প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৪৭] || মহানবীর জীবনী ||






নায়েন যুদ্ধ ও তায়েফ যুদ্ধের ফলাফল


[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]

হোনায়েন যুদ্ধ

হোনায়েন-এ রাসূল (ছাঃ)-এর তেজস্বিতা

হোনায়েন-এর সংকটকালে যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পাশে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ব্যতীত কেউ ছিলনা, তখন তাঁর বীরত্ব ও তেজস্বিতা ছিল অতুলনীয়। তিনি স্বীয় সাদা খচ্চরকে কাফের বাহিনীর দিকে এগিয়ে যাবার জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন ও বলতে থাকেন, أَنَا النَّبِىُّ لاَ كَذِبْ * أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ ‘আমি নবী। মিথ্যা নই’। ‘আমি আব্দুল মুত্ত্বালিবের পুত্র’।[1] অর্থাৎ আমি যে সত্য নবী তার প্রমাণ যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের উপরে নির্ভর করে না। এ সময় রাসূল (ছাঃ) ডানদিকে ফিরে ডাক দিয়ে বলেন,هَلُمُّوْا إلَيَّ أيها الناسُ، أنَا رَسُوْلُ الله، أنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ ‘আমার দিকে এসো হে লোকেরা! আমি আল্লাহর রাসূল’। ‘আমি আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মাদ’।[2]

এসময় রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ১০ থেকে ১২ জন ছাহাবী ব্যতীত কেউ ছিল না। তন্মধ্যে ছিলেন চাচা আববাস ও তার পুত্র ফযল বিন আববাস, চাচাতো ভাই নওমুসলিম আবু সুফিয়ান বিন হারেছ বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব ও তার পুত্র জা‘ফর, আবুবকর, ওমর, আলী ও রাবী‘আহ বিন হারেছ। তাছাড়া ছিলেন উসামাহ বিন যায়েদ এবং আয়মান বিন ওবায়েদ ওরফে আয়মান বিন উম্মে আয়মান। যিনি ঐ দিন শহীদ হয়েছিলেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৪১১)। আবু সুফিয়ান বিন হারেছ রাসূল (ছাঃ)-এর খচ্চরের লাগাম এবং চাচা আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব খচ্চরের রেকাব টেনে ধরে রেখেছিলেন, যাতে সে রাসূলকে নিয়ে সামনে বেড়ে যেতে না পারে। অতঃপর চাচা আববাসকে নির্দেশ দিলেন ছাহাবীগণকে উচ্চৈঃস্বরে আহবান করার জন্য। কেননা আববাস ছিলেন অত্যন্ত দরাজ কণ্ঠের মানুষ। তিনি সর্বশক্তি দিয়ে ডাক দিলেন, أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ ‘বায়‘আতে রিযওয়ানের সাথীরা কোথায়’?يَا مَعْشَرَ الأَنْصَارِ ‘হে আনছারগণ!’ يَا بَنِى الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ ‘হে হারেছ বিন খাযরাজের বংশধরগণ!’ আব্বাস-এর উচ্চকণ্ঠের এই আওয়ায পাওয়ার সাথে সাথে গাভীর ডাকে দুধের বাছুর ছুটে আসার ন্যায় (عَطْفَةُ الْبَقَرِ عَلَى أَوْلاَدِهَا) লাববায়েক লাববায়েক ধ্বনি দিতে দিতে চারদিক থেকে ছাহাবীগণ ছুটে এলেন।[3] কারু কারু এমন অবস্থা হয়েছিল যে, স্বীয় উটকে ফিরাতে না পেরে স্রেফ ঢাল-তলোয়ার নিয়ে লাফিয়ে পড়ে ছুটে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে চলে আসেন (ইবনু হিশাম ২/৪৪৪-৪৫)। এসময় রাসূল (ছাঃ) বলেন,الْآنَ حَمِيَ الْوَطِيسُ ‘এখন যুদ্ধ জ্বলে উঠল’।[4]

