প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৪৬ (প্রথম অংশ] || মহানবীর জীবনী ||




মক্কা বিজয়ের পরবর্তি অভিযানসমূহ


[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]


মক্কা বিজয়ের পর বিভিন্ন এলাকায় সেনাদল প্রেরণ

সারিইয়া খালেদ বিন অলীদ

মক্কা বিজয়ের এক সপ্তাহ পরে ২৫শে রামাযান তারিখে খালেদ বিন অলীদের নেতৃত্বে ৩০ জনের একটি অশ্বারোহী দল মক্কা থেকে উত্তর-পূর্বে ত্বায়েফের পথে ৪০ কি. মি. দূরে নাখলায় প্রেরিত হয় ‘উযযা’ (الْعُزَّى) মূর্তি ধ্বংস করার জন্য। এই মূর্তিটি ছিল কুরায়েশ ও বনু কেনানাহ গোত্রের পূজিত সবচেয়ে বড় মূর্তি। খালেদ বিন অলীদ (রাঃ) মূর্তিটি ভেঙ্গে দিয়ে চলে এলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا؟ ‘কিছু দেখেছ কি’? বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তাহ’লে তুমি ভাঙ্গোনি। আবার যাও ওটা ভেঙ্গে এসো’। এবার খালেদ উত্তেজিত হয়ে কোষমুক্ত তরবারি নিয়ে ছুটলেন এবং সেখানে যেতেই এক কৃষ্ণাঙ্গ ও বিস্রস্ত চুল বিশিষ্ট নগ্ন মহিলাকে তাদের দিকে বেরিয়ে আসতে দেখেন। তাকে দেখে মন্দির প্রহরী চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিন্তু খালেদ তাকে এক কোপে দ্বিখন্ডিত করে ফেললেন। তারপর রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ফিরে এসে রিপোর্ট করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,نَعَمْ تِلْكَ الْعُزَّى وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تُعْبَدَ فِي بِلاَدِكُمْ أَبَدًا ‘হ্যাঁ এটাই ‘উযযা। তোমাদের দেশে পূজা পাওয়ার ব্যাপারে সে এখন চিরকালের জন্য নিরাশ হয়ে গেল’।[1]إِنْ يَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهِ إِلاَّ إِنَاثًا ‘মূর্তিপূজারীরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে নারীদের আহবান করে’ (নিসা ৪/১১৭)-এর ব্যাখ্যায় উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন,مَعَ كُلِّ صَنَمٍ جِنِّيَّةٌ ‘প্রত্যেক মূর্তির সাথে একজন করে নারী জিন থাকে’ (আহমাদ হা/২১২৬৯, সনদ হাসান)। এরা মানুষকে অলক্ষ্যে থেকে প্রলুব্ধ করে এবং দলে দলে লোকেরা বিভিন্ন মূর্তি, প্রতিকৃতি, বেদী, মিনার ও কবরে গিয়ে অযথা শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং মিথ্যা আশায় প্রার্থনা করে। যে বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হ’তে কোনরূপ দলীল অবতীর্ণ হয়নি।[2]

সারিইয়া আমর ইবনুল ‘আছ

আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ)-কে একদল সৈন্যসহ রামাযান মাসেই পাঠানো হয় হুযায়েল(بنو هُذَيل) গোত্রের পূজিত সুওয়া‘ (سُوَاع) নামক বড় মূর্তিটি চূর্ণ করার জন্য। যা ছিল মক্কা থেকে উত্তর-পশ্চিমে ২৫ কি. মি. দূরে রিহাত্ব (رِهَاط) অঞ্চলে। আমর সেখানে পৌঁছলে মন্দির প্রহরী বলল, কি চাও তোমরা? আমর বললেন, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) এটাকে ভাঙ্গার জন্য আমাকে পাঠিয়েছেন’। সে বলল, তোমরা সক্ষম হবে না’। আমর বললেন, কেন? সে বলল, তোমরা (প্রাকৃতিকভাবে) বাধাপ্রাপ্ত হবে’। আমর বললেন,حَتَّى الآن أَنْتَ عَلَى الْبَاطِلِ؟ فَهَلْ يَسْمَعُ أَوْ يَبْصِرُ؟ ‘তুমি এখনো বাতিলের উপরে রয়েছ? সে কি শুনতে পায়, না দেখতে পায়?’ বলেই তিনি ওটাকে গুঁড়িয়ে দিলেন। অতঃপর প্রহরীকে বললেন, এবার তোমার মত কি? সে বলে উঠলো, أَسْلَمْتُ للهِ ‘আমি আল্লাহর জন্য ইসলাম কবুল করলাম’।[3]

