প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-০৪]



প্রিয় নবীর (সা:) খৎনাহ, নাম করণ ও লালন পালন


আব্দুল্লাহর মৃত্যু
পিতা আব্দুল্লাহ ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে তদীয় পিতা আব্দুল মুত্ত্বালিবের হুকুমে ইয়াছরিব (মদীনা) গেলে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং মাত্র ২৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। সেখানে তিনি নাবেগা জা‘দীর গোত্রে সমাধিস্থ হন। এভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্মের পূর্বে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়ে যায়। উল্লেখ্য যে, মদীনার বনু নাজ্জার গোত্রে আব্দুল মুত্ত্বালিবের পিতা হাশেম বিবাহ করেন। ফলে তারা ছিলেন আব্দুল মুত্ত্বালিবের নানার গোষ্ঠী।

মৃত্যুকালে আব্দুল্লাহ যেসব সহায়-সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন তা ছিল যথাক্রমে পাঁচটি উট, এক পাল ছাগল এবং একটি নাবালিকা হাবশী দাসী বারাকাহ ওরফে উম্মে আয়মান। যিনি রাসূল (ছাঃ)-কে শিশুকালে লালন-পালন করেন। ইনি পরে যায়েদ বিন হারেছার সাথে বিবাহিতা হন এবং উসামা বিন যায়েদ তাঁর পুত্র ছিলেন। তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পাঁচ মাস পরে মৃত্যুবরণ করেন’।[১]

[১]. আর-রাহীক্ব ৫৩ পৃঃ; আল-ইস্তী‘আব; মুসলিম হা/১৭৭১।

হাশেম ও হাশেমী বংশ
নবী (ছাঃ)-এর বংশ হাশেমী বংশ হিসাবে পরিচিত। যা তাঁর দাদা হাশেম বিন ‘আব্দে মানাফের দিকে সম্পর্কিত। হাশেম পূর্ব থেকেই ‘সিক্বায়াহ’ ও ‘রিফাদাহ’ অর্থাৎ হাজীদের পানি পান করানো ও মেহমানদারীর দায়িত্বে ছিলেন। হাশেম ছিলেন ধনী ও উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি। তিনিই প্রথম কুরায়েশদের জন্য শীতকালে ইয়ামানে ও গ্রীষ্মকালে শামে দু’টি ব্যবসায়িক সফরের নিয়ম চালু করেন। তিনি এক ব্যবসায়িক সফরে শাম যাওয়ার পথে মদীনায় যাত্রা বিরতি করেন এবং সেখানে বনু ‘আদী বিন নাজ্জার গোত্রে সালমা বিনতে আমরকে বিবাহ করেন। অতঃপর সেখানে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে রেখে ফিলিস্তীনের গাযায় চলে যান এবং সেখানে মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে তার স্ত্রী একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন ৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দে (আর-রাহীক্ব ৪৯ পৃঃ)। সাদা চুল নিয়ে ভূমিষ্ট হওয়ার কারণে মা তার নাম রাখেন শায়বাহ (شَيْبَةٌ)। এভাবে তিনি ইয়াছরিবে মায়ের কাছে প্রতিপালিত হন। মক্কায় তার পরিবারের লোকেরা যা জানতে পারেনি। যৌবনে পদার্পণের কাছাকাছি বয়সে উপনীত হ’লে তার জন্মের খবর জানতে পেরে চাচা কুরায়েশ নেতা মুত্ত্বালিব বিন ‘আব্দে মানাফ তাকে মক্কায় নিয়ে আসেন। লোকেরা তাকে মুত্ত্বালিবের ক্রীতদাস মনে করে তাকে ‘আব্দুল মুত্ত্বালিব’ বলেছিল। সেই থেকে তিনি উক্ত নামে পরিচিত হন। যদিও তাঁর আসল নাম ছিল ‘শায়বাহ’ অর্থ ‘সাদা চুল ওয়ালা’ (ইবনু হিশাম ১/১৩৭-৩৮)।

