প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব-০৫]



মায়ের মৃত্যু ও শিশু মুহাম্মাদের কিছু বরকতময় নিদর্শন


আমেনার ইয়াছরিব গমন ও মৃত্যুবরণ

প্রাণাধিক সন্তানকে কাছে পেয়ে আমেনা তার প্রাণপ্রিয় স্বামীর কবর যেয়ারত করার মনস্থ করেন। শ্বশুর আব্দুল মুত্ত্বালিব সব ব্যবস্থা করে দেন। সেমতে পুত্র মুহাম্মাদ ও পরিচারিকা উম্মে আয়মনকে সাথে নিয়ে তিনি মক্কা থেকে প্রায় ৪৬০ কিঃ মিঃ উত্তরে মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। অতঃপর যথাসময়ে মদীনায় পৌঁছে নাবেগা আল-জা‘দীর পারিবারিক গোরস্থানে স্বামীর কবর যেয়ারত করেন। অতঃপর সেখানে এক মাস বিশ্রাম নেন। এরপর পুনরায় মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। কিন্তু কিছু দূর এসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ‘আবওয়া’ (الأَبْوَاء) নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। যা বর্তমানে মদীনা থেকে মক্কার পথে ২৫০ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত একটি শহরের নাম। উম্মে আয়মন শিশু মুহাম্মাদকে মক্কায় নিয়ে আসেন। এভাবে জন্ম থেকে পিতৃহারা ইয়াতীম মুহাম্মাদ মাত্র ৬ বছর বয়সে মাতৃহারা হ’লেন (ইবনু হিশাম ১/১৬৮)।

দাদার স্নেহনীড়ে মুহাম্মাদ

পিতৃ-মাতৃহীন ইয়াতীম মুহাম্মাদ এবার এলেন প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিবের স্নেহনীড়ে। আব্দুল মুত্ত্বালিব নিজেও ছিলেন জন্ম থেকে ইয়াতীম। সেই শিশুকালের ইয়াতীম আব্দুল মুত্ত্বালিব আজ বৃদ্ধ বয়সে নিজ ইয়াতীম পৌত্রের অভিভাবক হন। কিন্তু এ স্নেহনীড় বেশী দিন স্থায়ী হয়নি।

মাত্র দু’বছর পরে শিশু মুহাম্মাদের বয়স যখন ৮ বছর, তখন তার দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব ৮২ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। ফলে তাঁর অছিয়ত অনুযায়ী আপন চাচা আবু ত্বালিব তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং আমৃত্যু প্রায় চল্লিশ বছর যাবৎ তিনি ভাতীজার যোগ্য অভিভাবক হিসাবে জীবনপাত করেন।[১]

[১]. ইবনু হিশাম ১/২২৩, ২৩৫, ত্বাবাক্বাত ইবনে সা‘দ ১/১১৭-১৮। বর্ণনাটির সনদ ‘যঈফ’ (তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৭০)।

শিশু মুহাম্মাদের কিছু বরকতময় নিদর্শন

(১) ধাত্রীমাতা হালীমা সা‘দিয়াহ বলেন, ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় আমার বুকের দুধ শুকিয়ে গিয়েছিল। বাহন মাদী গাধাটির অবস্থাও ছিল করুণ। কেননা এ সময় আরব ভূমিতে দুর্ভিক্ষের বছর চলছিল। ফলে বেশী অর্থ পাবে না বলে ইয়াতীম মুহাম্মাদকে কেউ নিতে চাচ্ছিল না। অবশেষে আমি তাকে নিতে সম্মত হ’লাম। অতঃপর যখন তাকে বুকে রাখলাম, তখন সে এবং আমার গর্ভজাত সন্তান দু’জনে পেট ভরে আমার বুকের দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেল। ওদিকে উটনীর পালান দুধে ভরে উঠল। যার দুধ আমরা সবাই তৃপ্তির সাথে পান করলাম। তখন আমার স্বামী হারেছ বললেন, ‘হালীমা! আল্লাহর কসম! তুমি এক মহা ভাগ্যবান সন্তান লাভ করেছ’। তারপর বাড়ীতে ফিরে আসার সময় দেখা গেল যে, আমাদের সেই দুর্বল মাদী গাধাটি এত তেযী হয়ে গেছে যে, কাফেলার সবাইকে পিছনে ফেলে সে এগিয়ে যাচ্ছে। যা দেখে সবাই বিস্মিত হয়ে গেল।