ফলে মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধের মোড় ঘুরে যায়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক মুষ্টি বালু উঠিয়ে কাফেরদের দিকে নিক্ষেপ করে বলেন,شَاهَتِ الْوُجُوْهُ ‘চেহারাগুলো বিকৃত হৌক’।[5] এই এক মুঠো বালু শত্রুপক্ষের প্রত্যেকের দু’চোখে ভরে যায় এবং তারা পালাতে থাকে। ফলে যুদ্ধের গতি স্তিমিত হয়ে যায়। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنْهَزَمُوْا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ ‘মুহাম্মাদের প্রতিপালকের কসম! ওরা পরাজিত হয়েছে’।[6] নিঃসন্দেহে এটা ছিল আল্লাহর গায়েবী মদদ, যা তিনি ফেরেশতাগণের মাধ্যমে সম্পন্ন করেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,ثُمَّ أَنْزَلَ اللهُ سَكِينَتَهُ عَلَى رَسُولِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَنْزَلَ جُنُودًا لَمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُوا وَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ ‘অতঃপর আল্লাহ তাঁর রাসূল ও বিশ্বাসীগণের প্রতি তাঁর বিশেষ প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং এমন সেনাবাহিনী নাযিল করলেন, যাদেরকে তোমরা দেখোনি আর অবিশ্বাসীদের শাস্তি দিলেন। আর এটাই হল অবিশ্বাসীদের কর্মফল’ (তওবা ৯/২৬)।

[1]. বুখারী, ফাৎহুল বারী হা/৪৩১৫; মিশকাত হা/৪৮৯৫, ৫৮৮৯। ছহীহ মুসলিমে আববাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে (হা/১৭৭৫) ফারওয়া আল-জুযামী প্রদত্ত সাদা খচ্চরের কথা বলা হয়েছে। ইবনু সা‘দ সহ অনেক জীবনীকার মুক্বাউক্বিস প্রদত্ত সাদা-কালো ডোরা কাটা ‘দুলদুল’ খচ্চরের কথা বলেছেন। ইবনু হাজার প্রথমটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন (ঐ)।
[2]. আহমাদ হা/১৫০৬৯, সনদ হাসান; গাযালী, ফিক্বহুস সীরাহ তাহকীক আলবানী, ৩৮৯ পৃঃ, সনদ ছহীহ।
[3]. মুসলিম হা/১৭৭৫ ‘হোনায়েন যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ; মিশকাত হা/৫৮৮৮।
[4]. ইবনু হিশাম ২/৪৪৫, সনদ ছহীহ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৭৫০; মুসলিম হা/১৭৭৫।
[5]. মুসলিম হা/১৭৭৭; মিশকাত হা/৫৮৯১ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মু‘জেযা’ অনুচ্ছেদ-৭।
[6]. মুসলিম হা/১৭৭৫; মিশকাত হা/৫৮৮৮।

হোনায়েনে শত্রুপক্ষের শোচনীয় পরাজয়


যুদ্ধের এ দ্বিতীয় পর্যায়ে বনু হাওয়াযেন আর ময়দানে টিকে থাকতে পারেনি। বরং ৭০-এর অধিক লাশ ফেলে যুদ্ধের ময়দান থেকে দ্রুত বেগে পালাতে থাকে। তাদের নেতা মালেক বিন ‘আওফ বড় দলটি নিয়ে স্বীয় স্ত্রী-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ত্বায়েফের দুর্গে আশ্রয় নেন। আরেকটি দল তাদের নারী-শিশু ও গবাদিপশু নিয়ে হোনায়েন ও ত্বায়েফের মধ্যবর্তী ‘আওত্বাস’ উপত্যকায় চলে যায়। আরেকটি দল ‘নাখলার’ দিকে পলায়ন করে।

