প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৫৫] || মহানবীর জীবনী ||




মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে বিভিন্ন গোত্রের  ইসলাম গ্রহণ

(তৃতীয় অংশ)
[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]

বনু সা‘দ হুযায়েম প্রতিনিধি দল

কুযা‘আহ (قُضَاعَة) গোত্রের শাখা বনু সা‘দ হুযায়েম প্রতিনিধি দল আবু নু‘মানের নেতৃত্বে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে আসে। আবু নু‘মান বলেন, এ সময় মানুষ দু’দলে বিভক্ত ছিল। একদল আগ্রহের সাথে ইসলামে প্রবেশকারী ছিল। অন্যদল তরবারীর ভয়ে ভীত ছিল। অতঃপর আমরা মদীনায় প্রবেশ করলাম। তখন রাসূল (ছাঃ) মসজিদে একটি জানাযার ছালাত পড়াচ্ছিলেন। আমরা তাতে যোগ দিলাম না। ছালাত শেষে রাসূল (ছাঃ) আমাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কারা? বললাম, বনু সা‘দ হুযায়েমের লোক। তিনি বললেন, তোমরা কি মুসলমান? বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহ’লে তোমরা কেন তোমাদের ভাইয়ের জানাযার ছালাতে যোগ দিলে না? বললাম, আমরা ধারণা করেছিলাম, যতক্ষণ আমরা আপনার হাতে বায়‘আত না করব, ততক্ষণ উক্ত ছালাত আদায় করা আমাদের জন্য জায়েয হবে না। তিনি বললেন, যেখানেই তোমরা মুসলমান হও না কেন, তোমরা মুসলমান’। অতঃপর আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর হাতে ইসলামের বায়‘আত করলাম। বায়‘আত শেষে আমরা আমাদের মাল-সামানের কাছে ফিরে এলাম। যেগুলি আমাদের কাফেলার সর্বকনিষ্ঠ একটি ছেলের দায়িত্বে ছিল। ইতিমধ্যে রাসূল (ছাঃ) আমাদের সন্ধানে লোক পাঠালেন। অতঃপর আমাদেরকে তাঁর নিকটে নিয়ে যাওয়া হ’ল। তখন আমাদের ঐ ছেলেটি তাঁর দিকে এগিয়ে গেল ও বায়‘আত করল। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! ছেলেটি আমাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এবং আমাদের খাদেম। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন,أَصْغَرُ الْقَوْمِ خَادِمُهُمْ بَارَكَ اللهُ عَلَيْهِ ‘ছোটরাই কওমের খাদেম হয়। আল্লাহ তার উপরে বরকত দান করুন’!

আবু নু‘মান বলেন, আল্লাহর কসম! সে আমাদের মধ্যে উত্তম ছিল এবং রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আর বরকতে সে আমাদের মধ্যে কুরআনের সর্বোত্তম পাঠক ছিল। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাকে আমাদের উপর ‘আমীর’ নিযুক্ত করলেন। অতঃপর যখন আমরা ফিরে আসতে চাইলাম, তখন রাসূল (ছাঃ) বেলালকে নির্দেশ দিলেন এবং আমাদের প্রত্যেককে বহু মূল্য রৌপ্যমুদ্রা উপহার দিলেন। আমরা ফিরে এসে আমাদের কওমকে দাওয়াত দিলাম। ফলে আল্লাহপাক তাদের সবাইকে ইসলাম কবুলের তাওফীক দিলেন’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৬৯-৭০)।

[শিক্ষণীয়: (১) নিখাদ আনুগত্য থাকলে আমীরের হাতে বায়‘আত না করলেও চলবে। পরে সুযোগ মত বায়‘আত করবে। (২) কুরআনের পাঠক ও জ্ঞানী হওয়াই ইসলামী নেতৃত্বের মাপকাঠি। (৩) ছোটরা বড়দের উপর আমীর হ’তে পারে। (৪) দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে থাকে।]