মুত্ত্বালিব ও আব্দুল মুত্ত্বালিব

ইয়ামনের ‘বিরাদমান’ (بِرَدْمَانَ) এলাকায় চাচা গোত্রনেতা মুত্ত্বালিব পরলোক গমন করলে ভাতিজা আব্দুল মুত্ত্বালিব তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন (ইবনু হিশাম ১/১৩৮, ১৪২)। কালক্রমে আব্দুল মুত্ত্বালিব নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে এত উঁচু মর্যাদা লাভ করেন যে, তাঁর পিতা বা পিতামহ কেউই উক্ত মর্যাদায় পৌঁছতে পারেননি। সম্প্রদায়ের লোকেরা সবাই তাঁকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসত ও সমীহ করে চলত’ (ইবনু হিশাম ১/১৪২)।

আব্দুল মুত্ত্বালিবের উচ্চ মর্যাদা লাভের অন্যতম কারণ ছিল আল্লাহর পক্ষ হ’তে স্বপ্নযোগে তাঁকে ‘যমযম’ কূয়া খননের দায়িত্ব প্রদান করা এবং তাঁর নেতৃত্বকালে আল্লাহর বিশেষ রহমতে ইয়ামনের খ্রিষ্টান গবর্ণর ‘আবরাহা’ কর্তৃক কা‘বা আক্রমণ ব্যর্থ হওয়া। এই মর্যাদা তাঁর বংশের পরবর্তী নেতা আবু ত্বালিব-এর যুগেও অব্যাহত ছিল। যা রাসূল (ছাঃ)-এর আগমনে আরও বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে বিশ্ব মর্যাদায় উন্নীত হয়।

আব্দু মানাফ, হাশেম ও আব্দুল মুত্ত্বালিব

কুছাই-পুত্র আব্দু মানাফের প্রকৃত নাম ছিল মুগীরাহ। তাঁর ৪টি পুত্র সন্তান ছিল : হাশেম, প্রকৃত নাম আমর। আব্দু শাম্স, মুত্ত্বালিব ও নওফাল। হাশেম ও মুত্ত্বালিবকে সৌন্দর্যের কারণে ‘দুই পূর্ণচন্দ্র’ (الْبَدْرَان) বলা হ’ত (ইবনুল আছীর)। হাশেমের ৪ পুত্র ছিল : আব্দুল মুত্ত্বালিব, আসাদ, আবু ছায়ফী ও নাযলাহ। আব্দুল মুত্ত্বালিবের ছিল ১০টি পুত্র ও ৬টি কন্যা। পুত্রগণের মধ্যে আববাস, হামযাহ, আব্দুল্লাহ, আবু ত্বালিব, যুবায়ের, হারেছ, হাজলা, মুক্বাউভিম, যেরার ও আবু লাহাব। কন্যাদের মধ্যে ছাফিয়া, বায়যা, আতেকাহ, উমাইমাহ, আরওয়া ও বার্রাহ’। ভাষ্যকার সুহায়লী বলেন, যুবায়ের ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর বড় চাচা। তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ ছাহাবী ছিলেন। তাঁর সমর্থনেই নবুঅত লাভের ২০ বছর পূর্বে ‘হিলফুল ফুযূল’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে’ (ইবনু হিশাম ১/১০৬-০৮, ১/১৩৩ টীকা-১)। তবে ইবনু ইসহাক বলেন, স্বপ্নে আদেশ প্রাপ্ত হয়ে যমযম কূপ খননের সময় আব্দুল মুত্ত্বালিবের সাথে তাঁর পুত্র হারেছ ছিলেন। কারণ তিনি ব্যতীত তখন তাঁর অন্য কোন পুত্র সন্তান ছিল না’ (ইবনু হিশাম ১/১৪৩)। এতে বুঝা যায় যে, হারেছ-ই আব্দুল মুত্ত্বালিবের প্রথম পুত্র ছিলেন।

