প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-০৮]




দ্বীনের দাওয়াত ও সালাতের নির্দেশনা


দাওয়াতী জীবন

নবীদের দাওয়াতকে গোপনে ও প্রকাশ্যে দু’ভাগে ভাগ করার কোন সুযোগ নেই। কেননা তাঁরা নিজ সম্প্রদায়ের নিকট প্রকাশ্যভাবেই নবুঅতের দাবী নিয়ে দাওয়াত শুরু করেন। প্রত্যেক নবীই তার কওমকে বলেছেন,يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُمْ مِنْ إِلَهٍ غَيْرُهُ ‘হে আমার কওম! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই’।[১] আমাদের নবীও বলেছেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا ‘হে মানবজাতি! আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল..’ (আ‘রাফ ৭/১৫৮)। তবে এটাই স্বাভাবিক যে, আপনজনদের নিকটেই প্রথমে দাওয়াত দেওয়া হয়। আর এই দাওয়াত স্থান-কাল-পাত্রভেদে কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে কখনো সর্বসমক্ষে হয়ে থাকে। ইবনু ইসহাক বিনা সনদে উল্লেখ করেন, তার নিকটে এই মর্মে খবর পৌঁছেছে যে, আল্লাহ তাকে প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দানের আগ পর্যন্ত রাসূল (ছাঃ) তিন বছর গোপনে দাওয়াত দিয়েছেন’ (ইবনু হিশাম ১/২৬২)। ইবনু সা‘দ এবং ওয়াক্বেদীও সে কথা বলেছেন। বালাযুরী এটাকে চার বছর বলেছেন। অনেক জীবনীকার এই মেয়াদের উপর ভিত্তি করে শেষনবী (ছাঃ)-এর দাওয়াতের মেয়াদ নির্দিষ্ট করেছেন। অথচ দাওয়াতের এইরূপ সীমা নির্ধারণ করার কোন দলীল নেই’ (মা শা-‘আ ২৯ পৃঃ)।

যেকোন সংস্কার আন্দোলন শুরু করতে গেলে প্রথমে তা গোপনেই শুরু করতে হয়। পুরা সমাজ যেখানে ভোগবাদিতায় ডুবে আছে, সেখানে ভোগলিপ্সাহীন আখেরাতভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার দাওয়াত নিয়ে অগ্রসর হওয়া সাগরের স্রোত পরিবর্তনের ন্যায় কঠিন কাজ। এ পথের দিশা দেওয়া এবং এ পথে মানুষকে ফিরিয়ে আনা দু’টিই কঠিন বিষয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেকাজের জন্যই আদিষ্ট হয়েছিলেন। অহী প্রাপ্ত হওয়ার পরেই খাদীজার সাথে তিনি সে সময়ে মক্কার বয়োবৃদ্ধ সেরা বিদ্বান অরাক্বা বিন নওফাল-এর কাছে যান। তিনি সবকিছু অবগত হওয়ার পর তাঁকে ভবিষ্যৎ বিরোধিতা ও আসন্ন বিপদ সম্পর্কে সাবধান করে দেন। ফলে তিনি প্রথমে গোপনে দাওয়াত শুরু করেন। যদিও খাদীজা, আলী, আবুবকর, ওছমান প্রমুখদের মত মক্কার সেরা ও প্রসিদ্ধ ব্যক্তিগণের ইসলাম কবুলের পর এই দাওয়াত আদৌ গোপন থাকেনি।

[১]. আ‘রাফ ৭/৫৯, ৬৫, ৭৩, ৮৫; হূদ ১১/৫০, ৬১, ৮৪; মুমিনূন ২৩/২৩; আনকাবূত ২৯/৩৬।

প্রাথমিক মুসলমানগণ

প্রথমেই তাঁর দাওয়াত কবুল করেন মহিলাদের মধ্যে তাঁর পুণ্যশীলা স্ত্রী খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ (রাঃ)। অতঃপর গোলামদের মধ্যে তাঁর মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহ, শিশু-কিশোরদের মধ্যে আলী ইবনু আবী তালিব এবং বয়স্কদের মধ্যে নিকটতম বন্ধু আবুবকর ইবনু আবী কুহাফাহ (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম)।

