প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৬৩] || মহানবীর জীবনী ||







রাসূল (ছাঃ) এর জীবন ও কর্মের পর্যালোচনা এবং কুরআন ও হাদীছ দু’টি জীবন্ত মু‘জেযা
(প্রথম অংশ)

[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]

রাসূল (ছাঃ) এর জীবন ও কর্মের পর্যালোচনা

অতি বড় দুশমনও রাসূল (ছাঃ)-কে কখনো অসৎ বলেনি। কিন্তু তারা কুরআনী বিধানকে মানতে রাযী হয়নি। স্বেচ্ছাচারিতায় অভ্যস্ত পুঁজিবাদী গোত্রনেতারা ইসলামের পুঁজিবাদ বিরোধী ও ন্যায়বিচারভিত্তিক অর্থনীতি, মানবিক সমাজনীতি এবং আখেরাতভিত্তিক জীবন নীতিকে মেনে নিতে পারেনি। আর সে কারণেই তো আবু জাহল রাসূল (ছাঃ)-কে বলেছিল, إِنَّا لاَ نُكَذِّبُكَ وَلَكِنْ نُكَذِّبُ بِمَا جِئْتَ بِهِ ‘আমরা তোমাকে মিথ্যা বলি না। বরং তুমি যে ইসলাম নিয়ে এসেছ, তাকে মিথ্যা বলি’। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়,

فَإِنَّهُمْ لاَ يُكَذِّبُوْنَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِيْنَ بِآيَاتِ اللهِ يَجْحَدُوْنَ- (الأنعام 33)-

‘বস্তুতঃ ওরা তোমাকে মিথ্যা বলে না। বরং এইসব যালেমরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে’ (আন‘আম ৬/৩৩)।[1]

বাতিলপন্থীরা চিরকাল ন্যায় ও সত্যকে ভয় পায়। তাই মক্কার মুশরিক নেতারা কুরআনকে সত্য বলে স্বীকার করার পরেও রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে কুরআন পরিবর্তনের দাবী করেছিল। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِيْنَ لاَ يَرْجُوْنَ لِقَاءنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَـذَا أَوْ بَدِّلْهُ قُلْ مَا يَكُوْنُ لِيْ أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاء نَفْسِيْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوْحَى إِلَيَّ إِنِّيْ أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّيْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ- (يونس ১৫)-

‘আর যখন তাদের কাছে আমাদের স্পষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন যারা আমাদের সাক্ষাৎ কামনা করে না তারা বলে যে, এটি ব্যতীত অন্য কুরআন নিয়ে এসো অথবা এটাকেই পরিবর্তন কর। তুমি বলে দাও যে, নিজের পক্ষ থেকে এতে পরিবর্তন আনার কোন সাধ্য আমার নেই। আমি তো কেবল সেটারই অনুসরণ করি যা আমার নিকটে অহী করা হয়। আমি যদি আমার পালনকর্তার অবাধ্যতা করি, তাহ’লে আমি ভয়ংকর দিবসের শাস্তির আশংকা করি’ (ইউনুস ১০/১৫)।

আল্লাহ তাঁর রাসূলকে বলেন, إِنَّكَ لَعَلَى هُدًى مُسْتَقِيمٍ ‘নিশ্চয়ই তুমি সরল পথের উপরে আছ’ (হজ্জ ২২/৬৭)।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পুরা জীবন ছিল কুরআনের বাস্তব চিত্র। সেকারণ একদা মা আয়েশাকে রাসূল (ছাঃ)-এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ ‘তাঁর চরিত্র ছিল কুরআন’।[2] অর্থাৎ তিনি ছিলেন কুরআনের বাস্তব রূপকার। হাদীছের পাতায় পাতায় যার দৃষ্টান্ত সমূহ স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। কুরআন ও হাদীছ তাই মুসলিম জীবনের চলার পথের একমাত্র আলোকবর্তিকা। আল্লাহ আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবন চরিত যথাযথভাবে অনুসরণের তাওফীক দান করুন। আমীন!

[1]. তিরমিযী হা/৩০৬৪; মিশকাত হা/৫৮৩৪, সনদ মুরসাল।
[2]. আহমাদ হা/২৫৩৪১, ২৫৮৫৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৮১১।

কুরআন ও হাদীছ দু’টি জীবন্ত মু‘জেযা


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনে আমরা বহু মু‘জেযার কথা জেনেছি। যার সবই ছিল তাঁর জীবদ্দশায় এবং তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে সেগুলির বিলুপ্তি ঘটেছে। যেমন পূর্বের নবীগণের বেলায় ঘটেছে। তাওরাত, যবূর, ইনজীল প্রভৃতি পূর্বেকার কিতাব সমূহ পরিবর্তিত ও বিকৃত হয়ে গেছে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ)-এর ইন্তেকালের পরেও যে মু‘জেযা জীবন্ত হয়ে আছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে, তা হ’ল তাঁর আনীত কালামুল্লাহ আল-কুরআনুল হাকীম। বিশ্ব মানবতার চিরন্তন পথপ্রদর্শক হিসাবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যা দুনিয়াবাসীর জন্য তাঁর শেষনবীর মাধ্যমে প্রেরণ করেছেন। যতদিন মানুষ ঐ আলোক স্তম্ভ থেকে আলো নিবে, ততদিন তারা পথভ্রষ্ট হবে না। যা মানব জাতির আমানত হিসাবে রক্ষিত আছে এবং চিরকাল থাকবে। যতদিন পৃথিবী থাকবে, মানবজাতি থাকবে, ততদিন কুরআন থাকবে অবিকৃত ও অক্ষুণ্ণভাবে। একে বিকৃত করার বা বিলুপ্ত করার ক্ষমতা কারু হবে না। রাসূল (ছাঃ)-এর ২৩ বছরের নবুঅতী জীবনের বাঁকে বাঁকে বাস্তবতার নিরিখে আসমানী তারবার্তা হিসাবে কুরআন নাযিল হয়েছে পরম্পরাগতভাবে। নুযূলে কুরআনের শুরু থেকে নবুঅতের শুরু এবং নুযূলে কুরআনের সমাপ্তিতে নবী জীবনের সমাপ্তি। তাই নবীচরিত আলোচনায় কুরআনের আলোচনা অবশ্যম্ভাবীরূপে এসে পড়ে। শেষনবী (ছাঃ) চলে গেছেন। রেখে গেছেন কুরআন। কিন্তু কি আছে সেখানে? এক্ষণে আমরা কুরআনের পরিচয় ও বৈশিষ্ট্যাবলী সংক্ষেপে তুলে ধরার প্রয়াস পাব।