নারী-শিশু, পলাতক ও নিরস্ত্রদের হত্যার উপর নিষেধাজ্ঞা

যুদ্ধাবস্থায় একটি নারীর লাশ দেখতে পেয়ে রাসূল (ছাঃ) ধিক্কার দিয়ে বলেন,مَا كَانَتْ هَذِهِ لِتُقَاتِلَ ‘নিশ্চয় এ নারী যুদ্ধের জন্য নয়’। এ সময় তিনি খালেদ বিন অলীদকে খবর পাঠান,لاَ يَقْتُلَنَّ امْرَأَةً وَلاَ عَسِيْفًا ‘কোন নারী এবং কোন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে যেন কেউ হত্যা না করে’।[1] এমনিভাবে তিনি শিশুদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেন। যখন তিনি শুনলেন যে, মুশরিকদের সন্তান মনে করে কেউ কেউ তাদের হত্যা করেছে। তিনি বললেন, هَلْ خِيَارُكُمْ إِلاَّ أَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا مِنْ نَسَمَةٍ تُولَدُ إِلاَّ عَلَى الْفِطْرَةِ حَتَّى يُعْرِبَ عَنْهَا لِسَانُهَا ‘তোমাদের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ কি মুশরিকদের সন্তান নন? যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম করে বলছি, প্রত্যেক সন্তানই ফিৎরাতের উপর জন্ম গ্রহণ করে, যতক্ষণ না সে কথা বলতে শেখে’ (আহমাদ হা/১৫৬২৬, ১৬৩৪২)। এতদ্ব্যতীত যারা পালিয়ে গিয়েছিল, তাদের কাউকে রাসূল (ছাঃ) ধমকাননি। বরং যখন আনাস (রাঃ)-এর মা উম্মে সুলায়েম তাঁকে বললেন, মক্কার নও মুসলিম পলাতকদের হত্যা করার জন্য। কারণ তাদের কারণেই পরাজয় হচ্ছিল। তখন জবাবে তিনি বলেন,يَا أُمَّ سُلَيْمٍ إِنَّ اللهَ قَدْ كَفَى وَأَحْسَنَ ‘হে উম্মে সুলায়েম! নিশ্চয়ই আল্লাহ যথার্থ করেছেন ও সুন্দর ফায়ছালা করেছেন’। এ সময় উম্মে সুলায়েম আত্মরক্ষার জন্য দু’ধারি লম্বা অস্ত্র ‘খঞ্জর’ (خَنْجَرٌ) বহন করছিলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কেন? জবাবে তিনি বললেন, কোন মুশরিক কাছে এলে আমি এটা দিয়ে তার পেট ফেঁড়ে ফেলব। তার কথা শুনে রাসূল (ছাঃ) হাসতে থাকেন’ (মুসলিম হা/১৮০৯ (১৩৪)।

প্রথমোক্ত দলের পশ্চাদ্ধাবনের জন্য ১০০০ সৈন্যসহ খালেদ বিন অলীদকে ত্বায়েফে পাঠানো হয়। দ্বিতীয় দলটির জন্য আবু ‘আমের আল-আশ‘আরীকে একটি সেনাদল সহ আওত্বাসে পাঠানো হয়। তিনি তাদের উপরে জয়লাভ করেন। কিন্তু তাদের নিক্ষিপ্ত তীরের আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তৃতীয় দলটির পিছনে যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়ামের নেতৃত্বে একদল অশ্বারোহীকে নাখলায় পাঠানো হয়। যাদের হাতে তারা পরাভূত হয় এবং তাদের প্রবীণ নেতা দুরাইদ বিন ছিম্মাহ নিহত হন। যিনি যুদ্ধে আদৌ ইচ্ছুক ছিলেন না।
[1]. আবুদাঊদ হা/২৬৬৯; ইবনু হিশাম ২/৪৫৭-৫৮।

হোনেয়েনে উভয়পক্ষে হতাহতের সংখ্যা


হোনায়েন যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে শহীদের সংখ্যা ছিল ৪ এবং কাফের পক্ষে নিহতের সংখ্যা ছিল ৭২ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫০৩-০৪)। উক্ত ৪ জন ছিলেন, (১) কুরায়েশ-এর বনু হাশেম থেকে আয়মান বিন উবায়েদ ওরফে আয়মান বিন উম্মে আয়মান (২) বনু আসাদ থেকে ইয়াযীদ বিন যাম‘আহ (৩) আনছারগণের মধ্য থেকে বনু ‘আজলান গোত্রের সুরাক্বাহ ইবনুল হারেছ (৪) আশ‘আরীগণের মধ্য থেকে আবু ‘আমের আল-আশ‘আরী (ইবনু হিশাম ২/৪৫৯)। আহত মুসলিমদের মধ্যে আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, আব্দুল্লাহ বিন আবু আওফা এবং খালেদ বিন অলীদ’।[1]

[1]. সীরাহ ছহীহাহ ২/৫০৩। মানছূরপুরী কাফের পক্ষে ৭১ জন নিহত ও মুসলিম পক্ষে ৬ জন শহীদ বলেছেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২০১)।

