প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৩৭] || মহানবীর জীবনী ||





খন্দক ও বনু কুরায়যা যুদ্ধের পরবর্তী অভিযান সমূহের পর্যালোচনা

পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি কতটুকু জানি। প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।

খন্দক ও বনু কুরায়যা পরবর্তী যুদ্ধসমূহ

সারিইয়া আব্দুল্লাহ বিন আতীক আনছারী

৫ম হিজরীর যিলহাজ্জ মাস। বনু কুরায়যার শত্রুতা থেকে মুক্ত হয়ে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার পর খায়বরের আবু রাফে‘ দুর্গের অধিপতি অন্যতম শীর্ষ দুষ্টমতি ইহূদী নেতা এবং মদীনা থেকে বিতাড়িত বনু নাযীর গোত্রের অন্যতম সর্দার সাল্লাম বিন আবুল হুক্বাইক্বকে হত্যার জন্য খাযরাজ গোত্রের বনু সালামাহ শাখার লোকেরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে দাবী করে। সাল্লামের উপনাম ছিল আবু রাফে‘। সে ছিল কা‘ব বিন আশরাফের ন্যায় প্রচন্ড ইসলাম ও রাসূল বিদ্বেষী ইহূদী নেতা। মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বদা সে শত্রুপক্ষকে সাহায্য করত। ওহোদ যুদ্ধের দিন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের প্ররোচনায় আউস গোত্রের বনু হারেছাহ ও খাযরাজ গোত্রের বনু সালামাহ শাখার লোকেরা ফিরে যেতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা যায়নি। এ সম্পর্কে সূরা আলে ইমরান ১২২ আয়াত নাযিল হয়। খন্দকের যুদ্ধের দিনও এরা মুনাফিকদের প্ররোচনায় যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যেতে চেয়েছিল এবং রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে ওযর পেশ করেছিল (আহযাব ৩৩/১২-১৩)। সেই বদনামী দূর করার জন্য এবং ইতিপূর্বে ৩য় হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে আউস গোত্রের লোকেরা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর নেতৃত্বে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে কা‘ব বিন আশরাফকে রাতের বেলায় হত্যা করে যে প্রশংসা কুড়িয়েছিল, অনুরূপ একটি দুঃসাহসিক কাজ করার জন্য তারা রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমতি প্রার্থনা করে।

অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমতি নিয়ে আব্দুল্লাহ বিন আতীকের নেতৃত্বে তাদের পাঁচ সদস্যের একটি দল খায়বর অভিমুখে রওয়ানা হয় এবং রাতের বেলা কৌশলে দুর্গের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে আবু রাফে‘ সাল্লাম বিন আবুল হুক্বাইক্বকে হত্যা করে ফিরে আসে। বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) বলেন, আব্দুল্লাহ বিন আতীক বলেন, ঘুমন্ত অবস্থায় আবু রাফে‘-এর পেটে তরবারি চালিয়ে হত্যা করার পর আমি দরজা খুলে বেরিয়ে আসি। তখন চাঁদনী রাতে সিঁড়ির শেষ মাথায় এসে পা ফসকে পড়ে যাই। এতে আমার পায়ের নলা ভেঙ্গে যায়। তখন আমি আমার পাগড়ী দিয়ে ওটা বেঁধে ফেলি। তারপর আমার সাথীদের নিকট চলে আসি। অতঃপর আমি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে পৌঁছে যাই এবং ঘটনা বলি। তখন তিনি আমাকে বলেন,ابْسُطْ رِجْلَكَ ‘তোমার পা বাড়িয়ে দাও’। আমি পা বাড়িয়ে দিলাম। তিনি তাতে হাত বুলিয়ে দিলেন। তখন আমার মনে হ’ল, এখানে কোনদিন কোন যখম ছিল না’।[1]