সারিইয়া সা‘দ বিন যায়েদ আশহালী

একই মাসের মধ্যে ২০ জন অশ্বারোহী সহ সা‘দ বিন যায়েদ আশহালীকে পাঠানো হয় আরেকটি প্রসিদ্ধ মূর্তি মানাত (مَنَاة)-কে গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য। যা ছিল মক্কা থেকে উত্তর-পূর্বে ১৫০ কি. মি. দূরে কুদাইদ(قُدَيْد) এর নিকটবর্তী মুশাল্লাল(مُشَلَّل) নামক স্থানে অবস্থিত এবং যা ছিল আউস, খাযরাজ, গাসসান ও অন্যান্য গোত্রের পূজিত দেবমূর্তি। সা‘দ মূর্তিটির দিকে অগ্রসর হ’তেই একটি নগ্ন, কৃষ্ণাঙ্গ ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট নারীকে বুক চাপড়াতে চাপড়াতে বেরিয়ে আসতে দেখেন। এই সময় সে কেবল হায় হায়(تَدْعُو بِالْوَيْلِ) করছিল। সা‘দ তাকে এক আঘাতে খতম করে দিলেন। অতঃপর মূর্তি ও ভান্ডার গৃহ ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিলেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৫)।

সারিইয়া খালেদ বিন অলীদ

৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে খালেদ বিন অলীদের নেতৃত্বে মুহাজির, আনছার ও বনু সুলায়েম গোত্রের সমন্বয়ে ৩৫০ জনের একটি দলকে বনু জুযায়মাহ(بَنُو جُذَيْمَة) গোত্রে পাঠানো হয় তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য, লড়াই করার জন্য নয়। বনু জুযায়মা মক্কা থেকে দক্ষিণে জেদ্দার নিকটবর্তী ইয়ালামলামের কাছে ৮০ কি. মি. দূরে অবস্থিত (সীরাহ ছহীহাহ ২/৪৯২-৯৩)। কিন্তু যখন তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া হ’ল, তখন তারা أَسْلَمْنَا ‘আমরা ইসলাম কবুল করলাম’ না বলেصَبَأْنَا صَبَأْنَا ‘আমরা ধর্মত্যাগী হয়েছি’ ‘ধর্মত্যাগী হয়েছি’ বলল। এতে খালেদ তাদেরকে হত্যা করতে থাকেন ও বন্দী করতে থাকেন এবং পরে প্রত্যেকের নিকটে ধৃত ব্যক্তিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। কিন্তু বনু সুলায়েম ব্যতীত মুহাজির ও আনছার ছাহাবীগণ কেউ এই নির্দেশ মান্য করেননি। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) ও তাঁর সাথীগণ ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সব ঘটনা খুলে বললে তিনি খুবই ব্যথিত হন এবং আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়ে দু’বার বলেন,اللَّهُمَّ إِنٍّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدٌ ‘হে আল্লাহ! খালেদ যা করেছে আমি তা থেকে তোমার নিকটে নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করছি’।[4]

পরে আলী (রাঃ)-কে পাঠিয়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) নিহত ব্যক্তিদের রক্তমূল্য এবং অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দান করেন।[5] উল্লেখ্য যে, খালেদ বিন অলীদ ও আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ) ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে এবং বনু সুলায়েম মুতা যুদ্ধের পর ৮ম হিজরীর শেষার্ধ্বে ইসলাম কবুল করেন। সে হিসাবে এঁরা সবাই ছিলেন প্রথম দিকের ছাহাবীগণের তুলনায় নূতন মুসলমান।