আবু ত্বালিব

আবু ত্বালিবের নাম ছিল আব্দু মানাফ। কিন্তু তিনি আবু ত্বালিব নামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তাঁর ৪ পুত্র ও ২ কন্যা ছিল : ত্বালিব, ‘আক্বীল, জা‘ফর ও আলী। ত্বালিব ‘আক্বীলের চাইতে দশ বছরের বড় ছিলেন।[১] তাঁর মৃত্যুর অবস্থা জানা যায় না। বাকী সকলেই ছাহাবী ছিলেন। দুই কন্যা উম্মে হানী ও জুমানাহ দু’জনেই ইসলাম কবুল করেন’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/৭৫-৮৩ পৃঃ)। আব্দুল মুত্ত্বালিবের পরে আবু ত্বালিব বনু হাশিমের নেতা হন। তিনি আমৃত্যু রাসূল (ছাঃ)-এর অকৃত্রিম অভিভাবক ছিলেন। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে বয়কটকালের তিন বছরসহ সর্বদা বনু মুত্ত্বালিব ও বনু হাশিম রাসূল (ছাঃ)-এর সহযোগী ছিলেন। যদিও আবু ত্বালিব ও অন্য অনেকে ইসলাম কবুল করেন নি।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর আপন চাচাদের মধ্যে তিন ধরনের মানুষ ছিলেন। ১. যারা তাঁর উপরে ঈমান এনেছিলেন ও তাঁর সাথে জিহাদ করেছিলেন। যেমন হামযাহ ও আববাস (রাঃ)। ২. যারা তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। কিন্তু জাহেলিয়াতের উপর মৃত্যুবরণ করেন। যেমন আবু ত্বালিব। ৩. যারা শুরু থেকে মৃত্যু অবধি শত্রুতা করেন। যেমন আবু লাহাব। উল্লেখ্য যে, আবু সুফিয়ান ছিলেন বনু ‘আব্দে শামস গোত্রের, আবু জাহল ছিলেন বনু মাখযূম গোত্রের এবং উমাইয়া বিন খালাফ ছিলেন বনু জুমাহ গোত্রের। যদিও সকলেই ছিলেন কুরায়েশ বংশের অন্তর্ভুক্ত এবং সবাই ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর সম্পর্কীয় চাচা।

[১]. ইবনু সা‘দ ১/৯৭। উল্লেখ্য যে, আলী (রাঃ)-এর বড় ভাই ত্বালিব বিন আবু ত্বালিব বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেও জনৈক কুরায়েশ নেতার সাথে বাদানুবাদের প্রেক্ষিতে প্রত্যাবর্তনকারীদের সাথে মক্কায় ফিরে যান (ইবনু হিশাম ১/৬১৯)। তিনি বদরের যুদ্ধে বিজয় লাভে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসা করে এবং নিহত নেতাদের স্মরণে শোক প্রকাশ করে কবিতা বলেন’ (ইবনু হিশাম ২/২৬)। ইবনু সা‘দ বলেন, অন্যান্যদের সাথে তিনিও বদর যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। অতঃপর যখন কুরায়েশরা পরাজিত হয়, তখন তাঁকে নিহত বা বন্দীদের মধ্যে পাওয়া যায়নি। তিনি মক্কায়ও ফিরে যাননি। তাঁর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাঁর কোন সন্তানাদিও ছিল না’ (ইবনু সা‘দ ১/৯৭)। অতএব তিনি ঈমান এনে মৃত্যুবরণ করেছিলেন কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না।

প্রিয় নবীর (সা:) খাৎনা ও নামকরণ

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সপ্তম দিনে নবজাতকের খাৎনা ও নামকরণ করা হয়।[১] পিতৃহীন নবজাতককে কোলে নিয়ে স্নেহশীল দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব কা‘বাগৃহে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন ও প্রাণভরে দো‘আ করেন। আকীকার দিন সমস্ত কুরায়েশ বংশের লোককে দাওয়াত করে খাওয়ান। সকলে জিজ্ঞেস করলে তিনি বাচ্চার নাম বলেন, ‘মুহাম্মাদ’। এই অপ্রচলিত নাম শুনে লোকেরা বিস্ময়ভরে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি চাই যে, আমার বাচ্চা সারা দুনিয়ায় ‘প্রশংসিত’ হৌক (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/৪১)। ওদিকে স্বপ্নের মাধ্যমে ফেরেশতার দেওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী মা আমেনা তার নাম রাখেন ‘আহমাদ’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ১/৩৯)। উভয় নামের অর্থ প্রায় একই। অর্থাৎ ‘প্রশংসিত’ এবং ‘সর্বাধিক প্রশংসিত’।[২]