(২) বাড়ীতে ফিরে এসে দেখা গেল আমাদের রাখাল যে চারণভূমিতে পশুপাল নিয়ে যেত অন্যান্য রাখালরাও সেখানে তাদের পশুপাল নিয়ে যেত। কিন্তু তাদের পশুগুলো ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরত। অথচ আমাদের পশুপাল তৃপ্ত অবস্থায় এবং পালানে দুধভর্তি অবস্থায় বাড়ী ফিরত। এভাবে আমরা প্রতিটি ব্যাপারেই বরকত লক্ষ্য করলাম এবং আমাদের সংসারে সচ্ছলতা ফিরে এল।[১]

(৩) কা‘বা চত্বরের যে নির্দিষ্ট স্থানটিতে দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব বসতেন, সেখানে তার জন্য নির্দিষ্ট আসনে কেউ বসতো না। কিন্তু শিশু মুহাম্মাদ ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি এসে সরাসরি দাদার আসনেই বসে পড়তেন। তার চাচারা তাকে সেখান থেকে নামিয়ে দিতে চাইলে দাদা আব্দুল মুত্ত্বালিব তাকে নিজের কাছেই বসাতেন ও গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলতেন,دَعُوا ابْنِي فَوَاللهِ إنَّ لَهُ لَشَأْنًا ‘আমার এ বেটাকে ছেড়ে দাও। আল্লাহর কসম এর মধ্যে বিশেষ কিছু শুভ লক্ষণ আছে’।[২]

উল্লেখ্য যে, ভাতীজার প্রশংসায় পঠিত আবু তালিবের কবিতা,

وَأَبْيَضَ يُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ + ثِمَالَ الْيَتَامَى عِصْمَةً لِلأَرَامِلِ

‘শুভ্র দর্শন (মুহাম্মাদ) যার চেহারার অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। সে যে ইয়াতীমদের আশ্রয়স্থল ও বিধবাদের রক্ষক’ যা তিনি পাঠ করেছিলেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নবুঅত লাভের পর কুরাইশদের চরম হুমকির সময়। এর মাধ্যমে তিনি মক্কার নেতাদেরকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করতে চেয়েছিলেন এবং বলতে চেয়েছিলেন যে, কোন অবস্থাতেই তিনি মুহাম্মাদকে তাদের দাবী মতে তাদের হাতে ছেড়ে দিবেন না। ইবনু হিশাম বলেন, উক্ত প্রসঙ্গে আবু তালিব ৮০ লাইনের যে দীর্ঘ কবিতা পাঠ করেন, তা আমার নিকটে বিশুদ্ধভাবে এসেছে। তবে কোন কোন বিদ্বান এর অধিকাংশ কবিতা সম্পর্কে অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন’ (ইবনু হিশাম ১/২৭২-৮০)।