বনু ফাযারাহ প্রতিনিধি দল

তাবূক অভিযানের পর ১০/১৫ জনের এই দলটি মদীনায় আসে। বিখ্যাত গোত্র ক্বায়সে ‘আয়লান(قَيْسُ عَيْلاَنَ) এর অন্তর্ভুক্ত এই লোকেরা আগেই ইসলাম কবুল করেছিল। তাদের বাহন ও চেহারাসমূহ দুর্দশাগ্রস্ত ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের এলাকার অবস্থা জিজ্ঞেস করলে তারা চরম দুর্ভিক্ষের কথা জানালো। তারা তাদের এলাকায় বৃষ্টি বর্ষণের জন্য রাসূল (ছাঃ)-কে আল্লাহর নিকটে দো‘আ করার আবেদন জানালো। তখন তিনি মিম্বরে দাঁড়িয়ে দু’হাত উঁচু করে (সম্ভবতঃ জুম‘আর খুৎবায়) নিম্নোক্ত দো‘আ করলেন, যে দো‘আটি পরবর্তীকালে ইস্তিসক্বার ছালাতে সচরাচর পড়া হয়ে থাকে।-

اللهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَك وَانْشُرْ رَحْمَتَك وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ- اللهُمَّ اسْقِنَا غَيْثًا مُغِيْثًا مَرِيْئًا مَرِيْعًا نَافِعًا، طَبَقًا وَاسِعًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٍّ عَاجِلاً غَيْرَ آجِلٍ-

‘হে আল্লাহ! তোমার বান্দাদের ও তোমার গবাদিপশুদের বৃষ্টি দ্বারা পরিতৃপ্ত কর। তোমার রহমতকে বিস্তৃত করো ও তোমার মৃত জনপদকে জীবিত কর’। হে আল্লাহ! আমাদেরকে এমন বৃষ্টি বর্ষণ কর, যা শান্তিদায়ক, কল্যাণকর, সমতল বিস্তৃত এবং যা উপকারী, ক্ষতিকর নয়। যা দ্রুত, দেরীতে নয়।[1]

[শিক্ষণীয়: বৃষ্টি বর্ষণ ও অভাব দূরীকরণের মালিক আল্লাহ। তাই সবকিছুর জন্য কেবল তাঁর কাছেই প্রার্থনা করতে হবে।]

[1]. আবুদাঊদ হা/১১৭৬, ১১৬৯, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৫০৬।
যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭০-৭১; আর-রাহীক্ব ৪৫০ পৃষ্ঠায় বর্ধিতভাবে বলা হয়েছে,

اللَّهُمَّ سُقْيَا رَحْمَةٍ لاَ سُقْيَا عَذَابٍ وَلاَ هَدْمٍ وَلاَ غَرَقٍ وَلاَ مَحْقٍ اللَّهُمَّ اسْقِنَا الْغَيْثَ وَانْصُرْنَا عَلَى الْأَعْدَاءِ- ‘হে আল্লাহ! রহমতের বৃষ্টি চাই, আযাবের বৃষ্টি নয়। যা ধ্বসিয়ে দেয় না, ডুবিয়ে দেয় না এবং নিশ্চিহ্ন করে না। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দ্বারা পরিতৃপ্ত কর এবং আমাদেরকে শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য কর’ (কানযুল ‘উম্মাল হা/২১৬০৪; বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ আর-রাহীক্ব, তা‘লীক্ব ১৮০ পৃঃ)।

বনু আসাদ প্রতিনিধি দল

ইয়ামামা থেকে ১০ জনের এই প্রতিনিধি দলটি মদীনায় আসে। যাদের মধ্যে যিরার বিন আযওয়ার(ضِرَارُ بنُ الْأَزْوَرِ) ওয়াবেছাহ বিন মা‘বাদ এবং তুলায়হা বিন খুওয়াইলিদ আসাদী ছিলেন। ঐ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে ছিলেন। তারা এসে নিজেরা কালেমা শাহাদাত পাঠ করেন। অতঃপর তাদের নেতা হাযরামী বিন ‘আমের বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা নিজেরা এসে ইসলাম কবুল করেছি। আপনি আমাদের নিকটে কোন সেনাদল বা মুবাল্লিগ দল পাঠাননি। তখন নিম্নোক্ত আয়াতটি নাযিল হয়-

يَمُنُّوْنَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوْا قُلْ لاَ تَمُنُّوْا عَلَيَّ إِسْلاَمَكُمْ بَلِ اللهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيْمَانِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ- (الحجرات 17)-

‘তারা মুসলমান হয়ে তোমাকে ধন্য করেছে বলে মনে করে। বলে দাও, তোমরা মুসলমান হয়ে আমাকে ধন্য করোনি। বরং আল্লাহ ঈমানের পথ প্রদর্শন করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী হয়ে থাক’ (হুজুরাত ৪৯/১৭)।

অতঃপর তারা কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করল। যেমন পাখির বোল ও ডাইনে-বামে উড়ে যাওয়া থেকে শুভাশুভ নির্ধারণ করা যাবে কি না, গনৎকারের ভবিষ্যদ্বাণী গ্রহণ করা যাবে কি না ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে এসব থেকে নিষেধ করলেন।

উল্লেখ্য যে, উক্ত প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য তুলায়হা আসাদী রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পর ‘মুরতাদ’ হয়ে যান ও নিজে নবুঅত দাবী করেন। আবুবকর (রাঃ)-এর সময় রিদ্দার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শামে পালিয়ে যান। সেখানে গিয়ে পুনরায় মুসলমান হন এবং শেষ পর্যন্ত তার ইসলাম সুন্দর ছিল।[1]

[শিক্ষণীয়: (১) আল্লাহর রহমত ব্যতীত কেউ হেদায়াত লাভ করতে পারে না। তাই কোন বিষয়ে হেদায়াত লাভের পর পথ প্রদর্শকের প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে হবে। সাথে সাথে অধিকহারে আল্লাহর দরবারে বিনম্রচিত্তে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে। (২) আমীরের নিকট আল্লাহর নামে বায়‘আত করার পরেও মুসলমান তা ভঙ্গ করতে পারে। এমনকি নিজেই আমীর দাবী করতে পারে। যেমন রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বায়‘আত করার পরেও তুলায়হা আসাদী নিজে নবুঅতের দাবী করে। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেও ইবনু উবাই মুনাফিকদের সর্দার ছিলেন। তাই বলে একারণে রাসূল (ছাঃ) বায়‘আতের সুন্নাত বাতিল করেননি।]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭২; শারহুল মাওয়াহেব ৫/২১১-১২; আল-বিদায়াহ ৫/৮৮। যাদুল মা‘আদে তুলায়হাকে ত্বালহা বলা হয়েছে। সম্ভবতঃ এটি মুদ্রণ জনিত ভুল।

বাহরা প্রতিনিধি দল

ইয়ামন থেকে আগত ১৩ জনের এই প্রতিনিধি দলটি মদীনায় এসে খ্যাতনামা ছাহাবী মিক্বদাদ বিন ‘আমর (রাঃ)-এর বাসার সম্মুখে তাদের উট বসিয়ে দেয়। মিক্বদাদ (রাঃ) বাসায় তাদের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার কথা বলে বেরিয়ে গিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানান। অতঃপর তাদের ঘরে এনে বসান এবং ‘হাইস’ (حَيْس) নামক উন্নত মানের খানা পরিবেশন করেন। ‘হাইস’ হ’ল খেজুর, ছাতু ও ঘি মিশ্রিত অত্যন্ত সুস্বাদু একপ্রকার খাদ্য। হযরত মিক্বদাদ (রাঃ) একটি পাত্রে করে উক্ত খাদ্যের কিছু অংশ রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য হাদিয়া পাঠান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা থেকে কিছুটা খেয়ে পাত্রটি ফেরৎ পাঠিয়ে দেন। মিক্বদাদ (রাঃ) দু’বেলা ঐ পাত্রে করে মেহমানদের জন্য খানা পরিবেশন করেন। মেহমানগণ অত্যন্ত তৃপ্তির সাথে উক্ত খাদ্য খেতে থাকেন। একদিন আশ্চর্য হয়ে তারা মেযবানকে বললেন, আমরা শুনেছিলাম মদীনাবাসীর খাদ্য হ’ল ছাতু, যব ইত্যাদি। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টা। সবচাইতে মূল্যবান ও সুস্বাদু খাদ্য আমরা দু’বেলা খাচ্ছি। এরকম খাদ্য তো আমরা কখনো খাইনি’।