[১]. যাদুল মা‘আদ ১/৮০-৮১। খাৎনা ও আক্বীক্বা করার বিষয়টি যে আরবদের মাঝে পূর্ব থেকেই প্রচলিত ছিল, তা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী হা/৭, আবুদাঊদ হা/২৮৪৩)। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর খাৎনা যে সপ্তম দিনেই হয়েছিল (আর-রাহীক্ব ৫৪ পৃঃ) একথার কোন প্রমাণ নেই (ঐ, তা‘লীক্ব ৩৯-৪৪ পৃঃ)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর খাৎনা সম্পর্কে তিনটি কথা চালু আছে। ১. তিনি খাৎনা ও নাড়ি কাটা অবস্থায় ভূমিষ্ট হয়েছিলেন। ইবনুল জাওযী এটাকে মওযূ‘ বা জাল বলেছেন। ২. হালীমার গৃহে থাকার সময় প্রথম বক্ষবিদারণকালে ফেরেশতা জিব্রীল তাঁর খাৎনা করেন। ৩. দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব তাঁকে সপ্তম দিনে খাৎনা করান ও নাম রাখেন এবং লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান। এগুলি সম্পর্কে যেসব বর্ণনা এসেছে, তার কোনটিই ছহীহ নয়। এ বিষয়ে বিপরীতমুখী দু’জন মুহাক্কিকের একজন কামালুদ্দীন বিন ‘আদীম বলেন, আরবদের রীতি অনুযায়ী তাঁকে খাৎনা করা হয়েছিল। এটি এমন একটি রীতি, যা প্রমাণের জন্য কোন নির্দিষ্ট বর্ণনার প্রয়োজন নেই’ (যাদুল মা‘আদ ১/৮০-৮১)।

[২]. উভয় নামই কুরআনে এসেছে। যেমন ‘মুহাম্মাদ’ নাম এসেছে চার জায়গায়। যথাক্রমে- সূরা আলে ইমরান ৩/১৪৪, আহযাব ৩৩/৪০; মুহাম্মাদ ৪৭/২ এবং ফাৎহ ৪৮/২৯। তাছাড়া ‘মুহাম্মাদ’ নামেই একটি সূরা নাযিল হয়েছে সূরা মুহাম্মাদ (৪৭ নং সূরা)। অনুরূপভাবে ‘আহমাদ’ নাম এসেছে এক জায়গায় (ছফ ৬১/৬)।

সীরাতে ইবনু হিশামের ভাষ্যকার সুহায়লী (মৃ. ৫৮১ হি.) বলেন, ঐ সময় সারা আরবে মাত্র তিনজন ব্যতীত অন্য কারু নাম ‘মুহাম্মাদ’ ছিল বলে জানা যায় না। যাদের প্রত্যেকের পিতা তার পুত্র আখেরী নবী হবেন বলে ভবিষ্যদ্বাণী করে যান। যাদের একজন হ’লেন বিখ্যাত উমাইয়া কবি ফারাযদাক্ব (৩৮-১১০ হি.)-এর প্রপিতামহ মুহাম্মাদ বিন সুফিয়ান বিন মুজাশি‘। অন্যজন হলেন মুহাম্মাদ বিন উহাইহাহ বিন জুলাহ। আরেকজন হলেন মুহাম্মাদ বিন হুমরান বিন রাবী‘আহ। এদের পিতারা বিভিন্ন সম্রাটের দরবারে গিয়ে জানতে পারেন যে, আখেরী নবী হেজাযে জন্মগ্রহণ করবেন। ফলে তারা মানত করে যান যে, তাদের পুত্র সন্তান হ’লে যেন তার নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাখা হয় (ইবনু হিশাম ১/১৫৮ -টীকা-১)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নাম সমূহ