এক্ষণে শিশুকালে তাঁকে নিয়ে চাচা কা‘বাগৃহে গিয়ে তাঁর অসীলায় এই দো‘আ করেছিলেন বলে ত্বাবাক্বাতে ইবনে সা‘দ, বায়হাক্বী দালায়েলুন নবুঅত প্রভৃতি গ্রন্থে যে বর্ণনা এসেছে তার সনদ ‘যঈফ’ (মা শা-‘আ ১৪-১৫ পৃঃ)। বরং মদীনাতে গিয়ে অনাবৃষ্টির সময় লোকদের দাবীর প্রেক্ষিতে জুম‘আর খুৎবায় মিম্বরে দাঁড়িয়ে রাসূল (ছাঃ) বৃষ্টি প্রার্থনা করেছেন এবং সে বৃষ্টিতে মদীনা সিক্ত হয়েছে।[৩] রাসূল (ছাঃ)-এর বৃষ্টি প্রার্থনার সময় আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) আবু ত্বালিবের পঠিত উপরোক্ত কবিতার লাইনটি পাঠ করতেন’।[৪] ইবনু কাছীর (রহঃ) আবু ত্বালিবের পঠিত দীর্ঘ কবিতাকে বহুবিশ্রুত সাব‘আ মু‘আল্লাক্বার কবিতাসমূহের চাইতে অধিক উত্তম ও সারগর্ভ বলে মত প্রকাশ করেছেন’।[৫] জনৈক বেদুঈন ব্যক্তির আবেদনক্রমে রাসূল (ছাঃ) মিম্বরে উঠে আল্লাহর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করে বলেন, اللَّهُمَّ اسْقِنَا ‘হে আল্লাহ! আমাদের প্রতি বৃষ্টি বর্ষণ কর’। উক্ত হাদীছে এ কথাও রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, لَوْ كَانَ أَبُو طَالِبٍ حَيًّا لَقَرَّتْ عَيْنَاهُ ‘যদি আজ আবু ত্বালিব বেঁচে থাকতেন, তাহ’লে তার দু’চক্ষু শীতল হয়ে যেত’। অতঃপর তিনি বলেন, কে আমাদেরকে তাঁর সেই কথাগুলি শুনাবে? তখন আলী (রাঃ) দাঁড়িয়ে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সম্ভবতঃ আপনি তাঁর কবিতার সেই কথা বলছেন। যেখানে তিনি বলেছেন, وَأَبْيَضَ يُسْتَسْقَى الْغَمَامُ بِوَجْهِهِ (বায়হাক্বী, দালায়েল হা/২৩৮)। ইবনু হাজার বলেন, وَإِنْ كَانَ فِيهِ ضَعْفٌ لَكِنَّهُ يَصْلُحُ لِلْمُتَابَعَةِ আনাস (রাঃ) বর্ণিত উক্ত হাদীছটির মধ্যে কিছু দুর্বলতা থাকলেও এটিকে সহযোগী হিসাবে গ্রহণ করা যায়’।[৬]

উক্ত দীর্ঘ কবিতা সম্পর্কে সীরাতে ইবনে হিশামের ভাষ্যকার আব্দুর রহমান সুহায়লী (মৃ. ৫৮১ হি.) বলেন, আবু তালেব স্বীয় পিতা আব্দুল মুত্ত্বালিবের সময়ে এটা দেখেছেন যে, অনাবৃষ্টিতে কাতর মক্কাবাসীদের জন্য বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে তিনি নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়ে কা‘বাগৃহে জমা হন এবং আল্লাহর নিকট বৃষ্টি প্রার্থনা করেন। এ সময় শিশু মুহাম্মাদ তাঁর পাশে ছিল এবং তিনি তাকে কাঁধে তুলে নেন। অতঃপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষিত হয় (ইবনু হিশাম ১/২৮১, টীকা-২)। তবে উক্ত প্রার্থনায় আব্দুল মুত্ত্বালিব উপস্থিত নারী-পুরুষ সকলের দোহাই দিয়েছেন। অতএব উক্ত ঘটনায় মুহাম্মাদের পৃথক বৈশিষ্ট্য প্রমাণিত হয় না।

[১]. ইবনু হিশাম ১/১৬২-১৬৪; বিষয়টি সকল সীরাত গ্রন্থে এবং মুসনাদে আহমাদ, সুনানে দারেমী, মুস্তাদরাকে হাকেম (২/৬১৬-১৭) প্রভৃতি গ্রন্থে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে (আকরাম যিয়া, সীরাহ ছহীহাহ ১/১০৩ পৃঃ)।
[২]. ইবনু হিশাম ১/১৬৮; আল-বিদায়াহ ২/২৮১; বর্ণনাটির সনদ মুনক্বাতি‘ (ছিন্ন সূত্র) হওয়ায় ‘যঈফ’ (মা শা-‘আ ১০ পৃঃ)। তবে শিশুদের এমন আচরণ এবং তা দেখে মুরববীদের এমন শুভ আশাবাদ ব্যক্ত করার মধ্যে বিস্ময়ের কিছু নেই।
[৩]. বুখারী, ফাৎহসহ হা/১০২১, ১০২৯; ইবনু হিশাম ১/২৮০ পৃঃ।
[৪]. বুখারী, ফাৎহসহ হা/১০০৮, ১০০৯ ‘ইস্তিসক্বা’ অনুচ্ছেদ, ২/৫৭৬ পৃঃ; বায়হাক্বী, দালায়েল হা/২৩৮।
[৫]. ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৩/৫৭; (قلت: هَذِهِ قَصِيْدَةٌ عَظِيْمَةٌ بَلِيْغَةٌ جِدَّا لاَ يَسْتَطِيْعُ يَقُولَهَا إِلَّا مَنْ نُسِبَتْ إِلَيْهِ، وَهِيَ أَفْحَلُ مِنَ الْمُعَلَّقَاتِ السَّبْعِ، وَأَبْلَغُ فِي تَأْدِيَةِ الْمَعْنَى فيها جَمِيعًا) أَنْ
[৬]. ফাৎহুল বারী হা/১০০৮-এর আলোচনা দ্রঃ; মা শা-‘আ ১১-১৫ পৃঃ।
 কিশোর মুহাম্মাদ ও ব্যবসায় গমন (محمد المراهق والذهاب الى الةجارة)