অতঃপর আবুবকর (রাঃ)-এর দাওয়াতে ইসলাম কবুল করেন একে একে ওছমান, যুবায়ের, আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ, সা‘দ বিন আবু ওয়াক্কাছ ও তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু ‘আনহুম)। এছাড়া আবুবকরের স্ত্রী উম্মে রূমান ও মা বার্রাহ এবং দুই মেয়ে আসমা ও আয়েশা। এছাড়া আবুবকর (রাঃ) কর্তৃক ৭ জন মুক্তদাস-দাসী হ’লেন, ‘আমের বিন ফুহাইরা, উম্মে উবাইস, যিন্নীরাহ, নাহদিয়াহ ও তার মেয়ে এবং বনু মুআম্মাল-এর জনৈকা দাসী এবং বেলাল বিন রাবাহ।[১]

অতঃপর একে একে ইসলাম কবুল করেন আবু ওবায়দাহ ইবনুল জার্রাহ, আবু সালামাহ, আরক্বাম, ওছমান বিন মায‘ঊন ও তাঁর দুই ভাই কুদামাহ ও আব্দুল্লাহ, ওবায়দুল্লাহ বিন হারেছ, সাঈদ বিন যায়েদ ও তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বিন খাত্ত্বাব (ওমরের বোন), খাববাব ইবনুল আরাত, ওমায়ের বিন আবু ওয়াক্কাছ, আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ, মাসঊদ বিন রাবী‘আহ আল-ক্বারী, সালীত্ব বিন আমর ও তাঁর ভাই হাতেব বিন আমর, ‘আইয়াশ বিন আবু রাবী‘আহ ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে সালামাহ, খুনাইস বিন হুযাফাহ, ‘আমের বিন রবী‘আহ, আব্দুল্লাহ বিন জাহশ, জা‘ফর বিন আবু তালিব ও তাঁর স্ত্রী আসমা বিনতে উমায়েস, নু‘আইম বিন আব্দুল্লাহ, খালেদ বিন সাঈদ ইবনুল ‘আছ ও তাঁর স্ত্রী উমাইনাহ বিনতে খালাফ, হাতেব বিন আমর, আবু হুযায়ফা বিন উৎবা, ওয়াক্বিদ বিন আব্দুল্লাহ, খালেদ বিন বুকায়ের ও তার ভাইগণ ‘আমের, ‘আক্বিল ও ইয়াস, ‘আম্মার, পিতা ইয়াসির ও মাতা সুমাইয়া, ছুহায়েব রূমী, আমর বিন আবাসাহ, মিক্বদাদ ইবনুল আসওয়াদ, ‘আফীফ বিন ক্বায়েস।

খাদীজা (রাঃ)-এর পরে রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা আববাস-এর স্ত্রী উম্মুল ফযল ও তাঁর গোলাম আবু রাফে‘ ইসলাম কবুল করেন। ইবনু ইসহাকের বর্ণনা মতে প্রথম তিন বছরে উপরোক্ত ব্যক্তিগণ ইসলাম গ্রহণের পর মক্কায় ইসলাম প্রকাশ্য হয়ে পড়ে ও তা নিয়ে লোকদের মধ্যে আলোচনা হ’তে থাকে’।[২]

উপরে যাদের নামের তালিকা দেওয়া হ’ল, তারা কুরায়েশ বংশের প্রায় সকল শাখা-প্রশাখার সাথে সরাসরি কিংবা আত্মীয়তাসূত্রে যুক্ত ছিলেন। কুরায়েশ নেতাদের কাছে এঁদের খবর পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তারা এটাকে স্রেফ ব্যক্তিগত ধর্মাচার মনে করেছিলেন।[৩] ফলে তাদের অনেকেই কুরায়েশ নেতাদের হাতে চরমভাবে নির্যাতিত হন।
[১]. হাকেম হা/৫২৪১, হাদীছ ছহীহ; ইবনু হিশাম ১/৩১৭-১৯।
[২]. ইবনু হিশাম ১/২৪৫-৬২; আল-বিদায়াহ ৩/২৪-৩২; আর-রাহীক্ব ৭৬ পৃঃ।

