প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৫৪] || মহানবীর জীবনী ||




মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে বিভিন্ন গোত্রের  ইসলাম গ্রহণ

(দ্বিতীয় অংশ)

[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]

বনু তামীম প্রতিনিধি দল

বনু তামীম আগে থেকেই মুসলমান হয়েছিল। কিন্তু তাদের কিছু লোক তখনও মুসলমান হয়নি। তারা জিযিয়া দিতে অস্বীকার করে এবং অন্যান্য গোত্রকেও জিযিয়া না দেওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে রাজস্ব কর্মকর্তা উয়ায়না বিন হিছন ৯ম হিজরীর মুহাররম মাসে ৫০ জনের একটি অশ্বারোহী দল নিয়ে অতর্কিতে হামলা করেন। তখন তারা সবাই পালিয়ে যায়। তাদের ১১ জন পুরুষ, ২১ জন মহিলা ও ৩০ জন শিশু বন্দী হয়ে মদীনায় নীত হয় এবং রামলা বিনতুল হারেছ-এর গৃহে তাদের রাখা হয়। পরদিন বনু তামীমের কয়েকজন বিশিষ্ট নেতা বন্দীমুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য মদীনায় আসেন। যেমন নু‘আইম বিন ইয়াযীদ, ক্বায়েস বিন হারেছ, ক্বায়েস বিন ‘আছেম, উত্বারিদ বিন হাজেব, আক্বরা‘ বিন হাবেস, হুতাত বিন ইয়াযীদ, যিবরিক্বান বিন বদর, আমর বিন আহতাম প্রমুখ (ইবনু হিশাম ২/৫৬১)। কুরতুবী ৭০ জনের কথা বলেছেন (কুরতুবী, তাফসীর সূরা হুজুরাত ৪-৫ আয়াত)। হ’তে পারে উপরোক্ত ব্যক্তিগণ ছিলেন তাদের নেতা।

তাদের দেখে তাদের নারী-শিশুরা কান্না জুড়ে দেয়। তাতে তারা ব্যাকুল হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর কক্ষের সামনে এসে তাঁর নাম ধরে চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকে, اُخْرُجْ إلَيْنَا يَا مُحَمَّدُ يَا مُحَمَّدُ ‘হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মাদ! বেরিয়ে এস’। এ সময় রাসূল (ছাঃ) দুপুরে খেয়ে(نَامَ لِلْقَائِلَةِ) ঘুমাচ্ছিলেন (কুরতুবী)।[1] রাসূল (ছাঃ) কোন জবাব দেননি। বারা বিন ‘আযেব (রাঃ) বলেন, তখন তাদের জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন,يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ حَمْدِى زَيْنٌ وَإِنَّ ذَمِّى شَيْنٌ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم- ذَاكَ اللهُ تَعَالَى ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার প্রশংসাই সুন্দর এবং আমার নিন্দাই অসুন্দর। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, ওটি আল্লাহ’ (অর্থাৎ প্রকৃত প্রশংসা ও নিন্দা আল্লাহর জন্য নির্ধারিত) তিরমিযী হা/৩২৬৭। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বেরিয়ে এলেন ও তাদের সাথে কথা বললেন। এ সময় সূরা হুজুরাত ৪ ও ৫ আয়াত নাযিল হয়। যেখানে বলা হয়,إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِنْ وَرَاءِ الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ- وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّى تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَهُمْ وَاللهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ ‘যারা তোমাকে কক্ষের বাহির থেকে উঁচু স্বরে আহবান করে, তাদের অধিকাংশ জ্ঞান রাখেনা’। ‘যদি তারা তোমার বের হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করত, তাহ’লে সেটাই তাদের জন্য উত্তম হ’ত’ (হুজুরাত ৪৯/৪-৫)। এর মাধ্যমে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে এরূপ মন্দ আচরণ যেন কেউ ভবিষ্যতে না করে সে বিষয়ে সকলকে সাবধান করে দেওয়া হয়।

অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বনু তামীম নেতাদের সাথে বসলেন। কিন্তু তারা তাদের বংশীয় অহমিকা বর্ণনা করে বক্তৃতা ও কবিতা আওড়ানো শুরু করে দিল। প্রথমে তাদের একজন বড় বক্তা উত্বারিদ বিন হাজেব(عُطَارِد بن حَاجِب) বংশ গৌরবের উপরে উঁচু মানের বক্তব্য পেশ করলেন। তার জওয়াবে রাসূল (ছাঃ) ‘খাত্বীবুল ইসলাম’(خَطِيبُ الْإِسْلاَمِ) ছাবেত বিন ক্বায়েস বিন শাম্মাস (রাঃ)-কে পেশ করলেন। অতঃপর তারা তাদের কবি যিবরিক্বান বিন বদরকে পেশ করল। তিনিও নিজেদের গৌরবগাথা বর্ণনা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কবিতা পাঠ করলেন। তার জওয়াবে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ‘শা‘এরুল ইসলাম’(شَاعِرُ الْإِسْلاَمِ) হযরত হাসসান বিন ছাবেত (রাঃ)-কে পেশ করলেন।

উভয় দলের বক্তা ও কবিদের মুকাবিলা শেষ হ’লে বনু তামীমের পক্ষ হ’তে আক্বরা বিন হাবেস(الأَقْرَع بن حَابِس) বললেন, তাদের বক্তা আমাদের বক্তার চাইতে উত্তম। তাদের কবি আমাদের কবির চাইতে উত্তম। তাদের আওয়ায আমাদের আওয়াযের চাইতে উঁচু এবং তাদের বক্তব্য সমূহ আমাদের বক্তব্য সমূহের চাইতে উন্নত’। অতঃপর তারা ইসলাম কবুল করলেন। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাদের উত্তম উপঢৌকনাদি দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করলেন। অতঃপর তাদের বন্দীদের ফেরৎ দিলেন’।[2]

মুবারকপুরী বলেন, জীবনীকারগণ বর্ণনা করেছেন যে, এই সেনাদল ৯ম হিজরীর মুহাররম মাসে প্রেরিত হয়েছিল। কিন্তু এর মধ্যে স্পষ্ট দুর্বলতা রয়েছে। কেননা ঘটনায় বুঝা যায় যে, আক্বরা বিন হাবেস ইতিপূর্বে ইসলাম কবুল করেননি। অথচ তাঁরা সবাই বলেছেন যে, ৮ম হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত হোনায়েন যুদ্ধ শেষে গণীমত বণ্টনের পর হাওয়াযেন গোত্রের বন্দীদের ফেরৎ দানের সময় বনু তামীমের পক্ষে তিনি তাদের বন্দী ফেরৎ দিতে অস্বীকার করেন। যাতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি আগেই মুসলমান হয়েছিলেন’ (আর-রাহীক্ব ৪২৬ পৃঃ টীকা ১)।

এক্ষেত্রে আমাদের মন্তব্য এই যে, আক্বরা সহ বনু তামীম আগেই মুসলমান হয়েছিল বলেই তারা রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষে হোনায়েন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। আর সেকারণেই তাদের কাছ থেকে জিযিয়া ও যাকাত আদায়ের দায়িত্ব উয়ায়না বিন হিছনকে দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের কিছু লোক যারা তখনও মুসলমান হয়নি। তারা জিযিয়া দিতে অস্বীকার করায় এবং অন্যান্য গোত্রকে জিযিয়া প্রদানের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করার কারণেই তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান প্রেরিত হয়েছিল। এমনও হ’তে পারে যে, আক্বরা বিন হাবেস-এর প্রচেষ্টায় উক্ত প্রতিনিধি দল মদীনায় আসে এবং ইসলাম কবুল করে। অতএব আক্বরা বিন হাবেস-এর উপরোক্ত বক্তব্য একথা প্রমাণ করে না যে, তিনি ইতিপূর্বে মুসলমান ছিলেন না।