জওয়াবে মিক্বদাদ (রাঃ) বললেন, প্রিয় ভাইয়েরা! এসবই আমাদের প্রিয় রাসূল (ছাঃ)-এর বরকত। তিনি ঐ পাত্র থেকে কিছু খেয়ে ফেরত দিয়েছিলেন। আর তাতেই বরকত হয়ে তা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, শেষ হচ্ছে না। একথা শুনে প্রতিনিধি দল বলে উঠল, ‘নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল’। অতঃপর তারা মুসলমান হয়ে যান ও মদীনায় কিছু দিন অবস্থান করেন এবং পবিত্র কুরআন ও ইসলামের হুকুম-আহকাম শিখে ফিরে যান’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৩)।

[শিক্ষণীয়: অনেক সময় আল্লাহ পাক নবীগণের মু‘জেযার মাধ্যমে অথবা কোন প্রিয় বান্দার প্রতি কারামত প্রদর্শনের মাধ্যমে অন্য বান্দাকে হেদায়াত দান করে থাকেন। এটা স্রেফ আল্লাহর এখতিয়ারাধীন বিষয়। তিনি যাকে খুশী তাকে দিয়ে এটা করাতে পারেন। এতে ব্যক্তির নিজস্ব কোন এখতিয়ার নেই। সেকারণ এটি শরী‘আতের কোন দলীল নয়।]

উযরাহ প্রতিনিধি দল

ইয়ামনের কুযা‘আহ (قُضَاعَة) গোত্রের উযরাহ শাখার ১২ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি জামরাহ বিন নু‘মান(جَمْرَةُ بْنُ النُّعْمَانِ) এর নেতৃত্বে ৯ম হিজরীর ছফর মাসে মদীনায় আসে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, আমরা বনু ‘উযরাহর লোক এবং মায়ের দিক থেকে (কুরায়েশ নেতা) কুছাইয়ের ভাই। যারা কুছাইকে সাহায্য করেছিলেন এবং বনু খোযা‘আহ ও বনু বকরকে মক্কার নেতৃত্ব থেকে বিতাড়িত করতে সহযোগিতা করেছিলেন। আমাদের সঙ্গে আপনার আত্মীয়তা ও বংশীয় সম্পর্ক রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে ‘মারহাবা’ জানালেন এবং সুসংবাদ দিলেন যে, সত্বর শাম বিজিত হবে এবং রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস ঐ অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হবে। বস্ত্ততঃ রাসূল (ছাঃ)-এর এই ভবিষ্যদ্বাণীর পাঁচ মাসের মধ্যেই ৯ম হিজরীর রজব মাসে তাবূক অভিযানে বিনা যুদ্ধে শাম বিজিত হয় এবং রোমকরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তবে পূর্ণ বিজয় সম্পন্ন হয় হযরত ওমরের খেলাফতকালে হযরত আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহর যুদ্ধাভিযানের মাধ্যমে।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে গণৎকারদের নিকটে যেতে এবং বেদীর নিকটে তারা যেসব যবেহ করে থাকে, তা থেকে নিষেধ করেন। অতঃপর বলেন যে, আগামী থেকে কেবল ঈদুল আযহার কুরবানী বাকী থাকবে। এরপর তারা ইসলাম কবুল করল এবং কয়েকদিন অবস্থান করে ফিরে গেল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে উত্তম উপঢৌকনাদিসহ বিদায় দেন’।[1]