১০ বা ১২ বছর বয়সে চাচার সাথে ব্যবসা উপলক্ষে তিনি সর্বপ্রথম সিরিয়ার বুছরা (بُصْرَى) শহরে গমন করেন। সেখানে জিরজীস (جِرْجِيْس) ওরফে বাহীরা (بَحِيرَى) নামক জনৈক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাহেব অর্থাৎ খ্রিষ্টান পাদ্রীর সাথে সাক্ষাৎ হ’লে তিনি মক্কার কাফেলাকে আন্তরিক আতিথেয়তায় আপ্যায়িত করেন এবং কিশোর মুহাম্মাদের হাত ধরে কাফেলা নেতা আবু ত্বালেবকে বলেন,هَذَا سَيِّدُ الْعَالَمِيْنَ هَذَا يَبْعَثُهُ اللهُ رَحْمَةً لِِّلْعَالَمِيْنَ ‘এই বালক বিশ্ব জাহানের নেতা। একে আল্লাহ বিশ্ব চরাচরের রহমত হিসাবে প্রেরণ করবেন’। আবু ত্বালেব বললেন, কিভাবে আপনি একথা বুঝলেন? তিনি বললেন, গিরিপথের অপর প্রান্ত থেকে যখন আপনাদের কাফেলা দৃষ্টি গোচর হচ্ছিল, তখন আমি খেয়াল করলাম যে, সেখানে এমন কোন প্রস্তরখন্ড বা বৃক্ষ ছিল না, যে এই বালকের প্রতি সিজদায় পতিত হয়নি। আর নবী ব্যতীত এরা কাউকে সিজদা করে না। তাছাড়া মেঘ তাঁকে ছায়া করছিল। গাছ তার প্রতি নুইয়ে পড়ছিল। এতদ্ব্যতীত ‘মোহরে নবুঅত’ দেখে আমি তাকে চিনতে পেরেছি, যা তার (বাম) স্কন্ধমূলে ছোট্ট ফলের আকৃতিতে উঁচু হয়ে আছে। আমাদের ধর্মগ্রন্থে আখেরী নবীর এসব আলামত সম্পর্কে আমরা আগেই জেনেছি। অতএব হে আবু ত্বালেব! আপনি সত্বর একে মক্কায় পাঠিয়ে দিন। নইলে ইহূদীরা জানতে পারলে ওকে মেরে ফেলতে পারে’। অতঃপর চাচা তাকে কিছু গোলামের সাথে মক্কায় পাঠিয়ে দিলেন। এ সময় পাদ্রী তাকে পিঠা ও তৈল উপহার দেন।[১]

ইবনু ইসহাক বলেন, পাদ্রী বাহীরা তাকে পৃথকভাবে ডেকে নিয়ে লাত ও ‘উযযার দোহাই দিয়ে কিছু প্রশ্ন করেন। তখন তরুণ মুহাম্মাদ তাকে বলেন, আমাকে লাত ও ‘উযযার নামে কোন প্রশ্ন করবেন না। আল্লাহর কসম! আমি এদু’টির চাইতে কোন কিছুর প্রতি অধিক বিদ্বেষ পোষণ করি না। অতঃপর তিনি তাকে তার নিদ্রা, আচরণ-আকৃতি ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। সেগুলিতে তিনি তাদের কিতাবে বর্ণিত গুণাবলীর সাথে মিল পান। অতঃপর তিনি আবু তালিবকে বলেন, ছেলেটি কে? আবু তালিব বলেন, এটি আমার বেটা। তিনি বললেন, না। এটি আপনার পুত্র নয়। এই ছেলের বাপ জীবিত থাকতে পারেন না। তখন আবু তালিব বললেন, এটি আমার ভাতিজা। বাহীরা বললেন, তার পিতা কি করেন? জবাবে আবু তালিব বলেন, তিনি মারা গেছেন এমতাবস্থায় যে তার মা গর্ভবতী ছিলেন। বাহীরা বললেন, আপনি সত্য বলেছেন। আপনি ভাতিজাকে নিয়ে আপনার শহরে চলে যান এবং ইহূদীদের থেকে সাবধান থাকবেন। ... আপনার ভাতিজার মহান মর্যাদা রয়েছে’ (ইবনু হিশাম ১/১৮২)।