[শিক্ষণীয়: (১) সম্মানী ব্যক্তিকে সম্মানজনক সম্বোধন করা এবং সময় ও পরিবেশ বুঝে কথা বলা উচিৎ। (২) নেতাদেরকে অত্যন্ত ধৈর্যশীল হ’তে হয় এবং সাধারণ ব্যক্তিদের ক্ষমা করতে হয়। (৩) একটি সংগঠনে বিভিন্ন মেধা ও গুণের অধিকারী মানুষ প্রয়োজন। (৪) প্রয়োজন বোধে বক্তৃতা ও কবিতা প্রতিযোগিতা করা জায়েয।]

[1]. ইবনুল ক্বাইয়িম এখানে যোহরের আগের কথা বলেছেন (যাদুল মা‘আদ ৩/৪৪৬)। কিন্তু পূর্বাপর সম্পর্ক বিবেচনায় বিষয়টি যোহরের পরে মনে হয়। ইবনু হিশাম কোন সময়ের কথা বলেননি (২/৫৬২, ৫৬৭)।
[2]. কুরতুবী, তাফসীর সূরা হুজুরাত ৪-৫ আয়াত; যাদুল মা‘আদ ৩/৪৪৬; ইবনু হিশাম ২/৫৬২, ৫৬৭; তিরমিযী হা/৩২৬৭।

বনুল হারেছ প্রতিনিধি দল

নাজরানের এই প্রতিনিধি দল ১০ম হিজরীতে শাওয়াল অথবা যুলক্বা‘দাহ মাসে মদীনায় আসে। ইতিপূর্বে রবীউল আখের বা জুমাদাল ঊলা মাসে উক্ত অঞ্চলে হযরত খালেদ ইবনে অলীদকে পাঠানো হয় এবং নির্দেশ দেওয়া হয় যুদ্ধের পূর্বে তাদেরকে তিনবার করে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার জন্য। সেমতে খালেদ সেখানে গিয়ে উক্ত সম্প্রদায়ের চারপাশ থেকে সওয়ারী হাঁকিয়ে তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেন এবং বলেন, হে লোক সকল! তোমরা ইসলাম কবুল কর। তাহলে নিরাপদ থাকবে’। তখন সবাই ইসলাম কবুল করে। অতঃপর তিনি সেখানে কিছুদিন অবস্থান করেন ও তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেন।

এ খবর জানার পর রাসূল (ছাঃ) তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে মদীনায় নিয়ে আসতে বলেন। সেমতে বনুল হারেছ বিন কা‘ব-এর নেতৃত্বে অত্র প্রতিনিধি দল রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মুলাক্বাতের জন্য মদীনায় আসে। যাদের মধ্যে ক্বায়েস ইবনুল হুছায়েন(قَيْس بن الْحُصَين) আব্দুল্লাহ বিন কুরাদ(عَبْدُ اللهِ بْنُ قُرَاد) এবং শাদ্দাদ বিন আব্দুল্লাহ(شَدَّادُ بْنُ عَبْدِ الله) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাদের সাথে আলোচনার এক পর্যায়ে রাসূল (ছাঃ) জিজ্ঞেস করেন, জাহেলী যুগে যারাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করত, তারাই পরাজিত হত, এর কারণ কি ছিল? জবাবে তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কখনোই আগ বেড়ে কাউকে হামলা করতাম না বা যুলুমের সূচনা করতাম না। কিন্তু যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হলে আমরা দৃঢ় থাকতাম, ছত্রভঙ্গ হতাম না’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঠিক বলেছ। এটাই মূল কারণ’।[1]

[শিক্ষণীয়: (১) সেনাপতি হৌন আর আলেম হৌন, মুসলমান মাত্রই ইসলামের প্রচারক। সেনাপতি খালেদ (রাঃ)-এর ভূমিকা তার অন্যতম প্রমাণ। (২) যুলুমের সূচনাকারী অবশেষে পরাজিত হয়, এটাই বাস্তব। (৩) আক্রান্ত হলে সংঘবদ্ধভাবে ও দৃঢ়তার সাথে মুকাবিলা করার মধ্যেই বিজয় লুকিয়ে থাকে।]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৩-৪৪; ইবনু হিশাম ২/৫৯৪। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৯৮১)।

হামদান প্রতিনিধি দল

হামদান ইয়ামনের একটি গোত্রের নাম। যাদের প্রতিনিধি দল তাবূক অভিযানের পর অর্থাৎ ৯ম হিজরীর শেষ দিকে মদীনায় আসে। ইতিপূর্বে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেবার জন্য খালেদ বিন অলীদকে পাঠানো হয়। তিনি দীর্ঘ ছয় মাস সেখানে অবস্থান করা সত্ত্বেও কেউ ইসলাম গ্রহণ করেনি। তখন আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) একটি পত্রসহ আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন এবং খালেদকে প্রত্যাহার করে নেন। হযরত আলী (রাঃ) তাদের নিকটে রাসূল (ছাঃ)-এর পত্রটি পড়ে শুনান এবং তাদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেন। ফলে তাঁর দাওয়াতে এক দিনেই গোত্রের সমস্ত লোক ইসলাম কবুল করে। এই সুসংবাদ জানিয়ে আলী (রাঃ)-এর প্রেরিত পত্র পাঠ করে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) খুশীতে ‘সিজদায়ে শুক্র’ আদায় করেন এবং সিজদা থেকে উঠে তাঁর যবান মুবারক থেকে বেরিয়ে যায়,السَّلاَمُ عَلَى هَمْدَانَ السَّلاَمُ عَلَى هَمْدَانَ ‘হামদানবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক, হামদানবাসীদের উপরে শান্তি বর্ষিত হৌক’![1]

হযরত আলীর নিকটে ইসলাম কবুলের পর হামদান গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল (ছাঃ)-এর দর্শন লাভের জন্য মালেক বিন নামাত্বের(مَالكُ بْنُ النَّمَطِ) নেতৃত্বে মদীনায় আসে। তিনি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মুখে কবিতা পাঠ করেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মালেক বিন নামাত্বকে উক্ত কওমের নেতা নিযুক্ত করেন ও তাদের নিকটে পত্র প্রেরণ করেন।[2]

[শিক্ষণীয় : যারা বলেন, ইসলাম তরবারির জোরে প্রসার লাভ করেছে, তারা বিষয়টি লক্ষ্য করুন। হামদানের লোকদের ইসলামের পথে আনার জন্য খালেদের তরবারিই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু ছয় মাসেও তিনি তা ব্যবহার করেননি। অবশেষে হযরত আলীর উপদেশ তাদের মনের মধ্যে পরিবর্তন এনে দেয়। প্রকৃত অর্থে দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলাম প্রসার লাভ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে ইনশাআল্লাহ।]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৪; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল ২/২২৯, সনদ ছহীহ; বুখারী হা/৪৩৪৯।
[2]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৪; ইবনু হিশাম ২/৫৯৭। বর্ণনাটির সনদ ‘যঈফ’ (ঐ, তাহকীক ক্রমিক ১৯৮৪)।

মুযায়নাহ প্রতিনিধি দল

নু‘মান বিন মুক্বার্রিন বলেন, আমরা মুযায়নাহ গোত্রের ৪০০ লোক নিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হই। অতঃপর যখন আমরা ফিরে আসি, তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, يَا عُمَرُ زَوِّدِ الْقَوْمَ ‘হে ওমর! ওদেরকে পাথেয় দাও’। ওমর বললেন, আমার কাছে খেজুর ব্যতীত কিছু্ই নেই। রাসূল (ছাঃ) পুনরায় বললেন, انْطَلِقْ فَزَوّدْهُمْ ‘যাও ওদেরকে পাথেয় দাও’। তখন ওমর গেলেন এবং তাদেরকে তার বাড়ীর ছাদে উঠালেন। দেখা গেল সেখানে উটের বোঝার ন্যায় বড় বড় খেজুরের স্তূপ রয়েছে। তারা সেখান থেকে তাদের প্রয়োজন মত নিয়ে নিল। নু‘মান বলেন, আমি সবশেষে বের হই এবং দেখি যে, পূর্বের একটি খেজুরও তার স্থান থেকে হারিয়ে যায়নি’।[1]