হোনায়েন যুদ্ধে বিপুল গণীমত লাভ


বন্দী: ৬০০০ (নারী-শিশুসহ)। উট: ২৪,০০০। দুম্বা-বকরী: ৪০,০০০-এর অধিক। রৌপ্য: ৪০০০ উক্বিয়া। এতদ্ব্যতীত ঘোড়া, গরু, গাধা ইত্যাদির কোন হিসাব পাওয়া যায়নি। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) সব সম্পদ একত্রিত করে ‘জি‘ইর্রানাহ’ (الْجِعِرَّانَة) নামক স্থানে জমা রাখেন এবং মাসঊদ বিন ‘আমর আল-গেফারীকে তার তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করেন। ত্বায়েফ থেকে ফিরে অবসর না হওয়া পর্যন্ত তিনি গণীমত বণ্টন করেননি। বন্দীদের মধ্যে হালীমার কন্যা রাসূল (ছাঃ)-এর দুধ বোন নবতিপর বৃদ্ধা শায়মা বিনতুল হারেছ আস-সা‘দিয়াহ (شَيْمَاءُ بِنْتُ الْحَارِثِ السَّعْدِيَة) ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে চিনতে পেরে নিজের চাদর বিছিয়ে বসতে দিয়ে তাকে সম্মানিত করেন। অতঃপর তাকে তার ইচ্ছানুযায়ী তার কওমের নিকট ফেরৎ পাঠান’।[1]
[1]. ইবনু সা‘দ ২/১১৬; যাদুল মা‘আদ ৩/৪১৫; সীরাহ ছহীহাহ ২/৫০৪, ৫০৬। ইবনু ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, বন্দীনী শায়মার পরিচয় বিশ্বাসযোগ্য মনে না হ’লে তাকে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আনা হয়। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে বলেন, তুমি যে আমার দুধ বোন তার নিদর্শন কি? জবাবে তিনি বলেন, আমার পিঠে তোমার দাঁতের কামড়। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে সেই নিদর্শন দেখে চিনতে পারেন এবং তাকে নিজের চাদর বিছিয়ে বসতে দেন... (ইবনু হিশাম ২/৪৫৮)। বর্ণনাটি ‘মুরসাল’ বা যঈফ (মা শা-‘আ ২০৭-০৮ পৃঃ)। একইভাবে সে সময় তার মা হালীমা সা‘দিয়াহ এসেছিলেন মর্মে বর্ণনাটিও বিশুদ্ধ নয় (হাকেম হা/৭২৯৪; মা শা-‘আ ২০৫ পৃঃ)।

ওয়াদার বাস্তবতা

বস্তুতঃ এটাই ছিল সেই ওয়াদার বাস্তবতা, যে বিষয়ে আল্লাহ বলেছিলেন,

لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللهُ فِيْ مَوَاطِنَ كَثِيْرَةٍ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُدْبِرِيْنَ- ثُمَّ أَنْزَلَ اللهُ سَكِيْنَتَهُ عَلَى رَسُوْلِهِ وَعَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ وَأَنْزَلَ جُنُوْدًا لَمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِيْنَ- ثُمَّ يَتُوْبُ اللهُ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ عَلَى مَنْ يَشَآءُ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ- (التوبة ২৫-২৭)-

‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক স্থানে, বিশেষ করে হোনাইনের দিন। যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের গর্বিত করেছিল। কিন্তু তা তোমাদের কোনই কাজে আসেনি। বরং প্রশস্ত যমীন তোমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। ফলে তোমরা পিঠ ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে’ (২৫)। ‘অতঃপর আল্লাহ স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করেন তাঁর রাসূল ও মুমিনদের উপর এবং নাযিল করেন এমন সেনাদল, যাদের তোমরা দেখোনি এবং কাফেরদের তিনি শাস্তি প্রদান করেন। আর এটি ছিল তাদের কর্মফল’ (২৬)। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, তওবার তাওফীক দেন। বস্ত্ততঃ আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (তওবাহ ৯/২৫-২৭)।

শেষোক্ত আয়াতে যে তওবার কথা বলা হয়েছে, তাতে ইঙ্গিত রয়েছে মুসলিম পক্ষের পলায়নকারীদের প্রতি এবং ইঙ্গিত রয়েছে শত্রুপক্ষের তরুণ নেতা মালেক বিন ‘আওফ ও তার সাথীদের প্রতি, যারা পরে সবাই ইসলাম কবুল করে ফিরে আসেন। - ফালিল্লাহিল হাম্দ।

হোনায়েন সংশ্লিষ্ট যুদ্ধসমূহ

সারিইয়া আওত্বাস

৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস। হোনায়েন যুদ্ধে পরাজিত মুশরিকদের একটি দল পার্শ্ববর্তী আওত্বাসে গিয়ে আশ্রয় নিলে আবু ‘আমের আল-আশ‘আরীর নেতৃত্বে একটি সেনাদল তাদের ধাওয়া করে তাদেরকে সেখান থেকে হটিয়ে দেয়। কিন্তু দলনেতা আবু ‘আমের শহীদ হন।[1]