[শিক্ষণীয়: (১) রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় যত দূরেরই হৌক, তাকে সম্মান করা ইসলামের নীতি। (২) ঈদুল আযহার কুরবানী ব্যতীত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইসলামে অন্য কোন কুরবানী নেই। অবশ্য আল্লাহর নামে যেকোন যবহে নেকী লাভ হয়।]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৪। আর-রাহীক্বে (৪৪৭ পৃঃ) জামরাহ (جَمْرَة)-এর বদলে হামযাহ (حَمْزَة) লেখা হয়েছে। সম্ভবতঃ এটি মুদ্রণ জনিত ভুল।

বালী প্রতিনিধি দল

৯ম হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে আবুয যুবাইব(أبو الضُّبَيْبِ) এর নেতৃত্বে শাম থেকে ‘বালী’ গোত্রের এই প্রতিনিধি দল মদীনায় আসেন এবং রুওয়াইফি‘ বিন ছাবিত(رُوَيْفِعُ بْنُ ثَابِتٍ الْبَلَوِيّ) এর বাড়ীতে মেহমান হন। তিনি তাদেরকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট নিয়ে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এরা আমার কওমের লোক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ও তার কওমের প্রতিনিধি দলকে ‘মারহাবা’ জানান। অতঃপর তারা ইসলাম কবুল করেন। তখন তাদের উদ্দেশ্যে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তোমাদেরকে ইসলামের প্রতি হেদায়াত দান করেছেন। কেননা যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছুর উপরে মৃত্যুবরণ করে, সে জাহান্নামী হবে’। তখন দলনেতা আবুয যুবাইব বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মেহমানদারীর প্রতি আমার আসক্তি রয়েছে। এতে কি আমার জন্য কোন পুরস্কার আছে? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। প্রত্যেক সৎকর্ম ধনী বা গরীব যার প্রতিই তুমি করবে, সেটি ছাদাক্বা হবে’। তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! মেহমানদারীর মেয়াদ কত দিন? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তিনদিন’। অতঃপর প্রশ্ন করলেন, হারানো বকরীর হুকুম কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ওটা তোমার বা তোমার ভাইয়ের অথবা নেকড়ের’। তাদের শেষ প্রশ্ন ছিল, হারানো উটের হুকুম কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘ওটাকে ছেড়ে দাও, যতক্ষণ না ওর মালিক ওকে পেয়ে যায়’। (উপরে বর্ণিত হাদীছ সমূহ সনদে ও মতনে সরাসরি প্রমাণিত না হ’লেও উক্ত মর্মের ছহীহ হাদীছ সমূহ রয়েছে। -লেখক)।

ইসলাম কবুলের পর তারা মেযবানের বাড়ীতে তিন দিন অবস্থান করেন। অতঃপর বিদায়ের সময় রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে উপযুক্ত উপঢৌকনাদি প্রদান করেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৪)।

উল্লেখ্য যে, হযরত আমর ইবনুল ‘আছ-এর দাদী ছিলেন এই গোত্রের মহিলা। সেই সুবাদে মুতা যুদ্ধের পর ৮ম হিজরীর জুমাদাল আখেরাতে উক্ত অঞ্চলে তাঁর নেতৃত্বে ৩০০ সৈন্যের একটি বাহিনী পাঠানো হয়। যাতে তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে রোমকদের সঙ্গে একজোট না হয়। যেটি ‘সারিইয়া যাতুস সালাসেল’ নামে পরিচিত (যুদ্ধ সমূহ ক্রমিক ৭০)।

[শিক্ষণীয় : কেবলমাত্র বিশ্বাস নয় বরং বিধি-বিধান সমূহ পালনের নাম হ’ল ইসলাম।]