প্রসিদ্ধ আছে যে, আলীকে রাসূল (ছাঃ) নিজে লালন-পালন করার কারণেই তিনি প্রথম ইসলাম কবুল করেন। কারণ আবু ত্বালিব ছিলেন বহু পোষ্য বিশিষ্ট একটি বড় পরিবারের অধিকারী। এটা দেখে রাসূল (ছাঃ) তাঁর চাচা আববাসকে বললেন, যিনি ছিলেন বনু হাশিমের মধ্যে অধিকতর সচ্ছল ব্যক্তি। হে আববাস! আপনার ভাই আবু ত্বালিব বড় পরিবারের অধিকারী। তার উপরে কি বিপদ নাযিল হয়েছে তা তো আপনি দেখছেন। অতএব চলুন! আমরা গিয়ে তাঁর পরিবারের বোঝা কিছুটা হালকা করি। অতঃপর তারা গেলেন এবং রাসূল (ছাঃ) আলীকে ও আববাস জা‘ফরকে স্ব স্ব দায়িত্বে গ্রহণ করলেন’ (ইবনু হিশাম ১/২৪৬)। ঘটনাটি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয় (মা শা-‘আ ২১ পৃঃ)। ইবনু আববাস বলেন, খাদীজার পরে আল্লাহর উপর প্রথম ঈমান আনেন আলী’ (আল-ইস্তী‘আব, আলী বিন আবী ত্বালিব ক্রমিক ১৮৫৫; মা শা-‘আ ২২ পৃঃ)।
[৩]. ইবনু হিশাম ১/২৪৭, আর-রাহীক্ব ৭৭ পৃঃ।

সালাতের নির্দেশনা

যেকোন সংস্কার আন্দোলনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আক্বীদার মযবুতী। আর এই মযবুতীর জন্য চাই নিয়মিত আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণ। যা সর্বদা সংস্কারককে তার আদর্শমূলে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে। সেকারণ অধ্যাত্ম সাধনার প্রাথমিক কাজ হিসাবে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে নবুঅতের শুরু থেকেই সকাল ও সন্ধ্যায় দু’বার সালাত আদায়ের নির্দেশনা দান করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ ‘তুমি তোমার প্রভুর প্রশংসা জ্ঞাপন কর সন্ধ্যায় ও সকালে’ (মুমিন/গাফের ৪০/৫৫)।

প্রথম কুরআন নাযিলের পর জিব্রীলের মাধ্যমে তিনি ওযূ ও সালাত শিখেন।[১] হিজরতের স্বল্পকাল পূর্বে মে‘রাজ সংঘটিত হবার আগ পর্যন্ত ফজরের দু’রাক‘আত ও আছরের দু’রাক‘আত করে সালাত আদায়ের নিয়ম জারী থাকে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, শুরুতে সালাত বাড়ীতে ও সফরে ছিল দু’ দু’ রাক‘আত করে।[২] এছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য ‘অতিরিক্ত’ (نَافِلَةً) ছিল তাহাজ্জুদের সালাত (ইসরা/বনু ইস্রাঈল ১৭/৭৯)। সেই সাথে সাহাবীগণও নিয়মিতভাবে রাত্রির নফল সালাত আদায় করতেন।[৩] অতঃপর মি‘রাজের রাত্রিতে নিয়মিতভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করা হয়।[৪] উল্লেখ্য যে, পূর্বেকার সকল নবীর সময়ে সালাত, ছিয়াম ও যাকাত ফরয ছিল। তবে সেসবের ধরন ও পদ্ধতি ছিল কিছুটা পৃথক।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর সাথীগণ প্রথম দিকে গোপনে এই সালাত আদায় করতেন এবং লোকদেরকে গাছ, পাথর, চন্দ্র, সূর্য ইত্যাদির উপাসনা পরিত্যাগ করে আল্লাহর ইবাদত শিক্ষা দিতেন। তিনি কখনো কখনো সাথীদের নিয়ে পাহাড়ের গুহাতে গোপনে সালাত আদায় করতেন। একদিন আবু ত্বালিব স্বীয় পুত্র আলী ও ভাতিজা মুহাম্মাদকে এটা আদায় করতে দেখে কারণ জিজ্ঞেস করেন। সবকিছু শুনে বিষয়টির আধ্যাত্মিক গুরুত্ব উপলব্ধি করে তিনি তাদেরকে উৎসাহিত করেন।[৫]

উর্দূ কবি বলেন,

ہوا كو پهرانا دشور ، موج كو الٹانا دشور
ليكن اتنا نہ جتنا، بهٹكى ہوئى قوم كو راه پر لانا دشور

‘বায়ু প্রবাহ ফিরানো কঠিন, স্রোতকে উল্টানো কঠিন’। ‘কিন্তু অত কঠিন নয়, যত না কঠিন একটা পথভ্রষ্ট জাতিকে সুপথে ফিরিয়ে আনা’।

[১]. আহমাদ হা/১৭৫১৫, দারাকুৎনী হা/৩৯৯, মিশকাত হা/৩৬৬ ‘পবিত্রতা’ অধ্যায় ৩ অনুচ্ছেদ; ছহীহাহ হা/৮৪১।
[২]. মুসলিম হা/৬৮৫; আবুদাঊদ হা/১১৯৮; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১১।
[৩]. মুযযাম্মিল ৭৩/২০; তাফসীরে কুরতুবী।
[৪]. বুখারী হা/৩২০৭; মুসলিম হা/১৬২; মিশকাত হা/৫৮৬২-৬৫ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়-২৯, ‘মি‘রাজ’ অনুচ্ছেদ-৬।
[৫]. ইবনু হিশাম ১/২৪৬-৪৭। তবে বর্ণনাটির সূত্র যঈফ; মাজদী ফাৎহী সাইয়িদ, তাহকীক ইবনু হিশাম (দারুছ ছাহাবা লিত তুরাছ, তান্তা, কায়রো, ১ম সংস্করণ ১৪১৬ হিঃ/১৯৯৫ খৃঃ) ক্রমিক ২৪৫।

দাওয়াতের সারবস্তু

এই সময় দাওয়াতের সারবস্তু ছিল পাঁচটি। (১) তাওহীদ (২) রিসালাত (৩) আখেরাত বিশ্বাস (৪) তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপরে ভরসা এবং উক্ত বিশ্বাসসমূহের আলোকে (৫) তাযকিয়াহ বা আত্মশুদ্ধি অর্জন করা।

বস্ত্ততঃ রাসূল (ছাঃ)-এর সরাসরি নির্দেশনায় এই প্রশিক্ষণ পরিচালিত হ’ত। এভাবে তিনি আত্মিক শক্তিতে বলীয়ান একদল নিবেদিতপ্রাণ মানুষ গড়ে তুলতে সমর্থ হন। যাঁদের হাতেই পরবর্তীকালে ইসলামের বস্তুগত বিজয় সাধিত হয়।

কয়েক বছর যাবৎ সীমিতভাবে দাওয়াত দেওয়ার পর এবার আল্লাহর হুকুম হ’ল বৃহত্তর পরিসরে প্রকাশ্য দাওয়াত দেওয়ার জন্য। নাযিল হ’ল,فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ- إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ ‘অতএব তুমি যে বিষয়ে আদিষ্ট হয়েছ, তা প্রকাশ্যে ব্যক্ত কর এবং মুশরিকদের উপেক্ষা কর’। ‘বিদ্রুপকারীদের বিরুদ্ধে আমরাই তোমার জন্য যথেষ্ট’ (হিজর ১৫/৯৪-৯৫)। আরও নাযিল হ’ল, وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ‘তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক কর’ (শো‘আরা ২৬/২১৪)।