মৃত্যুকালে তিনি ভাতিজা আবু মূসা আশ‘আরীকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করেন। অতঃপর তাকে অছিয়ত করেন, যেন রাসূল (ছাঃ)-কে তার সালাম পৌছে দেন এবং তাঁর কাছে তার জন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেন। সে মতে আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ)-এর আবেদনক্রমে তার শহীদ চাচা আবু ‘আমের আশ‘আরীর জন্য রাসূল (ছাঃ) ওযূ করে ক্বিবলামুখী হয়ে একাকী দু’হাত তুলে আল্লাহর নিকট দো‘আ করেন। এসময় আবু মূসার আবেদনক্রমে তার জন্যেও তিনি দো‘আ করেন’ (বুখারী হা/৪৩২৩ ‘আওত্বাস যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ)।

সারিইয়া নাখলা

৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস। হোনায়েন যুদ্ধে পরাজিত পলাতকদের আরেকটি দল নাখলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়। তাদের বিরুদ্ধে যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়ামের নেতৃত্বে একটি সেনাদল প্রেরিত হয়। সেখানে মুশরিকদের বয়োবৃদ্ধ ও দূরদর্শী নেতা দুরায়েদ বিন ছিম্মাহ(دُرَيْدُ بْنُ الصِّمَّةِ) নিহত হন ও অন্যেরা পালিয়ে যায়। উক্ত বৃদ্ধ নেতা তাদের তরুণ নেতা মালেক বিন ‘আওফকে হোনায়েন যুদ্ধ থেকে নিষেধ করেছিলেন।[2]

সারিইয়া তোফায়েল বিন ‘আমর দাওসী


৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস। হোনায়েন যুদ্ধের পর ত্বায়েফ যাত্রাকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তোফায়েল বিন ‘আমর দাওসীকে ‘আমর বিন হুমামাহ দাওসী গোত্রের ‘যুল-কাফফাইন’(ذُو الْكَفَّيْنِ) মূর্তি ধ্বংস করার জন্য পাঠান এবং তাকে নির্দেশ দেন যেন তার কওমের নিকট সাহায্য চায় ও তাদেরকে ত্বায়েফে নিয়ে আসে। অতঃপর তিনি সেখানে দ্রুত গমন করেন ও ‘যুল-কাফফাইন’ মূর্তি ধ্বংস করে দেন। তিনি তার মুখে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেন ও কবিতা পাঠ করেন।

يَا ذَا الْكَفّيْنِ لَسْتُ مِنْ عُبَّادِكَا + مِيلَادُنَا أَقْدَمُ مِنْ مِيلَادِكَا+إنّي حَشَشْتُ النّارَ فِي فُؤَادِكَا

‘হে যুল-কাফফাইন! আমি তোমার পূজারীদের মধ্যে নই’। ‘আমাদের জন্ম তোমার জন্মের অনেক পূর্বে’। ‘আমি তোমার কলিজায় আগুন দিলাম’।

অতঃপর তাদের ৪০০ দ্রুতগামী লোককে নিয়ে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর ত্বায়েফ অবতরণের চার দিন পর সেখানে পৌঁছে যান।[3]

গাযওয়া ত্বায়েফ


৮ম হিজরীর শাওয়াল মাস। হোনায়েন যুদ্ধে শত্রুপক্ষের নেতা মালেক বিন ‘আওফ সহ পরাজিত ছাক্বীফ গোত্রের প্রধান অংশটি পালিয়ে গিয়ে ত্বায়েফের দুর্ভেদ্য দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথমে খালিদের নেতৃত্বে ১০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী প্রেরিত হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিজে গমন করেন ও ত্বায়েফের দুর্গ অবরোধ করেন। এই অবরোধ ১০ থেকে ১৫ দিন স্থায়ী হয়। এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ১২ জনের অধিক শহীদ হন ও অনেকে আহত হন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে ফিরে আসেন। ৯ম হিজরী সনে তারা মদীনায় এসে ইসলাম কবুল করে’ (ইবনু হিশাম ২/৪৭৮-৮৭, ২/৫৩৭-৪১)। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।