কুরআনের পরিচয়

কুরআনের মূল পরিচয় হ’ল এই যে, এটি ‘কালামুল্লাহ’ (كَلاَمُ اللهِ) বা আল্লাহর কালাম। যা সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে।[1] সৃষ্টিজগত দুনিয়াবী চোখে কখনোই তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে দেখতে পাবে না (আন‘আম ৬/১০৩)। তবে তাঁর ‘কালাম’ দেখে, পড়ে, শুনে ও বুঝে হেদায়াত লাভ করতে পারবে। কুরআনের ভাব ও ভাষা, এর প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্য আল্লাহর। জিব্রীল ছিলেন বাহক[2] এবং রাসূল (ছাঃ) ছিলেন এর প্রচারক ও ব্যাখ্যাতা।[3] কুরআন লওহে মাহফূযে (সুরক্ষিত ফলকে) লিপিবদ্ধ ছিল’ (বুরূজ ৮৫/২১-২২)। সেখান থেকে আল্লাহর হুকুমে ক্রমে ক্রমে নাযিল হয়েছে।[4]

শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের পর বিগত সকল নবীর নবুঅত শেষ হয়ে গিয়েছে এবং কুরআন অবতরণের পর বিগত সকল ইলাহী কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গেছে। ঈসা (আঃ) সহ বিগত সকল নবীই শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন (ছফ ৬১/৬) এবং তাঁরা শেষনবীর আমল পেলে তাঁকে সর্বান্তঃকরণে সাহায্য করবেন বলে আল্লাহর নিকটে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলেন (আলে ইমরান ৩/৮১)। এমনকি তওরাত ও ইনজীলে সর্বশেষ উম্মী নবীর আগমনের সুসংবাদ লিপিবদ্ধ ছিল (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। সে হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ) কেবল আখেরী যামানার নবী নন, বরং তিনি ছিলেন বিগত সকল নবীর নবী। অনুরূপভাবে তাঁর আনীত কিতাব ও শরী‘আত বিগত সকল কিতাব ও শরী‘আতের সত্যায়নকারী[5] এবং পূর্ণতা দানকারী (মায়েদাহ ৫/৩)। অতএব কুরআন বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র ইলাহী কিতাব এবং সকল মানুষের জন্য একমাত্র পথপ্রদর্শক ইলাহী গ্রন্থ।

এর সর্বাধিক প্রসিদ্ধ নাম হ’ল ‘কুরআন’। যার অর্থ ‘পরিপূর্ণ’ যেমন বলা হয়, قَرَأتِ الْحَوْضُ ‘হাউয কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে’। সমস্ত জ্ঞানের ভান্ডার পূর্ণভাবে সঞ্চিত হওয়ার কারণে কালামুল্লাহকে ‘কুরআন’ বলা হয়েছে। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) একথা বলেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৪১)। আল্লাহ বলেন, وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلاً ‘তোমার প্রভুর কালাম সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ’ (আন‘আম ৬/১১৫)। অর্থাৎ কুরআনের প্রতিটি কথাই সত্য এবং প্রতিটি বিধানই ন্যায় ও ইনছাফপূর্ণ। ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ এই কিতাবে কোনরূপ ত্রুটি বা সন্দেহ নেই (বাক্বারাহ ২/২)। কুরআন ব্যতীত পৃথিবীতে এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, যা তার শুরুতেই নিজেকে সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে।

[1]. ছহীহ ইবনু হিববান হা/৭৭৪; নিসা ৪/৮২; আন‘আম ৬/১১৫; আ‘রাফ ৭/৩৫; হামীম সাজদাহ ৪১/৪২; ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৭৭-৮২; হাক্কাহ ৬৯/৪৩; দাহর ৭৬/২৩।
[2]. বাক্বারাহ ২/৯৭; শু‘আরা ২৬/১৯৪; তাকভীর ৮১/১৯।
[3]. মায়েদাহ ৫/৬৭; নাহল ১৬/৪৪, ৬৪।
[4]. আলে ইমরান ৩/৩; ইসরা ১৭/১০৬; ফুরক্বান ২৫/৩২; যুমার ৩৯/২৩।
[5]. বাক্বারাহ ২/৪১, ৯১, ৯৭; আলে ইমরান ৩/৩, ৫০; নিসা ৪/৪৭; মায়েদাহ ৫/৪৮; ফাত্বের ৩৫/৩১; আহক্বাফ ৪৬/৩০।