কিন্তু এতে কুরায়েশ নেতাদের প্রতিক্রিয়া যে অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে, সে বিষয়ে আগেভাগেই স্বীয় নবীর মন-মানসিকতাকে প্রস্তুত করে নেন সূরা শো‘আরা নাযিল করে। ২২৭ আয়াত বিশিষ্ট এই বিরাট সূরার শুরুতেই আল্লাহ স্বীয় নবীকে বলেন,لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ أَلاَّ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ، إِنْ نَشَأْ نُنَزِّلْ عَلَيْهِم مِّنَ السَّمَاء آيَةً فَظَلَّتْ أَعْنَاقُهُمْ لَهَا خَاضِعِينَ- (الشعراء ৩-৪) ‘লোকেরা এতে বিশ্বাস স্থাপন করছে না দেখে তুমি হয়ত মর্মবেদনায় নিজেকে শেষ করে ফেলবে’। ‘আমরা চাইলে আকাশ থেকে তাদের উপরে এমন নিদর্শন (শাস্তি) নাযিল করতাম, যার সামনে তাদের গর্দান অবনত হয়ে যেত’ (শো‘আরা ২৬/৩-৪)। এর দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, অহংকারী সমাজনেতাদের আচরণে বেদনাহত হয়ে তাওহীদের দাওয়াত থেকে পিছিয়ে আসা যাবে না। বরং আল্লাহর উপরে ভরসা রেখে বুকে বল নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

এরপর আল্লাহ অতীতের সাতজন শ্রেষ্ঠ নবীর দাওয়াতী জীবন ও তাদের স্ব স্ব কওমের অবাধ্যাচরণ ও তাদের মন্দ পরিণতি সংক্ষেপে আবেগময় ভাষায় বর্ণনা করেছেন। যাতে আগামীতে বৃহত্তর দাওয়াতের রূঢ় প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে শেষনবীর কোনরূপ মনোকষ্ট না হয়। শুরুতেই হযরত মূসা (আঃ)-এর জীবনালেখ্য ১০-৬৮ আয়াত পর্যন্ত, অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) ৬৯-১০৪, তারপর নূহ (আঃ) ১০৫-১২২, অতঃপর হূদ (আঃ)-এর কওমে ‘আদ ১২৩-১২৪, তারপর হযরত ছালেহ (আঃ)-এর কওমে ছামূদ ১৪১-১৫৯, তারপর লূত্ব (আঃ)-এর কওম ১৬০-১৭৫, অতঃপর হযরত শু‘আয়েব (আঃ)-এর কওম আছহাবুল আইকাহ ১৭৬-১৯১ পর্যন্ত তাদের স্ব স্ব কওমের উপর আসমানী গযবসমূহ নাযিল হওয়ার ঘটনাবলী বর্ণনা করার পর সবশেষে আল্লাহ স্বীয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,

فَلاَ تَدْعُ مَعَ اللهِ إِلَهاً آخَرَ فَتَكُوْنَ مِنَ الْمُعَذَّبِيْنَ- وَأَنذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ- وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِيْنَ- فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّيْ بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُوْنَ- وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ- (الشعراء ২১৩-২১৭)-

‘অতএব তুমি আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্যকে আহবান করো না। তাতে তুমি শাস্তিপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’। ‘তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দের সতর্ক কর’। ‘এবং তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি সদয় হও’। ‘অতঃপর যদি তারা তোমার অবাধ্যতা করে, তবে বলে দাও, তোমরা যা কর, তা থেকে আমি মুক্ত’। আর তুমি ভরসা কর মহাপরাক্রমশালী দয়ালু সত্তার উপরে’ (শো‘আরা ২৬/২১৩-১৭)।