জুবাইর বিন মুত্ব‘ইম (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إِنَّ لِى أَسْمَاءً أَنَا مُحَمَّدٌ وَأَنَا أَحْمَدُ وَأَنَا الْمَاحِى الَّذِى يَمْحُو اللهُ بِىَ الْكُفْرَ وَأَنَا الْحَاشِرُ الَّذِى يُحْشَرُ النَّاسُ عَلَى قَدَمَىَّ وَأَنَا الْعَاقِبُ الَّذِى لَيْسَ بَعْدَهُ أَحَدٌ- ‘আমার অনেকগুলি নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ (প্রশংসিত), আমি আহমাদ (সর্বাধিক প্রশংসিত), আমি ‘মাহী’ (বিদূরিতকারী)। আমার মাধ্যমে আল্লাহ কুফরীকে বিদূরিত করেছেন। আমি ‘হাশের’ (জমাকারী)। কেননা সমস্ত লোক ক্বিয়ামতের দিন আমার কাছে জমা হবে (এবং শাফা‘আতের জন্য অনুরোধ করবে)। আমি ‘আক্বেব’ (সর্বশেষে আগমনকারী)। আমার পরে আর কোন নবী নেই’।[১] সুলায়মান মানছূরপুরী বলেন, উক্ত নাম সমূহের মধ্যে মুহাম্মাদ ও আহমাদ হ’ল তাঁর মূল নাম এবং বাকীগুলো হ’ল তাঁর গুণবাচক নাম। সেজন্য তিনি সেগুলির ব্যাখ্যা করেছেন। এই গুণবাচক নামের সংখ্যা মানছূরপুরী গণনা করেছেন ৫৪টি। তিনি ৯২টি করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।[২]

‘মুহাম্মাদ’ নামের প্রশংসায় চাচা আবু তালিব বলতেন,

وَشَقَّ لَهُ مِنَ اسْمِهِ لِيُجِلَّهُ + فَذُو الْعَرْشِ مَحْمُودٌ وَهَذَا مُحَمَّدُ

‘তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য আল্লাহ নিজের নাম থেকে তার নাম বের করে এনেছেন। তাই আরশের মালিক হলেন মাহমূদ এবং ইনি হলেন মুহাম্মাদ’।[৩]

[১]. বুখারী হা/৪৮৯৬; মুসলিম হা/২৩৫৪; মিশকাত হা/৫৭৭৬-৭৭, ‘ফাযায়েল’ অধ্যায় ‘রাসূল (ছাঃ)-এর নাম সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[২]. মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/১৯৮ পৃঃ।
[৩]. বুখারী, তারীখুল আওসাত্ব ১/১৩ (ক্রমিক ৩১); যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ১/১৫৩। উল্লেখ্য যে, উক্ত কবিতাটি হাসসান বিন ছাবিত আনছারী (রাঃ)ও তার দীওয়ানের মধ্যে যুক্ত করেছেন (দীওয়ানে হাসসান পৃঃ ৪৭)।

প্রিয় নবীর (সা:) লালন-পালন

জন্মের পর শিশু মুহাম্মাদ কিছুদিন চাচা আবু লাহাবের দাসী ছুওয়াইবার দুধ পান করেন। তাঁর পূর্বে চাচা হামযা বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এবং তাঁর পরে আবু সালামাহ তার দুধ পান করেন।[১] ফলে তাঁরা সকলে পরস্পরে দুধভাই ছিলেন।

এ সময় পিতা আব্দুল্লাহ্র রেখে যাওয়া একমাত্র মুক্তদাসী উম্মে আয়মন রাসূল (ছাঃ)-কে শৈশবে লালন-পালন করেন। এরপর ধাত্রী হালীমা সা‘দিয়াহ তাঁকে প্রতিপালন করেন। অতঃপর হালীমার গৃহ থেকে আসার পর মা আমেনা তাকে সাথে নিয়ে মদীনায় স্বামীর কবর যিয়ারত করতে যান এবং ফেরার পথে মৃত্যুবরণ করলে কিশোরী উম্মে আয়মন শিশু মুহাম্মাদকে সাথে নিয়ে মক্কায় ফেরেন। পরে খাদীজা (রাঃ)-এর মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহ্র সাথে তার বিয়ে হয়। অতঃপর তার গর্ভে উসামা বিন যায়েদের জন্ম হয়। রাসূল (ছাঃ) উম্মে আয়মানকে ‘মা’ (يَا أُمَّهْ) বলে সম্বোধন করতেন এবং নিজ পরিবারভুক্ত (بَقِيَّةُ أَهْلِ بَيْتِي) বলতেন। তিনি তাকে ‘মায়ের পরে মা’ (أُمِّي بَعْدَ أُمِّي) বলে সম্মানিত করতেন।[২]

