প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী [পর্ব- ৬৪] || মহানবীর জীবনী ||
[পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। যাকে আল্লাহ সমস্ত মানুষের জন্য অশেষ রহমত স্বরূপ এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। যে নবী সারা জীবন উম্মতের জন্য সংগ্রাম করেছেন, কাল রোজ হাশরের মাঠেও যিনি উম্মতের জন্যই পেরেশান থাকবেন ইয়া উম্মতি ইয়া উম্মতি বলে বিচলিত হবেন; সেই প্রাণপ্রিয় নবীকে আমরা কতটুকু চিনি, কতটুকু জানি? প্রিয় নবী (সা:) এর জীবনের পরতে পরতে রয়েছে আমাদের জন্য শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। যার জীবনী পড়লে নিজের অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়ে। সেই নবীর জীবনী কি আমরা সত্যিই জানি? আসুন, আরেকবার দেখে নেই “প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর জীবনী”। যে জীবনী পড়ে বদলে যেতে পারে আপনার আমার জীবন। আমরা এখানে প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর বিশাল কর্মময় জীবনকে ৬৭টি সুবিশাল পর্বে তুলে ধরেছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রাণপ্রিয় নবীর (সা:) উম্মত হিসাবে কবুল করুন। আমিন।।]
আল কুরআন জীবন্ত মু‘জেযা
কুরআনের আহবান সমগ্র মানব জাতির প্রতি
তওরাত, যবূর, ইনজীল প্রভৃতি কিতাবের আহবান ছিল কেবল বনু ইস্রাঈল গোত্রের প্রতি। কিন্তু কুরআনের আহবান জিন-ইনসান তথা সকল সৃষ্টিজগতের প্রতি। আল্লাহ বলেন, إِنْ هُوَ إِلاَّ ذِكْرٌ وَقُرْآنٌ مُبِيْنٌ، لِيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيًّا وَيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَى الْكَافِرِينَ ‘এটা তো উপদেশ ও প্রকাশ্য কুরআন’। ‘যাতে তিনি সতর্ক করেন জীবিতদেরকে এবং যাতে অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়’ (ইয়াসীন ৩৬/৬৯-৭০)।
কুরআন সকল শিক্ষা ও কল্যাণের সার বস্তু
তওরাতে রয়েছে আখবার ও আহকাম, যবূরে কেবল প্রার্থনা, ইনজীলে রয়েছে দৃষ্টান্ত এবং কিছু আহকাম ও উপদেশ। অথচ কুরআনে রয়েছে ঐগুলি ছাড়াও বিগত জাতি সমূহের ইতিহাস, বিজ্ঞান ও সৃষ্টিতত্ত্ব, দ্বীনী ও দুনিয়াবী জীবন পরিচালনার নীতিমালা ও বিধান সমূহ, জান্নাতের বিবরণ ও তার সুসংবাদ এবং জাহান্নামের বিবরণ ও তার ভয় প্রদর্শন, রয়েছে আল্লাহ ও আখেরাতের পরিচয় এবং রয়েছে আধ্যাত্মিক ও জাগতিক উন্নতির সকল প্রকার হেদায়াতের সমষ্টি ও কল্যাণের চাবিকাঠি।
কুরআন যাবতীয় ত্রুটি ও স্ববিরোধিতা হতে মুক্ত
আল্লাহ বলেন, أَفَلاَ يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ وَلَوْ كَانَ مِنْ عِندِ غَيْرِ اللهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ اخْتِلاَفاً كَثِيراً ‘তারা কেন কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? যদি ওটা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু নিকট থেকে আসত, তাহ’লে ওরা তাতে অনেক গরমিল দেখতে পেত’ (নিসা ৪/৮২)। কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ, যা শুরুতেই নিজেকে لاَ رَيْبَ فِيْهِ ‘সকল প্রকার ত্রুটি ও সন্দেহমুক্ত’ বলে ঘোষণা করেছে (বাক্বারাহ ২/২)।