উল্লেখ্য যে, কুরআনে বর্ণিত নবীগণের উপরোক্ত ক্রমধারায় আগপিছ রয়েছে। প্রকৃত ক্রমধারা হবে প্রথমে নূহ (আঃ), অতঃপর হূদ, অতঃপর ছালেহ, অতঃপর ইবরাহীম, লূত্ব, শু‘আয়েব ও মূসা (‘আলাইহিমুস সালাম)। কুরআনের বর্ণনাভঙ্গি অনুযায়ী বিভিন্ন স্থানে এরূপ আগপিছ হয়েছে। কেননা ধারাবাহিক ইতিহাস বর্ণনা করা নয়, বরং বিষয়বস্ত্ত পেশ করাই হ’ল কুরআনের মূল উদ্দেশ্য।

এলাহী নির্দেশের সারকথা

বর্ণিত পাঁচটি আয়াতের প্রথমটিতে (২১৩) রাসূল (ছাঃ)-কে তাওহীদের উপরে দৃঢ় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং সম্প্রদায়ের ভয়ে শিরকের সাথে আপোষ করলে এলাহী গযবের ধমকি প্রদান করা হয়েছে। দ্বিতীয় আয়াতে (২১৪) নিজ নিকটাত্মীয়দেরকে জাহান্নাম হ’তে সতর্ক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে’। এতে অবশ্যই একদল তাঁর পক্ষে আসবে, একদল তার বিপক্ষে যাবে। এটা নিশ্চিত জেনেই বলা হয়েছে, তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি তুমি সদয় হও এবং বিরোধীদের বলে দাও যে, তোমাদের কর্মের ব্যাপারে আমি দায়মুক্ত। কেননা আমার দায়িত্ব ছিল তোমাদেরকে আল্লাহর পথে ডাকা। সে দায়িত্ব আমি পালন করেছি। না মানলে তার ফল ভোগ করবে তোমরাই। শেষে বলা হয়েছে, তাদের বিরোধিতায় তুমি মোটেই ঘাবড়াবেনা। বরং সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপরে ভরসা করবে।

শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ
(১) সমাজ পরিবর্তনের মত কঠিন দায়িত্ব পালনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সংস্কারকদের স্ব স্ব আক্বীদা-বিশ্বাস দৃঢ় করণ। নবুঅত লাভের পরপরই ছালাত ফরযের মাধ্যমে আল্লাহর পক্ষ হ’তে সে ব্যবস্থাই করা হয়েছে।

(২) আল্লাহর যিকরের প্রধান অনুষ্ঠান হ’ল ছালাত। এর বাইরে বিভিন্ন বানোয়াট যিকরের অনুষ্ঠানাদি বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত।

(৩) বৈরী পরিবেশে প্রথমে গোপন দাওয়াতের মাধ্যমে সমর্থক সৃষ্টি ও মানুষ তৈরীই যুক্তিযুক্ত। রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াতী নীতিতে সেটাই দেখা যায়।

(৪) সমাজে সর্বদা ভাল ও মন্দ দু’ধরনের লোকের অস্তিত্ব থাকে। সংস্কারকের দাওয়াতে প্রথমে ভাল লোকেরা সাড়া দেয়। যদিও তারা সংখ্যায় কম হয় এবং দুষ্টু সমাজনেতাদের চাপে সমাজে কোনঠাসা হয়ে থাকে।

(৫) কেবলমাত্র আখেরাতমুখী দাওয়াতই মানুষকে দুনিয়া ত্যাগে উদ্বুদ্ধ করে এবং সংস্কার আন্দোলনকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।