[শিক্ষণীয়: (১) মেহমানকে সর্বাবস্থায় সম্মান করতে হবে। প্রয়োজনে তাদেরকে পাথেয় দিতে হবে। (২) সৎ নিয়ত থাকলে আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করে থাকেন। যেমন আল্লাহ ওমরকে সাহায্য করলেন। (৩) এটি রাসূল (ছাঃ)-এর দো‘আর বরকত এবং অপারগ হওয়া সত্ত্বেও আমীরের নির্দেশ মেনে নেওয়ার নগদ ইলাহী পুরস্কার। (৪) এটি রাসূল (ছাঃ)-এর অন্যতম মু‘জিযা।]

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৫; আহমাদ হা/২৩৭৯৭, ছহীহ লেগায়রিহী -আরনাঊত্ব।

দাউস প্রতিনিধি দল

ইয়ামনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছিল এই গোত্রের বসবাস। প্রথমে ১০ম নববী বর্ষে দাউস গোত্রের নেতা ও বিখ্যাত কবি তোফায়েল বিন আমর মক্কায় যান। মক্কাবাসীরা শহরের বাইরে এসে তাকে অভ্যর্থনা জানায় এবং তাদের ধারণা মতে জাদুগ্রস্ত (?) মুহাম্মাদ-এর কাছে যেতে তাকে নিষেধ করে। কিন্তু তিনি একদিন খুব ভোরে কা‘বাগৃহে যান ও রাসূল (ছাঃ)-কে পেয়ে যান। তিনি তাঁর মুখে কুরআন শুনে মুগ্ধ হন এবং ইসলাম কবুল করেন’। অতঃপর তিনি ফিরে গিয়ে তার কওমকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু তার কওমে যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পাওয়ায় দীর্ঘদিন দাওয়াত দিয়ে কোন ফল না পেয়ে এক পর্যায়ে তিনি নিরাশ হয়ে পড়েন এবং রাসূল (ছাঃ)-কে তার কওমের বিরুদ্ধে বদ দো‘আ করার আবেদন জানান। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের জন্য হেদায়াতের দো‘আ করে বলেন,اللهُمَّ اهْدِ دَوْسًا وَائْتِ بِهِمْ ‘হে আল্লাহ! তুমি দাউস কওমকে সুপথ প্রদর্শন কর এবং তাদেরকে (মুসলমান করে) নিয়ে এসো’।[1]

অতঃপর আমাকে বলেন, তুমি তোমার কওমের নিকট ফিরে যাও এবং তাদেরকে আল্লাহর পথে আহবান কর ও তাদের সাথে নম্র ব্যবহার কর। আমি তাই করলাম। ফলে সত্বর আমার গোত্রের লোকেরা ইসলাম কবুল করল এবং ৭০ অথবা ৮০ জনের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ৭ম হিজরীর প্রথম দিকে আমি মদীনায় এলাম। কিন্তু ঐ সময়ে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) খায়বর অভিযানে থাকায় আমরা খায়বরে চলে যাই এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করি’।[2] এই দলেই ছিলেন পরবর্তীতে শ্রেষ্ঠতম হাদীছজ্ঞ ছাহাবী আবু হুরায়রা (রাঃ)। যদি সেদিন রাসূল (ছাঃ) বদ দো‘আ করতেন, আর দাউস কওম ধ্বংস হয়ে যেত, তাহলে আবু হুরায়রার মত ছাহাবীর খিদমত থেকে মুসলিম উম্মাহ বঞ্চিত হয়ে যেত। অতএব ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য’ আলহামদুলিল্লাহ।

[শিক্ষণীয়: দ্বীনের দাওয়াতে দ্রুত ফল লাভের আশা করা যাবে না বা নিরাশ হওয়া যাবে না। ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বদ দো‘আ না করে বরং সর্বদা লোকদের হেদায়াতের জন্য দো‘আ করা উচিত]

[1]. বুখারী হা/২৯৩৭; মুসলিম হা/২৫২৪; মিশকাত হা/৫৯৯৬।
[2]. ইবনু হিশাম ১/৩৮৪-৮৫; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৬।

নাজরানের খ্রিষ্টান প্রতিনিধি দল

নাজরান ৭৩টি পল্লী সমৃদ্ধ খ্রিষ্টানদের একটি বিরাট নগরীর নাম। বর্তমানে সড়কপথে এটি মদীনা থেকে দক্ষিণে ১২০৫ কি.মি. দূরে ইয়ামন সীমান্তে অবস্থিত। সেসময় একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার পক্ষে উক্ত নগরী একদিনে পরিভ্রমণ করা সম্ভবপর ছিল না। উক্ত নগরীতে এক লক্ষ দক্ষ যোদ্ধা পুরুষ ছিলেন। নগরীটি মক্কা হতে ইয়ামনের দিকে সাত মনযিল দূরত্বে অবস্থিত ছিল। রাষ্ট্রনেতা, ধর্মনেতা, রাজনৈতিক নেতা, অর্থনৈতিক নেতা প্রভৃতি পদবীধারী দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ দ্বারা নগরীটি পুরোদস্তুর একটি সুশৃংখল নগর-রাষ্ট্ররূপে সারা আরবে সুপরিচিত ছিল।

নাজরান প্রতিনিধি দলের মদীনায় আগমন সম্পর্কে হাদীছ সমূহে যেসকল বিবরণ এসেছে, তাতে মানছূরপুরীর বক্তব্য মতে দু’বার এই প্রতিনিধি দলের আগমন ঘটেছিল। প্রথমবার তিন জনের এবং পরের বার ৬০ জনের। দু’টি দলই সম্ভবতঃ অল্পদিনের ব্যবধানে ৯ম হিজরীতে মদীনায় এসেছিল এবং ইসলাম কবুল করা ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল।

বায়হাক্বী দালায়েল-এর বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নাজরানবাসীকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে পত্র লেখেন।

مِنْ مُحَمَّدٍ رَسْوُلِ اللهِ إِلَى أَسْقُف نَجْرَان: إِنْ أَسْلَمْتُمْ فَإِنِّي أَحْمَدُ إِلَيْكُمْ إِلَهَ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ، أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّي أَدْعُوكُمْ إِلَى عِبَادَةِ اللهِ مِنْ عِبَادَةِ الْعِبَادِ، وَأَدْعُوكُمْ إِلَى وِلَايَةِ اللهِ مِنْ وِلَايَةِ الْعِبَادِ، فَإِنْ أَبَيْتُمْ فَالْجِزْيَةُ، فَإِنْ أَبَيْتُمْ آذَنْتُكُمْ بِحَرْبٍ وَالسَّلاَمُ

‘আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ-এর পক্ষ হতে নাজরানের বিশপ-এর প্রতি- ‘যদি তোমরা ইসলাম কবুল কর, তাহলে আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর প্রশংসা বর্ণনা করব, যিনি ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূব-এর উপাস্য। অতঃপর আমি তোমাদেরকে মানুষের দাসত্ব হতে আল্লাহর দাসত্বের প্রতি এবং মানুষের বন্ধুত্ব হতে আল্লাহর বন্ধুত্বের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। যদি তোমরা অস্বীকার কর, তাহলে জিযিয়া দিবে। যদি সেটাও অস্বীকার কর, তাহলে আমি তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিচ্ছি। ওয়াসসালাম।[1]