সারিইয়া মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর মুহাররম মাস। মদীনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী নাজদের বনু বকর বিন কিলাব গোত্রের প্রতি মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ আনছারীর নেতৃত্বে ৩০ জনের এই দলকে ১০ই মুহাররম তারিখে মদীনা থেকে প্রেরণ করা হয়। মুসলিম সেনাদল সেখানে পৌঁছার সাথে সাথে তারা পালিয়ে যায়। তাদের পরিত্যক্ত ধন-সম্পদ নিয়ে ফিরে আসার পথে ইয়ামামার হানীফা গোত্রের সরদার ছুমামাহ বিন আছাল হানাফী(ثُمامةُ بنُ آثَالٍ الْحَنَفِى) তাদের হাতে গ্রেফতার হয়। উক্ত ব্যক্তি ইয়ামামার নেতা মুসায়লামার নির্দেশ মতে ছদ্মবেশে মদীনায় যাচ্ছিল রাসূল (ছাঃ)-কে গোপনে হত্যা করার জন্য।

ছুমামাহর ইসলাম গ্রহণ

ছুমামাকে এনে মসজিদে নববীর খুঁটিতে বেঁধে রাখা হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেনمَا عِنْدَكَ يَا ثُمَامَةُ ‘তোমার নিকটে কি আছে হে ছুমামাহ! সে বলল, عِنْدِى يَا مُحَمَّدُ خَيْرٌ إِنْ تَقْتُلْ تَقْتُلْ ذَا دَمٍ وَإِنْ تُنْعِمْ تُنْعِمْ عَلَى شَاكِرٍ وَإِنْ كُنْتَ تُرِيدُ الْمَالَ فَسَلْ تُعْطَ مِنْهُ مَا شِئْتَ ‘আমার নিকটে মঙ্গল আছে হে মুহাম্মাদ’! আপনি যদি আমাকে হত্যা করেন, তাহ’লে এমন একজনকে হত্যা করবেন যার বদলায় রক্ত প্রবাহিত হবে। যদি অনুগ্রহ করেন, তবে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তির উপরে অনুগ্রহ করবেন। আর যদি সম্পদ চান, তবে যা চাইবেন তাই আপনাকে দেওয়া হবে’।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কিছু না বলে ফিরে গেলেন। এভাবে তিনদিন একই প্রশ্নের একই উত্তর পাওয়ার পর তিনি তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন। মুক্তি পেয়ে তিনি মসজিদের নিকটবর্তী বাক্বী‘ গারক্বাদের খেজুর বাগানে গেলেন ও গোসল করলেন। অতঃপর মসজিদে এসে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করে বায়‘আত গ্রহণের মাধ্যমে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর বলেন, وَاللهِ مَا كَانَ عَلَى وَجْهِ الْأَرْضِ وَجْهٌ أَبْغَضَ إِلِيَّ مِنْ وَجْهِكَ، وَقَدْ أَصْبَحَ وَجْهُكَ أَحَبَّ الْوُجُوهِ إِلِيَّ، وَاللهِ مَا كَانَ دِينٌ أَبْغَضَ إِلِيَّ مِنْ دِينِكَ وَقَدْ أَصْبَحَ دِينُكَ أَحَبَّ الْأَدْيَانِ إِلِيَّ ‘আল্লাহর কসম! এ পৃথিবীতে আপনার চাইতে নিকৃষ্ট চেহারা আমার কাছে ছিলনা। কিন্তু এখন সেটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় চেহারায় পরিণত হয়েছে। একইভাবে আল্লাহর কসম! এ পৃথিবীতে আপনার দ্বীনের চাইতে নিকৃষ্ট কোন দ্বীন আমার কাছে ছিলনা। কিন্তু এখন সেটি আমার কাছে সর্বাধিক প্রিয় দ্বীনে পরিণত হয়েছে’। অতঃপর ছুমামাহ মক্কায় গিয়ে ওমরাহ করেন। সেখানে কুরায়েশ নেতারা তাকে বলে, أَصَبَوْتَ؟ ‘তুমি কি ধর্মত্যাগী হয়ে গেছ?’ জবাবে তিনি বলেন,لاَ وَاَللهِ وَلَكِنِّي أَسْلَمْتُ مَعَ مُحَمّد না। আল্লাহর কসম! আমি মুহাম্মাদের সাথে মুসলমান হয়েছি’। অতঃপর তিনি তাদের হুমকি দিয়ে বললেন,وَاللهِ لاَ يَأْتِيكُمْ مِنَ الْيَمَامَةِ حَبَّةُ حِنْطَةٍ حَتَّى يَأْذَنَ فِيهَا رَسُولُ اللهِ ‘আল্লাহর কসম! ইয়ামামা থেকে তোমাদের জন্য গমের একটি দানাও আর আসবে না, যে পর্যন্ত না রাসূল (ছাঃ) অনুমতি দেন’।[2] ঐ সময় ইয়ামামা ছিল মক্কাবাসীদের জন্য শস্যভান্ডার স্বরূপ। হুমকি মতে শস্য আগমন বন্ধ হয়ে গেলে মক্কাবাসীগণ বাধ্য হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে পত্র লেখে। তখন রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশে পুনরায় শস্য রফতানী শুরু হয়’।[3]