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৫; নাসাঈ কুবরা হা/১১৫৪৭; ত্বাবাক্বাত ইবনু সা‘দ ২/১৪৫-৪৬।
[2]. মুসনাদে আবু ইয়া‘লা হা/৯০২ সনদ ছহীহ; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৪-৬৫।
[3]. তারীখ ত্বাবারী ৩/৬৬; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৫; ইবনু সা‘দ, ত্বাবাক্বাতুল কুবরা ২/১৪৬।
[4]. বুখারী হা/৪৩৩৯; ঐ, মিশকাত হা/৩৯৭৬ ‘জিহাদ’ অধ্যায়-১৯, ‘বন্দীদের হুকুম’ অনুচ্ছেদ-৫।
এখানে প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) খালেদকে উদ্দেশ্য করে বলেন, مَهْلاً يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِى، فَوَ اللهِ لَوْ كَانَ لَكَ أُحُدٌ ذَهَبًا ثُمَّ أَنْفَقْتُهُ فِي سَبِيلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غَدْوَةَ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِي وَلاَ رَوْحَتَهُ ‘থেমে যাও খালেদ! আমার ছাহাবীগণ থেকে বিরত হও। আল্লাহর কসম! যদি তোমার জন্য ওহোদ পাহাড় সোনা হয়ে যায়। আর তা সবটাই তুমি আল্লাহর রাস্তায় খরচ কর, তথাপি আমার একজন ছাহাবীর একটি সকাল বা একটি সন্ধ্যার (নেকীর) সমপর্যায়ে তুমি পৌঁছতে পারবে না’ (আর-রাহীক্ব ৪১০-১১ পৃঃ; যাদুল মা‘আদ ৩/৩৬৬; আল-বিদায়াহ ৪/৩১৪; ইবনু হিশাম ২/৪৩১, সনদ মু‘যাল বা যঈফ; (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৭২০)। এ বিষয়ে ছহীহ হাদীছ হ’ল, لاَ تَسُبُّوا أَصْحَابِى، فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلاَ نَصِيفَهُ ‘তোমরা আমার ছাহাবীদের গালি দিয়োনা। যদি তোমাদের কেউ ওহোদ পরিমাণ স্বর্ণ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তথাপি সে তাদের একজনের সিকি ছা‘ বা তার অর্ধেক পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না’ (বুখারী হা/৩৬৭৩; মুসলিম হা/২৫৪০-৪১; মিশকাত হা/৫৯৯৮)।
[5]. মানছূরপুরী তাঁর প্রদত্ত যুদ্ধ তালিকার ৭৩ ক্রমিকে কোনরূপ সূত্র ছাড়াই এখানে নিহতের সংখ্যা ৯৫ লিখেছেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ২/২০০)।

মক্কা বিজয়ের গুরুত্ব

(১) ৬ষ্ঠ হিজরীতে হোদায়বিয়াহর সন্ধিকে আল্লাহ ‘ফাতহুম মুবীন’ বা স্পষ্ট বিজয় অভিহিত করে যে আয়াত নাযিল করেছিলেন (ফাৎহ ৪৮/১), ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয় ছিল তার বাস্তব রূপ। প্রকৃত অর্থে মক্কা বিজয় ছিল কুফর ও ইসলামের মধ্যে ফায়ছালাকারী বিজয়, যা মুশরিক নেতাদের অহংকার চূর্ণ করে দেয় এবং মক্কা ও আরব উপদ্বীপ থেকে শিরক নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যা অদ্যাবধি সেখানে আর ফিরে আসেনি। ইনশাআল্লাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত আর ফিরে আসবে না।

(২) মক্কা বিজয়ের ফলে মুসলমানদের শক্তিমত্তা এবং সেই সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর অতুলনীয় রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। যা সকলকে মাথা নত করতে বাধ্য করে।