মুবাহালা

‘মুবাহালা’ অর্থ পরস্পরকে ধ্বংসের অভিশাপ দিয়ে আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা করা’। উপরে বর্ণিত পত্র পাওয়ার পর নাজরানদের ধর্মনেতা ‘বিশপ’ (الأُسْقُف) সকলের সঙ্গে আলোচনা করে তিনজন প্রতিনিধিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে প্রেরণ করেন। তারা হলেন হামদান গোত্রের শুরাহবীল বিন ওয়াদা‘আহ হামদানী(شُرَحْبِيلُ بْنُ وَدَاعَة) হিমইয়ার গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন শুরাহবীল আছবাহী এবং বনু হারেছ গোত্রের জাববার বিন ফায়েয হারেছী(جَبَّارُ بْنُ فَيْضٍ)। তারা মদীনায় গিয়ে কয়েকদিন অবস্থান করেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে আলোচনা করেন। তারা পূর্ব থেকেই ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং ঈসা ও মারিয়ামকে আল্লাহর বেটা ও স্ত্রী হিসাবে আল্লাহর সাথে শরীক করতেন। তাদের ধারণা ছিল মুহাম্মাদ (ছাঃ) সত্যিকারের নবী হলে উক্ত ধারণায় বিশ্বাসী হবেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা কাল এসো। পরদিন সকালে নিম্নোক্ত আয়াত নাযিল হয়-

إِنَّ مَثَلَ عِيْسَى عِنْدَ اللهِ كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ- الْحَقُّ مِنْ رَبِّكَ فَلاَ تَكُنْ مِّنَ الْمُمْتَرِيْنَ- فَمَنْ حَاجَّكَ فِيْهِ مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ وَنِسَاءَنَا وَنِسَاءَكُمْ وَأَنْفُسَنَا وَأَنْفُسَكُمْ ثُمَّ نَبْتَهِلْ فَنَجْعَلْ لَّعْنَتَ اللهِ عَلَى الْكَاذِبِيْنَ- (آل عمران ৫৯-৬১)-

‘নিশ্চয়ই ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহর নিকটে আদমের ন্যায়। তাকে তিনি সৃষ্টি করেন মাটি দিয়ে। অতঃপর বলেন, হয়ে যাও, তখন হয়ে গেল’ (৫৯)। ‘সত্য আসে তোমার প্রভুর পক্ষ হতে। অতএব তুমি সন্দেহবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (৬০)। ‘অতঃপর যে ব্যক্তি তোমার সাথে তার (ঈসা) সম্পর্কে ঝগড়া করে তোমার নিকটে সঠিক জ্ঞান এসে যাওয়ার পরেও, তাকে তুমি বলে দাও, এসো আমরা ডাকি আমাদের সন্তানদের ও তোমাদের সন্তানদের, আমাদের স্ত্রীদের ও তোমাদের স্ত্রীদের এবং আমাদের নিজেদের ও তোমাদের নিজেদের। তারপর চল আমরা সবাই মিলে আল্লাহর নিকটে মিনতি ভরে প্রার্থনা করি। অতঃপর মিথ্যাবাদীদের প্রতি আমরা আল্লাহর অভিসম্পাত কামনা করি’ (আলে ইমরান ৩/৫৯-৬১)।

উক্ত আয়াতগুলি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিনিধি দলকে শুনিয়ে দিলেন। অতঃপর তিনি হাসান, হোসায়েন ও তাদের মা ফাতেমাকে নিয়ে মুবাহালার জন্য বেরিয়ে এলেন। কোন কোন বর্ণনায় হযরত আলীর কথাও এসেছে। এর দ্বারা তিনি তাদের জানিয়ে দিতে চাইলেন যে, মুবাহালার জন্য তিনি এখুনি প্রস্তুত। যদিও প্রতিনিধি দলের পরিবার তাদের সাথে ছিল না।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এই দৃঢ় প্রত্যয় দেখে প্রতিনিধি দলের মধ্যে ভাবান্তর সৃষ্টি হল। তারা প্রথমদিন অস্বীকার করলেও পরের দিন রাতের বেলা একান্তে পরামর্শ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, মুবাহালা করে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনার চাইতে তাঁর অধীনতা স্বীকার করার মধ্যেই আমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে। অতএব সকালে এসে তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে এবং সন্ধিচুক্তির আগ্রহ ব্যক্ত করে। অতঃপর নির্দিষ্ট পরিমাণ জিযিয়া কর দেবার শর্তে রাসূল (ছাঃ) তাদের সাথে সন্ধিচুক্তি সম্পাদন করেন।

চুক্তিপত্রটি লেখেন হযরত মুগীরাহ বিন শো‘বা (রাঃ) এবং তাতে সাক্ষী হিসাবে নাম স্বাক্ষর করেন আবু সুফিয়ান ইবনু হারব (সাবেক কুরায়েশ নেতা), গায়লান বিন আমর, মালেক বিন ‘আওফ ও আক্বরা বিন হাবেস (রাঃ)।[2]

অতঃপর প্রতিনিধি দলটি নিজ গোত্রে ফিরে আসে। তাদেরকে অভ্যর্থনার জন্য বিশপের নেতৃত্বে একটি দল আগেই নগরীর বাইরে এসে গিয়েছিল। চুক্তিনামাটি বিশপের হাতে সমর্পণ করলে তা পড়ার জন্য তার চাচাতো ভাই আবু আলক্বামা বিশর বিন মু‘আবিয়া তার প্রতি ঝুঁকে পড়েন। তাতে তিনি উটের পিঠ থেকে নীচে পড়ে যান ও রাসূল (ছাঃ)-কে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির মন্দ হৌক যিনি আমাকে এই কষ্ট দিলেন’। তখন বিশপ তাকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন, তুমি কি বলছ হিসাব করে বলো। وَاللهِ إِنَّهُ نَبِيٌّ مُرْسَلٌ ‘আল্লাহর কসম! ইনি আল্লাহর প্রেরিত নবী’।واللهِ إِنَّهُ لَلنَّبِىُّ الذى كُنَّا نَنْتَظِرُ ‘আল্লাহর কসম! ইনি অবশ্যই সেই নবী, আমরা যার প্রতীক্ষা করে আসছি’। একথা শোনার সাথে সাথে আবু আলক্বামা তার উটের মুখ মদীনার দিকে ঘুরিয়ে দিলেন এবং ঐ অবস্থাতেই রওয়ানা করলেন। বিশপ তাকে বারবার অনুরোধ করেও ফিরাতে ব্যর্থ হলেন। আবু আলক্বামা সোজা মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন ও সেখানেই থেকে যান ও পরে শহীদ হন (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৫৫)।

অতঃপর প্রতিনিধিদল গোত্রের গীর্জায় পৌঁছে গেলে সেখানকার পাদ্রী সবকিছু শুনে ইসলাম কবুলের জন্য তখনই মদীনায় রওয়ানা হতে চাইলেন। তিনি গীর্জার দোতলায় তার কক্ষ হতে চীৎকার দিয়ে বলতে থাকেন, আমাকে এখুনি নামতে দাও। নইলে আমি এখান থেকে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে জীবন বিসর্জন দেব। পরে লোকেরা তাকে নামতে দিল। তিনি একটি পেয়ালা, একটি লাঠি ও একটি চাদর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য হাদিয়া স্বরূপ নিয়ে তখনই মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গেলেন। তিনি ইসলাম কবুল করার পর বেশ কিছু দিন মদীনায় অবস্থান করেন। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর অনুমতি নিয়ে নাজরান ফিরে আসেন। তাঁর দেওয়া উপঢৌকন আববাসী খলীফাদের সময় পর্যন্ত রক্ষিত ছিল।

প্রথম প্রতিনিধিদলটি ফিরে আসার অল্প দিনের মধ্যেই ৬০ জন আরোহীর একটি বিরাট প্রতিনিধিদল নিয়ে স্বয়ং বিশপ আবুল হারেছ অথবা আবু হারেছাহ বিন আলক্বামা রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হন। তার সঙ্গে ১৪ জন নেতার মধ্যে সর্বোচ্চ তিনি সহ আরও দু’জন ছিলেন। যাদের একজন হলেন নাজরানের শাসক (عَاقِبٌ) আব্দুল মাসীহ এবং প্রধান বিচারপতি ও প্রশাসক (سَيّدُ) আইহাম (الْأَيْهَم) অথবা শুরাহবীল। ইনি সামাজিক ও আর্থিক বিষয়াদিও দেখাশোনা করতেন।