বনু মুর্রাহ প্রতিনিধি দল

হারেছ বিন ‘আওফের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বনু মুর্রাহ প্রতিনিধি দল ৯ম হিজরীতে তাবূক থেকে ফেরার পর রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে আগমন করে। তারা এসে বলে, আমরা আপনার কওমের এবং আপনার বংশের। আমরা বনু লুওয়াই বিন গালিব-এর বংশধর। একথা শুনে রাসূল (ছাঃ) মুচকি হাসলেন। অতঃপর তিনি হারেছকে বললেন, তোমার পরিবারকে কোথায় ছেড়ে এসেছ? তিনি বললেন, ‘অস্ত্র ও অস্ত্রধারীদের নিকট’। তোমাদের এলাকাকে কেমন ছেড়ে এসেছ? বললেন, আমরা দুর্ভিক্ষ পীড়িত। মাল-সম্পদের কিছুই নেই। আপনি আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট দো‘আ করুন! তখন রাসূল (ছাঃ) দো‘আ করলেন,اللَّهُمَّ اسْقِهِمُ الْغَيْثَ ‘হে আল্লাহ! তুমি এদেরকে বৃষ্টি দ্বারা পরিতৃপ্ত কর’। অতঃপর তারা কয়েকদিন অবস্থান করল। তারপর দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট বিদায় নিতে এল। তখন তিনি বেলালকে নির্দেশ দিলেন তাদেরকে পুরস্কৃত করার জন্য। বেলাল তাদের প্রত্যেককে ১০ উক্বিয়া (রৌপ্যমুদ্রা) করে এবং নেতা হারেছকে ১২ উক্বিয়া হাদিয়া দিলেন। অতঃপর তারা নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কবে বৃষ্টি হয়েছিল? দেখা গেল, সেটা ছিল ঐদিন, যেদিন রাসূল (ছাঃ) তাদের জন্য দো‘আ করেছিলেন। এরপর থেকে তাদের অঞ্চল শস্য-শ্যামল থাকে’।[1]

[শিক্ষণীয়: (১) সর্বদা আত্মীয়তার সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। (২) দুর্ভিক্ষের জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে। (৩) মেহমানকে হাদিয়া দেওয়া এবং নেতাকে কিছু বেশী দেওয়া কর্তব্য। (৪) নেককার মুমিনের দো‘আ দ্রুত কবুল হয়।]

[1]. শারহুল মাওয়াহেব ৫/২১৭, ২৫তম প্রতিনিধি দল; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৭-৭৮। এখানে যাদুল মা‘আদে যু-মুর্রাহ প্রতিনিধি দল (وَفْدُ ذِىْ مُرَّةَ) বলা হয়েছে। সম্ভবতঃ এটি মুদ্রণ জনিত ভুল।

খাওলান প্রতিনিধি দল

ইয়ামন থেকে ১০ম হিজরীর শা‘বান মাসে দশ সদস্যের এই প্রতিনিধি দলটি মদীনায় আসে। তারা এসে বলেন, আমরা ইতিপূর্বে ঈমান এনেছি। কিন্তু দীর্ঘ পথ সফর করে আমাদের মদীনায় আসার একটাই কারণ প্রিয় রাসূল (ছাঃ)-এর সাক্ষাৎ লাভ করা।

অতঃপর রাসূল (ছাঃ) তাদের পূর্বের দেব-প্রতিমা ‘আম্মু আনাস’(عَمُّ أَنَسٍ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বলল, আল্লাহর হাযার শোকর! আপনার শিক্ষা আমাদেরকে ঐ ফিৎনা থেকে রক্ষা করেছে। কিছু বুড়া-বুড়ীই কেবল এখনো ঐ মূর্তির পূজা করে থাকে। এবার ফিরে গিয়ে ইনশাআল্লাহ আমরা মূর্তিটা গুঁড়িয়ে দেব। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা ঐ মূর্তিপূজার দু’একটি ঘটনা শোনাও তো’। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! একদিন আমরা একশ’ বলদ একত্রিত করি এবং সবগুলি একই দিনে ‘আম্মে আনাসের নামে কুরবানী করি। অতঃপর সেগুলি সব জন্তু-জানোয়ারে খেয়ে যায়। অথচ আমরা নিজেরাই ছিলাম অভাবী এবং গোশতের মুখাপেক্ষী’।

তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! গবাদিপশু এবং উৎপাদিত খাদ্যশস্য হ’তে আমরা ‘আম্মে আনাসের জন্য নির্ধারিত অংশ বের করে রাখতাম। উৎকৃষ্ট ফসলের অংশটি ‘আম্মে আনাসের জন্য এবং নিকৃষ্ট অংশটি আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করতাম। আর ফসল খারাপ হলে আল্লাহর অংশ দিতাম না। বরং আল্লাহর অংশটা ‘আম্মে আনাসের নামে উৎসর্গ করতাম। কিন্তু ‘আম্মে আনাসের অংশ কখনোই বাদ যেত না’।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে দ্বীনের ফরয-ওয়াজিবাত শিক্ষা দিলেন এবং বিশেষ করে তাদেরকে নিম্নের বিষয়গুলি শিখালেন।-

(১) অঙ্গীকার পূর্ণ করা (২) আমানত রক্ষা করা (৩) প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা (৪) কারু প্রতি যুলুম না করা। কেননা যুলুম ক্বিয়ামতের দিন ঘন অন্ধকার হয়ে দেখা দিবে(الظُّلْمُ ظُلُمَاتٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)।[1]

[শিক্ষণীয়: শিরকী আক্বীদা দুনিয়া ও আখেরাত দু’টিই ধ্বংস করে। এযুগের কবরপূজারী ও অন্যান্য পূজারীদের দিকে তাকালেই এর দৃষ্টান্ত মিলবে। যারা ছবি-মূর্তি-স্মৃতিসৌধ শহীদ মিনার ও কবরে লাখ লাখ টাকা ঢালে। কিন্তু একজন অসহায় মানুষকে কিছুই দিতে চায় না।]
[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৮; বুখারী হা/২৪৪৭; মুসলিম হা/২৫৭৯; মিশকাত হা/৫১২৩।

মুহারিব প্রতিনিধি দল

দশ সদস্যের এই প্রতিনিধিদল ১০ম হিজরী সনে বিদায় হজ্জের বছরে মদীনায় আসে। এরা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর বিরুদ্ধে আরবদের মধ্যে সর্বাধিক বিদ্বেষী ও কঠোর হৃদয়ের। তাদেরকে রামলাহ বিনতুল হারেছ-এর গৃহে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের মেহমানদারীর জন্য বেলাল (রাঃ)-কে নিযুক্ত করেন। সকাল-সন্ধ্যা তিনি তাদের খাবার পরিবেশন করতেন। একদিন রাসূল (ছাঃ) যোহর থেকে আছর পর্যন্ত তাদের জন্য সময় দিলেন। এ সময় তিনি এক ব্যক্তির প্রতি বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে বলেন, তোমাকে আমি যেন ইতিপূর্বে কোথায় দেখেছি? লোকটি বলল, আল্লাহর কসম! আপনি আমাকে দেখেছেন এবং আমার সাথে কথাও বলেছেন। আর সেটা হ’ল মক্কার ‘ওকায’ (عُكَاظ) বাজারে যখন আপনি লোকদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। অথচ আমি আপনার বক্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ করি এবং নিকৃষ্ট বাক্য সমূহ প্রয়োগ করি’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। ঠিক’। ঐ ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঐদিন আমার সাথীদের মধ্যে আমার চাইতে বেশী আপনাকে কেউ গালি দেয়নি এবং আমার চাইতে বেশী ইসলামের বিরোধিতাকারী সেদিন কেউ ছিল না। আমার সেই সব সাথীরা সকলেই স্ব স্ব পিতৃধর্মে মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ তারা আপনার ব্যাপারে আমার চাইতে বেশী কঠোর ছিল না। অতএবفَأَحْمَدُ اللهَ الَّذِي أَبْقَانِي حَتَّى صَدَّقْتُ بِكَ ‘আমি আল্লাহর প্রশংসা করছি, যিনি আজও আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন আপনাকে সত্য বলে বিশ্বাস করার জন্য’। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,إِنَّ الْقُلُوبَ بَيْنَ أَصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللهِ يُقَلِّبُهَا كَيْفَ يَشَاءُ ‘নিশ্চয় মানুষের অন্তরসমূহ আল্লাহর দু’আঙ্গুলের মাঝে রয়েছে। তিনি যেভাবে খুশী সেটাকে পরিচালিত করেন’ (তিরমিযী হা/২১৪০)। অতঃপর ঐ ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার বিগত গোনাহ সমূহ মাফের জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করুন’। জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إنَّ الْإِسْلاَمَ يَجُبُّ مَا كَانَ قَبْلَهُ مِنَ الكُفْر ‘ইসলাম তার পূর্বেকার সকল কুফরী দূর করে দেয়’। অতঃপর তিনি খুযায়মা বিন সুওয়া’(خُزَيْمَةُ بْنُ سُوَاء) এর মুখমন্ডলে হাত বুলিয়ে দেন। তাতে তার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়।[1]