কিছু কিছু খ্রিষ্টান প্রাচ্যবিদ এই ঘটনা থেকে নবী চরিত্রের উপরে অপবাদ দিতে চেষ্টা করেছেন যে, তিনি পাদ্রী বাহীরা-র নিকট থেকে তাওরাত শিখেছিলেন। যা থেকে তিনি কুরআন বর্ণনা করেছেন।[২] অথচ তখন তাওরাত বা ইনজীল আরবীতে অনূদিত হয়নি। তাছাড়া মুহাম্মাদ (ছাঃ) তখন ছিলেন মাত্র ১০/১২ বছরের বালক। যিনি মাতৃভাষা আরবীতেই লেখাপড়া জানতেন না (আনকাবুত ২৯/৪৮)। তিনি ও তাঁর বংশের সবাই ছিলেন উম্মী বা নিরক্ষর। তাহ’লে কিভাবে এই সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতে তিনি পাদ্রীর নিকট থেকে তাওরাত শিখলেন, যা হিব্রু ভাষায় লিখিত। কিভাবে তিনি তার অর্থ বুঝলেন? অতঃপর সেগুলি কিভাবে সাক্ষাতের ২৮/৩০ বছর পর আরবীতে পরিবর্তন করে ‘কুরআন’ আকারে পেশ করলেন?

[১]. ইবনু হিশাম ১/১৮০-৮৩; তিরমিযী হা/৩৬২০; অত্র হাদীছে বেলালের সাথে তাঁকে মক্কায় ফেরৎ পাঠানোর কথা এসেছে, যেটা ‘মুনকার’ (منكر وغير محفوظ)। এ অংশটুকু বাদে হাদীছ ছহীহ। আলবানী, মিশকাত হা/৫৯১৮ টীকা-১। রাযীন-এর বর্ণনায় এসেছে যে, আলী (রাঃ) তাঁর পিতা আবু ত্বালিব সূত্রে বলেন যে, আমি তাকে একদল লোক সহ মক্কায় ফেরৎ পাঠাই, যাদের মধ্যে বেলাল ছিল’ (মিরক্বাত হা/৫৯১৮-এর আলোচনা)।

[২]. সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১০; গৃহীত : গোস্তাফ লুবূন, আরব সভ্যতা পৃঃ ১০২; মন্টোগোমারী ওয়াট, মক্কায় মুহাম্মাদ পৃঃ ৭৫।

তরুণ মুহাম্মাদ ও ‘ফিজার’ যুদ্ধ

তিনি যখন পনের কিংবা বিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন ‘ফিজার যুদ্ধ’(حَرْبُ الْفِجَارِ) শুরু হয়। এই যুদ্ধে একপক্ষে ছিল কুরায়েশ ও তাদের মিত্র বনু কিনানাহ এবং অপর পক্ষে ছিল ক্বায়েস আয়লান। যুদ্ধে কুরায়েশ পক্ষের জয় হয়। কিন্তু এ যুদ্ধের ফলে ‘হারাম’ মাস (যে মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ) এবং কা‘বার পবিত্রতা বিনষ্ট হয় বলে একে ‘হারবুল ফিজার’ বা দুষ্টুদের যুদ্ধ বলা হয়। তরুণ মুহাম্মাদ এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং চাচাদের তীর যোগান দেবার কাজে সহায়তা করেন বলে যে বর্ণনা বিভিন্ন ইতিহাস গ্রন্থে রয়েছে, তা বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত নয়।[১] বরং এটাই সঠিক যে, আল্লাহপাক তাঁকে হারাম মাসে যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাপ থেকে রক্ষা করেন। যেমন জন্ম থেকেই আল্লাহ তাঁকে সকল মন্দকর্ম থেকে রক্ষা করেছেন (সীরাহ ছহীহাহ ১/১১৪)।
[১]. ইবনু হিশাম ১/১৮৬; আর-রাহীক্ব ৫৯ পৃঃ; সীরাহ ছহীহাহ ১/১১১; মা শা-‘আ ১৬ পৃঃ।