সে সময়ে শহরবাসী আরবদের মধ্যে এই ধারণা প্রচলিত ছিল যে, শহরের জনাকীর্ণ পংকিল পরিবেশ থেকে দূরে গ্রামের নিরিবিলি উন্মুক্ত পরিবেশে শিশুদের লালন-পালন করলে তারা বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি হ’তে মুক্ত থাকে এবং তাদের স্বাস্থ্য সুঠাম ও সবল হয়। সর্বোপরি তারা বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় কথা বলতে অভ্যস্ত হয়। সে হিসাবে দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত ধাত্রী হিসাবে পরিচিত বনু সা‘দ গোত্রের হালীমা সা‘দিয়াহকে নির্বাচন করেন এবং তার হাতেই প্রাণাধিক পৌত্রকে সমর্পণ করেন। হালীমার গৃহে দু’বছর দুগ্ধপানকালীন সময়ে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা ফিরে আসে। তাদের ছাগপালে এবং অন্যান্য সকল বিষয়ে আল্লাহর তরফ থেকে বরকত নেমে আসে। নিয়মানুযায়ী দু’বছর পরে বাচ্চাকে ফেরত দেওয়ার জন্য তাঁকে মা আমেনার কাছে আনা হয়। কিন্তু হালীমা তাকে ছাড়তে চাচ্ছিলেন না। তিনি আমেনাকে বারবার অনুরোধ করেন আরও কিছুদিন বাচ্চাকে তার কাছে রাখার জন্য। ঐ সময় মক্কায় মহামারী দেখা দিয়েছিল। ফলে মা রাযী হয়ে যান এবং বাচ্চাকে পুনরায় হালীমার কাছে অর্পণ করেন (আর-রাহীক্ব ৫৬ পৃঃ)।

[১]. আল-ইছাবাহ, ছুওয়াইবাহ ক্রমিক ১০৯৬৪; ইবনু হিশাম ২/৯৬।
[২]. আল-ইছাবাহ, উম্মে আয়মন ক্রমিক সংখ্যা ১১৮৯৮; ঐ, আল-ইস্তী‘আবসহ (কায়রো ছাপা : ক্রমিক সংখ্যা ১১৪১, ১৩/১৭৭-৮০ পৃঃ, ১৩৯৭/১৯৭৭ খ্রিঃ)।

প্রসিদ্ধ আছে যে, যায়েদ বিন হারেছাহ তেহামার বনু ফাযারাহ কর্তৃক বন্দী হয়ে ওকায বাজারে বিক্রয়ের জন্য নীত হন। সেখান থেকে হাকীম বিন হিযাম তার ফুফু খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ-এর জন্য তাকে খরীদ করেন। রাসূল (ছাঃ) নবী হওয়ার পূর্বে তার সম্পর্কে স্বপ্ন দেখেন। অতঃপর খাদীজার সাথে বিবাহের পর তিনি তাকে তাঁর উদ্দেশ্যে হেবা করে দেন।... সেখানে এ কথাও আছে যে, যায়েদের পিতা হারেছাহ এবং তার চাচাসহ পরিবারের কিছু লোক তাকে নেওয়ার জন্য আসেন। তখন আল্লাহর নবী যায়েদকে তার পিতার সঙ্গে যাওয়ার এখতিয়ার দেন’ (ইবনু সা‘দ ৩/৪২)। ইবনু হাজার বলেন, বর্ণনাটি ‘খুবই অপরিচিত’ (منكر جدا)। (মা শা-‘আ ২৩ পৃঃ)।