(৩) মক্কা বিজয়ের ফলে ইসলাম কবুলকারীর সংখ্যা বিপুল হারে বেড়ে যায়। ফলে মাত্র ১৯ দিন পরে হোনায়েন যুদ্ধে গমনের সময় মক্কা থেকেই নতুন দু’হাযার সৈন্য মুসলিম বাহিনীতে যুক্ত হয়। যাদের মধ্যে আবু সুফিয়ানসহ মক্কার বড় বড় নেতারা শামিল ছিলেন। যারা কিছুদিন আগেও ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।

(৪) মক্কা বিজয়ের ফলে সমগ্র আরব উপদ্বীপের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব মুসলমানদের হাতে এসে যায়। যা এতদিন মক্কার মুশরিকদের একচ্ছত্র অধিকারে ছিল।

(৫) মক্কা বিজয়ের ফলে আরব উপদ্বীপে মদীনার ইসলামী খেলাফত অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ফলে বাইরের পরাশক্তি ক্বায়ছার ও কিসরা তথা রোমক ও পারসিক শক্তি ব্যতীত তৎকালীন বিশ্বে মদীনার তুলনীয় কোন শক্তি আর অবশিষ্ট রইল না। রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী উক্ত দুই পরাশক্তি খেলাফতে রাশেদাহর যুগে মুসলিম শক্তির নিকটে পর্যুদস্ত হয় এবং মদীনার ইসলামী খেলাফত একমাত্র বিশ্বশক্তি হিসাবে আবির্ভূত হয়। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।

মক্কা বিজয় থেকে প্রাপ্ত বিধান সমূহ

(১) রামাযান মাসে শুভ উদ্দেশ্যে সফরের সময় ছিয়াম রাখা বা না রাখা দু’টিই জায়েয। যেমন এই সফরে রাসূল (ছাঃ) ছায়েম ছিলেন। কিন্তু পরে ভেঙ্গেছিলেন। আবার অনেকে ছিয়াম ছিলেন না’ (মুসলিম হা/১১১৩-১৪)।

(২) হালকাভাবে ৮ রাক‘আত ‘ছালাতুয যোহা’ আদায় করা’ (বুখারী হা/৩৫৭; মুসলিম হা/৩৩৬)। তবে ইবনু কাছীর বলেন, এটি ছিল বিজয়োত্তর শুকরিয়ার ছালাত, যা তিনি দুই দুই রাক‘আত করে পড়েছিলেন। পরে এটিই রীতি হয়ে যায়, যেমন সা‘দ ইবনু আবী ওয়াকক্বাছ মাদায়েন বিজয়ের দিন এটা পড়েন।[1]

(৩) মুসাফিরের জন্য ছালাত ক্বছর করার মেয়াদ নির্ধারণ। যেমন রাসূল (ছাঃ) মক্কায় ১৯ দিন অবস্থানকালে ছালাতে ক্বছর করেছেন (বুখারী হা/৪২৯৮)। তবে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় ১৯ দিনের বেশী হ’লেও ‘ক্বছর’ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাবূক অভিযানের সময় সেখানে ২০ দিন যাবৎ ‘ক্বছর’ করেন।[2]

(৪) কারু জন্য মহিলাদের আশ্রয় গ্রহণ সিদ্ধ। যেমন উম্মে হানী তাঁর দেবরদ্বয়ের জন্য আশ্রয় চেয়েছিলেন (বুখারী হা/৩৫৭; মুসলিম হা/৩৩৬ (৮২)।

(৫) একদিনের জন্য হালাল করার পর মক্কায় রক্তপাত চিরদিনের জন্য হারাম করা হয় (বুখারী হা/২৪৩৪)।

(৬) ‘মুৎ‘আ’ বিবাহ ক্বিয়ামত পর্যন্ত হারাম করা হয় (মুসলিম হা/১৪০৬ (২১)।

(৭) যার বিছানায় সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সন্তানের পিতা সেই হবে (বুখারী হা/২০৫৩)।