নবীর নিষ্পাপত্ব

বিদ্বানগণ এ বিষয়ে একমত যে, সকল নবীই নিষ্পাপ ছিলেন। আর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) নবী হওয়ার আগে ও পরে যাবতীয় কুফরী থেকে এবং অহী প্রাপ্তির পরে কবীরা গোনাহের সংকল্প থেকেও নিষ্পাপ ছিলেন। ইচ্ছাকৃতভাবে ছগীরা গোনাহ জায়েয ছিল। তাঁদের এই বক্তব্য থেকে বুঝা যায় যে, কুফরী ও কবীরা গোনাহ থেকে তিনি নবুঅত লাভের পূর্ব হ’তেই নিষ্পাপ ছিলেন। যেমন

(১) তিনি কুরায়েশদের নিয়ম অনুযায়ী হজ্জের সময় কখনো তাদের সাথে মুযদালিফায় অবস্থান করেননি। বরং অন্যদের সাথে আরাফাতে অবস্থান করতেন। তাঁকে সেখানে দেখে একবার জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম আশ্চর্য হয়ে বলে উঠেছিলেন, وَاللهِ مِنَ الْحُمْسِ فَمَا شَأْنُهُ هَا هُنَا ‘আল্লাহর কসম! এ তো হুম্স-দের সন্তান। তার কি হয়েছে যে, সে এখানে অবস্থান করছে?[১]

(২) তিনি কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। একবার তিনি স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে নিয়ে কা‘বাগৃহ তাওয়াফ করছিলেন। সে সময় যায়েদ মূর্তিকে স্পর্শ করলে তিনি তাকে নিষেধ করেন। দ্বিতীয়বার যায়েদ আরেকটি মূর্তিকে স্পর্শ করেন বিষয়টির নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য। তিনি পুনরায় তাকে নিষেধ করেন। এরপর থেকে নবুঅত লাভের আগ পর্যন্ত যায়েদ কখনো মূর্তি স্পর্শ করেননি। তিনি কসম করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনোই মূর্তি স্পর্শ করেননি। অবশেষে আল্লাহ তাকে অহী প্রেরণের মাধ্যমে সম্মানিত করেন।[২]

(৩) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কখনোই মূর্তির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত পশুর গোশত কিংবা যার উপরে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, এমন কোন গোশত ভক্ষণ করেননি’ (বুখারী ফৎহসহ হা/৫৪৯৯)।

(৪) কা‘বা পুনর্নির্মাণ কালে দূর থেকে পাথর বহন করে আনার সময় চাচা আববাসের প্রস্তাবক্রমে তিনি কাপড় খুলে ঘাড়ে রাখেন। ফলে তিনি সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান। অতঃপর হুঁশ ফিরলে তিনি পাজামা কঠিনভাবে বেঁধে দিতে বলেন’ (বুখারী, মুসলিম)। যদিও বিষয়টি সেযুগে কোনই লজ্জাকর বিষয় ছিল না। ইবনু হাজার আসক্বালানী উক্ত হাদীছের আলোচনায় বলেন, ‘এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ স্বীয় নবী-কে নবুঅতের পূর্বে ও পরে সকল মন্দকর্ম থেকে হেফাযত করেন’।[৩]

(৫) আল্লাহ তাঁর আগে-পিছের সকল গোনাহ মাফ করে দিয়েছেন (বুখারী হা/৭৪১০)। তাই তিনি ছিলেন আল্লাহর মনোনীত নিষ্পাপ রাসূল[৪]- ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম (আল্লাহ তাঁর উপরে অনুগ্রহ করুন ও শান্তি বর্ষণ করুন!)।