সম্ভবতঃ এটা রবিবার ছিল। আছরের সময় মদীনায় পৌঁছলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে মসজিদে নববীতে ছালাত আদায়ের অনুমতি দেন। তারা সেখানে প্রবেশ করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিকে ফিরে ছালাত আদায় করেন। কিছু মুসলমান তাদেরকে বাধা দিতে চাইলে রাসূল (ছাঃ) নিষেধ করেন (ইবনু হিশাম ১/৫৭৪-৭৫)।

খ্রিষ্টানদের এই বিরাট দলটি মদীনায় উপস্থিত হওয়ায় কিছু ইহূদী এসে তাদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে বচসায় লিপ্ত হত। একদিন তারা এসে বলল, ইবরাহীম (আঃ) ইহূদী ছিলেন। জওয়াবে খ্রিষ্টান নেতারা বললেন, ইবরাহীম (আঃ) নাছারা ছিলেন। তখন সূরা আলে ইমরান ৬৫-৬৮ আয়াতগুলি নাযিল হয়। যেখানে বলা হয় যে,مَا كَانَ إِبْرَاهِيْمُ يَهُوْدِيًّا وَلاَ نَصْرَانِيًّا وَلَكِنْ كَانَ حَنِيْفًا مُّسْلِمًا ‘ইবরাহীম না ইহূদী ছিলেন, না নাছারা ছিলেন। বরং তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম’ (আলে ইমরান ৩/৬৭)।[3]

আরেকদিন তারা এসে খ্রিষ্টান ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের এই নবী কি চান যে, আমরা তার ইবাদত করি, যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসার পূজা করে থাকে? তখন এর প্রতিবাদে সূরা আলে ইমরানের ৭৯ ও ৮০ আয়াত দু’টি নাযিল হয়’।-

مَا كَانَ لِبَشَرٍ أَن يُؤْتِيَهُ اللهُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ ثُمَّ يَقُولَ لِلنَّاسِ كُونُواْ عِبَاداً لِّي مِن دُونِ اللهِ وَلَـكِن كُونُواْ رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنتُمْ تَدْرُسُونَ، وَلاَ يَأْمُرَكُمْ أَن تَتَّخِذُوا الْمَلاَئِكَةَ وَالنِّبِيِّيْنَ أَرْبَاباً أَيَأْمُرُكُم بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنتُم مُّسْلِمُونَ- (آل عمران 79-80)-

‘এটা কোন মানুষের জন্য বিধেয় নয় যে, তাকে আল্লাহ কিতাব, হিকমত ও নবুঅত প্রদান করেন, অতঃপর সে লোকদের বলে যে, তোমরা সবাই আল্লাহকে ছেড়ে আমার গোলাম হয়ে যাও। বরং একথা বলবে যে, তোমরা সবাই আল্লাহওয়ালা হয়ে যাও। এটা এজন্য যে, তোমরা মানুষকে কিতাব শিক্ষা দিয়ে থাক এবং তোমরা তা পাঠ করে থাক’ (৭৯)। ‘আর তিনি তোমাদের এটা আদেশ করেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও নবীগণকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ কর। মুসলিম হওয়ার পরে কি তিনি তোমাদের কুফরীর নির্দেশ দিবেন? (অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত অন্যকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করতে বলবেন?)। (আলে ইমরান ৩/৭৯-৮০)।[4]

মুহাম্মাদ বিন ইসহাক-এর বর্ণনায় এসেছে যে, এই প্রতিনিধিদল মদীনায় অবস্থান কালীন সময়ে তাদের সম্পর্কে সূরা আলে ইমরানের শুরু থেকে ৮০-এর অধিক আয়াত সমূহ নাযিল হয়।[5]

অতঃপর প্রতিনিধিদল বিদায় গ্রহণকালে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আরয করেন যে, তাদের নিকট থেকে চুক্তির মালামাল আদায়ের জন্য একজন আমানতদার ব্যক্তিকে প্রেরণ করা হউক। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবু ওবায়দাহ ইবনুল জাররাহ (রাঃ)-কে উক্ত গুরু দায়িত্ব অর্পণ করেন এবং বলেন, هَذَا أَمِيْنُ هَذِهِ الْأُمَّة ‘ইনি হলেন এই উম্মতের আমীন’ অর্থাৎ সবচেয়ে বড় আমানতদার ব্যক্তি’ (বুখারী হা/৪৩৮০)। পরে আবু ওবায়দাহর সর্বোত্তম আমানতদারী, অনুপম চরিত্র ও অমায়িক ব্যবহারে মুগ্ধ হয়ে নাজরানবাসী দলে দলে মুসলমান হতে থাকেন। স্বয়ং ‘আক্বেব’ (শাসক) ও ‘সাইয়েদ’ (প্রধান বিচারপতি) মুসলমান হয়ে যান। পরে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে পাঠান জিযিয়া ও ছাদাক্বা সংগ্রহের জন্য। অর্থাৎ মুসলমানদের নিকট থেকে যাকাত এবং অমুসলমানদের নিকট থেকে জিযিয়া কর। ক্রমে সমস্ত নাজরানবাসী মুসলমান হয়ে যায়।[6]

[শিক্ষণীয়: এক ফোঁটা রক্তপাত না ঘটিয়ে স্রেফ ইসলামের আদর্শে মুগ্ধ হয়ে নাজরানের খ্রিষ্টানরা দলে দলে মুসলমান হয়েছিল। আজও তা সম্ভব। যদি আমরা ইসলামকে সঠিকভাবে মানবজাতির কাছে তুলে ধরতে পারি এবং তারাও ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী হয়।]

[1]. বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ৫/৩৮৫; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৪৯; আল-বিদায়াহ ৫/৫৩; আলবানী, ফিক্বহুস সীরাহ পৃঃ ৪২৫; সনদ যঈফ।
[2]. পূর্ণ চুক্তিপত্রটি দ্রষ্টব্য : বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত (বৈরূতঃ ১৪০৫/১৯৮৫) ৫/৩৮৯ ‘নাজরান প্রতিনিধি দল’ অনুচ্ছেদ; বালাযুরী, ফুতূহুল বুলদান ৭৫-৭৭ পৃঃ।
[3]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ৬৭ আয়াত; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৫১।
[4]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ৭৯-৮০ আয়াত।
[5]. ইবনু হিশাম ১/৫৭৬; ইবনু কাছীর, তাফসীর আলে ইমরান ৬৪ আয়াত।
[6]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ৫/৩৮২-৯৩; ইবনু হিশাম ২/৬০০; আর-রাহীক্ব ৪৫০-৫১ পৃঃ।

ফারওয়া বিন ‘আমর আল-জুযামীর দূতের আগমন

রোমক সাম্রাজ্যের উত্তরাঞ্চলের আরব গভর্ণর ফারওয়া বিন ‘আমর-এর রাজধানী ছিল মা‘আন (مَعَان)। জর্ডান, সিরিয়া ও ফিলিস্তীনের সংশ্লিষ্ট এলাকা তাঁর শাসনাধীনে ছিল। মুবারকপুরী বলেন, ৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে সংঘটিত মুতার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর অপূর্ব বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তিনি ইসলামের সত্যতার উপরে বিশ্বাসী হন এবং ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর উপঢৌকন হিসাবে একটি সাদা খচ্চর সহ রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে একজন দূত প্রেরণ করেন।

এ খবর জানতে পেরে রোম সম্রাট তাকে ডেকে পাঠান। অতঃপর তাকে ইসলাম ত্যাগ অথবা মৃত্যু দু’টির একটা বেছে নেওয়ার এখতিয়ার দেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দানের জন্য তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন। কিন্তু খাঁটি মুমিন ফারওয়া বিন ‘আমর (রাঃ) ইসলাম ত্যাগের বদলে মৃত্যুকেই বেছে নেন। অতঃপর তাঁকে যেরুযালেম নগরীর ‘আফরা’ (عَفْراء) নামক ঝর্ণার পাড়ে শূলে বিদ্ধ করে হত্যা করা হয়।

শূলের মঞ্চে পৌঁছে ফারওয়া (রাঃ) নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ করেন,