ছাফা পাহাড়ের দাওয়াত

নিকটাত্মীয়দের প্রতি প্রকাশ্যে দাওয়াত দেওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কুরায়েশ বংশের সকল গোত্রকে একত্রিত করে তাদের সামনে দাওয়াত দেবার মনস্থ করলেন। তৎকালীন সময়ে নিয়ম ছিল যে, বিপদসূচক কোন খবর থাকলে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার দিয়ে আহবান করতে হ’ত। আসন্ন কোন বিপদের আশংকা করে তখন সবাই সেখানে ছুটে আসত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেমতে একদিন ছাফা পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চিৎকার দিয়ে ডাক দিলেন,يَا صَبَاحَاه (প্রত্যুষে সবাই সমবেত হও!)। কুরায়েশ বংশের সকল গোত্রের লোক দ্রুত সেখানে জমা হয়ে গেল। অতঃপর তিনি বললেন, হে কুরায়েশগণ! আমি যদি বলি, এই পাহাড়ের অপর পার্শ্বে একদল শক্তিশালী শত্রুসৈন্য তোমাদের উপরে হামলার জন্য অপেক্ষা করছে, তাহ’লে কি তোমরা সে কথা বিশ্বাস করবে? সকলে সমস্বরে বলে উঠল, অবশ্যই করব। কেননাمَا جَرَّبْنَا عَلَيْكَ إِلاَّ صِدْقًا ‘আমরা এযাবৎ তোমার কাছ থেকে সত্য ব্যতীত কিছুই পাইনি’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন,فَإِنِّىْ نَذِيْرٌ لَكُمْ بَيْنَ يَدَىْ عَذَابٍ شَدِيْدٍ ‘আমি ক্বিয়ামতের কঠিন আযাবের প্রাক্কালে তোমাদের নিকটে সতর্ককারী রূপে আগমন করেছি’।[১]

অতঃপর তিনি আবেগময় কণ্ঠে এক একটি গোত্রের নাম ধরে ধরে ডেকে বলতে থাকলেন,يَامَعْشَرَ قُرَيْشٍ! أَنْقِذُوْا أَنْفُسَكُمْ مِنَ النَّارِ ‘হে কুরায়েশগণ! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে বনু কা‘ব বিন লুওয়াই! হে বনু ‘আব্দে মানাফ!... হে বনু ‘আব্দে শাম্স!.. হে বনু হাশেম!... হে বনু আব্দিল মুত্ত্বালিব! তোমরা নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। অতঃপর ব্যক্তির নাম ধরে ধরে বলেন, হে (চাচা) আববাস বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! হে (ফুফু) ছাফিইয়াহ! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও। অবশেষেيَا فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ! أَنْقِذِىْ نَفْسَكِ مِنَ النَّارِ، سَلِيْنِىْ مَا شِئْتِ مِنْ مَالِىْ، وَاللهِ لاَ أُغْنِيْ عَنْكِ مِنَ اللهِ شَيْئًا ‘হে মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমা! তুমি নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও! তুমি আমার মাল-সম্পদ থেকে যা খুশী নাও! কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে আল্লাহর পাকড়াও হ’তে রক্ষা করতে পারব না’।

এই মর্মস্পর্শী আবেদন গর্বোদ্ধত চাচা আবু লাহাবের অন্তরে দাগ কাটেনি। তিনি মুখের উপর বলে দিলেন-تَبًّا لَكَ سَائِرَ الْيَوْمِ، أَلِهَذَا جَمَعْتَنَا؟ ‘সকল দিনে তোমার উপরে ধ্বংস আপতিত হৌক! এজন্য তুমি আমাদের জমা করেছ?’ অতঃপর সূরা লাহাব নাযিল হয়تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ ‘ধ্বংস হৌক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হৌক সে নিজে’।[২]

এভাবে নিজ সম্প্রদায়কে এবং বাজারে-ঘাটে সর্বত্র বিশেষ করে হজ্জের মৌসুমে সকলকে উদ্দেশ্য করে তিনি প্রকাশ্যে দাওয়াত দিতে থাকেন এই মর্মে যে,قُوْلُوْا لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوْا ‘তোমরা বল আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তাহলে তোমরা সফলকাম হবে’।[৩]