[১]. বুখারী হা/১৬৬৪; মুসলিম হা/১২২০।
[২]. ত্বাবারাণী কাবীর হা/৪৬৬৮; হাকেম হা/৪৯৫৬, ৩/২১৬; সনদ ছহীহ।
[৩]. মুসলিম হা/৩৪০; বুখারী ফৎহসহ হা/৩৬৪-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[৪]. ড. আকরাম যিয়া উমারী, সীরাহ নববিইয়াহ ছহীহাহ ১/১১৪-১৭।

হিলফুল ফুযূল

ফিজার যুদ্ধের ভয়াবহতা স্বচক্ষে দেখে দয়াশীল মুহাম্মাদের মনে দারুণ প্রতিক্রিয়া হয়। যাতে ভবিষ্যতে এরূপ ধ্বংসলীলা আর না ঘটে, সেজন্য তিনি গভীর চিন্তায় মগ্ন হন। এই সময় হঠাৎ একটি ঘটনা ঘটে যায়। যুবায়েদ (زُبَيْد) গোত্রের জনৈক ব্যক্তি ব্যবসা উপলক্ষে মক্কায় এসে অন্যতম কুরায়েশ নেতা ‘আছ বিন ওয়ায়েল-এর নিকটে মালামাল বিক্রয় করেন। কিন্তু তিনি মূল্য পরিশোধ না করে মাল আটকে রাখেন। তখন লোকটি অন্য নেতাদের কাছে সাহায্য চাইলে কেউ এগিয়ে আসেনি। ফলে তিনি ভোরে আবু কুবায়েস পাহাড়ে উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে উচ্চকণ্ঠে হৃদয় বিদারক কবিতা আবৃত্তি করতে থাকেন। রাসূল (ছাঃ)-এর চাচা যুবায়ের বিন আব্দুল মুত্ত্বালিব এই আওয়ায শুনে ছুটে যান এবং ঘটনা অবহিত হয়ে তিনি অন্যান্য গোত্র প্রধানদের নিকটে গমন করেন। অতঃপর তিনি সর্বজনশ্রদ্ধেয় প্রবীণ নেতা আব্দুল্লাহ বিন জুদ‘আন তায়মীর গৃহে গোত্রপ্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন। উক্ত বৈঠকে রাসূল (ছাঃ)-এর দাদা ও নানার গোত্র সহ পাঁচটি গোত্র যোগদান করে। তারা হ’ল বনু হাশেম, বনু মুত্ত্বালিব, বনু আসাদ, বনু যোহরা ও বনু তাইম বিন মুররাহ। উক্ত বৈঠকে তরুণ মুহাম্মাদ কতগুলি কল্যাণমূলক প্রস্তাব পেশ করেন, যা নেতৃবৃন্দের প্রশংসা অর্জন করে। অতঃপর চাচা যুবায়েরের দৃঢ় সমর্থনে সর্বসম্মতিক্রমে চারটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। মূলতঃ ভাতিজা মুহাম্মাদ ছিলেন উক্ত কল্যাণচিন্তার উদ্ভাবক এবং পিতৃব্য যোবায়ের ছিলেন তার প্রথম ও প্রধান সমর্থক। চুক্তিগুলি ছিল নিম্নরূপ :

(১) আমরা সমাজ থেকে অশান্তি দূর করব (২) মুসাফিরদের হেফাযত করব (৩) দুর্বল ও গরীবদের সাহায্য করব এবং (৪) যালেমদের প্রতিরোধ করব’। হারবুল ফিজারের পরে যুলক্বা‘দাহ্র ‘হারাম’ মাসে আল্লাহর নামে এই চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তি সম্পাদনের পরপরই তারা ‘আছ বিন ওয়ায়েল-এর নিকট যান এবং তার কাছ থেকে উক্ত মযলূম যুবায়দী ব্যবসায়ীর প্রাপ্য হক বুঝে দেন। এরপর থেকে সারা মক্কায় শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে এবং কুরাইশগণ এই কল্যাণকামী সংগঠনকে ‘হিলফুল ফুযূল’ (حِلْفُ الْفُضُولِ) বা ‘কল্যাণকামীদের সংঘ’ বলে আখ্যায়িত করেন।[1] একে (حِلْفَ الْمُطَيَّبِينَ) ‘পবিত্রাত্মাদের সংঘ’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে (আহমাদ হা/১৬৫৫)। অথচ ইতিপূর্বে নিয়ম ছিল গোত্রীয় বা দলীয় কোন ব্যক্তি শত অন্যায় করলেও তাকে পুরা গোত্র মিলে সমর্থন ও সহযোগিতা করতেই হ’ত। যেমন আধুনিক গণতান্ত্রিক সমাজে ন্যায়-অন্যায় বাছ-বিচার ছাড়াই দলীয় ব্যক্তির সমর্থনে নেতা-কর্মীরা করে থাকেন। এমনকি আদালতও প্রভাবিত হয়।