কুরআনের মু‘জেযা হওয়ার প্রমাণ সমূহ

কুরআনের অপরিবর্তনীয়তা

কুরআন তার অবতরণকাল থেকে এযাবত একইভাবে অপরিবর্তিত অবস্থায় রয়েছে। দেড় হাযার বছর পূর্বে যে কুরআন পাঠ করা হ’ত, এখনো সেই কুরআনই পাঠ করা হয়। যার একটি শব্দ ও বর্ণ পরিবর্তিত হয়নি বা মুছে যায়নি। অথচ তাওরাত, যবূর, ইনজীল প্রভৃতির মূল গ্রন্থের অস্তিত্ব দুনিয়াতে নেই।

কুরআনের বিশ্বময়তা

যে রাতে নুযূলে কুরআনের সূচনা হয়, সে রাতে একজনই মাত্র শ্রোতা ছিলেন সৌভাগ্যবতী নারী হযরত খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ)। অথচ সেই কুরআন ক্রমে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। আজ পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে কোটি কোটি মানবসন্তান পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতে ও ছালাতের বাইরে কুরআনের কিছু না কিছু অংশ হরহামেশা পাঠ করে থাকে। কুরআন বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ হিসাবে সমাদৃত। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, সূরা ফাতিহা প্রতিদিন যতবার পাঠ করা হয়, বিশ্বের কোন ভাষার কোন পাঠ্যাংশের সেই সৌভাগ্য আজ পর্যন্ত হয়নি’। অনেক খ্রিষ্টান দার্শনিকের মতে ২০৫০ সালের মধ্যেই ইসলাম বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করবে’।[1] কুরআনই যে তার প্রধান কারণ তা বলাই বাহুল্য।
[1]. দৈনিক আমার দেশ, ঢাকা, ৮ জানুয়ারী’২০০৮, লেখক : মামুনুর রশীদ।

কুরআন নিজ ভাষাতেই পঠিত

যে আরবী ভাষাতে কুরআন নাযিল হয়েছে, সেই ভাষাতেই কুরআন সর্বত্র পঠিত হয়। খ্রিষ্টানরা বাইবেলের কথিত অনুবাদ পাঠ করে থাকে। তাও পাঠকারীর সংখ্যা অতি নগণ্য। যেকারণে বিশিষ্ট ইভানজেলিষ্ট জর্জ গ্যালাপের মতে, ‘আমেরিকানরা হ’ল বাইবেল অন্ধ জাতি’ (দৈনিক আমার দেশ)। অর্থাৎ আসল বাইবেল সম্পর্কে তারা অন্ধ। যা কখনোই তারা দেখেনি। বস্ত্ততঃ তওরাত, যবূর, ইনজীল প্রভৃতি ইলাহী গ্রন্থ যে ভাষায় নাযিল হয়েছিল, সেই ভাষা বা বর্ণমালা এমনকি বেদ, যিন্দাবেস্তা প্রভৃতির ভাষা ও বর্ণমালা এবং সেসবের ভাষাভাষী কোন মানুষের অস্তিত্ব বর্তমান পৃথিবীতে নেই। পক্ষান্তরে আরবী ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা পৃথিবীতে কোটি কোটি এবং তা ক্রমবর্ধমান। আরবী বর্তমানে জাতিসংঘের ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে বরিত।

উল্লেখ্য যে, হিব্রু (الْعِبْرَانِى) যা তওরাতের ভাষা ছিল, খালেদী (خَالِدِي) যা মসীহ ঈসার ভাষা ছিল, দুররাই (دُرَّي) যা যিন্দাবিস্তার ভাষা ছিল, সংস্কৃত (سَنْسكِرِت) যা বেদ-এর ভাষা ছিল, তা পৃথিবীর কোন দেশ এমনকি কোন যেলা বা মহল্লাতেও জনগণের মুখের ভাষা হিসাবে এখন চালু নেই। আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঐসব ভাষা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু রেখে দেওয়া হয়েছে আরবী ভাষাকে। যা কুরআন-হাদীছের স্বার্থে ক্বিয়ামত পর্যন্ত জীবন্ত থাকবে। উল্লেখ্য যে, বাইবেলের যে ‘নতুন নিয়ম’ (New Testament) পাওয়া যায়, তাতে লেখা আছে Translated out of the original Greek known as the authorised version (মূল গ্রীক থেকে অনূদিত। যা অনুমোদিত ভাষান্তর হিসাবে পরিচিত)। এতে বুঝা যায় যে, বাইবেলের আরও version আছে। যা কোন কারণ বশতঃ অনুমোদিত হয়নি। দ্বিতীয়তঃ বর্তমান বাইবেল গ্রীক ভাষা থেকে অনূদিত। কিন্তু প্রশ্ন হ’ল ঈসা (আঃ) তো গ্রীসের বাসিন্দা ছিলেন না। তার মাতৃভাষাও গ্রীক ছিল না। তিনি ফিলিস্তীনে জন্ম গ্রহণ করেন ও নিজ এলাকায় প্রচলিত খালেদী ভাষায় তিন বছর ধর্ম প্রচার করেন। তাহ’লে ইনজীলের মূল ভাষা গ্রীক হ’ল কিভাবে?