(৮) মুসলিম স্ত্রীর সাথে মুশরিক স্বামীর বিবাহ বহাল থাকবে, যদি স্বামী ইসলাম কবুল করেন। যেমন ছাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং ইকরিমা বিন আবু জাহলের বিবাহ বহাল রাখা হয়েছিল।[3]

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রায় ছয় বছর পর স্বীয় কন্যা যয়নবকে পূর্বের বিবাহের উপর মক্কা বিজয়ের কিছু পূর্বে তার নওমুসলিম স্বামী আবুল ‘আছের নিকট সমর্পণ করেন।[4]

(৯) স্ত্রী তার স্বামীর মাল থেকে বৈধভাবে খরচ করতে পারে তাকে না জানিয়ে। যেমন হিন্দা প্রশ্ন করেছিলেন স্বামী আবু সুফিয়ানের কৃপণতার ব্যাপারে (বুখারী হা/৩৮২৫)।

(১০) কালো খেযাব ব্যতীত অন্য কোন রং দিয়ে সাদা চুল-দাড়ি রঞ্জিত না করার বিধান জারী হয় (মুসলিম হা/২১০২ (৭৯)।

[1]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা নছর, ৮/৪৮২।
[2]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ১৮৭ পৃঃ; মিরক্বাত ৩/২২১; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/২১৩-১৪।
[3]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, শরহ যুরক্বানী হা/১১৩৬-৫৬, ৩/২৩৮-৪০; ইবনু হিশাম ২/৪১৭-১৮।
[4]. ইবনু হিশাম ১/৬৫৭; তিরমিযী হা/১১৪৩; আবুদাঊদ হা/২২৪০। দ্রঃ সারিইয়া ক্রমিক ৪০।

মক্কা বিজয়ের শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ

১। সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরন্তন। উভয়ের মধ্যে আপোষের কোন সুযোগ নেই। অবশেষে মিথ্যা পরাভূত হয়।

২। সত্যসেবীগণের সাথে আল্লাহ থাকেন। যখন তিনি তাদের দুনিয়াবী বিজয় দান করতে ইচ্ছা করেন, তখন তার জন্য তিনি কারণ সৃষ্টি করে দেন। যেমন দশ বছরের সন্ধিচুক্তি দু’বছরের মধ্যে ভঙ্গ হয় মিথ্যার পূজারীদের হাতেই এবং তার কারণে মক্কা বিজয় ত্বরান্বিত হয়।

৩। ইসলাম তার অন্তর্নিহিত ঈমানী শক্তির জোরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে, অস্ত্রশক্তির জোরে নয়। সেকারণ বাহ্যিকভাবে হীনতা স্বীকার করেও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) হোদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। যাতে শান্তির পরিবেশে ইসলাম প্রচার করা সম্ভব হয়। ফলে ইসলাম কবুলকারীর সংখ্যা এত দ্রুত বৃদ্ধি পায় যে, হোদায়বিয়ার সাথীদের সংখ্যা যেখানে ১৪০০ ছিল, মাত্র দু’বছরের মাথায় মক্কা বিজয়ের সফরে তা বেড়ে ১০,০০০ হয়।

৪। প্রতিশোধ গ্রহণের মাধ্যমে নয়, উদারতার মাধ্যমেই শত্রুকে স্থায়ীভাবে পরাভূত করা সম্ভব। মক্কা বিজয়ের পর শত্রুদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। আর এটি ছিল বিশ্ব ইতিহাসে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার এক অনন্য দলীল। এজন্যেই বলা হয় যে, মক্কা বিজয় অস্ত্রের মাধ্যমে হয়নি। বরং উদারতার মাধ্যমে হয়েছিল।

৫। সামাজিক শান্তি ও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই কেবল ইসলাম হত্যার বদলে হত্যা সমর্থন করে। নইলে ইসলামের মূলনীতি হ’ল সাধ্যপক্ষে রক্তপাত এড়িয়ে চলা।




প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url