মুহাররম মাসের একদিন বাকী থাকতে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর এই সেনাদল মদীনায় ফিরে আসে। এই অভিযান পরবর্তী সময়ের জন্য খুবই ফলদায়ক প্রমাণিত হয়।

সারিইয়া উক্কাশা বিন মিহছান

৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আউয়াল অথবা আখের। ৪০ জনের একটি সেনাদল বনু আসাদ গোত্রের গামর(ماء غَمْر) প্রস্রবণের দিকে উক্কাশার নেতৃত্বে প্রেরিত হয়। কেননা বনু আসাদ গোত্র মদীনায় হামলা করার জন্য সৈন্য সংগ্রহ করছিল। মুসলিম বাহিনীর আকস্মিক উপস্থিতিতে তারা পালিয়ে যায়। পরে গণীমত হিসাবে ২০০ উট নিয়ে অত্র বাহিনী মদীনায় ফিরে আসে।[4]

সারিইয়া মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আউয়াল অথবা আখের। ১০ সদস্যের একটি বিদ্বান দল মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর নেতৃত্বে বনু ছা‘লাবাহ অঞ্চলের যুল-ক্বাছছা(ذُو الْقَصَّة) নামক স্থানে প্রেরিত হয়। মানছূরপুরী বলেন, এঁরা সেখানে দ্বীনের দাওয়াত ও তা‘লীমের জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শত্রুদের প্রায় একশত লোক এসে তাদেরকে হত্যা করে। দলনেতা মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ আহত অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হন।[5]

সারিইয়া আবু উবায়দাহ ইবনুল জাররাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আখের। পূর্বের হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ৪০ জনের এই দল যুল-ক্বাছছায় প্রেরিত হয়। কিন্তু বনু ছা‘লাবাহ গোত্রের সবাই পালিয়ে যায়। একজন গ্রেফতার হলে সে মুসলমান হয়ে যায়। ফলে তাদের পরিত্যক্ত গবাদিপশু নিয়ে তারা ফিরে আসেন।[6]

সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর রবীউল আখের। যায়েদ বিন হারেছাহর নেতৃত্বে একটি সেনাদল মার্রুয যাহরানের বনু সুলায়েম গোত্রের ‘জামূম’ (ماء جَمُوم) ঝর্ণার দিকে প্রেরিত হয়। বনু সুলায়েমের কয়েকজন লোক বন্দী হয়। মুযাইনা গোত্রের হালীমা নাম্নী একজন বন্দী মহিলা সহ বাকী বন্দী ও গবাদিপশু নিয়ে যায়েদ মদীনায় ফিরে আসেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বন্দীদের ছেড়ে দেন ও মহিলাকে মুক্ত করে বিবাহের ব্যবস্থা করে দেন।[7]