أَلاَ هَلْ أَتَى سَلْمَى بِأَنَّ حَلِيلَهَا * عَلَى مَاءِ عَفْرَا فَوْقَ إحْدَى الرَّوَاحِلِ
عَلَى نَاقَةٍ لَمْ يَضْرِبِ الْفَحْلُ أُمَّهَا * مُشَّذَّبَةٌ أَطْرَافُهَا بِالْمَنَاجِلِ

‘ওহে! আমার স্ত্রী সালমা কি আসবে এমন উটে সওয়ার হয়ে, যে এখনো গর্ভবতী হয়নি? একারণে যে তার স্বামী ‘আফরা ঝর্ণার তীরে তীক্ষ্ণধার শূলের একটি কাঠের উপরে অবস্থান করছে’।

অতঃপর হত্যার উদ্দেশ্যে আগত লোকদের উদ্দেশ্যে তিনি নিম্নের কবিতাটি পড়েন,

بَلِّغْ سَرَاةَ الْمُسْلِمِينَ بِأَنَّنِي * سَلْمٌ لِرَبِّي أَعْظُمِي وَمَقَامِي

‘মুসলিম নেতাদের কাছে তোমরা খবর পৌঁছে দিয়ো যে, আমি আমার অস্থিসমূহ ও মেরুদন্ডসহ আমার প্রতিপালকের প্রতি অনুগত’।[1]

ফারওয়া বিন ‘আমর ও অন্যান্য নও মুসলিমদের বিরুদ্ধে রোমক সম্রাটের এহেন নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদে এবং রোমকদের ভীত করার জন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) মৃত্যুর মাত্র দু’দিন পূর্বে উসামা বিন যায়েদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে শামের তুখূম, বালক্বা, দারূম প্রভৃতি এলাকা ঘোড়ার পায়ে পিষ্ট করার নির্দেশ দেন। যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল ঐ অঞ্চলের আরব ও নও মুসলিমদের সাহস দেওয়া। মদীনা থেকে বেরিয়ে তিন মাইল যেতেই রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যু আসন্ন সংবাদ পেয়ে অগ্রগমন স্থগিত হয়ে যায়। পরে আবুবকরের খেলাফতের শুরুতে তারা পুনরায় গমন করেন এবং অভিযান শেষে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন’।[2]

[শিক্ষণীয়: মুসলমান সবকিছু ত্যাগ করতে পারে। কিন্তু ঈমান ত্যাগ করতে পারেনা]

[1]. ইবনু হিশাম ২/৫৯২; যাদুল মা‘আদ ৩/৫৬৪-৬৫; আর-রাহীক্ব ৪৪৫ পৃঃ। বর্ণনাটির সনদ ‘মুরসাল’ বা যঈফ (তাহকীক, ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৯৭৮)।
[2]. আর-রাহীক্ব ৪৬৩ পৃঃ; ইবনু হিশাম ২/৬৪১-৪২। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : সারিইয়া ৮৯।

বনু সা‘দ বিন বকর প্রতিনিধি

বনু সা‘দ বিন বকর-এর একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তাদের নেতা যেমাম বিন ছা‘লাবাহ(ضِمَامُ بنُ ثَعْلَبَةَ) রাসূল (ছাঃ)-এর দরবারে আসেন। অতঃপর বাহিরে উট বেঁধে রেখে তিনি মসজিদে প্রবেশ করেন ও বলেন, তোমাদের মধ্যে ইবনু আব্দিল মুত্ত্বালিব কে? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি’। তিনি বললেন, মুহাম্মাদ? রাসূল (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, আমি আপনাকে কিছু কঠিন বিষয়ে প্রশ্ন করব। মনে কিছু নিবেন না। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, আমি কিছুই মনে করি না। তুমি যা খুশী প্রশ্ন কর। অতঃপর তিনি আল্লাহর কসম দিয়ে তাঁকে বাপ-দাদাদের উপাস্য দেব-দেবী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বলেন, এসবই শিরক। আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। অতঃপর তিনি ইসলামের ফরয সমূহের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন। জবাবে রাসূল (ছাঃ) কালেমা, ছালাত, ছিয়াম, যাকাত ও হজ্জ সহ ইসলামের পাঁচটি বুনিয়াদী ফরয ব্যাখ্যা করেন। তখন তিনি কালেমা শাহাদাৎ পাঠ করে ইসলাম কবুল করেন। অতঃপর বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলেন,وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لاَ أَزِيدُ عَلَى هَذَا وَلاَ أَنْقُصُ ‘যার হাতে আমার জীবন তাঁর কসম করে বলছি, আমি এর চাইতে কিছু বাড়াবো না, কিছু কমাবোও না’। রাসূল (ছাঃ) বললেন, إنْ يَصْدُقْ ذُو الْعَقِيصَتَيْنِ يَدْخُلْ الْجَنّةَ ‘দুই ঝুটিওয়ালা ব্যক্তি যদি সত্য বলে থাকে, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। অতঃপর তিনি তার কওমের নিকট ফিরে যান এবং তাদের নিকটে রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ ও নিষেধ সমূহ বর্ণনা করেন। অতঃপর তার উপস্থিতিতে সন্ধ্যার মধ্যেই সকল নারী-পুরুষ ইসলাম কবুল করে’ (হাকেম হা/৪৩৮০, হাদীছ ছহীহ)।

উক্ত ঘটনাটি আনাস বিন মালেক (রাঃ)-এর বর্ণনায় ছহীহ বুখারীতে একটু ভিন্নভাবে এসেছে (বুখারী হা/৬৩)। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,وَالَّذِى بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ أَزِيدُ عَلَيْهِنَّ وَلاَ أَنْقُصُ مِنْهُنَّ. فَقَالَ النَّبِىُّ -صلى الله عليه وسلم- لَئِنْ صَدَقَ لَيَدْخُلَنَّ الْجَنَّةَ ‘যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কসম করে বলছি, এগুলির চাইতে আমি একটুও বাড়াবো না, একটুও কমাবো না। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, যদি সে সত্য বলে থাকে, তবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (মুসলিম হা/১২)।

ইবনু ইসহাক বলেন, যিমাম বিন ছা‘লাবাহ তার কওমের নিকট এসে বলেন,بِئْسَتِ اللاَّتُ وَالْعُزَّى فَقَالُوا : مَهْ يَا ضِمَامَ اتَّقِ الْبَرَصَ وَالْجُنُونَ وَالْجُذَامَ . قَالَ وَيْلَكُمْ إنّهُمَا مَا يَضُرَّانِ وَلاَ يَنْفَعَانِ ‘লাত-‘উযযার মন্দ হৌক! লোকেরা বলল, থাম হে যিমাম! শ্বেতী রোগ, উন্মাদ ও কুষ্ঠ রোগ হওয়াকে ভয় কর। তিনি বললেন, তোমাদের ধ্বংস হৌক! লাত-‘উযযা কারু কোন ক্ষতি করতে পারে না বা কারু কোন উপকার করতে পারে না’। আল্লাহ একজন রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এবং তাঁর উপরে কিতাব নাযিল করেছেন। তাঁর মাধ্যমে আমি তোমাদেরকে তোমাদের পূর্বের কৃতকর্ম সমূহ থেকে বাঁচাতে চাই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। আমি তাঁর নিকট থেকে তোমাদের নিকট নিয়ে এসেছি, যা তিনি তোমাদের প্রতি আদেশ করেছেন ও নিষেধ করেছেন। অতঃপর তাঁর উপস্থিতিতে সন্ধ্যার মধ্যেই তাঁর সম্প্রদায়ের সবাই ইসলাম কবুল করেন। নারী বা পুরুষের একজনও বাকী ছিলনা’। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন,فَمَا سَمِعْنَا بِوَافِدِ قَوْمٍ كَانَ أَفْضَلَ مِنْ ضِمَامِ ابْن ثَعْلَبَةَ ‘যিমাম বিন ছা‘লাবাহর ন্যায় কোন সম্প্রদায়ের উত্তম প্রতিনিধি সম্পর্কে আমরা শুনিনি’।[1] ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন,ما رأيت أحدا أحسن مسألة ولا أوجز من ضمام بن ثعلبة ‘আমি যিমাম বিন ছা‘লাবাহর চাইতে সুন্দর ও সারগর্ভ প্রশ্নকারী হিসাবে কাউকে দেখিনি’ (আল-ইছাবাহ, যিমাম ক্রমিক ৪১৮২)।