কুরআন ভবিষ্যদ্বাণী, অতীত ইতিহাস ও ঘটনা সমূহের বর্ণনা সমৃদ্ধ এক জ্বলন্ত মু‘জেযা
বিগত দেড় হাযার বছরে পৃথিবীতে বহু কিছু ওলট-পালট হয়েছে। কিন্তু কুরআনের কোন বক্তব্য, অতীত ইতিহাস বা কোন ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়নি। যেমন, (১) পারসিকরা রোমকদের উপর বিজয়ী হ’ল। রোম সম্রাট হেরাক্লিয়াস সিরিয়া ছেড়ে রাজধানী কনস্টান্টিনোপলে যেতে বাধ্য হলেন। এতে মক্কার মুশরিকরা খুশী হ’ল। কেননা পারসিকরা অগ্নি উপাসক ও মূর্তিপূজারী ছিল। পক্ষান্তরে মুসলমানেরা এতে দুঃখিত হ’ল। কেননা রোমকরা ছিল আহলে কিতাব। বিষয়টি আবুবকর (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-কে বললেন। জবাবে তিনি বললেন, রোমকরা সত্বর বিজয়ী হবে। এ বিষয়ে সূরা রূম ১-৬ আয়াত নাযিল হ’ল। এর বিরুদ্ধে কাফের নেতা উবাই বিন খালাফ আবুবকর (রাঃ)-এর সঙ্গে ১০০ উটের বাজি ধরলেন। দেখা গেল ৯ বছর পর বদর যুদ্ধের দিন রোমকরা বিজয়ী হ’ল। এভাবে কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী কার্যকর হ’ল। তাতে বহু লোক মুসলমান হয়ে গেল।[1] (২) অতীত ইতিহাস হিসাবে কওমে ছামূদ-এর ধ্বংসস্থল সঊদী আরবের হিজর এলাকা, যা এখন ‘মাদায়েনে ছালেহ’ নামে পরিচিত। সমতলভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা উন্নতমানের প্রকোষ্ঠসমূহ তৈরী করত। এগুলির গায়ে ইরামী ও ছামূদী বর্ণমালার শিলালিপি আজও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো এ স্থানটিকে World heritage বা ‘বিশ্ব ঐতিহ্য ’ হিসাবে ঘোষণা করেছে।
৯ম হিজরীতে তাবূক অভিযানে যাওয়ার পথে মুসলিম বাহিনী এখানে অবতরণ করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করে বলেন, তোমরা ঐ অভিশপ্ত এলাকায় প্রবেশ করোনা ক্রন্দনরত অবস্থায় ব্যতীত। নইলে তোমাদের উপর ঐ গযব আসতে পারে, যা তাদের উপর এসেছিল’ (বুখারী হা/৪৩৩)। (৩) লূতের কওমের ধ্বংসের ঘটনা, যা কুরআনে বিধৃত হয়েছে (হিজর ১৫/৭৫, ৭৭; আনকাবূত ২৩/৩৫)। বর্তমান ফিলিস্তীন ও জর্ডান নদীর মধ্যবর্তী ৭৭ * ১২ ব. কি. এলাকা ব্যাপী ৪০০ মিটার গভীরতার ‘মৃত সাগর’ যার বাস্তব প্রমাণ বহন করছে।[2] (৪) মূসার বিরুদ্ধে ফেরাঊনের সাগরডুবির পর তার লাশ অক্ষত থাকবে বলে কুরআন যে ঘোষণা দিয়েছিল (ইউনুস ১০/৯২), তার মমিকৃত লাশ ১৯০৭ সালে সিনাই উপদ্বীপের পশ্চিম তীরে ‘জাবালে ফেরাঊন’ নামক পাহাড় থেকে উদ্ধার হওয়ার পর এখন তা দিবালোকের ন্যায় সত্যে পরিণত হয়েছে। যা এখন কায়রোতে পিরামিডে রক্ষিত আছে’ (নবীদের কাহিনী ২/১১ পৃঃ)। এটি কুরআনের অকাট্য ও অভ্রান্ত সত্য হওয়ার জ্বলন্ত প্রমাণ বহন করে।
[1]. ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা রূম ১-৬ আয়াত; তিরমিযী হা/৩১৯৩; আহমাদ হা/২৪৯৫।
[2]. দ্রঃ লেখক প্রণীত নবীদের কাহিনী ১/১৬০, টীকা-১১৬।
আল কুরআন শাশ্বত সত্য বাণী
বিজ্ঞান ও দর্শনের বহু তত্ত্ব ও তথ্য যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের কোন তত্ত্ব ও তথ্যের মধ্যে বৈপরীত্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। কুরআনের শত্রুরা শত চেষ্টা করেও এ ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছে।