উল্লেখ্য যে, যায়েদ বিন হারেছাহ তার পিতার ৩ সন্তান জাবালাহ, আসমা ও যায়েদ-এর মধ্যে তৃতীয় ও কনিষ্ঠ ছিলেন। এক সময় যায়েদ হারিয়ে যান। পিতা তার জন্য কেঁদে আকুল হন। পরে রাসূল (ছাঃ) তাকে লালন-পালন করেন এবং তিনি ‘মুহাম্মাদের পুত্র’ (زَيْدُ ابْنُ مُحَمَّدٍ) হিসাবে পরিচিত হন (বুখারী হা/৪৭৮২)। পরবর্তীতে সন্ধান পেয়ে তার বড় ভাই জাবালাহ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যায়েদকে আমার সাথে পাঠিয়ে দিন। তিনি বললেন, এই তো যায়েদ। তুমি ওকে নিয়ে যাও। আমি মানা করব না। তখন যায়েদ বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার উপর কাউকে প্রাধান্য দিব না। জাবালাহ বলেন, (পরবর্তীতে) আমি দেখলাম আমার ভাইয়ের সিদ্ধান্ত আমার চাইতে উত্তম ছিল’ (হাকেম হা/৪৯৪৭-৪৮; তিরমিযী হা/৩৮১৫; মিশকাত হা/৬১৬৫)।

প্রিয় নবীর (সা:)  বক্ষ বিদারণ

দ্বিতীয় দফায় হালীমার নিকটে আসার পর জন্মের চতুর্থ কিংবা পঞ্চম বছরে শিশু মুহাম্মাদের সীনা চাক বা বক্ষ বিদারণের বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। ব্যাপারটি ছিল এই যে, মুহাম্মাদ তার সাথীদের সাথে খেলছিলেন। এমন সময় জিবরাঈল ফেরেশতা এসে তাকে কিছু দূরে নিয়ে বুক চিরে ফেলেন। অতঃপর কলীজা বের করে যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে কিছু জমাট রক্ত ফেলে দেন এবং বলেন,هَذَا حَظُّ الشَّيْطَانِ مِنْكَ ‘এটি তোমার মধ্যেকার শয়তানের অংশ’। অতঃপর বুক পূর্বের ন্যায় জোড়া লাগিয়ে দিয়ে তিনি অদৃশ্য হয়ে যান। পুরা ব্যাপারটি খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাথী বাচ্চারা ছুটে গিয়ে হালীমাকে খবর দিল যে, মুহাম্মাদ নিহত হয়েছে। তিনি ছুটে এসে দেখেন যে, মুহাম্মাদ মলিন মুখে দাঁড়িয়ে আছে’।[১] হালীমা তাকে বুকে তুলে বাড়ীতে এনে সেবা-যত্ন করতে থাকেন। এই অলৌকিক ঘটনায় হালীমা ভীত হয়ে পড়েন এবং একদিন তাঁকে তার মায়ের কাছে ফেরত দিয়ে যান। তখন তার বয়স ছিল ছয় বছর। তাঁর দ্বিতীয়বার বক্ষবিদারণ হয় মি‘রাজে গমনের পূর্বে মক্কায়।[২]

[১]. মুসলিম হা/১৬২, আনাস (রাঃ) হ’তে; মিশকাত হা/৫৮৫২ ‘নবুঅতের নিদর্শন সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[2]. বুখারী হা/৩৮৮৭, ৩৪৯; মুসলিম হা/১৬৪, ১৬৩; মিশকাত হা/৫৮৬২, ৫৮৬৪, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ।

প্রিয় নবীর (সা:) বক্ষবিদারণ পর্যালোচনা

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বক্ষবিদারণ সম্পর্কে শী‘আগণ ও অন্যান্য আপত্তিকারীগণ মূলতঃ তিনটি প্রশ্ন উত্থাপন করে থাকেন। (১) বক্ষবিদারণের ঘটনাটি মানব প্রকৃতির বিরোধী (২) এটি জ্ঞান ও যুক্তি বিরোধী (৩) এটি আল্লাহর সৃষ্টিবিধান পরিবর্তনের শামিল।