[শিক্ষণীয়: (১) অনেক সময় একজন সাহসী নেতাই একটি সম্প্রদায়ের হেদায়াতের জন্য যথেষ্ট হন। (২) সংক্ষেপে সারগর্ভ কথা বলাই জ্ঞানী নেতার কর্তব্য। (৩) ছবি-মূর্তির ক্ষমতার প্রতি মানুষের যে একটা অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে, উক্ত ঘটনায় তার প্রমাণ পাওয়া যায়। (৪) হক জানতে পারার সাথে সাথে বাতিল থেকে তওবা করে হক কবুল করতে হবে। এ ব্যাপারে গড়িমসি করাটা শয়তানী ধোঁকার শামিল। (৫) নেতার প্রতি কর্মীদের অটুট বিশ্বাস ও নিখাদ আনুগত্যের প্রমাণ রয়েছে যেমাম ও তার সম্প্রদায়ের কর্মকান্ডে।

[1]. যাদুল মা‘আদ ৩/৫৬৫-৬৬; ইবনু হিশাম ২/৫৭৩-৭৫; হাদীছ ছহীহ সনদ হাসান, তাহকীক ইবনু হিশাম ক্রমিক ১৯৫২-৫৩; আবুদাঊদ হা/৪৮৭; আহমাদ হা/২২৫৪।

তারেক বিন আব্দুল্লাহর প্রতিনিধিদল

তারেক বিন আব্দুল্লাহ ছিলেন ‘রাবাযাহ’ (الرَّبَذَة) এলাকার বাসিন্দা। তাঁর ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে তিনি বর্ণনা করেন যে, একদা আমি মক্কার ‘যুল-মাজায’ বাজারে (سوق المجاز) দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় একজন লোক সেখানে এসে বলতে থাকেন,يَا أَيُّهَا النَّاسُ قُوْلُوْا لآ إلَهَ إلاَّ اللهُ تُفْلِحُوْا ‘হে জনগণ! তোমরা বল, আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তাহ’লে তোমরা সফলকাম হবে’। কিন্তু সেখানেই তার পিছে পিছে তাকে পাথর ছুঁড়ে মারতে মারতে একজন লোককে বলতে শুনলাম,يَا أَيُّهَا النَّاسُ لاَ تُطِيعُوهُ فَإِنَّهُ كَذَّابٌ ‘হে জনগণ! তোমরা এ ব্যক্তির আনুগত্য করো না। কেননা সে মহা মিথ্যাবাদী’ (হাকেম হা/৪২১৯, সনদ ছহীহ)। পরে লোকদের কাছে জানতে পারলাম যে, দু’জনেই বনু হাশেমের লোক। প্রথম জন ‘মুহাম্মাদ’ যিনি নিজেকে আল্লাহর নবী বলে দাবী করেন এবং দ্বিতীয়জন তার চাচা আব্দুল ‘উযযা, যিনি তাকে অস্বীকার করেন’। আবু লাহাবের প্রকৃত নাম ছিল আব্দুল ‘উযযা।[1]

তারেক বিন আব্দুল্লাহ বলেন, তারপর কয়েক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) মদীনায় হিজরত করে চলে গেছেন। এক সময় আমি ও আমার সাথীগণ ব্যবসা উপলক্ষে মদীনায় গেলাম খেজুর ক্রয়ের জন্য। মদীনার উপকণ্ঠে পৌঁছে আমরা অবতরণ করলাম এজন্য যে, সফরের পোষাক পরিবর্তন করে ভাল পোষাক পরে মদীনায় প্রবেশ করব। এমন সময় পুরানো কাপড় পরিহিত একজন ব্যক্তি এসে আমাদের সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে এসেছেন এবং কোথায় যাবেন? আমরা বললাম, রাবাযাহ থেকে এসেছি এবং মদীনাই আমাদের গন্তব্যস্থল’। তিনি বললেন, কি উদ্দেশ্যে? আমরা বললাম, খেজুর ক্রয়ের উদ্দেশ্যে’। ঐ সময় লাগাম দেওয়া অবস্থায় আমাদের লাল উটটি দাঁড়ানো ছিল। তিনি বললেন, উটটি বিক্রি করবেন কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ। বললেন, দাম কত? বললাম, এত পরিমাণ খেজুরের বিনিময়ে দিতে পারি’। অতঃপর তিনি মূল্য কমানোর কোনরূপ চেষ্টা না করেই উটের লাগাম ধরে নিয়ে গেলেন। উনি শহরে পৌঁছে গেলে আমাদের হুঁশ হ’ল যে, অচেনা লোকটি আমাদের উট নিয়ে গেল, অথচ মূল্য পরিশোধের বিষয়ে কোন কথা হ’ল না। আমরা এ নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। তখন আমাদের গোত্রনেতার স্ত্রী যিনি আমাদের সাথে হাওদানশীন ছিলেন, তিনি বললেন, আমি লোকটির চেহারা দেখেছি, যা পূর্ণিমার চাঁদের মত। এমন একজন ব্যক্তি যদি উটের মূল্য না দেন, তবে আমিই তোমাদের মূল্য দিয়ে দেব’।

ইতিমধ্যে একজন ব্যক্তি এসে বললেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাঠিয়েছেন। এই নিন আপনাদের উটের মূল্য বাবদ খেজুর এবং বাকী এগুলি তিনি পাঠিয়েছেন আপনাদের আপ্যায়নের জন্য। আপনারা খেতে থাকুন এবং খেজুরগুলি মেপে নিন’।

অতঃপর আমরা খেয়ে তৃপ্ত হয়ে শহরে প্রবেশ করলাম। যেয়ে দেখি যে, উটের খরিদ্দার সেই ব্যক্তিই মসজিদে মিম্বরে দাঁড়িয়ে লোকদের উপদেশ দিচ্ছেন-

تَصَدَّقُوا، فَإِنَّ الصَّدَقَةَ خَيْرٌ لَكُمْ. وَالْيَدُ الْعُلْيَا خَيْرٌ مِنَ الْيَدِ السُّفْلَى، وَابْدَأْ بِمَنْ تَعُولُ: أَبَاكَ وَأُمَّكَ، وَأُخْتَكَ وَأَخَاكَ، وَأَدْنَاكَ فَأَدْنَاكَ -

‘তোমরা ছাদাক্বা কর। কেননা ছাদাক্বা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। জেনে রাখো উপরের হাত নীচের হাতের চাইতে উত্তম। যাদেরকে তুমি লালন-পালন কর তাদের দিয়ে শুরু কর। তোমার পিতাকে, তোমার মাকে, বোনকে, তোমার ভাইকে এবং তোমার নিকটতম তারপর তোমার নিকটতম ব্যক্তিকে দান কর’।[2]

তারেক বিন আব্দুল্লাহ তাওহীদের দাওয়াত পেয়েছিলেন মক্কার বাজারে। অতঃপর মদীনায় তার বাস্তবতা দেখে গোত্রসমেত সবাই মুসলমান হয়ে যান।

[শিক্ষণীয়: বিশুদ্ধ আক্বীদার সাথে উত্তম আচরণ যুক্ত হ’লেই কেবল তা অন্যের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার করে এবং পরকালে মুক্তির কারণ হয়ে থাকে।]