যেমন (১) সূর্য ঘোরে, না পৃথিবী ঘোরে, এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এক সময় ছিল বিস্তর মতভেদ। খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রীক বিজ্ঞানী পিথাগোরাস (খৃঃ পূঃ ৫৭০-৪৯৫) বলেন, পৃথিবী ঘোরে, সূর্য স্থির। তার প্রায় সাতশ’ বছর পর মিসরীয় বিজ্ঞানী টলেমী (৯০-১৬৮ খৃ.) বলেন, সূর্য ঘোরে পৃথিবী স্থির। তার প্রায় চৌদ্দশ’ বছর পর পোলিশ বিজ্ঞানী কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খৃ.) বলেন, টলেমীর ধারণা ভুল। বরং পৃথিবীই ঘোরে, সূর্য স্থির। কিন্তু এখন সবাই বলছেন, আকাশে সবকিছুই ঘোরে। অথচ আজ থেকে প্রায় দেড় হাযার বছর পূর্বে খৃষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে কুরআন ঘোষণা করেছে, كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ ‘নভোমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই সন্তরণশীল’ (আম্বিয়া ২১/৩৩; ইয়াসীন ৩৬/৪০)। (২) সমাজ বিজ্ঞানীদের অনেকে বলেন, নারী ও পুরুষ সবক্ষেত্রে সমান। এজন্য চলছে বিশ্বব্যাপী অনেক রাজনৈতিক হৈ চৈ। অথচ জীব বিজ্ঞান বলছে নারী ও পুরুষের মধ্যে আদপেই কোন সমতা নেই। দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী সত্তা। উভয়ের ইচ্ছা-আকাংখা-কর্মক্ষেত্র সবই পৃথক। কুরআন বহু পূর্বেই এ সত্য বর্ণনা করেছে (নিসা ৪/১ ও অন্যান্য)। যা নিতান্তই বাস্তব ও বিজ্ঞান সম্মত। (৩) কার্ল মার্কস তার ‘গতিতত্ত্ব’ বলে পরিচিত বিপ্লবের দর্শনে বলেছেন, সদা গতিশীল প্রাকৃতিক বিধান সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটায়। যার ফলে মানবজীবনেও বিপ্লব ও পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে থাকে। এ দর্শন প্রচারের সাথে সাথে তিনি ‘দুনিয়ার মযদুর এক হও’ বলে ডাক দিলেন। যা ছিল তার দর্শনের সাথে সাংঘর্ষিক।[1] কেননা সামাজিক বিপ্লব যদি ঐতিহাসিক কার্যকারণের অনিবার্য পরিণতি হয়, তাহ’লে সেজন্য রাজনৈতিক সংগ্রামের প্রয়োজন হবে কেন? আর রাজনৈতিক সংগ্রামের ফলেই যদি বিপ্লব আনতে হয়, তাহ’লে ঐতিহাসিক কার্যকারণের অনিবার্য দর্শন নিতান্তই অমূলক গণ্য হয়। অথচ কুরআন বহু পূর্বেই মানুষকে কর্মদর্শন প্রদান করে বলেছে, إِنَّ اللهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ ‘আল্লাহ কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে’ (রা‘দ ১৩/১১)।
এভাবে কুরআন প্রদত্ত দর্শনের সাথে বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদের তুলনামূলক আলোচনা করলে বৈপরিত্য ও স্ববিরোধিতার প্রচুর দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। অথচ কুরআন এসব থেকে মুক্ত।
অতএব যুগে যুগে বিজ্ঞান যত অগ্রগতি লাভ করবে, কুরআনের বিভিন্ন অলৌকিক বিষয় তেমনি মানুষের সামনে খুলে যাবে। তবে সাবধান থাকতে হবে, এর দ্বারা যেন কোন ভ্রান্ত আক্বীদা জন্ম না নেয়। কেননা বিশুদ্ধ আক্বীদা কেবল সেটাই, যা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল। তাঁদের যুগে যেটি দ্বীন ছিল না, এখন সেটি দ্বীন হিসাবে গৃহীত হবে না।