আধুনিক সেক্যুলারিজমের কুপ্রভাব কুরআনের প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কমাতে পারেনি। কেননা কুরআনের ভাষা সরাসরি আল্লাহর ভাষা। এটি হ’ল জান্নাতের ভাষা। কুরআনের প্রতিটি বাক্য, শব্দ ও বর্ণ আল্লাহর নূরে আলোকিত। যা বিশ্বাসী মুসলমানের হৃদয় জগতকে আলোকিত করে। জাহেলিয়াতের গাঢ় অন্ধকার দূরীভূত করে। বিষাদিত অন্তরকে আমোদিত করে। জর্জরিত অন্তরকে সুশীতল করে। মুমিনের হৃদয়ে কুরআনের প্রভাব তাই অতুলনীয় ও অনির্বচনীয়। যার প্রতি হরফে মুসলমান কমপক্ষে দশটি করে নেকী পায়। যা তার পরকালকে সমৃদ্ধ করে। মানছূরপুরীর হিসাব মতে কুরআনের সর্বমোট হরফের সংখ্যা ৩,৪৬,৯৯৮টি (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৭৬)। বিশিষ্ট কুরআন গবেষক কনস্ট্যান্স প্যাডউইক তাই বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, ‘কুরআন তার অনুসারীদের অন্তরে জাগ্রত। তাদের কাছে এটি নিছক কিছু শব্দ বা কথামালা নয়। এগুলি আল্লাহর নূরে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিশিখার জ্বালানী’ (দৈনিক আমার দেশ)। তুরস্কের প্রথম ধর্মনিরপেক্ষ শাসক কামাল পাশা অতি উৎসাহী হয়ে আরবী আযান বাতিল করে তুর্কী আযান চালু করেন। পরে জনরোষে পড়ে পুনরায় আরবী আযান চালু করতে বাধ্য হন।

কুরআনের হেফাযতকারী আল্লাহ

কুরআন একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ যার হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন। তিনি বলেন, إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُوْنَ ‘আমরা কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরাই এর হেফাযতকারী (হিজর ১৫/৯)। তিনি বলেন, إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ، فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ، ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ ‘এর সংরক্ষণ ও পঠন-পাঠন আমাদেরই দায়িত্বে’। ‘সুতরাং যখন আমরা তা (জিব্রীলের মাধ্যমে) পাঠ করাই, তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর’। ‘অতঃপর এর ব্যাখ্যা করা (হাদীছ) আমাদেরই দায়িত্বে’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৭-১৯)। অতএব আল্লাহ কেবল কুরআন ও হাদীছের হেফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাই তা ক্বিয়ামত অবধি টিকে থাকবে। কিন্তু অন্যান্য এলাহী গ্রন্থের দায়িত্ব আল্লাহ নেননি। তাই সেসব হারিয়ে গেছে এবং যেতে বাধ্য।

কুরআন সকল জ্ঞানের উৎস

কুরআন যারা মানেন এবং যারা মানেন না, সকলে কুরআনের বিভিন্নমুখী হেদায়াত থেকেই আলো নিয়েছেন। বরং আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎসই হ’ল কুরআন। অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের এই বৈশিষ্ট্য নেই। বিজ্ঞানীদের মতে কুরআনের প্রতি ১১টি আয়াত বিজ্ঞান বহন করে। এর দ্বারা তারা হয়ত কেবল বস্ত্তগত বিজ্ঞান সমূহের হিসাব করেছেন। কিন্তু এছাড়াও সেখানে রয়েছে সমাজ বিজ্ঞান, অধ্যাত্ম বিজ্ঞান, ভাষা বিজ্ঞান, সমর বিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ও নভো বিজ্ঞান প্রভৃতি। তাছাড়া রয়েছে জীবনের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখাগত বিষয়ক বিজ্ঞান। সে হিসাবে কুরআনের প্রতিটি আয়াতই বিজ্ঞান বহন করে। কুরআনী বিজ্ঞানের চর্চা করেই মুসলমানেরা কয়েক শতাব্দীব্যাপী বিশ্ব বিজ্ঞানের অগ্রনায়ক ছিল। অতঃপর বাগদাদ ও স্পেনের রাজনৈতিক পতনের ফলে বিজ্ঞানেরও পতন ঘটে এবং তাদেরই রেখে যাওয়া বিজ্ঞানের অনুসরণ করে বস্ত্তবাদী ইউরোপ আজ ক্রমে মুসলমানদের শূন্যস্থান পূরণ করে চলেছে।

মনুষ্য বিজ্ঞানের উৎস হ’ল অনুমিতি। যা যেকোন সময় ভুল প্রমাণিত হয়। যেমন বিজ্ঞানীরা বলেন, Science gives us but a partial knowledge of reality ‘বিজ্ঞান আমাদেরকে কেবল আংশিক সত্যের সন্ধান দেয়’।[1] তারা স্রেফ অনুমানের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে থাকেন। তারা বলেন, ‘আমরা কতিপয় বাহ্য প্রকাশকে দেখি মাত্র, মূল বস্ত্তকে দেখিনা’। যেমন ধোঁয়া দেখে মানুষ আগুনের সন্ধানে ছুটে থাকে। কিন্তু কুরআনী বিজ্ঞানের উৎস হ’ল আল্লাহর অহী। যেখানে ভুলের কোন অবকাশ নেই। যেমন আল্লাহ বলেন, لاَ يَأْتِيهِ الْبَاطِلُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَلاَ مِنْ خَلْفِهِ تَنْزِيلٌ مِنْ حَكِيمٍ حَمِيدٍ ‘সম্মুখ থেকে বা পিছন থেকে এর মধ্যে মিথ্যার কোন প্রবেশাধিকার নেই। এটি ক্রমান্বয়ে অবতীর্ণ হয়েছে প্রজ্ঞাময় ও প্রশংসিত সত্তার পক্ষ হ’তে’ (হামীম সাজদাহ ৪১/৪২)। আজকের যেসব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার আমরা দেখছি তার প্রায় সবেরই উৎস রয়েছে কুরআনে। যা সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয়েছিল চৌদ্দশ’ বছর পূর্বে একজন মরুচারী নিরক্ষর নবীর মুখ দিয়ে- যা ছিল আল্লাহর কালাম। উদাহরণ স্বরূপ-