[১]. বুখারী হা/৪৭৭০; মুসলিম হা/২০৮; মিশকাত হা/৫৩৭২, ৫৮৪৬।
[২]. বুখারী হা/২৭৫৩, মুসলিম হা/২০৮; মিশকাত হা/৫৩৭২-৭৩।
[৩]. আহমাদ হা/১৬০৬৬, সনদ হাসান; হাকেম হা/৩৯, ৪২১৯ সনদ ছহীহ।

উল্লেখ্য যে, নিকটাত্মীয়দের দাওয়াত দেওয়ার আদেশ পালন করতে গিয়ে রাসূল (ছাঃ) প্রথমে বনু হাশেম ও বনু আব্দুল মুত্ত্বালিবের ৪৫জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিকে বাড়িতে দাওয়াত দেন। কিন্তু আবু লাহাবের বিরোধিতার কারণে উক্ত দাওয়াত ব্যর্থ হ’লে পুনরায় দ্বিতীয়বার তাদেরকে দাওয়াত দেন। তখন আবু লাহাব প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেন এবং আবু ত্বালেব তাঁকে আমৃত্যু সাহায্য করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন (আর-রাহীক্ব ৭৮-৭৯ পৃঃ) মর্মে বক্তব্যগুলির কোন বিশুদ্ধ ভিত্তি নেই (সীরাহ ছহীহাহ ১/১৪২-৪৩)।

আবু লাহাবের পরিচয়

(১) আবু লাহাব ছিলেন আব্দুল মুত্ত্বালিবের অন্যতম পুত্র। তার নাম ছিল আব্দুল ‘উযযা। গৌর-লাল বর্ণ ও সুন্দর চেহারার অধিকারী হওয়ার কারণে তাকে ‘আবু লাহাব’ অর্থাৎ ‘অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ওয়ালা’ বলা হ’ত। আল্লাহ তার জন্য এই নামই পসন্দ করেছেন। কেননা এর মধ্যে তার জাহান্নামী হওয়ার দুঃসংবাদটিও লুকিয়ে ছিল। তাছাড়া আব্দুল ‘উযযা নাম কুরআনে থাকাটা তাওহীদের সাথে সাংঘর্ষিক। আবু লাহাব ছিলেন রাসূল (ছাঃ)-এর আপন চাচা এবং নিকটতম প্রতিবেশী। (২) তার দুই ছেলে উৎবা ও উতাইবার সাথে নবুঅত-পূর্বকালে রাসূল (ছাঃ)-এর দুই মেয়ে রুক্বাইয়া ও উম্মে কুলছূমের বিবাহ হয়। কিন্তু নবী হওয়ার পরে তিনি তার ছেলেদেরকে তাদের স্ত্রীদের তালাক দিতে বাধ্য করেন। এই দুই মেয়েই পরবর্তীতে একের পর এক হযরত ওছমান (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। (৩) নবুঅত লাভের পর দ্বিতীয় পুত্র আব্দুল্লাহ (যার লকব ছিল ত্বাইয়েব ও ত্বাহের) মারা গেলে তিনি খুশীতে বাগবাগ হয়ে সবার কাছে গিয়ে বলেন, মুহাম্মাদ এখন লেজকাটা নির্বংশ (الْأَبْتَرُ) হয়ে গেল। যার প্রেক্ষিতে সূরা কাওছার নাযিল হয়। কেননা সেযুগে কারু ছেলে সন্তান না থাকলে তাকে উক্ত নামে অভিহিত করা হ’ত।[১] (৪) হজ্জের মৌসুমে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর পিছে লেগে থাকতেন। যেখানেই রাসূল (ছাঃ) দাওয়াত দিতেন, সেখানেই তিনি তাঁকে গালি দিয়ে লোকদের ভাগিয়ে দিতেন।[১]

[1]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা কাওছার ৩ আয়াত।
[2]. আহমাদ হা/১৬০৬৬; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৫৯, হাকেম হা/৪২১৯, ২/৬১১।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




******************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url