[1]. মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম, মহাসত্যের সন্ধানে (ঢাকা : ১৯৯৮) ৩৭ পৃঃ।
কুরআনের বাহক ও প্রচারক মাত্র একজন
কুরআনই একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ, যার বাহক ও প্রচারক মাত্র একজন। যিনি হ’লেন শেষনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম। মানছূরপুরী বলেন, অথচ হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ বেদ-এর পেশকারী ঋষিদের সংখ্যা শতাধিক এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে সময়ের ব্যবধান শতাধিক বছরের। বাইবেলের অবস্থাও তথৈবচ। এ কিতাবের পেশকারী হিসাবে তিনি ত্রিশজনের নামের তালিকা দিয়েছেন। যাদের মধ্যে হযরত মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, যাকারিয়া (আঃ) প্রমুখ আম্বিয়ায়ে কেরাম ছাড়াও রয়েছে অন্যান্যদের নাম। যারা যুগে যুগে বাইবেল পেশ করেছেন। অথচ কোনটার সাথে কোনটার পুরোপুরি মিল নেই। এমনকি হযরত মূসা (আঃ) যে দশটি ফলকে (عَشَرَةُ أَلْوَاحٍ) লিখিত তওরাত নিয়ে এসেছিলেন, তার উম্মত তাতে প্রথমেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল (বাক্বারাহ ২/৫৫-৫৬, ৯৩)। অনুরূপভাবে ইনজীলের অবস্থা। সেখানে হযরত ঈসা (আঃ)-এর শাগরিদদের রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ পাওয়া যায়। যার কোনটির সঙ্গে কোনটির পুরোপুরি মিল নেই। বরং প্রায় সবটাই কথিত সেন্ট (Saint) তথা সাধুদের কপোলকল্পিত। যাকে আল্লাহর কেতাব বলে চালানো হচ্ছে। যেদিকে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে ইঙ্গিত করেছেন (বাক্বারাহ ২/৭৯)।
উল্লেখ্য যে, মসীহ ঈসা নিজের জন্য ১২ জন শাগরিদ বাছাই করেছিলেন, যারা বনু ইস্রাঈলের বারোটি গোত্রের সামনে তাঁর দ্বীনের প্রচার করবে। কিন্তু এতবড় একজন কামেল উস্তাদের সঙ্গে থেকেও তারা এমন অযোগ্য প্রমাণিত হন যে, মসীহকে তাদের উদ্দেশ্যে একাধিকবার একথা বলতে হয়েছিল যে, তোমাদের মধ্যে এক সরিষাদানা পরিমাণ ঈমান থাকলেও তোমরা এরূপ করতে পারতে না’। মসীহ তাদেরকে বারবার তিরষ্কার করতেন এজন্য যে, তাঁর সঙ্গে জেগে থেকেও তারা কখনো দো‘আ-ইস্তেগফারে শরীক হ’ত না। মসীহের আসমানে উঠে যাবার পর উক্ত বারো জন শাগরিদের মধ্যে আক্বীদা ও আমলগত বিষয়ে তীব্র মতভেদ দেখা দেয়। যেমন (১) শরী‘আতের (তাওরাতের) বিধান সমূহ মান্য করা যরূরী কি-না (২) অন্য জাতির নিকটে ঈসায়ী ধর্মের প্রচার সিদ্ধ হবে কি-না (৩) খাৎনা করা কেবল ইসরাঈলীদের জন্য না ঈসায়ী ধর্মে আগত সকলের জন্য আবশ্যক ইত্যাদি। এরপর তাদের মধ্যে আল্লাহ, মারিয়াম ও ঈসার নামে ত্রিত্ববাদের প্রসার ঘটে। যাতে অনেকে ভিন্নমত পোষণ করেন। ঈসা (আঃ) ৩০ বছর বয়সে দাওয়াত শুরু করেন এবং ৩৩ বছর বয়সে তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়। তিন বছরে মাত্র ১২ জন শাগরিদ হয়। যার মধ্যে একজন গাদ্দার প্রমাণিত হয়। অবশ্য ‘কিতাবুল আ‘মাল-এর লেখক সাধু লূক-এর মতে তাঁর সমর্থকের সংখ্যা ছিল ১২৪ জন।[1]