এটি ছিল মূলতঃ হোনায়েন যুদ্ধেরই বর্ধিত অংশ। হোনায়েন যুদ্ধ হতে পালিয়ে যাওয়া সেনাপতি মালেক বিন ‘আওফ নাছরী তার দলবল নিয়ে ত্বায়েফ দুর্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তার পশ্চাদ্ধাবনের জন্য এক হাযার সৈন্যসহ খালেদ বিন অলীদকে পাঠানো হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হোনায়েন-এর গণীমত সমূহ জি‘ইর্রানাহতে জমা করে রেখে নিজেই ত্বায়েফ অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যান। পথিমধ্যে তিনি নাখলা ইয়ামানিয়াহ, ক্বারনুল মানাযিল, লিয়াহ (لِيَة) প্রভৃতি অঞ্চল অতিক্রম করেন এবং লিয়াহতে অবস্থিত মালেক বিন ‘আওফের একটি সেনাঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেন। অতঃপর ত্বায়েফ গিয়ে দুর্গের নিকটবর্তী স্থানে শিবির স্থাপন করেন। এই স্থানটি বর্তমানে ‘মসজিদে আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)’ নামে পরিচিত। ঐ সময় ত্বায়েফ শহরটি ছিল এই মসজিদের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। বর্তমানে এটি শহরের অন্তর্ভুক্ত। অতঃপর তিনি দুর্গ অবরোধ করেন। যার সময়কালে মতভেদ থাকলেও বিশ্বস্ত মতে ১০ থেকে ১৫ দিন ছিল। কেননা রাসূল (ছাঃ) যুলক্বা‘দাহ মাসের ৬ দিন বাকী থাকতে মদীনায় পৌঁছেছিলেন (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫০৭-০৮)। অবরোধের প্রথম দিকে দুর্গের মধ্য হতে বৃষ্টির মত তীর নিক্ষিপ্ত হয়। তাতে মুসলিম বাহিনীর অনেকে হতাহত হন। পরে তাদের উপরে কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়, যা খায়বর যুদ্ধের সময় মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল। শত্রুরা পাল্টা উত্তপ্ত লোহার খন্ড নিক্ষেপ করে। তাতেও বেশ কিছু মুসলমান শহীদ হন।

এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ হতে একটি ঘোষণা প্রচার করা হয় যে,مَنْ خَرَجَ إلَيْنَا مِنَ الْعَبِيْدِ فَهُوَ حُرٌّ ‘যেসব গোলাম আমাদের নিকটে এসে আত্মসমর্পণ করবে, সে মুক্ত হয়ে যাবে’। এই ঘোষণায় ভাল ফল হয়। একে একে ২৩ জন ক্রীতদাস দুর্গ প্রাচীর টপকে বেরিয়ে আসে এবং সবাই মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে যায়।[4] এদের মধ্যকার একজন ছিলেন বিখ্যাত ছাহাবী হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ)। নারী নেতৃত্বের অকল্যাণ সম্পর্কিত ছহীহ বুখারীতে বর্ণিত হাদীছের যিনি বর্ণনাকারী। যেখানে রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَنْ يُفْلِحَ قَوْمٌ وَلَّوْا أَمْرَهُمُ امْرَأَةً ‘ঐ জাতি কখনোই সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসন ক্ষমতা নারীর হাতে সমর্পণ করেছে’।[5] ‘আবু বাকরাহ’ নামটি ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর দেওয়া উপনাম। কেননা বাকরাহ (بَكْرَة) অর্থ কূয়া থেকে পানি তোলার চাক্কি। যার সাহায্যে তিনি দুর্গপ্রাচীর থেকে বাইরে নামতে সক্ষম হয়েছিলেন। পরে তার মনিবের পক্ষ থেকে তাকে ফেরৎ দানের দাবী করা হলে রাসূল (ছাঃ) বলেন, هُوَ طَلِيْقُ اللهِ وَطَلِيْقُ رَسُوْلِهِ ‘সে আল্লাহর মুক্তদাস এবং তাঁর রাসূলের মুক্তদাস’।[6]

গোলামদের পলায়ন দুর্গবাসীদের জন্য ক্ষতির কারণ হলেও আত্মসমর্পণের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। কেননা তাদের কাছে এক বছরের জন্য খাদ্য ও পানীয় মওজুদ ছিল। উপরন্তু তাদের নিক্ষিপ্ত তীর ও উত্তপ্ত লৌহখন্ডের আঘাতে মুসলমানদের ক্ষতি হতে লাগল। এ সময় রাসূল (ছাঃ) বলেন, مَنْ بَلَغَ بِسَهْمٍ فَلَهُ دَرَجَةٌ فِى الْجَنَّةِ ‘যে ব্যক্তি তীরের আঘাতে শহীদ হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে উঁচু সম্মান পাবে’।[7] এতে মুসলিম বাহিনীর জোশ আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু দুর্গবাসীদের আত্মসমর্পণের কোন নমুনা পাওয়া গেল না।

এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সকলকে ফিরে আসার আহবান জানালে কেউ রাযী হয়নি। কিন্তু পরে কিছু লোক আহত হওয়া ব্যতীত কোন ফল না হওয়ায় তারা অবরোধ উঠিয়ে ফিরে আসতে রাযী হয়। এ সময় রাসূল (ছাঃ)-কে বলা হল, আপনি বনু ছাক্বীফদের উপরে বদ দো‘আ করুন। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) তাদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করে বললেন,اللَّهُمَّ اهْدِ ثَقِيْفًا وَأْتِ بِهِمْ ‘হে আল্লাহ! তুমি ছাক্বীফদের হেদায়াত কর এবং তাদেরকে নিয়ে এসো’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১১)।[8] রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আ কবুল হয়েছিল এবং সেনানায়ক মালেক বিন ‘আওফসহ গোত্র নেতা ‘আব্দে ইয়ালীল-এর নেতৃত্বে হাওয়াযেন ও ছাক্বীফ গোত্রের সবাই ৯ম হিজরীর রামাযানে মাত্র ১১ মাসের মাথায় মদীনায় এসে ইসলাম কবুল করেন। তাদের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ওরওয়া বিন মাসঊদ জি‘ইর্রানাহ থেকে মদীনায় পৌঁছার পূর্বেই রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে পথে সাক্ষাৎ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে ত্বায়েফে ফিরে আসেন’ (সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১৭)।

উল্লেখ্য যে, এই সেই ত্বায়েফ, যেখানে দশম নববী বর্ষে মে-জুন মাসের প্রচন্ড দাবদাহে মক্কা থেকে প্রায় ৯০ কি. মি. পথ পায়ে হেঁটে এসে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ছাক্বীফ নেতাদের কাছে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন। বিনিময়ে তাদের নিকট থেকে পেয়েছিলেন তাচ্ছিল্য, কটু-কাটব্য এবং লাঞ্ছনাকর দৈহিক নির্যাতন। অথচ আজ শক্তি থাকা সত্ত্বেও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিলেন এবং হেদায়াতের দো‘আ করলেন। বস্তুতঃ এটাই হ’ল ইসলাম!

[1]. ইবনু হিশাম ২/৪৫৪; বুখারী হা/৪৩২৩। মানছূরপুরী বা মুবারকপুরী কেউ এটিকে পৃথকভাবে ধরেননি।
[2]. ইবনু হিশাম ২/৪৫৩। মানছূরপুরী বা মুবারকপুরী কেউ এটিকে পৃথকভাবে ধরেননি।
[3]. যাদুল মা‘আদ ৩/৪৩৩-৩৪; ইবনু হিশাম ১/৩৮৫; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৮৭০।
[4]. আহমাদ হা/২২২৯, সনদ হাসান লেগাইরিহী -আরনাঊত্ব।
[5]. বুখারী হা/৪৪২৫। পারস্যরাজের ঐ কন্যার নাম ছিল বূরান

পারস্য সাম্রাজ্য ধ্বংসের কাহিনী

ঘটনা ছিল এই যে, শীরাওয়াইহ তার পিতা পারস্যরাজ কিসরাকে হত্যা করে সিংহাসন দখল করেন। পূর্বেই সেটা বুঝতে পেরে পিতা একটি ছোট ডিববা প্রস্ত্তত করেন। যার গায়ে লিখে রাখেন ‘যৌন উদ্দীপক ঔষধ’(حُقُّ الْجِمَاعِ)। যে ব্যক্তি এখান থেকে পান করবে, তার উত্তেজনা বৃদ্ধি পাবে। ডিববাটি তিনি বিষ ভর্তি অবস্থায় তাঁর বিশেষ মালখানায় রেখে দেন। উদ্দেশ্য ছিল আমি নিহত হওয়ার পর ছেলে এটি থেকে খেয়ে দ্রুত মৃত্যুবরণ করবে। সেটিই হল। ছেলে তা থেকে খেল এবং মাত্র ৬ মাসের মধ্যে মারা গেল। ইতিমধ্যেই সে তার ক্ষমতাকে নিরংকুশ করার জন্য তার ভাইদের হত্যা করল। এক্ষণে তার মৃত্যুর পর কোন পুরুষ উত্তরাধিকারী না থাকায় লোকেরা তার কন্যা বূরানকে ক্ষমতায় বসায়। যা পরবর্তীতে পারস্য সাম্রাজ্যের ধ্বংস ত্বরান্বিত করে। পারস্য রাজ কিসরা রাসূল (ছাঃ)-এর প্রেরিত পত্র ছিঁড়ে ফেললে তিনি বদদো‘আ করেছিলেন, اللَّهُمَّ مَزِّقْ مُلْكَهُ ‘আল্লাহ তার সাম্রাজ্যকে ছিন্নভিন্ন করুন’ (ছহীহাহ হা/১৪২৯)। বাস্তবে সেটাই হয়ে গেল। পারস্য সাম্রাজ্য ইতিহাস থেকে মুছে গেল (ফাৎহুল বারী হা/৪৪২৫-এর আলোচনা)। যা আর কখনোই ফিরে আসেনি।