গাযওয়া বনু লেহিয়ান

৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাস। ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে এই গোত্রের লোকেরা প্রতারণার মাধ্যমে ডেকে নিয়ে মক্কা সীমান্তে রাজী‘ নামক স্থানে ১০ জন নিরীহ ছাহাবীকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত খোবায়েব বিন ‘আদী (রাঃ)। তাদের হত্যার প্রতিশোধ নেবার জন্য বনু কুরায়যাকে বহিষ্কারের ৬ মাস পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বয়ং ২০০ সৈন্য নিয়ে এই অভিযানে বের হন। আমাজ ও ওসফানের(بَيْنَ أَمَجَ وَعُسْفَانَ) মধ্যবর্তী রাজী‘ পৌঁছে ‘গুরান’ (غُرَانَ) উপত্যকার যে স্থানে ৮ জন ছাহাবীকে হত্যা করা হয়েছিল, সেখানে উপস্থিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) করুণাসিক্ত হয়ে পড়েন ও তাদের জন্য দো‘আ করেন(فَتَرَحَّمَ عَلَيْهِمْ وَدَعَا لَهُمْ)। বনু লেহিয়ান গোত্রের লোকেরা পালিয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেখানে দু’দিন অবস্থান করেন। পরে তিনি মক্কার দিকে ‘উসফান’ ও ‘কুরা‘উল গামীম’ এলাকায় ছোট ছোট দল প্রেরণ করেন। যাতে মক্কাবাসীরা এ খবর জানতে পারে। অবশেষে শত্রুপক্ষের কারু নাগাল না পেয়ে ১৪ দিন পরে মদীনায় ফিরে আসেন। এরপর থেকে তিনি বেদুঈন হামলা বন্ধের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট অভিযান সমূহ প্রেরণ করতে থাকেন। এই অভিযানের সময় মদীনার দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতূম (রাঃ)।[8]

সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল ঊলা। ১৭০ জনের একটি দল নিয়ে তিনি শামের সমুদ্রোপকুলবর্তী সায়ফুল বাহর এলাকার ‘ঈছ (الْعِيْص) অভিমুখে প্রেরিত হন। এখানে তখন মক্কা থেকে পলাতক নও মুসলিম আবু জান্দাল, আবু বাছীর ও তাদের সাথীরা অবস্থান করতেন এবং কুরায়েশ কাফেলার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। ঐপথে তখন রাসূল (ছাঃ)-এর জামাতা আবুল ‘আছ বিন রবী‘-এর নেতৃত্বে একটি কুরায়েশ বাণিজ্য কাফেলা মক্কা অভিমুখে অতিক্রম করছিল। আবুল ‘আছ লুকিয়ে দ্রুত মদীনায় এসে নবী তনয়া যয়নবের আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং রাসূল (ছাঃ)-কে কাফেলার সব মালামাল ফেরত দানের অনুরোধ করেন। সেমতে তাকে সব মাল ফেরৎ দেওয়া হয়। আবুল ‘আছ মক্কায় গিয়ে পাওনাদারদের মালামাল বুঝিয়ে দেন ও প্রকাশ্যে ইসলাম কবুলের ঘোষণা দেন। অতঃপর তিনি মদীনায় ফিরে এলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যয়নবকে পূর্বের বিবাহের উপরে তার স্বামীর নিকটে অর্পণ করেন। উল্লেখ্য যে, আবুল ‘আছ ছিলেন যয়নবের আপন খালাতো ভাই এবং খালা খাদীজা (রাঃ)-এর জীবদ্দশায় তাদের বিবাহ হয়।[9]