(১) জগত সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক তথ্য হিসাবে বলা হয়, ‘কোটি কোটি বছর পূর্বে বিশ্বজগত একটি অখন্ড জড়বস্ত্ত রূপে বিদ্যমান ছিল। পরে তার কেন্দ্রে একটি মহাবিস্ফোরণ ঘটে, যাকে Big-Bang বলা হয়। সেই মহা বিস্ফোরণের ফলে আমাদের সৌরজগত, ছায়াপথ, তারকারাজি ইত্যাদি সৃষ্টি হ’ল এবং বিনা বাধায় সর্বত্র সন্তরণ করে চলল’। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই এ তথ্য প্রদান করেছে। আল্লাহ বলেন, أَوَلَمْ يَرَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقاً فَفَتَقْنَاهُمَا ‘অবিশ্বাসীরা কি দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী পরস্পরে মিলিত ছিল। অতঃপর আমরা উভয়কে পৃথক করে দিলাম’ (আম্বিয়া ২১/৩০)। প্রশ্ন হ’ল, বিস্ফোরণ ঘটালো কে? সেখানে প্রাণের সঞ্চার হ’ল কিভাবে? অতঃপর বিশাল সৃষ্টি সমূহ অস্তিত্বে আনল কে? যদি কেউ বলে যে, প্রেস মেশিনে বিস্ফোরণ ঘটেছে এবং তা ধ্বংস হয়ে টুকরা টুকরা হয়ে গেছে। অতঃপর সেখানে তৈরী হয়েছে বড় বড় গবেষণাগ্রন্থ। একথা কেউ বিশ্বাস করবে কি?

(২) প্রাণের উৎস কি? এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন, পানি থেকেই প্রাণীজগতের উদ্ভব। অথচ কুরআন একথা আগেই বলেছে, وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاءِ كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلاَ يُؤْمِنُونَ ‘আমরা প্রাণবান সবকিছু সৃষ্টি করেছি পানি হতে। তবুও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না?’ (আম্বিয়া ২১/৩০; নূর ২৪/৪৫)। প্রশ্ন হ’ল, পানি সৃষ্টি করল কে? অতঃপর তার মধ্যে প্রাণ শক্তি এনে দিল কে?

(৩) বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রতিটি প্রাণসত্তার মধ্যে রয়েছে বিপরীতধর্মী দু’টি শক্তির জোড়। যার একটি পজেটিভ বা প্রোটন এবং অপরটি নেগেটিভ বা ইলেকট্রন। এমনকি বিদ্যুতের ন্যায় প্রাণহীন বস্ত্তর মধ্যেও রয়েছে এই জোড়ার সম্পর্ক। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই এর তথ্য দিয়েছে, سُبْحَانَ الَّذِيْ خَلَقَ الْأَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنبِتُ الْأَرْضُ وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لاَ يَعْلَمُوْنَ ‘মহাপবিত্র সেই সত্তা, যিনি ভূ-উৎপন্ন সকল বস্ত্ত এবং মানুষ ও তাদের অজানা সবকিছুকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন’ (ইয়াসীন ৩৬/৩৬)। (৪) উদ্ভিদের জীবন আছে, একথা বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু (১৮৫৮-১৯৩৭ খৃ.) মাত্র সেদিন আবিষ্কার করলেন। অথচ বহু পূর্বেই একথা কুরআন বলে দিয়েছে। وَالنَّجْمُ وَالشَّجَرُ يَسْجُدَانِ ‘নক্ষত্ররাজি ও উদ্ভিদরাজি আল্লাহকে সিজদা করে’ (রহমান ৫৫/৬; ইসরা ১৭/৪৪; নূর ২৪/৪১ প্রভৃতি)। স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মানে পাথর ও বৃক্ষসমূহ ঝুঁকে পড়ে তাঁকে সম্মান জানিয়েছে। আকাশের মেঘমালা তাঁকে ছায়া করেছে।[2] এমনকি তাঁর হুকুমে ছায়াদার বৃক্ষ নিজের স্থান থেকে উঠে এসে তার নিকটে দাঁড়িয়ে তাঁকে ছায়া করেছে। আবার তাঁর হুকুমে স্বস্থানে ফিরে গেছে।[3] এগুলো সবই উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে, তার প্রমাণ বহন করে। (৫) এমনকি এর চাইতে বড় তথ্য কুরআন প্রকাশ করেছে, বিজ্ঞানীরা আজও যা প্রমাণ করতে পারেনি। আর তা হ’ল, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর প্রাণ আছে এবং আছে বোধশক্তি। যেমন আল্লাহ বলেন, ثُمَّ اسْتَوَى إِلَى السَّمَاء وَهِيَ دُخَانٌ فَقَالَ لَهَا وَلِلْأَرْضِ اِئْتِيَا طَوْعاً أَوْ كَرْهاً قَالَتَا أَتَيْنَا طَائِعِيْنَ ‘অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন, যা ছিল ধূম্রবিশেষ। অনন্তর তিনি ওটাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে এসো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা এলাম অনুগত হয়ে’ (হা-মীম সাজদাহ ৪১/১১)।