একই ধরনের বক্তব্য এসেছে, যখন আমর ইবনুল ‘আছ ইসলাম কবুল করার জন্য মদীনায় আসেন, তখন বায়‘আতের জন্য হাত বাড়িয়ে দিয়ে আবার টেনে নেন। কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ইসলাম কবুল করার পর আমার বিগত গোনাহ সমূহ মাফ হবে কি? তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ইসলাম(يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ) বিগত সকল গোনাহ ধ্বসিয়ে দেয় এবং হিজরত বিগত সকল গোনাহ ধ্বসিয়ে দেয়’ (মুসলিম হা/১২১; মিশকাত হা/২৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে,إنَّ الْإِسْلاَمَ يَجُبُّ مَا كَانَ قَبْلَهُ مِنَ الذُّنُوبِ ‘নিশ্চয় ইসলাম তার বিগত সকল গোনাহ দূরীভূত করে দেয়’ (আহমাদ হা/১৭৮৬১, সনদ ছহীহ)।

[শিক্ষণীয়: প্রকৃত তওবা ও বায়‘আত মানুষকে নতুন জীবন দান করে।]
[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৭৯; ত্বাবাক্বাত ইবনু সা‘দ ১/২২৭।

ছুদা প্রতিনিধি দল

৮ম হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে এই প্রতিনিধি দল আগমন করে। হোনায়েন যুদ্ধের পর জি‘ইর্রানাহ থেকে মদীনায় ফেরার পথে রাসূল (ছাঃ) ক্বায়েস বিন সা‘দ বিন ওবাদাহ-এর নেতৃত্বে ৪০০ সৈন্যের একটি দলকে ইয়ামন সীমান্তবর্তী ছুদা অঞ্চলে প্রেরণ করেন। তখন তাদের নেতা যিয়াদ ইবনুল হারেছ ছুদাঈ রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে হাযির হন এবং অনুরোধ করে বলেন, আপনি সৈন্যদলকে ফিরিয়ে নিন। আমি আমার সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিচ্ছি’। তখন রাসূল (ছাঃ) সেনাদল ফেরত নিলেন। অতঃপর যিয়াদ ফিরে গিয়ে নিজ কওমকে ইসলামের প্রতি উৎসাহ প্রদান করেন এবং নেতৃস্থানীয় ১৫ জনকে নিয়ে বছরের শেষদিকে দ্বিতীয়বার মদীনায় আসেন। তারা রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে হাযির হয়ে তাঁর নিকটে বায়‘আত করে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর ফিরে গিয়ে নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেন। ফলে ১০ম হিজরীতে বিদায় হজ্জের সময় এই সম্প্রদায়ের ১০০ জন লোক রাসূল (ছাঃ)-এর সাথী হন’।[1]

[শিক্ষণীয়: (১) দাওয়াতের মাধ্যমে ইসলামের প্রসার ঘটেছে, এটি তার অন্যতম প্রমাণ। (২) খবরে ওয়াহেদ অর্থাৎ একজনের সাক্ষ্য যে গ্রহণযোগ্য, যিয়াদের ঘটনায় তার প্রমাণ রয়েছে।]
[1]. আর-রাহীক্ব ৪৪৬ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৮০।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url