পক্ষান্তরে কুরআন শুরু হয়েছে যাঁর মাধ্যমে, শেষও হয়েছে তাঁর মাধ্যমে। এর একটি শব্দ ও বর্ণেও অন্য কোন ব্যক্তি যুক্ত নন। কুরআন বুঝার জন্য অন্য কোন সহায়ক কুরআনও নাযিল হয়নি। যেমন হিন্দুদের ঋগ্বেদ বুঝতে গেলে সাম বেদ, অথবর্ব বেদ ইত্যাদির মুখাপেক্ষী হ’তে হয়। অনুরূপভাবে ইহূদী-খৃষ্টানদের নিউ টেষ্টামেন্ট পূর্ণতা পায় না ওল্ড টেষ্টামেন্ট ব্যতীত। আবার চারটি ইনজীল (أَنَاجِيلُ أَرْبعَة) অপূর্ণ থাকে সেন্ট লূক-এর কিতাবুল আ‘মাল ব্যতীত। অথচ কুরআন নিজেই সবকিছুর ব্যাখ্যা تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ (নাহল ১৬/৮৯)। এরপরেও প্রয়োজনীয় ও বিস্তৃত ব্যাখ্যার জন্য কুরআনের বাহক রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ সমূহ মওজুদ রয়েছে। যা আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট (নাজম ৫৩/৩-৪; ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৯)।
উল্লেখ্য যে, হিন্দুরা চারটি বেদ-এর কথা বললেও মনু তিনটি বেদ-এর কথা বলেন, যাতে অথবর্ব বেদ নেই। সংস্কৃতের কোন কোন প্রাচীন গ্রন্থে প্রায় ৩২টি বইয়ের উপরে বেদ-এর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া সাধারণ হিন্দুরা বেদকে ‘ঈশ্বরের বাণী’ মনে করলেও তাদের বহু বিদ্বান একে ‘মানুষের কথা’ বলে থাকেন এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ লোক বর্তমান বেদ-কে আসল বেদ মনে করেন না।[2] পক্ষান্তরে কুরআনের অনুসারী হৌন বা না হৌন সকলেই কুরআনকে আল্লাহর কালাম এবং তাকে অবিকৃত বলে বিশ্বাস করে থাকেন।
[1]. মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/১১২।
[2]. মানছূরপুরী, রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৭৪-৭৫।
কুরআন অত্যন্ত উঁচু মান ও মার্জিত রুচিসম্পন্ন
কুরআনের ভাষা অত্যন্ত উঁচুমানের এবং মার্জিত রুচি সম্পন্ন। এতে কোনরূপ লজ্জাকর ভাষা ও ঘটনার স্পর্শ নেই। অথচ বেদ ও প্রচলিত বাইবেল নানা যৌন রসাত্মক উপমা ও রচনায় ভরা। যা ধর্মীয় পবিত্রতা ও ভাবগাম্ভীর্যের সম্পূর্ণ বিপরীত। এর মৌলিক কারণ হ’ল এই যে, ঐসব গ্রন্থাবলীর রচয়িতা হ’ল মানুষ। আর কুরআনের ভাষা হ’ল সরাসরি আল্লাহর। তাই বান্দার ভাষা কখনোই আল্লাহর ভাষার ধারে-কাছে যেতে পারে না। এজন্যই বলা হয়ে থাকে كلامُ الملوكِ ملوكُ الكلامِ ‘বাদশাহদের ভাষা হয় শাহী ভাষা’। কুরআনের ভাষা তাই যাবতীয় মানবীয় দুর্বলতা ও আবিলতার ঊর্ধ্বে এক অতুলনীয় সৌকর্যমন্ডিত ভাষা। সেই সাথে কুরআনের ভাষা অতুলনীয় এবং সর্বোচ্চ অলংকার সমৃদ্ধ। কুরআন নাযিলের সময়কালের বরেণ্য আরবী কবিগণ যেমন কুরআনী বালাগাত-ফাছাহাত ও অলংকারের কাছে অসহায় ছিলেন, আধুনিক যুগের কবি-সাহিত্যিকগণ একইভাবে রয়েছেন অসহায়।
মিসরের খ্যাতনামা মুফাসসির তানতাভী জাওহারী বলেন, ১৯৩২ সালের ১৩ই জুন তারিখে মিসরীয় অধ্যাপক কামেল কীলানী আমাকে একটি বিষ্ময়কর ঘটনা শুনিয়ে বলেন যে, আমার খ্যাতনামা আমেরিকান প্রাচ্যবিদ ফিনকেল একদিন আমাকে বলেন, কুরআনের মু‘জেযা হওয়ার ব্যাপারে তোমার রায় বর্ণনা কর। তখন আমি বললাম, তাহ’লে আসুন আমরা জাহান্নামের প্রশস্ততার ব্যাপারে অন্ততঃ বিশটি বাক্য তৈরী করি। অতঃপর আমরা উক্ত মর্মে বাক্যগুলি তৈরী করলাম। যেমন, إنَّ جَهَنَّمَ وَاسِعَةٌ جِدًّا، إنَّ جَهَنَّمَ لَأَوْسَعُ مِمَّا تَظُنُّونَ، إنَّ سِعَةَ جَهَنَّمَ لاَ يَتَصَوَّرُهَا عَقْلُ إِنْسَانٍ ইত্যাদি। অতঃপর তিনি বললেন, কুরআন কি উক্ত মর্মে এর চাইতে উন্নত অলংকারবিশিষ্ট কোন বাক্য প্রয়োগ করতে পেরেছে? জবাবে আমি বললাম, আমরা কুরআনের সাহিত্যের কাছে শিশু মাত্র। শুনে তিনি হতবাক হয়ে বললেন, সেটা কি? আমি তখন সূরা ক্বাফ-এর ৩০ আয়াতটি পাঠ করলাম, يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَزِيْدٍ ‘যেদিন আমরা জাহান্নামকে বলব, ভরে গেছ কি? সে বলবে, আরো আছে কি?’ (ক্বাফ ৫০/৩০)। আয়াতটি শুনে তিনি হতভম্ব হয়ে বললেন, তুমি সত্য বলেছ, হ্যাঁ, তুমি সত্য বলেছ।[1] আমরা মনে করি এর পরবর্তী আয়াতে জান্নাতীদের পুরস্কার সম্পর্কে যে বর্ণনা এসেছে তা একইভাবে অনন্য ও অসাধারণ। যেমন বলা হয়েছে لَهُمْ مَا يَشَاءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ ‘সেখানে তারা যা চাইবে তাই পাবে এবং আমাদের কাছে রয়েছে আরও অধিক’ (ক্বাফ ৫০/৩৫)। অমনিভাবে জাহান্নামীদের শাস্তি সম্পর্কে আল্লাহ অন্যত্র বলেন, فَذُوقُوا فَلَنْ نَزِيدَكُمْ إِلاَّ عَذَابًا ‘অতএব তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো। এখন আমরা তোমাদের কিছুই বৃদ্ধি করব না শাস্তি ব্যতীত’ (নাবা ৭৮/৩০)।
বস্তুতঃ অল্প কথায় সুন্দরতম আঙ্গিকে এমন আকর্ষণীয় বাক্যশৈলী আল্লাহ ব্যতীত কারু পক্ষে সম্ভব নয়। আর এভাবেই আরবদের উপরে কুরআনের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। যারা ছিল সেযুগে শুদ্ধভাষিতায় বিশ্বসেরা। সেজন্য তারা নিজেদেরকে ‘আরব’ (عَرَب) অর্থাৎ শুদ্ধভাষী বলত এবং অনারবদেরকে ‘আজম’ (عَجَم) অর্থাৎ ‘বোবা’ বলে অভিহিত করত।
আল্লাহ পাক তাঁর নবীদেরকে স্ব স্ব যুগের উপরে এভাবেই শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন। যেমন জাদুবিদ্যায় সেরা মিসরীয়দের পরাস্ত করার জন্য আল্লাহ নবী মূসাকে লাঠি ও প্রদীপ্ত হস্ততালুর মো‘জেযা দান করেন। চিকিৎসা বিদ্যায় সেরা শাম দেশের অহংকারী নেতাদের পরাস্ত করার জন্য আল্লাহ নবী ঈসাকে অন্ধকে চক্ষু দান, কুষ্ঠ রোগীকে আরোগ্য দান, এমনকি মৃতকে জীবিত করার মো‘জেযা প্রদান করেন। অনুরূপভাবে ভাষাগর্বী আরবদের কাছে শেষনবীকে মো‘জেযা স্বরূপ অলংকারময় কুরআন দান করেন। যার সামনে আরব পন্ডিতেরা কুরআন নাযিলের যুগে ও পরে সর্বদা মাথা নোয়াতে বাধ্য হয়। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
[1]. ত্বানত্বাভী জাওহারী (১৮৫৯-১৯৪০ খৃ.), আল-জাওয়াহের ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম (বৈরূত : দারুল ফিকর, তাবি) তাফসীর সূরা ক্বাফ ৩০ আয়াত, ১২/১০৭-০৮।
কুরআন একজন উম্মী নবীর মুখ নিঃসৃত বাণী
কুরআনই একমাত্র ইলাহী গ্রন্থ, যা তাওরাত ইত্যাদির ন্যায় ফলকে লিপিবদ্ধ আকারে দুনিয়াতে আসেনি। বরং সরাসরি উম্মী নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। সাথে সাথে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-ই একমাত্র নবী, যিনি النَّبِيُّ الْأُمِّيُّ বা ‘নিরক্ষর নবী’ হিসাবে অভিহিত হয়েছেন (আ‘রাফ ৭/১৫৭, ১৫৮)। কুরআন আল্লাহর কালাম হওয়ার এটাও একটি বড় প্রমাণ যে, যার মুখ দিয়ে দুনিয়াবাসী