(৬) নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল ও তন্মধ্যকার সবকিছু সর্বদা আল্লাহর গুণগান করে। কিন্তু মানুষ তা বুঝতে পারে না। যেমন আল্লাহ বলেন, تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَاوَاتُ السَّبْعُ وَالأَرْضُ وَمَن فِيهِنَّ وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلاَّ يُسَبِّحُ بِحَمْدَهِ وَلَـكِن لاَّ تَفْقَهُونَ تَسْبِيْحَهُمْ إِنَّهُ كَانَ حَلِيْماً غَفُوْراً ‘সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং ওদের মধ্যকার সবকিছু তাঁরই গুণগান করে। আর এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রশংসা সহ পবিত্রতা বর্ণনা করে না। কিন্তু ওদের গুণগান তোমরা বুঝতে পারো না। নিশ্চয়ই তিনি সহনশীল ও ক্ষমাপরায়ণ’ (ইসরা ১৭/৪৪)। এগুলি সবই আল্লাহর আয়াত বা নিদর্শন সমূহের অন্তর্ভুক্ত। যে তথ্য কেবলমাত্র কুরআনই আমাদেরকে প্রদান করেছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।

[1]. মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, মহাসত্যের সন্ধানে (ঢাকা : খায়রুন প্রকাশনী ৫ম প্রকাশ ১৪১৯হি./১৯৯৮) ৬১ পৃঃ।
[2]. তিরমিযী হা/৩৬২০; মিশকাত হা/৫৯১৮ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মু‘জেযা সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭।
[3]. মুসলিম হা/৩০১২; দারেমী হা/২৩; মিশকাত, ঐ, হা/৫৮৮৫, ৫৯২৪।

কুরআন বিশ্বমানবতার জন্য সুসংবাদদাতা

কুরআনই একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ, যা মানবজাতিকে আল্লাহর মনোনীত দ্বীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান হিসাবে ইসলামকে প্রেরণের সুসংবাদ দিয়েছে। যেমন বিদায় হজ্জের দিন আয়াত নাযিল করে আল্লাহ বলেন, الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلاَمَ دِينًا ‘আজকের দিনে আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মতকে সম্পূর্ণ করলাম। আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম’ (মায়েদাহ ৫/৩)। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ তার অনুসারীদের এরূপ কথা শুনাতে ব্যর্থ হয়েছে।

 অনন্য প্রভাবশালী গ্রন্থ আল কুরআন

কুরআনের অপূর্ব সাহিত্যিক মান, তুলনাহীন আলংকরিক বৈশিষ্ট্য, অনন্য সাধারণ বর্ণনাভঙ্গি এবং এর অলৌকিক প্রভাব যেকোন মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে মোহিত করে ফেলে। পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থে এমন প্রভাবের কোন নযীর নেই।

(১) আবু জাহল, আবু সুফিয়ান, আখনাস বিন শারীক্ব-এর মত নেতারাও রাতের বেলা একে অপরকে লুকিয়ে গোপনে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর তাহাজ্জুদে পঠিত কুরআন মুগ্ধ মনে শ্রবণ করত। পরপর তিনদিন একই ঘটনার পর আখনাস বিন শারীক্ব লাঠি হাতে হাঁটতে হাঁটতে আবু সুফিয়ানের বাড়ীতে এসে বললেন, হে আবু হানযালা! মুহাম্মাদের মুখ দিয়ে যা শুনলাম, সে বিষয়ে আপনার মতামত কি? তিনি বললেন, আমি ঐ কালাম বুঝতে পেরেছি এবং সেখানে যা চাওয়া হয়েছে, তাও বুঝেছি’। আখনাস বললেন, আমিও আপনার সাথে একমত। এবার তিনি হাঁটতে হাঁটতে আবু জাহলের বাড়ীতে গেলেন ও তাকে একই প্রশ্ন করলেন। জবাবে আবু জাহল বললেন, আসল কথা হ’ল, تَنَازَعْنَا نَحْنُ وَبَنُو عَبْدِ مَنَافٍ الشَّرَفَ... مِنَّا نَبِيٌّ يَأْتِيهِ الْوَحْيُ مِنَ السَّمَاءِ، فَمَتَى نُدْرِكُ مِثْلَ هَذِهِ؟ وَاللهِ لاَ نُؤْمِنُ بِهِ أَبَدًا وَلاَ نُصَدِّقُهُ ‘বনু ‘আব্দে মানাফের সাথে আমাদের বংশ মর্যাদাগত ঝগড়া আছে।... তারা বলে, আমাদের বংশে একজন নবী আছেন, যার নিকটে আসমান থেকে ‘অহি’ আসে। কবে আমরা এই মর্যাদা পাব? অতএব আল্লাহর কসম! আমরা কখনোই তার উপরে ঈমান আনব না এবং তাকে সত্য বলে বিশ্বাস করব না’। একথা শুনে আখনাস চলে এলেন’।[1] এতে বুঝা যায় যে, অতি বড় দুশমনও কুরআন দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু যিদ ও হঠকারিতা বশে তারা পথভ্রষ্ট হয়।