[6]. আহমাদ হা/১৭৫৬৫, সনদ ছহীহ; যাদুল মা‘আদ ৩/৪৪১।
[7]. আহমাদ হা/১৭০৬৩ সনদ ছহীহ। প্রসিদ্ধ আছে যে, এ সময় রাসূল (ছাঃ) নওফাল বিন মু‘আবিয়া দীলীর (نَوفَلُ بنُ مُعاوِيَةَ الدِّيلِيُّ) নিকটে পরামর্শ চাইলেন। তিনি তাকে পরামর্শ দিয়ে বললেন, ثَعْلَبٌ فِي جُحْرٍ إنْ أَقَمْتَ عَلَيْهِ أَخَذْتَهُ وَإِنْ تَرَكْتَهُ لَمْ يَضُرَّكَ، ‘ওরা গর্তের শিয়াল। যদি আপনি এভাবে দন্ডায়মান থাকেন, তবে ধরে ফেলতে পারবেন। আর যদি ছেড়ে যান, তাহলে ওরা আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না’ (যাদুল মা‘আদ, ৩/৪৩৫; সনদ অত্যন্ত যঈফ, আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ ৩৯৭ পৃঃ; আর-রাহীক্ব, পৃঃ ৪১৯; ঐ, তা‘লীক্ব ১৭৬ পৃঃ; মা শা-‘আ ২০৫ পৃঃ)।

(২) প্রসিদ্ধ আছে যে, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওমর (রাঃ)-এর মাধ্যমে পরদিন মক্কায় প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা জারী করে দিলেন। কিন্তু এতে ছাহাবীগণ সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তারা বললেন, বিজয় অসমাপ্ত রেখে আমরা কেন ফিরে যাব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঠিক আছে। কাল তাহলে আবার যুদ্ধ শুরু কর’। ফলে তারা যুদ্ধে গেলেন। কিন্তু কিছু লোক আহত হওয়া ব্যতীত কোন লাভ হল না। এবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, إِنَّا قَافِلُونَ غَدًا إِنْ شَاءَ اللهُ ‘আগামীকাল আমরা রওয়ানা হচ্ছি ইনশাআল্লাহ’। এবারে আর কেউ দ্বিরুক্তি না করে খুশী মনে প্রস্তুতি নিতে লাগল। এ দৃশ্য দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসতে লাগলেন (আর-রাহীক্ব ৪১৯ পৃঃ)। বর্ণনাটি যঈফ (ঐ, তা‘লীক্ব ১৭৬ পৃঃ)।

[8]. আহমাদ হা/১৪৭৪৩, সনদ শক্তিশালী, -আরনাঊত্ব; তিরমিযী হা/৩৯৪২, আলবানী বলেন, হাদীছটির সনদ মুসলিমের শর্তানুযায়ী। কিন্তু এটি আবুয্ যুবায়ের সূত্রে বর্ণিত যিনি ‘মুদাল্লিস’ -মিশকাত হা/৫৯৮৬-এর টীকা, ‘মানাক্বিব’ অধ্যায়-৩০, অনুচ্ছেদ-১। সেকারণ এটি যঈফ (আলবানী, দিফা‘ ‘আনিল হাদীছ ৩৪ পৃঃ; ফিক্বহুস সীরাহ ৪৩২ পৃঃ)।

হতাহতের সংখ্যা
ত্বায়েফ যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ১২ জন শহীদ হন এবং অনেক সংখ্যক আহত হন। কাফেরদের পক্ষে ৩ জন নিহত হয়।[1]
[1]. সীরাহ ছহীহাহ ২/৫১০।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url