বিজ্ঞানময় কুরআন শুনেছে, তিনি নিজে ছিলেন ‘উম্মী’ অর্থাৎ নিরক্ষর ব্যক্তি এবং মানুষ হয়েছিলেন নিরক্ষর সমাজে (জুম‘আ ৬২/২)। এমনকি আল্লাহ বলেন, وَمَا كُنْتَ تَتْلُو مِنْ قَبْلِهِ مِنْ كِتَابٍ وَلاَ تَخُطُّهُ بِيَمِيْنِكَ إِذًا لاَرْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ ‘আর তুমি তো এর আগে কোন বই পড়োনি এবং স্বহস্তে কোন লেখাও লেখোনি, যাতে বাতিলপন্থীরা সন্দেহ করতে পারে’ (আনকাবূত ২৯/৪৮)। তিনি অন্যত্র বলেন, مَا كُنْتَ تَدْرِيْ مَا الْكِتَابُ وَلاَ الْإِيْمَانُ ‘তুমি জানতে না কিতাব কি বা ঈমান কি?’ (শূরা ৪২/৫২)। তাই কুরআনের ভাষা ও বক্তব্যে নিজের থেকে যোগ-বিয়োগ করার সকল প্রকার সন্দেহের তিনি ঊর্ধ্বে ছিলেন।
বস্ত্ততঃ মুহাম্মাদ (ছাঃ) ব্যতীত দুনিয়াতে এমন কোন নবী আসেননি, যার পবিত্র যবান দিয়ে সরাসরি আল্লাহর কালাম বের হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্বের একটি বড় দলীল ও একটি বড় মু‘জেযা। মানছূরপুরী বলেন, খ্রিষ্টানদের সকলে এ বিষয়ে একমত যে, তাদের চারটি ইনজীলের একটিও মসীহ ঈসার উপরে আল্লাহর পক্ষ হ’তে সরাসরি নাযিল হয়নি। বরং এগুলি স্ব স্ব লেখকদের দিকে সম্পর্কিত। উক্ত প্রসিদ্ধ চারটি ইনজীল হ’ল, মথি (إِنْجِيلُ مَتَّى), মুরকুস (مُرْقُس), লূক (لُوقَا) এবং ইউহান্না (يُوحَنَّا)। এগুলির পবিত্রতার পক্ষে খ্রিষ্টানদের যুক্তি হ’ল এই যে, এগুলি পবিত্র রূহ মসীহ ঈসা (আঃ)-এর সাহায্য নিয়ে লেখা হয়েছে’। তাদের এ দাবী যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহ’লে চারটি ইনজীলের পরস্পরের মধ্যে এত গরমিল কেন? যেগুলির বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে খৃষ্টান পন্ডিতগণ চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি আদম ক্লার্ক, নূরটিন ও হারূণ প্রমুখ খ্রিষ্টান বিদ্বানগণের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এই যে, ইনজীলগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের কোন সুযোগ নেই। পাদ্রী ফ্রেঞ্চ স্বীকার করেছেন যে, ইনজীলগুলির মধ্যে ছোট-বড় ৩০ হাযার ভুল রয়েছে। কথা হ’ল, চারটি ইনজীলের মিলিত পৃষ্ঠা সংখ্যা একশ’-এর বেশী হবে না’ (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৭৩)। অথচ তার মধ্যেই যদি ত্রিশ হাযার ভুল থাকে, তাহ’লে বিশুদ্ধ কতটুকু আছে? আর ঐসব বইয়ের গ্রহণযোগ্যতাই বা কি? একেই তো বলে ‘সাত নকলে আসল খাস্তা’।
খ্রিষ্টান ধর্মনেতাদের এইসব দুষ্কৃতির প্রতি ইঙ্গিত করেই আল্লাহ বলেন,
فَوَيْلٌ لِلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتَابَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هَذَا مِنْ عِنْدِ اللهِ لِيَشْتَرُوا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلاً فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ- ‘ধ্বংস ঐসব লোকদের জন্য, যারা স্বহস্তে পুস্তক রচনা করে। অতঃপর বলে যে, এটি আল্লাহর নিকট থেকে আগত। যাতে তারা এর মাধ্যমে সামান্য অর্থ উপার্জন করতে পারে। অতএব ধ্বংস হৌক তারা যা স্বহস্তে লেখে এবং ধ্বংস হৌক তারা যা কিছু উপার্জন করে’ (বাক্বারাহ ২/৭৯)।