(২) প্রসিদ্ধ কুরায়েশ নেতা উৎবা বিন রাবী‘আহ একদিন আবু জাহল ও অন্য নেতাদের পরামর্শ মতে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে এলেন। ইনি একই সাথে জাদুবিদ্যা, ভবিষ্যদ্বাণী ও কবিতায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি এসে রাসূল (ছাঃ)-এর অনেক প্রশংসা করলেন। অতঃপর তাকে তাওহীদ প্রচার বন্ধের বিনিময়ে নেতৃত্ব, দশজন সুন্দরী স্ত্রী ও বিপুল ধন-সম্পদ দানের লোভনীয় প্রস্তাব দিলেন। রাসূল (ছাঃ) সবকিছু শোনার পর তাকে সূরা হা-মীম সাজদাহ ১-১৩ আয়াত পর্যন্ত শুনালেন। এ সময় ওৎবা আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে তার মুখে হাত দিয়ে কুরআন পাঠ বন্ধ করতে বললেন। ফিরে আসার পর তিনি নেতাদের কাছে বলেন, আল্লাহর কসম! আমি এমন কথা শুনেছি, যা আমার দু’টি কান কখনো শোনেনি। আল্লাহর কসম! এটি জাদু নয়, এটি কবিতা নয়, এটি কোন ভবিষ্যৎ কথন নয়। হে কুরায়েশগণ! তোমরা আমার কথা শোন! তোমরা এ মানুষটিকে ছেড়ে দাও। যদি তিনি আরবদের উপর বিজয়ী হন, তাহ’লে তার রাজত্ব তোমাদের রাজত্ব। তার সম্মান তোমাদের সম্মান। তার মাধ্যমে তোমরা হবে সৌভাগ্যবান। তোমরা জানো মুহাম্মাদ কখনো মিথ্যা বলেন না। আমি ভয় পাচ্ছি তোমাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল না হয়’। জবাবে আবু জাহল বলল, আল্লাহর কসম! আপনাকে সে তার কথা দিয়ে জাদু করেছে’।[2]

(৩) একদিন কা‘বা চত্বরে উপস্থিত মক্কার মুশরিকদের একজন বাদে সকলে রাসূল (ছাঃ)-এর মুখে সূরা নাজম শুনতে শুনতে বিভোর হয়ে সূরার শেষ ৬২তম সিজদার আয়াত শুনে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সিজদায় পড়ে যায়। রাবী ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, একজন বৃদ্ধ কেবল সিজদা করেনি। সে এক মুষ্টি মাটি তুলে নিজের কপালে ঠেকিয়ে বলেছিল, এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। পরে তাকে আমি (বদরের যুদ্ধে) কাফের অবস্থায় নিহত হ’তে দেখেছি।’ ঐ বৃদ্ধটি ছিল মক্কার অন্যতম নেতা উমাইয়া বিন খালাফ।[3]

(৪) রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আর বরকতে এবং কুরআনী সূরার অতুলনীয় প্রভাবে রাসূল (ছাঃ)-কে হত্যার উদ্দেশ্যে আগত ওমর নিমেষে কুরআনের খাদেমে পরিণত হয়ে যান’ (ইবনু হিশাম ১/৩৪২-৪৬)।

(৫) জা‘ফর বিন আবু ত্বালিবের মুখে সূরা মারিয়ামের সংশ্লিষ্ট আয়াতগুলি শুনে হাবশার বাদশাহ আছহামা নাজাশী ও তাঁর সভাসদ খ্রিষ্টান নেতাদের চক্ষু দিয়ে অবিরল ধারে অশ্রু প্রবাহিত হয়েছিল। অতঃপর মদীনায় নাজাশী প্রেরিত পন্ডিতগণের সত্তুর জনের এক শাহী প্রতিনিধিদল রাসূল (ছাঃ)-এর মুখে সূরা ইয়াসীন শুনে কেঁদে আত্মহারা হয়ে পড়েন ও সেখানেই মুসলমান হয়ে যান। পরে বাদশাহ নাজাশীও মুসলমান হন।[4]

(৬) কুরায়েশ-এর সবচেয়ে বড় ধনী ও বড় কবি অলীদ বিন মুগীরাহ একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে গিয়ে কুরআন শুনতে চাইলেন। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাকে সূরা নাহলের ৯০ আয়াতটি শুনিয়ে দেন।[5] অলীদ বিন মুগীরাহ আবার শুনতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পুনরায় পড়লেন। আয়াতটি শুনে হয়রান হয়ে তিনি বলে ওঠেন وَاللهِ إِنَّ لَهُ لَحَلاَوَةً، وَإِنَّ عَلَيْهِ لَطَلاَوَةً، وَإِنَّ أَعْلاَهُ لَمُثْمِرٌ، وَإِنَّ أَسْفَلَهُ لَمُغْدِقٌ وَمَا يَقُوْلُ هَذَا بَشَرٌ ‘আল্লাহর কসম! এর রয়েছে এক বিশেষ মাধুর্য, এর মধ্যে রয়েছে বিশেষ সজীবতা, এর শাখা-প্রশাখা সমূহ ফলবন্ত। এর জড়দেশ সদা সরস। আর মানুষ কখনো এরূপ বলতে পারে না’ (আল-ইস্তী‘আব)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَإِنَّهُ لَيَعْلُوَ وَلاَ يُعْلَى، وَإِنَّهُ لَيَحْطِمُ مَا تَحْتَه ‘নিশ্চয় এটি বিজয়ী হবে, বিজিত হবে না। আর নিশ্চয় এটি তার নীচের সবকিছুকে চূর্ণ করে দিবে’। তার এরূপ প্রশংসাগীতি শুনে আবু জাহল বলল, আপনি যতক্ষণ মুহাম্মাদের বিরুদ্ধে কিছু না বলবেন, ততক্ষণ আপনার কওম আপনার উপর খুশী হবে না। তখন তিনি বললেন, ছাড়! আমাকে একটু ভাবতে দাও। অতঃপর ভেবে-চিন্তে তিনি বললেন, هَذَا سِحْرٌ يُؤْثَرُ يَأْثُرُهُ عَنْ غَيْرِهِ ‘এটি অন্য থেকে প্রাপ্ত জাদু! (আল-বিদায়াহ ৩/৬১)। বস্ত্ততঃ অলীদের প্রথম কথাগুলি ছিল তার মনের কথা। আর শেষের কথাগুলি ছিল রাজনৈতিক। এ প্রসঙ্গে সূরা মুদ্দাছছির ১১-২৬ আয়াতগুলি নাযিল হয়।[6]

