্ত্রী এসে বাঁধন খুলে দিতেন। পরে আবার নিজেকে বেঁধে নিতেন। এই সময় একদিন প্রত্যুষে তার তওবা কবুল হওয়া সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-এর উপরে অহী নাযিল হয়। তিনি তখন উম্মে সালামাহর ঘরে অবস্থান করছিলেন। আবু লুবাবাহ বলেন, এ সময় উম্মে সালামা নিজ কক্ষের দরজায় দাঁড়িয়ে আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, يَا اَبَا لُبَابَةَ! اَبْشِرْ فَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَيْكَ ‘হে আবু লুবাবাহ, সুসংবাদ গ্রহণ করো! আল্লাহ তোমার তওবা কবুল করেছেন’। একথা শুনে ছাহাবীগণ ছুটে এসে আমার বাঁধন খুলতে চাইল। কিন্তু আমি অস্বীকার করি। পরে ফজর ছালাতের জন্য বের হয়ে রাসূল (ছাঃ) এসে আমার বাঁধন খুলে দেন’ (ইবনু হিশাম ২/২৩৭; বায়হাক্বী হা/১৩৩০৭; আল-বিদায়াহ ৪/১১৯ সনদ ‘মুরসাল’; তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৩৮১)।

[5]. বুখারী হা/৩৮০৩; মুসলিম হা/২৪৬৬; মিশকাত হা/৬১৯৭।
[6]. তিরমিযী হা/৩৮৪৯; মিশকাত হা/৬২২৮, সনদ ছহীহ।

বনু কুরায়যা যুদ্ধের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

(১) কপট লোকদের পরামর্শ ও তাদের সংস্রব হ’তে দূরে থাকতে হবে। মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এবং বিতাড়িত বনু নাযীর নেতা হুয়াই বিন আখত্বাবের কুপরামর্শ গ্রহণ করার ফলেই বনু কুরায়যাকে মর্মান্তিক পরিণতি বরণ করতে হয়।

(২) চুক্তি রক্ষা করা সবচেয়ে যরূরী বিষয়। চুক্তি ভঙ্গের কারণে ব্যক্তি ও জাতি ধ্বংস হয়।

(৩) নেতৃত্বের আমানত রক্ষা করা খুবই কঠিন বিষয়। বনু কুরায়যা নেতা কা‘ব বিন আসাদ সেটা করতে ব্যর্থ হওয়ার ফলেই গোটা সম্প্রদায়ের উপর নেমে আসে লোমহর্ষক পরিণতি।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url