কুরআন সকলের পাঠযোগ্য
কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা আল্লাহর কালাম হিসাবে কেবল নবী পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং উম্মতে মুহাম্মাদীর সবাই তা পাঠ করে ধন্য হ’তে পারে। মানুষ দুনিয়াতে তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে দেখতে পাবে না ঠিকই। কিন্তু তাঁর কালাম পাঠ করে ও শ্রবণ করে এক অনির্বচনীয় ভাবানুভূতিতে ডুবে যেতে পারে। ঠিক যেমন পিতার রেখে যাওয়া হস্তলিখিত পত্র বা লেখনী পাঠ করে প্রিয় সন্তান তার হারানো পিতার মহান স্মৃতিতে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই কুরআনের পাঠক ও অনুসারী উম্মতে মুহাম্মাদীর চাইতে সৌভাগ্যবান জাতি পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মূসা (আঃ)-এর সাথে আল্লাহ কথা বলেছিলেন ঠিকই। কিন্তু তওরাত সে কথার সমষ্টি নয়। তাই বাইবেলের অনুসারীরা আল্লাহর সরাসরি কালাম থেকে বঞ্চিত। আর বর্তমান বাইবেল তো আদৌ প্রকৃত তওরাত নয়। অন্যদিকে হিন্দুদের বেদ তো কেবল ব্রাহ্মণদেরই পাঠের অনুমতি রয়েছে, সাধারণ হিন্দুদের নেই।
কুরআন স্মৃতিতে সুরক্ষিত
কুরআনই একমাত্র ইলাহী কিতাব, যা মানুষের স্মৃতিতে সংরক্ষিত হয়েছে। কুরআনের পূর্বে কোন এলাহী গ্রন্থ মুখস্থ করা হয়নি। কুরআন আল্লাহ কর্তৃক হেফাযতের এটি একটি বড় প্রমাণ। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে শহরে-গ্রামে, এমনকি নির্জন কারা কক্ষে বসে অগণিত মুসলমান কুরআনের হাফেয হচ্ছে এবং এইসব হাফেযে কুরআনের মুখে সর্বদা কুরআন পঠিত হচ্ছে। অন্যেরা সবাই পুরা কুরআনের হাফেয না হ’লেও এমন কোন মুসলমান দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যে, কুরআনের কিছু অংশ তার মুখস্থ নেই। ২০০৫ সালের একটি হিসাবে জানা যায় যে, প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে বসবাসকারী ফিলিস্তীনীদের মধ্যে সে বছর চল্লিশ হাযার কিশোর-কিশোরী কুরআনের হাফেয হয়েছে’ (মাজাল্লা আল-ফুরক্বান (কুয়েত : জামঈয়াতু এহইয়াইত তুরাছিল ইসলামী) ....)। আলহামদুলিল্লাহ।
প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর ৬৭ পর্বের জীবনীর সকল পর্ব এখান থেকে পড়ুন-
পর্ব-০১ পর্ব-০২ পর্ব-০৩ পর্ব-০৪ পর্ব-০৫ পর্ব-০৬ পর্ব-০৭ পর্ব-০৮ পর্ব-০৯ পর্ব-১০ পর্ব-১১ পর্ব-১২ পর্ব-১৩ পর্ব-১৪ পর্ব-১৫ পর্ব-১৬ পর্ব-১৭ পর্ব-১৮ পর্ব-১৯ পর্ব-২০ পর্ব-২১ পর্ব-২২ পর্ব-২৩ পর্ব-২৪ পর্ব-২৫ পর্ব-২৬ পর্ব-২৭ পর্ব-২৮ পর্ব-২৯ পর্ব-৩০ পর্ব-৩১ পর্ব-৩২ পর্ব-৩৩ পর্ব-৩৪ পর্ব-৩৫ পর্ব-৩৬ পর্ব-৩৭ পর্ব-৩৮ পর্ব-৩৯ পর্ব-৪০ পর্ব-৪১ পর্ব-৪২ পর্ব-৪৩ পর্ব-৪৪ পর্ব-৪৫ পর্ব-৪৬(১ম) পর্ব-৪৬(২য়) পর্ব-৪৭ পর্ব-৪৮ পর্ব-৪৯ পর্ব-৫০ পর্ব-৫১ পর্ব-৫২ পর্ব-৫৩ পর্ব-৫৪ পর্ব-৫৫ পর্ব-৫৬ পর্ব-৫৭ পর্ব-৫৮ পর্ব-৫৯ পর্ব-৬০ পর্ব-৬১ পর্ব-৬২ পর্ব-৬৩ পর্ব-৬৪ পর্ব-৬৫ পর্ব-৬৬ পর্ব-৬৭
******************************************
>>> Welcome, You are now on Mohammadia Foundation's Website. Please stay & Tune with us>>>
মোহাম্মদীয়া ফাউন্ডেশনের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url