(৭) এর প্রভাব এত বেশী যে, ৩৬০টি দেবদেবীর পূজারী নিমেষে সবকিছু ছেড়ে এক আল্লাহর ইবাদতকারী বনে যান। কোন আইন মানতে যারা কখনোই বাধ্য ছিল না, সেই অবাধ্য মরু আরব নিমেষে আল্লাহর আইনের সামনে এসে মাথা পেতে দেয়। পুলিশ বা কোন বাহিনীর প্রয়োজন হয়নি, নিজেরা এসে মৃত্যুদন্ড গ্রহণের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে পীড়াপীড়ি করে। মা‘এয আসলামী, গামেদী মহিলা প্রমুখদের ঘটনা যার জাজ্বল্যমান প্রমাণ।[7]

(৮) বদরের যুদ্ধে বন্দীদের মুক্তির ব্যাপারে আলোচনার জন্য কুরায়েশ নেতা জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম মদীনায় উপনীত হয়ে মাগরিবের জামা‘আতে রাসূল (ছাঃ)-এর মুখে সূরা তূরের আয়াতগুলি শুনে দারুণভাবে প্রভাবিত হন। তিনি বলেন, এর দ্বারা আমার হৃদয়ে প্রথম ঈমান প্রবেশ করে’ (আল-ইছাবাহ, জুবায়ের ক্রমিক ১০৯৩)।

(৯) জাহেলী যুগের মু‘আল্লাক্বা খ্যাত কবি লাবীদ বিন রাবী‘আহ ‘আমেরী ইসলাম কবুল করার পর কবিতা লেখা বন্ধ করে দিলেন। খলীফা ওমর (রাঃ) কূফার গবর্ণরের মাধ্যমে তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, مَا كُنْتُ لِأَقُولَ بَيْتًا مِنَ الشِّعْرِ بَعْدَ إِذْ عَلَّمَنِي اللهُ الْبَقَرَةَ وَآلَ عِمْرَانَ ‘আমি এক লাইন কবিতাও আর বলতে চাই না যখন থেকে আল্লাহ আমাকে সূরা বাক্বারাহ ও আলে ইমরান শিক্ষা দিয়েছেন’। এ কথা শুনে ওমর (রাঃ) তার বার্ষিক ভাতা বৃদ্ধি করে দেন।[8]

(১০) আবু ত্বালহা আনছারী যখন কুরআনের আয়াত لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ ‘তোমরা কখনই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত তোমরা দান করবে’ (আলে ইমরান ৩/৯২) শোনার পর রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে এসে নিজের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান খেজুর বাগিচাটি আল্লাহর রাহে দান করে দিলেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর হুকুমে উক্ত বাগিচা আবু ত্বালহার নিকটাত্মীয় এবং চাচাতো ভাইদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হ’ল।[9]

(১১) শায়খ আব্দুল ক্বাহির জুরজানী (মৃ. ৪৭৪ হি./১০৭৮ খৃ.) বলেন, আরবরা কুরআনের সর্বোচ্চ আলংকরিক বৈশিষ্ট্য ছাড়াও তারা এর গভীর তাৎপর্যপূর্ণ আয়াত সমূহের কারণে প্রভাবান্বিত হয়েছিল। যেমন وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَا أُولِي الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ ‘সম পরিমাণ শাস্তি দানের মধ্যে তোমাদের জীবন নিহিত রয়েছে হে জ্ঞানীগণ! যাতে তোমরা সতর্ক হ’তে পারো’ (বাক্বারাহ ২/১৭৯)।[10]

[1]. ইবনু হিশাম ১/৩১৫-১৬; বর্ণনাটির সনদ মুনক্বাতি‘ ঐ, তাহকীক ক্রমিক ৩০৪; বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২০৬; আল-বিদায়াহ ৩/৬৪।
[2]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/২০৩-০৬; ইবনু হিশাম ১/২৯৪; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ১০৭; সনদ হাসান; আল-বিদায়াহ ৩/৬৩-৬৪।
[3]. বুখারী হা/৪৮৬৩; মুসলিম হা/৫৭৬; মিশকাত হা/১০৩৭ ‘কুরআনের সিজদা সমূহ’ অনুচ্ছেদ।
[4]. ইবনু কাছীর, সূরা মায়েদাহ ৮২ ও ক্বাছাছ ৫৩ আয়াতের তাফসীর; ইবনু হিশাম ১/৩৩৬।
[5]. إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ- ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার নির্দেশ দেন এবং অশ্লীলতা, অন্যায় কাজ ও অবাধ্যতা হতে নিষেধ করেন। তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর’ (নাহল ১৬/৯০)।
[6]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/১৯৮-৯৯; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/৬১।
[7]. মুসলিম হা/১৬৯৫; মিশকাত হা/৩৫৬২ ‘দন্ডবিধিসমূহ’ অধ্যায়।
[8]. আল-ইছাবাহ, লাবীদ বিন রাবি‘আহ ক্রমিক ৭৫৪৭; আল-ইস্তী‘আব।
[9]. বুখারী হা/২৩১৮; মুসলিম হা/৯৯৮; মিশকাত হা/১৯৪৫ ‘যাকাত’ অধ্যায়।
[10]. ড. মুজীবুর রহমান, কুরআনের চিরন্তন মু‘জেযা, (ইফাবা, ঢাকা : ৪র্থ সংস্করণ ২০০৬) ১৩৫ পৃঃ।




প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  



******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url