হিলফুল ফুযূল-এর গুরুত্ব সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, شَهِدْتُ حِلْفَ الْمُطَيَّبِينَ مَعَ عُمُومَتِى وَأَنَا غُلاَمٌ، فَمَا أُحِبُّ أَنَّ لِى حُمْرَ النَّعَمِ وَأَنِّى أَنْكُثُهُ ‘আমি আমার চাচাদের সঙ্গে হিলফুল ফুযূলে অংশগ্রহণ করি, যখন আমি বালক ছিলাম। অতএব আমি মূল্যবান লাল উটের বিনিময়েও উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করতে রাযী নই’ (আহমাদ হা/১৬৫৫, ১৬৭৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৯০০)।
[১]. ইবনু হিশাম ১/১৩৩-৩৪; সীরাহ ছহীহাহ ১/১১১-১১২।

প্রসিদ্ধ আছে যে, জনৈক ইরাশী ব্যক্তি মক্কায় উট নিয়ে আসেন। আবু জাহল তার নিকট থেকে একটি উট খরীদ করেন। কিন্তু তার মূল্য পরিশোধে টাল-বাহানা করেন। তখন উক্ত ব্যক্তি কুরায়েশদের ভরা মজলিসে দাঁড়িয়ে অভিযোগ পেশ করে বলেন, আমি একজন গরীব পথিক। অথচ আমার হক নষ্ট করা হয়েছে। লোকেরা তাকে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখিয়ে বলল, তুমি কি ঐ ব্যক্তিকে চেন? তাঁর কাছে যাও। তখন লোকটি অনতিদূরে বসা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এল এবং উক্ত অভিযোগ পেশ করে বলল, আপনি আমার হক আদায় করে দিন। আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন! তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে নিয়ে আবু জাহল-এর বাড়িমুখে চললেন। মুশরিকদের পক্ষ হ’তে একজন তাদের পিছু নিল, ঘটনা কোন দিকে গড়ায় তা দেখার জন্য। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) এসে আবু জাহলের দরজায় করাঘাত করলেন। তখন আবু জাহল বেরিয়ে এলেন। রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, আপনি এই ব্যক্তিকে তার হক বুঝে দিন। আবু জাহল বললেন, হ্যাঁ। আমি এখনই দিয়ে দিচ্ছি। অতঃপর তিনি ঘরে প্রবেশ করলেন ও টাকা এনে ইরাশীকে দিয়ে দিলেন।... একথা জানতে পেরে লোকেরা আবু জাহলের কাছে এসে ধিক্কার দিয়ে বলল, আপনার কি হয়েছে? কখনই তো আপনার কাছ থেকে এরূপ আচরণ আমরা দেখিনি। আবু জাহল বললেন, তোমাদের ধ্বংস হৌক! আল্লাহর কসম! মুহাম্মাদ আমার দরজায় করাঘাত করার পর তাঁর কণ্ঠ শুনে আমি ভয়ে কম্পিত হয়ে পড়ি। অতঃপর বেরিয়ে এসে দেখি তাঁর মাথার উপরে ভয়ংকর একটি উট। যার চোয়াল ও দাঁতসমূহের মতো আমি কখনো দেখিনি। আল্লাহর কসম! যদি আমি অস্বীকার করতাম, তাহ’লে সে আমাকে খেয়ে ফেলত’ (ইবনু হিশাম ১/৩৮৯-৯০)। ঘটনাটির সনদ যঈফ (মা শা-‘আ ১৪৮-৪৯ পৃঃ)।



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




***************************
সাইটটি ভিজিট করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আর্টিকেলটি ভাল লাগলে সত্য ও ন্যয়ের পথে অন্য ভাইনদেরকে দাওয়াতের নিয়তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন। মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে এবং দীন ও মানবতার সেবায় অংশ নিতে OUR ACTION PLAN বাটনে ক্লিক করুন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url