ওয়াক্বেদীর বর্ণনা মতে ঘটনাটি ছিল ৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসের (ওয়াক্বেদী ২/৫৫৩)। কিন্তু মূসা বিন উক্ববা ধারণা করেন যে, ঘটনাটি ছিল হোদায়বিয়া সন্ধির পরের (যাদুল মা‘আদ ৩/২৫২)। ইবনু ইসহাক এটাকে মক্কা বিজয়ের সামান্য পূর্বে(قُبَيْلَ الْفَتْحِ) বলেছেন (ইবনু হিশাম ১/৬৫৭)। সেটাই সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। কেননা হাদীছে ৬ বছর পরে যয়নাবকে তার স্বামীর নিকটে সমর্পণের কথা এসেছে (তিরমিযী হা/১১৪৩)। অন্য বর্ণনায় ‘দুই বছরের’ কথা এসেছে (আবুদাঊদ হা/২২৪০ সনদ ছহীহ)। ইবনু কাছীর বলেন, তার অর্থ হ’ল ৬ষ্ঠ হিজরীর যুলক্বা‘দাহ মাসে হোদায়বিয়ার সন্ধির পর কাফির ও মুসলিমে বিবাহ ছিন্ন হওয়ার যে আয়াত নাযিল হয়, তার দু’বছর পরে (ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা মুমতাহিনা ১০ আয়াত)।

সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর জুমাদাল আখেরাহ। ১৫ সদস্যের একটি বাহিনীসহ তিনি মদীনা থেকে ৩৬ মাইল দূরে বনু ছা‘লাবাহ গোত্রের ‘তারাফ’ (الطَّرَف) অথবা ‘তুরুক্ব’ (طُرُق) নামক স্থানে প্রেরিত হন। কিন্তু শত্রুপক্ষ পালিয়ে যায়। ৪ দিন অবস্থান শেষে গণীমতের ২০টি উট নিয়ে তিনি মদীনায় ফিরে আসেন।[10]

সারিইয়া যায়েদ বিন হারেছাহ

৬ষ্ঠ হিজরীর রজব মাস। ১২ জনের একটি দল নিয়ে ওয়াদিল ক্বোরা(وادي الْقُرَى) এলাকায় প্রেরিত হন শত্রুপক্ষের গতিবিধি লক্ষ্য করার জন্য। কিন্তু এলাকাবাসী তাদের উপরে অতর্কিতে হামলা করে ৯ জনকে হত্যা করে। দলনেতা যায়েদসহ তিনজন কোন মতে রক্ষা পান (আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ)।

[1]. বুখারী হা/৪০৩৯; মিশকাত হা/৫৮৭৬, ‘মু‘জেযা সমূহ’ অনুচ্ছেদ-৭; আর-রাহীক্ব ৩১৯-২০ পৃঃ।
[2]. বুখারী হা/৪৩৭২; মুসলিম হা/১৭৬৪; ইবনু হিশাম ২/৬৩৮-৩৯; যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৮; আর-রাহীক্ব ৩২১ পৃঃ।
[3]. ইবনু হিশাম ২/৬৩৮-৩৯; যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৮; আল-বিদায়াহ ৪/১৪৯।
[4]. ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৫৫০; যাদুল মা‘আদ ৩/২৫০; আর-রাহীক্ব ৩২২ পৃঃ।
[5]. আর-রাহীক্ব ৩২২ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/২৫১; আল-বিদায়াহ ৪/১৪৯।
[6]. আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/২৫০।
[7]. যাদুল মা‘আদ ৩/২৫১; আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ।
[8]. যাদুল মা‘আদ ৩/২৪৬-৪৭; ইবনু হিশাম ২/২৭৯; আর-রাহীক্ব ৩২২ পৃঃ ।
[9]. যাদুল মা‘আদ ৩/২৫২; ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৫৫৩; আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ।
[10]. ওয়াক্বেদী, মাগাযী ২/৫৫৫; যাদুল মা‘আদ ৩/২৫১; আর-রাহীক্ব ৩২৩ পৃঃ।




প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




**************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url