এর জবাবে বলা যায় : (১) শৈশবে বক্ষবিদারণের বিষয়টি ভবিষ্যত নবুঅতের আগাম নিদর্শন। (২) শৈশবে ও মি‘রাজ গমনের পূর্বে বক্ষবিদারণের ঘটনা অন্ততঃ ২৫ জন ছাহাবী কর্তৃক অবিরত ধারায় বর্ণিত ছহীহ হাদীছসমূহ দ্বারা প্রমাণিত (ইবনু কাছীর, তাফসীর ইসরা ১ আয়াত)। অতএব এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। (৩) যাবতীয় মানবীয় কলুষ থেকে পরিচ্ছন্ন করা। যাকে ‘শয়তানের অংশ’ বলা হয়েছে। এটা তাঁর জন্য খাছ এবং পৃথক একটি বৈশিষ্ট্য। (৪) প্রত্যেক নবীরই কিছু মু‘জেযা থাকে। সে হিসাবে এটি শেষনবী (ছাঃ)-এর বিশেষ মু‘জেযা সমূহের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে মানবীয় জ্ঞানের কোন প্রবেশাধিকার নেই। (৫) শেষনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হিসাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে ও বিশেষ ব্যবস্থাধীনে পরিচালিত ছিলেন। অতএব বক্ষবিদারণের ঘটনা সাধারণ মানবীয় রীতির বিরোধী হ’লেও তা আল্লাহর অনন্য সৃষ্টি কৌশলের অধীন। যেমন শিশুকালে মূসা (আঃ) সাগরে ভেসে গিয়ে ফেরাঊনের গৃহে লালিত-পালিত হন’ (ত্বোয়াহা ২০/৩৮-৩৯)। ঈসা (আঃ) মাতৃক্রোড়ে স্বীয় সম্প্রদায়ের সাথে বাক্যালাপ করেন’ (মারিয়াম ১৯/৩০-৩৩) ইত্যাদি।

দুঃখের বিষয় স্কটিশ প্রাচ্যবিদ উইলিয়াম মূর (১৮১৯-১৯০৫) তাঁর লিখিত নবীজীবনী Life of Mahomet (1857 & 1861) গ্রন্থে বক্ষবিদারণের এ ঘটনাটিকে মূর্ছা (Epilepsy) রোগের ফল বলেছেন। শৈশব থেকেই এ রোগগ্রস্ত হওয়ার কারণে তিনি মাঝে-মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন। অতঃপর সেই বিকারের মধ্যে তিনি মনে করতেন যে, আল্লাহর নিকট থেকে তিনি বাণী প্রাপ্ত হয়েছেন (নাঊযুবিল্লাহ)।[১] জার্মান প্রাচ্যবিদ ড. স্প্রেঙ্গার (১৮১৩-১৮৯৩) আরেকটি অদ্ভুত তথ্য পেশ করেছেন যে, অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বিবি আমেনার কণ্ঠদেশে ও বাহুতে এক এক খন্ড লোহা ঝুলানো ছিল’। এর দ্বারা তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তিনি মৃগীরোগী ছিলেন’ (ঐ, ২৪০ পৃঃ)।

উইলিয়াম মূর মুহাম্মাদকে চঞ্চলমতি প্রমাণ করার জন্য একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, ‘পাঁচ বছর বয়সে মায়ের নিকট রেখে যাওয়ার জন্য হালীমা তাকে নিয়ে মক্কায় আসছিলেন। কাছাকাছি আসার পর বালকটি হঠাৎ হালীমার সঙ্গছাড়া হয়ে উধাও হয়ে যায়। তখন আব্দুল মুত্ত্বালিব তার কোন ছেলেকে পাঠিয়ে দেখেন যে, বালকটি এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারপর তিনি তাঁকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যান’। কেবল মূর নন বৃটিশ প্রাচ্যবিদ স্যামুয়েল মার্গোলিয়থ (১৮৫৮-১৯৪০) লিখেছেন, পিতৃহীন এই বালকের অবস্থা মোটেও প্রীতিকর ছিল না। মুহাম্মাদের শেষ বয়সে তাঁর চাচা হামযা (মাতাল অবস্থায়) তাকে নিজ পিতার দাস বলে বিদ্রুপ করেছিলেন’ (ঐ, ২৫৮-৫৯ পৃঃ)। মাওলানা আকরম খাঁ (১৮৬৮-১৯৬৮) বলেন, এই শ্রেণীর বিদ্বেষ-বিষ জর্জরিত অসাধু লোকদিগের কথার প্রতিবাদ করিয়া শ্রম ও সময়ের অপব্যয় করা উচিৎ নহে’ (ঐ, ২৪০ পৃঃ)।

[১]. মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মোস্তফা চরিত (ঢাকা : ঝিনুক পুস্তিকা ১৯৭৫), ২৫০ পৃঃ।




প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  



******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url