একই মর্মে হাদীছ এসেছে রাবী‘আহ বিন ‘ইবাদ আদ-দু’আলী(رَبِيعَةُ بْنُ عِبَادٍ الدُّؤَلِيُّ) থেকে। তিনি বলেন, আমি হিজরতের পূর্বে রাসূল (ছাঃ)-কে হজ্জের মওসুমে মিনায় তাঁবুতে তাঁবুতে গিয়ে দাওয়াত দিতে শুনেছি যে,يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاََ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ‘হে জনগণ! আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না’। এ সময় তাঁর পিছনে একজন লোককে বলতে শুনেছি, يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ هَذَا يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَتْرُكُوا دِيْنَ آبَائِكُمْ ‘হে জনগণ! এই ব্যক্তি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছে যে, তোমরা তোমাদের বাপ-দাদাদের দ্বীন পরিত্যাগ কর’। তখন আমি এই ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে বলা হ’ল, ইনি আবু লাহাব’ (হাকেম হা/৩৮, হাদীছ ছহীহ)।

[শিক্ষণীয়: চাচা ও ভাতিজা দু’জনেই জনগণকে দাওয়াত দিচ্ছেন। একজন আল্লাহর দিকে, অন্যজন বাপ-দাদাদের রীতি-নীতির দিকে। একজন আল্লাহর সার্বভৌমত্বের দিকে। অন্যজন জনগণের সার্বভৌমত্বের দিকে। একটি জান্নাতের পথ, অন্যটি জাহান্নামের পথ। যুগে যুগে সত্য-মিথ্যার এ দ্বন্দ্ব অব্যাহত রয়েছে। আগামীতেও থাকবে। জান্নাতীগণ আল্লাহর পথ বেছে নিবে আল্লাহর বিশেষ রহমতে। আর এটাই হ’ল চিরন্তন রীতি।]

[1]. যারা মনে করেন, তরবারির জোরে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে, তারা এই দাওয়াতের বিষয়টি লক্ষ্য করুন। সাথে সাথে এটাও জেনে রাখুন যে, সত্য প্রথম বাধাপ্রাপ্ত হয় নিজের ঘর থেকেই।
[2]. ত্বাবারাণী হা/৮১৭৫; হাকেম হা/৪২১৯; বায়হাক্বী ১১০৯৬; ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/১৫৯; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৫৬২; সনদ ছহীহ।

তুজীব প্রতিনিধিদল

ইয়ামনের কিন্দা গোত্রের তুজীব শাখার লোকেরা আগেই মুসলমান হয়েছিল। তাদের ১৩ জনের এই প্রতিনিধি দল নিজ গোত্রের মাল-সম্পদ ও গবাদিপশুর যাকাতসমূহ সাথে করে এনেছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা এগুলি ফেরৎ নিয়ে যাও এবং নিজ কওমের ফকীর-মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দাও। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাদেরকে বণ্টন করার পর উদ্বৃত্তগুলিই কেবল এখানে এনেছি’।

আবুবকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এদের চেয়ে উত্তম কোন প্রতিনিধিদল এযাবত আসেনি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,إنّ الْهُدَى بِيَدِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَمَنْ أَرَادَ بِهِ خَيْرًا شَرَحَ صَدْرَهُ لِلْإِيمَانِ ‘হেদায়াত আল্লাহর হাতেই নিহিত। তিনি যার কল্যাণ চান, তার বক্ষকে ঈমানের জন্য উন্মুক্ত করে দেন’।

তারা দ্বীনের বিধি-বিধান শেখার জন্য খুবই উদগ্রীব ছিল। সেকারণ রাসূল (ছাঃ) তাদের তা‘লীমের জন্য বেলাল (রাঃ)-কে নিযুক্ত করেন। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করে। তিনি সেগুলির জওয়াব তাদেরকে লিখিয়ে দেন। তারা ফিরে যাবার জন্য ব্যস্ত হ’লে ছাহাবায়ে কেরাম তাদের বললেন, এত তাড়া কিসের? তারা বলল, রাসূল (ছাঃ)-এর দরবার থেকে আমরা যেসব কল্যাণ লাভ করেছি, দ্রুত ফিরে গিয়ে আমরা সেগুলি আমাদের সম্প্রদায়কে জানাতে চাই।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে বহুমূল্য উপঢৌকনাদি প্রদান করেন। অতঃপর বিদায়ের সময় জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের দলের কেউ বাকী আছে কি? তারা বলল, হ্যাঁ একজন নওজোয়ান বাকী আছে। যাকে আমরা আমাদের মাল-সামানের পাহারায় রেখে এসেছি। রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা গিয়ে তাকে পাঠিয়ে দাও। তারপর নওজোয়ানটি এসে রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি বনু আবযার সন্তান(يَا رَسُولَ اللهِ إنّي امْرُؤٌ مِنْ بَنِي أَبْذَى)। ইতিপূর্বে যারা আপনার কাছে এসেছিল, আমি তাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা আপনার নিকট থেকে তাদের প্রয়োজন মিটিয়ে গেছে। এক্ষণে আপনি আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দিন। আমি আপনার নিকটে কেবল একটা উদ্দেশ্য নিয়েই এসেছি যে, আপনি আমার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করবেন যেন তিনি আমাকে ক্ষমা করেন ও আমার উপরে রহম করেন এবং আমার অন্তরকে মুখাপেক্ষীহীন করেন’। আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তার জন্য অনুরূপ দো‘আ করেন।

অতঃপর ১০ম হিজরীতে রাসূল (ছাঃ) বিদায় হজ্জে গেলে উক্ত গোত্রের লোকেরাও হজ্জে গমন করে ও রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে মিনায় সাক্ষাৎ করে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, বনু আবযার ঐ নওজোয়ানের খবর কি? তারা বলল, ছেলেটির অবস্থা এমন হয়েছে যে, দুনিয়ার সম্পদ তার সামনে ঢেলে দিলেও সে চোখ তুলে সেদিকে তাকায় না’। সে সর্বদা অল্পে তুষ্ট থাকে। রাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে যখন লোকদের মধ্যে ধর্মত্যাগের হিড়িক পড়ে, তখন উক্ত যুবক তার কওমকে নছীহত করে। যার ফলে তারা ইসলামের উপরে দৃঢ় থাকে’ (যাদুল মা‘আদ ৩/৫৬৮-৬৯)।

[শিক্ষণীয়: (ক) প্রত্যেক জনপদে যাকাত ঠিকমত আদায় ও বণ্টন করা হ’লে মুসলিম সমাজে গরীবের অস্তিত্ব থাকবে না। (খ) অল্পে তুষ্ট থাকাই সচ্ছলতার মাপকাঠি। (গ) অত্র ঘটনায় রাসূল (ছাঃ)-এর যামানায় হাদীছ লিখনের দলীল পাওয়া যায়।]



প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-

পর্ব-০১   পর্ব-০২   পর্ব-০৩   পর্ব-০৪   পর্ব-০৫   পর্ব-০৬   পর্ব-০৭   পর্ব-০৮   পর্ব-০৯   পর্ব-১০   পর্ব-১১   পর্ব-১২   পর্ব-১৩   পর্ব-১৪   পর্ব-১৫   পর্ব-১৬   পর্ব-১৭   পর্ব-১৮   পর্ব-১৯   পর্ব-২০   পর্ব-২১   পর্ব-২২   পর্ব-২৩   পর্ব-২৪   পর্ব-২৫   পর্ব-২৬   পর্ব-২৭   পর্ব-২৮   পর্ব-২৯   পর্ব-৩০    পর্ব-৩১   পর্ব-৩২   পর্ব-৩৩   পর্ব-৩৪   পর্ব-৩৫   পর্ব-৩৬   পর্ব-৩৭   পর্ব-৩৮   পর্ব-৩৯   পর্ব-৪০   পর্ব-৪১   পর্ব-৪২   পর্ব-৪৩   পর্ব-৪৪   পর্ব-৪৫   পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়)    পর্ব-৪৭   পর্ব-৪৮   পর্ব-৪৯   পর্ব-৫০   পর্ব-৫১   পর্ব-৫২   পর্ব-৫৩   পর্ব-৫৪   পর্ব-৫৫   পর্ব-৫৬   পর্ব-৫৭   পর্ব-৫৮   পর্ব-৫৯   পর্ব-৬০   পর্ব-৬১   পর্ব-৬২   পর্ব-৬৩   পর্ব-৬৪   পর্ব-৬৫   পর্ব-৬৬   পর্ব-৬৭  




******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url